তার শহরের মায়া 😍,পার্ট_২৮,২৯
Writer_Liza_moni
পার্ট_২৮
অনু শোয়া থেকে উঠে খাবার খাওয়ার জন্য চলে গেল।প্লেটে ভাত,মাংস আর সালাদ নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়লো।আর তখনই কলিং বেল বেজে ওঠে।
অনু বিরক্ত হয়ে বসা থেকে উঠে মেন দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজা খুলে দেখে দরজার সামনে তনু দাঁড়িয়ে আছে।
তনু কে দেখে অনু মুচকি হেসে বললো,,
কী রে আপু ,, এই সময় আসলি যে?
তনু ভেতরে ঢুকে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়লো।অনু দরজা বন্ধ করে এসে সেও বসলো।
কেউ নেই,,একা একা লাগছিলো তাই চলে আসছি।
ওহ,, তোর শ্বশুড়, শ্বাশুড়ি আসেনি?আর মাহির,,সরি দুলাভাই কোথায়?
তোর দুলাভাই অফিসে।আর শ্বশুড় ,শ্বাশুড়ি আসেনি। আসবেন আর ও কিছু দিন পর।
ওহ।ভাত খাইছোস?
না। একা একা খাইতে ভাল্লাগে না।তাই তো চলে আসছি।
অনু মুচকি হেসে কিচেনে যেতে যেতে বললো,,ভালোই করছোস,, আমার ও একা একা খেতে ভালো লাগছিল না। আমি তোর জন্য ভাত আনছি বোস।
তনু কিছু বললো না।বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তার পর অনুর রুম গুলো ঘুরে দেখতে লাগলো।সব গুছানো। এলোমেলো কিছুই নেই।আর আমার রুম টা দেখো,, আমি যত বার গুছিয়ে রাখবো তত বার মাহির অগোছালো করবে।এরা জামাই বউ দুটাই গোছগাছ।
অনু এক প্লেট খাবার এনে ডাইনিং টেবিলে রেখে তনু কে ডাক দিল।তনু এগিয়ে গেল সে দিকে। চেয়ারে বসতে বসতে বললো,,
তূর্য সাহেবের খোঁজ নিয়েছিস? খেয়েছে কিনা?
অনু ভাত মেখে এক লোকমা মুখে দিয়ে চিবাতে চিবাতে বললো,, হুম নিয়েছি। খাচ্ছে মনে হয় এখন।
তনু ও খাওয়া শুরু করে দিল। খাবার খাওয়ার পর তনু এসে সোফায় বসলো।অনু সব গুছিয়ে রেখে এসে তনুর উদ্দেশ্যে বললো,, আমার রুমের বেলকনিতে চল। এখানে ভাল্লাগে না।
তনু ও চলে গেল অনুর সাথে। বেলকনিতে বসে আছে দুই বোন। হালকা বাতাসে বেলকনিতে লাগানো গাছ গুলোর পাতা নড়ছে।
তনু অনুর ডান হাত ধরে নিজের হাতে রাখতেই অনু মৃদু কুঁচকে তাকালো। চোখের ইশারায় বললো কি হয়েছে?
তনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,
আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি অনু?
তনুর কন্ঠে কাতরতা। তনুর কথা শুনে অনুর বুকের মাঝে ধক করে উঠলো।কী সত্যি জানতে চায় আপু?মনে মনে কথা টা আওড়াচ্ছে সে।
কীরে বলবি?
