কাগজের_তুমি_আমি
দ্বিতীয়_অধ্যায়,১৭তম_পর্ব,১৮তম_পর্ব
মুশফিকা রহমান মৈথি
১৭তম_পর্ব
নিজের অবাদ্ধ মনকে খুব কড়া শাসন করে দিলো অনল। আজকাল মনটা ধারার মাঝে অনন্যাকে খুজছে। এটা তো কখনোই সম্ভব না। ঘরে ঢুকতেই বেশ শাসানো গলায় বলে উঠে ধারা,
– একটু তো বুদ্ধি নিয়ে কাজ করবা নাকি? একটু ফোনটা সাথে নিয়ে গেলে কি হতো। ফুপি চিন্তা করছিলেন। আমি জোর করে তাকে শুতে পাঠিয়ে দিয়েছি। মানুষের চিন্তা হয় তো নাকি, রাত কটা বাজে খেয়াল আছে?
তখনই অনল হাতের বাজারের ব্যাগ ধারার হাতে ধরিয়ে দেয়। হিনহিনে গলায় বলে ধারাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– যার জন্য করি চুরি সে বলে চোর, বাহ কি নিষ্ঠুর দুনিয়া। নে নে ধর
– আমার জন্য তুমি চুরি করতে গেছিলে বুঝি? সেখান থেকে এতো এতো বাজার নিয়ে এসেছো।
ধারার কথা শুনে চোখ মুখ খিচে তীক্ষ্ণ গলায় বললো অনল,
– খিক খিক হাসা থামিয়ে খাবার দে, ক্ষিদেয় পেটের ইদুরগুলো নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে। আর শোন ।
রান্না ঘরে যেতে যেয়েও থেমে গেল ধারা। পেছন ফিরলে অনল বলে উঠে,
– ফুচকার সব সরঞ্জাম নিয়ে এসেছি। খাওয়ার পর বানিয়ে দিচ্ছি।
– তুমি বানাবে ফুচকা?
– তোমার ওই ঠেলামামার থেকে ভালোই বানাবো। না জানি আদৌ হাত ধোয় কি না। আমার প্রিন্সেসের ব্যাপারে আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুই খাবার গরম কর।
বলেই নিজের রুমে রওনা দিলো অনল। ধারার কোনো কথা শোনার অবকাশ আছে তার। সে তো তার মতো করেই ভাববে আর সেভাবেই কাজ করবে। ধারা মুচকি হেটে রান্না ঘরে বাজার গুলো খুলতে লাগলো। এলাহি কান্ড করেছে অনল। ধারার যা কিছু খেতে ভালো লাগে সব কিনে এনেছে। সাথে তেতুল, জলপাই, চালতা। আচার বানানোর কোনো সরঞ্জামের কমতি রাখে নি। ধারার মনে মনে হাসি ই পেলো। লোকটা দু ঘন্টা যাবৎ এই মহান কাজ করেছে। লোকটার উপর মাঝে মাঝে খুব রাগ উঠে ধারার, মনে হয় রাগে মাথাটাই ফাটিয়ে দিবে সে। আবার মাঝে মাঝে এতোটা ভালো লাগে যে বলে বোঝানো যাবে না। যেমনটা এখন লাগছে। এক অজানা ভালোলাগায় মনটা ভরে যাচ্ছে। এটা কি মুড সুইং এর অংশ নাকি অন্য কিছু সে জানে না, হয়তো জানতে চায় ও না।
রাত ১২টা,
রান্নাঘরের টুলের উপর পা উঠিয়ে বসে আছে ধারা। আর সামনে বেশ ঢাল তলোয়ার নিয়ে ফুচকা বানানোর প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে অনল। ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখে দেখে বানাচ্ছে সে। ধারা যখনই সাহায্য করতে চাইছে তখন বজ্রকন্ঠে বকা শুনতে হচ্ছে। তাই বৃথা চেষ্টা করা থামিয়ে চুপচাপ বসে রয়েছে সে। মটর সিদ্ধ করে আলু সিদ্ধতে দিয়েছে অনল। হঠাৎ দেখলো ধারা রীতিমত হাই তুলছে। ব্যাস হুংকার দিয়ে বলে উঠলো,
– অই আমি এখানে ঘেমে একাকার আর তুই বসে বসে হাই তুলছিস?
