হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া,(৩য় এবং শেষ পর্ব)
হেমন্ত_হাসান
ফোন দিলাম। এক.. দুই… তিন.. সেকেন্ড
রিং হচ্ছে।গলাটা শুকিয়ে গেল এক অজানা ভয়ে।বুকের ভেতরটা উত্তেজনায় ফেটে যাচ্ছে।বুকের ঢিপঢিপ শব্দ মনে হয় বাহিরে এসে পরবে।
৩.
রিং বেজেই চলছে।কেউ রিসিভ করলো না।আবার দেয়া উচিৎ। এবারো রিং হচ্ছে।ভেতরটা উত্তেজনায় ফেটে যাওয়ার উপক্রম।
ফোন রিসিভ করলো কেউ একজন।প্রথমে ওপাশ পুরো নিরিবিলি মনে হলেও কয়েক সেকেন্ড পর বোঝা গেল, কি রকম একটা শব্দ যেন হচ্ছে।অনেক দূর থেকে কোন শব্দ আসছে,ফুস ফুস করে একটা শব্দ।
অনেক সাহস করে বললাম,”হ্যালো, কে আপনি?”
কোন উত্তর পেলাম না।আবারও বললাম, “কথা বলছেন না কেনো?কে আপনি?আমাকে কেন এভাবে মেসেজ দিচ্ছেন।”
এবারও চুপ।আগে যে একটা ফুস ফুস শব্দ হচ্ছিলো সেটাও এখন বন্ধ।পুরো নিশ্চুপ সব।কেন জানি আমিও ধীর হয়ে গেলাম।ও পাশের নিরবতা দেখে মনে হচ্ছে, শব্দ করা যাবে না।
হঠাৎ ও পাশ থেকে অন্যরকম একটা শব্দ আসলো।প্রচন্ড ঝড়ের মাঝে পরলে এমন শব্দ হয়। বাতাসের শব্দ শু..শু…..শু…
একবার মনে হচ্ছে ঝড়ের শব্দ, আরেকবার মনে হচ্ছে কোন দ্রুত কিছুতে কেউ যাচ্ছে সেই দ্রুততার ফলে বাতাসের একটা ধাক্কা, সেই থেকে যে শব্দ হয়, সেটা আসছে।
হঠাৎ আবার শব্দটা বন্ধ হয়ে গেল।এরপর কিছুক্ষণ সব চুপ।আমিও চুপ।
এরপর একটা হাসির শব্দ। কয়েক সেকেন্ডের হাসি। তারপর ফোন কেটে দিলো।
সাথে সাথে আবার ফোন দিলাম। নাহ, ফোন বন্ধ।
হাসিটা ঠিক পুরুষের নাকি নারীর বুঝতে পারলাম না।হাসির ধরনটা জানি কেমন?কোন অনুভূতিতে মানুষ এমন করে হাসে ঠিক ধরতে পারলাম না।
ভয় কেটে গেছে।এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে বিষ্ময় হওয়া।
.
মাথাটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।কোন বাজে কিছুর সাথে কি আমি জরিয়ে পরলাম।এই নাম্বার ব্লক করতে চাইলাম, তখনই মেসেজ।
সূচনার প্রতি একটু ভালোলাগা কাজ করেছে তখনই মেসেজ।নাহ,কেউ একজন কিভাবে পারে?আমি কি চিন্তা করছি হয়তো আমার সামনে থেকে কেউ অনুমান করতে পারবে কিন্তু এভাবে কিভাবে পারে?
সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।
টুং…
আবার মেসেজ এলো।সূচনার মেসেজ, সেই উটকো মেসেজ না।
“ফোন দেয়া যাবে?”
এখন সূচনার সাথে কথা বললে হয়তো একটু ভালো লাগবে।
তাই আমিই ফোন দিলাম।
সূচনা ফোন ধরলো।
“কই নাচের পর তো আপনাকে আর দেখলাম না।”
“ছিলাম তো আরও কিছুক্ষণ। এরপর চলে এসেছি।”
“ভালো লেগেছে আপনার?”
“কি?নাচ?”
“হুম..?”
