তার শহরের মায়া 😍,পার্ট_৮+৯

তার শহরের মায়া 😍,পার্ট_৮+৯
Writer_Liza_moni
পার্ট_৮

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে গাড়ি ছুটে চলছে।ডান পাশে গাড়ি ফিরাতে গেলে অনু গিয়ে তুর্যর কাঁধের সাথে বারি খাচ্ছে। ভীষণ বিরক্ত লাগছে অনুর।

তুর্য কানে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে বাসের সিটের সাথে মাথা হেলিয়ে বসে আছে। মুখ তার কথা বলতে চাচ্ছে কিন্তু এখন অনু কে বিরক্ত করা যাবে না।

পরে দেখা যাবে বাসের মধ্যে চিল্লিয়ে আমাকে গন ধোলাই খাওয়াবে।তাই আপাতত কথা না বলাই ভালো।

এই যে এই,,,কানে হেডফোন থাকায় অনুর ডাক শুনলো না তূর্য।

তুর্যর কোনো রেসপন্স না পেয়ে অনু তার দিকে তাকায়। তুর্যর কানের দিকে চোখ পড়তেই ভ্রু কুঁচকে অনু।

এইটার জন্য শুনতে পাচ্ছে না। দুনিয়া উলটে গেলে ও শুনবে না।অনু বা হাত দিয়ে তুর্যর কাঁধে এক ঘুষি দিল।

অনু হাতটাকে ডলতে ডলতে বললো
বাপরে কি শক্ত। আমার হাত গেছে।

তুর্য চোখ মেলে অনুর দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকায়।

বলতেছি ঐ যে লাস্টের একটা সিট খালি আছে ঐখানে গিয়ে বসেন।বার বার আপনার গায়ের উপর পড়তে আমার ভাল্লাগে না।

কী বলছেন শুনতে পাইনি।

অনু তুর্যর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে কান থেকে হেডফোন টা টেনে খুলে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো
পেছনে একটা সিট খালি আছে।

তো?

তো সেখানে গিয়ে বসেন।

কেনো ? আমি এতো কষ্ট করে সেই সকালে এসে স্টশনে বসে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে এই সামনের সিট নিয়েছি পেছনের সিটে বসার জন্য? আমার হাড্ডি ভাঙ্গার বুদ্ধি করেন?

আপনি এখানে বসছেন বলে আমার সমস্যা হচ্ছে। কথা টা বলার সাথে সাথেই অনু গিয়ে তুর্যর গায়ে পরলো।কারন বাস ডানে মোড় নিচ্ছিলো।

দেখছেন শুধু আপনার জন্য বার বার আপনার গায়ে গিয়ে পড়তে হচ্ছে।

যাহ বাবা আমি আবার কী করছি?গাড়ি ডানে মোড় নিলো তাই আপনি আমার কাঁধের সাথে বারি খাইছেন এতে কী আমার দোষ?

আপনারি তো সব দোষ। আপনি যদি এখানে না বসতেন তাহলে আমি কি বার বার আপনার গায়ের সাথে বারি খেতাম? শরীর তো না যেন কঠিন পাথর।

মিস অনু শুনেন আপনার যদি এতই সমস্যা হয় তাহলে আপনি গিয়ে বসেন। আমার তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

অনু মাথা টা হালকা উঁচু করে পেছনে তাকিয়ে দেখে সেখানে সব ছেলেরা বসে আছে।
তুর্য ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে ৪ টা ছেলে কে দেখে মুচকি হাসলো।
অনু মুখটাকে গম্ভীর করে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো।

কী যান না কেন পেছনের সিটে? একবার বসলে মজা বুঝতেন। গাড়ির ঝাঁকুনি কাকে বলে।

অনু তুর্যর দিকে মুখ গম্ভীর করে এক পলক তাকিয়ে আবার জানালার বাইরে নজর দিল।

পাহাড়ি রাস্তা পার করে তিন ঘণ্টা পর বাস এসে ফেনীতে পৌঁছেছে।
এক সাইড করে বাস থামিয়ে ড্রাইবার সবাইকে ১০ মিনিটের বিরতি দিয়েছে। কিছু খেয়ে নেওয়ার জন্য।

তুর্য বসা থেকে উঠে অনুর উদ্দেশ্যে বললো কি খাবেন?

