বর্ষার_এক_রাতে,পর্ব-২৬,২৭
সাদিয়া
২৬
আহফিন প্রায় একটা পার্কের সামনে গিয়ে বসে থাকে। শুধু যে এমনি এমনি বসে থাকে তা নয়। একাকীত্ব দূর করতেই বসে থাকা। পার্কের সামনে চা বাগান। পাশে চা বাগান। অন্যপাশে রাস্তার ধারে পার্কটা। দেখতে বেশ মনোরম লাগে। শান্তিতে একটু নিশ্বাস নেওয়া যায়। আহফিন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে পার্কে আসা মানুষদের দিকে। ছোটছোট বাচ্চারা যখন খেলা করে হাসে আহফিন তখন ওদিকে তাকিয়ে যেন ওদের মাঝে হারিয়ে যায়। ভেতরের সুপ্ত শিশু ভাব টা যেন জেগে উঠতে চায়। তাই এমন কোলাহলেই থাকে এখন। মানুষের আওয়াজ শব্দ না পেলে মনে হয় একাকীত্বের ঘন নিকশ কালো অন্ধকার তাকে বুকে টেনে নিচ্ছে। আগে যেমন কোলাহল এড়িয়ে যেতো এখন ঠিক তেমনি কোলাহলে ঢুকে যেতে চায়। মানুষের কোলাহলে থাকলেও মনে হয় তার আশেপাশে কেউ অন্তত আছে।
ফোনের স্কিনে তূবার ছবি। ভেতরে আহামরি কাছে পাওয়ার ইচ্ছা আর অনুভূতি। আজকাল তূবার ছবির দিকে তাকালে আহফিনের বুক ফেটে কান্না আসে। চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি পড়ছে। ভেতরটা পুড়ে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হচ্ছে। কি অসহনীয় দহন! ইশশ!
হঠাৎ ছোট্ট একটা হাত আহফিনের গাল স্পর্শ করল। হঠাৎ স্পর্শে তার শরীর আবেগবশে কেঁপে উঠল। মিষ্টি চিকন গলায় বলল
“আঙ্কেল তুমি না বড়? তোমার কাঁদতে নেই। একদম কেঁদো না। গুড ডে।”
আহফিন পাশ ফিরে তাকাল। ঝাপসা চোখের কারণে বাচ্চা মেয়েটা কে আর দেখা হলো না। তার আগেই দৌড়ে চলে গেছে। আহফিন চোখ মুছে তাকাতে তাকাতে আবার মেয়েটা হুচট খেয়ে মাটিতে থুবড়ে পড়ল।
আহফিন তড়িৎ বেগে মেয়েটার কাছে গেল। টেনে তুলে হাটু আর জামা থেকে ময়লা ঝেড়ে ফেলে বলল
“লক্ষ্মী সোনা তুমি ব্যথা পাও নি তো আম্মু?”
“….
আহফিন যখন ভালো করে মেয়েটার দিকে তাকাল। তখন আতকে উঠল সে। ভেতরটা যেন বারি দিয়ে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছে তার ছোটবেলা এটা। একদম তার চেহারা। ছোটবেলার ছবির ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না। এটা আবার কি ভাবে সম্ভব?
আহফিন মুগ্ধ নয়নে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক যেন পড়ছেই না। দুই গালে স্পর্শ করতেই থমকে গেল আহফিন। ভেতরে কেমন উথালপাতাল একটা ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে। মনটা কেমন ব্যাকুল হাওয়ায় দুল খাচ্ছে। অস্থির অস্থির লাগছে। আহফিন ছলছল নয়নে মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই চোখ গুলি তার বড্ড চেনা লাগছে। অতীত যেন সজীব হতে শুরু করেছে।
“কি দেখছো?”
“….
“কি হলো হিরো আঙ্কেল? কি দেখছো ওভাবে তাকিয়ে?”
