একটু_একটু_ভালোবাসি
পর্বঃ১১,১২
লেখিকাঃশাদিয়া_চৌধুরী_নোন
পর্বঃ১১
সেদিনের মতো সাবির আর তার মা চলে গেলো। জসিরাতের বাবা বিয়েতে মত দিয়ে দিয়েছেন। তিনি সাবিরকে মেয়ে জামাই করতে রাজি। শুধু তাই নয়, আগামী মাসেই সাবিরের মা সিরাতকে বউ করে ঘরে তুলতে চান। সাবির’রা চলে যাওয়ার পর সিরাতের মা পুরো বিল্ডিংয়ে মিষ্টি বিলি করলেন।
অন্যদিকে সব শুনে সিরাত তব্দা মেরে বসে পড়ল ফ্লোরে। কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না দেখে তানিশা তার হাত ধরে ঝাঁকাতে লাগলো। তবুও সিরাত নির্বিকার। হুট করে বলে বসলো,
—- আন্টি আমাকে মেরে ফেলো। আমি ঐ পাগলকে বিয়ে করতে পারবো না। শুধু ঐ পাগলকো বিয়ে কেনো, আমি এখন বিয়েই করবো না। আমি পালিয়ে যাবো।
তানিশা ব্যাপারটাকে হালকাভাবেই নিলো। কারণ, সিরাত মুখে অনেক বড় বড় কথায় বলে কিন্তু কাজের বেলায় ফাঁকা।
—– পাগল হয়ে গেছিস?
—- আন্টি তুমি খেয়াল করেছো? বাবা-মা কেউই আমার কোনো মত নেয়নি। আমার কি কোনো কথা থাকতে পারে না? আমি এতো পর হয়ে গেছি? আমি পালিয়ে যাবো আন্টি। সত্যিই পালিয়ে যাবো।
—- তুই যা-ই বলিস ভাই, সাবিরের কিন্তু দম আছে মানতে হবে। ভাবা যায়? সেদিন তোকে একপলক দেখার জন্য একেবারে গ্রামে গিয়ে হাজির হয়েছিলো। যাকে তুই ঠিকমতো চিনতিসই না, সেই ছেলেটাই আজ তোর হবু বর। তুই যেমন বিহেভ করিস, ছেলেটা কিন্তু মোটেও খারাপ না। ভালোবাসে তোকে..
সিরাত এবার চোখ গরম করে তাকালো,
— আন্টি আমাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করবে না। ধ্যাত! তুমিও আমার কথার গুরুত্ব দিচ্ছো না….
———————-
আরো কয়েকটা দিন গেলো। সিরাত সেদিনের পর থেকে আর কলেজে যায়নি। না, কেউ মানা করেনি। ইচ্ছে করেই যাচ্ছে না। শেষমেশ থাকতে না পেরে তার মা বললো,
—- কীরে কলেজে যাচ্ছিস না কয়দিন?
সিরাত গলা নিচু করে বললো,
— কলেজে গিয়ে কি হবে মা? এমনিতেও বিয়ে হয়ে যাবে।
—-পড়ালেখা থেকে মন উঠে গেছে তাহলে?
—- মন থেকে কি হবে মা? এমনিতেও বিয়ে হয়ে যাবে।
—–সাবির তোকে কল করলে রিসিভ করিস না কেন?
— কথা বলে কি হবে মা? এমনিতেও বিয়ে হয়ে যাবে।
কথাটা বলেই জিভ কাটলো সিরাত। কি বলতে কি ফেলেছে ইশশ! মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে এলো। তানিশা মাত্রই তার বরের সাথে কথা বলে বারান্দা থেকে এসেছে। সিরাতকে লজ্জা পেতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো তার। মাথায় টোকা দিয়ে বললো,
—– কি ব্যাপার?
— ব্যাপার হলো তোমরা আমার কথার গুরুত্ব দিচ্ছো না। আমি সত্যিই পালিয়ে যাবো।
তানিশা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—- দেখা যাবে।
—- সে কথা বাদ দাও। তুমি নাকি চলে যাবে বলেছো? শুনো তুমি এখন যেতে পারবে না। গ্রামে গিয়ে কি করবে?
