তার শহরের মায়া 😍,পার্ট_৫,বোনাস_পার্ট
#writer_Liza_moni
পার্ট_৫
তুর্য ভাই তোর জন্য এমন মেয়ে গুগলে সার্চ দিয়ে খুঁজে দেখতে হবে।
তুর্য মুচকি হেসে বললো
গুগলে সার্চ দিয়ে খুঁজে দেখতে হবে কেন রে জিয়ান? হতে ও তো পারে এমন মেয়ে আমার আশেপাশেই আছে। শুধু একটু খুঁজে বের করতে হবে এই আর কি।
শুন আজকালকার মেয়েদের মন পাওয়া এতো সহজ না যে মেয়েদের মন ভেঙ্গে দিয়ে চলে যেতে পারে কেউ।
হাসাইলি,,
মেয়েদের মন পাওয়া এতো কঠিন ব্যাপার ও না। খুঁজলে এমন মানুষের অভাব পরবে না।
তাও ঠিক।
তুর্য বসা থেকে উঠে জিয়ানের পিঠে চাপড় মেরে বললো
খুঁজে দেখ, তোর এই সিঙ্গেল বন্ধু কে মিঙ্গেল করারদায়িত্ব তোর।
.
তনু আর মাহির কে তনুদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চান তনুর আব্বু আম্মু।কারন আগামীকাল রাতে মাহিরের পরিবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।মাহিরের অফিস শুরু হবে তিন দিন পর থেকে।তাই তনু তৈরি হচ্ছে। মাহির তৈরি হয়ে বিছানায় বসে বসে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। তনুর দিকে তাকিয়ে থাকলেও মন তার অন্য চিন্তা করছে।
অনুর সাথে যেই অন্যায় টা সে করেছে এর জন্য অনুর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু অনু যে বলে ছিল মহান আল্লাহ ও আমাকে ক্ষমা করবেন না। ওতো আমাকে কোনো দিন ও ক্ষমা করবে না। আমি তনু কে হারাতে চাই না একদম না।
তনু মাহিরের কাঁধে হাত রেখে বললো
কী এতো ভাবছেন বলুন তো?
মাহির নিজেকে স্বাভাবিক করে তনুর উদ্দেশ্যে বললো
আমার বউ আমাকে এখনো আপনি করে বলছে।কী করে তাকে তুমি বলা শিখানো যায় সেটাই ভাবছি।
তনু মুচকি হেসে বললো
কিছু শিখতে হবে না।সময় হলে আমি নিজেই তুমি করে বলবো। একটু তো সময় লাগবেই।
.
অনু মা একটু তনুর রুমে গিয়ে দেখে আয় তো এতো দেরি করছে কেন? একটু পরেই মাগরিবের আজান দিবে তোর আব্বু তাড়া দিচ্ছে। একটু যা না মা।
অনু সোফায় গালে হাত দিয়ে বসে ছিল। মায়ের কথায় ভ্রু কুঁচকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো যাচ্ছি।
তনুর রুমের দিকে যাওয়ার সময় মাহিরের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল।পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকার সময় বিড়বিড় করে বললো যাকে দেখতে চাই না সেই খালি চোখের সামনে ঘুরঘুর করে। যত্তসব আউল ফাউল লোক।
অনুর কথা মাহির শুনতে পেলে ও কিছু না বলে চুপ করে চলে গেল।
কী রে বইন তোর এখন ও তৈরি হওয়া শেষ হয়নি?
হয়েছে তো। আমি এখনই বের হতাম।
অনু তনুর হাত থেকে লাগিজ টা নিয়ে বললো চল।এটা আমি নিলাম।
তনু মুচকি হেসে গাড়ির কাছে চলে গেল।
সবার জোড়া জুড়িতে তুর্য কে ও যেতে হচ্ছে অনুদের বাসায়।
.
অনুদের বাসায় এসে পৌঁছায় রাত ৯ টার দিকে।তনুর কাকিরা সবাই তনু কে আর মাহির কে দেখে খুব খুশি। তনুর শ্বশুর বাড়ির লোকজন আসবে শুনে তারা রান্না করে রেখেছেন।
সবাইকে নাস্তা দিয়ে অনু নিজের রুমের দিকে দৌড় দিল। গরমে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে তার।
এখন একটা গোসল না দিলে আমি শেষ। কাভার্ড থেকে একটা টপস আর স্কার্ট নিয়ে ওয়াস রুমে চলে
গেল।
তনু আর মাহির তনুর রুমে চলে গেল। মাহির রুমে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
আরে ফ্রেশ না হয়েই শুয়ে পড়ছো কেন?