হুম বল আগে।
তনু চোখ দুটো বন্ধ করে আবার খুলল। তার পর শান্ত কন্ঠে বললো,,
তুই কি সত্যিই প্রেগন্যান্ট?যার সাথে তোর সর্ম্পক ছিল আমি জানি তুই তাকে ভীষণ ভালোবাসিস।
তুই তো এত তাড়াতাড়ি তূর্য কে মেনে নিতে পারবি না। তোর তো সময় লাগবে। তিন বছরের সম্পর্ক টাকে মন থেকে মুছতে। যদিও পুরো পুরি মোছা যায় না। কিন্তু সব কিছু মানিয়ে নিতে তো তোর সময় দরকার।
অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার পর বললো,,
সরি রে আপু। আমি প্রেগন্যান্ট না। তোর ধারনা ঠিক। আমি তূর্য কে এখন ও মেনে নিতে পারিনি। আমি পারছি না । চেষ্টা করছি ভীষণ। আমাদের বিয়ের আজ প্রায় অনেক দিন। এই কয়েক দিনে তূর্য আমাকে কোনো কিছুর জন্যই জোর করে নি।
বোন শুন,, তূর্য কে কষ্ট দিস না।ওর তো কোনো দোষ নেই।সবার জীবনেই একটা অতীত থাকে। কারো রঙিন তো কারো রঙহিন। তূর্য বলে আজ ও তোকে কিছু তে জোর করে নি।অন্য কেউ হলে বিয়ের রাতেই,,,
বুঝতে পারছিস তো আমার কথা?
হুম।বল,,
তূর্য তোকে এখন ও সময় দিচ্ছে।মানিয়ে নে।তনু অনুর হাতে আর একটু চাপ দিয়ে বললো,,
তূর্য একজন ছেলে। তুই তার জন্য হালাল। তার থেকে ও বড় কথা হলো তোরা দুজনে একসাথে থাকিস,,দিন রাত সব সময়। তুই তো সাইন্স এর স্টুডেন্ট তোর তো বোঝা উচিত। একটা ছেলে একটা মেয়ের সাথে সব সময় একা থাকলে তার মন মস্তিষ্ক কেমন থাকে। তূর্যকে কষ্ট দিস না বোন।
অনু কিছু বললো না। চুপ করে তনুর কথা শুনে রইলো।
আমার কথা বুঝতে পারছিস?
হুম। কিন্তু আমার যে সময় লাগবে। এই কয়েক দিন আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে।সে আমার কাছে আসেনি।আর না আমি এসেছি।সে আসতে চাইলেও আমার কেমন জানি লাগতো। এখন ও লাগে।তাকে বুঝার জন্য সব কিছু ভুলে নতুন করে আবার গুছিয়ে নেওয়ার জন্য আমার সময় চাই আপু।
তনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তুই আর কিছু দিন সময় নে। কিন্তু মনে রাখিস, বেশি সময় নিতে গিয়ে কিন্তু দেরি করে ফেরিস না।
তনু অনুর হাত ধরে বললো দিন কাল ভালো না। তূর্য বাইরে, বাইরে থাকে। তুই যদি ওকে এই ভাবে দূরে সরিয়ে রাখিস,ওর ভেতরটা বুঝতে চেষ্টা না করিস তাহলে অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে যেতে পারে।
তনুর বলা কথাটা শুনে অনুর কলিজায় ছেত করে উঠলো।অনু স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো।কী বলবে কথা খুঁজে পাচ্ছে না। চুপ করে মাথা নিচু করে পায়ের নখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
এমন সময় তনুর কল আসে। তনু ফোনের স্ক্রিনে মাহিরের নাম্বার দেখে উঠে দাঁড়ালো। তার পর অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,, তোর দুলাভাই চলে আসছে। আমি যাচ্ছি।একা থাকতে ইচ্ছে না
করলে আয় আমার সাথে।
না। আমার কাজ আছে যাবো না।
তনু কল রিসিভ করে কানে ধরলো।
কই তুমি?
আমি তো আনুর কাছে। বাড়িতে একা ছিলাম তাই,,
বুঝছি।আসো,, আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। চাবি তো তোমার কাছে?
হুম আসতেছি।একটু অপেক্ষা করো।
তনু কল কেটে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বললো,,
তূর্য খুব ভালো ছেলে।ওরে মেনে নে। দেরি করিস না। না হলে পরে আফসোস করবি।
তনুর পিছু পিছু অনু ও আসলো।তনু চলে গেলে অনু দরজা বন্ধ করে এলোমেলো পায়ে হেঁটে এসে বিছানায় বসলো।ভাল্লাগছে না তার।সব কিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে।সে চাইছে সব কিছু নতুন করে শুরু করতে। কিন্তু মাহিরের দেওয়া আঘাতের ঘা এখন ও শুকায়নি।
.