তানিশা দীর্ঘশ্বাস ফেললো একটা,
—- আপাও তাই বললো। দেখি তোর খালু যদি অনুমতি তাহলে থাকবো।
—-আমি উনাকে বুঝিয়ে বলবো। তুমি চিন্তা করো না।
—-আচ্ছা।
পরদিন সকাল,
সিরাত সুযোগসন্ধানী দৃষ্টিতে সবার মতিগতি পর্যবেক্ষণ করছে। আজও সে কলেজে যায়নি। বাবা অফিসে, ইফতিও স্কুলে। মা গেছে পাশের বাড়িতে। আর তানিশা ঘুমোচ্ছে। এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো সিরাত। তার কথাকে আজ কাজে পরিণত করবেই করবে। আজ বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবেই যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। নিজের জমানো টাকা যা আছে তা নিয়ে একেবারে রেডি হয়ে রাস্তায় পর্যন্ত চলে এলো। মোবাইলটা সুইচড অফ করে ভাবতে লাগলো, কোথায় যাবে এখন। লাইব্রেরিতে যাওয়া যায়। এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেও কেউ কিছু বলবে না।
ফুরফুরে মেজাজে লাইব্রেরিতে গেলো সিরাত। একটা ইংরেজি নভেল বুক হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। এদিকে সিরাতের চিন্তা হচ্ছে। মা নিশ্চয় এতোক্ষণে বাড়িতে চলে এসেছে। তানিশা আন্টি জেগে গেছে। বাবাকে কল করে বলে দিয়েছে। ইফতি হয়তো কান্না শুরু করে দিয়েছে। থানায় গিয়ে ডায়রী করেছে। পত্রিকায়ও তার ছবি দিয়ে নিখোঁজ সংবাদ ছাপা হয়েছে। ধূর! এসব কি ভাবছে সে। একটু বেশি হয়ে গেলো না? একরাশ দ্বিধা নিয়ে নিয়ে মোবাইলটা অন করলো। বিশ মিনিট পার হয়ে গেলো কিন্তু কেউ কল করলো না। কি ব্যাপার! এতোক্ষণে তো শ’খানেক কল আসার কথা। ভেবেচিন্তে আবার মোবাইলটা অফ করে আশেপাশে তাকালো। লাইব্রেরিয়ান ছেলেটা কেমন চোখে যেন তাকাচ্ছে। এদিকে খিদেয় পেড় চুঁচুঁ করছে। দুপুর তো সেই কখন পেরিয়ে গেছে।
একটা স্বস্তা রেস্টুরেন্টে ঢুকে সিরাত দুপুরের আহার সারলো৷ রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলো, এখন কি করা যায়? কেনো যে পালিয়ে এলাম!!! বাড়িতে সবাই কি আমাকে ভুলে গেছে? কোথায় যাবো এবার? ইয়েস! শিলার বাড়িতে যাওয়া যায়। আন্টি আমাকে অনেকদিন হলো যেতে বলেছে। শিলার সাথেও কথা হয়না অনেকদিন। এই ফাঁকে ওখানে থেকেই ঘুরে আসি বরং!
