তোর_মনের_অরণ্যে,৪১

তোর_মনের_অরণ্যে,৪১
সাবিয়া_সাবু_সুলতানা

আরিনা জৈন এর দৃষ্টি সাজিদ মল্লিক ও সোনিয়া মল্লিকের উপর যেতেই তিনি হাইপার হয়ে যান হটাৎ করেই মুখ দিয়ে গো গো করে আওয়াজ বের হতে থাকে হাত পা যারা শরীরে কাঁপতে থাকে। হঠাৎ এত বছর পর এমন প্রতিক্রিয়া পেতে সোহা অবাক হয়ে যায়। সে অনেক চেষ্টা করেও কোনোদিন তার মায়ের কোনো রকম প্রতিক্রিয়া করাতে পারিনি তাহলে আজ কি ঘটলো। সোহা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার মায়ের দৃষ্টিতে পরিলক্ষিত করে। সে দেখতে পায় তার মায়ের দৃষ্টি সাজিদ মল্লিক আর সোনিয়া মল্লিকের দিকে। হঠাৎ করেই তার মস্তিষ্ক দৌড়াতে থাকে। তার মানে এদের দুজন কে দেখেই তার মায়ের এমন প্রতিক্রিয়া। সোহার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। আর বাকিরা অস্থির হয়ে ওঠে হটাৎ এমন করতে। আমন সোহার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত দিতেই সোহা মৃদু হেসে ইশারা করে সাজিদ মল্লিক ও সোনিয়া মল্লিককে দেখায়। আমনের মুখে ও হাসি ফুটে ওঠে। আরহান আর আক্রম ও উত্তেজিত হয়ে পড়ে তাদের মায়ের হটাৎ এমন করাতে।

-“ভাই ভাই মাম এমন করছে কেনো হটাৎ করে? কি হয়েছে মামের? আক্রম অস্থির হয়ে প্রশ্ন করে ওঠে।

-” আমিও জানি না বুঝতে পারছি না মামের কি হয়েছে কেনো এমন করছে? আরহান বলে ওঠে।

-” এই সোহা মাম এমন করছে কেনো কি হয়েছে মামের? আরহান উত্তেজিত হয়ে সোহাকে প্রশ্ন করে ওঠে।

-“রিল্যাক্স ভাইয়া মামের কিছু হয়নি ঠিক আছে বরং বলতে পারো ভালোই হচ্ছে এত বছর প্রতিক্রিয়া করছে। সোহা হেসে বলে ওঠে।

-“প্রতিক্রিয়া মানে কি করে? আরহান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে?

সোহা ইশারা করে পিছনে সাজিদ মল্লিক ও সোনিয়া মল্লিকে দেখায় আরহান ও বুঝতে পারে তাই আর উত্তেজিত না হয়ে চুপচাপ যা হচ্ছে দেখতে থাকে তবে মায়ের কাছে সরে যায় না চুপচাপ জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। সোহা আরহানের কাছে মাকে ছেড়ে এগিয়ে যায় সাজিদ মল্লিক ও সোনিয়া মল্লিকের দিকে ।

-“তো বলুন মিস সোনিয়া মল্লিক সাজিদ মল্লিক ও ইমরান মেহতা আপনাদের কি করা উচিত? সোহা একটা চেয়ারে বসে পড়ে বলে ওঠে।

-” কি করা উচিত মানে টা কি? ওরা তোমাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিতে চেয়েছিল তাই অবশ্যই ওদের মৃত্যু অবধারিত। আমন পিছন থেকে সোহার কাঁধে দুই দিকে হাত রেখে বলে ওঠে।

-” আমন তুমি ওর পিছনে ওই ভাবে দাঁড়িয়েছ কেনো তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাইনা তাহলে কেনো? মণিকা কান্না কান্না ভাব নিয়ে বলে ওঠে।

-” ভালোবাসা? ওহ হো মণিকা সিলি গার্ল ভালোবাসা মানে কি আগে বলোতো? আমন হেসে বলে ওঠে।

