তোর_মনের_অরণ্যে,৪২ (শেষাংশ)

তোর_মনের_অরণ্যে,৪২ (শেষাংশ)
সাবিয়া_সাবু_সুলতানা

আমন সোহাকে জড়িয়ে ধরে সোফায় নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেয়। আভা চৌধুরী সম্রাট চৌধুরী ও ছুটে আসে সোহার কাছে। আরহান তার মা কে নিয়ে এগিয়ে আসে সোহার কাছে, হটাৎ যে মণিকা এই ভাবে আক্রমণ করবে সেটা কেউ খেয়াল করেনি আজ আমন না দেখলে কি যে বিপদ হয়ে যেতো তা ভাবতে চায়না তারা। কয়েকজন গার্ড মণিকার বডি টাও নিয়ে চলে যায়। আমন সোহাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে শরীরে থেকে জ্যাকেটটা খুলে নেয় জ্যাকেটের হাতের থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। জ্যাকেট সাইটে রেখে সোহার ক্ষতর উপর হাত দিয়ে চেপে ধরে আমন যাতে রক্ত না পড়ে। ইতি মধ্যে অনেক রক্ত ক্ষয় হয়ে গেছে।

আক্রম দৌড়ে ফার্স্ট এড বক্স এনে দেয়। আমন দ্রুত ফার্স্টএড করে দেয়। আরিনা জৈন সোহার কাছে এসে তার হাত সোহার দিকে বাড়িয়ে দেয়। হাত টা কাঁপতে থাকে। এতদিন প্যারালাইজড থাকার জন্য হাত পা অবশ হয়ে আছে যেগুলো নাড়াতে প্রথম এমনি হবে। সোহা তার মায়ের হাত বাড়ানো দেখে সে অন্য হাত দিয়ে তার মায়ের হাতটা ধরে নিয়ে নিজের গালে চেপে ধরে। সোহার চোখে পানি ছলছল করছে আজ এত বছর পর বলতে গেলে তার জন্মের পর এই প্রথম সে তার মায়ের ছোঁয়া পেয়েছে নিজের থেকে। আরিনা জৈনের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে ।তিনি এতদিন পর তার মেয়েকে নিজের থেকে ছুতে পেরেছে। এতদিন তার মেয়ের কান্না দেখে গেছে তার করার কিছু ছিলোনা শুধু শুনে গেছে তবে আজ সে তার মেয়েকে পেয়ে গেছে।

-“সো সো সোনাই । কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ডেকে ওঠে আরিনা জৈন।

-” মাম ।

সোহা এই প্রথম নিজের মায়ের মুখে নিজের নাম শুনে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি তার মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। আরহান আক্রমও গিয়ে জড়িয়ে ধরে একসাথে। তিন ভাই বোন একসাথে মাকে জড়িয়ে রেখেছে। আরিনা জৈন আজ তার তিন ছেলেমেয়ে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে পঁচিশ বছর পর আবারো তিনি তার ছেলেমেয়েকে ফিরে পেয়েছে। তিনিতো ভেবেছিলেন আর কখনো হয়তো তার ছেলেদের দেখতে পাবেনা সাথে যে তার এক সন্তান ও ছিল সেটাও তিনি জানতেন সেদিনই তিনি তার সাথে তার ভিতরে বেড়ে ওটা জীবন কেও হারিয়ে ফেলবেন ভেবেছিলেন। তিনি সেদিনই সাজিদ মল্লিককে এই সুখবর দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার আগেই সব কিছুই তার সামনে চলে এসেছিল সাথে মৃত্যুর স্বাদ নিতে নিতে প্রাণে বেঁচে গেছিলো কিন্তু মরে থাকার মতো করে লাশ হয়ে পড়েছিলো এত বছর। আমন পাশে দাঁড়িয়ে মা সন্তানদের এই মিলন দৃশ্য দেখছে তার মুখে মৃদু হাসি খেলা করছে। আভা চৌধুরী সম্রাট চৌধুরী ও এক পাশে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছে। তারা নিজেরাও ভাবতে পারিনি সাজিদ মল্লিক এতটা নিকৃষ্ট হবে যে নিজের ভালোবাসার স্ত্রী সন্তানদেরও মেরে ফেলতে চাইবে। তারা জানত যে তার বন্ধুর আগের স্ত্রী মারা গেছে দুর্ঘটনাতে কিন্তু এটা সেই ঘটিয়ে ছিল তারা জানতনা এমনকি তারা আরিনা জৈন কেও চিনতো না তাই তারা সোহাকে দেখে অবাক হয়নি। আকাশ সানি অ্যাস নীহার হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আজ তাদের প্রাণ প্রিয় বন্ধুর সোহার মুখে হাসি কান্না একসাথে খেলা করছে।