.
.
বেলকনিতে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে অনু আর তূর্য।রাত প্রায় দশটা বাজে। আটটার দিকে বাড়িতে আসে তূর্য। খাবার খাওয়ার পর একটু আগেই এসে দাঁড়িয়েছে বেলকনিতে।সব কিছু গুছিয়ে অনু ও এসে দাঁড়ায় তার পাশে।
আকাশে আজ ঘন কালো মেঘ। বৃষ্টি হবে হয় তো শেষ রাতের দিকে।
তূর্য মুখ মলিন করে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তূর্য কে এমন মন মরা হয়ে থাকতে দেখে অনুর ভালো লাগছে না। আসার পর থেকে তেমন কথা ও বলেনি।
তূর্য হঠাৎ মুচকি হেসে বললো,, আজকের ওয়েদার একটা বউ ডিজার্ভ করে।
অনু থমকালো। বিষন্ন কন্ঠে বললো,,
আপনার কী বউ নেই নাকি?
তূর্য হাসলো।বউ থেকে ও আর কী? সেতো তার প্রাক্তন প্রেমিক কে জ্বালানো নিয়ে ব্যস্ত।
আমি আজ তনু আপুদের ওখানে যাইনি।
শান্ত কন্ঠে বললো অনু।
তূর্য অবাক হলো।
কেন যাও নি?
এমনিতেই।কী দরকার? আমার সংসার আছে। আমি আমার সংসার নিয়েই ব্যস্ত।
জানো অনুমেঘা,,
কোনো স্বামীই চায়বে না বিয়ের পর তার বউ তার দিকে খেয়াল না করে তার প্রাক্তন প্রেমিক কে গুরুত্ব দিক। চাইবে না কেউ আমার মতো। আমি প্রথমে তোমাকে সাপোর্ট করলেও এখন বলবো তুমি তোমার নিজের সংসারে খেয়াল করো। মাহির কে প্রকৃতি শাস্তি দিবে। কাউকে ঠকিয়ে কেউ কখনো ভালো থাকে না। জীবনের কোনো না কোনো এক সময় ঠিক তাঁরা তাঁদের কর্মের ফল ভোগ করবে।
অনুর মুখ মলিন। কিছু বলছে না।আসলে সে কী বলবে তা ভেবে পাচ্ছে না।
আমি ভুল কিছু বলছি বলে আমার মনে হচ্ছে না অনু। তুমি নিজেই ভেবে দেখো,,, আমি যদি আজ তোমার বদলে অন্য কাউকে বিয়ে করতাম বা ধরো যদি তানিশার সাথে আমার বিয়ে হতো তাহলে আমাদের সম্পর্ক টা সহজ হতো। আমি চাই নি তুমি মাহির যে ফ্ল্যাটে থাকে সেখানে থাকো।মাহিরের চোখের সামনে থাকো।ভুলে যাওয়ার বদলে আরো দেখে তাকে মনে করো আমি চাই না এই সব। তুমি যেনো কষ্ট না পাও,, আমাকে ও যেন মাহিরের মতো মনে না করো তার জন্য আমি তোমার কোনো কথাতেই না করিনি।
তূর্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
আমি এসবের জন্য এখানে থাকতে চাইনি,, বিশ্বাস করুন। আপনি অফিসে চলে যাবেন,, আমাকে সারা দিন একা থাকতে হবে বলেই আমি তনু আপুর সাথে থাকতে চেয়েছিলাম। তনু আপুও তো মাহির চলে গেলে একা থাকে।তাই তো আমি আর তনু আপু এই প্লেন করি।
অনুর কথা তূর্য বুঝলো।
থাকো সমস্যা নাই। তবে আমি বলবো মাহির থেকে দূরে থেকো।
একটা কথা বলি,,,?