“অনেক ভালো লেগেছে, এরকম নাচ আমি আগে কখনও দেখি নি।”
“কই, এটা তো কমন নাচ। প্রায় সব জায়গাতেই দেয়।”
“আসলে আমি নাচই দেখি নি বেশি।”
কথাটা বলে একটু হাসলাম।সূচনাও হাসলো।সূচনার হাসি শব্দ বুকে খুব জোরে আঘাত করে।কেন করে জানি না।
.
আরও কিছুক্ষণ এলোমেলো কথা বলে ফোন রাখলাম।একটা মেয়ের সাথে কত কম পরিচয়। কিন্তু কত তাড়াতাড়ি ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম।মনে হচ্ছে অনেকদিন ধরে চিনি আমি সূচনাকে।
গান গাইতে মন চাচ্ছে।
“এই বৃষ্টি ভেজা রাতে তুমি নেই বলে,সময় আমার একা কাটে না।”গানটা বাজিয়ে দিলাম।ঠিক করেছি আগামীকাল সকালে নাম্বার চেঞ্জ করবো।এই সিম ই আর ব্যাবহার করবো না।একেবারে মাথা ব্যাথায় এবার মাথাই কেটে ফেলবো।
সূচনাকে আবার ফোন দিতে মন চাচ্ছে।তবে অনুমতি ছাড়া এভাবে ফোন দিতেও ইচ্ছে করছে না।মেসেজ দিতেও ভাল লাগছে না।মেসেজের প্রতি একটা ভয় একটা বিরক্তি ভাব কাজ করে।
মনে মনে ভাবলাম থাক আগামীকাল সকালে কথা বলবো সূচনার সাথে।তখন ফেসবুক আইডিও চেয়ে নিবো।এই যুগে এসে মেসেজে কথা বলতে কে চায়?
.
রাত বারোটার মত বাজে।গায়ে হলুদের গান-বাজনা এখন বন্ধ হয়েছে।যদিও এখনকার হলুদ অনুষ্ঠান রাত তিনটা চারটার আগে শেষই হয় না।
মেসেজের চিন্তায় ঘুম আসতে চায় না।আবার আরেকটা সূক্ষ্ণ চিন্তা,সূচনার কথা মাথায় ঘুরছে।চোখ বন্ধ করলেই সূচনার নাচের দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসে আসছে।
.
বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছি।আগে যখন এভাবে ঘুম আসতো না তখন জানালার পর্দা সরিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।আমার বিছানার পাশেই জানালা।খুব সুন্দর আকাশ দেখা যায় বিছানা থেকেই।
কিন্তু আজকে আকাশে মেঘ।চাঁদ দেখা যাচ্ছে না।ঠান্ডা বাতাস আসছে জানালা দিয়ে।
.
হঠাৎ মোবাইলটা কেপে উঠলো।আবার মেসেজ।সেই অপরিচিত রহস্য ঘেরা নাম্বার থেকে।
” মানুষ আনন্দে, দুখখে আর দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারে না।চেষ্টা করাও বৃথা। ”
একটা জিনিস খেয়াল করছি।গতকাল থেকে প্রায় সব মেসেজগুলোই আমার মনের কনফিউজড বিষয়গুলোর উপর আসছে।অদ্ভুত! কেউ আমার মন পড়ছে।কোথা থেকে পড়ছে, কে পড়ছে কিছু জানি না।
এই রহস্য ঘেরা নাম্বারের মালিক কে জানি না।তবে যেই হোক এটা নিশ্চিত খুবই অদ্ভুত এবং অন্যরকম ক্ষমতা সম্পন্ন কেউ।
তাহলে আমি যদি নাম্বার চেঞ্জ করি কোন লাভ হবে না।কারন যে আমার মন পড়তে পারছে সে মন থেকে নাম্বার ঠিকই নিতে পারবে।মন না মস্তিষ্ক? যাই হোক।নাম্বার তার কাছে চলেই যাবে।
টুং।মেসেজ।
“ঠিক। নাম্বার আমি ঠিকই পাবো।”
আর অবাক হবো না।ভয়ও পাবো না।চেষ্টা করি এই অদ্ভুত সত্তার সাথে যোগাযোগ করার।
ফোন দিলাম ,সেই একই ঘটনা।ফোন বন্ধ।উত্তেজনা একটু বৃদ্ধি পেলেও আগের থেকে কম।মানুষ আগুনের পাশে থাকতে থাকতে একটা সময় অনেক উচ্চ তাপও সহনীয় হয়ে যায়।
.