অমনি যেই হাইটা বের হতো সেটা আবার ভেতরে নিয়ে ধারা বললো,
– আজিব আমি কি তোমাকে বলেছি গরমের মধ্যে ফুচকা বানাও। আমাকে বকছো কেন? তখন কিনে দিলেই পারতে এখন হাই আসলে আমি কি করবো?
– কি ফাযিল মেয়ে রে তুই? একে কোথায় আমাকে একটু সাহায্য করবি তা না?
– বেশ পাল্টিবাজ তো তুমি অনল ভাই! আমি কি মানা করেছি তোমাকে সাহায্য করতে। আমি তো বলেই ছিলাম দাও আলু গুলো কেটে দেই। কি ধমকটাই না দিলে। এখন আমাকে বকছো।
– হয়েছে হয়েছে বকিস না তো। উট্টিন্না মেয়ে, পরে হাত ফাত কেটে ফেললে? থাক ভাই আমি ই করি। নেহাত আমার মেয়ে খেতে চেয়েছে। নয়তো কখনোই তোর জন্য আমি বানাতাম না।
বলেই পেয়াজ কাটায় মন দিলো অনল। টপ টপ করে তার চোখ থেকে পানি পড়ছে এটা দেখে ধারার বেশ খারাপ লাগতে লাগলো। অমনি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো ধারা। চুল গুলো খোপা করে অনলের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, কড়া কন্ঠে বললো,
– হয়েছে অনেক কেঁদেছো। সরো তো সরো। আমি পেয়াজ কেটে দিচ্ছি। তুমি বাকি কাজ করো।
– তুই পারবি না।
– চুপ, দাও বলছি। সরো। আমাকে কাজ শিখিয়ো না। একে নাকের জল, চোখের জলে একসার। আসছে।
ধমকে কাজ দিলো, অনলের হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে একেবারে গিন্নির মতো কাজ করছে ধারা। মাথায় খোপা, কোমড়ে ওড়না গোজা। মাঝে মাঝে অবাদ্ধ ছোট চুলগুলো চোখে মুখে পড়ছে। চুল থেকে ঘামের রেখা ঘাড় অবধি বহমান। নারীর এই প্রতিচ্ছবিটা সবথেকে সুন্দর হয়। অনল অবাক চিত্তে ধারার এই প্রতিচ্ছবি দেখে যাচ্ছে। এক মোহ তার চোখজোড়াকে ঘিরে ধরেছে। কিছুতে চোখজোড়া সরাতে পারছে না। সময়টা যেন থেমে গেছে। অনল নিজের অজান্তেই ধারাকে লক্ষ্য করে যাচ্ছে।
– কি দেখছো?
ধারার অবাক নয়নে করা প্রশ্নে স্বম্বিত ফিরে অনলের। মাথা নাড়িয়ে নেতিবাচক উত্তর দেয় সে। নিজের মনেও একটা প্রশ্ন উদয় হয় আসলে কি দেখে যাচ্ছিলো সে। এতো মন্ত্রমুগ্ধের মতো ধারাকে দেখার কি আছে! প্রশ্নের উত্তর খুজেও কিছুই হাতে পেলো না অনল। আজকাল মনটা শুধু অবাদ্ধ কাজ করে যাচ্ছে। কখনো ধারার মাঝেই অনন্যাকে খুজতে থাকে তো কখনো কোনো কারণ ব্যাতীত তাকে নিয়ে ভাবতে থাকে। উফফফ কি জ্বালা হয়েছে_____
ফুচকা বানানো যখন শেষ হলো তখন ঘড়ির কাটা দেড়টা ছুই ছুই। রান্নাঘরের টুলের উপর বসেই বাচ্চাদের মতো ফুচকা খাচ্ছে ধারা। আর সেটা মুখে হাত দিয়ে দেখে যাচ্ছে অনল। এসব খাবারের প্রতি কখনোই কোনো আগ্রহ তার ছিলো না। সে শুধু তার সামনে বসা মেয়েটাকে খেতে দেখেই খুশী। হুট করেই ধারার গালটা টিপে দিলো। ধারা অনলের কেমন কাজে বেশ অবাক হয়েই বললো,
– এটা কি হলো?