এতক্ষণে হুশে ফিরল সে। খানিক হেসে বলল,
“ছোট্ট একটা এঞ্জেল কে দেখছি। চলো ওখানে গিয়ে বসবে।”
“আমার জার্সি কোথায়?”
“জার্সি?”
এদিক ওদিকে তাকিয়ে “ওই যে আমার জার্সি পড়ে আছে” বলল।
তারপর দৌড়ে সে মাটিতে পড়ে থাকা সুন্দর একটা পুতুল কোলে তুলে নিল। হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
“জার্সি তোর কিছু হয়নি তো? তুই ঠিক আছিস তো?”
বাচ্চা মেয়ের কান্ড দেখে আহফিন ফিক করে হেসে উঠল। তারপর ওর কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে নিচে বসল।
“এই যে পাকা বুড়ি? টুনটুনি ময়না পাখি তোমার কোথাও লাগে নি তো?”
“তুমি আমাকে টুনটুনি ময়না পাখি কেন ডাকছো?”
“কেন ডাকলে দোষ হবে নাকি?”
“না এই নামে তো আমাকে আমার মাম্মাম ডাকে।”
“ও তাই?”
“হুম।”
আহফিন মিষ্টি করে হেসে গাল টেনে দিল।
“জানো মাম্মাম কি বলে? এটা নাকি আমার পাপা মাম্মাম কে ডাকত। তাই মাম্মাম এখন আমায় ডাকে। মজা না?”
বুকটা কেঁপে উঠল আহফিনের। ভেতরটা খা খা করতে শুরু করেছে। তূবা কে বলা এই নাম গুলি বড্ড জ্বালাতন করছে তাকে। ভেতরে দহনের ঝড় সৃষ্টি করে দিচ্ছে। নাম রয়ে গেছে মানুষ কই?
নেই। আজ কোথাও তূবা নেই। তূবার স্মৃতি আহফিনের প্রতিটা শোণিত দ্বারায় কিন্তু অস্তিত্ব তো ধোঁয়াশা পূর্ণ। কেবলি নিকশ কালো আঁধার।
“এই যা হিরো আঙ্কেল তো ভাবতে বসেছে।”
আহফিনের গায়ে ছোট হাতের স্পর্শ পেয়ে সে হাসার চেষ্টা করল একটু। পরে বলল
“আচ্ছা পাকা বুড়ি নাম কি তোমার?”
“তাহফিবা।”
মুখে হাল্কা হাসি তুলে বলল “বাহ। নাম টা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে পাকাবুড়ি তুমি জানো?”
“থেংক্স।”
“জানো তোমার সাথে না একজনের অনেক মিল আছে।”
“কে সে?”
“….
“কি হলো আঙ্কেল?”
আহফিন তখনো শূন্যে তাকিয়ে তূবার স্মৃতিতে বিলীন হচ্ছিল। তখন তাহফিবা আহফিনের গালে ছোট একটা চুমু দিয়ে বলল “তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে হিরো আঙ্কেল। আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে খেলতে যাই আঙ্কেল। বাই বাই। তুমি ভালো থেকো।” তাহফিবা সুন্দর করে হেসে হেসে ছুটছিল সামনের দিকে। কিছুদূর গিয়ে থেমে একটা হাতে ঠোঁট ছুঁয়ে তার দিকে ছুড়ে দিল। ভুবন বুলানো হাসি দিয়ে সে ভেতরে চলে গেল। আহফিন তখনো আশ্চর্যান্বিত হয়ে তাকিয়ে ছিল। চোখের সামনে বারবার সেই ছোট মুখ আর হাসি ভেসে আসছিল।
মিজান হাতে দুইটা কোল্ড কফি এনে দেখতে পেল আহফিন মাটিতে হাটু গেড়ে বসে আছে আনমনে। তার চোখে অবাক করা দৃষ্টি। আহফিন কে এভাবে একা বসে থাকতে দেখে মিজান ভাবতে লাগল “স্যার কি পাগল টাগল হয়ে গেছে নাকি? এভাবে একা বসে আছে। কাউকে কি প্রপোজ টপোজ করছিল নাকি? ওমা এটা হলে তো.. নাকি স্যারের ভূতের সাথে… আল্লাহ। আল্লাহ গো বাঁচাইও আমারে।”
মিজান এগিয়ে গেল আহফিনের দিকে।
দুইবার মৃদু স্বরে ডাকল “স্যার। স্যার।” কোনো সাড়াশব্দ নেই। তিনবারের সময় একটু জোরে বলল “ও স্যার। ওভাবে বসে আছেন যে।”
আহফিন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল মিজানের দিকে। তার পর উঠে হাটুতে লেগে থাকা বালু ঝাড়তে লাগল নীরবে। মিজান ভয় নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“স্যার আপনি কি কাউকে প্রপোজ করছিলেন নাকি?”
