ভাবী_যখন_বউ পর্ব_১৫(শেষ)

ভাবী_যখন_বউ
পর্ব_১৫(শেষ)
Syed_Redwan

পরদিন দুপুরের একটু পরে, শহর থেকে একটু দূরে একটা নির্জন ও পরিত্যক্ত গোডাউনের মতো জায়গায় আমি দাঁড়িয়ে আছি। আমার পাশে জুনায়েদ। বাইরে বিশ্বস্ত কয়েকজনকে পাহারা দেওয়ার জন্য রেখেছি। আমাদের সামনে বসে আছে চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় ভাইয়া আর ভাবীর দু’জন খুনী। তাদের কোন ক্ষমা নেই। আমি নিজ হাতেই তাদের শেষ করতে যাচ্ছি এখন, তাও আবার অসহনীয় কষ্ট দিয়ে।

ঠিক এমন সময়ই একজন বাইরের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। মানুষটাকে দেখে আমি অবাক না হয়ে পারলামই না। ও কীভাবে এখানে আসলো? ওর তো এখানের খোঁজ পাবার কথা নয়। ঢুকার সাথে সাথেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দৌঁড়ে গিয়ে চেয়ারে বাঁধা মেয়েটার কপালে নিজের হাতে থাকা পিস্তলটা ঠেকালো। আমিও ওকে শক্তভাবে বাধা দেইনি। কারণ এমন রিয়েক্ট করার অধিকারটা ওর আছে।

★ ফ্ল্যাশব্যাক ★

জুনায়েদের কল পাওয়ার পর আমি খুনের ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে সিমির স্বামী আফজাল সাহেবের মৃত্যু সম্পর্কে অনেককিছুই জানতে পারি। এমনসব তথ্যও জানতে পারি আমরা, যেটা পুলিশও জানতে পারেনি, পারবেও না। কারণ এর তদন্ত আমি ব্যক্তিগতভাবে করছি, আর খুনীদের আমি নিজের হাতেই শাস্তি দিব, তাই।

চুপিসারেই জুনায়েদ আফজাল সাহেবের ফ্ল্যাটের বাইরে ছোট্ট একটা ওয়্যারলেস সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করে রেখেছিল। এটা অত্যন্ত দামী, কিন্তু জুনায়েদের কাছে আগে থেকেই এটা ছিল। কারণ তার ভাই পুলিশ, এজন্য অনেকসময় কাজে লাগতে পারে বলে কিনে রেখেছিল। সময়মতোই কাজে এসেছে এটা।

ফুটেজে দেখা যায় যে রাত আনুমানিক এগারোটার দিকে সিমি ফ্ল্যাটে প্রবেশ করছে। এরপর রাত একটার আশেপাশের সময় বের হয়ে আসে সে ফ্ল্যাট থেকে। মুখে তার একটা বিদঘুটে শয়তানি হাসি লেগেই ছিল। এখান থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়, আফজাল সাহেবের খাবারে বিষ সিমি নিজেই মিশিয়েছিল।

সিমির চরিত্র দেখেই বুঝতে পেরেছি যে ও-ই ভাইয়াকে খুন করেছে। কারণ যেই মেয়ে নিজের স্বামীকে খুন করতে পারে, তার পক্ষে অন্য কাউকে খুন করাটা মোটেই অসম্ভব কিছু নয়। এদের মতো মেয়ে কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারে না। এরা সমাজের কলঙ্ক, আবর্জনা, কীট। তার উপর ভাইয়াকে ফোনে দেওয়া হুমকি আমাকে এই সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত করেছে। সে-ই ভাইয়ার এক খুনী। কিন্তু অপরজন কে হতে পারে?

গতকাল আমি রিহান ভাইয়ার কাছে যাই তার কথা অনুযায়ী তার সাথে দেখা করতে। সে আমাকে বলেছিল যে আমাকে নাকি সিমির বিরুদ্ধে তার সংগ্রহ করা কিছু প্রমাণ দিবে, যেটার ভিত্তিতে এতদিন তার সিমিকে অপরাধী বলে মনে না হলেও এখন মনে হচ্ছে।

তার সাথে দেখা হবার পর তার মুখের দিকে ভালোমতো লক্ষ্য করে দেখি যে সে কিছু একটা নিয়ে অনেক ক্রুদ্ধ। অর্থাৎ তার মুখমন্ডলে রাগের আভাস স্পষ্ট। সে-ই আগে বলা শুরু করল,
“কেমন আছো রেদওয়ান?”
“ভালো। আপনি?”
“আমিও ভালো। তো চলো, সোজাসুজি কাজের কথায় যাওয়া যাক।”

এরপর তিনি আমাকে সিমির বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ দিলেন যেগুলো হচ্ছে দু’টো অডিও ক্লিপ। এর মধ্যে একটাতে সিমি কার সাথে যেন কথা বলছে রিফাত ভাইয়া আর স্নিগ্ধা ভাবীকে খুন করার ব্যাপারে। এটা নিশ্চিত যে তারা পরিকল্পনা করছে, কাউকে খুন করার অর্ডার দিচ্ছে না এই ক্লিপে। কিন্তু কার সাথে কথা বলছে এটা একেবারেই বোঝা যাচ্ছে না অডিওটিতে। সে যখনই অপর ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে, তখন ক্লিপটিতে ওই ব্যক্তিটির কথা না এসে আবার সিমির পরের কথাগুলোতে চলে যাওয়া হয়েছে। এতেই স্পষ্ট যে অপর পাশের মানুষটির কথা কাট করা হয়েছে অডিওটিতে। কিন্তু কেন? অপর ব্যক্তিটিকে কেন আড়াল করা হয়েছে এখানে?