– তুই এতো কিউট কেনো বল তো? কে বলবে আর তুই মা হতে চলেছিস? কিছুদিনপর বাচ্চা হলে কি করবি এটাই ভাবছি। বাচ্চা সামলাবে বাচ্চা। হাহাহা
– আমি মোটেই বাচ্চা নই।
– শোন তুই ষাট বছর হয়ে গেলেও না আমার কাছে বাচ্চাই থাকবি ঠিক আছে। মুখ ধুয়ে ঘুমাতে যা। কাল কলেজে আমি তোকে পৌছে দিবো।
– হঠাৎ? আমি তো সারার সাথেই যাই
– আমি বলেছি ব্যাস আমি নিয়ে যাবো। আর কোনো কথা শুনতে চাই না।
বলেই হাটা দিলো অনল। ধারাও আর কথা বাড়ালো না। অনলের সাথে তর্কে জড়ানো মানে নিজের পায়ে কুড়াল দেওয়া। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুভাসিনী বেগমের রুমে হাটা দিলো ধারা। হাত মুখ ধুয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো সে। ঠান্ডা ঝিরিঝিরি হাওয়ায় খারাপ লাগছে না। একটা কথা ভেবে মনে মাঝে সুখ দুঃখের সংমিশ্রণ অনুভূতি হচ্ছে তার। আজ যেই কাজ গুলো দিগন্তের করার কথা ছিলো সেই কাজ গুলো অনল করছে। কি অদ্ভুত না, অবশ্য এটা বেশ ভালো হয়েছে। দিগন্ত এই বাচ্চাটাএর অস্তিত্ব সম্পর্কেই অজানা থাকুক। এটাই হয়তো সবার জন্য ভালো হবে। হঠাৎ করেই একটা ভয় মনে জেকে বসেছে ধারার। যদি কোনোদিন দিগন্ত জেনে যায় বাচ্চাটা বেঁচে আছে এবং সে যদি তার দাবি চেয়ে বসে। কি করবে ধারা!