কী বললা আরেক বার বলো তো।
একবার বলছি যে শুনতে পাও নাই আবার বলতে হবে?
মাহির দুষ্টু হেসে তনুর শাড়ির আঁচলটা ধরে টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
আমার না প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
ধেত ছাড়ুন তো। এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে আসেন।
মাহির মুখটা কে পিচ্চি বাবুর মতো করে উঠে ওয়াস রুমে চলে গেল। তনু মাহিরের মুখের ভঙ্গিমা দেখে হেসে ফেললো।
.
তুর্য সোফায় বসে ফোন টিপছে।
বাবা তুমি এখানে বসে আছো যে? গেস্ট রুম দেখিয়ে দেয় নি কেউ?
তুর্য মুচকি হেসে বলল
ঠিক আছে আন্টি।পরে দেখিয়ে দিলে ও সমস্যা নেই।
অনু গোসল করে বের হয়ে আসে রুম থেকে।অনু কে দেখতে পেয়ে অনুর মা বলে
তুর্য বাবাকে গেস্ট রুম টা দেখিয়ে দিয়ে আয়।
অনু বিরক্ত হয়ে বললো
আসুন আমার সাথে।
তুর্য বসা থেকে উঠে মোবাইল টা পকেটে ঢুকিয়ে অনুর পিছনে হাঁটতে থাকে।
অনু একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে দিল। মুখে কিচ্ছু বললো না। মায়ের কাছে চলে গেল।
তুর্য অনুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। মুখে বললে কি এমন ক্ষতি হতো কে জানে। এতো ভাব বাপরে।
.
খাইতে অনুর একদম ইচ্ছে করছে না। মাহির কে আসতে দেখে অনু চিল্লিয়ে বললো
আম্মু আমার খুব খুদা লাগছে। খাইতে দাও না কেন?
মাহির পথেই দাঁড়িয়ে গেল। হালকা ঝগড়া হলে মে মেয়ের গলা দিয়ে খাবার নামতো না এতো কিছুর পর সেই মেয়ে বলছে কিনা তার খুদা লাগছে?কতো পরিবর্তন।
বাড়িতে মেহমান আছে। এতো জোরে চিল্লাস কেন?
খুদা লাগছে তো কি করতাম?🥺
দেখবো আমি তুই কতো গুলো খাবার খাস।
আমি তো এখানেই খাবো না। আমার রুমে খাবো 😁।
পাগলী মেয়ে আমার।মা অনু কে এক প্লেট ভাত বেড়ে দিয়ে চলে গেলেন রান্নাঘরে।
মাহির চোখ গোল গোল করে অনুর প্লেটের দিকে তাকিয়ে রইলো।বড় একটা মাছের পিস। মুরগির মাংস।ডিম। সবজি।সালাত আর পোলাউ।
অনু প্লেট নিয়ে রুমে যাওয়ার সময় মাহিরের দিকে দাঁত কেলিয়ে বললো যার তার জন্য এখন আমি আর খাবারের উপর রাগ দেখাই না। গিরগিটির জন্য তো একদমই না।
অনু ভাব নিয়ে রুমে চলে গেল।প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে আবার রান্নাঘরের দিকে চলে গেল অনু।
মাহির যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।
অনু রান্না ঘরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে একটা 7 আপের বোতল বের করে শিস দিতে দিতে রুমে চলে গেল।
মে মেয়েটা আজ দুপুরে ও পাগলের মত কান্না করছিলো সেই মেয়েটা এখন এতো সহজে হাসতে শিখে গেলো।
তনু রুম থেকে বের হয়ে মাহির কে অনুর রুমের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো
আমার বোন শান্ত থাকলে খুব শান্ত।আর দুষ্টুমি শুরু করলে ভীষন দুষ্টু।
তনুর কথায় মাহির হকচকিয়ে উঠলো। নিজেকে ধাতস্থ করে বললো হুম দেখতে পারছি।
.