হুম। অনুমতি নিতে বারন করেছিলাম,,,
সব কিছু ঠিক করতে আমার সময় লাগবে। আমাকে কিছু দিন সময় দিন। আমি চেষ্টা করবো খুব করে,,প্লিজ,,
অনুরোধি কন্ঠে বললো অনু।
তূর্য বিষন্ন গলায় বললো,,
নাও সময়। আমি তো আর তোমাকে জোর করছি না। তোমার মত সময় লাগবে নাও।
তূর্য রুমে চলে গেল। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। সারা দিন কাজ করায় অনেক ক্লান্ত সে।
অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।একটু পর সে এসে শুয়ে পড়লো। ঘুম আসছে অনুর।অনুর দিকে তূর্য ঘুমিয়ে গেছে।
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে অনু কে মলিন মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তূর্য জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
আজ রেজাল্ট দিবে। জানি না কী হবে,,,? ভীষণ চিন্তা হচ্ছে।যদি ফেল করি,,, তাহলে কী হবে?
ধুর বোকা।ফেল করবা না।দেইখো। কয়টায় ছাড়বে রেজাল্ট?
সকাল
১০টায়।
তূর্য ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ছয়টা বাজে মাত্র। এখন ও অনেক দেরি।
তূর্য বিছানা থেকে উঠে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।অনু চিন্তিত হয়ে রান্না ঘরে গেল। কিছু করতে ইচ্ছে করছে না তার। কেমন যেন ভয় হচ্ছে।কী যে হবে?
তূর্য ওয়াস রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে রান্না ঘরে গেল।অনু কে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে বললো,,
আজকের নাস্তা আমি বানাই?
আরে না। আমি বানাচ্ছি।
থাক তোমাকে আর বানাতে হবে না আজকে। এখন তাও বসো। এতো চিন্তার কিছু নেই।
অনু এলোমেলো পায়ে হেঁটে এসে সোফায় বসলো। হাতের নখ কামড়াচ্ছে বসে বসে।
তূর্য অনুর দিকে তাকিয়ে এক ধমক দিলো।
অনু লাফিয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
কি,কি হয়েছে? এই ভাবে ধমক দিচ্ছেন কেন?
আমার সামনে একদম হাতের নখ কামড়াবে না।খাবিস মাইয়া।আর যদি দেখছি হাতের নখ কামড়াইছো তাহলে তোমার হাতের আঙ্গুল সহ কেটে ফেলে দিবো।
হে হে,, কাটতে পারলে বলিয়েন। এমনিতেই চিন্তায় শেষ। তার উপর এই ধমক মেরে ফেলবে আমাকে।
আরেক বার হাত মুখে দিয়ে দেখো।হাতে গোড়া দিয়ে কেটে দিমু।
কাজ করেন তো।ক্ষিদা লাগছে।
.
.
১০টার সময় অনুর রেজাল্ট দিয়েছে।অনু আজ তূর্যর স্যারের সাথে কথা বলে ওর ছুটি নিয়েছে। একদিনের জন্য। বিছানায় কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে তূর্যর দিকে তাকিয়ে আছে অনু।
তূর্য মোবাইলে অনুর রেজাল্ট দেখতে ব্যস্ত।
তূর্য হঠাৎ মুখটাকে মলিন করে ফেললো।তা দেখে অনুর কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে।
তূর্য অনুর দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস ভাবে বললো,,
মেঘু পাখি তুমি পরীক্ষায়,,
অনুর ভয়ে হার্ট বিট বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে এখনি বের হয়ে আসবে।
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,
আমি পরিক্ষায় ?
