এই তুমিটা আমার❤,পর্ব:০৭,↑৮
মাহিয়া_মেরিন
পর্ব:০৭
আজকের আবহাওয়াটা বেশ সুন্দর। হালকা শীতল এক বাতাস চারদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে।। আকাশেও মেঘ জমে আছে,,,হয়তো বৃষ্টি হবে। শুভ্র আমাকে নিয়ে কাছেই একটা পার্কে এসে বসলো। দুজন পাশাপাশি বসে আছি,,,কারো মুখেই কোন কথা নেই। মৃদু বাতাসের ঝাপটা আমার খোলা চুলগুলো বারবার এলোমেলো করে দিচ্ছে।।
–আজকের আবহাওয়াটা সুন্দর। তাই না??(শুভ্র)
–হ্যা। সত্যিই খুব সুন্দর।
–হয়তো বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি ভালো লাগে তোমার??
–অবশ্যই। বৃষ্টিতে ভিজতেও খুব ভালো লাগে। যদিও বাবা একটু রাগ করে,,তবুও মাঝে মাঝেই আমি আর ভাবি দুজন মিলে বৃষ্টিতে ভিজি।
–((হালকা হেসে)) পরে নিশ্চয়ই অসুস্থ হয়ে পড়,,তাই তো??
কিছু বললাম না শুধু মুচকি হাসলাম।।
–বৃষ্টিতে না ভিজেও কিন্তু বৃষ্টি অনুভব করা যায়।।
–কিভাবে?? (অবাক হয়ে)
–((আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে)) বৃষ্টির সময়,,,জানালা দিয়ে বা বারান্দায় বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বৃষ্টির প্রতিটা ফোটা মন থেকে উপভোগ করা,,ভালো লাগার কিছু মুহূর্ত স্মৃতিচারণ করা,,,আর তার সাথে প্রিয় কোন গান/কবিতা শোনা।। আমি এভাবেই বৃষ্টি বিলাস করি।
–((মন দিয়ে শুভ্রর কথাগুলো শুনছিলাম)) তাহলে আমিও একদিন এভাবে বৃষ্টি বিলাস করবো।
–((মুচকি হেসে))হুম।।
আবারো দুজনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ নীরবতার পর…
–ফুচকা খাবে?? (শুভ্র)
–আ…আচ্ছা।
–সামনেই একটা ফুচকা স্টল আছে। চলো সেখানে যাই।
–চলো।
শুভ্র আর আমি পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছি। মনের ভেতর একটা অজানা ভালো লাগা কাজ করছে।। প্রিয় মানুষটার পাশাপাশি একসাথে হেঁটে যাওয়ার মাঝেও একটা প্রশান্তি পাওয়া যায়।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম,,,কেউ কেউ তাদের প্রিয় মানুষের হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে,,তো কেউ কেউ প্রিয় মানুষটার কাধে মাথা রেখে বসে গল্প করছে। সবাই হয়তো আজকের এই সুন্দর আবহাওয়া উপভোগ করতেই এসেছে। শুভ্রর দিকে একবার তাকিয়ে দেখি সে নিচের দিকে তাকিয়েই হেঁটে যাচ্ছে,,হঠাত চোখাচোখি হয়ে গেলে দুজনেই চোখ নামিয়ে ফেলি।
ফুচকা স্টলে এসে শুভ্র দুই প্লেট ফুচকা দিতে বললো। দুজন পাশাপাশি একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম। একটু পর একটা ছেলে এসে দুই প্লেট ফুচকা দিয়ে গেলো।
–তুমি কি প্রায়ই এখানে আসো??
–আসলে,,,,কিছুদিন হলো আমি পরিবার নিয়ে ময়মনসিংহ এসেছি। আগে অবশ্য এখানেই থাকতাম,,বাবা মারা যাওয়ার পর কুমিল্লা চলে গিয়েছিলাম। এতোগুলো বছর পর,,মায়ের জোরাজুরিতে আবার এখানেই ফিরে আসা।(শুভ্র)
–ওহ আচ্ছা।।
–হুম।। তুমি খাচ্ছো না কেনো?? কোন সমস্যা??
