শুভ্র_রঙের_প্রেম পর্বঃ২৭

শুভ্র_রঙের_প্রেম পর্বঃ২৭
#রুবাইদা_হৃদি

বিয়ে বাড়ির ভরা আসরে শাড়ির কুঁচি ধরে দৌড়াচ্ছি৷ আশেপাশের কোনো দিকে মনোযোগ নেই আমার৷ হঠাৎ করেই পায়ে বেজে পরতে নিলেই চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলি ৷ মান সম্মান বিয়ে বাড়ির ধূলোর মধ্যে মিশে গেলো বোধহয়৷ আমার ভাবনা আবারো ভুল প্রমাণিত হয় শক্ত পুরুষালি হাতের ছোঁয়া কোমড়ে আঁকড়ে ধরতেই।আমি মুচকি হেসে উঠি চোখ বন্ধ করেই৷ উক্ত হাতের ছোঁয়া আমার পরিচিত আমার আপনজনের৷
–‘ পুরাই সিনেমা দোস্ত৷ ‘ রাহাতের বলা কথায় আমি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি একজোড়া রক্তচক্ষু আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখি অনেকেই তাকিয়ে আছে সেই সাথে রাফিন৷ ও হা করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে৷ মূহুর্তেই উঠে দাঁড়াতে গেলে উনি উঠতে দিলেন না৷ দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
–‘ ভরা আসরে এইভাবে বাচ্চাদের মতো ছুটোছুটি কেন করছো?? মাথার বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে?? পরে গেলে কি হতো! ‘

–‘ আ…আসলে এই শাড়িটা নীতিকে দেওয়া দরকার জলদি৷ একটু পরেই তো হলুদের ফাংশন শুরু হবে৷ ‘

–‘ সামনে তাকিয়ে ভদ্র ভাবে হেঁটে যাবে৷ যাও৷ ‘ আমি পিটপিট চোখ করে তাকালাম৷ হলুদ আর লাল মিশ্রণের পাঞ্জাবি তে তাকে দারুণ দেখাচ্ছে৷ চুল গুলো সযত্নে সেট করা হলেও কিছু অবাধ্য সিল্কি চুল কঁপাল বেয়ে নেমে আছে৷ আমিও ঠিক ওই অবাধ্য চুল গুলোর মতো হাজার শাসন করলেও কথা একদম শোনা চলবে না টাইপ৷ আমি হাত ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উল্টো দিকে ঘুরেই আগের ন্যায় দৌড়ে গেলাম৷ সে বিষ্ময়ে ‘ হা ‘ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমার হাসি পাচ্ছে প্রচুর৷ সন্ধ্যা থেকে চোখে-চোখে রাখছেন আমাকে উফফ!

আজ নীতির হলুদ সন্ধ্যা৷ তার বহু কাঙ্খিত মানুষটার সাথেই৷ সেদিন বিকেলে আরিফ ভাইয়ার মা কে নিয়ে আসলে নীতির মা না করেন নি৷ সেদিন রাতেই সব ঠিকঠাক হয় আর আগের ছেল পক্ষের কাছে ব্যাপারটা জানানো হলে তারা ভেজাল করলেও নীতির মা বুঝাতে সক্ষম হয়েছে৷ ওর মামা এইজন্য বিয়েতে আসেন নি৷ তার ঠিক তিনদিন পর মানে আজ নীতি আর আরিফ ভাইয়ার হলুন সন্ধ্যা৷
আমাকে নীতি কাল নিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে সাথে রাফিন, রাহাত, ফারিহা,মাধবী আর জান্নাত৷ আর আজ একটু আগে আমার সে এসেছে সাথে নোমান আর মিম ভাবি৷
নীতি অতিরিক্ত ব্ল্যাকমেইল করেই তাদের আনিয়েছে৷ সব ঠিকঠাক থাকলেও আমার ভয় হচ্ছে রাফিন কে নিয়ে৷ ও জহুরি চোখে আমাদের পরখ করে চলেছে৷ আমি সিউর ও বুঝতে পারলে উনার সামনে গিয়ে বলবে,
–‘ আপনি আমার উডবি দুলাভাই?যাক আলহামদুলিল্লাহ আমার ঘাড় থেকে পেত্নী আপনার ঘাড়ে গেলো তাহলে৷ ভাইয়া বলুন তো? ওই পেত্নীর প্রেমে পরলেন কি করে?? ‘
ভাবলেই কেমন লাগছে৷ আর সেও রাফিনের সাথে মিলে আমাকে হেনস্তা করবে এইটার ভুল নেই৷
ভেবেই বিরক্তি সূচক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নীতির রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম৷
নীতি কাঁচা ফুলের গহনা দিয়ে ভারী সাজে বসে আছে সাথে মিম ভাবী আর জান্নাত৷ আমাকে অন্যমনস্ক দেখে জান্নাত বলল,
–‘ সব ঠিক আছে আপু?’