“হোয়াট ননসেন্স!”
“তাহলে কি.. স্যা স্যার আপনার কি তেনাদের সাথে কথা হয়?”
“কি আবল তাবল বলছো? কার সাথে কথা বলার কথা জিজ্ঞাস করছো?”
“স্যার বুঝতে পারছেন না আপনি। আমি তো.. তেনারা মানে ভূ ভূত।”
“মিজান।”
“আল্লাহ আল্লাহ। আল্লাহ বাঁচাও।”
দাঁত কিড়িমিড়ি করে আহফিন বলতে লাগল “মিজান তুমি কি আবার ড্রিংক করেছো? নাকি গাজা খেয়েছো? কতবার না বলেছি এসব করলে আমার গাড়ি তুমি ড্রাইভ করবে না।”
“বিশ্বাস করেন স্যার আমি কিছুই খাই না। আপনার কছম।”
“স্টপ ইট ননসেন্স।”
“….
“আমি একটা বাচ্চার সাথে কথা বলছিলাম। পড়ে গিয়েছিল তাই তুলতে গিয়ে আমিও বসে পড়েছিলাম।”
“ও তাই বলেন স্যার। আমি তো ভাবছিলাম কি না কি।”
“তুমি যেমন তোমার ভাবনা গুলি তার চেয়েও জঘন্য।”
“এতে আমার কি দোষ আপনিই তো।”
“সাটআপ।”
“….
আহফিন আগের জায়গায় গিয়ে বসল। মিজানের দিকে রুক্ষ সূক্ষ ভাবে তাকিয়ে বলল,
“কফি টা দিবে নাকি এটা গরম করবে? কোল্ড কফি আনলে করো ফেলো গরম আর হট কফি আনলে বরফ করে নাও হাতে রেখে। এই তোমার এক দোষ।”
মিজান আহফিনের কথায় থতমত খেয়ে গেছে। একবার হাতে থাকা কফির দিকে নিবার্ক দৃষ্টিতে তাকায়। আবার আহফিনের দিকে করুণ চোখে।
“দিবে নাকি?”
মিজান এক প্রকার দৌড়ে আহফিনের হাতে কোল্ড কফি টা তুলে দিল। আহফিন কপাল কুঁচকে মিজানের থেকে ঝাটকা হাতে কফি নিয়ে নিল। তারপর ফুস করে নিশ্বাস ত্যাগ করে কফির মগে চুমুক দিল। চোখ বন্ধ করে আবার তাকাল সামনের দিকে। বারবার তাহফিবা কেই দেখতে পাচ্ছে চোখের সামনে। ওর ছোট হাতের স্পর্শ সাথে চিকন মিষ্টি ঠোঁটের পরশ টা তাকে অস্থির করে দিচ্ছে। আহফিন কফিতে দ্বিতীয় চুমুক না দিয়েই উঠে দাঁড়াল।
“সে কি? আপনি এতক্ষণ কফি কফি করে এত গুলি কথা শুনালেন আমাকে আর এখন এই কফি রেখেই উঠে যাচ্ছেন?”
মিজানের বকবকানিতে কান দিল না আহফিন সে ছুটে গেল পার্কের ভেতরে। সেখানে কতকত বাচ্চারা খেলা করছে একে অপরের সাথে। পাশেই তাদের মা কারো কারো বাবারা কিংবা দাদা এসেছে। কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে গল্প করছে। তো কেউ বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত। এত সব কিছুর মাঝে আহফিনের চোখ সাদা কালো ফ্রগ পরা তাহফিবা কে খুঁজে চলছে। আহফিন হারানো বস্তুর মতো খুঁজে চলার চেষ্টা করছে তাহফিবা কে। কিন্তু কোথাও তো পাওয়া যাচ্ছে না। আহফিন একটা বাচ্চা মেয়েকে তাহফিবার কথা জিজ্ঞেস করলে জানায় সে চিনে না। কপাল কুঁচকে সে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। তারপর আরেকটা বাচ্চা কে গিয়ে জিজ্ঞেস করল। সে জবাব দিল
“আঙ্কেল তাহফিবা তো চলে গেছে। ওকে ওর আন্টি এসে নিয়ে গেছে।”
আশাহতের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিল আহফিন। ভেতরে ব্যাকুলতার হাওয়া বইছে। খুব অশান্ত লাগছে নিজেকে। তাহফিবা কে আরেকটা নজর দেখতে মন চায়ছে কেন বুঝতে পারছে না। কেমন শূন্য শূন্য লাগছে।
চলবে♥
#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া
২৭
২.৪২ এ আহফিন দুপুরে নাকে মুখে খেয়ে রেডি হতে শুরু করেছে। বড্ড দুপুর এখন। সূর্য এখনো মাথার উপর থেকে সরেনি। খানিক ঝুঁকেছে মাত্র। কলা গাছ ভেঙ্গে পরার মতো হেলে আছে। আহফিন কে এভাবে ব্যস্ত হয়ে রেডি হতে দেখে মিজান বারবার বলছে স্যার কোথায় যাবেন এখন? কিন্তু আহফিনের কোনো উত্তর নেই। তার কালো বেল্টের ঘড়িটা খুঁজে পাচ্ছে না। ড্রয়ারে, কাবার্ডের ভেতর এদিক ওদিক খুঁজেও পাচ্ছে না সে। এবার মিজান অনেক টা বিরক্ত নিয়েই বলল “স্যার আপনি যাবেন কোথায় এই দুপুর বেলায়?” আহফিন হয়তো তার গলার রাগ টা বুঝল। তার দিকে শান্ত চোখের দৃষ্টি দিয়ে শান্ত ভাবেই বলল “পার্কে যাবো।”
মিজান কেমন ভ্যাবাচেকা খেয়া গেল। তার উচ্চগলায় কথা শুনেও আহফিনের কোনো রিয়েকশন না পেয়ে সে ফের শান্ত গলায় বলল “স্যার এখন তো পার্ক খোলার সময় নয়। পার্কে গিয়ে এখন কি করবেন? এখন পার্কের গেইটই খুলে নি। পার্কের গার্ডই আসে সাড়ে তিনটার দিকে। এখন গিয়ে কি করবেন আপনি?”
“…..
“স্যার আপনি এত অস্থির হচ্ছেন কেন বলুন তো আমায়।”
“তাহফিবার জন্যে।”
চমকে উঠল মিজান। বিস্ময়কর নয়নে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আহফিনের দিকে। মিজান কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেও খানিক অবাক হলো। তার বোধগম্য হলো না মিজানের এভাবে তাকিয়ে থাকাতে।
“কি হলো তোমার?”
“তা তাহফিব?”
“হ্যাঁ।”
“সে আবার কে?”