তূর্য মুখটা কে মলিন করে বললো তুমি পরীক্ষায় সবার থেকে ভালো নাম্বার পেয়েছো।আই মিন সব সাবজেক্ট এ এ+।
অনুর চোখ কপালে। এতো ভালো রেজাল্ট করবে তা ভাবতেই পারেনি সে।অনু হঠাৎ করে তূর্য কে জাপটে ধরে কান্না করে দিল। আনন্দের কান্না। তূর্য অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,,
আমার মেঘুপাখি এতো ভালো রেজাল্ট করেছে এখন তো সবাইকে আমার পক্ষ থেকে মিষ্টি খাওয়াতে হবে।
আমি ভাবতেও পারিনি এতো ভালো রেজাল্ট হবে। তূর্যর বুকের মাঝে কান্না করতে করতে টি শার্ট ভিজিয়ে দিচ্ছে।
তূর্য মুচকি হেসে অনু কে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখলো। ছাড়লো না।
চলবে,,,,, 🍁
#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_২৯
#Writer_Liza_moni
অনু তূর্যর কাছ থেকে সরে এসে বললো,,
রিফা, কেয়া,শুভ, শাকিল এদের গুলো একটু দেখুন তো।
তোমার ফ্রেন্ড না না বিশ্বাসঘাতক ফ্রেন্ড গুলোর রেজাল্ট দেখতাম আমি?
আরে একটু দেখেন না কেমন রেজাল্ট করেছে।
আচ্ছা রোল নম্বর বলো,,,
অনু বোর্ড পরীক্ষার রোল নম্বর বললো। তূর্য এক জন,একজন করে দেখতে লাগলো। প্রথমে রিফারটা দেখলো,,,
রিফা মেয়েটা দুই বিষয়ে ফেল করেছ।
অনু অবাক হলো না।
তার পর দেখলো শুভরটা।
শুভ ও দুই বিষয়ে ফেল।
কেয়া, শাকিল ও সেম।
আচ্ছা ওরা চারজন কীসে ফেল করেছে ?
ইংরেজি আর পদার্থ বিজ্ঞান।
জানতাম আমি। চার জন এই দুই বিষয়ে কাঁচা। আগে আমার থেকে দেখে লিখে পাশ করে আসতো।অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এমনটা হবার কথা ছিলই।
কলিং বেল বেজে উঠায় অনু বিছানা থেকে নেমে চলে গেল দরজা খুলে দিতে। দরজা খুলে দেখে তনু চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াহুড়ো করে ঢুকে গিয়ে বললো,,
আজ তো তোর রেজাল্ট দেওয়ার কথা? দিয়েছে রেজাল্ট? দেখেছিস কত পয়েন্ট পেয়েছিস?
অনু তনুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দিল। তূর্য রুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে দুই বোন সোফায় বসে আছে। তূর্য ও এগিয়ে গেল।
আমি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছি। তনুর চোখ কপালে। পরিক্ষার আগে অনুর উপর যা গেছে তাতে এত ভালো রেজাল্ট করা একদম সম্ভব ছিল না।মন মানসিকতা খারাপ থাকলে পড়ায় মন বসে না।তনু খুশিতে অনু কে জড়িয়ে ধরলো।
আমি যে কতটা খুশি হয়েছি তুই বুঝতে পারবি না। আমার বোন এত ভালো রেজাল্ট করছে আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
উহু উহু,, হালকা কাশি দিয়ে টি শার্টের কলার ঝাড়ি দিয়ে তূর্য দুই জনের উদ্দেশ্যে দেখতে হবে না বউটা কার,,?😎
তনু হাসলো।আর অনু কিছু টা লজ্জা পেল।তনু মাহির কে ফোন করে বললো,,
আসার সময় পাঁচ কেজি বালুসা মিষ্টি নিয়ে আসবা।
কেন?এত মিষ্টি দিয়ে কী করবা তুমি?
আমার জন্য না।অনুর জন্য। দুলাভাই যখন হইছো তখন শালির জন্য মিষ্টি কিনে আনলে কী সমস্যা হবে?
মাহির স্তব্ধ হয়ে গেছে। তার মানে অনু সত্যি প্রেগন্যান্ট।আর এখন মিষ্টি বিলাবে? মনে মনে বললো মাহির।
আচ্ছা আনবো। এখন অফিসে আছি। রাখছি।
মাহির কল কেটে দিয়ে মোবাইল টেবিলের উপর ছুড়ে মারলো। মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো।
আমি বিয়ে করেছি আজ এত দিন আমার বউ এখন ও প্রেগন্যান্ট হয়েনি আর অনু,,,
বিয়ে বিড় করে বললো মাহির।
.