সময়ের স্রোত বহমান। দেখতে দেখতে মাস পার হতে হতে পাঁচ মাস হয়ে এসেছে। ধারার পেটটাও খানিকটা বড় হয়ে এসেছে। এখন বুঝা যাচ্ছে সে মা হতে চলেছে। অনল আরো বেশী নজরদারী হয়ে উঠেছে বাচ্চাটার প্রতি। এখন আর ভার্সিটি যাওয়া হয় না তার। অনল কথা বলে নিয়েছে স্যারদের সাথে। বাসায় বিশ্রাম করে ধারা। অনল আর ধারার সম্পর্কেও খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে। আজকাল ধারার গহীন চিত্তে অনলের বসবাস যেনো সর্বক্ষণ। কিন্তু অনলের সামনে গেলেই সব কিছু গবলেট হয়ে যায়। মাঝে মাঝে ভয় ও হয়। অনলের কাছে বলতে গেলে হিতে বিপরীত হলে, তাই কিছুই বলা হয়ে উঠে না। আর অনল সে তো নতুন করে বাঁচার চাহিদায় আছে। ধারাকে আজকাল সে যেনো চোখে হারায়। এটা কেনো সে নিজেও জানে না। এটা কি বাচ্চাটার প্রতি ভালোবাসা নাকি ধারার প্রতি দূর্বলতা তার জানা নেই। থাক না সম্পর্কটা এভাবেই অহেতুক প্রশ্নের উত্তর খুজতে গেলে যদি সম্পর্কটাই না থাকে। একবার ভালোবাসি বলে হারিয়েছে অনন্যাকে, ধারাকে হারাতে একেবারেই রাজী নয় সে।
সকাল ৯টা,
নাস্তার টেবিলে বসা সবাই। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ কানে আসায় ধারা দরজাটা খুলতে যায়। দরজাটা খুলতেই দেখে একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা এবং একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদের কাউকেই ধারা চিনে না। অবাক নয়নে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলে…………
চলবে
কাগজের_তুমি_আমি
দ্বিতীয়_অধ্যায়
১৮তম_পর্ব
হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ কানে আসায় ধারা দরজাটা খুলতে যায়। দরজাটা খুলতেই দেখে একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা এবং একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদের কাউকেই ধারা চিনে না। অবাক নয়নে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলে মহিলাটা বেশ খাকারি গলায় বলে উঠেন,
– এটা অনলদের বাসা না?
– জ্বী, আপনারা
– তুমি কে? ভাবী কোথায়?
ধারা কিছু বলে উঠার আগেই সুভাসিনী বেগমের কথা ধারার কানে আসলো,
– কে এসেছে রে ধারা?
ধারার সময় লাগছে দেখে সুভাসিনী বেগম নিজেই উঠে আসলেন। সুভাসিনী বেগমকে দেখেই মহিলাটা বেশ গদগদ হয়ে বললেন,
– ভাবী কেমন আছো গো? কতদিন পরে তোমাকে দেখছি বলো!
বলেই ধারাকে এড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়লেন ভদ্রমহিলা এবং মেয়েটি। সুভাসিনী বেগম ও বেশ অবাক হলেন, যেনো উনি এদের মোটেই আশা করেন নি। অবাক কন্ঠেই জিজ্ঞেস করলেন,
– সুমনা তুমি হঠাৎ?
– কেনো গো ভাবী আসতে পারি না বুঝি?
– না না সেটা না, আসলে না ফোন না কিছু। তাই অবাক হলাম আর কি। আসো আসো।
– আসলে কি বলো তো ভাবী, অনলের বিয়েতে তো আমি আসতে পারি নি। এখানেও একটা কাজ ছিলো তাই ভাবলাম এক কাজে দুইটা হয়ে যাবে। তা অনলের বউ কোথায় ভাবী?
মহিলা বসতে বসতে কথাগুলো বললেন। সুভাসিনী বেগম মুচকি হাসি হেসে ধারাকে ইশারা করেন। উচ্ছ্বাসিত মনে বলে উঠেন,
– এইতো তোমার অনলের বউ, ধারা। ধারা, ও সুমনা, সম্পর্কে তোর ফুপু শ্বাশুড়ি আর ও হচ্ছে মহুয়া। মহুয়া তোর থেকে বয়সে বড় কিন্তু অনলের থেকে ছোট।
– আসসালামু আলাইকুম।
ধারা খুব ভদ্র ভাবেই সুমনাকে মুখে সালাম দেয়। পায়ে ধরে সালাম করা ব্যাপারটা একেবারেই ধারার পছন্দ নয় উপরে পেটটা বড় হবার কারণে ঝুকতেও পারবে না। তাই মুখেই সালামটা দিলো সে। সুমনা বেগমের মুখ দেখে মনে হচ্ছে ব্যাপারটা যেনো তার একেবারেই পছন্দ হয় নি। ভ্রু কুচকে পা থেকে মাথা অবধি নজর তাক করে নিলেন তিনি। ধারার বড় পেটটাই যেনো তাকে বেশি অবাক করছেন। ধারার খানিকটা অস্বস্তি হতে লাগলো। সুভাসিনী বেগম ও ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেন। তাই ধীর কন্ঠে বললেন,
– আসলে এই সময়ে ঝুকাটা ঠিক হবে না তো তাই।
– আমি যত দূর জানি বিয়ের ছয় মাস হইছে মাত্র। এখনই বউ মা পোহাতি হয়ে গেলো, একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো না ভাবী?
