তার শহরের মায়া 😍,পার্ট_১৪,১৫
Writer_Liza_moni
পার্ট_১৪
ছি রিফা। তোরা এতো টা নিচ আমি ভাবতেই পারিনি। আমি তো তোদের ভালো মনে করেছিলাম।তোরা এতো জঘন্য ছিঃ। আমি যদি আজ একটু তাড়াতাড়ি না আসতাম তাহলে তোদের এই জঘন্য প্লেনিং টা বুঝতেই পারতাম না।
তুই যা ভাবছিস তা না অনু।অনুর হাত ধরে বললো রিফা।
অনুর রাগে গা কাঁপছে।রিফার হাতটা ঝাড়ি দিয়ে নিজের হাত থেকে ছুটিয়ে নিলো।ছুঁবি না আমাকে। সেদিন তো কী সুন্দর করে অভিনয় করে ছিলি। আমাকে ক্ষমা করে দে অনু। আমি তোর পায়ে ধরবো।ছি।তোরা তো মাহিরের থেকে ও জঘন্য।
শুধু মাত্র পরিক্ষায় আমার থেকে কপি করার জন্য এতো নাটক? বন্ধু হয় নিশ্চয় মুখ ফিরিয়ে থাকবো না এই সুযোগ নিতে চেয়েছিলি?আর ও কি প্লেন করেছিস
তোরা আমার খাতা থেকে লিখে নিয়ে আমার খাতাটা নষ্ট করে দিবি তাও কিনা সময় শেষ হওয়ার ৫ মিনিট আগে।ছি ছি ছি। তোরা এতো জঘন্য ছিঃ।ভাগ্যিস পরিক্ষার আগের দিনই তোদের এই কুকর্ম করার কথা জানতে পেরেছি। মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাজার হাজার শুকরিয়া। তোদের মতো ফাউল পোলা মাইয়ারে যেন আমি আমার চোখের সামনে না দেখি।
আর আমার সাথে চিট করার শাস্তি খুব শীঘ্রই পাবি।হয় আমার থেকে আর না হয় প্রকৃতি থেকে। মাইন্ড ইট।
অনু ওদের কাছ থেকে ভার্সিটির ভেতরে চলে গেল।
অনু আজ সময়ের একটু আগেই ভার্সিটিতে আসে। ভার্সিটিতে এসে একটু দূরেই রিফা, কেয়া, শাকিল,শুভ কে কিছু নিয়ে গবেষণা করতে দেখে এগিয়ে যায়।
রিফারা নিজেদের কথায় এতোই ব্যস্ত ছিল যে অনু মে তাদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ওদের সব কথা শুনে নিয়েছে তা কিছুতেই বুঝতে পারেনি।
ওদের এই সব কথা শুনে অনুর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল।এরা আবার ও তার বিশ্বাস নিয়ে খেললো? আবার ও প্রতারনা করার জন্য তৈরি হচ্ছিল ? এতো নিচু মনের মানুষ এরা?
ওহ শিট। তোদের কে বলে ছিলাম ও একটু সাবধানে এই সব নিয়ে কথা বলার জন্য। এখন গেলো তো সব।(কেয়া)
তীরে এসে তরী ডুবে গেলো।(শুভ)
ইসস কত্ত কষ্ট করে রিশাদ কে ইমপ্রেস করে ওকে অনুর কাছে পাঠিয়ে এতো সুন্দর অভিনয় করে ব্যা ব্যা করে কান্না করে অনুর সাথে সব ঠিক করে নিয়েছিলাম আর আমাদের অল্প একটু ভুলের জন্য সব শেষ। আফসোসের স্বরে বললো রিফা।
ভূতের মতো কখন যে পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারিনি।যা এবার সারা জীবনের জন্য ওর কাছে অপরাধী হয়ে গেলাম।(শাকিল)
.
ভার্সিটির ফর্মালেটি শেষ করে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ালো।অনু এখন ও বিশ্বাস করতে পারছে না মানুষ ঠিক কতটা জঘন্য হতে পারে। স্বার্থের জন্য মানুষ কত কিছুই না করতে পারে।
অনু আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আসলেই কথা সত্যি যারা এক বার বিশ্বাসঘাতকতা করে তাদেরকে দ্বিতীয় বার আর বিশ্বাস করা উচিত নয়।মে এক বার বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে সে বার বার বিশ্বাস ভাঙ্গতে পারে।
.