–আরে না,,সমস্যা নেই। আসলে,,আমি তেমন ফুচকা খেতে পছন্দ করি না।।
–কিহহ!!! সিরিয়াসলি?? তুমি আমার দেখা প্রথম কোন মেয়ে,,যে কিনা ফুচকা পছন্দ করে না।।
কথাটা শুনে শুধু মুচকি হাসলাম। হঠাত শুভ্রর ফোনটা বেজে উঠলো।। শুভ্র ফোন রিসিভ করে কিছু কথা বললো। ওপাশ থেকে কি বললো জানি না তবে শুভ্রর কথা শুনে বুঝতে পারলাম জরুরি কিছু হয়েছে।। শুভ্র ফোন রেখে আমার দিকে তাকিয়ে…
–মাহি।। আসলে হাসপাতাল থেকে কল এসেছে,,আমাকে ইমার্জেন্সি যেতে বললো। আমি অনেক সরি আসলে…..।(শুভ্র)
–আরে না না। সরি বলতে হবে না। তুমি যাও।
–হুম। চলো তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাবো।(শুভ্র)
–আমি একা যেতে পারবো। তুমি চিন্তা করো না।
–কোন কথা শুনতে চাই না। চলো।।(শুভ্র)
অবশেষে শুভ্রর কথায় রাজি হয়ে যাই। সে আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে হাসপাতালে চলে গেলো। আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে খাটে বসে আজ সারাদিনের কথা ভাবছি।। বারবার শুভ্রর পাশাপাশি হেঁটে যাওয়ার মুহূর্তটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে,,,তার আঁড়চোখে তাকানোর পর যখন চোখাচোখি হয়ে যায় তখন লজ্জা মাখা মুখে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকাটা আমাকে মাতাল করে দিচ্ছে।।
ধুরর!!! আমি শুভ্রকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে নিশ্চিত একদিন পাগল হয়ে যাবো।।
🍁🍁রাতে…..
খুব মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছি। হঠাত করেই বাহিরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। জানালা দিয়ে এক ধ্যানে বৃষ্টি দেখছি,,,ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি লেগে আছে।। মনে পড়ে গেল,,,সকালে শুভ্রর বলা কথাগুলো।। মন বারবার আজানায় হারিয়ে যাচ্ছে।। শুভ্রর বলা কথাগুলোর মাঝে হারিয়ে যাচ্ছি।।। মনের ভেতর ভালো লাগার সেই গান বেজে উঠছে…
🎶🎶খেয়ালী স্বপ্নে বিভোর,,দুনয়ন
জড়িয়ে রাখে প্রেমে,,আবরণ।
আনমন আহবান,,অবাক শিহরণ
করছে প্রাণে,,ভেতর বিচরণ।
আনমন আহবান,,অবাক শিহরণ
করছে প্রাণে,,ভেতর বিচরণ।।
বইয়ের পাতায় ডুবছে না যে মন
চোখেয় ভাষায় কাঁদছে সারাক্ষণ।
সামনে এলে মন বলছে এখন
তোমায় পাওয়া বড় প্রয়োজন।।
বলো তুমি কি আমার হবে…
বলো রাখবে কি অনুভবে??🎶🎶
বৃষ্টি আর গানের তালে তালে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি।।। মনর ভেতর অজানা এক ভালো লাগার অনুভূতি বাসা বেঁধেছে।।।
🍁পরদিন…
মেঘলা দিনে খিচুড়ি খাওয়ার মজাই আলাদা। তাই সকাল থেকেই ভাবি আর আমি দুজন মিলে খিচুড়ি রান্না করেছি। জীবনে প্রথম বারের মতো রান্না করলাম😑।।।
–মিহু,,,এতো কষ্ট করে রান্না করলে,,,তোমার শুভ্রকে দিবে না??(ভাবি)
–((অবাক হয়ে)) তাকে কিভাবে দিবো??
–আরে,,মাথা মোটা।। ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করো সে কোথায় আছে।(ভাবি)
–আচ্ছা।।
ভাবির কথামত ফোন দিলাম শুভ্রকে। কয়েকবার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ করলো।।
–হ্যালো শুভ্র।।।
–হ্যা মাহি,,,বলো।।(শুভ্র)
–কোথায় আছো তুমি??
–আমি?? হাসপাতালেই আছি।। কেনো??