একটা রিকশায় চেপে সিরাত এবার শিলার বাড়িতে চলে গেলো। দুই বান্ধবী মিলে অনেকক্ষণ গল্প করলো। শিলার মা সিরাতকে ভীষণ পছন্দ করেন। এমন শান্তশিষ্ট মেয়ে আর একটা ম্যাগনিফাইন গ্লাস দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। সেই শান্তশিষ্ট লেজহীনবিশিষ্ট সিরাত নামের মেয়েটা যে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে শুনলে, এই বুড়ো বয়সে হার্টঅ্যাটাক করতে হতো উনাকে।
সন্ধ্যার সময়,
সিরাত এবার গাঁইগুঁই শুরু করেছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। মনের ভেতর কু ডাকছে। বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে। মা আজ ওর ঠ্যাং ভেঙে ফেলবে নির্ঘাত। বাবা মিনিটে মিনিটে একটা করে চড় মারবে। তানিশা আন্টিও হয়তো রাগ করে কথা বলবে না। রাগে দুঃখে সিরাত কেঁদে দিলো।
আকাশসম রাগ নিয়ে সিরাত এক ভয়ংকর কান্ড করে বসলো। মোবাইল অন করে সরাসরি সাবিরকে কল করলো। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই বোকাসোকা কণ্ঠে বললো,
—- শুনেন? আপনারা জন্য আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। সব আপনার দোষ। এখন আপনি এর দায়ভার নিবেন। আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবেন।
চলবে
#একটু_একটু_ভালোবাসি
#পর্বঃ১২
লেখিকাঃ #শাদিয়া_চৌধুরী_নোন
—–শুনেন? আপনারা জন্য আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। সব আপনার দোষ। এখন আপনি এর দায়ভার নিবেন। আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবেন।
সিরাত নিজের কণ্ঠস্বরকে কঠিন করার চেষ্টা করলো কিন্তু সে সক্ষম হলো না। আগের মতোই কঠিন শোনালো। এতে নিজের উপর আরো রাগ এসে জমা হলো। ফোনের ওপাশ থেকে সাবির কোমল গলায় তাকে কয়েক দফা অবাক করে দিয়ে বললো,
—- জান! এসব কথা নিচে এসে বলো। আমি তোমার জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি জানো? তাড়াতাড়ি এসো।
সিরাত অবাকের শেষ পর্যায়ে গিয়ে হা করে রইলো। মানে কি! মজা করছে নাকি আবার? মিনিট খানেক চুপ করে আবার বললো,
— আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?
— মজা করবো কেন রে বাবা! আমার অলরেডি ঘুম পাচ্ছে। প্লিজ!
সাবিরের কণ্ঠে এবার বিরক্তির প্রকাশ পেলো।
সিরাত কল কেটে তড়িঘড়ি শিলাকে বিদায় জানিয়ে নিচে এলো। এদিকওদিক উঁকি দিয়ে সাবির কি, সাবিরের কোনো ছায়াকেও দেখতে পেলো না। সিরাত রাগ নিয়ে আবার কল করলো সাবিরের ফোনে। আশ্চর্য! এতক্ষণ ফোন অন করার পরেও বাড়ি থেকে একটাও কল এলো না। কেউ না করুক তানিশা আন্টিও এমন করলো? সত্যিই কি সবাই ভুলে গেছে?
সিরাতকে মোবাইল কানে দিতেও হলো না তার আগেই, সাবির একটা গাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। সাবিরকে দেখেই সিরাত কাচুমাচু করে মোবাইল ব্যাগে রেখে মাথা নিচু করে রইল। এই লোকটাকে দেখলেই তার সব ছেড়ে ছুঁড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। বুকের অসম্ভব পরিমাণে ঢোল পেটায়। হার্টবিট বেড়ে গিয়ে অস্বাভাবিক হারে লাফাতে শুরু করে। তখন মনে হয়, ঐ ঢিপঢিপ শব্দটা তার আশেপাশে থাকা প্রত্যেকটা মানুষ শুনতে পাচ্ছে। লজ্জায় নুইঁয়ে পড়তে চায় সিরাত। সাবির তাকে তাড়া দিলো,
—- সবার দ্বারা সবকিছু হয় না রাত। সারাদিন এদিকসেদিক ঘুরে বেড়ালে আর শেষে কি হলো? তোমার দৌড় কতদূর আমার জানা আছে। তাড়াতাড়ি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে হবে। তোমার বাবা আমার মাথা খেয়ে ফেলেছে।
সিরাতকে আবার অবাক হতে হলো।
— আপনি সবকিছু জানতেন?
সিরাতকে গাড়িতে উঠিয়ে, সাবিরও পাশে বসলো। সামনে ড্রাইভার গাড়ি ড্রাইভ করছে। সাবিরের চোখেমুখে চিন্তার রেখা। ভ্রু কুঁচকে ড্রাইভারকে একেরপর এক ধমক মেরে চলেছে সে।
—- শান্ত! তোকে আমি বলেছিলাম শর্টকাট রোড দিয়ে যেতে। গাড়ি ঘোরা তাড়াতাড়ি। ক’টা বাজে দেখেছিস? তোকে সাথে আনাটাই বোধহয় ভুল হয়েছে। ডিজগাস্টিং!