সকালে বারি থেকে কিছু না খেয়েই বেরিয়ে আসছে অনু।কারন সকাল ৬ টার দিকে তার খাইতে ইচ্ছা করেনি।আর ক্ষিদা ও ছিল না।
এখন অনেক বেলা হয়ে গেছে।প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে।

কী হলো কিছু বলছেন না যে?কি খাবেন?

খাবো না কিছু। মুখ গম্ভীর করে উত্তর দিল অনু।

তুর্য আর কিছু না বলে বাস থেকে নেমে যায়। তার ও ক্ষিদা লাগছে খুব।
তুর্য বাস থেকে নেমে অনুর জানলার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

শেষ বার জিজ্ঞেস করছি কী খাবেন? নির্ঘাত ভাইয়ের শালী বলে এতো বার জিজ্ঞেস করছি। না হলে আপনাকে এতো বার জিজ্ঞেস করতে আমার বয়েই গেছে।

আমি নিজে গিয়ে কিনে আনতে পারি হুঁ।

হ্যাঁ নামুন না বাস থেকে। তার পর কোনো পকেট মার আপনার সিটে রাখা ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেলে বসে বসে কান্দিয়েন।
বলে তুর্য হাঁটতে থাকে।

একটু শুনুন,,,

অনুর ডাকে তুর্য পেছনে ফিরে তাকায়।

হুম বলুন।

অনু ব্যাগ থেকে ২০০ টাকা বের করে তুর্যর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
আমার জন্য একটা বার্গার সস সহ,চার প্যাকেট তেঁতুলের চাটনি,১টা পানির বোতল,সেন্টার ফ্রুট,আর একটা দই নিয়ে আসিয়েন।

তূর্য অনুর হাতের টাকা গুলোর দিকে তাকিয়ে বললো
আমি ফকির না। আপনাকে এই সব কিছু কিনে দেওয়ার টাকা আমার কাছে আছে। আপনার টাকা আপনার নিজের কাছে রাখুন বলেই তূর্য চলে গেল দোকানের ভেতরে।

ভাব দেখলে বাঁচি না ঢং। আমার কি ঠেকা পড়ছে যে উনার টাকার কিনা কিছু খামু? আগে কিনে নিয়ে আসুক তার পর টাকা দিয়ে দিলেই হবে।

কিছুক্ষণ পর তূর্য অনুর বলা সব কিছু কিনে নিয়ে এসে অনুর হাতে দিল।

অনু জিনিস গুলো নিয়ে তূর্যর দিকে টাকা বারিয়ে দিল।

তূর্যর মেজাজ গেল বিগড়ে।
আপনাকে বলছি না আমার টাকা চাই না।তার পর ও এতো বার সাধচ্ছেন কেন বলুন তো?

দেখুন আমার কাছে টাকা থাকা সত্ত্বেও কেন আমি আপনার টাকায় খাবো?

ট্রিট দিলাম মনে করেন। ভাইয়ের শালী হিসেবে।

তূর্য আর অনুর কথার মাঝে ড্রাইবার এসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। তূর্য সিটে বসতে বসতে বললো আমি জানি আপনি ঘাড় তেরা‌। আপনার ঘাড়ের রগ জন্ম থেকেই বাঁকানো। টাকা গুলো আপনার কাছেই রাখুন আমার প্রয়োজন হলে নিয়ে নিবো।

অনু আর মুখে কিছু বললো না। মনে মনে বললো
আমার ঘাড়ের রগ বাঁকানো শালা খবিস।

তূর্য নিজের জন্য ও একটা বার্গার কিনে নিয়ে এসেছিল। এখন বসে বসে সেটাই সাবার করছে।

তূর্যর খাওয়া দেখে অনুর পেটের ক্ষুধা আর ও বেশি বেড়ে গেছে।তাই সেও বার্গার খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।

তূর্যর খাওয়া শেষ হলে অনুর উদ্দেশ্যে বলে
পানি কি দেওয়া যাবে? আসলে আমি আমার জন্য আনতে ভুলে গেছিলাম।

অনু ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে তূর্যর হাতে দিয়ে বললো
তিন ঢোকের বেশি খাবেন না। মুখ যেনো না লাগে।

আপনার স্কুলের স্বভাব তো দেখি এখন ও যায়নি।অথচ সামনে অনার্সের পরিক্ষা দিবেন।
যা বলছি তাই করেন। এতো কথা বলেন কেন?