আরে ভাবি তুমি মাহির কে কেন বলতে গেলে? আমার বউ ভালো রেজাল্ট করেছে আমি সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবো। মাহির না,,, একটু ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো তূর্য।
মাহির তো আনুর দুলাভাই হয়।ও মিষ্টি কিনে আনলে সমস্যা কি?
অনেক সমস্যা। মাহির মিষ্টি আনলে সেগুলো তুমি তোমার শ্বশুড় বাড়ির মানুষ কে খাই ও।
তনু দাঁত কেলিয়ে বললো,,
তাহলে তো তোমরা ও আমার শ্বশুড় বাড়ির মানুষ।অনু তো আমার জা ও হয়।
অনু বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে উঠে রুমে চলে গেল। বিছানার উপর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে মায়ের কাছে ফোন করে বললো তার রেজাল্টের কথা।
অনুর মা খুশিতে কান্নাই করে দিলেন। তার আদরের ছোট মেয়ে এত ভালো রেজাল্ট করেছে তার যেন খুশি , আনন্দ উপচে পড়ছে।
বাবার সাথে কথা বলার সময় বাবা শুধু প্রান খুলে দোয়া করলেন। তিনি ও মেয়ের রেজাল্টের কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছেন।মা বাবার সাথে কথা বলা শেষ করে মোবাইল রেখে পাশে তাকাতেই দেখে তূর্য শার্ট গায়ে দিচ্ছে।অনু ভ্রু কুঁচকে বললো
কোথায় যাচ্ছেন এখন?
রেস্টুরেন্টে যাবো।আজ সারা দিন তোমাকে নিয়ে ঘুড়বো।কুইক রেডি হয়ে নাও।
অনু চোখ ছোট ছোট করে ড্রইং রুমের দিকে তাকালো।তনু নেই কোথাও।
অনু তূর্যর দিকে এগিয়ে এসে বললো,,আপু কোথায়?
চলে গেছেন। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও তো।লান্স আজ রেস্টুরেন্টে করবা।আজ ঘুরে বেড়ানো হবে শুধু।বউকে ট্রিট দিবো এত ভালো রেজাল্ট করার জন্য।
আজকে তুমি যা চাইবে তাই পাবে। শুধু মুখ ফুটে বলে দেখো।
সত্যি মা চাইবো তাই দিবেন?
তূর্য অনুর দিকে এগিয়ে এসে অনুর দুই কাঁধ ধরে বললো,, সত্যি দিবো।
অনু তূর্যর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,,আজ কিছু চাইবো না।সময় হলে চেয়ে নিবো।
ঠিক আছে। আমি বাইরে গেলাম তুমি তৈরি হয়ে নাও। তূর্য রুমের বাইরে চলে গেল।অনু তূর্যর শার্টের সাথে মিলিয়ে কাভার্ড থেকে একটা কালো রঙের শাড়ি বের করে পড়ে নিল।কানে ঝুমকা কালো পাথরের। চোখে গাঢ় করে কাজল দিলো।চুল খোলা। কোমর অব্দি ছড়িয়ে পড়লো চুল গুলো। ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বের হয়ে আসলো। তূর্য সোফায় বসে বসে ফেসবুকে স্ক্রল করছিল।
চলুন,,অনুর কথায় অনুর দিকে তাকিয়ে থমকে গেল তূর্য।কালো রঙের শাড়িতে কী মায়াবী লাগছে তার বউকে। তূর্য কয়েকটি হার্ট বিট মিস করলো। তার পর বুকের বাঁ পাশে হাত রেখে পড়ে যাওয়ার ভান করে বললো,,মে মর যাইগি,,,
অনু হাসলো। তারপর তূর্যর কাছে গিয়ে বললো,,ঢং করবেন না তো।
চলুন,,
তার পর দুইজনে মিলে বের হয়ে আসলো।রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছে দুই জন। তূর্যর হাত উসখুশ করছে অনুর হাত ধরার জন্য।অনু তা দেখে মনে মনে হাসলো। নিজেই তূর্যর হাত ধরলো। তূর্য অবাক হলো ভীষণ। তার থেকে ও বেশী খুশি হয়েছে। মুচকি হাসলো।
.
রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের খাবার খেলো তারা।
চলুন না নদীর পাড়ে যাই,,,অনুরোধি কন্ঠে বলল অনু।
তূর্য মুচকি হেসে বললো হুম চলো,,
দুই জনে মিলে নদীর পাড়ে বসে আছে পাশাপাশি। এমন সময় সাত বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে এসে অনুর শাড়ির আঁচল ধরে টান মেরে বলে,,
একটা বেলি ফুলের মালা নাও না গো,,আজ সারাদিনে একটা মালা ও বেঁচা হয়নি।
তূর্য আর অনু ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো। তার পর তূর্য হাতের ইশারায় মেয়েটাকে ডেকে এনে তাদের মাঝখানে বসিয়ে দিল।
অনু মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,,
কি নাম তোমার ?
সৃষ্টি,,,
বাহ্ খুব সুন্দর নাম তো।
আমার মায় খুব অসুস্থ।আমনেরা যদি একটা মালা কিনতেন আমি অন্য দিকে যাইতাম।
তূর্য মেয়েটার হাত থেকে একটা বেলি ফুলের মালা নিয়ে বললো,,দাম কত পিচ্চি?
২০টাকা দিলে হইবো।
তূর্য মুচকি হেসে মানি ব্যাগ থেকে ১০০ টাকার নোট বের করে মেয়েটার হাতে দিল।
আমার কাছে তো ভাংতি নাই।
তূর্য মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,, এই সব টাকা তোমার বাবু।রেখে দাও।
মেয়েটার চোখে মুখে আনন্দ উপচে পড়ছে। খুব খুশি মনে মেয়েটা চলে গেল অন্য দিকে।
অনু তূর্যর এমন কাজে মুগ্ধ হয়ে গেছে। মাহিরের কাছেও একবার এমন একটা বাচ্চা মেয়ে ফুল নিয়ে এসে ছিল। মাহির নাক ছিটকে মেয়েটাকে তাড়িয়ে দিয়ে ছিল।আর তূর্য?
অনু তূর্যর মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। তূর্য মুচকি হেসে অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,,কী দেখো এতো?
অনু আনমনে বলে উঠলো,,
আপনি এতো ভালো কেন?
তূর্য হাসলো। দরিদ্রতার জন্যে মানুষ কত কিছুই না করে।এই মেয়েটাকে দেখো,,, যে বয়সে তার স্কুলে পড়ার কথা, খেলাধুলা করার কথা সে বয়সে ফুল বিক্রি করছে। আমাদের থেকেও ওরা বেশি বুঝে বাস্তবতা সম্পর্কে। ওদের সাথে খারাপ ব্যবহার তারাই করে যাদের সঠিক শিক্ষার অভাব।যারা মানুষ কে মানুষই মনে করে না।
আমি ভাই ওদের দলের না। সত্যি বলতে কি জানো?