আরিনা জৈন ছেলে মেয়েকে ছেড়ে বাড়ির চারিদিকে দেখতে থাকে। আজ পঁচিশ বছর পর তিনি এই বাড়িতে পা রেখেছে। তিনি যে এই জীবনে সব কিছু ফিরে পাবে এটা তিনি ভাবতেও পারিনি। আবার যে সব কিছুই তার সামনে আসবে তার ছেলে মেয়েকে পাবে তার ভাবনার বাইরে ছিল এইসব কিছু নিয়ে তিনি বেশ আবেগ প্রবন হয়ে পড়ে। বাড়ির সব কিছু আগের মতই আছে আবার কিছু পাল্টেও গেছে। তিনি নিজের হাতে এই বাড়ির এক একটা কোনা সাজিয়ে ছিলেন

আভা চৌধুরী সম্রাট চৌধুরী এক ভাবে আমনকে দেখতে থাকে আমন এক দৃষ্টিতে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে তার মুখে হাসি ফুটে আছে, চোখে মুখে মুগ্ধতার ছোঁয়া লেগে আছে। আর আজকের সব কিছুর পরে তারাও বুঝতে পেরেছে তার ছেলের সোহার প্রতি একটা টান আছে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। আর আজকে তারাযে আমনের যেই রূপ দেখেছে এটাতে তারাও অবাক হয়ে গেছে তাদের ছেলে যে এই রকম ভয়ঙ্কর হতে পারে সেটা তাদের ধারণার বাইরে ছিল।

-“আরিনা ।

সবাই এই ডাকে পিছন ফিরে তাকায় দরজার সামনে ধীরাজ জৈন দাঁড়িয়ে আছে তার চোখে মুখে খুশির ছাপ স্পষ্ট । আরিনা জৈন তার ভাইকে দেখতে পেয়ে তিনিও খুশি হয়েছেন।

-” ভাইয়া । আরিনা জৈন কান্না ভেজা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ডেকে ওঠে।

ধীরাজ জৈন এগিয়ে এসে তার বোনকে জড়িয়ে ধরে। শ্রেতা জৈন ও এগিয়ে এসে ওদের পাশে দাঁড়িয়ে যায়। সোহা তাদেরকে এখানে আসতে বলেছিলো তাদের জন্য যে এমন একটা সারপ্রাইজ তৈরী রেখেছিলো সেটা ভাবতেও পারিনি। তারা দুজনেই খুব চমকে গেছে আরিনা কে আবারো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে দেখে। যদিও তিনি এখনও হুইল চেয়ারে বসে আছেন তার আবারো হাঁটা চলা করতে কিছুদিন সময় লাগবে তারপরেও যে স্বাভাবিক হয়েছে এতেই তারা খুশি হয়েছে এতদিন পর বোনকে স্বাভাবিক হতে দেখে ধীরাজ জৈনের চোখে পানি ভরে গেছে আর আরিনা জৈনতো কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। সব কষ্টের শেষে আজ তাদের সুখের দিন ফিরে এসেছে। ভাই বোন আবারো একসাথে হয়েছে মা তার সন্তান ফিরে পেয়েছে আর সন্তানরা তাদের মাকে ফিরে পেয়েছে এই আনন্দ কি কম কিছু। আজ সবাই একসাথে হয়েছে।