–((ভাবিকে ইশারায় বোঝালাম শুভ্র হাসপাতালেই আছে। ভাবিও কিছু একটা ইশারা দিয়ে বুঝালো)) আচ্ছা।।আমি আসছি।
–((অবাক হয়ে)) তুমি এখানে আসবে?? হঠাত??
–হুম,,সারপ্রাইজ আছে।।
–((অবাক হয়ে)) আচ্ছা।। আসো তাহলে।।
শুভ্রর সাথে কথা বলে ফোন রাখতেই ভাবি একটা টিফিন বক্স আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে।।
–তারাতারি গিয়ে দিয়ে আসো।।(ভাবি)
–কিন্তু ভাবি,,,বাবাকে কি বলে যাবো?? আর ভাইয়াও তো বাসায় আছে।
–আরে। আমি আছি তো,,,সব সামলে নিবো। তুমি যাও।
–((খুশি হয়ে ভাবিকে জড়িয়ে ধরে)) আমি রেডি হয়ে আসছি।।
হাসপাতালের ভেতর প্রবেশ করে শুভ্রর কেবিনে গিয়ে দেখি কেউ নেই। কল দেওয়ার পর শুভ্র কেবিনে একটু অপেক্ষা করতে বললো। কিছুক্ষণ পর শুভ্র কেবিনে প্রবেশ করে…
–সরি একটু দেরি হলো।।
–না,,ঠিক আছে। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
–ওহ হ্যা।। তো কোথায় তোমার সেই সারপ্রাইজ??
–((ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স বের করে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে)) এই নাও।
–কি নিয়ে এসেছো??((বক্স খুলে দেখে)) খিচুড়ি?? তুমি রান্না করেছো??((অবাক হয়ে))
–হুম। মেঘলা দিনে খিচুড়ি খাওয়া আমার অনেক প্রিয়।। তাই সবার জন্যই রান্না করেছি।
–((আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে)) অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমারও মেঘলা দিনে খিচুড়ি অনেক প্রিয়।।
–((মুচকি হেসে))এতো ধন্যবাদ দিতে হবে না। বন্ধুর জন্য করতেই পারি।।
শুভ্রর সাথে টুকটাক কথা বলে বাসায় চলে আসলাম।।
🍁🍁
দেখতে দেখতে বেশ কয়েক দিন কেটে গেলো।।। ভালোই যাচ্ছিল আমাদের দিনগুলো। ধীরে ধীরে আমরা একে অপরের খুব ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছি।
হঠাত একদিন বিকেলে,,,
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে রুম থেকে বেরিয়ে দেখি,,,,শুভ্র আমাদের ড্রইংরুমে বসে আছে সাথে একজন বয়স্ক মহিলা আর প্রায় আমার বয়সি একটা মেয়ে। তারা হেসে হেসে বাবার সাথে গল্প করছে। ভাইয়া আর ভাবিও তাদের পাশে বসে আছে।
কি হচ্ছে এসব???? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই শুভ্র আমাকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিলো।।
–আরে মিহু মা।। এখানে এসো। দেখো কে এসেছে।।।((বাবা))
–চলবে🍁
এই_তুমিটা_আমার❤
মাহিয়া_মেরিন
পর্ব:::০৮
শুভ্রকে হঠাত করেই বাসায় দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি।। কেনো এসেছে তারা?? ধীর পায়ে হেঁটে বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাবা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো…
–মিহু মা।। দেখ কে এসেছে,,,তোর শিউলি ফুপি।।((তাদের দিকে তাকিয়ে)) হয়তো চিনতে পারছে না। খুব ছোট বেলায় তোকে দেখেছিলো।(বাবা)
শিউলি ফুপি? নামটা কেমন যেন পরিচিত মনে হচ্ছে,,,কিন্তু চিনতে পারছি না।। ভাবির দিকে তাকিয়ে ইশারায় কে বোঝালাম। ভাবি আমার কাছে এসে কানে কানে বললো…
–যতটুকু বুঝলাম। শিউলি ফুপি হলো বাবার দূর সম্পর্কের বোন। আর তোমার হবু শাশুড়ি।।(ভাবি)
–((অবাক হয়ে তাকিয়ে)) হবু শাশুড়ি মানে??