তূর্য তিন ঢোক পানি গিলে বোতলটা অনুর হাতে দিল।অনু বোতলে পানির পরিমাণ দেখে দাঁত কটমট করে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো তিন ঢোক গিলতে বলছিলাম।চার ভাগের তিন ভাগ না।

আমি তো তিন ঢোকি খাইছি। বেশি না।
সত্যি বলতেছি।

অনু মুখ ফুলিয়ে বাকি পানি খেয়ে নিল। অসভ্য লোক একটা।

তূর্য আবার ও কানে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে সিটে মাথা হেলিয়ে দিল।অনু সেন্টার ফ্রুট একটা মুখে পুরে জানলার বাইরে তাকিয়ে ব্যাস্ত নগরী দেখছে।

কিছুক্ষণ পর তূর্য কিছু একটা মনে করে অনুর দিকে তাকিয়ে কান থেকে হেডফোন খুলে অনুর উদ্দেশ্যে বললো
আচ্ছা আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে?

তূর্যর কথায় অনুর বুকের মাঝে ধক করে উঠে।আগে যদি কেউ এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতো তাহলে অনু লাফিয়ে লাফিয়ে হ্যাঁ বলে দিতো।আর মাহিরের কেয়ারিং এর প্রশংসা করে যেতো।

আসলে মাহির এতো প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য না।এই যোগ্যতা তার নেই।যা ছিল সব লোক দেখানো।

অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
নেই।

কেন? এতো সুন্দর একটা মেয়ের বয় ফ্রেন্ড থাকবে না বিশ্বাস হচ্ছে না।

নেই মানে নেই। বিশ্বাস করবেন নাকি করবেন না সেটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।

মানলাম আপনার এখন কোনো ভয় ফ্রেন্ড নেই। কিন্তু প্রাক্তন প্রেমিক কি নেই?

ছিল।

ওহ।ব্রেক আপ করছেন কেন? ছেড়ে দিয়েছেন?

ছেড়ে গেছে।

কিসের জন্য?

এতো কিছু জেনে আপনি কি করবেন?

না এমনি জানতে চাইলাম।

অনু আর কিছু বললো না। চুপ করে রইলো।

ঢাকায় গিয়ে কী নতুন ভাবির কাছে যাবেন?

অনু তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল
না। আমার মেসে আমি উঠবো। আপনি যাবেন নাকি?

এখান থেকে গিয়ে ওদের বাড়িতে যাবো।রাত থেকে সকালে নিজের ফ্ল্যাটে চলে যাবো।না হয় এখান থেকে গিয়ে রান্না করতে হবে।

ওহ ভালো। আচ্ছা আপনি কি কাজ করেন?

তূর্য মুচকি হেসে বললো তেমন কিছু না। অন্য একদিন বলবো।

অনু আর কিছু বললো না।

.
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তূর্য আর অনু ঢাকায় এসে পৌঁছায়।বাস থেকে নেমে তূর্য একটু সামনে এগিয়ে যায় কোনো সি এন জি পায় কিনা দেখতে।

অনু কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে পেছনে তাকিয়ে বললো এই সময় একা এখানে না দাঁড়িয়ে থাকলে কি হয় না? আমার সাথে আসলে কি আমি আপনাকে খেয়ে ফেলবো?

অনু মুখ ফুলিয়ে তূর্যর পেছনে পেছনে হাঁটতে থাকে। তূর্য একটু পিছিয়ে অনুর পাশে গিয়ে হাঁটতে থাকে।

আমার সাথে যখন এক গাড়িতেই আসছেন তখন আপনাকে নিরাপদ ভাবে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার আমার দায়িত্ব।তাই পিছু পিছু না হেঁটে পাশাপাশি হাঁটেন।

একটু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ তূর্য একটা সি এন জি ভাড়া করে।

ভাইয়া মিরপুর যাবেন?

হ ভাই যামু।

কিন্তু আমি তো ধানমন্ডি ১১ এ যাবো।

ওহ আচ্ছা। ভাইয়া ধানমন্ডি যাবেন?