দেখতে দেখতে অনুর পরিক্ষা শেষ হয়ে যায়। পরিক্ষার সময় অনু মন দিয়ে দিন রাত এক করে পড়াশোনা করেছে। পরিক্ষার বেশির ভাগ প্রশ্নই অনুর কমন পরে।যে সব প্রশ্নের উত্তর ক্লাসের টপ স্টুডেন্টরা পারেনি সেই সব প্রশ্নের উত্তর অনু খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছে।
পরিক্ষার সময় একাই ছিল অনু।কারো সাথে কোনো কথা বলেনি। কেউ কথা বলার জন্য আসলেই তাঁকে ইগনোর করেছে সে।কাউ কে বিশ্বাস করতে এখন অনুর ভীষণ ভয় হয়। মানুষ গুলোর সুন্দর মুখের, মিষ্টি কথার আড়ালে যে এতো কুৎসিত চেহারা থাকে বুঝাই যায় না।কারো সাথে কথা বলতেই এখন অনুর বিরক্ত লাগে।
.
তূর্যর আম্মু তূর্যর জন্য পাত্রী পছন্দ করে ফেলেছেন এই কয়েক দিনে। বিয়েটা সামনের মাসেই করাতে চান তিনি। তূর্যকে বিয়ের কথা বলতেই তূর্য রেগে যায়।
“আমি এখন বিয়ে করবো না মা।”
“আরে তুই কী আর ও বুড়ো হয়ে গেলে বিয়ে করবি ?”
“আমি কী এখনই বুড়ো হয়ে যাবো নাকি?”
“দিন দিন তো বুড়াই হইতেছোস। জোয়ান হচ্ছিস তো না?”
“মা এই ভাবে অপমান করার কোনো মানে আছে?”
“তোর জন্য মেয়ে ঠিক করেছি আমি।আর কিচ্ছু শুনতে চাই না। সামনের সপ্তাহে বাড়িতে আসবি।মেয়ে দেখে যাবি।মেয়ে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। তোর পছন্দ হবে।”
বলছিলাম কি মা বিয়েটা আর কিছু দিন পর করলে হয় না?
না হয় না। জোয়ান থাকতে থাকতে বিয়ের পিঁড়িতে বস।বুড়া হয়ে গেলে কেউ তোর কাছে তাদের মেয়েকে বিয়ে দিবে না।মা তোর জন্য কত ভাবি। আমার মত মা তুই কোথায় পাবি বলতো? অন্যদের মা ছেলের বিয়ের বয়স হয়ে গেলে ও সে দিকে পাত্তা দেয় না।ছেলে বললে বিয়ের কথা মা জুতা দিয়ে পিটায়।আর আমি তোর মা হয়ে বিয়ে দিতে চাচ্ছি তার কী একটু ও মূল্য নেই?
আল্লাহ আমাকে যে তোমার মত একটা মা দিয়েছে এর জন্য আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। তুমি কোটিতে এক পিস।
রাখছি?
এই রাখছি মানে তুই মেয়ের ছবি দেখবি না?
না দেখুম না। তোমার ছেলের বউরে তুমি দেখো। আমার কাজ আছে। ভালো থাকো রাখছি।
তূর্য কল কেটে মোবাইলটা বিছানার উপর রেখে কপালে এক হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল।রাত এখন প্রায় দশটা বাজে।
বিয়ে করতে আপত্তি নেই তার। কিন্তু মানুষটা সঠিক হওয়া চাই। একজন মন ভাঙ্গা মানুষ চাই তার। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে যেতে হবে। দেখতে হবে মা কার সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছে।
.