উনার কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে যায় ধারা। মাথাটা অটোমেটিক নিচু হয়ে আসে। সুভাসিনী বেগম ও সুমনা বেগমের এমন হুট করে করা প্রশ্নে কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ঠিক তখনই পকেটে হাত গুজে মুখে হাসি হাসি ভাব নিয়েই অনল বলে উঠে,
– ফুপ্পি, তোমাদের সমস্যাটা ঠিক কোথায় বলোতো? এখন ধারা যদি প্রেগন্যান্ট না হতো তখন জিজ্ঞেস করতে ছয় মাস হয়ে এসেছে খুশির খবর কবে শুনাবে? এখন যখন দেখছো ও প্রেগন্যান্ট, তো কোথায় একটু দোয়া তোয়া করবে। তা না জিজ্ঞেস করছো একটু তারাহুড়ো হয়ে গেলো না। এখন আমরা নবদম্পতি যাবো তো যাবো কই? আর এমনেও আমার তো হবয়স হচ্ছে তাই না, এখন বুড়ো বয়সে ট্যাম নিয়ে ঘুরার ইচ্ছে আমার নেই। যৌবন থাকতে থাকতেই বাচ্চার বাবা হতে চাই। ফুফার মতো চুলে পাক ধরার পর বাচ্চার বাবা হলে দেখা যাবে বাবা কম নানা বেশী লাগবে আমাকে। নো নো সেই রিস্ক আমি নিতে পারবো না। তাই আর কি এই তাড়াহুড়ো।
অনলের হাসিমুখের কথাগুলো শুনে বেচারি সুমনা বেগমের যেনো মুখটা খানিকটা ছোট হয়ে গেলো। মহুয়া যখন হয়েছিলো তখন শফিক সাহেবের প্রায় চুল পেকে গিয়েছিলো। অনল সেটার খোচাটাই দিয়েছে সমনা বেগমকে। সুমনা বেগমের স্বভাব সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানা আছে অনলের। রুম থেকে বের হতেই যখন দেখলো সুমনা বেগম সকাল সকাল এসে টপকেছেন তখন ই ড্রয়িং রুমের দিকে এসে হাজির হয় সে। ধারার অনলের কথা শুনে বেশ হাসি পেলো। কিন্তু ফুপু শ্বাশুড়ির সামনে নতুন বউ খিক খিক করে হাসছে ব্যাপারটা খারাপ তো খারাপ মহা খারাপের পর্যায়ে পড়বে। ঠোটে ঠোট চেপে নিজের হাসিটা আটকে রাখলো সে। অনল এবার বেশ কড়া করেই ধারাকে বলে উঠে,
– এই তোর আক্কেল নাই?
– কেনো আমি কি করলাম?
– খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে মনে আছে? এখানে দাঁড়ায় থাকলে কি খাবার গুলো উড়ে উড়ে পেটে ঢুকবে। চল খেতে যাবি। ফুপি তুমি বসো, আমি পিচ্চিটাকে নিয়ে যাচ্ছি। আসলে ওর টাইম টু টাইম ঔষধের ব্যাপার আছে তো।
বলেই ধারার হাত ধরে টেনে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসালো। ধারা শুধু আড় চোখে সুমনা বেগমকে দেখে যাচ্ছে। মহিলা বেশ তীক্ষ্ণ নজরে ধারা আর অনলকে দেখে যাচ্ছেন। অনল সেদিকে তোয়াক্কা না করে নিজ হাতে সব কিছু ধারাকে বেড়ে দিচ্ছে। সুমনা বেগম এবার সুভাসিনী বেগমকে বলতে শুরু করলেন,
– ভাবী একটা কথা বলি কিছু মনে করো না। ছেলেটা একটু বেশী বউ ঘেষা হয়ে উঠেছে তোমার। এখন তো বুঝতেছো না পরে ঠিক ই বুঝবে।
সুমনার বেগমের কথায় সুভাসিনী বেগম বেশ চটে উঠলেন। বেশ থমথমে গলায় বলে উঠলেন,
– এসব কি কথা সুমনা? ধারার এখন শরীরের যা অবস্থা তাতে তোমার মনে হয় না অনলের তাকে বেশী প্রয়োজন। আর স্বামী স্ত্রীর ব্যাপারটায় বউ ঘেষা ব্যাপারটা আসছে কোথায়?
– আসলে তোমার ভাইয়ের মেয়ে তো তাই তুমি দেখেও না দেখার ভান করছো। অনলের মতি গতি কিন্তু ভালো না বলে দিচ্ছি।
– তাও ভালো বউ ঘেষা হয়েছি, তোমার ভাইয়ের মতো অন্য মেয়ে ঘেষা তো হই নি। এটাই ভালো না ফুপ্পি।
সুমনা বেগমের কথা কানে যেতেই হাসি মুখে কথাটা বলে উঠলো অনল। এবার অনলের কথাটা যেনো সুমনা বেগমের একটু বেশি আতে লাগলো। কিছু বলতে যাবেন তার আগেই সুভাসিনী বেগম বলে উঠলেন,
– এতো দূর ট্রাভেল করে এসেছো। আসো আমার রুমে রেস্ট নিবে চলো। মহুয়া আয় তো সোনা মামী মার সাথে।
সুভাসিনী বেগমের কথায় আর কিছুই বলতে পারলেন না সুমনা বেগম। সুমনা বেগম মনোক্ষুন্ন হয়ে উঠে সুভাসিনী বেগমের সাথে গেলেন। ধারার মনে হলো মানুষটি তাকে একেবারেই পছন্দ করেন নি। বেশ ভাবনায় পড়ে গেলো সে। সত্যি বলতে অনলের সাথে বিয়ের পর থেকে একবার ও এই বাড়িকে শ্বশুর বাড়ি বলে মনে হয় নি। বরং নিজের বাড়ি ই লেগেছে। কিন্তু সুমনা বেগমের আসার পর থেকে মনে হচ্ছে এবার একটু মেপে চলতে হবে।
– এতো চিন্তা করতে হবে না। যার তোকে ভালো লাগে না তাকে তো আর জোর করে ভালো লাগাতে পারবি না
অনলের কথায় চিন্তায় ছেদ পরে ধারায়। পাশ ফিরে তাকালে দেখে লোকটা নিজ মনে খেয়েই যাচ্ছে। তার সুমনা বেগম কে নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথাই নেই। ধারা খাবার মুখে দিতে দিতে বললো,
– চেষ্টা তো করতেই পারি তাই না?
– লাভ নেই, আমার ফুপ্পিটা একটু এমন ই। তাই বলছি অহেতুক কিছু করতে যাস না। তুই তো আর তার বাড়ির বউ না। আসছে কদিনের জন্য, চুপচাপ থাক। সময় হলে চলে যাবে।
– আচ্ছা তুমি সবসময় কিভাবে আমার মনের কথা জেনে যাও?