–আরে,,,তোমার ভালোবাসা শুভ্রর আম্মু মানেই তো তোমার হবু শাশুড়ি।।((হালকা হেসে))
–((বুঝলাম,,ভাবি আমার মজা নিচ্ছে)) থামো তুমি।।
শুভ্রর দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা আর ভাইয়ার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে আর মাঝেমাঝে আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে।। শিউলি ফুপি আমাকে ডেকে নিজের পাশে বসিয়ে…
–মাশাল্লাহ,,,কতো বড় হয়ে গিয়েছে মেয়েটা। আর,,দেখতেও একদম তার মায়ের মতোই হয়েছে।(ফুপি)
–((হালকা হেসে)) মিহুই তো আমার কাছে তার মায়ের শেষ স্মৃতি।।
যাই হোক,,,মিহু পরিচিত হও শ্রেয়ার সাথে,,তোমার ছোট বোন হয়। আর শুভ্রকে তো চেনারই কথা।। শুভ্রকে প্রথম দিন হাসপাতালে দেখেই আমার কেমন যেন চেনা চেনা মনে হয়েছিল।। পরে ভেবেছি হয়তো আমার মনের ভুল।।
–আসলে,,,খুব ছোটবেলায় একবার শুভ্রকে দেখেছিলেন তো ভাইজান। তাই হয়তো সহজে চিনতে পারেননি।((ফুপি))
–((শুভ্রকে চিনবো না!! বাবা,,তুমি তো জানো না এই শুভ্র আমাকে কোন মায়াজালে বেঁধে ফেলেছে)) জি বাবা।। আমি শ্রেয়াকে নিয়ে আমার রুমে যাই??(আমি)
–অবশ্যই।। শ্রেয়া যাও আপুর সাথে((ফুপি))
শ্রেয়াকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।। দেখে তো মনে হচ্ছে খুব মিশুক স্বভাবের মেয়ে। যাক,,,শুভ্রর সম্পর্কে অনেক কথাই হয়তো জানতে পারবো।।
–তো,,,কেমন আছো শ্রেয়া??
–ভালো আছি। তুমি?
–আমিও ভালো আছি।। কোন ক্লাসে পড়ো?
–অনার্স প্রথম বর্ষে।।
–ওহ,,,আচ্ছা!! ভালো।((ধুর,,মনে হয় বেশি কথা বলে না। সবাই তো আর আমার মত বাচাল না))
–ভাইয়ার কাছে তোমার কথা অনেক শুনেছি মাহি আপু।।
–((উৎফুল্ল হয়ে)) কিহহ? শুভ্র তোমাকে আমার কথা বলেছে?? কি কি বলেছে??
–((মুচকি হেসে)) বলেছে তো সবই। তুমি নাকি ভাইয়ার অনেক ভালো একজন ফ্রেন্ড।। তুমি আসলেই অনেক ভালো একটা মেয়ে।। সেদিন তুমি ভাইয়ার জন্য খিচুড়ি রান্না করে নিয়ে গিয়েছিলে না? ভাইয়া অনেক খুশি হয়েছিলো,,,, আমাকে সারাদিন ধরেই বলেছে আজকে মাহির হাতের স্পেশাল খিচুড়ি খেয়েছি।। ওহ!! আরও বলেছে,,তুমি নাকি ফুচকা খাও না।।
–((বুঝলাম,,,শুভ্র সব কথাই তাকে বলেছে)) আচ্ছা,,,দুই ভাই বোন তাহলে আমাকে নিয়ে অনেক গল্পই করেছে।
–((হালকা হেসে))হুম। তবে যাই বলো,,,তোমার কাছে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। আজ তোমার জন্যই ভাইয়া আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।।।
–ঠিক বুঝলাম না। আবার আগের মতো মানে??
–((কিছুক্ষণ নীরব থেকে)) সেতু আপু চলে যাওয়ার পর থেকে ভাইয়া অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেই আগের শুভ্রকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।। ভাইয়া কারো সাথেই ঠিক মতো কথা বলতো না। নিজের প্রতি তার কোন খেয়ালই ছিলো না।। কিছুদিন আগ পর্যন্ত সে রাতে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসতো না। দিন রাত হাসপাতালেই কাটিয়ে দিতো।।
–((আসলেই তো!! শুভ্র প্রায় রাতেই হাসপাতালে থাকতো।। জিজ্ঞেস করলে বলতো ওভার টাইম আছে।আর এই সেতু কে??)) কিন্তু সেতু???