এদিকে মণিকার কথা শুনে অ্যাস নীহার আকাশ সানি এগিয়ে এসে সোহা আমনের পাশে বসে যায়। তাদের মুখেও হাসি ফুটে আছে। সোহা একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে নেয় মণিকার দিকে তারপর আবারো দৃষ্টি দেয় সাজিদ মল্লিক ও সোনিয়া মল্লিকের দিকে ।

-“নিলজ্জের অন্তিম সীমা পার হয়ে গিয়েছে ইশ নিলজ্জের যদি কোনো অ্যাওয়ার্ড থাকতো তাহলে সেটা তুমি পেতে মিস মণিকা। নীহার বলে ওঠে।

-” গাছে কাঁঠাল এর গোঁফে তেল। গাছে কাঁঠাল হতে না হতে সব খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় তেল মেখে। তো তোমার ও অবস্থা ঠিক তেমনি আমনদা তোমার সাথে কি একটু ভালো করে কথা বলেছে কি বলেনি অমনি তুমি ভেবে নিলে আমনদা তোমাকে ভালোবাসে সিরিয়াসলি। আকাশ হাসতে হাসতে বিদ্রুপ করে বলে ওঠে।

-“আহারে ওই ভাবে বলিস না আকাশ মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে। কত কি না এর মধ্যেই ভেবে ফেলেছিলো ভাইকে বিয়ে করা নিয়ে। অ্যাস কটাক্ষ করে বলে ওঠে।

-” কি জ্বালা এখানে এতকিছু হওয়ার পরও যদি মিস মণিকা বুঝতে না পারেন তাহলে কি করার। সানি হাসতে হাসতে বলে ওঠে।

-” মণিকা রানী ফড়ফড়ানি কিছুই বুঝতে পারছেনারে পুরো দুধে ভাতে একটা মেয়ে কিছুই বোঝে না শুধু কাকে কিভাবে অপমান করতে হয় ছোটো দেখাতে হয় সেটাই জানে ন্যাকা সষ্ঠি। আচ্ছা ঠিক আছে আমিই বলে দিচ্ছি। ভাই যে তোমার সাথে ওই একদিন ডেকে ভালো করে কথা বলেছে তোমাকে লাঞ্চের ট্রিট দিয়েছে সবটাই ছিল একটা প্ল্যানের অংশ তোমার থেকে কিছু ইনফরমেশন নেওয়ার জন্য বুঝলে নাকি এখনো বুঝলে না। আর সম্পর্ক গড়ার কথা বলেছিলো না অবশ্যই সম্পর্ক হবে সেটা কি জানো একজন পুলিশ অফিসারের সাথে একজন ক্রিমিনালের কি সম্পর্ক থাকতে পারে মিস মণিকা। অ্যাস বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।

এদিকে এদের সবার পিঞ্চ মারা কথা শুনে আমন হাসতে থাকে সোহা ও বাঁকা হেসে তাকিয়ে থাকে সাজিদ মল্লিক ও সোনিয়া মল্লিকের দিকে । সোনিয়া মল্লিক চুপচাপ ভয়ে ভয়ে বসে আছে তার চোখ শুধু এদিকে ওদিকে হচ্ছে সে সোহার চোখে চোখ রাখতে পারছেনা সাথে সোহার ওই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও নিতে পারছেনা তাই অস্থির হয়ে এদিকে ওদিকে দেখছে। ইমরান মেহতা চোরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পালানোর চেষ্টা করছে সে। সোহা সব কিছু বুঝতে পেরেও চুপ করে বসে আছে বাঁকা হেসে।

-“মানে সব নাটক ছিলো সব তোমাদের প্ল্যান ছিলো আমন তুমি আমার থেকে ইনফরমেশন নেওয়ার জন্য ভালো করে কথা বলেছিলে । তুমি আমাকে ভালোবাসো না সব প্ল্যান ছিল নাটক ছিলো। না না এটা হতে পারেনা ওরা মিথ্যে বলেছে তাইনা আমন বলো তুমি বলো ওরা মিথ্যে বলেছে তাইনা। তুমি যে বলেছিলেন তুমি আমাদের একটা সম্পর্ক দিতে চাও একটা নাম দিতে চাও তাহলে সব কি মিথ্যে ছিল আমন। মণিকা পাগলামি করে বলে ওঠে।