–‘ একদম ৷ কেন? ‘ আমি হাতের শাড়িটা মিম আপুর কাছে দিয়ে বললাম৷ নীতি আমাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে শাড়ি ধরে বলল,

–‘ দোস্ত,আজও সাদা? কেমন ম্যাটমেটে কালার দেখ তো৷ সবাই রঙিন ইভেন স্নিগ্ধ ভাইয়াও আর তুই সাদাতেই আটকে থাকবি৷ ‘

আমি নীতির হাত থেকে শাড়ি ছাড়িয়ে বললাম,
–‘ একদম ম্যাটমেটে বলবি না৷ আজ তোর বিয়ে না হলে গাল লাল করে দিতাম ফাজিল৷ তুই জানিস না? ‘সাদাতেই আমার বাস সাদাতেই আমার সর্বনাশ৷ ‘

–‘ তোমার সাদা শাড়ির প্রেমে আমার দুইমাত্র দেবর আশেপাশে সাদা ছাড়া আর কিছু চোখে দেখে না৷ সাদা প্রেম৷ ব্যাপারটা শুনে আমি প্রথম ভারী অবাক হয়েছিলাম৷ ‘
আমি হাসলাম৷ উত্তর কি দিবো খুজে পেলাম না৷ সাদা পরার পর শান্তি অনুভব হয় আর সেই শান্তির অনুভব আমার কাছের মানুষটা পর্যন্ত অব্যাহত এইটা ভেবেই তৃপ্তির হাসি আরো গাঢ় হলো মুখে৷

____________________________
–‘ তুই নাকি বিয়ে টিয়ে করে ফেলেছিস? ‘
নীতিকে স্টেজে নিয়ে যাচ্ছিলাম এর মাঝে রাফিন পাশ ঘেষে ফিসফিস করে বলতেই আমি নীতির মাথার উপর ধরে রাখা ওড়নার এক কোণা ছেড়ে দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,
–‘ উড়ো খবর কোন হাওয়ায় ভাসে রে?? ‘

–‘ স্নিগ্ধ ভাইয়ার স্নিগ্ধময় হাওয়ায়৷

–‘ ত…তোকে বলেছে কে?? বেশি কথা বলিস ফাজিল৷ ‘

–‘ ভাইয়াটা অনেক ভালো তোর মতো পেত্নীর প্রেমে কি করে পরলো ভাববার বিষয়৷ ‘ রাফিন দাঁত বের করে হেসে বলতেই আমি ওর বাহুতে থাপ্পড় লাগিয়ে দিই৷ রাফিন হেসে চলছে৷ আমি রাগে সামনে এগিয়ে যেতেই ও পেছন থেকে বলল,
–‘ এই আপু! ‘

–‘ আজাইরা কথা বললে আবার মার খাবি রাফিন৷’