–ভাইয়া সেতু নামের একজনকে ভালোবাসতো।। ইনফ্যাক্ট হয়তো এখনও ভালোবাসে।।
–((কথাটা শুনে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।। শুভ্র অন্য কাউকে ভালোবাসে!!)) শ..শুভ্র তো কোনদিন আমাকে বলেনি যে সে কাউকে ভ..ভালোবাসে।।
–বলার কথাও না। সেতু আপু কখনোই ভাইয়ার যোগ্য না।। ভাইয়া তাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো।। আর সে!!! কখনো ভাইয়ার মুল্যই দেয়নি।।
–((কথাগুলো শুনে মাথাটা কেমন জানি ঘুরছে))ক…কি হয়েছিল??
–((একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে)) দুই বছরের সম্পর্ক ছিল তাদের।। আমরা আগে কুমিল্লায় যেই বাসায় ছিলাম তার পাশের বাসায় সেতু আপুরা নতুন ভাড়া এসেছিলো।। ভাইয়া তখন মেডিক্যালে পড়তো আর আপু পড়তো ভার্সিটিতে।। হঠাত করেই একদিন আপুর সাথে আমার আর ভাইয়ার দেখা হয়,,,তারপর পরিচয়।। কিছুদিন পর ভাইয়া এসে আমাকে বলে,,শ্রেয়া জানিস,,সেতু আমাকে পছন্দ করে।। আমি অবাক হয়ে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,,তুইও কি পছন্দ করিস আপুকে?? ভাইয়া শুধু বলেছিলো জানি না,,হয়তো করি।। সেতু আপু দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনই তার ব্যবহার,,,এমন মেয়েকে কে না পছন্দ করে।। ভাইয়ারও ধীরে ধীরে সেতু আপুকে ভালোবেসে ফেলে।।((শ্রেয়া))
–((স্তব্ধ হয়ে কথাগুলো শুনছিলাম)) ত…তারপর কি হলো??
–((আমার দিকে তাকিয়ে)) প্রথম দিকে সব ভালোই ছিলো। তারপর হঠাত করেই সেতু আপু ভাইয়াকে ইগনোর করতে শুরু করে।। ভাইয়া ভেবেছিলো আপু হয়তো কোন কারণে রাগ করে আছে। তাই সেদিন ভাইয়া আপুর ভার্সিটিতে যায়। আর দেখে সেতু আপু অন্য একজন ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বসে তার বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।। ভাইয়া পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে আপুর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই আপু হতভম্ব হয়ে যায়,,,হয়তো ভাবেনি ভাইয়া তার ভার্সিটিতে যাবে। ভাইয়া আপুর উপর রেগে গিয়ে কয়েকটা কথা শোনাতেই,,,সব সত্যিটা বেরিয়ে আসে।। আসলে,,,সেতু আপু কখনোই ভাইয়াকে ভালোবাসেনি।। তার কিছু ফ্রেন্ডরা তাকে বলেছিলো পারলে একজন মেডিক্যালের স্টুডেন্টের সাথে রিলেশনের অভিনয় করে দেখাতে। সেতু আপু তাদের শর্তে রাজি হয়েই আমার ভাইয়ার অনুভূতি নিয়ে খেলা করেছে।। সে কতো সহজে সেদিন ভাইয়াকে বলেছিলো,,,ভাইয়ার মতো কেউ একজন নাকি তার সাথে যায় না। শুধু মাত্র সেই ফ্রেন্ডদের দেখানোর জন্যই ভাইয়াকে তার দুই বছর সহ্য করতে হয়েছে।।
((কিছুক্ষণ নীরব থেকে)) ভাইয়া অনেক ভেঙে গিয়েছিল।। সেতু আপু তাকে ভালো না বাসলেও,,,ভাইয়া তো আপুকে সত্যিই ভালোবাসতো।। পরে মায়ের জোরাজুরিতে আমরা এখানে চলে এসেছি।।((শ্রেয়া))
–((কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এমনটাও কি সম্ভব??)) কি বলবো সত্যিই বুঝতে পারছি না। শুভ্রকে দেখে কখনো বুঝিনি তার সাথে এমন কিছু ঘটে গিয়েছে।। (লেখিকা-মিহিয়া মেরিন)।।
–ভাইয়া এমনই।। যাক সেই কথা,,,আমি কিন্তু জানি তুমি ভাইয়াকে পছন্দ করো।((শ্রেয়া))
–((অবাক চোখে তাকিয়ে)) কে বলেছে তোমাকে??