-” একদমই না মিথ্যে ছিল কোথায়। তোমাকে শ্রী ঘরে নেওয়ার আগে তোমার কে আমার সাথে সময় কাটানোর সুযোগ মিললো তুমি আমার সাথে লাঞ্চ করলে কত ভালো একটা গিফট তোমাকে আমি দিলাম এটা কি মিথ্যে হতে পারে তুমি বলো। আর সম্পর্ক সেটার তো নাম দেওয়া হবে তাইনা। এই যে একটু আগে আয়ু বললো না ক্রিমিনাল আর পুলিশের সম্পর্ক কি হয় সেই সম্পর্ক হবে। আমন বলে ওঠে ।

আমনের কথা শুনে আকাশ সানি অ্যাস নীহার হেসে ফেলে আর আভা চৌধুরী সম্রাট চৌধুরী অবাক চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আমনের কথা গুলো।

-“ক্রিমিনাল মানে কিসের ক্রিমিনাল আর পুলিশের সম্পর্কের কথা বলছো আমন? মণিকা ঘাবড়ে যাওয়া গলায় বলে ওঠে।

-” ওমা তুমি জানো না বুঝি তাহলে ভয় কেনো পাচ্ছো ডিয়ার মনু বেবি নীহার মুখ ভাঙিয়ে বলে ওঠে।

-“সেই রাতের কথা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে কি করে মণিকা। তুমি লোক পাঠিয়ে ছিলে সোহাকে মেরে ফেলার জন্য মনে পড়ে কিছু মণিকা? আমন বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।

আমনের কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় মণিকা। সেইদিন রাতে যখন সোহা আমন তার বাংলো থেকে ফিরছিলো রাস্তায় সোহার উপরে যে হামলা টা করা হয় সেটা মণিকার লোক ছিল। আসলে আমনের সাথে বারবার সোহাকে দেখে আর অ্যাসের কথা শুনে মণিকা সোহার উপরে রেগে ছিল তাই সে সোহাকে শেষ করার জন্য লোক পাঠিয়ে ছিল তারা সোহাকে ফলো করছিলো কিন্তু মাঝপথে গিয়ে সোহাকে হারিয়ে ফেলে তাই ওখানেই অপেক্ষায় ছিল আর শেষে সোহা আমনকে ফিরতে দেখে সুযোগ বুঝে সেদিন রাতে তারা সোহার উপরে আঘাত হানে তবে সেদিন আমন সবটা সামলে নিয়েছিলো। আমন তার লোক দিয়ে ওই লোক গুলো কে তুলে নিয়ে গেছিলো ওদের থেকে আমন জানতে পারে মণিকার নাম আর তারপরেই আমন মণিকার সাথে ভালো ব্যবহার করে।

-“কি মণিকা রানী কিছু মনে পড়লো তাহলে। উম মুখ দেখে তো সেটাই মনে হচ্ছে যে মনে পড়ে গেছে সব কিছু তাহলে আর বুঝতে বাকি নেই তো ভাই তোমার সাথে কিসের সম্পর্কের কথা বলেছিলো। অ্যাস তাচ্ছিল্য হেসে বলে ওঠে।

-” এটা হতে পারেনা কিছুতেই হতে পারেনা আমন আমার সাথে এটা করতে পারেনা আমন আমাকে ভালোবাসে আমন শুধু আমার। মণিকা নিজের মনে বলে ওঠে।

মণিকার কথা শুনে আর আচরণ দেখে আকাশ সানি অ্যাস নীহার আমন সব সতর্ক দৃষ্টিতে তাকায়। সোহা একবার শুধু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিয়ে আবারও আয়েশ করে বসে নিজের দৃষ্টি সাজিদ মল্লিক ও সোনিয়া মল্লিকের দিকে দেয়।