আমি সামনে ঘুরেই বললাম৷ ও দৌড়ে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে জ্ঞানী ব্যাক্তিদের মতো বলল,
–‘ তোমার শুভ্র রঙের প্রেমের ইতিহাস দিয়ে আমি উপন্যাস রচণা করবো৷ সেইটা পৃথীবির কোণায় কোণায় শুভ্র ভালোবাসা সৃষ্টি করবে৷ আর হ্যাঁ,
আমি রাজি স্নিগ্ধ ভাইয়ার জুতো চুরি করার জন্য তাই জোর কদমে এগিয়ে যাও৷ ‘
ও বলেই হাসতে হাসতে রাহাতের দিকে চলে গেলো৷ আমি দাঁড়িয়ে আছি ওর দিকে তাকিয়েই৷ মূহুর্তেই মন নেচে উঠলো৷ তাকে পাওয়ার সব আশা আবারো রাতের জোনাকির মতো ঝিলমিল করে উঠলো চারপাশে৷

বিয়ে বাড়ির পরিবেশ মানেই হই-চই আর মনের কোণায় প্রজাতির ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ৷ তবে আমার মনে কোণায় গালির বহর৷ স্টেজেই সবাই আরিফ ভাইয়া আর নীতিকে নিয়ে ডান্স করছে আর আমি বসে বসে দেখছি৷ তার মূল কারণ আপনাদের স্নিগ্ধ৷ সে ওই ভীড়ে আমাকে যেতেই দিবে না৷ আরিফ ভাইয়ার ছেলে ফ্রেন্ড গুলা অতিরিক্ত করছে৷ সেও থম মেরে বসে আছে৷ আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম সে পাত্তা দিলো না৷ থমথমে মুখেই জবাব দিলো,
–‘ ওখানে যাওয়ার আশা ছেড়ে দেও৷ দেখো কতো পরিমাণের বিশৃঙ্খলা ওখানে৷ আমি রিস্ক নিতে চাই না৷ ‘

–‘ আমিও যাচ্ছি না৷ ‘ মুখ ঘুরিয়ে জবাব দিলাম৷ নীতির বিয়েতে কতো প্ল্যান ছিলো আমার যা সব ফুড়ুৎ করে উড়ে গেলো এই মানুষটার জন্য৷ ইশ! আফসোসের সীমা নেই আমার৷
–‘ আমাদের বিয়ের সময় এতো কড়া হলে আমি আপনাকে বিয়েই করবো না৷ ‘

–‘ তারপর? ‘
আমি নিজের বলা কথায় বোকা বনে গেলাম৷ চুপ করে বসে থেকে হঠাৎ উনি বললাম,
–‘ আই বেডলি নিড ইউ৷ ‘
তার একটা কথায় শ্বাস আটকে এলো আমার৷ বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে আবারো চুপ মেরে বসে রইলাম৷ সে আলতো হাতে আমার হাত ধরে বলল,
–‘নদীর পাশে যাবে? ‘

–‘ এখানে কোথায় পাবো নদী! ‘
উনি সরু চোখে তাকালেন আমার হাত ধরে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
–‘ যেতে চাও কিনা বলো? ‘

–‘ ওদের বলে আসি৷ ‘

–‘ বলতে হবে না আমি রাহাত আর রাফিনকে ম্যাসেজ করে দিচ্ছি তুমি আমার সাথে৷ ‘
আমি আরেকদফা অবাক হলাম৷ এর মাঝে রাফিনের সাথে নাম্বার আদান প্রদান হয়ে গেছে৷ সব আমাকে ফেলে রেখেই এগিয়ে চলেছে আর আমি এক জায়গায় তাকে ভেবেই দাঁড়িয়ে আছি৷ এইবার তোমাকে ফার্স্ট হতেই হবে৷

ঝিরিঝিরি বাতাসের তোড়ে অন্ধকারেও সব হেলেদুলে উঠছে৷ দূরের ঘাটে পারাপারের নৌকা বাধা সেটাও বাতাদের তালে দুলে উঠছে৷ তার থেকে দূরের নৌকা থেকে বৈঠার আর পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ চারিপাশ মুখরিত করে তুলেছে৷ আমার শরীর থেকে বেলীফুল আর গোলাপের তীব্র সুমিষ্ট সুবাস নদীর হাওয়ায় মিলিয়ে আবার ফিরে ফিরে আসছে৷ উনার শরীরের হলুদ পাঞ্জাবি টা রাতের আঁধারেও স্পষ্ট৷ আমি সামনে গিয়ে দু’হাত মেলে দিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম৷ সে ঘুরে তাকিয়ে বলল,