আমি সব সময় নিজেকে অন্য রকম করে গড়ে তুলতে চেয়েছি। অন্যদের থেকে আলাদা করে।
আপনি সত্যি অন্যদের থেকে আলাদা। একদম আমার মনের মত।দাঁত কেলিয়ে বললো অনু।
তূর্য হাসলো শুধু। হাতের মধ্যে ফুলের মালা টা নড়েচড়ে দেখতে লাগলো।
অনু নিজের বা হাত তূর্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,
আমার জানা মতে তো আর কেউ নেই আমি ছাড়া। এই ফুলের উপর দাবি করতে। তাহলে এখন এটা আমার। পড়িয়ে দেন হাতে।
তূর্য মুচকি হেসে অনুর হাতে ফুলের ছোট মালাটা পেঁচিয়ে দিল।
অনুর এমন বিহেব দেখে তূর্য খুব বেশি খুশি।অনু যে সব কিছু ঠিক ঠাক করে নেওয়ার চেষ্টা করছে তা বুঝতে পারছে তূর্য। তূর্য অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বললো,,
মেঘুপাখি আমি তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু মুখে বলবো না।যত দিন না তুমি আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে,,
ভালোবাসি তূর্য। ভীষণ ভালোবাসি।
আমি অপেক্ষা করবো। আমি জানি তুমি ও একদিন আমাকে ভালোবাসবে। ভীষণ ভালোবাসবে। মাহির নামক কালো অতীত তোমার জীবন থেকে মুছে দিবো আমি। আমার ভালোবাসার রঙে।
.
এই দেখুন ফুচকা। চলুন না ঝাল ঝাল ফুচকা খাই,,
তুমি ঝাল খেতে পারো না।বমি করে ভাসাই দিবা।ঝাল ছাড়া খাইতে পারলে খাও।
অনু মুখটাকে মলিন করে বললো,,ঝাল ছাড়া ফুচকা মজা আছে নাকি? কেন যে ঝাল খাইতে পারি না। ধুর।
তূর্য কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে দুটো হাওয়া মিঠাই এনে একটা অনুর হাতে দিল।অনু হাওয়াই মিঠাই দেখে খুশি হলো খুব।
অনেক ধন্যবাদ। অনেক দিন পর হাওয়াই মিঠাই খাবো।ইয়েএএএ।
অনুর খুশি দেখতে লাগলো তূর্য। মেয়েটা কে হাসলে খুব সুন্দর লাগে।মন খারাপ এই মেয়েকে মানায় না।
.
গোধূলি বেলায় পাশাপাশি হাঁটছে অনু আর তূর্য।অনু তূর্যর দিকে নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো বউয়ের হাত ধরছেন না কেন? আপনার যে বউ আছে সেটা ঐ মেয়ে গুলো কে দেখান। দেখুন কী করে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। চুল ঠিক করছে। লাজুক হাসছে। এগুলা কি?
তূর্য অনুর রাগ দেখে হাসলো খুব।তার পর অনুর হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের একদম কাছে নিয়ে এসে মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,,
আমার আদরের বউ। তার সামনে আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে না থাকলেই হয়। না হলে আপনাদের খবর বানিয়ে ফেলবে,,,
মেয়ে গুলোর মধ্যে একজন বলে উঠলো,,
ইসসস প্রেম করার আগেই ছ্যাঁকা।
আরেকটা মেয়ে বলে উঠলো,, আপনাদের খুব সুন্দর মানিয়েছে ভাইয়া,আপু।
তূর্য অনুর দিকে তাকালো।দেখলে তো,, সবাই বলে তোমার জন্য তূর্যই পারফেক্ট। মাহির না,,,,,
অনু ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে তূর্যর হাত ধরে বললো,,মালাই চা খাবো,,,
তূর্য সামনের একটা টং দোকানে গিয়ে বসলো। দুই কাপ মালাই চা দুজনে ফিনিশ করে দিয়ে সন্ধ্যার ব্যাস্ত শহরের রিক্সায় উঠে বসলো। সন্ধ্যার ব্যাস্ত শহরের দিকে তাকিয়ে অনু তূর্যর কাঁধে মাথা রাখলো। চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললো,,
আমি আরেক বার এই শহরের মায়ায় পড়তে চাই। তবে আমার এই শহরে কোনো অতীত থাকবে না। থাকবে শুধু আমার জীবনে লাল, নীল, হলুদ,বাহারি রঙ নিয়ে আসা মানুষটা। শুধু তার শহরের মায়ায় জড়িয়ে নিবো আমি আমাকে।আর আমার এই শহরে অন্যকারো প্রবেশ নিষেধ।
চলবে,,,,, 🍁