অনুর কাল সকালে খাগড়াছড়ির বাস আছে। ঘুম আসছে না।ঢাকা ছেড়ে যেতে একটু কষ্টই হচ্ছে তার। কতো সৃত্মি আছে এই শহরের আনাচে কানাচে।কত মায়া এই শহরকে ঘিরে। এই শহরেই তো তাকে মানুষ চিনতে শিখিয়েছে।
অনু মেসের ছাদের এক কোনায় এসি দাঁড়ালো। রাতের এই শহরটা এখন ও কত ব্যস্ত। যানবাহনের হর্নের আওয়াজে চার পাশ মুখরিত।
আগামীকাল সকালে বাড়িতে ফিরে যাবে।বাবা মায়ের কাছে।এই মানুষ গুলো ছাড়া পৃথিবীর কেউ আপন হয় না।
অনু আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।আজ ও আকাশে একটা থালার মত চাঁদ দেখা যাচ্ছে। হাজার তাঁরায় আকাশটা জ্বল জ্বল করছে।
অনু মুচকি হেসে আবার নিচের ব্যস্ত শহরের দিকে তাকিয়ে বললো ধন্যবাদ প্রিয় শহর। আমাকে মানুষ চেনা শিখিয়ে দেওয়ার জন্য। তোমার মত একটা শহরে না আসলে বুঝতেই পারতাম না মানুষ স্বার্থের জন্য কত কিছুই না করতে পারে। বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে মানুষ কি ভাবে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে পারে।কারো ইমোশনাল নিয়ে দিনের পর দিন মানুষ কত সুন্দর করে ভালোবাসার অভিনয় করতে পারে।
এতো কিছু শিখিয়ে,জানিয়ে ,চিনিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ প্রিয় শহর। না জানি আমার মত এই শহরের আনাচে কানাচে আর ও কতো মানুষের মন ভেঙ্গে আছে। কেউ বুঝতে পারেনা তাদের ঠিক আমার মতো। বাড়িতে চলে গেলে তোমাকে অনেক বেশি মিস করবো। তোমার মাঝেই যে একজন ভুল মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল।ভালোবেসে ছিলাম সেই ভুল মানুষটিকে।এই শহর যে তার। আমি যে তার শহরের মায়ায় আটকে গেছি।তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা আমি করিনি।যত তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবো ততই তার কথা আমার বেশি মনে পড়ে।
তাইতো নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি।কত শত কাজ মে খুঁজে বের করি না থাকলে ও । শুধু তাকে ভুলে যাওয়ার জন্য। হয়তো ভুলতে পারবো না।কারন সে যে আমার প্রথম ভালোবাসা।এত সহজে তাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রথম ভালোবাসা সব সময় ভুল মানুষের সাথেই হয়। খুব কম মানুষের ভাগ্যে প্রথম ভালোবাসার মানুষটিই তার শেষ ভালোবাসা হয়ে সারা জীবন থেকে যায়।
এখান থেকে চলে গেলে খুব বেশি মনে পড়বে ।কত শত দিন ছিলাম তোর মাঝে। সকালে চলে যাবো। তোর মাঝে না ভুল মানুষে ভরে গেছে।একটু সাবধানে থাকিস। আর আমার মত মন ভাঙ্গা মানুষ গুলো কে হারতে দিস না।জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে ও মরে যাওয়ার মত করে ওদের বাঁচতে দিস না। ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করিস। কিছু বেইমান মানুষের জন্য নিজের জীবন নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।
.
.
.
সকালে
নিজের সব কিছু রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে আবার ও নিজের মেসের রুমে এসে চার দিকে এক বার চোখ বুলিয়ে নিলো।
এতো দিন এই ঘরে থেকে মায়া পরে গেছে। কষ্ট হলেও কিছু করার নেই।যেতে হবেই।এই ঘর, এই জায়গা, এই শহর সব কিছু ছেড়ে নিজের শহরে চলে যাবে। রেজাল্ট দিলে হয়তো এই শহরে আরেক বার আসা হবে কিন্তু এই ঘরে আসা হবে না। আমার এই ঘরে মায়া পড়ে গেছে আর কিছু মানুষের তো আমার মতো বেঁচে থাকা একটা মানুষের উপর মায়া পড়লো না।কত তফাৎ আমাদের মাঝে।