ধারার প্রশ্নে মুচকি হাসি হেসে তার গালটা টেনে দিয়ে অনল বলে,
– বয়স তো আর এমনি এমনি হয় নি। যাক গে, রুমে চল ঔষধ আছে। আর ফলগুলো খাস নি কেনো, আমি খাবো নাকি ফল? তোর এসব কারণে আমার প্রিন্সেসটা এতো দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। এখনো কিক অবধি করেনি, খা বলছি।
– আর খেতে পারছি না, আমি তো রাক্ষস না।
পরমূহুর্তেই অনলের অগ্নিদৃষ্টিতে চুপ হয়ে গেলো ধারা। লোকটা কথায় কথায় হুংকার ছাড়ে। ভয় লাগে কিন্তু আবার ভালো লাগে। লোকটাকে আজকাল খুব ভালো লাগে ধারার। ইচ্ছে করে সারাটাদিন শুধু দেখতে। প্রতিনিয়ত মানুষটাকে দেখলে প্রেম প্রেম পায়। কিন্তু মুখে কিছুই বলে উঠতে পারে না সে। ভয় হয়, বলা তো যায় না। ধুম ধাম করে মেরে বসে যদি। অনলের কোনো ভরসা নেই। তার হুংকার শুনলেই ভালোলাগা গুলো গলাতেই আটকে যায় ধারার_______
রাত ১০টা,
নিজের ঘরে ঢুকতেই দেখে ধারা বিছানা করছে। ধারা সুভাসিনী বেগমের সাথে থাকতো। কিন্তু হুট করে নিজের রুমে দেখে বেশ হতবাক হয় সে। অবাক হয়েই ধারাকে প্রশ্ন করে বসে সে,
– তুই এই রুমে?
– ও চলে এসেছো তুমি, আমি এখন থেকে কিছুদিন এই রুমেই থাকবো। আসলে ফুপ্পি মহুয়া ত মায়ের রুমে থাকছে। আর ঘরে তো শোবার রুম বেশি নেই প্লাস ফুপ্পি জানেন ও না আমি যে তোমার সাথে থাকি না। জানলে আরো কান্ড করবেন। এমনেই আমার সব কাজে কেনো যেন দোষ খুজেন। এটা জানলে ফুপুকে শুধুশুধু কথা শুনাবেন।
ধারার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। তাই অনল আর কোনো কথা বাড়ালো না। কোথাও কোথাও বেশ অস্বস্তি লাগছিলো অনলের। ধারার সাথে বিয়ের পর থেকে সেভাবে একই রুমে থাকা হয় না কি না। এখন আবার থাকতে হবে দেখে বেশ অস্বস্তি লাগছে অনলের। দীর্ঘশ্বাস ফেলে টাওয়াল আর কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো সে। বিছানাটা গুছিয়ে হেলান দিয়ে বই পড়তে লাগলো ধারা। আজকাল শরীরটা ভারী হয়ে গেছে। একটু চললেই বেশ কষ্ট হয়ে যায়। বাহিরের থেকে স্বাভাবিক থাকলেও কোথাও না কোথাও বুকটা টিপ টিপ করছে। অনলের সাথে একই রুমে থাকবে ব্যাপারটা তাকে খুব ভাবাচ্ছে। অনলের তো ঠিক নেই গতবারের মতো কিছু করলে! ওয়াশরুমের দরজার শব্দে স্বম্বিত ফিরে ধারার। পাশ ফিরে থাকালে দেখে অনল ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। হয়তো গোসল করেছে। চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে, পরনে অলিভ কালারের টিশার্ট আর কালো থ্রি কোয়ার্টার। পা হাটু থেকে উম্মুক্ত বিধায় লোম গুলো দেখা যাচ্ছে। ধারা খেয়াল করলো তার বুকে যেনো কেউ ড্রামপিট বাজাচ্ছে। অনলের চোখে চোখে পড়তেই লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো সে, যেনো চোর ধরা পরেছে। এখন এই রুমে একেবারেই থাকতে পারবে না সে। তাই ধীর কন্ঠে বললো,
– তুমি খেতে আসো আমি ফুপির কাছে গেলাম
কথাটা বলে তড়িৎ গতিতে উঠতে গেলেই………
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি