I live in your hope,part_03
Adnan Mahmud
-তাসনিম চোখ খুলে রিয়াদকে ওর পেটের কাছের কাপড়ে হাত দিতে দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ল।বসে নিজের কাপড় ঠিকঠাক আছে কি না দেখে নিলো।
রিয়াদ তাসনিমের এরকম হাবভাব দেখে একটুখানি ভড়কে গিয়ে বলল,আসলে আমি তোর কিছু করিনি।তোর পেটের কাছের কাপড় সরে গিয়েছিল তাই ওটা ঠিক করে দিচ্ছিলাম।
-রিয়াদের কথায় তাসনিম কিছু না বলে শুধু চেয়ে আছে রিয়াদের মুখের দিকে।মনে মনে ভাবছে,আগেও সে একবার দেখেছে রিয়াদকে তার পেটের দিকে অন্যভাবে তাকিয়ে থাকতে।একটু ভেবেই নিজেকে সামলে নিলো এটা মনে করে যে,তাকাক না যেইভাবেই তাকাক।সে তো আমার স্বামীই।
-তাসনিম উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।রিয়াদ খানিকটা লজ্জাবোধ করে বিছানায় বসে পড়লো।রিয়াদের ওই সময়কার মুখ দেখে তাসনিমের খুব হাসি পাচ্ছিল।রিয়াদের সামনে হাসতেও পারছিল না।তাই ওয়াশরুমের আয়নাই নিজেকে দেখছে আর হাসছে।মুখে হাত দিয়ে হাসছে যাতে করে শব্দ বাইরে না যায়।
-মা তাসনিম,আসবো ভিতরে?বাইরে থেকে রাহি বেগম চেঁচাচ্ছে। রিয়াদ তার মায়ের গলা শুনে বলল, মা তাসনিম বাইরে গেছে মানে ওয়াশরুমে। তুমি আসো ভিতরে।
-আজকে সন্ধ্যার পর তোরা রেডি থাকিস।তোর বাবা সবাইকে নিয়ে শপিংমলে যাবে।রুমে ঢুকে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল রাহি বেগম।
মা ছেলের কথা শেষ না হতেই ওয়াশরুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো তাসনিম।
-এই যে,এইতো বেরিয়ে গেছে। শোন মা!আজ সন্ধ্যায় রেডি হয়ে থেকো তোমরা।তোমাদের বাবা শপিংমল যাবেন তোমাদেরকে নিয়ে তাসনিমকে দেখে এগোতে এগোতে বললেন রাহি বেগম।
-বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা। সবাই রেডি হচ্ছে শপিংমল যাবার উদ্দেশ্যে।কিন্তু রিয়াদের কোন গতিই যেন নেই। রুমে বসে ফোনের মধ্যে ডুবে রয়েছে সে।তাসনিম কয়েকবার বলেও ফেলেছে রেডি হবার জন্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা।উল্টে তাসনিমকে খেতে হয়েছে কড়া একটা ধমক।
-নিচে নিজস্ব গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে রেহান সাহেব। রিয়া অলরেডি উঠে পড়েছে গাড়িতে।রাহি বেগমও বের হয়ে গেছে বাসা থেকে।তাসনিম গিয়ে উঠে পড়ল গাড়িতে।রিয়ার পাশে গিয়ে বসেছে সে।তাসনিমকে একা দেখে রেহান সাহেব আর রাহি বেগম এক বাক্যে বলে উঠল, কি ব্যাপার বউ মা তুমি একা কেনো?রিয়াদ কোথায়?
– ঘরে বসে ফোন টিপছে।আমি বলেছি আসতে কিন্তু আসলো না।
সাধারণ ভাবে বলল তাসনিম।ধমকানোর কথাটা চেপে গেলো সে।
–কি হয়েছে? তোমাকে তোমার মা আর বউ মা বলেনি রেডি হতে?তো বসে আছ কেনো?
ছেলের রুমে গিয়ে কড়া গলায় বলল রেহান সাহেব।
শেষপর্যন্ত বাবার কথায় রেডি হয়ে এসে গাড়ির এক কোণের সিটে বসে পড়ল সে।
চৌদ্দ সিটের মাইক্রোবাস হওয়াতে কোন প্রবলেম হয়না তাদের।সুন্দর করে শুয়ে বসে জার্নি করা যায়।ড্রাইভিং সিটে বসেছিল রেহান সাহেব।রিয়াদ গিয়ে একেবার পিছনের একটা সিটে গিয়ে বসেছিল।
-রিয়াদ তুমি ড্রাইভ করো।আমার ভালো লাগছে না।আর বউ মা তুমি গিয়ে সামনের ওই সিটে বসো।তোমার শাশুড়ী মাকে পিছনে পাঠিয়ে দাও।রিয়াদ আর তাসনিমকে বলল রেহান সাহেব।
–মনে মনে এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম। মনে মনে বিড়বিড় করল রিয়াদ।
-কি হলো কিছু বললে নাকি?