হয়তো এই ঘরের মালিক অন্য কেউ হবে। ঠিক মাহিরের মতো।অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাস্তায় এসে রিক্সায় উঠে বসলো। স্টেশনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালো।
চলবে,,, 🍁
#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_১৫
#Writer_Liza_moni
বাসের জানালার পাশে বসে উদাসীন ভাবে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে অনু। তার পাশে একজন বয়স্ক মহিলা বসে আছেন। তার পেছনে বসে আছেন তার হাসবেন্ড। দুইজনেরি মোটামুটি অনেক বয়স হয়েছে।
অনু সকালে কিছু্ না খেয়েই বের হয়ে আসছে। এখন সকাল ৭ টা বাজে। হালকা ক্ষিদা লেগেছে তার।
অনু ব্যাগ খুঁজে দেখতে লাগলো কিছু আছে কিনা খাওয়ার মত।গাড়ি এখন থামবে না।অনু ব্যাগে ভালো করে খুঁজে ২ প্যাকেট কেক পায়।কেক গুলো দেখে অনু মুচকি হাসে।
গতকাল যে কিনে ছিলাম আর খাওয়া হয়নি। ভালোই হলো।কেক নিয়ে খাওয়া শুরু করে অনু। খাওয়া শেষে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে পাশে তাকাতেই দেখলো মহিলাটা ঘুমিয়ে আছেন। পেছন থেকে তার হাসবেন্ড এক হাত তার মাথার পাশে দিয়ে রেখেছেন।যেনো ঘুমের ঘোরে পরে না যায়।
তা দেখে অনু মুচকি হেসে পাশ ফিরে পানি খেয়ে বোতল রেখে আবার ও বাইরের দিকে চোখ রাখলো অনু।
অনুর মন বলছে আরেক বার এই বুড়ো বুড়ির দেকি তাকানোর জন্য। মনের ডাকে সায় দিল সে।পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে মাহিলার মাথাটা তার স্বামীর হাতের সাথে ঠেস দিয়ে আছে। মহিলা কি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছেন।
অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বললো কয়জনের ভাগ্যে জোটে এমন ভালোবাসা?নব্বই দশকের মানুষদের ভালোবাসা ছিল খাঁটি ভালোবাসা।অন্যের মনের অনেক দাম ছিল তাদের কাছে।তারা মন থেকে ভালোবাসতে জানে। একজন মানুষকে এক এক রুপে ভালোবেসেছেন।
নব্বই দশকের সব কিছুই ছিল ভেজাল মুক্ত। সাথে মানুষের মন ও।তাই তো তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে।কয় জনই বা পারে সত্যি ভালোবাসতে ঠিক নব্বই দশকের মানুষদের মত।
ইসস আমি যদি এই আধুনিক যুগে জন্ম না হয়ে নব্বই দশকের যুগে জন্ম হতাম।এই আধুনিক যুগে তো মন ভাঙ্গা , মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করা ফ্যাশেন। এখন আর সত্যি কারের ভালবাসা তেমন খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক ভাগ্য লাগে সত্যি কারের ভালবাসা খুঁজে পাওয়ার জন্য। আমি ওতো ভাগ্যবান না। তাদের দলে আমি নেই।
অনু এই সব ভেবে আবার ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইরের গাছ গাছালি দেখায় মনোযোগ দিলো।
.
মা দেখো আমি এখন আসতে পারবো না। আবার ও একটা কেস আছে। অনেক প্যারায় আছি। তুমি আর বিয়ের কথা বলে আমাকে প্যারা দিও না তো।
হতচ্ছাড়া,বেক্কেল পোলা। আমি বিয়া করাইতে চাইতাছি তো তাই তুই আকাশে উঠছোস?তোরে আকাশ থেকে কেমনে নিচে নামাতে হয় তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে।
ভালোই তো তাহলে।
তুই আসবি কিনা বল?
আসুম না।
তুই আসবি না তো আমি তাইলে মেয়ের ১৪ গোষ্ঠী নিয়া ঢাকায় যামু আমারে ও চিনিস না।
আরে আম্মু এই সব কী আবাল তাবল বকতাছো?
তুই তাইলে বিয়ে করবি না?
তা কখন বললাম?
তাইলে বিয়ে করবি?
সেটাই বা কখন বলছি?
হতচ্ছাড়া তোরে সামনে পাইলে জুতা পিটা করতাম। ভাগ্য ভালো যে আমার সামনে নাই তুই। সামনের মাসের ৪ তারিখে তোর বিয়ে। আমি আজকেই বিয়ের তারিখটা মেয়ে পক্ষ কে জানিয়ে দিবো।
আজ ২৩ তারিখ আর ৪ তারিখেই বিয়ের ডেট ঠিক করে ফেললা?