“কালকের বাচ্চা সেই মেয়েটা।”
ফুস করে মিজান নিশ্বাস ত্যাগ করল। তার এমন ভাব দেখে আহফিন এবার ভ্রুকুটি করে তাকাল। আর আহফিনের এমন তাকানো দেখে মিজান বিষয়টা বুঝতে পারল। এড়িয়ে যেতে মুচকি হাসি দিয়ে বলল “কি কিছু না স্যার।”
আহফিন অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে চলছে তাহফিবার জন্যে। কখন সে আসবে। কখন তাকে হিরো আঙ্কেল বলে চুমু খাবে। তার গাল স্পর্শ করে মিষ্টি মধুর সেই হাসি দিবে।
—-
কাল মেয়েটা বলেছিল আজ তাহফিবা আসবে। কিন্তু সন্ধ্যা হতে শুরু করেছে এখনো তাহফিবা আসল না। একটুপর গার্ড গেইট লাগিয়ে চলে যাবে নিজের বাসায়। কিন্তু তাহফিবার দেখা তো আজ মিলেনি। আহফিন অসহায় করুণ চোখে আবার রাস্তার দিকে তাকাল। এখনি যদি তাহফিবা এসে তার গলা জড়িয়ে বলত হিরো আঙ্কেল আমি এসেছি। আহফিন ওদিকেই তাকিয়ে থাকে আশাহতের মতো।
মিজানের এবার মায়া হতে শুরু করেছে আহফিনের মুখ দেখে। সে তার কাছে গিয়ে বসল। আর বলল
“স্যার। আজ হয়তো মেয়েটা আসবে না।”
মিজানের এমন কথায় আহফিন কষ্ট পেল। মনমরা কালো মুখ টা নিয়ে মিজানের দিকে তাকালে মিজানের ভেতরে কষ্ট পেতে লাগল। আহফিন আবার শূন্যের দিকে তাকিয়ে থেকে ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে দিল। আনমনে বিড়বিড় করে বলল “যার জন্যে অপেক্ষার পাহাড় বানিয়ে ফেলেছি সেই আসে নি এত বছরেরও আর ওই বাচ্চা মেয়েটা কি না..” মুখে তাচ্ছিল্যের রেখা টেনে আনল আহফিন। এই হাসি তার কষ্ট কে পানিতে পরা কলা গাছের টুকরোর মতো ভাসিয়ে তুলে। আহফিন উঠে দাঁড়াল। ডান হাতে চকলেট গুলি নিয়ে মৃদু কদমে হাটতে শুরু করেছে। মিজান তখনো স্তব্ধ হয়ে বসে ছিল। আহফিনের কথাটা নিয়ে ভাবনার জগতে খেলতে নেমে পরল সে।
—-
আজ দুইদিন তাহফিবা আসছে না। আহফিন প্রতিদিন গিয়ে মন ভাঙ্গা অনুভূতি টুক নিয়ে একা ফিরে আসে। একদিনের কয়েক মিনিটের দেখায় কেন সে অস্থির হয়ে উঠছে সে বুঝতে পারছে না। তার কিছুই ভালো লাগে না। এখন মনে হচ্ছে সিলেট না আসাই তার জন্যে ভালো হতো। আবার নতুন একটা কষ্ট বুক পেতে নিতে হতো না। তাহফিবার মুখটা চোখে ভেসে উঠতেই নিশ্বাস ফেলে দিল সে।
মিজান রুমে এসে দেখল আহফিন ব্যালকুনিতে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। দুই দিন ধরে সে তার পুরাতন স্যার কে দেখতে পাচ্ছে। তার নিজের কাছেও ভালো লাগছে না। কয়দিন এখানে এসে হাসিখুশি আহফিন আবার তলিয়ে যাচ্ছে তার দুঃখ কষ্টে। মিজান আজও জানে না আহফিনের রহস্য কি। খুব জানার ইচ্ছা থাকলেও সাহস হয়ে উঠে না তার। আজ মন টা একটু বেশিই খারাপ স্যারের জন্যে। মিজান এগিয়ে গেল ব্যালকুনিতে। পিছন থেকে ডাকল।
“স্যার।”
মিজান আবার ডাকল।
“স্যার আসব?”