ছেলের দিকে তাকিয়ে রেহান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন।
না না,বাবা।কিছু না।
হাসিমুখ করে রিয়াদ বলল তার বাবা রেহান সাহেবকে।
–গাড়ি নিজ গতিতে এগিয়ে চলছে শপিংমলের দিকে।তাসনিম রিয়াদের পাশেই বসে আছে।মাঝে মাঝে তাসনিম রিয়াদের দিকে তাকাচ্ছে। তাসনিম কয়েকবার দেখে নিয়েছে যে, রিয়াদ আড় চোখে তাসনিমের দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে।
-হঠাৎ করে কষে ব্রেক মারল রিয়াদ।ঝুল ঠেকাতে না পেরে তাসনিম গিয়ে বাড়ি খেল সামনে।বাড়ি খেতেই কাপাল লাল হয়ে গেলো।
-কিভাবে গাড়ি চালাও?মন কোথায় তোমার?বিরক্তিকর কন্ঠে বললেন রেহান সাহেব।
-না বাবা,আসলে সামনে একটা কুকুর চলে আসছিল তো তাই আরকি।
তাসনিমের দিকে তাকিয়ে ডেবিল মার্কা একাটি হাসি দিয়ে বলল রিয়াদ।আসলে সামনে কোন কুকুর কি কুকুরের “ক” ও ছিলো না।ইচ্ছে করে যে কাজটা করেছে রিয়াদ এটা তাসনিম ঢের বুঝতে পেরেছে।
-মা তোমার লাগে নি তো?তাসনিমের কাঁধের কাছে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল রাহি বেগম।
-এতোখনে তাসনিমের কপাল ফুলে বালিশ হয়ে গেছে।পেছনে না তাকিয়ে শাশুড়ীর জবাবে না বলে কথা ঘুরিয়ে দিল।
-আপতত কোন প্রবলেম হবে না।বোরকার জন্য ফুলাটা বুঝা যাবে না।আবার চলতে শুরু করল গাড়ি।পরে চলে এলো শপিংমলে।
-দেখ মা,শাড়ি কোনটা নিবা?শাড়ির বড়সড় একটা দোকানে ঢুকে তাসনিমকে জিজ্ঞেস করল শাশুড়ী রাহি বেগম।
-কি গো!আজকে মেয়েকে একবারের জন্যও ফোন করা হলো না।একটু ফোন করে দেখোতো। মাজেদ সাহেবকে বলল তাসনিমের মা রোকেয়া বেগম।
-হ্যালো মা!কেমন আছিস?কালকে আসছিস তো না?
ওহ,শপিংমলে গিয়েছিস।আচ্ছা সকাল সকাল চলে আসিস জামাইকে নিয়ে।আর তোর একটা ছোট ননদ আছে না ওকেও নিয়ে আসিস।আচ্ছা রাখি।
ফোন রেখে দিল মাজেদ সাহেব।
-ওরা শপিংয়ে গেছে।কাল সকাল সকাল আসতে বলে দিয়েছি। স্ত্রী রোকেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল মাজেদ সাহেব।
-কে ফোন করেছিল মা?তাসনিমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল রাহি বেগম।
-বাবা ফোন করে জিজ্ঞেস করল কখন যাচ্ছি। হেসে হেসে বলল তাসনিম।
-রিয়াদ তুমি একটা শাড়ি পছন্দ করে দাও বউ মায়ের জন্য। ছেলেকে বললেন রেহান সাহেব।
-রিয়াদ বাবার কথা মতো যেটা রিয়াদের কাছে একেবারে বাজে লেগেছে ওটাই পছন্দ করে দিলো।
তোমার চয়েস এতোটা নিম্ন, আগে জানলে তোমাকে চুজ করতে দিতাম না।এটা রাখো, রিয়াদের মা,তুমি একটা দেখো তো।
-না বাবা, এটাই থাক।ও পছন্দ করে দিয়েছে। এটাই নেওয়া উচিত আমার।রেহান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল তাসনিম।চোখে পানি টলমল করছে তাসনিমের।
-আরে মা এটা একেবারেই নিম্নমানের শাড়ি।এটার দাম এক হাজার টাকাও হবে না।এটা দিলে তোমাকে অপমানিত করা হবে।
তাসনিমের দিকে তাকিয়ে বলল রেহান সাহেব।