তুই ছুটি নিয়ে ১ তারিখ চলে আসবি। নাইলে তোর অবস্থা খুব খারাপ হবে কিন্তু মনে রাখিস।
ইউ আর জিনিয়াস মা।যা ইচ্ছা তাই করো। কিচ্ছু বলবো না আমি। রাখছি।
মাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই কল কেটে দিল তূর্য।
টেবিলের উপর হাতের কনুই রেখে মাথার চুল টানছে সে।মা যে আমার বিয়ে নিয়ে কি শুরু করেছে ভাল্লাগে না।
.
ফেনীতে এসে বাস থামে।অনু বাস থেকে নেমে একটা দোকান থেকে দুটো সিঙাড়া ,সস আর একটা দই নিয়ে আসার সময় কারো সাথে ধাক্কা লেগে হাত থেকে দইটা পড়ে যায়।
এই তা।একটু সাবধানে হাঁটতে পারেন না। এত তাড়া হুরা করে হাঁটার কি দরকার বুঝি না।
সরি মিস। আমার একটু দরকারি কাজ থাকায় দ্রুত হাঁটছিলাম। আপনি দুই মিনিট অপেক্ষা করুন আমি আপনার ক্ষতি পূরণ দিয়ে দিচ্ছি।
বলেই ছেলে টা দই কিনার জন্য দোকানের ভেতরে চলে গেল।
চিকন একটা ছেলে। লম্বায় ৫.৭ হবে। মুখে কোনো দাড়ি নেই।কাধে একটা ব্যাগ আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে অল্প বয়সী ছেলে।
ছেলেটা দই নিয়ে এসে অনুর হাতে দিয়ে বললো আসি আপু।অনু কিছু না বলে গাড়িতে উঠে এসে নিজের সিটে গিয়ে বসলো।
ওমা একি ওনারা কোথায় গেলেন? পাশে সেই মানুষ দুজন কে দেখতে না পেয়ে অনু পাশের সিটের এক মহিলা কে জিজ্ঞেস করলো
আচ্ছা আপু এইখানে যে বৃদ্ধ ,বৃদ্ধা বসে ছিলেন তারা কোথায়?
ওনারা তো নেমে গেছেন।
ওহ। হয়তো ওনাদের বাড়ি এখানে কোথাও হবে ভেবে অনু আর মাথা ঘামালো না। চুপ চাপ সিঙাড়া আর দই খাওয়ায় মন দিল।
গাড়ি ছেড়ে দিবে এমন সময় একটা ছেলে উঠে আসে বাসের মধ্যে।সব সিটে মানুষ আছে। শুধু অনুর পাশের সিটে কোনো মানুষ নাই।এই সিটটা খালি দেখে ছেলেটা কাঁধের ব্যাগ বাসের ড্রয়ারে রেখে বসে পড়লো।
পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ মেলে তাকালো অনু।
মাথা ব্যথা করায় চোখ বন্ধ করে বসে ছিল। পাশে তাকাতেই অনু ভ্রু কুঁচকালো। তখনকার ছেলেটা।কানে হেডফোন লাগানোয় ব্যস্ত।
অনুর দিকে চোখ পড়তেই ছেলেটা অবাক হয়ে বললো আপনি?
হুম আমি। এতো অবাক হওয়ার কি আছে ভাই?
না এমনিতেই। আপনার বাড়ি কি খাগড়াছড়ি?
হুম।
অনেক সুন্দর একটা জায়গা।পাহাড় আর পাহাড়। আমি তো সেখানে বেড়াতে যাচ্ছি।
অনু কিছু বললো না। ছেলেটা বেশী বকে।যা অনুর পছন্দ না।
ছেলেটা আবার ও বললো
আমি সিয়াম। আপনি?
অনু ছেলেটার দিকে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল কি সে পড়ো তুমি?
বাহ্ এক বারেই তুমি?
যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটা বলো।
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। তুমি?
আমি অনার্সের পরিক্ষা দিয়েছি এই সপ্তাহে।
ছেলেটা মুখটাকে ফেকাসে করে বললো আপনাকে দেখে এতো বড় মনে হয় না আপু।
হুম সেটা আমি ও জানি।
আপনি খুব সুন্দর।
অনু কিছু বললো না। মোবাইলে কল আসায় অনু ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে স্ক্রিনে তনুর নাম্বার দেখে বিড়বিড় করে বললো আবার ও হাজার টা মিথ্যা কথা বলতে হবে।
অনু তুই নাকি খাগড়াছড়ি চলে যাচ্ছিস?
তোকে কে বললো?
মা বলেছে। সত্যি নাকি?
হুম। আর ২ ঘন্টা পরেই পৌঁছে যাবো।
তোকে বলে ছিলাম আমার সাথে দেখা করার জন্য। তুই আসলি না।
মন খারাপ করিস না। কিছু দিন পরেই তো বাড়িতে আসবি বেড়াতে। তখন না হয় দেখা করবো।
তুই খুব স্বার্থপর অনু।
তনুর কথায় অনু মুচকি হেসে বললো
আমি স্বার্থপর না। খোঁজ নিয়ে দেখ তোর আশে পাশের মানুষ গুলোই স্বার্থপর।
তুই আর আগের মতো নেই। বদলে গেছিস।
সময়ের সাথে সাথে সবাই বদলায়। আমাকে ও বদলাতে হয়েছে।আর ও বদলানো বাকি আছে। কিছু মানুষই বদলে যাওয়ার জন্য বাদ্ধ করেছে।
তোর সাথে কথা বলাই বেকার।
কথা বলিস না। আমি কী বলেছি তোকে কথা বলতে?
ফাজিল মাইয়া। একবার তোরে পাই কানের নিচে মারমু।দেখে নিস।
দেখবোনি। এখন বাসে আছি। রাখছি।বায়।
অনু কল কেটে মোবাইল ব্যাগে ভরে নিল। পাশে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটা উপন্যাস পড়ছে। নীল দর্পণ বইটি।
গল্প পোকা।অনু আবার ও বাইরের দিকে চোখ রাখলো।
.
তূর্য অফিসের কাজে ধানমন্ডি ১১এ গিয়ে ভাবলো অনুকে একটু জ্বালাবে।অনুর মেসের সামনে এসে দাড়াতেই একটা মেয়ে এসে বললো
অনুমেঘা কে খুঁজছেন?
হ্যাঁ। আপনি কি করে বুঝলেন?
একটু আগেই আপনার বয়সী এক লোক এসে অনুমেঘাকে খুঁজে গেছেন।
ওহ।অনুমেঘা কোথায় ?
সে তো আজ সকালেই বাড়িতে চলে গেছেন। ওনার পরিক্ষা শেষ।তাই চলে গেছেন।
ওহ। তূর্য মুখটা কে মলিন করে যেতে যেতে ভাবলো আমার বয়সী কে আবার অনু কে খুঁজবে ? মাহির নাকি?হতে ও পারে।
এখান থেকে চলে যাবে। একটু বলে গেলেও তো হতো।
তূর্য আর মাথা ঘামালো না।
.
.
.
বাস এসে খাগড়াছড়ি স্টেশনে থেমেছে মিনিট দুই এক হবে।যাত্রীরা সবাই নামার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে।অনু বাসের ড্রয়ার থেকে ট্রলি ব্যাগটা বের করে বাস থেকে নেমে আসলো।বাস থেকে নামতেই একটু দূরে বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে গেল।
এতো দিন পর মেয়ে কে দেখতে পেয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন। অনেক দিন পর আমার সুনশান বাড়িটা আবার হইহুল্লোড়ে মেতে উঠবে। আমার ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে এসেছে।
অনু মুচকি হেসে বাবার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো সিএনজি ভাড়া করোনি?
করেছি তো আয় আমার সাথে।
অনু বাবার পেছনে পেছনে হাঁটতে থাকে।মেইন রোডের সামনে এসে দেখে একটা সিএনজি দাঁড়িয়ে আছে।
ড্রাইবার টা অনুকে দেখে বললো
কেমন আছো অনু মা?
আলহামদুলিল্লাহ চাচা। আপনি কেমন আছেন?
তোমাগো দোয়ায় ভালাই আছি।
অনু বাবার সাথে সিএনজি তে উঠে বসে।
.
.
বাড়িতে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো কেমন আছো আম্মু ?
এতো দিন ভালো ছিলাম না তোর চিন্তায়। এখন ভালো আছি।যা আগে ফ্রেশ হয়ে নে। অনেক দূর থেকে জার্নি করে এসেছিস।
অনু মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে গেল। হিজাব খুলে বিছানায় ছুড়ে মেরে ওয়াস রুমে চলে যায়। হাত মুখে পানি দিয়ে রুমে এসে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে ফ্যান অন করে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
আহ কী শান্তি,,,,🙃
চলবে,,,,, 🍁