অনু ভাত নিয়ে এসে ঢেকে রাখলো। খাইতে ইচ্ছা করছে না তার। শুধু মাহিরের সামনে ভেঙ্গে পড়তে চায় না বলেই এতো কিছু করলো।
7 আপের বোতলের ছিপি খুলে দুই ঢোক খেয়ে রেখে দিলো। দরজা বন্ধ করে ইয়ার ফোনটা কানে লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুইয়ে পড়লো।
মোবাইলে একটা গান প্লে করে দিলো।
“মন টা আমার ভীষণ খারাপ চার দেয়ালে বন্দী।
ইচ্ছে নেই আর করতে নতুন ভালো থাকার সন্ধি।
আমার আমি যেমন আছি তেমন আছি ভালো।
তোমাদের রং অনেক রঙিন, আমার প্রিয় কালো।”
মাহিরের দেওয়া প্রত্যেকটা মেসেজ পড়ছে অনু। চোখের কোনা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে বালিশে।
যতই সবার সামনে ভালো থাকার চেষ্টা করুক না কেন এই বন্ধ ঘরে আসলে আবার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় অনু। অতীতের সব মিথ্যা মায়া আগলে ধরে তাকে।
“ওয়ে কাজল চোখের মেয়ে
তোমার ঐ কাজল কালো চোখে যে আমি খুন হয়ে গেছি। তোমার মিষ্টি ও ঠোঁট দুটো আলতো করে ছুঁয়ে দেখতে চাই। সেই অধিকার দিবে আমায়?সারা জীবন তোমাকে ভালোবাসার অধিকার কী দিবে আমায়?”
“প্রিয়সী ভালোবাসি তোমায়। অনেক বেশি ভালোবাসি।”
মানুষ কতো সুন্দর নিখুঁত অভিনয় করতে পারে ছি। আচ্ছা মাহির আমার সাথে এমন করে কি লাভ হলো তোমার?
.
রাত তখন প্রায় ১টা। ঘুম আসছে না অনুর।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। খাবার টেবিলেই রয়ে গেছে। খায়নি অনু। মোবাইল টা হাতে নিয়ে ছাদে চলে গেল। এই নিস্তব্ধ পরিবেশে একটু ও ভয় হচ্ছে না অনুর।
ছাদের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই চাঁদের আলোয় চোখে পড়লো দুজন মানুষ কে।
ছাদের দোলনায় দোল খাচ্ছে তাঁরা।দোলনাটা অনুর পছন্দে লাগানো হয়েছে।
আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখলো মাহিরের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে তনু। মাহির তনুর পেট জড়িয়ে ধরে আছে।
অনুর বুকের মাঝে ধক করে উঠলো। এমন একটা রাতের স্বপ্ন মাহির তাকে দেখিয়ে ছিল।সব কিছুই মাহির পূরন করছে শুধু মানুষটা অনু নয়।
চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে।অনু নীরবে সেখান থেকে চলে গেল।
পানি খাওয়ার জন্য উঠে আসছিলো তুর্য।অনু কে কান্না করতে দেখে মুচকি হেসে পানি খেয়ে রুমে চলে গেল তুর্য।
চলবে,,, 🍁
#তার_শহরের_মায়া 😍
#বোনাস_পার্ট
#Writer_Liza_moni
কতো কথা বলা বাকি ছিল তারে
হয়নি বলা আজও।
আর কোনো দিন হবে ও না বলা।
সেতো জেনে ও জানে না
তারি আমি ভালোবাসি কতো।
গভীর রাত সবাই ঘুমে মগ্ন।বেলকনিতে দাঁড়িয়ে অদূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অনু।শিতল বাতাস বয়ে গেলো তারে ছুঁয়ে। হালকা বাতাসে চুল গুলো নড়েচড়ে খেলছে।অনু উদাসীন ভাবে তাকিয়ে আছে। ঘুম নেই তার চোখে। মেঘ এসে হঠাৎ চাঁদ কে ঢেকে দিলো। আকাশে মেঘ জমতে লাগলো হঠাৎ। চার দিক থেকে শো শো করে বাতাস বইতে শুরু করে দেয়। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির পানি ছিটকে এসে অনুর হাত, মুখে আঁচড়ে পড়ছে।আজ যেনো কোনো অনুভূতি অনুকে ধরতে পারলো না।
অনু দাঁড়িয়ে রইলো চুপ করে। আকাশে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। বজ্রপাতের শব্দে যেই মেয়েটার ভয়ে জ্বর চলে আসে সেই মেয়েটা এখন দিব্বি সেই বজ্রপাতের শব্দ উপভোগ করছে।
হঠাৎই সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো সেখানে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে আমি ভালো নেই মাহির আমি ভালো নেই।মরে যাচ্ছি মাহির আমি মরে যাচ্ছি। তোমারে ছাড়া থাকতে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মাহির ভীষণ মারাত্মক ভাবে পুড়ে যাচ্ছে আমার হৃদয়। কথা দিয়ে কথা রাখেনি সে।
.