ভাড়া বেশি ৫০ টাকা বেশি দিতে হইবো।

আচ্ছা ঠিক আছে।এই যে মিস উঠুন।

অনু উঠে বসে। সাথে তূর্য ও।
.
ধানমন্ডি পৌঁছানোর পর তূর্য সি এন জি থেকে অনুর ব্যাগ বের করে দিয়ে মুচকি হেসে বললো
ভালো থাকবেন।আর একটু হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করবেন। নিজের খেয়াল রাখবেন আসি।
বলে তূর্য পেছনে ফিরে হাঁটা ধরলো।

অনু কিছু একটা ভেবে তূর্য কে ডাক দিল।

এই যে শুনুন,,,

তূর্য পেছনে ফিরে মুচকি হেসে বললো
হুম বলুন।

ধন্যবাদ।

তূর্য মুচকি হেসে বললো
ধন্যবাদের কিছু নেই। এই টা আমার কর্তব্য। আপনাকে নিরাপদ ভাবে পৌঁছে দেওয়া। ভালো থাকুন আল্লাহ হাফেজ।

চলবে,,,, 🍁

#তার_শহরের_মায়া😍
#পার্ট_৯
#Writer_Liza_moni

আটটার দিকে কলিং বেল বেজে উঠায় তনু শোয়া থেকে উঠে এগিয়ে গেল দরজা খুলে দেওয়ার জন্য।

মাহির তো এখন আসবে না।ওর তো ফিরতে দেরী হবে। তাহলে এই সময় আবার কে এলো?

তনু দরজা খুলে সামনে তাকাতেই তূর্য বলে উঠলো
সারপ্রাইজ ভাবি।

আরে তূর্য যে। কেমন আছো?

আলহামদুলিল্লাহ ভাবী আপনি?

আলহামদুলিল্লাহ।আসো, আসো ভেতরে আসো।

তূর্য ভেতরে এসে ড্রইং রুমের সোফায় বসে পরলো। আমি অনেক ক্লান্ত ভাবী।এক গ্লাস পানি দেন। ঠান্ডা কিন্তু।

তনু মুচকি হেসে রান্না ঘরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে এক গ্লাস শরবত গুলে নিয়ে এসে তূর্যর হাতে দেয়।

Thank you so much vabi

তূর্য শরবত টা খেয়ে তনুর উদ্দেশ্যে বললো
ভাইয়া কোথায়?

তোমার ভাইয়া একটু কাজে গেছে বাহিরে। একটু পরেই চলে আসবে।

বউ মা কার সাথে কথা বলছো?কে আসছে বাড়িতে? বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে এগিয়ে আসেন মাহিরের মা।

তূর্য দেখে তিনি খুব খুশি হোন। আরে তূর্য যে কেমন আছো?

আসসালামুয়ালাইকুম মামি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?

ওয়ালাইকুমুস সালাম। হ্যাঁ বাবা ভালো আছি। বাড়ির সবাই কেমন আছে?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো।মামা কোথায়?দেখছি না যে।

তোমার মামার শরীর টা একটু খারাপ লাগছে তাই ঘুমিয়ে গেছে।

ওহ আচ্ছা।

বউ মা তূর্য কে গেস্ট রুমটা দেখিয়ে দাও।ও একটু রেস্ট করুক। অনেক দূর থেকে আসছে।

আচ্ছা মা। তূর্য ভাই আসো আমার সাথে।

তূর্য মুচকি হেসে ব্যাগ নিয়ে তনুর পিছু পিছু চললো।তনু তূর্য কে রুম দেখিয়ে দিয়ে বললো
তুমি ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও কিছুক্ষণ। আমি খাবার গরম করে ডাক দিবো।

আচ্ছা ঠিক আছে ভাবী।

তনু মুচকি হেসে চলে যাওয়ার সময় আবার পেছনে ফিরে মুখটাকে মলিন করে বললো তূর্য ভাইয়া শোনো,,,

তূর্য পেছনে ফিরে মুচকি হেসে বললো হুম বলুন ভাবী।

অনুর তো আজ আসার কথা ছিল। ওকে কি দেখেছিলে আসতে?