————–

মল্লিক বাড়ির লিভিং রুমে বসে আছে বড়রা সম্রাট চৌধুরী আভা চৌধুরী শ্রেতা জৈন আরিনা জৈন। ধীরাজ জৈন এতদিন পর সম্রাট চৌধুরীর সাথে সামনাসামনি বসেছেন সাথে শ্রেতা জৈন আভা চৌধুরী ও আছে তাই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুরু করেছে আরিনা জৈন তাদের গল্প শুনছে মাঝে মাঝে হু হা করে উত্তর দিচ্ছেন। আজ এখানেই সবাই থেকে গেছে। আলোচনা এক পর্যায়ে সম্রাট চৌধুরী আমন আর সোহার কথা তোলেন। তারা যে একে অপরের সাথে আছে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে সেটা বলেন তবে ধীরাজ জৈন আর শ্রেতা জৈন আগের থেকে জানতেন কারণ সোহার এর আগে ঘটনার জন্য হসপিটালে তারা আমনের কন্ডিশন দেখেছিলো কেমন পাগল হয়ে গেছিলো ওই ঘটনায় আর বাকিদের থেকে শুনে সেটা বুঝতেই পেরেছিল আর এখন সম্রাট চৌধুরীর কথা শুনে তারা বুঝতে পারে যে এরাও সেটা জেনে গেছে।

আরিনা জৈন তার মেয়ের কথা শুনে আগ্রহ নিয়ে পুরো বিষয় জানতে চায়। যদিও আজ তিনি কিছুটা নিজের চোখে দেখেছে আমন কি ভাবে সোহাকে নিয়ে বিচলিত ছিল কিভাবে প্রোটেক্টিভ ছিল। তাই তিনি ওদের কাছে বাকি টাও জানতে চায়।

-“তবে শুধু আমন সোহা নয় এখানে আরো কয়েকজন ও আছে। শ্রেতা জৈন হেসে বলে ওঠে।

-” কাদের কথা বলছেন বৌদি? সম্রাট চৌধুরী জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“অ্যাস সানি । নীহার আর আকাশ এরাও একে অপরকে ভালোবাসে। তবে এদের দেখলে কিন্তু একদমই বুঝতে পারবেন না যে এদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে। শ্রেতা জৈন হাসতে হাসতে বলে ওঠে।

আভা চৌধুরী ও সম্রাট চৌধুরী একে অপরের দিকে দেখে তারাও বুঝতে পারিনি তাদের মেয়ের মনের কথা এমনিতেই তাদের উপরে তাদের মেয়ের অভিমানের পাহাড় জমেছে একটু একটু করে সেটা জানে। তবে মেয়ের কথা শুনে তারাও খুশি হয়েছে। সানিকে তাদেরও পছন্দ তারাও দেখেছে তারা সব সময়ে বন্ধুর মতো থাকে কখনই তাদের মধ্যে যে এর থেকেও বেশি কোনো সম্পর্ক আছে সেটা বোঝা যায়নি।

————-

সোহা সেই বন্ধ স্টোর রুমটাতে এসেছে সাথে আরহান আর আমনও আছে এই রুমের কথা আরহানের কাছে থেকে জেনেছে সোহা তাই এখানে আসা তার মায়ের জিনিষ গুলো উদ্ধার করার জন্য। আর বাকি গুলো গেছে নিজেদের মধ্যে সময় কাটাতে। যদিও তাঁরাও আসতে চেয়েছিলো কিন্তু সোহাই তাদের আসতে না করেছে নিজেদের মধ্যে সময় কাটাতে পাঠিয়ে দিয়েছে।

সোহা রুমের মধ্যে গিয়ে একে একে তার মায়ের সমস্ত জিনিষ প্যাক করে নেয়। ওখানে থাকা বেশির ভাগ জিনিসই তার মায়ের সেগুলো ওই রুম থেকে বের করতে থাকে তার গার্ড দিয়ে। আমন ও আছে সোহাকে সাহায্য করতে। তবে এর মাঝে আরহান কোনা চোখে বারবার আমন আর সোহাকে দেখতে থাকে আমন কেমন ভাবে তার বোন কে সামাল দিচ্ছে আজ তার কাছেও আমনের রাগের ধরন কিছুটা অবাক করা লেগেছে। আমন যে সোহাকে ভালোবাসে সেটাও বুঝতে পারে। এখন সে দেখছে আমন আর সোহাকে কেমন কাজের মাঝেও তাদের চোখে চোখে কথা বলা চলছে একে অপরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছে অল্প খুনশুটি ও করছে দুজন সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করছেন আরহান। আমন এইভাবে কাউকে ভালোবাসতে পারে সেটা আরহান আজ না দেখলে বুঝতেই পারতো না।

