তার শহরের মায়া 😍,পার্ট_২৬,২৭
Writer_Liza_moni
পার্ট_২৬
অনুর কথা শুনে তনুর হাত থেকে খুন্তি নিচে পরে গেল। মাহির স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার কানের মধ্যে শুধু বাজতে থাকলো,,”আপুনি তুই খালা মনি হবি,,”
তনু শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে অনুর কপালে, গলায় হাত দিয়ে দেখলো ওর জ্বর টর হয়েছে কিনা।
অনু ভ্রু কুঁচকে চোখ গোল গোল করে একবার তনু আরেক বার মাহিরের দিকে তাকাচ্ছে।
মাহিরের চোখ মুখের রিয়েকশন দেখে অনুর দম ফাটানো হাসি পাচ্ছে। কিন্তু সে হাসবে না।তাই মুখটাকে সিরিয়াস করে তনু কে বললো,,
দেখ আপু আমি একদম ঠিক আছি।
না না তুই একটু ও ঠিক নেই।তনু অনুর হাত ধরে টেনে ড্রইং রুমের সোফায় এনে বসালো।
ডায়নিং টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি এনে অনু কে দিলো।অনু পানি টা খেয়ে নিয়ে বললো বাবু পানি খেতে চেয়েছিল। তুই এত সহজে বুঝে গেছিস তাই? এই না হলে বাবুর খালামনি। পেটে হাত দিয়ে লাজুক হেসে বললো অনু।
তনু একটা ঢোগ গিললো।
তুই সত্যি প্রেগন্যান্ট?এত তাড়াতাড়ি? তোদের বিয়ের তো এক সাপ্তহ হয় নাই।আর তুই প্রেগন্যান্ট? সিরিয়াসলি অনু?
মাহির কৌতুহল নিয়ে ওদের কাছে আসে।অনু আড় চোখে মাহিরের দিকে তাকিয়ে তনু কে বললো,,
আমাদের মেয়েদের পার্সোনাল কথার মধ্যে দুলাভাই এখানে কেন?
তনু মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
আসলেই তো,,এই তুমি একটু রুমে যাও তো,,আনুর সাথে আমি কথা বলছি না,, মেয়েদের কথা বার্তার মাঝে তুমি কি করো?যাও তো,,
মাহির ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।কিছু বললো না। তার পর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের দিকে চলে গেল।
তনু অনুর ডান হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেড়ে চড়ে বসে বললো,,
বল তো অনু তুই কি সত্যি প্রেগন্যান্ট নাকি মজা করছিস?
অনু মুখটাকে সিরিয়াস করে বললো আমি মজা করবো কেন? আচ্ছা আপু তুই কি দেখিস নাই,, আমাদের বাড়ির পাশের ঝিনুক আপু বিয়ের ৫ দিনের দিন প্রেগন্যান্ট হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ যাকে যখন দেয় আরকি।আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছে।
তনু ঘামছে শুধু।অনু প্রেগন্যান্ট কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তার।
.
.
মাহির রুমে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে বিছানায় বসে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।অনু প্রেগন্যান্ট?এত তাড়াতাড়ি?
মাহিরের কেমন কেমন জানি লাগছে। বেচারা একবার বসা থেকে উঠে পুরো রুমে পায়চারি করছে। আবার বিছানায় এসে বসছে। বুকের মাঝে ধক ধক করছে। হার্ট বিট বেড়ে গেছে অনেক টা।ধরফর করছে হার্ট।
(মনে হয় মাহির হার্ট অ্যাটাক করবে 🤭।)
.
তূর্য ঘুম থেকে উঠে কয়েক বার অনু কে ডাক দিল। অনুর সারা না পেয়ে ভাবলো,,
মাহিরদের বাড়িতে গেছে। তূর্য বিছানা বিছানা থেকে নেমে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
কিছুক্ষণ পর ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করে সময় দেখে নিলো।
৯ টা বাজে। এতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকার ফলে তার ক্ষিদা লাগছে ভীষণ। আজকে তনুদের ওখানে ডিনারের দাওয়াত পেয়েছে তারা।
তূর্য মোবাইল হাতে নিয়ে মাহিরদের ফ্লাটের দিকে চলে গেল।
.
.
আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না অনু। তুই প্রেগন্যান্ট সিরিয়াসলি?