হ্যাঁ।অনু আর আমি এক সাথেই আসছি।

ওহ আচ্ছা। তোমার সাথে অনু কে ও নিয়ে আসতে।

উনি আসতে চায় নি।তাই আমি জোর করিনি।

ওহ।কি যে হয়েছে মেয়েটার ? আমার সাথে ও কথা বলছে না।

তনু রুমে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে অনুর নাম্বারে কল দেয়।
অনু তখন ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। ঘুম আসছে খুব। মোবাইলের রিং বেজে উঠায় ভ্রু কুঁচকে মোবাইল টা হাতে নিয়ে তনুর নাম্বার দেখে মুখটা মলিন করে ফোনের দিকে চেয়ে আছে কখন কল কাটবে।কল কেটে যাওয়ার সাথে সাথেই মাকে কল দিলো।

মা কল রিসিভ করতেই অনু বলে উঠলো
তনু আপু কে আমায় আর কল দিতে বারন করবা। এতো দিনে আমাকে মনে না করলেও খুশি হবো। এতো দিন যখন কল দেয়নি এখন ও কল না দিলে আমি কিছু মনে করবো না।

কেন কি হয়েছে?

কিছু না।যেটা বলছি সেটা করো না হলে তুমি ও আমাকে আর ফোন দিবা না।দিলেও আমি ধরবো না।মাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অনু কল কেটে মোবাইল বন্ধ করে বিছানায় ফেলে দিয়ে আবার শুয়ে পরলো।

অনু চায় না তার বোনের সংসারটা ভাঙ্গুক। একটা সংসার মসজিদ সমতুল্য। চাইলেই তা এতো সহজে ভেঙ্গে দেওয়া সম্ভব না। তনুর সাথে কথা বললে তার পুরনো ক্ষত তাজা হয় উঠে।দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো কষ্ট হয়।একা থাকাই ভালো মনে করে অনু।

তূর্য ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। সারাদিন বাসে বসে থাকতে থাকতে পিঠ ব্যথা করছে তার। বিছানায় শুয়েই যেন স্বর্গের শান্তি অনুভব হলো।

অনুর নাম্বারে আবার ও কল দিলে বন্ধ পায় তনু।
হঠাৎ করে অনুর কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।তনু কল করায় অনু যে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে সে।অনুর এমন এভয়েড করা মানতে পারছে না তনু। নিজের অজান্তেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। ছোট একটাই বোন তার।আর কোনো ভাই বোন নেই। ভীষণ ভালোবাসে অনু কে সে। হঠাৎ করে মেয়েটার এমন পরিবর্তন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না তনু।

কলিং বেল বেজে উঠলো আবার।তনু জলদি করে চোখের পানি মুছে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা খুলে দিল।
মাহির তনু কে দেখে মুচকি হাসলো।তনু কে হালকা জড়িয়ে ধরে বললো কী হয়েছে জানটা?
মন খারাপ যে?

তনু মুচকি হাসার চেষ্টা করে বললো কই কিছু হয়নি তো। এমনিতেই ভালো লাগছিল না।

মাহির রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তনুর উদ্দেশ্যে বললো এক গ্লাস পানি দাও না।

এখনই আনছি।তনু গিয়ে মাহিরের জন্য পানি নিয়ে আসে।মাহিরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
এই নিন ।

মাহির পানির গ্লাস টা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে খেয়ে নিল।(শয়তান তো পানি এক নিঃশ্বাসেই খায়😅)

তূর্য ভাইয়া এসেছেন।

তাই নাকি । কখন আসলো?

এই তো কিছুক্ষণ আগেই।

দেখা করে আসি।

এখন না। আগে আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন। তার পর দেখা করেন আর গল্প করেন কিচ্ছু বলবো না।

আচ্ছা ঠিক আছে। বউয়ের আদেশ তো মানতেই হবে।

তনু মুচকি হেসে রান্না ঘরে চলে গেল। খাবার গরম করতে।

মাহির ফ্রেশ হয়ে এসে গেস্ট রুমের দিকে চলে যায়।
তূর্য কে শুয়ে থাকতে দেখে বললো
কীরে ব্যাটা কখন আসলি? আমাকে একটু জানালি ও না?