–‘ আই ওয়ান্না টাচ ইউ৷ ‘ আমি হাত নামিয়ে চমকে উঠে তাকালাম৷ সে নির্লিপ্ত হাসলো৷ তবে তার সহজ স্বীকারোক্তি আমি মেনে নিতে পারছি না৷ হঠাৎ এমন ইচ্ছা কেন সেটাও ভাবতে পারছি না৷ আমি উত্তর না দেওয়াতে সে আমার পেছনে এসে দাঁড়ালো৷ আমি ভড়কে সামনে পা বাড়াতেই সে চট করে আমার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
–‘ এই শুভ্রতায় রাঙা শুভ্র পরী,
আমি তোমার সব কিছুতে নিজেকে কেন খুজে পাই বলতে পারবে??
আমার সব কিছুতে কেন তোমার নামের দখলে বলতে পারবে??
উইল ইউ ম্যারি মি?? ইউ উইল বি মাই হার্ট..! আই উইল,বিকজ আই ওয়ান্না ইউ৷
আই মিস ইউ everywhere…I really miss you a lot Everytime! every moment….
ইউ ছে,ইউ উইল বি মাইন… ‘
আমি স্তব্ধ! শরীরের প্রত্যেকটা শিরায় শিরায় ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে৷ তার প্রত্যেক টা কথা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুরেফিরে জানান দিচ্ছে,
–‘ ইয়েস আই উইল৷ ‘
তবে সেটা মুখ ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো না৷ আমি ফ্রিজড হয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷ সে আবার বলল,
–‘ শুনছো তুমি?
আমি ভালোবাসি তোমায়৷ মা য়ের পর আমি তোমায় ভরসা করি ভালোবাসি৷ খুব ভালোবাসি৷ এতোটা ভালোবাসি প্রতি নামাজে দোয়া করি,
আমরা যেন পাশাপাশি কবরে থাকতে পারি৷ এক সাথে যেন মর‍তে পারি৷ সত্যি বলছি,তোমার কিছু হলে আমি বাঁচতে পারবো না আর না তোমাকে পৃথীবিতে রেখে যেতে পারবো৷ আমি স্বার্থপর৷ আমি ভালোবাসতে চাই জনম জনম আর সেটার মাঝে কোনো স্বার্থ নেই৷ ‘
আমি কেঁদে উঠলাম শব্দ করে৷ তার বলা আওয়ার গুলো বিক্ষিপ্ত করে তুলছে আমায়৷ আমি ঘুরে তাকালাম৷ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম তাকে৷ ছেড়ে দিলেও যেন হারিয়ে না যায়৷
তার বুকে মাথা রেখেই বললাম,
–‘ আমি চাই আপনাকে নিজের করে৷ আমি চাই আপনাকে আপন করে৷ ‘
সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ ঠান্ডা শীতল কন্ঠে বললেন,
–‘ আর একটা দিন তারপর সব তুমি যুক্ত সম্পূর্ণ আমার হবে৷ তবে….’
আমি মাথা উঠালাম না৷ ধীর কন্ঠে বললাম,
–‘ তবে কি? ‘
চলবে…

~ঘাড় ব্যাথা দুইদিন ধরে কাল এর জন্যই দিই নি৷ ভেবেছিলাম কমবে না আরো বেড়েছে অনেক৷ এতোটুকু অনেক কষ্টে লেখেছি৷ মাথা ব্যাথা প্রবলেম নেই তবে ঘাড় নীচু করলেই ব্যাথায় টনটন করছে৷ খাপছাড়া হয়েছে আজ জানি৷ বলবেন সবাই কেমন হচ্ছে..~♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here