দেখ তোকে বিশ্বাস করাতে চাই ও না।বাবু হলে তুই দেখবি হুঁ।
তনুর সব গোল পাকিয়ে যাচ্ছে।এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে।
তূর্য সাহেব আসছে মনে হয়।আপু তুই গিয়ে ডিনার রেডি কর। বেচারা বিকেলে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে গেছে। এখন নিশ্চয়ই ক্ষিদা পেয়েছে।
তনু একটা ঘোরের মধ্যে আছে।
হুম বলে উঠে গেল খাবার সাজাতে।
অনু গিয়ে দরজা খুলে দিল। তূর্য অনু কে দেখে মুচকি হেসে ভিতরে ঢুকে গেল।
সোফায় বসতে বসতে বললো ওনারা কোথায়?
আপু তো খাবার সাজাচ্ছে।ডাইনিং টেবিলে।আর দুলাভাই রুমে। আপুর শ্বশুড় , শ্বাশুড়ি ওনারা ওনাদের শ্বশুর বাড়িতে গেছেন।
মাহির কে ডাকি কেমন,,?
আপনি কেন ডাকবেন?
ঐ লোকটা থেকে একদম দূরে দূরে থাকবেন। না হলে ঐ লোকের বাতাস আপনার গায়ে ও লাগবে। তখন আপনি ও ঐ লোকের মতো হয়ে যাবেন।
আরে না।হবো না ওর মতো।
অনু দাঁত কেলিয়ে গলা উঁচু করে মাহির কে ডাকদিলো,,
দুলাভাইইইইইই,,,,
অনুর ডাক শুনে মাহির বসা থেকে লাফিয়ে উঠলো।
তূর্য কানে হাত দিয়ে বললো,,
মেঘুপাখি এতো জোরে না ডাকলে হতো না 😐
অনু দাঁত কেলিয়ে বললো,,
কিছু মানুষকে একটু জোরে ডাকতে হয়। নাহলে কানে শুনতে পায় না।
মাহির রুম থেকে বের হয়ে এসে ড্রইং রুমে আসলো।
অনু মাহির কে দেখে দাঁত কেলিয়ে বললো,,
দুলাভাই আপনার ভাই আপনাকে খুঁজছিল।তাই এতো জোরে ডাক দিলাম।
তূর্য হাসলো।আর মাহির মুখটা কে মলিন করে তূর্যর পাশে গিয়ে বসলো।
অনু তূর্যর দিকে চোখ কটমট করে তাকালো।
তা দেখে তুর্য মাহিরের পাশ থেকে উঠে অন্য পাশে বসলো।তা দেখে মাহির বললো,,
কিরে ওখানে গিয়ে বসলি কেন?
অনু দাঁত কেলিয়ে বললো,,
কিছু ভাইরাসের সাথে গা ঘেঁষে বসলে আমার জামাইয়ের গায়ে ও সেই ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে।যা আমি একদম চাই না। একদম না।
অনুর কথায় মাহির অপমান বোধ করলো।
খুব খারাপ লাগছে মাহিরের।
তনু ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে সবাই কে ডাক দিল।
তার পর সবাই খাওয়ার জন্য চলে গেল।
সবাই কে খাবার বেড়ে দিয়ে তনু ও বসলো তাদের সাথে।
সবাই খাবার খেতে ব্যস্ত। এমন সময় তনু হঠাৎ করে বলে উঠলো,,
তূর্য অনু নাকি প্রেগন্যান্ট? সত্যি?
তনুর কথায় তূর্যর গলায় খাবার আটকে গেল।কাশি উঠে গেছে তার।অনু থ মেরে বসে রইলো।তনু যে এই কথা তূর্য কে বলবে ভাবতেই পারেনি সে।
তূর্য কাশতে কাশতে শেষ।তনু তাড়াতাড়ি তূর্য কে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল।
তূর্য পানি খেয়ে বড় সড় একটা ঢোক গিললো।
মনে মনে বললো,,
আপনার বোন যে এত পাজি আমি জানতাম ও না। আমি তো ওকে ছুঁই ও নাই। তাহলে কি ও হাওয়ায় প্রেগন্যান্ট হইছে?নিজে ও হাত টা ও ধরতে দেয়নি।আর সে বলে কিনা প্রেগন্যান্ট?
কী হলো তূর্য কিছু বলছো না যে?অনু কী সত্যিই প্রেগন্যান্ট?