আমন আর সোহাকে আরহানও খুশি হয়েছে এক তার প্রিয় বন্ধু আর এক তার নিজের বোন। আমনের সাথে মণিকার বিয়ের কথা শুনে আরহান খুব অবাক হয়েছিলো। যেই আমন মণিকা কে দুই চোখেও দেখতে পারতোনা সেই আমন কিনা মণিকার সাথে বিয়ের কথা হওয়াতে তাতে রাজি হয়েছে। কিন্তু আজকেই তার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে আমন কেনো যে আমন করেছিলো সেটাও বুঝতে পেরেছে। আরহান মৃদু হেসে ওদের কে দেখে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

————-

অ্যাস ছাদের থেকে নিচে নেমে আসতে সম্রাট চৌধুরী নিজের কাছে ডাকে। অ্যাস সম্রাট চৌধুরীর ডাক শুনে এগিয়ে গিয়ে তাদের পাশে বসে। আভা চৌধুরী ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকেন নিজের মেয়ের দিকে।

-“আয়ু মা তুই কি আমাদের উপর অভিমান করে আছিস? আমরা কি তোকে অনেক দুঃখ দিয়েছি। সম্রাট চৌধুরী অ্যাসের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

বাবার কথা শুনে অ্যাস কোনো কথা বলেনা চুপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকে। তার চোখের কোণে ও অশ্রুকনা ভিড় জমিয়েছে সম্রাট চৌধুরী মেয়ে কে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে ওঠেন ।

-“আমরা অজান্তেই তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। তোমাকে সব কিছুর থেকে দূরে রেখেছি এটা আমাদের ভুল আমাদেরই বুঝতে অসুবিধে হয়েছে। যে মেয়ে দূরে থাকলেও তাকে সব কিছুর থেকে দূরে রাখা ঠিক হয়নি। আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি আয়ু মা। তুমি তোমার ডিউটির জন্য আমাদের থেকে দূরে ছিলে আর আমরাও তোমাকে আমাদের থেকে আসতে আসতে দূরত্ব তৈরী করে ফেলেছিলাম তোমার অনুপস্থিতিতে। সব কিছুর থেকে দূরে করেছিলাম এটা আমাদের ভুল মা। আমাদের কি ক্ষমা করা যায়না। সম্রাট চৌধুরী অসহায় কন্ঠে বলে ওঠে।

-“আমরা তোমার কাজের জন্য তোমাকে কিছু জানাতে চেয়েও জানাতে পারিনি। তোমার সাথে ঠিক ভাবে কমিউনিকেট করে উঠতে পারতামনা তাই এমনটা হয়েছে। আর কখনো এমন হবে না আয়ুমা এবার কি অভিমান ঝেড়ে ফেলা যায়। আমি জানি মা আমরা তোমাকে অনেক কিছু জানায়নি অনেক কিছু থেকে দূরে রেখেছিলাম কিন্তু সেটা আমরা বুঝতে পেরেছি। আমরা ভেবেছিলাম এতে তোমার কাজের অসুবিধা হবে সেই ভেবেই আমরা কিছু জানায়নি এটা আমাদের ভুল। আভা চৌধুরী বলে ওঠেন।

অ্যাস তার বাবা মায়ের কথা শুনে আর চুপ করে থাকতে পারেনা। এতদিন তার বাবা মায়ের এই সব কাজের জন্য তার মনের মধ্যে একটু একটু করে অভিমানের মেঘ জমে ছিল তবে আজ বাবা মায়ের কথা শুনে আর অভিমান কে টিকিয়ে রাখতে পারিনি সম্রাট চৌধুরী ও আভা চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে এই অভিমানের সমাপ্তি ঘটায়।
দূর থেকে আকাশ সানি নীহার এই দৃশ্য দেখে তাদের মুখেও হাসি ফোটে। তারা জানত অ্যাস কতটা কষ্ট পেতো এই নিয়ে আজ সব দুঃখের সমাপ্তি ঘটে খুশি আনন্দের সূচনা হচ্ছে।