বৃষ্টি পড়ায় শীত করছে মাহিরের। মাহির তনু কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আয়েশ করে ঘুমাচ্ছে।তনু ও মাহিরের বুকের উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
ফজরের আজান দিতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় অনুর। ঘন্টা খানেক হবে হালকা ঘুম এসে ভীড় করেছিল তার চোখে। ঘুম ভেঙ্গে নিজেকে বেলকনিতে আবিষ্কার করলো।
অনু বসা থেকে উঠে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে নামাজের অযু করে বের হয়ে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে পড়লো।
মোনাজাতে আল্লাহর কাছে মনের সব কষ্ট তুলে ধরলো অনু। নামাজ পড়ে উঠে জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে আবার বেলকনিতে গেলো সকালের আলো ফুটেছে কিনা দেখতে।
চার দিকে আলো ছড়াচ্ছে সবে।অনু ছাদে চলে গেল তার ফুল গাছ গুলো দেখতে। পড়ালেখার জন্য ঢাকায় থাকতো সে।তাই তার সব সাধের গাছ গুলোর যত্ন তনুই নিতো।
বৃষ্টি পড়ায় চার দিক সতেজ হয়ে আছে। সকালের ঠান্ডা বাতাস অনুর শরীর জুড়ে বয়ে গেল।অনু চোখ বন্ধ করে উপভোগ করলো তা।
যতই যন্ত্রণা থাকুক না কেন মনে নামাজ পড়ে নিলে এক আলাদা শান্তি লাগে। নামাজে বসে মোনাজাতে নিজের কষ্টের কথা আল্লাহ কে মন খুলে বললে মনটা যেন অনেক হালকা লাগে।
বেলি ফুলের গন্ধে পুরো ছাদ মৌ মৌ করছে।অনু বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলো।
অনু ছাদের রেলিং এর সাথে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাত ভাঁজ করে আকাশের দিকে তাকালো।
কে বলেছে জীবন রঙহিন? আমি তো দেখছি জীবনকে উপভোগ করতে জানলে জীবন সত্যি সুন্দর। ভুল মানুষকে ভালোবেসে ফেললেই কী তিল তিল করে নিজেকে শেষ করে দিতে হবে বলে কোনো কথা আছে?
ভুল থেকেই না হয় শিক্ষা নিলাম ।জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথ চিনলাম। ভুল মানুষের জন্য জীবন নষ্ট করার কোনো কথাই হয় না। জীবন সুন্দর। আল্লাহ তা করেন ভালোর জন্যই করেন এই বিশ্বাস আছে আমার। হয়তো প্রথমে মেনে নিতে কষ্ট হয় তবে সময়ের ব্যবধানে সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। শুরু হবে এক নতুন অধ্যায় আমার জীবনে।
তুর্য ঘুম থেকে উঠে ছাদে চলে আসলো। ঘুম থেকে ছাদে আসা তার নিত্য দিনের অভ্যাস। সেটা নিজের বাড়ির ছাদ হোক বা অন্যের বাড়ির।
আড়মোরা ভেঙ্গে হাই তুলে সামনে তাকাতেই অনুকে দেখতে পেল পিছন ফিরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তুর্য পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে মুচকি মুচকি হাসছে।
তুর্য দুষ্টুমি করে বললো
কি বেয়াইন প্রেমে পড়েছেন নাকি? এমন মুচকি মুচকি হাসছেন কেন?একা একা মুচকি মুচকি হাসা কিন্তু প্রেমের লক্ষন।
তুর্যর কথায় অনু ভ্রু কুঁচকে পাশে তাকালো। খুব ভালো একটা মুডে ছিল অনু। সকাল সকাল পাশে একটা ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেজাজ বিগড়ে গেলো তার। দাঁড়িয়েছে তো ভালো কথা কিন্তু কথা শুরু করলো কী প্রেম দিয়ে।
সকাল সকাল এখানে কী করেন আপনি?
তুর্য মুচকি হেসে বললো
সকালের মিষ্টি বাতাস না খাইলে আমার সারা দিন ভালো কাটে না তাই ঘুম ভাঙ্গতেই হাওয়া খাইতে চলে আসলাম ছাদে।
আসছেন তো ভালো কথা আমার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে হওয়া খাইলে কি হতো না?বাই দা ওয়ে হাওয়া আবার খাওয়া যায় নাকি?