-কারোর কথা না শুনে তাসনিম ওই শাড়ি টাই নিয়ে নিলো।শাড়ির সাথে আরো অনেক কিছুই কিনেছে।সবার কেনাকাটা শেষ হলে বাসার দিকে রওনা হলো সবাই।
-ডিনারের প্রস্তুতি চলছে বাড়িতে। ওদিকে রহিমা খাবার সাজিয়ে গুছিয়ে রাখছে টেবিলে। আর এদিকে শপিং থেকে আনা সব কাপড় চোপড় মিলিয়ে দেখছে তাসনিম, রিয়া,রাহি বেগম আর রেহান সাহেব।
-রিয়াদ এসেই নিজের রুমের বেলকনিতে ইজি চেয়ারে বসে আছে।মনে মনে ভাবছে গাড়ির ব্রেক করার কথা।আসলেই এটা ঠিক হয়নি।খুব করে লেগেছে হয়তো।আবার শাড়ি,আমি পছন্দ করেছি তাই বাজারের সবচেয়ে কমদামি শাড়ি হাসি মুখে নিয়ে নিলো সে।
এভাবে নিজে নিজে আফসোস করতে থাকলো রিয়াদ।কিন্তু কি করবে,তাসনিম পাশে থাকলে মনে হয় যেন তাসনিয়া,পাশে রয়েছে। কিন্তু আবার যখন মনে হয় যে,এটা তাসনিয়া নয়,তখনই আর সহ্য হয় না।
-ডিনার শেষ করে যে যার রুমে চলে গেছে।তাসনিমও চলে এসেছে তাদের রুমে।রিয়াদ খাওয়া শেষ করে আগেই এসেছিল।কিন্তু রুমে নেই। হয়তো ছাঁদে গিয়েছে।
তাসনিম একলা ঘরে বসে রয়েছে।
-যায়তো একটু ছাঁদে গিয়ে দেখে আছি কি করে ওই বেটা।মনে মনে ভাবলো তাসনিম।যেই ভাবা সেই কাজ। তাসনিম ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
যেই ছাঁদে উঠার সিঁড়িতে পা রাখলো অমনি ছাঁদ থেকে কারোর পদশব্দ শুনতে পেলো। খানিকটা দাড়িয়ে স্থির করে নিলো যে,পদশব্দ এদিকেই আসছে।হয়তো নিচে নেমে আসছে রিয়াদ।
-ভৌ দৌড়ে চলে এলো নিজেদের রুমে।এসে খাটের এককোণে বসে রইল।রিয়াদ এলে দাড়িয়ে গেলো তাসনিম। রিয়াদকে বিছানা ঠিক করে দিয়ে একটা বালিশ হাতে নিয়ে বলল ঘুমোন।আমি সোফায় গিয়ে ঘুমোচ্ছি।
-রিয়াদ বিদ্যুৎ বেগে তাসনিমের কাছে গিয়ে তাসনিমের চুলের মুঠি হালকা করে ধরে তাসনিমের মুখের কাছে ওর মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,আমি অতটাও অমানুষ নয়।রিয়াদের নিশ্বাস তাসনিমের নিশ্বাসের সাথে মিশে যাচ্ছে।আর সিগারেটের গন্ধ ও আসছে। এতে তাসনিমের নিশ্বাস আটকে যাচ্ছে।
-রিয়াদ তাসনিমকে এভাবেই খানিকক্ষন রেখে ছেড়ে দিলো।
রিয়াদ বিছানায় গিয়ে শুয়ে তাসনিমকে বলল,খাটেই শুতে।তাসনিম এসে একপাশে চুপটি করে শুয়ে পড়ল।অন্য দিকে মুখ করে।
-খাটে আমার পাশে ঘুমোতে দিয়েছি, তাই বলে এটা নয় যে,তোকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি।অন্য দিক মুখ করে জোরে জোরে বলল রিয়াদ।
পরে দুজন দুদিক ফিরে ঘুমেয়ে পড়ল।
হঠাৎ রিয়াদের ঘুম ভেঙে গেলো।পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে দেখল রাত তিনটা বেজে পয়ত্রিশ মিনিট।খুবই অন্ধকার বিরাজ করছে পুরো রুম জুড়ে।পাশে হাত দিয়ে দেখল তাসনিম আাছে কিনা।
পর্দার ফাঁক দিয়ে এক ফালি চাঁদের আলো এসে পড়তেছে তাসনিমের মুখে।
-রিয়াদ আর থাকতে পারছে না। সে মিস করতে চাচ্ছে না।তাই কোনোকিছু না ভেবেই উঠে গেলো,,
চলবে…