তার শহরের মায়া 😍,পার্ট_৩৯
Writer_Liza_moni
অনুর কথার মাঝে তনু বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।দুই হাত দিয়ে দুচোখের গড়িয়ে পড়া পানি মুছে শক্ত গলায় বললো,,,
অনু তুই ওকে ক্ষমা করলে ও আমি ওকে কোনো দিন ও ক্ষমা করবো না।ওকে ওর কাজের শাস্তি পেতে হবে।
ও তোর সাথে আমার সাথে যে অন্যায় করেছে তার জন্য ও কঠিন শাস্তি প্রাপ্য।
অনেক কথাই তো বলছো তুমি মাহির।রিয়ার সাথে যে তোমার সম্পর্ক নেই এত কিছুর পরও আমি তা বিশ্বাস করবো?ভাবলে কি করে?
মাঝরাতে যখন আমার ঘুম ভেঙ্গে যেতো আমি দেখতাম না তুমি মোবাইল টিপতে,,,
তনু ,তনু তুমি ভুল বুঝছো,,,কয় রাত দেখেছো মোবাইল টিপতে দুই তিন রাত,,, আমি আমার কিছু কলিগদের অফিসের কাজে হেল্প করতাম।
ওরা যেটা বুঝতো না জুনিয়র ভাইরা আমি সিনিয়র হয়ে ওদের বুঝিয়ে দিতাম। তুমি তো জানো আমার লেপটব নষ্ট হয়ে গেছে। সময়ের অভাবে ঠিক করতে পারিনি।রাত জেগে মোবাইলে আমি কাজ করতাম।ই মেইল করতে হতো আমাকে,,, তুমি কেন এমন ভুল বুঝছো,,,?
অনু কী বলবে বুঝতে পারছে না।সব কিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। তূর্যর হাতের উপর হাত রাখতেই তূর্য অনুর দিকে তাকালো।অনু তূর্যর দিকে অসহায় মুখে তাকিয়ে বললো,,
কী হবে কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।সব কেমন জানি লাগছে।
চিন্তা করো না।যা হবে ভালোর জন্যই হবে।
.
তনু কাউকে কিচ্ছু না বলে অনুর ফ্লাট থেকে বের হয়ে চলে গেলো ওদের ফ্লাটে। নিজের পার্স টা নিয়ে বের হয়ে আসে মেইন রোডের সামনে।
মাহির অনু তূর্য ওরা ও বের হয়ে আসে। কিন্তু ওরা আসতে আসতে তনু একটা সি এন জি থামিয়ে সেখানে উঠে চলে গেল।
মাহির আর তূর্য গেছে মেইন রোডের দিকে।অনু গেছে মাহিরের ফ্লাটে।রাত প্রায় ১০ টার কাছাকাছি।
মাহিরের ফ্লাটে তনু কে কোথাও না দেখতে পেয়ে অনুর বুকের মাঝে ধক করে উঠলো।চার পাশে চোখ বুলিয়ে দেখার সময় তনুর মোবাইলের উপর চোখ পড়ে অনুর।
মোবাইল তো আছে।তনু আপু কোথায় গেলো?
.
.
অনু তূর্য কে ফোন করে বললো তনু বাড়িতে নেই।
তূর্য মাহির কে সে কথা বললে,,
মাহিরের পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেছে।হাঁটু গেড়ে রাস্তায় বসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে মাহির। তার বোঝার বাকি নেই যে তনু তাকে ছেড়ে চলে গেছে।
তূর্য মাহির কে জড়িয়ে ধরে।
আমি সত্যিই খুব ভুল করে ফেলেছি তূর্য। আমি তনু কে ভীষণ ভালোবাসি রে।ওকে ছাড়া আমি মরে যাবো।তনু কে এনে দে না রে,,, কোথায় চলে গেল ও? আমি বাবা হবো এর চেয়ে খুশির খবর আর কি ছিল? কিন্তু দেখ আমার কর্মের জন্য তনু আমার বাচ্চার মাই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।তনু ফিরে আসো না প্লীজ,,,,,
.
.
নিজের রুমের বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে কান্না করছে অনু।নিরব কান্না । চোখ থেকে শুধু টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
তার পাশেই অনু কে জড়িয়ে ধরে বসে আছে তূর্য।
মাহির ওর ফ্লাটে গিয়ে দরজা বন্ধ করে রেখেছে। মোবাইলের মধ্যে তনু আর তার একসাথে তোলা কাপল ছবি দেখছে আর চোখ থেকে পানি ফেলছে।
মাহির অনুর মা বাবা কে কল করেছে।তনু যদি যায় তাকে বলার জন্য।
রাত প্রায় আড়াইটা বাজে।
তূর্য অনুর উদ্দেশ্যে বললো,,
মেঘুপাখি প্লিজ আর কান্না করো না। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো।তনু আপু বাড়িতেই যাবেন দেখো। সকালে একটা সুন্দর সংবাদ পাবে।
অনু তূর্যর মুখের দিকে শুধু তাকিয়ে ছিল। কিচ্ছু বললো না। তার বোনটা কোথায় চলে গেল?এত রাতে ও ঠিক আছে তো?কত চিন্তা অনুর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
তূর্য অনু কে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। লাইট অফ করে দিয়ে অনু কে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
এতক্ষণ কান্না করার ফলে অনুর চোখ জুড়ে ঘুম আসতে বেশিক্ষণ সময় লাগেনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে অনু।
.
.