–((মুচকি হেসে)) কাউকে বলতে হয়না। আমি বুঝতে পারি।। আমার জানি,,,তুমি কখনোই সেতু আপুর মতো হবে না। তোমার উপর বিশ্বাস আছে আমার।
শ্রেয়ার কথায় শুধু একটু মুচকি হাসি দিলাম।। মানুষ কিভাবে একজনের অনুভূতি নিয়ে খেলা করতে পারে?? সেতু মেয়েটা ইচ্ছা করে শুভ্রর মনে যে আঘাত দিয়েছে,,,একদিন সেই আঘাত সে নিজেও পাবে। কেননা,,,দেরিতে হলেও প্রকৃতি তাকে তার কর্মের শাস্তি দিবেই।।।
শিউলি ফুপি যাওয়ার আগে আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে…
–সবাইকে নিয়ে আমাদের বাসায় যেও। তুমি আমার মেয়ের মতোই,,,এই মাকে যখনই দেখতে ইচ্ছে হবে তখনই বাসায় চলে আসবে।(ফুপি)
–ঠিক আছে ফুপি।
শুভ্র যাওয়ার আগে সবার অগোচরে আমার গাল আলতো করে টেনে তার সেই হৃদয় ছোঁয়া মুচকি হাসিটা দিয়ে গেলো।।
🍁রাতে…..
শ্রেয়ার বলা কথাগুলো ভাবছি।।
শুভ্র আমার জীবনের প্রথম ভালোলাগার অনুভূতি।। হয়তো সেতু মেয়েটাও শুভ্রর জীবনে প্রথম ভালোলাগার অনুভূতি ছিলো।
প্রথম ভালোবাসা মানুষ সহজে ভুলে যেতে পারে না,,,শুভ্রও পারেনি। কিছু একটা ভেবে
ফোনটা হাতে নিয়ে শুভ্রকে একটা টেক্সট পাঠালাম,,,
“”কাল সকাল দশটায় পার্কে অপেক্ষা করবো””
ফোনটা হাত থেকে রেখে বাহিরের আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
🍁সকালে….
পার্কে বসে আছি। একটু পর পিছন থেকে কেউ একজন মাথায় টোকা দিলো,,,,ঘুরে দেখি শুভ্র!!
–কি ব্যাপার?? হঠাত মাহি ম্যাডামের জরুরি তলব!!(শুভ্র)
–তেমন কিছু না,,,,কয়েকজনের সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিবো।
–আচ্ছা? কোথায় তারা??(শুভ্র)
–আসবে। একটু অপেক্ষা করো।।
–হুম।। বাই দ্য ওয়ে,,,,এভাবে হা করে কি দেখছিলে এতোক্ষণ?? বাই এনি চান্স,,কারো উপর ক্রাশ খেলে নাকি??((হালকা হেসে)) এমন ভুল আর করো না। আমি কিন্তু এখন তোমার বড় ভাই।একটু উনিশ বিশ হলেই তোমার বাবাকে গিয়ে বিচার দিবো।।
–((শুভ্রর দিকে তাকিয়ে মনে মনে,,,এহহ!!আসছে আমার ভাই হতে। হুহহ)) তো,,,বড় ভাই যখন হও তাহলে আজকে থেকে ভাইয়া বলেই ডাকবো।। কি বলো??
–((মুখটা কালো করে)) থাক।। এতো আদিখ্যেতা করা লাগবে না।। মায়াবিনী কন্যাদের মুখে ভাইয়া ডাক শুনলে বুকের ভেতর চিন চিন করে।।
শুভ্রকে কিছু একটা বলতে যাবো তার আগেই….
–ওইতো,,,,তারা চলে এসেছে।।
শুভ্র পিছনে তাকিয়ে দেখে…….
–চলবে🍁