ঝড় হতে পারে।জানালা দিয়ে বাতাস আসছে। পর্দাগুলো বাতাসে এলোপাথাড়ি উড়ো উড়ি করছে।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর।
ঘুম মনে হয় আর আসবে না।
আবার মোবাইলটা কেপে উঠলো।সেই অচেনা নাম্বার,
“ঘুম আসবে না।জীবনে সুন্দর কোন দৃশ্য দেখতে চাইলে ছাদে আসা উচিৎ। আসুন।”
.
ঘুম আসছে না ঠিকই।কিন্তু এখন ছাদে যাওয়া ঠিক হবে?
যদি মেরে ফেলে।তবে ভয়হীন ভাবে থাকা যায়।এটা কোন সাধারণ মানুষ না।কোন চোর বা ডাকাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।প্রতারক হওয়ারও সম্ভাবনা নেই।মানুষ আর যাই করুক আরেকজনের মনের কথায় বার বার উত্তর দিতে পারে না।তাও আবার আমার আশেপাশে না থেকে।
.
আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম।টেবিলে রাখা পানিটা এক চুমুকে খেয়ে রউনা দিলাম ছাদের উদ্দেশ্যে। যা হবার হবে।
.
আমাদের ছাদটা দুই ভাগে বিভক্ত। সিড়ি দিয়ে উঠে ছাদে প্রবেশ করলে এক পার্ট,এরপর একটু সামনে গেলে দুই নম্বর পার্ট দৃশ্যমান হয়।দুই নম্বর পার্টে অনেকগুলো ছোট ছোট ফুলের গাছ লাগানো।
সিড়ি দিয়ে উঠে প্রবেশ করলাম ছাদে।ঠান্ডা ঠান্ডা একটা বাতাস স্পর্শ করে গেল।ঝড় আসার আগে হঠাৎ পরিবেশটা কেমম ঠান্ডা হয়ে যায় সেরকম অবস্থা।মেঘলা আকাশ হলেও কেন জানি ঘুটঘুটে অন্ধকার না ছাদটা।কোথা থেকে জানি একটা ঝাপসা আলো ছাদ আর আমার উপরে মেঘগুলোকে মৃদু আলোকিত করে রেখেছে।
.
আমি আস্তে আস্তে ছাদের ভিতরে প্রবেশ করলাম।বাতাসে একটা মিষ্টি গন্ধ।দুই নাম্বার পার্টে চোখ পরতেই দেখলাম সেখানে কেউ একজন দাঁড়িয়ে। হালকা ভয় পেয়ে গেলাম।
আরেকটু সামনে এগোতে দেখলাম,একটা মেয়ে।হালকা নীল শাড়িতে উল্টো দিক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি তার ত্রিশ হাতের মত পেছনে।।সে উপর দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখছে।অন্ধকার আকাশ।চুলগুলো খোলা।এতো লম্বা চুল আমি আগে দেখেছি কিনা মনে হয় না।
শাড়ির আঁচল আর খোলা চুল একই সাথে বাতাসে এমন ভাবে আলোড়িত হচ্ছে যে, কোন ব্যাক্তির পক্ষেই একে উপেক্ষা করা সম্ভব না।
.
আমি আসলাম মোবাইল মেসেজে।এই কি সেই সৌন্দর্য?
সাথে সাথে মোবাইলটা কেপে উঠলো। মোবাইল স্কিনে সেই নাম্বার।মেসেজ এসেছে,”নাহ। সৌন্দর্য দেখা বাকী আছে।”
.
ঝড় যেকোন সময় নেমে যাবে।বাতাসের প্রবাহ দ্রুত হচ্ছে।সাথে ওই মেয়ের চুল আর আঁচলের আন্দোলনও।
মেয়েটা পেছনে ঘুরছে।এতো রাতে একটা মেয়ে ছাদে।এই প্রশ্নটা আমি করবো নাকি এতো রাতে ছাদে কি করেন এই প্রশ্নটা মেয়েটা করবে ভাবতে ভাবতে মেয়েটা পেছনে ঘুরে দাঁড়ালো।
মেয়েটার চেহারা দেখে ভিষণ একটা ধাক্কা খেলাম।সূচনা?