মাহিরের সারা রাত নির্ঘুম কাটে।কান্না করতে করতে চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে ভীষণ। ঠিক কত বছর পর এই ভাবে কান্না পাচ্ছে তার জানা নেই। বুকের মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে খুব।তনু ঠিক আছে তো?কেন আমি বাজি ধরে ছিলাম কেন? আমি সত্যিই অনুতপ্ত তনু। আমাকে মাফ কেন করলে না তুমি? ভীষণ ভালোবাসি রে পাগলী। ফিরে আসো না প্লীজ,,,,
.
.
সকাল নয়টার দিকে অনুর মা কে আবারো কল করে মাহির। উনি জানায় তনু যায়নি সেখানে।
তুমি আমার মেয়ের সাথে কী করেছো মাহির?
আমার মেয়ে শুধু শুধু এমন রেগে যাবে না।এই দুই টা মেয়ে আমাদের কলিজার দুই টুকরো। আমার মেয়ের যদি কিছু হয় তোমার ব্যবস্থা আমরা করবো। আমার মেয়ের কিচ্ছু হলে তোমার যে কি হাল হবে ভাবতে ও পারছো না।বলতে বলতে কান্না করে দেয় অনুর বাবা।
তনু আর অনু তাদের খুব আদরের মেয়ে। হঠাৎ করে তাদের বড় মেয়ের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার মানে বুঝতে পারছে না তারা।
মাহির তাদের কথা বিশ্বাস করলো না।তনু হয় তো তাদের শিখিয়ে দিয়েছে মিথ্যা বলতে।তাই মাহির কল কেটে দিয়ে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেল।
খাওয়া দাওয়া সব ভুলে গেছে মাহির।
শরীর টা কেমন ঝিমঝিম করছে।
.
.
অনুর ঘুম থেকে উঠেই তূর্য কে জিজ্ঞেস করেছে তনুর খবর পাওয়া গেছে কিনা?
এত চিন্তা করো কেন বলো তো?
খোঁজ পেয়ে যাবো। খাগড়াছড়ি ছাড়া আর কোথায় যাবে বলো ? তুমি চিন্তা কইরো না।তনু আপু ঠিক আছে।সব ঠিক আছে এত চিন্তা করো না তো।
না ঠিক নেই। কিচ্ছু ঠিক নেই।ও আমার বোন হয়।ওর জন্য আমার চিন্তা থাকবে না?কি বলেন এই সব আপনি? আমার বোনের কিছু হয়ে গেলে ?
চুপ।এত ওভার চিন্তা করো কেন? কিছু হবে না।
উঠো। আমার অফিসে যেতে হবে। নয়টার উপরে বাজে।
অনু উঠে ওয়াস রুমে চলে গেল।
তূর্য সকালে উঠে রান্না করে ফেলেছে।ও জানে অনুর মন ভালো নেই।ও রান্না ও করবে না খাবে ও না।তাই নিজেই রান্না করে ফেলেছে।
.
.
বাসের জানালার পাশে বসে আছে মাহির। চোখ বাইরের দিকে।ইসস যদি তনুর সাথে দেখা হয়ে যেতো।
মাহির দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
.
.
খাগড়াছড়িতে এসে মাহির সত্যি দেখলো তনু এখানে আসেনি।মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেছে তার।
তনু কোথায় গেছে? কোথায় যেতে পারে তনু?
কিচ্ছু মাথায় আসছে না মাহিরের।
সে তনুর মায়ের হাত ধরে বললো তাকে ক্ষমা দিতে। তনুর মায়ের সাথে তনুর বেস্ট ফ্রেন্ডের শ্বশুড় বাড়িতে ও গেছে খুঁজতে।যদি সেখানে যায়। কিন্তু না তনু যায়নি।
চিন্তায় মাহির অস্থির হয়ে গেছে। আবারও ঢাকায় ফিরে আসলো সে।
.
.
অনু বেলকনিতে বসে বসে তনুর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে করে তনু কে মিস করছে।
তূর্য আজ বিকেলেই চলে আসে।অনুর মুখ মলিন।
তূর্য অনু কে জড়িয়ে ধরে বললো,,
তোমার জন্য একটা নিউজ আছে।
কীসের?
তুই তো চাকরি করতে চাও। একটা ইন্ডাস্ট্রিজে মেনেজার পদে নিয়োগ দিবে।কাল ইন্টার ভিউ। তুমি ইন্টার ভিউ দিবা?
না। এখন ভালো লাগছে না কিছুই।
তূর্য আর কিছু বললো না।
.
.
.
মাহিরের প্রতিটি রাত নির্ঘুম কাটছে। খাওয়া দাওয়ার ঠিক নেই।গাল ভর্তি দাড়ি। আগের সেই সুর্দশন মাহির আর এখন কার এই মাহিরের মধ্যে অনেক তফাৎ।
অফিসে আর যায় না মাহির।কার জন্য করবে কাজ?
রাস্তায় হঠাৎ একদিন রিয়ার সাথে দেখা হলে মাহির প্রশ্ন করে,,,
কেন আমাকে নিয়ে তুমি তনুর কাছে মিথ্যা বলছো বলো ? কেন ঠকিয়েছো আমাকে?
রিয়া প্রতি উত্তরে শয়তানি হেসে বললো,,
তুমি যেমন অনুর মতো একটা মেয়ে কে ঠকিয়েছো। তার চেয়ে ও বড় কারন ছিল আমি আর রুশান থেকেও অফিসের বস তোমাকে বেশি গুরুত্ব দিত।মা আমার এক দম সহ্য হতো না।
এখন তো আর তোমার অফিসে কোনো কাজ নেই। এখন আমরা ছাড়া আর কাউকে বসের চোখে ও পড়ে না।বুঝো এখন কাউকে ঠকানোর কষ্টটা কেমন হয়,,,,,,
চলবে,,,, 🍁