তূর্য শোয়া থেকে উঠে বসলো। এমনিতেই জানাইনি। আজকে আসবো সেটা ও তো জানতাম না।

মাহির বিছানায় গিয়ে বসে বললো
জানতি না কেন?

আমার ছুটি শেষ হবার কথা আর ও পরে ছিল। কিন্তু অফিস থেকে হরতাল ফোন দিয়ে আজকেই আসতে বললো।

ও আচ্ছা।আর কেউ আসেনি তোর সাথে?

আসছে তো।

কে?

অনু তোর শালি। আমি আর অনু এক সাথেই পাশাপাশি সিটে বসে আসছি।মিরাকেল।

কথা গুলো মাহিরের করেন কুহরে পৌঁছাতেই মাহিরের বুকে ধক করে উঠলো।

অনু আসছে এখানে?

না। তোর শালিকে কতো বার যে বলছি কিন্তু আসেনি।(মিছা কথা। তূর্য খালি একবার জিজ্ঞেস করেছিলো অনু কে।কতো বড় মিথ্যুক দেখছো🤭)

ওহ আচ্ছা।

তূর্য ভাইয়া কে নিয়ে খেতে আসেন।ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে কথা টা বলে উঠলো তনু।

আয়। খাবার খাওয়ার জন্য বাক পড়ছে।
তূর্য মুচকি হেসে মাহিরের সাথে চলে গেল ডিনার করতে।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে অনু মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে বন্ধ। রাতের কথা মনে পড়তেই ভ্রু কুঁচকে মোবাইল অন করে সময় দেখে নিলো।৮টা ৪৫ বাজে।১০টার দিকে ভার্সিটিতে যেতে হবে।কাল রাতে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল। এখন খুব ক্ষিদা ও লাগছে তার।
শোয়া থেকে উঠে আড়মোরা ভেঙ্গে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
অনু যে মেসে থাকে সেখানে নিজের রান্না নিজেকে করতে হয়। এই জন্য অনুর একদম ভাল্লাগে না। কখন যে পরিক্ষা শেষ হবে সে চিন্তা করছে সে।

ফ্রেশ হয়ে এসে ওড়না ভালো করে গায়ে দিয়ে মেসের সামনে একটা মুদির দোকান আছে সেখানে যায় সে। এতো দিন না থাকায় রান্না করার জন্য কিছুই নেই।
দোকান থেকে ৪ টা ডিম,২কেজি ময়দা, ৫০ টাকার চা পাতা আর দুধের গুঁড়ো কিনে নিয়ে গেলো সে।আপাতত সকালের জন্য এই গুলো হলেই হবে। ভার্সিটি থেকে আসার সময় না হয় বাজার করে নিয়ে আসবে।

অনু মেসে গিয়ে কোমরে ওড়না গুঁজে নিয়ে পরোটা আর ডিম ভাজি করে বানিয়ে নিলো। তার পর চা বানিয়ে খাওয়া শুরু করে দিল।

খাওয়া শেষ হলে সব কিছু পরিষ্কার করে ধুয়ে রেখে কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেল গোসল করে নেওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে তৈরি হয়ে নিল সে।মেস থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে এসে দাঁড়াল রিক্সার জন্য।
.
তূর্য সকালের নাস্তা করে তার গন্তব্যে রওনা দিল অনুর আগেই।

অনু অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করার পর একটা রিক্সা পেলো।সেটাতে উঠে পড়লো সে।১০টা২০ এর দিকে ভার্সিটিতে এসে পৌঁছায় অনু।
ভার্সিটির ওখানে একটা বাদাম গাছের নিচে তার বন্ধু রুপি শয়তান গুলো কে দেখতে পেয়ে অনু ডোন্ট কেয়ার ভাব করে ক্লাস রুমের দিকে এগিয়ে যায়।অনু কে দেখতে পেয়ে রিফা,শাকিল,কেয়া,শুভ এগিয়ে আসে।

অনু দোস্ত দাঁড়া। অসহায় কন্ঠে বললো রিফা।

অনু বোন আমাদের কথা একটু শোন।

অনু পেছন ফিরে ও তাকায় না। সোজা ক্লাসে গিয়ে বসে পড়ে ।
সবাই ওর পিছনে পিছনে আসলে ও অনু পাত্তা দেয় না।

চলবে,,, 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here