কিন্তু এই ছাদে কেন?এতো রাতে?
এটা কি সূচনাই।সূচনার মতই কিন্তু একটা গুরুগম্ভীর ভাব মুখে, চোখে, হাটায়।
আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।আমি এতোটাই অবাক হয়েছি যে মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না।সে আমার দিকে এগিয়ে আসছে আর বাতাসে তার চুল আর শাড়ির আঁচল উড়ছে।তার পেছনে মেঘ, ঝড়ো বাতাস আর বিদ্যুৎ চমকানো আকাশ।
.
আমার এক হাত সামনে দাঁড়িয়ে সূচনা।এখন কিছু না বললেই না।
“সূচনা, আপনি এতো রাতে এখানে?”
সূচনা হাসলো।তার ব্যাক্তিত্বে অনেক পরিবর্তন দেখতে পারছি।আগের মত হাসি না।এই হাসি কেমন যেন, ঘোর লাগিয়ে দেয়।
.
“আমি সূচনা না।আমি, আপনাকে মেসেজ দেয়া সেই সত্বা।”
“তাহলে আপনিই মেসেজগুলো দিচ্ছিলেন?”
“আমিই দিচ্ছিলাম। ”
“তাহলে আপনি ইচ্ছে করেই আমার কাছে ঠিকানা চেয়েছিলেন আজ সকালে।”
“আমি সূচনা না।সূচনা এখন ঘুমোচ্ছে।”
.
আমার মাথা ঘুরাচ্ছে।সামনে সূচনা দাঁড়িয়ে।কিন্তু বলছে সে সূচনা না।সূচনা ঘুমোচ্ছে।তাহলে কে আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
.
“আপনার সামনে যে দাঁড়িয়ে সে অনেক দূরের একজন।মানুষের ধারনার বাহিরে।মানুষ এখনও ওই দূরের কথা চিন্তাও করতে পারে নি।”
“আপনি কি অন্য জগৎ এর কেউ?সিনিমায় দেখা এলিয়েন। ”
“নাহ।”
“তাহলে?”
“মানুষকে বোঝানো যাবে না।মানুষ এ ধারনার বাহিরে। ”
.
ঝড়ো বাতাস বেড়ে যাচ্ছে সাথে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকানো।মাঝরাতে এভাবে একটা পরিচিত নাকি অপরিচিত মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছি।রহস্যময়ী মেয়ে।
” আমার কাছে কি চান?”
“আপনার কাছে কিছু চাই না।”
“তাহলে গতকাল থেকে যে মেসেজগুলো দিলেন?”
সূচনা নাকি অন্যকেউ, একটু হাসলো।এই হাসির কোন অর্থ নেই।মূর্তির চোখে যেমন চঞ্চলতা নেই ঠিক এই হাসিতেও কোন আকর্ষণ নেই।
মেয়েটার শাড়ি পরে যাচ্ছে। কিন্তু শাড়ি ঠিক করার কোন লক্ষণ নেই।
.
মেয়েটা বলল,”আসলে কাকতালীয় ভাবে আপনার উপরই পরিক্ষা চালাচ্ছি ।আমি আসলে মানুষের মনের উপরপরিক্ষা করছিলাম।আর সাব্জেক্ট হিসেবে আপনাকে নিয়েছি। মন বলি কেনো?মস্তিষ্ক হবে।মন বলতে কিছু নেই।
আমি আপনার মস্তিষ্ক প্রায় পুরোটা পরেছি।যদিও আমি বলেছিলাম অনুমানক করে বলি কথাটা মিথ্যা।একটু স্বস্তিতে রাখতেই আপনাদের মিথ্যা বলা।মানুষের মস্তিষ্ক আসলে খুব বিচিত্র।
পুরোটা ধরা যায় না।
তবে মস্তিষ্কের একটা জায়গা আছে যার ক্রিয়াকলাপকে আপনারা মনের খেলা বলেন।সেখানে কালকে থেকেই একটা নতুন মুখ জেগে উঠেছে।”
আমি তার কথা কিছুই বুঝছি না।সূচনা নাকি অন্য কেউ
বলেই চলেছে।
“দেখুন আপনার মনে অনেকগুলো মুখ আছে।আপনার বাবা-মা,ভাই-বোন,সবারই আলাদা একটা করে জায়গা সেখানে রাখা আছে।এদের কোন বিকল্প নেই আপনার কাছে।
কালকে থেকে সেই জায়গায় আরেকটা মুখ আসছে যার কোন বিকল্প এই পৃথিবীতে নেই।”
একটু একটু তার কথা বুঝতে পেরেছি।
আমি বললাম,”কে সে?কার মুখ?”