আরেএএএ আপু,,
উনি তো এখন ও জানেই না,, উনি যে বাবা হবেন। আমি তো এখন ও বলি নাই।
তূর্য এখন হার্ট অ্যাটাক করবে। বুকের বাঁ পাশে হাত চেপে ধরে বললো,,
আমার খাওয়া হয়ে গেছে,,
আমি আমাদের ফ্লাটে যাচ্ছি।
তূর্য উঠে চলে গেল। মাহির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
অনু কেবলার মতো দাঁত কেলিয়ে বললো,,
আমার ও খাওয়া শেষ। তোরা খা,, আমি যাচ্ছি,,,
এই দুই টার আবার কী হলো?বলে মুখে এক টুকরো মাংস পুরলো তনু। মাহির চুপ করে ভাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।
অনু ও দৌড়ে চলে আসলো ওদের ফ্লাট থেকে। হাতের নখ কামড়াতে কামড়াতে সিঁড়ি বেয়ে নামছে সে।
তূর্যর সামনে এখন কী করে যাবে সেই কথাই ভাবছে অনু। তূর্যর সামনে গেলে লজ্জায় মরে যাবে সে। এখন ও কেমন লজ্জা লাগছে তার। তূর্যর সামনে গেলে মরেই যাবে।
অনু নিজের মাথায় নিজে গাট্টা মেরে নিজে বিড় বিড় করে বললো,,
তুই আস্ত একটা গাঁধী অনু। মাহির খাটাশ রে জ্বালাতে গিয়ে কি বলে ফেলছিস? কেমনে যাবো আমি তূর্যর সামনে?
অনু তাদের ফ্লাটের সামনে এসে দাড়িয়ে এই সব ভাবছে। তখন কেউ একজন অনুর হাত ধরে টান মারে ফলে অনু গিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল।
তূর্য দরজা বন্ধ করে অনুর দিকে এগিয়ে যায়।অনু দেওয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে আছে।তূর্যর মুখের দিকে।
তূর্য অনুর পাশের দেয়ালে হাত রাখতেই অনু কেঁপে উঠে।তা দেখে তুর্য ঠোঁট কামড়ে হাসে।
তূর্য অনুর একদম কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে অনুর কোমর জড়িয়ে ধরে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
অনুর বুক উঠা নামা করছে দ্রুত গতিতে।
হার্টটা মনে হয় বিট করতে করতে বের হয়ে আসবে।
তূর্য অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,,
আমি বাবা হয়ে গেছি আর আমিই জানি না?
অনু একটা ঢোক গিললো। মুখ দিয়ে তার কিছুই বের হচ্ছেনা।আসাড় হয়ে গেছে তার পুরো শরীর।
তূর্য অনুর কানের লতিতে হালকা কামড় দিতেই অনু চোখ মুখ খিঁচে তূর্যর টি শার্ট খামচে ধরলো হাত দিয়ে।
তূর্য মুচকি হাসলো। তার পর আবার ও অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো
আমি কিন্তু সত্যি সত্যি বাবা হতে চাই।
তা শুনে অনু ছিটকে দূরে সরে গেল।তা দেখে তুর্য ঠোঁট কামড়ে হাসলো।অনু পারলে দেয়ালের সাথে এক দম মিশে তেরো।
অনু তুতলিয়ে বললো,,,
আ-মি মা-হি-র কে জ্বা-লা-নো-র জ-ন্য ব-ল-ছি
তূর্য অনুর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো
সত্যি সত্যি মা হয়ে তার পর বাবু দেখিয়ে দিও,,,
এই আপনি দূরে থাকুন,,, একদম কাছে আসবেন না,,,
তূর্য মুচকি হেসে বললো,,
আমি যখন বাবা হয়ে গেছি,,আর তুমি যখন মা হয়েই গেছো,, তখন সত্যি সত্যি বাবুর মা, বাবা হলে ও সমস্যা নেই।
অনু একটা ঢোক গিললো। নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার। কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।
তূর্য আবারো অনুর হাত ধরে টান দিয়ে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। তার পর অনুর শাড়ির আঁচল দিয়ে অনুর মুখের ঘাম মুছে দিয়ে বললো,,
এতো নার্ভাস হওয়ার কিছু হয়নি। তোমার অনুমতি ছাড়া আমি কিছুই করবো না। অনেক রাত হয়েছে,, সারাদিন জার্নি করছো,, এখন ঘুমাতে চলো,,,
অনু কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে তূর্যর দিকে রইলো,,,,
এতো ভালো কেন মানুষটা,,,,?