আমি পরের অডিও ক্লিপটিতে শুনতে পেলাম আগের মতোই সিমির গলা। কিন্তু এবার ওর সাথে ট্রাকচালকও রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে যে তারা ট্রাকচালকটিকে অ্যাডভান্স টাকা দিয়েছে খুন দুটো করার জন্য। এখানে সিমির সাথে আরেকজন ছিল। কিন্তু সেটা ছেলে নাকি মেয়ে, এটা বুঝতে পারছি না। অপর ব্যক্তিটাও কথা বলেছে বোঝাই যাচ্ছে, কিন্তু আগের ভিডিওর মতো এটাও কাট করা। পেমেন্ট করার পর সিমি চলে যাওয়ার আগে বলছে,
“ঠিক আছে তাহলে। আজকের মতো এখানেই। পরে তোমার এক লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করবনে চিন্তা করো না র…..”
ব্যস! এইটুকুই আর ক্লিপটা শেষ। অপরাধীর নামটা মুখে নিতে নিতেও আর নিল না সে তার আগেই অডিও শেষ। যে ভিডিওটা এডিট করেছে, সে এখানে সামান্য ভুল করে অপরাধীর নামের প্রথম অক্ষরটা বাদ দেয়নি। কিন্তু তাতে ওই ব্যক্তির তেমন অসুবিধা হয়নি মনে হয়; আমি তো বুঝতেই পারলাম না যে কে হতে পারে ওই মানুষটা।

এক সেকেন্ড! ‘র’ দিয়ে তো ‘রাইফা’ও হয়। তবে কি……!

আমি তৎক্ষণাৎ রিহান ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম যে এই দুটো অডিও ক্লিপ কোথা থেকে পেয়েছেন উনি। উনি বললেন যে এগুলো তার মেসেঞ্জারে কিছুদিন আগে কেউ নাকি পাঠিয়েছে একটা অ্যানোনিমাস আইডি থেকে। সেটা নিয়ে তিনি তেমন একটা অনুসন্ধান করেননি কিংবা করার প্রয়োজনবোধ করেননি। পাওয়া মাত্রই আমাকে একসপ্তাহ আগে বলেছেন এটার সম্পর্কে।

আমি আর তখন বেশি একটা কথা বাড়াই না। আমি বুঝতে পারি যে এখন সিমিকে ধরার সময় এসে গিয়েছে। ওকে ধরলে ওর পাশাপাশি আরেকজন যে আছে খুনী, তার সন্ধানও পাবো। এটা ভেবেই আমি রিহান ভাইয়ার কাছ থেকে বিদায় নেই।

এখন একটাই কাজ; ওই সিমিকে যেভাবেই হোক আমাদের ধরতে হবে বা সোজা বাংলায় অপহরণ করতে হবে। কিন্তু কোথায় রাখব ধরে বা অপহরণই বা কীভাবে করব? এসবের বন্দোবস্ত করতে করতে সেদিন পেরিয়ে যায়। আমরা আমাদের কিছু বিশ্বস্ত সহযোগী নির্ণয় করি এবং শহরের থেকে কিছুটা দূরে একটা পরিত্যক্ত গোডাউন ঠিক করি অপহরণ করা খুনীদের রেখে নিজের হাতেই তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য।

দ্বিতীয় খুনী তো রাইফাও হতে পারে। ও যদি হয় তবে? ওকে কি ভাইয়ার খুনের অপরাধে ক্ষমা করে দিব? না! কোনদিনও না। আমার ভাইয়ের কোন খুনীই ছাড়া পাবে না আমার হাত থেকে, সেটা যে-ই হোক না কেন।

গতকাল রাতে রাইফাকে কিছুটা খুশি খুশি মনে হয়েছিল আমার কাছে। এতটা খুশি খুব কমই দেখেছি ওকে আমি। আমাকে সারারাত খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের আনন্দ যেন আমার সাথে শেয়ার করছিল। কিন্তু কেন? কীসের জন্য? ও খুনী হলে তো ওকেও শাস্তি পেতে হবে। তবে? ও কি খুন করেনি? না, এখন আর নিজের কোন অনুমানের উপর নির্ভর করব না আমি। সরাসরি দু’জন খুনীকে ধরেই কিসসা খতম করব নিজ হাতে।

বর্তমান দিনের সকালবেলা,
আমাদের সবকিছু রেডি করা। এখন খালি সিমিকে কিডন্যাপ করতে হবে। ওর বাসার বাইরে আমরা ওঁৎ পেতে বসে আছি, কখন সে বাসা থেকে বের হবে এটা অপেক্ষায়। সকাল দশটার দিকে দেখি যে সে বের হচ্ছে তার বাপের বাসা থেকে। কি সুন্দর সাজগোছ করেছে! মনে হচ্ছে যেন কোন বিয়েবাড়িতে যাচ্ছে নিজে বিয়ে করতে! নষ্টা মেয়ে কোথাকার! আমি নিশ্চিত যে ও নিজের কোন নাগরের সাথে কোন আবাসিক হোটেলে যাচ্ছে শরীরের চাহিদা মেটাতে। ছিঃ! এতটা নীচ কীভাবে হয় কেউ? ওকে নীচ বললে নীচ ব্যক্তিদেরও অসম্মান করা হয়! ও কোন মানুষের কাতারে পড়ে না। নিজের স্বামীকে গতকাল খুন করে আজ যাচ্ছে নিজের অগণিত নাগরের কোন একজনের কাছে শরীরের চাহিদা মেটাতে। বিয়ের পরও ওর পরপুরুষ দ্বারা শারীরিক চাহিদা মেটানোর স্বভাব ছিল কি না কে জানে! যাই হোক, এই কীটতূল্য জীবটাকে অতি শীঘ্রই পৃথিবী থেকে সাফ করে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা আছে আমার।