আপনার সামনে যে এতোক্ষণ যে দাঁড়িয়ে।
কে সূচনা?
মেয়েটা হাসলো।আবার সেই ঘোর লাগানো হাসি কোন মিষ্টতা নেই।
মেয়েটা বলল,”হুম।”
“আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না।”
“একদিন ঠিকই বুঝতে পারবেন।”
.
হঠাৎ দমকা হাওয়া শুরু হলো।বাতাসে তেজ এমন ভাবে বেড়ে চলেছে মনে হচ্ছে আমাকেও উড়িয়ে নিয়ে যাবে।বাতাসে আর মেয়েটা অবহেলায় মেয়েটার শাড়ি এখন পুরো খুলে গেছে।লাল ব্লাউজে এখন এক মানবী দাঁড়িয়ে আমার সামনে।যে সুচনার মতই কিন্তু সূচনা না।তার খোলা চুল শাড়ি খুলে যাওয়ার পর আরও দীর্ঘ মনে হচ্ছে।
ভ্রম নাকি জানি না।তার খোলা চুল তার দেহকে জরিয়ে ধরছে।পুরো দেহ তার চুলে ঢাকা পরে গেছে।সে আস্তে আস্তে আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।ঝড়ের তীব্রতা বেড়েই চলেছে।
.
মেয়েটা আমার থেকে এখন প্রায় বিশ হাত দূরে এখন।কই এই মেয়ে তো সূচনা না।এখন অন্য কারো মুখ সেখানে। নারী নাকি পুরুষ তাও বোঝা যাচ্ছে না এখন আর।চুলে আবৃত সারা দেহ।মুখটা অস্পষ্ট হয়ে গেছে।
হঠাৎ মেয়েটার থেকে একটা শব্দ ভেসে আসলো
ঠিক পুরুষ নাকি নারীর গলা বোঝা গেল না।
“তোমার কিছুই মনে থাকবে না।এই মেসেজের কথা, এই রাতের কথা।সূচনা থাকবে তোমার পাশে।ওকে হারিয়ে ফেল না।”
মনে থাকবে না?রাফির তো মনে থাকবে।ও আমাকে জিজ্ঞেস করবে, তখন আমার মনে পরবে।পরক্ষণেই খেলে গেল এসব আমার মাথায়।
আবার শব্দটা ভেসে আসলো,”তুমি ফেরার সাথে সাথেই রাফি সব ভুলে গেছে।”
হঠাৎ কোথাও জোরে বজ্রপাত হলো।একটার পর একটা বজ্রপাত। আলোকিত হয়ে যাচ্ছে চারদিক বিদ্যুৎ চমকানোর ফলে।সেই আলোতে দেখতে পেলাম এতোক্ষণ যাকে সূচনা ভেবেছিলা সে সূচনা নয়।সে নারী নয়, পুরুষ নয়।সে যে কি, বোঝানো যাচ্ছে না।
বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেছে।ভিজছি এই মাঝরাতে।বাতাসের প্রবাহ আরও দ্রুত হয়ে গেল।বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় দেখতে পেলাম সে উড়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত উপরের দিকে।যেতে যেতে বজ্রপাতের মত জোরে একটা শব্দ এলো,
“ভুলে যাবে সব।এই রাত, আমাকে। ”
হঠাৎ মাথায় তীব্র যন্ত্রণা শুরু হলো।
আমি জ্ঞান হারচ্ছি,আমি জ্ঞান হারাচ্ছি…
সমাপ্তি