-“আমার মেয়ের সাথে এই অবিচার আমি মেনে নেবো না। আমন তুমি আমার মেয়ে কে ঠকিয়েছ আমি তোমাকে ছাড়বো না আমি কাউকে ছাড়বো না এখানের সবাইকে মেরে ফেলবো। সোনিয়া মল্লিক বলে ওঠে হটাৎ করে নিজের পিঠের নিচের সোফার কূশন তুলে গান বের করে উঠিয়ে ধরে।

সোনিয়া মল্লিকের এই কাজে সোহা হেসে ফেলে। সোনিয়াকে এমন করতে দেখে মণিকার সাহস বেড়ে যায় সে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে গার্ড এর কাছে থেকে আচমকা একটা গান নিয়ে নেয়। ইমরান মেহতা ও এতক্ষণ সুযোগ খুঁজছিলো আর এই সুযোগে তিনিও তার থেকে গান বের করে। তারা দুজনই আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে যুক্ত তাই ওদের কাছে যে সব সময়ে গান থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এতক্ষণ বের করতে পারিনি এখন যেহেতু সোহা বসে আছে আর কিছু বলছে না সেই সুযোগ কাজে লাগায়। তবে ওদের এমন কাজে সোহা জোরে হেসে ফেলে তার সামনে যেনো মজার কোনো কিছু হচ্ছে। সোহা এতক্ষণ এই জন্য চুপ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে ছিল।

-“বাহ এটাইতো চাইছিলাম এতক্ষণ আরে ভাই এতক্ষণ শুধু প্রশ্ন উত্তর খেলা হয়েছে এটা আমার কাছে বহুত বোরিং ছিল তাই বসেছিলাম তোমাদের এই রূপ দেখার জন্য এন্ড সি দেখেইনিলাম। সোহা হেসে বলে ওঠে।

সোহার এমন হাসি দেখে সোনিয়া মল্লিক ইমরান মেহতা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। আভা চৌধুরী সম্রাট চৌধুরী ও কিছুটা ভয় পেয়ে তাকিয়ে আছে আরহান আক্রম তারা দুই ভাই এখনও মায়ের কাছে বসে আছে তাদের এই দিকে কোনো খেয়াল নেই। অ্যাস নীহার আকাশ সানি ওদের মুখেও হাসি লেগে আছে।

সোহার কথা শুনে সোনিয়া মল্লিক তার পাশে বসা সাজিদ মল্লিকের মাথায় গান ধরে। এতে সোহা আরো জোরে হেসে দেয়। এখনও সেই আগের মত আয়েশ করে বসে থাকে।

-” আমাদের কে যেতে দে নাহলে একে এখানেই মেরে দেবো যতো হোক বাপ হয় তোর। সোনিয়া মল্লিক শয়তানি হেসে বলে ওঠে।

-” কোনো ব্যাপার না মেরে দিন। কেউ হয় না ওই লোক। শুধু আমার ভাগ্যের দোষ যে আমার শরীরে ওই নোংরা লোকের রক্ত বইছে তবে যদি পুরো শরীরের রক্ত পাল্টানো যেতো তাহলে আমি তাই করে নিতাম। যদিও এখন সেই উন্নত মানের পদ্ধতি ও চলে এসেছে। সোহা গা ছাড়া ভাব করে বলে ওঠে।

-” সত্যি বলছি মেরে দেবো কিন্তু। আমাদের যেতে দে নাহলে এখানেই মেরে দেবো । সোনিয়া মল্লিক আবারো হুসিয়ারি দেওয়ার মতো করে বলে ওঠে।

এদিকে মণিকা পিছন থেকে গান নিয়ে সোহার দিকে তাক করে ট্রিগারে চাপ দিয়ে শুট করতে যাবে তার আগেই আমন মণিকার হাতে শুট করে দেয়। ঘটনা টা এত দ্রুত ঘটেছে যে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আর এদিকে সোহা ও নিজের কোমর থেকে গান বের করে পর পর দুটো গুলি চালিয়ে দেয়। সোনিয়া মল্লিক ও ইমরান মেহতার উপর। আমন সোহা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে ।