চলবে,,, 🍁
#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_২৭
#Writer_Liza_moni
তূর্যর সামনে থম মেরে বসে আছে অনু। চোখ তার বিছানার চাদরের দিকে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখের কোনা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তূর্য মুখটা কে মলিন করে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।
রাত প্রায় বারোটা বেজে গেছে। তূর্য আর অনুর চোখে ঘুম নেই।অনু হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।
আমার তখন মজা টা করা ঠিক হয়নি। প্রেগন্যান্সি নিয়ে মজা করাটা একদম ঠিক হয়নি।
তূর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
তার পর ভেঙ্গে যাওয়া কন্ঠে বললো,,
কিছু জিনিস আছে অনুমেঘা।যা নিয়ে মজা করা উচিত নয়।জিবন বড় কঠিন। অনেক নিয়ম মেনে নিতে হয়।
অনুর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
অনু একবার তূর্যর দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিল।
মিনিট দশেক আগে,,,
একটা দুঃস্বপ্ন দেখে দরফরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে অনু,,,
পাশ ফিরে অস্থির হয়ে তূর্য কে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে।
তূর্য ভিতী কন্ঠে অনুর ভয় পাওয়ার কারন জানতে চাইলো।
অনু কী বলবে বুঝতে না পেরে কান্না করে দিল।
তূর্য অভয় দিয়ে জিজ্ঞেস করাতেই অনু গড়গড় করে বললো,,
আমি খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি। দুঃস্বপ্ন ভীষণ খারাপ।
আমি, আমি নাকি কোনো দিন ও মা হতে পারবো না।
বলেই অনু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।
.
.
তূর্য অনুর কাঁধে হাত রেখে অনুকে বিছানায় শুয়ে দিল। চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,, তুমি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবা। তিনি নিশ্চয় তোমাকে ফেরাবেন না।
অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অনু কে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়ে তূর্য। কান্না করতে করতে অনুও শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে পড়ে।
কিছু বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে অযথা মিথ্যা মজা করা উচিত নয়। একদমই না।
.
.
সকালে আযান দেওয়ার ধ্বনিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় অনুর। নড়েচড়ে পাশ ফিরে দেখে তূর্য তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।অনু তূর্যর হাতটা সরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো।মাথার এলোমেলো চুল গুলো কে খোঁপা করতে করতে ওয়াস রুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে,অযু করে এসে তূর্যর দিকে তাকাতেই দেখে তূর্য চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।
অনু তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে বললো,,
ফ্রেশ হয়ে অযু করে আসুন।
তূর্য শোয়া থেকে উঠে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে দেখে অনু নামাজে দাঁড়িয়ে গেছে। তূর্য কাভার্ড থেকে একটা পাঞ্জাবী বের করে সেটা গায়ে দিয়ে মসজিদের পথে হাটা ধরলো।
অনু নামাজে বসে মোনাজাতে কান্না করতে করতে শেষ। অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। এমনটা না করলেই হতো। আল্লাহ যোনো তাকে মাফ করে দেয়।
নামাজ পড়ে উঠে জায়নামাজ গুছিয়ে অনু রান্না ঘরে চলে গেল।আজ থেকে তূর্যর অফিস শুরু।
তূর্য মসজিদ থেকে এসে অনু কে রান্না ঘরে দেখলো। মুচকি হেসে রুমে গিয়ে পাঞ্জাবি খুলে টি শার্ট গায়ে দিয়ে অনুর কাছে গেলো। তার বউটা একা একা রান্না করছে,,সে ও একটু কাজে সাহায্য করলে ক্ষতি কী?
রান্না ঘরে এসে তূর্যর চোখ আটকে গেল
অনুর পেটের মাঝে
কালো কুচকুচে একটা তিল দেখে।শাড়ির আঁচল উপরে তুলে কোমরে গোঁজার ফলে অনুর পেট স্পষ্ট।
তূর্য থমকে দাঁড়িয়ে রইলো। এগিয়ে গেল না। নিজের রুমে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ালো।
সে চাইলেই অনু কে ছুঁয়ে দেখতে পারে।অনু তার জন্য হালাল। তার বউ হয় অনু। তবু ও মাঝে অনেক বারন।অনুর তৈরি করা প্রাচীর। তূর্য চায় না অনুর অনুমতি ছাড়া কিছু করতে। না হলে সারা জীবন সে দোষী হয়ে থাকবে।
তূর্য মনে মনে বললো,,
ও যদি এমন করে অসচেতন হয়ে চলে তাহলে আমার নিজেকে সামলে রাখা কঠিন হবে।যত তাই হোক,, আমি একজন ছেলে।সে যতই ভালো হইনা কেন?