সাবিরের এমন ব্যবহার দেখে সিরাত ভয় পেয়ে গেলো। ভয়ে নিজেকে খানিকটা গুটিয়ে নিলো। সাবিরের এমন ব্যবহার আজই প্রথম দেখছে সে। শান্ত নামের ছেলেটা তো টু শব্দটাও করলো না। সিরাত হলে নিশ্চিত কেঁদে দিতো। এই লোকটাকে তো সেদিনই, সে আর তানিশা মিলে অনেক কথা শুনিয়েছিল। বিশেষ করে তানিশা, থাপ্পড় মারবে বলেছিল। তবুও সাবির কিছু বলে নি আর আজ সামান্য একটা ব্যাপারে সাবিরের এতো রাগ দেখে ভয় পেয়ে গেলো সিরাত।
— রাত! তুমি কিছু খেয়েছো? কিছু কিনে আনবো? কোল্ডড্রিঙ্কস? বার্গার? স্যান্ডউইচ? খাবে?
সিরাত মাথা এদিকে-ওদিক করে ‘না’ বোঝালো। সাবির সন্তুষ্ট হলো না।আবার বললো,
—- পানি খাবে? এই শান্ত! তোর পাশে আমি ফ্রেশ ওয়াটার রেখেছিলাম। দেখতো!
সিরাত অনুভব করলো, আসলেই গলাটা শুকিয়ে একেবারে গ্রীষ্মকালের খরার মতো ফাটা চৌচির হয়ে গেছে। পানি এগিয়ে দিতেই ঢকঢক করে বোতলের অর্ধেক পানি সাবাড় করে ফেললো। সাবির সিটে মাথা ঠেকিয়ে একহাতে চুল আঁকড়ে ধরে প্রশান্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে বিরাজ করছে মুগ্ধতা। বোতলে মুখ দিয়ে পানি খেতে গিয়ে, ঠোঁটের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে গলা পর্যন্ত ভিজে গেলো সিরাতের। তবুও কোনো হেলদোল নেই তার। অন্য কেউ হলে নিশ্চয় মেকাপ, টিস্যু, লিপস্টিক নিয়ে ব্যস্ত পড়তো। একটা মেয়ে এতোটা সাধারণ কীভাবে হতে পারে! তার ভয়ে ভয়ে তাকানো, ভীতু চোখের চাহনি, হুট করে হাসি, আদো আদো আলোতেও উজ্জ্বল হওয়া মুখশ্রী যা সবার চেয়ে আলাদা করে তোলে সিরাতকে। সাবির অতিকষ্টে চোখ সরিয়ে বাইরে দৃষ্টি রাখলো। এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখলে এই মেয়েটা আবার ভয় পেতে পারে। কেনো যে এতো অল্পতেই ভয় পেয়ে যায়!
সিরাত পানি খেয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছে সাবিরের দিকে তাকালো। সাবিরের একটা হাত তার দিকে এগিয়ে আসছে। সিরাত মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে রইলো। গাড়ির ভেতর আলো নেই। শহরের রাস্তার পাশে থাকা সোডিয়াম লাইটের আলোতে একটুআধটু যা দেখা যায়, তাতেই দেখতে পেলো সাবিরের হাতটা আস্তে আস্তে তার ডানহাতের পাঁচটা আঙুল দখল করে নিলো। অথচ সাবির এখনো বাইরেই তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হবে সে সিরাতের হাত ধরেইনি। সিরাত হাতটা সরাতে চাইলো কিন্তু পারলো না। ক্রমেই সাবির আরো শক্ত করে ধরলো তার হাতটাকে। সিরাতের কাঁপা কাঁপি বেড়ে গেলো। পায়ের আঙুল সংকোচিত হয়ে আসছে। অন্য হাত দিয়ে জামা শক্ত করে মুঠ করে ধরে নিজেকে আয়ত্বে আনার চেষ্টা করলো সে। সামনে শান্ত নামের ছেলেটা আছে। ইশশ! যদি এক্ষুনি পিছনে ফিরে এই হাত ধরা অবস্থাই দেখে কি হবে? উফফ! কি হবে তখন? লজ্জায় গাল লাল হয়ে এলো তার। নিঃশ্বাসের উঠানামা বেড়ে গেলো। শান্ত যাতে না শুনতে পায়, এমনভাবে সাবিরের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
—– আমার হাত ছাড়ুন। কি করছেন?