সোনিয়া মল্লিক ও ইমরান মেহতার হাতে গুলি করেছে সোহা। হাতের থেকে গান দূরে ছিটকে পড়েছে। মণিকার ও একই অবস্থা তার হাতে আমন গুলি করেছে। আভা চৌধুরী সম্রাট চৌধুরী চোখ বড় বড় করে আমনকে দেখতে থাকে তাদের যেনো বিশ্বাস হচ্ছেনা আমনের মত এত শান্ত একটা ছেলে কিনা গান চালাচ্ছে এটা কি করে হতে পারে। তারা অ্যাসের ব্যাপারটা জানলেও আমনযে একজন স্পাই অফিসার এটা তারা কেউ জানেন না তাই এই অবস্থা।

-“এই সব কিছু আমার কাছে কোনো নতুন ব্যাপার না মুখ দেখলেই বুঝতে পারি অপরাধী কি করতে চলেছে তাই আমি এতক্ষণ বসে বসে এইটার অপেক্ষা করছিলাম। তোরা যা অপরাধ করেছিস তার শাস্তি একটা বুলেট হতে পারেনা। আর আমার নিয়ম একদম আলাদা। যেটা আমার তৈরী। আজ পর্যন্ত যে সব কেস আমি ক্লোজ করেছি তাদের মধ্যে একজন অপরাধী ও আমার হাতের থেকে বেঁচে ফিরতে পারেনি। তাহলে তোরা এত বড় অপরাধ করে কি করে ছাড়া পেয়ে যাবি একটু বল। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে যুক্ত হয়ে কত বেআইনি কাজ করেছিস কোট নিষ্পাপের প্রাণ নিয়েছিস কত মায়ের কোল খালি করেছিস এত সব কাজের পর তোরা কি করে আসা করিস পালিয়ে যাবি আর আমি যেতে দেবো। তোদের জন্য শুধু একটাই পথ খোলা আছে আর সেটাও ভয়ঙ্কর মৃত্যু।

তোদের মত লোকদের যদি আইনের হাতে ছেড়ে দেওয়া কয়েকদিন জেলে কাটিয়ে তোরা পালিয়ে যাবি নাহলে পাওয়ার ইউজ করে ছাড়া পেয়ে যাবি। পয়সা আর পাওয়ার এর আড়ালে তোদের করা অপরাধ গুলো চাপা পড়ে যাবে। তোরা আবারো সমাজের বুকে থেকে নিজেদের পাপ কাজ চালিয়ে যাবি কত বেআইনি কাজ করবি কত মায়ের কোল খালি করবি কত নিষ্পাপের যে প্রাণ নিবি তার কোনো ঠিক নেই। সবাই বলে নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না আইন তোদের শাস্তি দেবে আসলেই কি আইন তার শাস্তি দিতে পারে ঠিক। না দেশের আইন এখন অন্ধ। যারা অপরাধী তারা সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর যারা নির্দোষ তারাই শাস্তি পায় কেনো বল এটাই কি দেশের আইন। কত কত নিষ্পাপ মেয়েদের কে তোদের মত জানোয়ার কীট নিজেদের ভোগের জন্য ব্যবহার করিস তারপর তাকে প্রাণে মেরে ফেলিস এতে কিন্তু তোদের মত কীটদের কোনো শাস্তি হয়না তখন পাওয়ার এর জোরে ছাড়া পেয়ে যাস আর যে ধর্ষিত হচ্ছে সেই সমাজে নোংরা হয়ে থেকে যায় সমাজে তাদের কে হেও করা তাদের নিচু চোখে দেখে তাদের ঘৃণা করে কেনো তারা কি অপরাধ করেছে তাদের দোষটা কোথায় তারা মেয়ে বলে। একদল লোক বলে জামা কাপড়ের জন্য সমাজে ধর্ষণ হচ্ছে তাহলে যে ছোট্ট শিশু গুলো তাদের কিসের জন্য ভোগের বস্তু বানানো হয়েছে তাদের শরীর দেখেও কি কাম জাগে। তাই আমার কাছে কোনো আইনের মারপ্যাচ নেই শাস্তি নিজের হাতে দেই। না কোনো কোর্ট থাকবে না কোনো শাস্তি মুকুব করা হবে সোজা উপরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যদি দেশের আইন এমন করে দিত তাহলে আজ এত অপরাধীর সংখ্যা বাড়তো না। সমাজে ধর্ষিতদের কে যদি নিচু চোখে না দেখে তার পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদের লড়াই করা হতো তাহলে সমাজ কিছুটা হলেও অপরাধী মুক্ত হতো। কিন্তু তারা তো পরনিন্দা করতে ব্যস্ত থাকে। সোহা এক নিঃশ্বাসে বলে ওঠে।