তূর্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
অনু সকালের নাস্তা বানিয়ে ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে তূর্য কে ডাক দিল।
তূর্য মুচকি হেসে ডাইনিং টেবিলে এসে দেখে নুডুলুস
, পরোটা,ডিম ভাজি সাজিয়ে রাখা। তূর্য চেয়ারে বসে পড়লো।অনু তূর্য কে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজে ও বসে পড়লো।অনুর মনটা তেমন ভালো নেই। রাতের স্বপ্নটার এখন ও রেশ কাটেনি তার।
তাই শুধু নুডুলুস খেলো। তূর্য কিছু বললো না। চুপ চাপ নিজের খাবার শেষ করে উঠে আবার ও বেলকনিতে চলে গেল।
অনু সব গুছিয়ে রেখে ধোঁয়া উঠা দুই কাপ চা বানিয়ে রুমে গেল। রুমে কোথাও তূর্য কে দেখতে না পেয়ে অনুর চোখ গেলো বেলকনির দিকে।অনু সেখানে গিয়ে তূর্যর দিকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বললো,,
নিন,,চা খান।
তূর্য অনুর মুখের দিকে এক নজর তাকিয়ে মুচকি হেসে চায়ের কাপ হাতে নিলো। বেলকনিতে রাখা দুটো মোড়ায় বসলো দুজনে।অনু চায়ের কাপে ফুঁ দিয়ে একটু একটু করে চা খাচ্ছে।আর তূর্য গরম গরম চা ফুঁ দেওয়া ছাড়াই গিলছে।
এতো গরম চা কি ভাবে খাচ্ছেন আপনি?
তূর্য মুচকি হেসে বললো,,,
অভ্যেস আছে। আমি এমন গরম খেতে পারি। ভাল্লাগে আমার।
অনু নিচের ঠোঁট টা বাঁকিয়ে বললো,, বুঝতে হবে জামাইটা কার,,?
কথা টা বলে অনু নিজে নিজেই হাসতে লাগলো।তা দেখে তুর্য তাচ্ছিল্য হাসলো। চায়ের কাপ টা অনুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে তূর্য রুমে চলে গেল।
তূর্যর চলে যাওয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।
অনু চায়ের কাপ গুলো ধুয়ে রেখে রুমে আসলো। রুমে এসে দেখে তূর্য অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে।
অনু বিছানায় এসে বসে বললো,,
ফিরবেন কখন?
রাত হবে,,,এত দিন পর অফিসে যাচ্ছি,,কাজ জমা হয়ে আছে অনেক।
ওহ।মন খারাপ করে বললো অনু।
আমাকে তাহলে সারাদিন এক থাকতে হবে!
তূর্য অনুর দিকে এক নজর তাকিয়ে ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো,,
কেন,,? মাহির আছে না,,? ওকে জ্বালাবে সারাদিন। তাহলে আমার কথা আর মনে পড়বে না।
তূর্যর কন্ঠে অভিমান।
অনু বুঝলো না তার প্রতি তূর্যর অভিমানের বিষয়টা।
ওরে তো জ্বালামু,, কিন্তু আপনাকে ছাড়া একা একা জ্বালাতে ভালো লাগবে না,,,
তূর্য কিছু বললো না।অনুর হাত ধরে টান মেরে বসা থেকে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।অনুর গালে হাত রেখে,,,
আসছি,,টেক কেয়ার বলে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেল।অনুও তূর্যর পিছু পিছু মেন দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়।
.
.
তূর্য চলে যেতেই অনু দরজা বন্ধ করে দুপুরে জন্য রান্না করার কাজে লেগে যায়।
১২টার দিকে রান্না শেষ করে ক্লান্ত,ঘামান্ত অনু কাভার্ড থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল গোসলের জন্য। বিয়ের পর সব সময় শাড়ি পরবে এই ইচ্ছে ছিল তার। শাড়ি পরতে অনুর খুব ভালো লাগে।
.
.
কি ইয়াং ম্যান,,,
নতুন বউকে ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করে না নাকি?