আহফিন তার দিকে না তাকিয়েই বলল “মিজান। এসো।”
“স্যার মন খারাপ আপনার তাই না?”
“আর বেটা মন খারাপ? আমার মন তো বিষাদের সাগরে কবেই ডুবে গেছে। অস্থির লাগছে শুধু।”
“বাচ্চা মেয়েটার জন্যে?”
“জানো মিজান আমার না তাহফিবা কে অন্য রকম লাগে। ওকে যতক্ষণ কাছে পেয়েছিলাম ততক্ষণ মনে হচ্ছিল তূবা আমার পাশেই ছিল। তাহফিবার কাছাকাছিতে আমি অন্য রকম একটা অনুভূতি পেয়েছিলাম। তাই বোধ হয় এমন লাগছে।”
“স্যার তূবা কে? আপনার গার্লফ্রেন্ড?”
“স্ত্রী ছিল আমার। প্রথম আর জীবনের শেষ ভালোবাসা তূবা। সে আমার হৃদয়ের শরীরের প্রতিটি লোমকূপে গভীর ভাবে মিশে গেছে। তূবা আমার ভালোবাসা।”
—-
“মাম্মাম আমি কিন্তু কাল পার্কে যাবোই যাবো। না করলে একটুও শুনব না।”
“মামুনি আমার লক্ষ্মী সোনা এত অবুঝ হলে চলে বলো? তুমি না আমার গুড গার্ল। সময় পেলে নিশ্চয় নিয়ে যাবো। দেখো না কত ঝামেলা।”
“সময় টময় আমি বুঝি না। আমি যাবো যাবো আর যাবোই।”
ল্যাপটপ সরিয়ে তাহু কে কাছে টেনে কোলে তুলে নিল তূবা। ঘাড়ে থুতনি রেখে জিজ্ঞেস করল
“এত পার্কে যাওয়ার তোরজোড় উঠেছে কেন? পিনার জন্যে?”
“না হিরো আঙ্কেলের জন্যে।”
“হিরো আঙ্কেল?”
“হ্যাঁ।”
“হিরো আঙ্কেল আবার কে তাহু?” ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল তূবা।
“তোমাকে তো বলিই নি মাম্মাম। সেদিন না একটা হিরো আঙ্কেলের সাথে আমার দেখা হয়েছে। কি বলেছে জানো?”
“কি বলেছ?” মুচকি হেসে বলল তূবা।
“বলেছে আমাকে দেখতে নাকি উনার কাছের একজনের মতো।”
“….
“ও মাম্মাম? জানো আমি পরে গিয়েছিলাম বলে উনি আমাকে আদর করে দিচ্ছিল।”
“তাহু মা কোনো আঙ্কেল ফাঙ্কেলের দরকার নেই। ওসবের থেকে দূরে থাকবে ডাকলেও কাছে যাবে না।”
“হোয়াই মাম্মাম।”
“মাম্মাম বলেছে তাই।”
“কিন্তু মাম্মাম উনি খুব ভালো। জানো উনি না কাঁদছিল।”
“কাঁদছিল? কেন?”
“সেটা কি আমি জানি নাকি? তুমি না।”
“তাহু বলেছি না মাম্মাম দূরে থাকতে অপরিচিত মানুষের থেকে।”
“….
“মনে থাকবে?”
“হু।”
“তুমি কিন্তু মুটেও কথা বলবে না কারো সাথে।”
“একটু একটু বলব।”
“তাহু।” জোর গলায় বলল তূবা।
তাহফিবাও তাল মিলিয়ে বলল “জ্বি।”
মেয়ের কান্ড দেখে তূবা ফিক করে হেসে উঠল।
চলবে♥