সাজিদ মল্লিক চুপ করে বসে আছে আর এদিকে সোহার কথা গুলো শুনে সোনিয়া মল্লিক ও ইমরান মেহতা ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে। আভা চৌধুরী সম্রাট চৌধুরী সোহার কথা শুনে চুপ করেই তাকিয়ে আছে। সোহা সানি আকাশ ওদের ইশারা করতে আকাশ বেরিয়ে যায়।

এদিকে আরিনা জৈন সেই থেকে এক ভাবে সাজিদ মল্লিকের দিকে তাকিয়ে আছে তার একে একে সব কিছু ধোঁয়াশা থেকে পরিষ্কার হচ্ছে। গুলির আওয়াজ হতে তার মস্তিষ্ক যেনো আরো দ্রুত কাজ করতে শুরু করেছে একে একে সব কথা মনে পড়ে যাচ্ছে তার সাথে হওয়া সব ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে। সেই দিনের সেই ঘটনা যেদিন তার গাড়ির সাথে ট্রাকের ধাক্কা লাগে আর সব কিছু শেষ হয়ে যায়। মনে পড়তেই চিৎকার করে ওঠে দু হাতে মাথা চেপে ধরে। মায়ের এমন চিৎকার শুনে সোহা ছুটে যায় তার মায়ের কাছে। আরহান আক্রম দুইজনই মাকে জড়িয়ে ধরে রাখে। আরিনা মল্লিক একভাবে নিজের মাথা নাড়িয়ে যাচ্ছে আর না না করে চিৎকার করে যাচ্ছে।

-“মাম কি হয়েছে? মাম দেখো সব ঠিক ache এই দেখো সব ঠিক আছে। সোহা তার মায়ের মুখে হাত দিয়ে বলে ওঠে।

-” আ আ আ আন্নি আ আ আক্কি অনেক কষ্ট করে সোহার মাম বলে ওঠে।

মায়ের মুখে নিজেদের নাম শুনে আরহান আর আক্রম কেঁদে ফেলে খুশিতে। সোহার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে।

-“মাম এই দেখো তোমার দুই ছেলে তোমার আন্নি আর আক্কি দেখো কত বড় হয়ে গেছে দেখো তোমার সামনে বসে আছে। সোহা কান্না ভেজা গলায় বলে ওঠে।

আরিনা জৈন তার দুই ছেলে মুখের হাত রেখে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে কেঁদে ফেলে। সাথে আরহান আক্রম ও কেঁদে দেয়। সোহা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলে। আজ তার সব থেকে খুশির দিন তার মাকে সে এত বছর পর ফিরে পেয়েছে। এতদিন তো বেঁচে থেকেও জড়ো পদার্থের মত ছিল।

-“আরিনা । সাজিদ মল্লিক ডেকে ওঠে।

-” জাস্ট সাট আপ । নিজের ওই নোংরা মুখে আমার মায়ের নাম উচ্চারণ ও করার ভুল করবেন না। সোহা হুঙ্কার ছেড়ে বলে ওঠে।