অনুভব করা যায় এই আর কি।তো মুচকি মুচকি হাসছিলেন কেন? গতকাল কী বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হইছিলো বলে মন খারাপ ছিল?আর আজ কী সব ঠিক হয়ে গেছে?
অনু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো
সে চলে গেছে সারা জীবনের জন্য আমার কাছ থেকে। অনেক দূরে।ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। কোনো দিন ও ফিরে আসবে না।
কেন ফিরে আসবে না?সে কোথায় গেছে?
উফফ আপনাকে এতো কথা বলতে যাবো কেন? এতো কথা জেনে আপনি কি করবেন?
না কিছু করবো না এমনিতেই জানতে চেয়ে ছিলাম।
অনু বিরক্ত হয়ে আর কিছু না বলে নিচে নেমে গেল।
তুর্য মুচকি হেসে অনুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।(বুঝি না তুর্য এতো মুচকি হাসে কেন?)
এদের জ্বালায় একটু একা ও থাকতে পারবো না উফফ অসহ্যকর।
অনু রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
.
তনুর ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর নিজেকে মাহিরের বুকের মাঝে দেখে মুচকি হাসলো। এক হাত দিয়ে মাহিরের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে ধীর গলায় ডাকে বলল
এই যে মিস্টার শুনছো আমাকে কি ছাড় দিবা?
মাহির একটু নড়েচড়ে উঠলো।তনুকে আরেকটু নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো
কয়টা বাজে বউ?
তনু মুচকি হেসে বললো
আমাকে না ছাড়লে কেমনে বলবো কয়টা বাজে?
মাহির তনু কে হালকা করে ছেড়ে দিলো পুরো পুরি ছাড়লো না।তনু পাশের টেবিল থেকে মোবাইল নিয়ে সময় দেখে বললো
৭ টা বাজে। এতো বেলা হয়ে গেছে ইসস।
মাহির তনুকে আবার ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো ওতো বেলা হয়নি মাত্র ৭টা বাজে।
তুমি কি এটা ঢাকা শহর পাইছো হুম?
ছাড়ো তো আমাকে।সবাই কী ভাববে বলো তো? আমাকে ছেড়ে দিয়ে তুমি ঘুমাও।
মাহির বিরক্ত হয়ে তনু কে ছেড়ে দিল।পাশ ফিরে আবার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
তনু বিছানা থেকে নেমে চুল গুলো কে হাত খোঁপা করে বেঁধে হাই তুলতে তুলতে ওয়াস রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
.
অনু বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেনের দিকে তাকিয়ে আছে। চার দিন পর তার ভার্সিটিতে যেতে হবে। ছুটি শেষ হয়ে যাবে। সামনে পরীক্ষা আছে।মাথা থেকে মাহিরের চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। না হলে এতো বছরের কষ্ট বৃথা যাবে।
সকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য ডাক পড়লে রুম থেকে বের হয়ে আসে অনু। রাতে খাবার না খাওয়ায় এখন খুব ক্ষিদা লাগছে তার। খাবার টেবিলে বসে সবার আগে গরম গরম লুচি আর গরুর মাংস ভুনা খেয়ে পেট তাজা করে নিলো অনু।
এক গ্লাস পানি পান করে একটা ঢেকুর তুলে সোফায় গিয়ে বসল সে।
তুর্য দরজার সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে শেষ অনুর খাওয়া দেখে।
এই ভেবে মনে শান্তি লাগছে যে অনু এতো দিনে একটু স্বাভাবিক হয়েছে।আর এখন পেট পুরে খেয়েছে।
অনু সোফায় বসে টিভি অন করে কার্টুন দেখতে শুরু করে দিল। টম এন্ড জেরি দেখতে তার খুব ভাল্লাগে।
অনুর এতো বারন করার সত্তেও তুর্য শয়তানি হেসে অনুর পাশে গিয়ে বসে পড়লো।
তুর্য কে নিজের পাশে বসতে দেখে রেগে গেলো অনু।তাই রাগ করে টিভি অফ করে গটগট করে রুমে চলে গেল।
তুর্য হাসতে হাসতে শেষ। এই মেয়েটাকে রাগাতে তার খুব ভাল্লাগে। অতিরিক্ত ভাল্লাগে।
চলবে,,, 🍁