সাবির তাৎক্ষণিক তার দিকে ফিরলো। সিরাত থতমথ খেয়ে মুখ সরিয়ে সোজা হয়ে বসলো।
—- কি করছি আমি?
ইয়া আল্লাহ! এতোবড় করে করে বলতে হয় নাকি? শান্ত ছেলেটা কি মনে করবে? সিরাত আতঙ্ক নিয়ে সামনে তাকালো। সিরাতের কোনো জবাব না পেয়ে সাবির আবার বললো,
—- তোমার হাত ধরেছি তো কি হয়েছে রাত? ভালোবাসার মানুষের হাতটা ধরেছি একটু। এভাবেই থাকি না প্লিজ আরেকটু! তুমি জানোই, হাউ মাচ আই লাভ ইউ….
সিরাত এবার সাবিরের মুখ চেপে ধরলো। মানুষ এতোটা নির্লজ্জ কিভাবে হতে পারে? শান্ত কি মনে করেছে কি জানে? রোবট নাকি? যেমন ছিল তেমনই গাড়ি চালাচ্ছে। মুখে ভাবভঙ্গি এমন যে, কিছুই শুনেনি। আশ্চর্য! এখানে সবাই পাগল….
সাবির নিঃশব্দে হাসতে লাগলো। খানিকক্ষণ পর হাসির মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। সিরাত তো পারলে লজ্জায় কোথাও লুকিয়ে পড়ে।
অবশেষে তারা বাড়ি পৌঁছালো। সিরাত ভয়ে ভেতরে ঢুকছে না।
— আল্লাহ আমার কি হবে এখন? আজ আমি শেষ…
সিরাত কান্নামুখ করে বিড়বিড় করতে লাগলো। সাবিরের দিকে চোখ যেতেই দেখলো, লোকটা আবার মিটিমিটি হাসছে। সিরাত চোখ বর বড় করে বললো,
—- আজব! আপনি হাসছেন কেনো?
—- কই! নাতো…
— আমি স্পষ্ট দেখলাম।
সাবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আশ্বস্তের ভঙ্গিতে বলতে লাগলো,
—- ডোন্ট ওয়রি রাত! তোমার পরিবারের সবাই জানে যে, আজ সারাদিন তুমি আমার সাথে ছিলে। আমরা একসাথে ঘুরে বেড়িয়েছি, দুপুরের লাঞ্চ করেছি, শপিং করেছি আরো অনেককিছু। আফসোস যদি এমন হতো! হাহ্ বাদ দাও। সামনে হবে ইনশাআল্লাহ। তুমি এখন থেকে একদমই কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করবে না। আমি সবসময় তোমার সাথে, তোমার পাশে আছি। আমার শ্বশুর অনেকদিন ধরে তোমাকে আগলে রেখেছে এই বাইরের জগৎ থেকে। আমি অনেক থেঙ্কফুল উনার কাছে যে, তুমি এখনও পবিত্র, স্বচ্ছ, পরিষ্কার। আই লাইক ইউর সিম্পলিটি।যা আমাকে সবসময় তোমার দিকে টানে। লাভ ইউ সিরাত। আমি সত্যি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। তোমাকে অর্ধাঙ্গীনি হিসেবে পেতে চাই।
সিরাত অবাক হয়ে সাবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। সাবিরের কথা সে বুঝেছে কিনা বোঝা গেলো না। পুরোটা সময় সে শুধু ভাবলো, লোকটা এতো সুন্দর গুছিয়ে বলতে পারে কেনো? এতো সুন্দর কেনো আপনি!
সাবির চলে যাওয়ার পর, সিরাত বাড়িতে ঢুকলো। মা-বাবা খোশগল্পে মত্ত, তানিশা ইফতিকে হোমওয়ার্ক করাতে ব্যস্ত। সবাই সিরাতকে দেখলো কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। রাগে দুঃখে সিরাতের কাঁদতে ইচ্ছে হলো। এতো কষ্ট করে সে আজ পুরো শহর ঘুরে এলো, লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে সাবিরকে কল করে, এতো কাহিনি করলো শেষ পর্যন্ত কিনা তার এই পরিণাম! কেউ তার কোনো কেয়ারই করলো না। সব দোষ ঐ সাবির-কাবিরের! হুহ….
চলবে