-“সোহা বেটা আমি… সাজিদ মল্লিক কে কোনো কথা বলতে না দিয়েই সোহা চিৎকার করে ওঠে।

-” একদম চুপ নিজের মুখে আমার নাম ও নেবেন না। এটা আমার ভাগ্যের দোষ যে আমার শরীরে আপনার রক্ত বইছে কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি আপনার মেয়ে হয়ে গেছি আমি আপনার কেউ নয় কেউ না। আপনার সাথে না আমার কোনো সম্পর্ক আছে আর না আমার মামের সেই দিনের পর থেকে আপনি কেউ নয় আমাদের জন্য। আমার ড্যাড ধীরাজ জৈন আপনি নয়। একটা কথা কি জানেন তো জন্ম দিলেই বাপ হওয়া যায় না আর তাছাড়া আপনি তো আমাকে পৃথিবীতে আসার আগেই আমার মায়ের পেটের মধ্যে আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছিলেন। তাই কেউ হননা আপনি কেউ না। কোনো সম্পর্ক নেই আপনার সাথে। তাই আপনার ওই মুখ দিয়ে না আমার নাম নেবেন আর না আমার মায়ের আপনার নাম ব্যবহার করতে ও আমার ঘৃণা লাগে। আমি শুধু সোহা জৈন । ধীরাজ জৈন ও শ্রেতা জৈনের মেয়ে যারা আমাকে নিজের পরিচয়ে বড় করেছে তারাই আমার পেরেন্টস আপনি নন।

আরিনা সাজিদ কে দেখে ভয় পেয়ে যায় আরহান আক্রম কে একহাতে আকড়ে ধরে অন্য হাতে সোহার হাত চেপে ধরে। সোহা মায়ের হাতে হাত রেখে আশ্বস্ত করে।

-” মাম তুমি একদম ভয় পাবেনা আমি আছিতো কিছু হবেনা আর তোমার আমি কিছু হতে দেবো না। তোমার প্রতি হওয়া প্রত্যেকটা অন্যায়ের শাস্তি আমি দেবো। সোহা বলে ওঠে।

আকাশ বাড়ির ভিতর ঢুকে সোহার দিকে একটা বক্স এগিয়ে দেয়। সোহা বক্স খুলে তার ভিতর থেকে সিরিঞ্জ বের করে ইমরান মেহতার দিকে এগিয়ে যায়। সোহার হাতে সিরিঞ্জ দেখে সোনিয়া মল্লিক ইমরান ভয় পেয়ে যায়। সোহা এগিয়ে গিয়ে ইমরান মেহতা আর সোনিয়া মল্লিকের হাতে পুষ করে দেয়।

-“এটা এমন একটা বিষ যেটা তোমাদের শরীর কে আসতে আসতে একটু একটু করে পচিয়ে দেবে তোমাদের হাড় মাংস ও গলিয়ে দেবে। একটু একটু করে তোমরা নরকের যন্ত্রণা উপভোগ করে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। তোমরা যন্ত্রণায় ছটফট করে মৃত্যু চাইলেও মৃত্যু পাবে না আর না কেউ তোমাদের কে বাচাতে পারবে। এর থেকে ভালো মৃত্যু আর নেই হাত পা কেটে নিলে ওতো অল্প শাস্তি হবে কিন্তু এটা নরক যন্ত্রণার থেকেও বেশি হবে একটু একটু করে উপরে যাবে। সোহা বলে ওঠে।

-“লিটন এদের দুইজন কে নিয়ে যাও গিয়ে টর্চার রুমের পাশে রেখে দেবে এদের অন্তিম পর্যায় শেষ হয়ে গেলে যদি কোনো অংশ বেঁচে থাকে তাহলে তা পুড়িয়ে দেবে। সোহা বলে ওঠে।

-” সোহা আর সাজিদ মল্লিককে করবি? আকাশ জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“এটা ওনাকে পুষ করে দে। চিন্তা নেই উনি মরবে না এত সহজ মৃত্যু আমি উনাকে দেবো না। সারাজীবনের জন্য বেঁচে থেকেও মৃত্যু লাশ হয়ে পড়ে থাকবে শেষে শরীর পচন ধরে মৃত্যু বরণ করবে। আমার মাম আজ পঁচিশ বছর ধরে যেই জীবন ভোগ করে আসছে আজ থেকে এই লোক ও তেমন কষ্টের জীবন ভোগ করবে। আর উনার নামের যতো এভিডেন্স আছে সব গুলো সাবমিট করেদে আমি কথা বলে নেবো যাতে ওনার জন্য জেলের কাল কুঠুরি প্রস্তুত করে রাখে। সোহা কঠিন কাঠ কাঠ গলায় বলে ওঠে।