ওর বাসা থেকে বের হবার পর যেখান থেকে রিকশা বা গাড়ি নিবে, সেই জায়গাটা কিছুটা নির্জন। যেহেতু ওর বাবা গাড়ি নিয়ে অফিসে গিয়েছে কিছুক্ষণ আগেই, তাই তার রিকশা নেওয়া ব্যতীত আর কোন উপায়ই নেই। আমরা এই সুযোগটাই কাজে লাগালাম। ও রাস্তায় আসার সাথে সাথেই আমাদের গতদিনের ভাড়া করা মাইক্রোবাসটা ওর সামনে এনে দাঁড় করালাম এবং আমাদের সাঙ্গপাঙ্গরা ওকে ধরে বেঁধে নিয়ে আসে গোডাউনে।

গোডাউনে,
সিমিকে একটা চেয়ারে বসিয়ে শক্ত করে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। সে ছাড়া পাবার জন্য নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ছোটাছুটি করছে। কিন্তু লোহার শিকলের বাঁধনমুক্ত হওয়াটা কি এতই সহজ? শেষমেশ ছাড়া পাবার হাল ছেড়ে দিয়ে মুখে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করল। আমি ওর চরিত্রের পাশাপাশি ওর মুখের ভাষারও এহেন অবনতি দেখে তেমন একটা অবাক হলাম না। যার চরিত্রেরই ঠিক নেই, পরিবারের আদর্শের ঠিক নেই, তার মুখ থেকে এমন কিংবা এর চেয়েও নিকৃষ্ট রকমের ভাষা কোনভাবেই অপ্রত্যাশিত নয়। আর সে মুখ দিয়ে এমনসব কথা অনবরত উচ্চারণ করেই যাচ্ছে অনবরত, যেগুলো আমার দ্বারা কখনো লিখা সম্ভব না; ওর গালিগুলো অবর্ণিতই থাকুক।

এখন জেরা করার পালা। আমি ওর মতো অপবিত্র মেয়ের শরীর স্পর্শ করার কথা কস্মিনকালেও ভাবতে পারি না। তাই আমার এক সহযোগীকেই বললাম ইশারায় কী কী করতে হবে। সে হাতে একটা গ্লাভস পড়ে সিমির মাথার চুল মুঠি করে ধরলো। এবার আমি জিজ্ঞেস করলাম,
“আমার ভাইকে কেন খুন করেছিস?”
“আমি খুন করিনি কাউকে। ছাড় আমাকে! সাহস কী করে হয় তোদের আমাকে কিডন্যাপ করার? একবার এখান থেকে বের হয়ে নিই, তারপর বুঝাবো তোদের মজা। তোদের লাশ পর্যন্ত কেউ খুঁজে পাবে না।”

ওর কথাটা শেষ হবার সাথে সাথেই আমার ইশারায় সহযোগীটা সিমির চুলের মুঠি খুব জোরে টান দেয়। বিকট শব্দে সিমি চিৎকার করে উঠে। কিন্তু ওর এই চিৎকারেও ওর বিশেষ কোন লাভ হবে না। ওর চোখ বেয়ে পানি নামছে। আমি ওর সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসলাম। এরপর বললাম,
“আমাদের কথা বাদ দে। যা যা প্রশ্ন করছি, সেগুলোর ঠিক ঠিক উত্তর দিবি। নয়তো এখান থেকে জান নিয়ে বের হতে পারবি না, বুঝলি? বল কেন আমার ভাই রিফাতকে খুন করেছিস!? বল!”
আমার কথায় এবার ও কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। বলল,
“আমি রিফাতকে ভালোবাসতাম। ওর পিছনে দুই বছর ধরে ঘুরার পরও ও রাজি হয়নি। আমাকে বিয়ে করেনি। আমাকে বিয়ে না করে বিয়ে করেছিল ওই জারজ স্নিগ্ধাকে। অবশ্য বাবার জোরাজুরিতে আমি-ই ওর আগে বিয়ে করে ফেলি, সাথে রিফাতও রাজি হচ্ছিল না আমাকে বিয়ে করতে। কিন্তু রিফাতের বিয়ের আগেরদিন পর্যন্ত আমি ওকে বলি আমাকে বিয়ে করতে, আমি আমার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দিব। কিন্তু ও রাজি হয়না। তাই……”
“এজন্য খুন করে দিলি আমার ভাইয়াটাকে? তুই নিজেই দাবী করলি ভালোবাসিস, আর নিজেই মেরে দিলি নিজের তথাকথিত ভালোবাসার মানুষটাকে? এটাই তোর ভালোবাসা?”
“আমি যেটা চাই, সেটা নিজের করেই ছাড়ি। আর যেটা আমি চেয়েও পাই না, সেটা অন্য কাউকেও পেতে দেই না। তাই রিফাতকেও হতে দেইনি ওই জারজ স্নিগ্ধার।”

এমন ঘৃণ্য মানসিকতার মানুষ যে আমি সামনাসামনি কোনদিন দেখতে পাবো, কোনদিন ভাবিনি। বললাম,
“নিজের স্বামীকে কেন খুন করেছিস?”
সিমি নিশ্চুপ।
“কী হলো, বল? নিজের স্বামীকেও কেন খুন করেছিস? আমরা তোর সকল কীর্তি সম্পর্কে অবগত। তাই চুপ না থেকে বলে ফেল যদি পুনরায় মাইর থেরাপি না চাস।”
“ওই লোকটা আমাকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিল। বলেছিল যে আমার মতো মেয়ের সাথে সংসার করা তো দূরে থাক, মুখ দেখলেও নাকি অকল্যাণ হয়। সাথে এটাও বলেছিল যে আমি বেশি বাড়াবাড়ি করলে নাকি আমার ব্যাপারে দুর্নাম রটাবে। এত অপমান করার সাহস কী করে হয় ওই দুই টাকার লোকের? তাই গতকাল রাতে ওর সাথে দেখা করার নাম করে ওর খাবারে বিষ মিশিয়ে খুন করে এসেছি ওকে হা হা হা!”