জামাল সাহেবের কথা শুনে তূর্য মনে মনে বললো,,আর বউ,,, তার তো আমার দিকে কোনো খেয়ালই নেই।সে তার প্রাক্তন কে জ্বালানো নিয়ে ব্যস্ত।
নতুন নতুন বিয়ে করলে কারইবা বউ রেখে অন্যের হারিয়ে যাওয়া বউকে খুজতে ইচ্ছে করে বলেন তো স্যার?
সেটাই তো।
স্যার আপনি কিন্তু আপনার কথা রাখেননি। মুখ মলিন করে বললো তূর্য।
জামাল সাহেব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,,
কী কথা রাখিনি?
তূর্য দাঁত কেলিয়ে বললো,,
আপনি বলে ছিলেন আমি বিয়ে করলে আমি আলাদা কিছু দিন ছুটি পাবো,,,
ও হো,,,জামাল সাহেব হেসে উঠলো।পাবে তূর্য পাবে,,, এই কেসটা মিটে গেলেই পাবে,,,
তূর্য বিড়বিড় করে বললো,, পাইলে ও আর কী হবে স্যার?বউয়ের সাথে তো আর রোমান্স করতে পারবো না।আর না হানিমুনে যেতে পারবো,,,?
.
.
অনু গোসল করে এসে চুল গুলো কে এক পাশে এনে তোয়ালে দিয়ে মুছতে লাগলো।
যোহরের আযান দিতেই অনু অযু করে এসে নামাজ পড়ে নিলো। নামাজ পড়ে উঠে জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লো। পাশে তাকাতেই মোবাইল চোখে পড়লো তার।অনু হাত দিয়ে মোবাইলটা নিলো। তূর্য কে মিস করছে সে।
এখন থাকলে কথা বলা যেতো।অনু তূর্যর নাম্বারে ডায়াল করলো।
তূর্যর ফোন বেজে উঠায় ভ্রু কুঁচকে পকেট থেকে মোবাইল বের করে স্ক্রিনে অনুর নাম্বার দেখে নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
দুই বার রিং হতেই তূর্য কল রিসিভ করে কানে ধরলো।অনু চুপ করে আছে। কিছু বলছে না। তূর্য ও সেম। নিরবতা ভেঙ্গে তূর্য বললো,,
খেয়েছো?
এমন সময় অনু ও বলে উঠলো খেয়েছেন?
তূর্য বললো না খাইনি,,অনু ও বলে উঠলো খাইনি,,, দুইজনের কথাই একসাথে হয়ে গেছে।দুজনেই হেসে ফেললো।
খাওনি কেন?
খাবো একটু পরেই,,,
খেয়ে নাও,, আমি ও খেতে যাচ্ছি। এসে কল দিবো কেমন?
অনু কিছু বললো না।
তূর্য আবারো বলে উঠলো,,
বস খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছে। আমার বিয়ের উপলক্ষে তিনি সবাই কে ট্রিট দিয়েছেন।
অনু হাসলো। আপনার বস নিশ্চয় অনেক ভালো?
হুম। খুব ভালো। আমাকে তিনি তার ছেলের মতোই মনে করেন।
ভালোই। আচ্ছা ঠিক আছে।
আপনি যান। রাখছি,,
এই শুনো,,,
হুম বলুন,,,
খেয়ে নাও,, এখনই। একদম দেরি করবা না। কেমন?
অনু থমকালো। এমন একটা লোক কে সে শুধু শুধু কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে? মলিন কন্ঠে বললো,,খাবো, এখনই,,
গুড গার্ল,,, রাখছি।
হুম।
তূর্য কল কেটে দিল।
অনু পাশের বালিশটা টেনে এনে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে ভাবতে লাগলো,,
শুধু শুধু তূর্য কে এমন কষ্ট না দিলে ও হয়।সব মেয়েদের মতো ছেলেদের ও তো ইচ্ছে করে,,যে তার কাছের মানুষটা,, তার জীবন সঙ্গী টা তাকে ও একটু বুঝোক।সব সময় কি নিজের স্বার্থের কথা ভাবলে হবে?যার জন্য আজ হাসছো তুমি, তার কথা ও একটু ভাবো।তাকে ও একটু বুঝো।সে ও তো মানুষ।ধর্য্য আর কত দিনই বা থাকবে,,,,?
চলবে,,,,,, 🍁