আরিনা জৈন চুপ করে শুনে যায় সব কিছু তবে তার চোখে কোনো রকম সহানুভূতি বা কোনো অনুভূতি কাজ করছে না দৃষ্টি একদম স্বাভাবিক। সাজিদ মল্লিক নিজের মেয়ের মুখে এমন শাস্তি শুনে ডুকরে কেঁদে ওঠে তবে কিছুই বলেনা তিনি আজ পাথর হয়ে গেছে। তার বলার মতো কোনো কথা নেই সে সত্যি আজ তার অপরাধ গুলোর শাস্তির জন্য প্রস্তুত আজ তার অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই তিনি তার স্ত্রী কে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছিলো ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছে সেইদিন নাহলে মারা যেতো। যদি আর। আরহান আর আক্রমের নামে সব কিছু লেখা না থাকতো তাহলে আজ আরহান আক্রম ও বেঁচে থাকত না। তাছাড়া ও এতদিনে ও তিনি কখনো তার দুই ছেলেকে তার ভালোবাসা দেইনি বরং উল্টে অবহেলা করে গেছে অপমান করে গেছে তিনি শুধু মণিকা কে নিয়েই থেকেছে তাই এই সময়ে এসে বুঝতে পারছেন তিনি কতো অপরাধ করেছে আজ এটুকু তো তার প্রাপ্য। আরহান আক্রম ও আজ ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের এই পর্যন্ত জীবনে কখনো তারা বাবার আদর কি সেটা পাইনি শুধু বাবা আছে এটা জানে কিন্তু কখনো আদর জিনিসটা পাইনি। তবুও যেটুকু মায়া ছিল সেটাও শেষ হয়ে গেছে তাদের মায়ের উপরে করা অপরাধের কথা শুনে।

কয়েকজন গার্ড সোনিয়া মল্লিক ও ইমরান মেহতা ও সাজিদ মল্লিককে তুলে নিয়ে চলে যায়। এদিকে মণিকা সবার অন্য দিকে মনোযোগ থাকার সুযোগ নিয়ে দূরে তার হাত থেকে ছিটকে পড়া গান টা তুলে নিয়ে সোহার দিকে গুলি চালিয়ে দেয়। আমন খেয়াল করে দ্রুত সোহাকে নিজের দিকে টেনে নেয় গুলি সোহার হাত ছুয়ে বেরিয়ে যায়। আমন সোহা কে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে নেয়। মণিকা সোহার হাত ছুয়ে গুলি বেরিয়ে গেছে দেখে আবারো গুলি চালাতে যায় তবে তার আগেই আমন নিজের গান উঁচু করে সোজা মণিকার মাথায় চালিয়ে দেয়। আমনের চোখ মুখ থেকে যেনো আগুন বের হচ্ছে তার চোখ দুটো থেকে ও আগুনের গোলা বের হচ্ছে যেনো। মেয়েটা এত অপরাধ করার পর ও তাকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু সোহাকে আক্রম করায় বেঘোরে প্রাণ টা হারালো। সোহা এখনও আমনের বুকে লেপ্টে আছে। সোহার মাথা ঠিক আমনের বুকের উপর রয়েছে সোহা স্পষ্ট আমনের দ্রুত ছুটতে থাকা হার্টবিট শুনতে পায়। আমন যে কতটা ভয় পেয়ে গেছিলো এই দ্রুত হার্টবিট তারই প্রমাণ। সোহা মাথা উঁচু করে আমনের মুখের দিকে তাকায় দেখে কেমন আগুন হয়ে আছে চোখ মুখ। এদিকে বাকিরা ও ছুটে আসে সোহার কাছে। সোহার হাতে থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে। আক্রম ছুটে যায় ফার্স্টএড বক্স আনতে। সোহা তার পাশে থাকা সবাই কে একবার দেখে নিয়ে দূরে পড়ে মণিকার নিথর দেহটা দেখতে থাকে। সে এই মেয়েটা কে মারতে চাইনি কিন্তু মেয়েটা নিজের দোষে নিজেই মরেছে।

চলবে…… ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here