————–

চারিদিকে অন্ধকারে ছেয়ে আছে। ছাদের চারকোণে রেলিং লাগানো কুপি গুলো জ্বলছে। এগুলো কাঁচের কাঁচের বক্স করে সেটিং করা আছে রেলিং এর সাথে তার মধ্যে জ্বলছে। তার মৃদু আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আকাশে চাঁদের সাথে মেঘের লুকোচুরি খেলা চলছে। মেঘ মাঝে মাঝে এসে চাঁদ কে ঢেকে দিচ্ছে আবার পালিয়ে যাচ্ছে। দূরে কয়েকটা তারা টিম টিম করে জ্বলছে । মৃদু হাওয়া চারিদিকে মুখরিত হয়ে আছে। সোহা রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে এই মোহনীয় পরিবেশ উপভোগ করছে । আজ সে সাথে বাকিরাও মল্লিক বাড়িতে রয়ে গেছে কেউ যায়নি এই বাড়ির থেকে আর না কাউকে যেতে দিয়েছে। নিচে সবাই মিলে আনন্দ করছে সব দুঃখের শেষে সবাই এক সাথে হয়েছে তাই সবাই সেই আনন্দ একসাথে উপভোগ করছে। নিচের গার্ডেনের এক সাইটে বারবিকিউব পার্টি করছে আকাশ সানি অ্যাস নীহার আরহান আক্রম সৌজন্য মিলে তাদের থেকে কিছুটা দূরে বসে আছে বড়রা। সোহা নিজেও ওখানে ছিল কিছুক্ষণ আগেই সে ছাদে উঠে এসেছে। তার জীবনের প্রতিটা কেটে যাওয়া সময়ে এর হিসেব করতে সাথে কিছুটা এই পরিবেশে একান্তে উপভোগ করতে। তার জীবনের না পাওয়া গুলো আজকের দিনে সব কিছু পেয়ে যেতেই সব ফিকে হয়ে যাচ্ছে আস্তে ধীরে। তার জীবনে এখন এই মুহূর্তে পেয়ে যাওয়া গুলোই যেনো উজ্জ্বল হয়ে উঠছে আসতে আসতে।

পিছন থেকে দুটো হাত তার কোমর জড়িয়ে ধরতে সোহা কিছুটা কেঁপে ওঠে। তবে সে জানে কে আছে তার পিছনে এই মুহূর্তে। ঠিক তাকে নিচে দেখতে না পেয়ে পাগলটা তাকে খুঁজতে খুঁজতে উপরে চলে এসেছে। এই কয়েকদিনে সে আমনের ভালোবাসার গভীরতা উপলব্ধি করেছে। আমন যে তাকে পাগলের মত ভালোবাসে সেটাও বুঝেছে। আচ্ছা সে কি কখনো আমন কে বলেছে সে তাকে ভালোবাসে। না বলেনি মনে হয় কিন্তু এই পাগলটা সব কিছুই বুঝে যায় তার মনের কথা। আমন সোহার কাঁধে নিজের থুতনি রেখে সোহার কানে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দেয়। আমনের এমন আদুরে স্পর্শে সোহা কেঁপে ওঠে।

-“এখানে একা একা কি করছো ধানী লঙ্কা? আমন ঘোর লাগা কন্ঠে বলে ওঠে।

আমনের ধানী লঙ্কা ডাকতে সোহা মৃদু হেসে ফেলে। আমনের উষ্ণ নিঃশ্বাস তার ঘাড় গলায় আছড়ে পড়ছে তার সোহার সারা শরীরে অদ্ভূত শিহরন বয়ে যায়। কানে আমনের ঠোঁট স্পর্শ করে যায় কথা বলার সময়ে এতেও কেঁপে কেঁপে ওঠে সোহা যেটা আমনও বোঝে ।

-“কিছু করছিনা এই মোহনীয় পরিবেশ উপভোগ করছিলাম ।সোহা একটু থেমে বলে ওঠে।

-” বাহ একা একা উপভোগ করছো আমাকে ছাড়া। এটা কিন্তু ঠিক নয়। আমন কপট অভিমান করে বলে ওঠে।