ওর কথা শুনে আমিসহ উপস্থিত সকলেরই ভীষণ ঘৃণা লাগছে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম,
“তোর মতো নষ্টা মেয়ের সাথে সংসার করা সত্যি একেবারেই যায় না। যাই হোক এটা পুরান কথা। বল তো, তোর স্বামীর সাথে কী নিয়ে বিয়ের মাত্র একমাসের মাথায়ই তোদের ঝগড়া হলো এতটাই যে সেটা বিয়ের একমাস যেতে না যেতেই ডিভোর্স দিতে চাচ্ছে সে?”
“ওই দুই টাকার অক্ষম লোকটাকে বাবার জোরাজুরিতে আমার বিয়ে করাটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে। ও আমাকে একদমই শারীরিক সুখ দিতে পারতো না। ডাক্তার দেখাতেও রাজি ছিল না শালা মোটুটা। এমন অক্ষমের সতীসাধ্বী স্ত্রী হওয়া আমার পক্ষে একদমই সম্ভব না। শরীরের জ্বালার কারণেই আমি বিদেশের দুই মাসের ট্রিপ ছোট করে একমাসেই দেশে ফিরে আসি, এসে রিফাতকে বুঝাই আমাকে বিয়ে করার জন্য, ও না মানায় ওকে আর স্নিগ্ধাকে খুন করার নীলনকশা করি। এরপর নিজের পুরোনো বেড পার্টনারদের যোগাযোগ করে নিয়মিত তাদের সাথে সেক্স করতে থাকি। তাদের আমি তখনই আমার বাসায় ডাকতাম যখন মোটুটা অফিসে থাকতো। এভাবে প্রায় একমাসের মতো চলার পর হঠাৎ কিছুদিন আগে আমি যখন রুমে সেক্স করছিলাম একজনের সাথে, ঠিক তখনই ওই অক্ষমের বাচ্চা অফিস থেকে বাসায় আসে কিছু নেওয়ার জন্য আর তখনই আমাকে দেখে ফেলে আরেকজনের সাথে সেক্স করা অবস্থায়। ব্যস! অনেকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। আমাকে জোর করে আমার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয় আর ডিভোর্স নোটিশও পাঠিয়ে দেয়। অনেক অপমান করে আমাদের। আমি আর সহ্য করতে না পেরে শেষ করে দেই ওই অক্ষম প্রাণীটাকে👿।”

ওর কথাগুলো শোনার পর আমার গা গুলিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে যে বমি হবে আমার। আমি তাড়াতাড়ি পানি দিয়ে নিজের মুখ ধুয়ে নেই। আমার আশেপাশের বাকিদেরও একই অবস্থা। নিজেকে বহুকষ্টে স্বাভাবিক করে তারপর বলা শুরু করি,
“তোর মতো জীবের না আসলে বেঁচে থাকারই কোন অধিকার নেই। তোরা খালি জানিস আর ভাবিস নিজের স্বার্থ আর চাহিদার কথা।”
কিছুটা থেমে তারপর আবার বললাম,
“তোর আরেক সহযোগী কে ভাইয়া আর ভাবীকে খুন করার পিছনে?”

কিছুক্ষণ আগেই রিহান ভাইয়াকে সিমির মতো করেই এনে ধরে চেয়ারে বেঁধে দেওয়া হলো। সাথে আমাকে এখানে রিহান ভাইয়া দেখে অবাক হওয়ার শীর্ষে পৌঁছে যায়। বলে,
“এমন ব্যবহার করার কারণ কী রেদওয়ান? আমাকে….” তাকে বলতে না দিয়ে আমি বললাম,
“থামেন এবার। আমি সব জেনে গিয়েছি। এবার বলেন তো, কেন করলেন খুন আমার ভাইয়া আর ভাবীকে?”
“বিশ্বাস করো, আমি কিছু করিনি। এই সিমি আমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছে। আমি তো……”
“চুপ! একদম চুপ! আর একটা কথাও বলবি না। ভালোমতো কথা বলে কোন লাভ নেই তোদের সাথে বুঝতে পেরেছি।”
বলেই হাতে একটা লোহার রড নিয়ে লাগিয়ে দিলাম রিহানের দুই হাতে দুটো ঘা। চিৎকার করলো সে ব্যথায়, কিন্তু কোন লাভ নেই। আবার যে-ই আরেকটা বাড়ি দিতে নিব, ঠিক তখনই সে বলে উঠল,
“প্লিজ আর মেরো না। আমি সব বলছি তোমাকে।”
“বল।” রডটা পাশে রেখে বললাম।
“আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিল রিফাত এটা ঠিক। কিন্তু আমি স্নিগ্ধাকে ভালোবাসতাম। আমি অনেকবার প্রোপোজ করার পরও ও এক্সেপ্ট করেনি। শেষমেশ ও রিফাতকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই আমি ওর সাথে সাথে রিফাতকেও মেরে ফেলি। স্নিগ্ধা আমার হবে না তো আর কারোরই হতে পারবে না। রিফাতকে মারা কারণ ও আমার কলিজার দিকে হাত বাড়িয়েছিল, ওকে বিয়ে করেছিল। যদিও ও কোনদিনও জানতো না যে আমিও স্নিগ্ধাকে ভালোবাসি, তবুও ওকে শেষ করে দিলাম। আমার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করার চূড়ান্ত শাস্তি এটা ওর।”

আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম,
“তোর সিমির সাথে কীসের সম্পর্ক? ওর সাথে যখন প্ল্যান করে খুন করেছিস আমার ভাইয়া-ভাবীকে, তাহলে ওকে একাই ধরা খাওয়াতে চেয়েছিলি কেন? অডিও ক্লিপ দুটো তুই-ই রেকর্ড করেছিলি ওর সাথে থাকাকালীন, আর সেগুলো জায়গামতো কাট করে নিজের কথার অংশটুকু বাদ দিয়ে আমাকে শুনিয়েছিলি। অপর পাশের ব্যক্তিটা তুই-ই ছিলি। বল, কেন সিমিকে ফাঁসাতে চেয়েছিলি?!”

রিহান বলতে লাগলো,
“আমি আর সিমি হলাম বেড পার্টনারস। পাঁচ বছর ধরে আমরা সেক্স করে আসছি। এটাই আমাদের সম্পর্ক। আর যখন দেখলাম যে আমাদের ভালোবাসার মানুষ দুটো সম্পূর্ণভাবে আমাদের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে, তখনই আমরা এই সিদ্ধান্তটা নেই, তাদের দু’জনকেই শেষ করে দেওয়ার। দুই লক্ষ টাকা যেটা ওই ট্রাকচালককে দেওয়া হয়েছে, সেটার মধ্যে এক লক্ষ টাকা আমি আর বাকি এক লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা সিমির। কিন্তু সিমি ওই মুহূর্তে তখন বলে যে ওর কাছে টাকা নেই একেবারেই, আমি যেন তার এক লক্ষ টাকাও দিয়ে দেই। পরে আমাকে আমার এক লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়। তাই বাধ্য হয়ে আমার একারই সেই মুহূর্তে নিজের পকেট থেকে ট্রাকচালকটাকে দুই লক্ষ টাকা দিতে হয়। আমি সিমির চরিত্র সম্পর্কে এত বছরের শারীরিক সম্পর্কের জন্য কাছাকাছি আসার দরুন বেশ ভালোই একটা ধারণা অর্জন করতে পারি। ওর বিশ্বাসঘাতকতা করার প্রবণতা অনেক বেশি। তাই ওর বিরুদ্ধে দুটো অডিও ক্লিপ প্রমাণ হিসেবে ধারণ করি এবং এডিট করি, যাতে ও আমাকে টাকা ফেরত না দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করলে ওকে ধরিয়ে দিতে পারি। হয়েছেও সেটাই। ও রিফাত আর স্নিগ্ধা খুন হবার পর আমাকে টাকা দিতে অস্বীকার করে। এক মাস ওকে নানাভাবে জোর করি, কিন্তু কোন লাভ হয় না। তাই ওকে এই দুটো অডিও ক্লিপের মাধ্যমে ফাঁসিয়ে দিতে মনস্থির করি। ওর কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণই ছিল না। আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম তুমি যেন ওকে নিজের হাতে শাস্তি দেও পৈশাচিকভাবে। ফলে, ও নিজের বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি এভাবে পেয়ে যাবে আর আমারও নিজের এক লক্ষ টাকার শোক তোমার হাতে ওর নির্মম মৃত্যুর হাতে ঘুচে যাবে।
কিন্তু আমি ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি যে আমি নিজেও ধরা পড়ে যাব। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও, আমি আর কোনদিনও এমনটা করব না। আমার বদলে সিমিকে মারো, আর আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ।”

ব্যস! সমস্ত কিছুই একদম ক্লিয়ার হয়ে গেল আমাদের কাছে। আর বাকি রইল ক্ষমা করার কথা? হা হা হা!!!

ঠিক সময়ই একজন গোডাউনে প্রবেশ করলো।

★বর্তমানে★

সেই ব্যক্তিটি আর কেউ নয়; আমার বিবাহিত স্ত্রী রাইফা। সে ঢুকেই কাউকে তোয়াক্কা না করে সোজা সিমির কপালে নিজের পিস্তল ঠেকালো।
“কেন তুই খুন করেছিস, বল! বল! কেন তুই খুন করেছিস!? আমার কলিজার বান্ধবী তোর কী ক্ষতি করেছিল রে, যে তুই ওর প্রাণটা নিয়ে নিলি। সাথে আমার এক ভাইকেও মেরে ফেললি? তোদের মতো জীবের বেঁচে থাকার কোন অধিকারই নেই।”
মনে হচ্ছে ও যেন গুলি চালিয়েই দিবে।

আমি সাথে সাথেই রাইফার কাছে গিয়ে ওর পিস্তলটা ওর কাছ থেকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করলাম। কারণ এত সহজেই ওদের মরতে দিব না আমি। কিন্তু রাইফা নাছোড়বান্দা। ও হাত থেকে ছাড়ছেই না পিস্তলটা। শেষমেশ আর কোন উপায় না পেয়ে ওকে বুকে নিয়ে উপস্থিত সকলের সামনেই জড়িয়ে ধরি। সাথে সাথেই ওর ছোটাছুটি বন্ধ হয়ে যায়। আমি কৌশলে ওর হাত থেকে বন্দুকটা নিয়ে নেই। আর কপালে একটা চুমু খেয়ে বলি শান্ত হতে। ও নিজেকে কন্ট্রোল করে শান্ত হলো।

আমরা এখন সকলেই রিহান আর সিমির রক্তাক্ত বেঁধে রাখা শরীরে কোনমতে প্রাণ থাকা অবস্থায় জীবিত আছে। দু’জনেরই দুই চোখ তুলে ফেলা হয়েছে, কাজটা রাইফাই করেছে নিজের হাতে। আর বাকি সাঙ্গপাঙ্গরা ওদের হাত এবং পায়ের সবগুলো আঙুল ধীরে ধীরে প্লাস দিয়ে তুলে নিয়েছে। আমি নিজেও ছুরি দিয়ে ওদের শরীরের নানান জায়গায় মনের মতো করে কেটেছি, ওদের অনেক অনেক রক্ত ঝরিয়েছি এইমাত্র। ওদের কষ্টে আনন্দ খুঁজে পেয়েছি। আমি ছোটবেলা থেকেই নৃশংসতাকে ভয় পাই, ঘৃণা করি। কিন্তু আজ ওদের এমন অবস্থা দেখে আমার মোটেই খারাপ লাগছে না, বরং এক অন্য ধরনের পৈশাচিক তৃপ্তিময় আনন্দের অনুভূতি শরীর ও মনের মধ্য দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।

সবশেষে সিমির গায়ে রাইফা এবং রিহানের গায়ে আমি ধীরে ধীরে কেরোসিন ঢালতে থাকি। ওরা দেখতে না পেলেও বুঝতে পারে যে কী হতে যাচ্ছে ওদের সাথে। ওরা কথা বলার মতো অবস্থায়ও নেই, তবুও অস্ফুট গোঙানির স্বরে বোঝাতে চায় যেন আমরা ওদের প্রাণটা অন্তত ভিক্ষা দেই। আমি আর রাইফা ওদের এই কাকুতি-মিনতিতে মুচকি হেসে হাতের বোতলের শেষ কেরোসিনটুকুও ঢেলে দেই ওদের গায়ে। ওরা কেরোসিনে ভিজে একেবারে গোসল হয়ে গিয়েছে। তারপর সকলেই একটা নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়াই। আমি পকেট থেকে দুই টাকা দামের ম্যাচের প্যাকেট বের করি। এই দুটো কীট, আমার ভাইয়া আর ভাবীর খুনীদের মৃত্যু একদম নগন্য এবং সবচেয়ে সস্তা দুই টাকা দামের ম্যাচের একটা কাঠি দিয়ে হবে একটু পরই। কতটা মূল্যহীন তারা! এদের মতো সকলেই এমনই মূল্যহীন আর পরিত্যাজ্য।

ম্যাচের কাঠিতে আগুন ধরালাম। ওরা দু’জন চিৎকার করার ব্যর্থ চেষ্টা করে বারবার প্রানভিক্ষা চাচ্ছে। রাইফা আমার পাশে এসে আমার বাম হাত জড়িয়ে ধরল, আমার ডান হাতে আগুনে জ্বলন্ত ম্যাচকাঠি। আমি ছুঁড়ে মারলাম আগুনে জ্বলতে থাকা ম্যাচকাঠিটা ওদের কেরোসিনে ভিজে থাকা শরীরের দিকে।

মুহূর্তেই দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠল আমাদের চোখের সামনেই। ওরা গগনবিদারী চিৎকার দিচ্ছে থেমে থেমে, আগুনে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে ওদের দেহ। এভাবে দেখতে দেখতে ওদের পাপিষ্ঠ প্রাণপাখিটাও ওদের অভিশপ্ত, নষ্ট ও অপবিত্র শরীর ছেড়ে উড়াল দিল। একদম মাটির সাথে মিশে ছাই হয়ে গেল ওদের দেহ দুটো আমাদের চোখের সামনেই। একদম ওদের জীবিত থাকা থেকে শুরু করে ছাই হয়ে যাওয়া পর্যন্ত দৃশ্যটুকু আমরা সকলেই সেখানে উপস্থিত থেকে নিজেদের চোখের আশ মিটিয়ে দেখলাম। নিজের প্রাণপ্রিয় ভাই আর ভাবীর খুনীদের নিজ হাতে শাস্তি দিয়েছি, নির্মম এবং নৃশংস মৃত্যু উপহার দিয়েছি তাদের। এর চেয়ে বেশি আনন্দের কিছু হতে পারে না। আমি নিশ্চিত, ভাইয়া আর ভাবীর আত্মাও এবার শান্তি পাবে কবরে।

ওদের ছাই একটা পলিথিনে নিয়ে পাশের নর্দমা ও ড্রেনগুলোতে একটু একটু করে ফেলে ওদের চিহ্ন দুনিয়া থেকে একেবারেই মুছে দিলাম। মনে হচ্ছে কতকাল পর যেন কোন একটা বড় বোঝা নেমে গেল আমাদের উপর থেকে, যেন একটা নতুন দিনের সূচনা হতে যাচ্ছে সামনে।

সকলকে ধন্যবাদ জানালাম, বিশেষ করে জুনায়েদকে। ও না থাকলে এতকিছু কোনভাবেই সম্ভব হতো না। বাকি দু’জন সহযোগীদেরও আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানালাম। সাথে জুনায়েদ আগেভাগেই নীলার সাথে ওর বিয়ের অগ্রীম দাওয়াত দিল আমাকে আর রাইফাকে, যদিও পরে আমাদের বাসায় এসেই দাওয়াত দিবে।

সব কাজ করতে করতে বিকেল হয়ে গেল। আমি আর রাইফা বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। মাঝরাস্তায় এসে রাইফা বলল যে ও নাকি একটু শপিংমলে যাবে একা একা। আমি বললাম,
“একা কেন যাবে? আমিও আসি তোমার সঙ্গে?”
“জ্বি না মহাশয়, এখন না। এখন আপনি সোজা বাসায় যাবেন। আজকে রাতে আপনাকে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দিব আমি, সাথে একটা সুখবরও আছে আপনার জন্য😊।”
“কী সুখবর?”
“সেটা রাতেই জানতে পারবেন। যান এবার।”

ওর জোরাজুরিতে আমি একাই বাসায় চলে আসি। তবে আজ আমি খুশি, অনেক খুশি। আজ যে সত্যি সত্যিই খুশি হবার দিন আমাদের সকলেরই।

রাতে খাওয়ার পর আমি ছাদ থেকে ঘুরে আসলাম। আজ পূর্ণিমার রাত। চাঁদটাকে আজ অন্যান্য দিনের চাইতে বেশি বড় আর উজ্জ্বল মনে হচ্ছে। হয়তো মনের প্রশান্তির কারণে সবকিছুই স্নিগ্ধ লাগছে আমার কাছে। সাথে রয়েছে বর্ষা মৌসুমের ফুরফুরে বাতাস। এ এমন একটা অনুভূতি যা কোনদিনও বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

রুমে ঢুকার পর দেখি যে রুমটা একটু অন্য রকমভাবে সাজানো। সাথে ভেসে আসছে সুন্দর সুবাস। বারান্দায় গিয়ে দেখি রাইফা দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। যথেষ্ট সেজেছে আজ সে। এজন্যই তখন মার্কেটে গিয়েছিল সে, এখন বুঝতে পারছি। নিশ্চয়ইল আজকের সাফল্য উদযাপনের এক ছোটখাটো ব্যবস্থাই এটা। আমারও এতে খুব ভালো লাগছে। আমি গিয়ে ওকে আচমকা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।

ও কেঁপে উঠল। বুঝতে পেরেছে যে এটা আমি। আমার যে আজ কী হলো জানি না, নিজের বউকে আজ মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। ওর ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিলাম। ও আর সহ্য করতে না পেরে ঘুরে আমার বুকে মুখ লুকোলো।

আমি জিজ্ঞেস করলাম,
“পিস্তল কোত্থেকে পেলে, হুম?”
“তোমার শ্বশুরমশাই একজন পুলিশ কমিশনার, ভুলে যাবে না যেন হু। আমার কাছে লাইসেন্স না থাকলেও আমি যেকোন সময় এটা পেতে পারি।”
“আমার খোঁজ পেয়েছিলে কীভাবে? এই কাজে কিছুটা রিস্ক ছিল বিধায় তোমাকে নিতে চাইনি আমি। কীভাবে জানতে যে আমি কোথায়?”
“তোমার ফোনের লোকেশন আমি অন করে রেখেছিলাম। আমি জানতাম তুমি আজ সিমিকে ধরবেই। কিন্তু সাথে যে এই রিহান নামের লোকটাও যে খুনী হবে, এটা জানতাম না। তবে ভালোই হয়েছে, দুটো কীট নিধন হলো।”

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে ও বলতে লাগল,
“সবকিছু একদম শুরু থেকেই বলছি তোমায়। এটা শুধুমাত্র তোমার ভাইয়ের খুনেরই বিষয় নয়, আমার জানের বান্ধবী, আমার বেস্টফ্রেন্ড, বলতে গেলে আমার বোনেরও খুনের বিষয়। তাই আমি একদম শুরু থেকেই সিরিয়াস ছিলাম, কিন্তু তোমাকে একদমই বুঝতে দেইনি। তুমি আমাকে ভুল বুঝেছিলে, ভেবেছিলে যে আমিই তোমার ভাইকে খুন করেছি। তা না-হয় ভাবলে, কিন্তু নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার পরও আমাকে তুমি সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে পারোনি, আমাকে নিজে থেকেই তোমার কাজে শামিল করোনি। তাই তোমার উপর কিছুটা অভিমান জন্মেছিল আমার। আমিও তোমার আড়ালে কাজ করে গিয়েছি। কিন্তু আমরা একসাথে শুরু থেকে কাজ না করলেও আমার জায়গা থেকে কিন্তু আমি সর্বোচ্চ সাহায্য করেছি তোমাকে। ফলে, আমাদের তদন্তের কোন ক্ষতি বা দেরিই হয়নি এজন্য।”

কিছুক্ষণ পর আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি স্যরি রেড, কিন্তু আমার অনেক খারাপ লাগতো যখন তুমি নিজের কোনকিছুই আমার সাথে শেয়ার করতে না, অবিশ্বাস করতে, ভালোবাসতে না। জানো, তুমি যদি আমাকে ভালোবেসে বুকে টেনে নিয়ে একটা বার জিজ্ঞেস করতে, আমি হরহর করে সবকিছুই বলে দিতাম। কিন্তু তুমি তোমার ইগো নিয়েই রইলে, আমাকে কাছে টানলে না। তাই আমিও একটু অভিমান করি। ঠিক করি, আমিও নিজে থেকে কিছু বলব না যতদিন না কেইসটা সলভ হয়। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। আমার অভিমান করাটা একদমই উচিত হয়নি।”

আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
“দোষটা এখানে সম্পূর্ণভাবে আমারই, তাই ক্ষমা চাওয়া উচিত আমার। তুমি কেন ক্ষমা চাইছ?”
“জানো, তুমি যা যা করতে, সবকিছুতেই তো জুনায়েদ ভাইয়াকে রাখতে। আর জুনায়েদ ভাইয়া নীলাকে সবকিছুই বলতো। নীলা তো আমার আরেক বেস্টফ্রেন্ড, জানোই তো। সুতরাং সবকিছুই আমি আগেভাগেই জেনে যেতাম🤪। আর তাছাড়া জুনায়েদ ভাইয়ার বড়ভাই আরমান ভাইয়ের বউ, ঋতু আপু হচ্ছেন আমার পরিচিত এক বড় আপু। ট্রাকচালক খুনীটার কথা, তোমার সেদিনের মারামারি করে আঘাত পাবার খবরটা আমি তাদের থেকেই জেনেছিলাম। এরপর একমাসের মতো কেটে যায়, আমাদের তদন্তের কাজ এগোয় না।
কিন্তু সেদিন রাতে তুমি রিহানের সাথে যা যা কথা বলেছিলে, সব শুনে ফেলেছিলাম আমি। তাই তো তখন আমাকে রাগান্বিত মনে হচ্ছিল, সিমিকে খুন করতে মন চাচ্ছিল আমার। এরপর সিমির মোবাইল নম্বর আব্বুর পরিচিত প্রভাবশালী আংকেলদের দিয়ে জোগাড় করি। ওকে ফোন দিয়ে ওর গলার আওয়াজ রেকর্ড করে তোমাকে পাঠাই ‘তোমার একমাত্র গন্তব্য’ আইডি থেকে। নামটা সুন্দর দিয়েছি না হুম? সত্যি সত্যিই কিন্তু আমিই তোমার প্রথম এবং শেষ গন্তব্য। অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকালেও কিন্তু তোমাকে খুন করে নিজে মরবো বলে দিলাম।”

সবকিছুই আমার কাছে আজ একদম সূর্য দিনের মতো পরিস্কার হয়ে গেল। এমন সাহসী এবং যোগ্য স্ত্রী পেয়ে নিজেকে সত্যিই ধন্য মনে হচ্ছে। কিন্তু এখনো একটা জিনিস জানা বাকি। রাইফার মুখ আমার বুক থেকে তুলে জিজ্ঞেস করলাম,
“সবকিছুই তো বুঝলাম গো বউ। কিন্তু একটা সুখবর না দেওয়ার কথা ছিল তোমার?”