আমনের কথা শুনে সোহা নিঃশব্দে মৃদু হেসে ওঠে তার পেটের উপরে থাকা আমনের হাতের উপর নিজের হাত রাখে।

-” এইযে তুমিও তো চলে এলে। একা কোথায় আর। সোহা বলে ওঠে।

-“আমি আসার আগেই তো তুমি একাই ছিলে তাইনা এটা ঠিক না। বাই দ্য ওয়ে তুমি আমাকে তুমি বললে? আমন কিছুটা অবাক হয়ে বলে ওঠে।

-“তাইতো মনে হচ্ছে এর আগেও মাঝে মাঝে তুমি বলেছি যেটা তুমি খেয়াল করোনি। সোহা বলে ওঠে।

-“বাহ আপনি ছেড়ে তুমি তাহলে বলতেই হয় আমার ধানী লঙ্কা আমার উপর কৃপা করছে। আমন দুষ্টুমি করে বলে ওঠে।

-“হুম । সোহা হেসে বলে ওঠে।

সোহা আর কিছু না বলে এই সময়টাকে উপভোগ করতে থাকে। এমন মোহনীয় পরিবেশে প্রিয় মানুষটা সাথে থাকলে আর কি চাই। আমন সোহা কে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেই সোহার কানে ঘাড়ে গলায় আলতো করে নিজের অধর ছুয়ে দেয়। আমনের এমন উষ্ণ আদুরে স্পর্শে সোহা বারবার কেঁপে কেঁপে ওঠে। সোহা মাথা ঘুরিয়ে আমনের দিকে তাকায় দেখে আমন ও তাদের দিকে ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে। দুজন এক ভাবে চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে। আজ যেনো তাদের দেখার শেষ হচ্ছে না। আমন দুই হাতে সোহার মুখ আজলা করে নিয়ে সোহার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে যায় একদম মুখের কাছে দুজনের মধ্যে দূরত্ব নেই বললেই চলে আর তাদের মাঝের এই দূরত্ব সরিয়ে দিয়ে আমন কাছে এসে তার ওষ্ঠদ্বয় দিয়ে আকড়ে ধরে সোহার ওষ্ঠ । আবেশে সোহা চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয় একটু একটু করে গলে যায় আমনের মাঝে।

বেশ কিছুক্ষণ পর আমন সরে এসে সোহার কপালে নিজের ওষ্ঠ ছুয়ে দেয়। সোহা আমনের বুকে মুখ লুকিয়ে নেয়। আমনের মুখে ছড়িয়ে পড়ে অনাবিল হাসি। আজ সমস্ত দূরত্ব সরিয়ে তারা কাছে এসেছে সোহা একেবারে তার নিজের হয়ে গেছে। সোহা মুখে ভালোবাসি স্বীকার না করলেও তার কাজের মধ্যে দিয়ে বারবার বুঝিয়ে দিয়েছে যে সেও আমনকে ভালোবাসে। ভালোবাসা সব সময়ে মুখে বলে প্রকাশ করতে হয়না মাঝে মাঝে না বলা কথা গুলো বুঝে নিতে হয়।

-“আমি কি তোমাকে কখনো বলেছি মন? সোহা মাথা উঁচু করে বলে ওঠে।

-” কি? আমন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।

-“ভালোবাসি মন। সোহা আমনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

সোহার কথা শুনে আমনের চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মুখে ছাড়িয়ে পড়ে প্রশান্তির হাসি আমন সোহাকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। সোহার কপালে গভীর ভাবে ছুয়ে দেয়। আমন ও বলে ওঠে ।

-“ভালোবাসি ধানী লঙ্কা ।

ভালোবাসা সব সময়ে মুখে বলে প্রকাশ করতে হয়না। মাঝে মাঝে তার কাজের দ্বারাও বুঝিয়ে দেওয়া যায় আর বুঝে নিতে হয়। ভালোবাসি ভালোবাসি মুখে বললেও তার অনুভূতিটাই আসল অনুভূতি দিয়ে বোঝাতে পারলে তখন আর বারবার মুখে বলে বোঝানোর দরকার পড়েনা।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here