আমার কথা শুনে রাইফা লজ্জা পেয়ে গেল। সাথে সাথেই আমার বুকে নিজের মাথা আবারো শক্ত করে গুঁজে দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“তুমি বাবা হতে চলেছো!”

কথাটা শোনামাত্রই এক অবর্ণনীয় অনুভূতির জোয়ার প্রবাহিত হলো আমার শরীর দিয়ে। প্রত্যেক ছেলেই বাবা হওয়ার সংবাদ শুনে নিশ্চয়ই এমনটা অনুভব করে। আমি পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে রাইফাকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।

কিছুক্ষণ পর হুট করেই ওকে আমি কোলে তুলে নিলাম।
“এই করছ কি তুমি, হ্যাঁ? নামাও বলছি।”
“আমি আমার বউকে আদর করছি। তুমি না করার কে, হ্যাঁ?”
“ইশশ্, বউয়ের জন্য দেখি দরদ উথলে উঠছে। আজ এই সুখবরটা না দিলে আমাকে পাত্তাই দিতে না তুমি হুহ!”
“তাই, না?” বলেই ওকে ধীরে বিছানায় এনে শুইয়ে দিলাম।

আমি ওর পাতলা ঠোঁটে চুমু খেলাম। ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। এরপর ওর সারা শরীরে আমার লাভ বাইটগুলো সঁপে দিতে লাগলাম। ও পরম আবেশে ধীরে ধীরে আমার ভালোবাসার পরশগুলো অনুভব করতে লাগল। আজ আমি অনুভব করতে পারছি যে আমার সত্যিই ওর প্রতি ফিলিংস আছে, আমি ওকে ভালোবাসি। ওকে ভালো তো বেসেছিলাম বহু আগেই, আজ সেটা সম্পূর্ণটা দিয়েই উপলব্ধি করতে পারছি।

ধীরে ধীরে আমরা একে অপরের মাঝে হারিয়ে যেতে লাগলাম। এতদিন ধরে যেই সম্পর্কটাকে মানসিক চাপের দরুনই হয়তো মনে হতো শরীরের টান, সেটাকেই আজ মনে হচ্ছে ভালোবাসার শ্রেষ্ঠতম বহিঃপ্রকাশ। একে অপরের মাঝে হারিয়ে গিয়ে পূর্ণতা পেতে লাগলাম আমরা, ডুব দিলাম ভালোবাসার গভীরতম সাগরে।

৮ মাস পর,
হাসপাতালের ওটির সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমরা দুই পরিবারের সকলেই। ডাক্তার বলেছেন রোগী একদম নরমাল কন্ডিশনে। তবুও, কিছুটা আশংকা তো রয়েই যায়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার বের হয়ে বললেন যে আমি কন্যা সন্তানের জনক হয়েছি। মা আর বাচ্চা দু’জনকেই বেডে দেওয়া হয়েছে। সকলেই চলে যায় ভিতরে আমার মেয়েটাকে দেখতে। আমি সকলের পরে যাব বলে মনস্থির করি। বাবা হবার পর এমন এক অনুভূতি হচ্ছে আমার, যেটা কাউকে মুখে বোঝানো সম্ভবই নয় কোনদিন।

সকলেই কিছুক্ষণের মধ্যে বের হয়ে আসে। বলে যে আমাকে নাকি ডাকছে মা-মেয়ে দু’জনেই হা হা।

আমি ভিতরে ঢুকে দেখি যে রাইফা চোখ বন্ধ করে মিটিমিটি হাসছে। পাশের বেডেই আমাদের ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটা শুয়ে আছে। আমি রাইফার সাথে কথা না বলে মেয়েকে কোলে নিলাম। কি সুন্দর হয়েছে মেয়েটা দেখতে! মুখের আদল পুরোই ওর মায়েরটা পেয়েছে, শুধু চোখ দুটো আমার মতো তীক্ষ্ণ। খেয়াল করলাম যে ও ছোট ছোট চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে। বুঝে গেল নাকি যে আমি-ই ওর বাবা?

কিছুক্ষণ ওকে কোলে নিয়ে আদর করে কয়েকটা চুমু দিয়ে পুনরায় বিছানায় শুইয়ে রাইফার কাছে গিয়ে বসলাম। ও মুখ ঘুরিয়ে নিল। আমি কান ধরে স্যরি বললাম ওর সাথে প্রথমেই কথা না বলার জন্য। ও বলল,
“কান ধরলে হবে না। অন্যকিছু করতে হবে।”
“কী করতে হবে?”
“এত সুন্দর একটা পরী গিফট করলাম তোমাকে, বিনিময়ে ‘ভালোবাসি’ বলবে না? বলো এক্ষুণি।”
“কেন বলব?”

আমার কথায় রাইফা আবারো ঠোঁট বাকিয়ে অন্যদিকে মুখ করে তাকালো। আমি তখনই ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
“ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি অনেক অনেক ভালোবাসি আমার রাইফা পরীটাকে। (তারপর আমাদের মেয়ের দিকে ইশারা করে) সাথে আমাদের পিচ্চি পরীটাকেও।”
“সত্যি?”
“কোন সন্দেহ আছে?”
রাইফা আমার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে আমার নাকের সাথে নাক ঘেঁষে হেসে দিয়ে বলল,
“নেই☺️!”

আমি আর রাইফা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসে আমাদের মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটাও দেখি মাঝেমধ্যে আঁড়চোখে তাকাচ্ছে আমাদের দিকে। এটা খেয়াল করেই আমি আর রাইফা হেসে দিলাম।

(সমাপ্ত)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here