মেঘসন্ধি,পর্ব-০৯
লেখনীতে:সারা মেহেক
হারুন সাহেবের প্রশ্ন শুনে আয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। তাঁর এমন প্রশ্নের কোনো আগামাথা না পেয়ে আয়ান চোখমুখ কুঁচকে জিজ্ঞাস করলো,
” কি বলছেন আংকেল? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। পরিষ্কারভাবে বলুন।”
আয়ানের অবুঝ রূপ দেখে শায়েলা বেগম উঠে এলেন৷ মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
” এতোদিন তুমি আর মৌ প্রেমলীলা চালিয়ে এখন আমার ছেলের ঘাড়ে মৌ কে চাপিয়ে দিতে চাইছো?”
শায়েলা বেগমের কথা এহেন কথায় ড্রইংরুমে ছোটখাটো একটা বোম ফাটলো যেনো। মূহুর্তেই সবার কানাকানি বন্ধ হয়ে গেলো। হৃদয় এবং তার বাবা মা বাদে সকলেই স্তব্ধ চাহনিতে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলেন। মৌ নিজের কান’কে বিশ্বাস করাতে পারছে না৷ তার দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনই শরীরের সমস্ত শক্তি হারিয়ে সে মাটিতে লুটিয়ে পরবে। এদিকে জহির ইসলাম, হারুন সাহেবের মুখে এমন নিচু কথা শুনতে পাবে, তা তিনি কখন চিন্তাও করেননি। তাঁর বুকে ব্যাথা ক্রমশ বাড়ছে। চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিজের ব্যাথা কমানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
শায়েলা বেগমের কথায় মাহতাব প্রচণ্ড রেগে এগিয়ে যেতে চাইলে আয়ান তাকে আটকে ফেললো। চোখের ইশারায় মাহতাবকে শান্ত হতে বলে সে নরম গলায় বললো,
” আন্টী, আপনি যা বলছেন একটু ভেবেচিন্তে বলছেন তো?”
শায়েলা বেগম গলা উঁচিয়ে বললেন,
” তো? তোমার কি মনে হয় আমি ভিত্তিহীন কথা বলছি? ”
আয়ান বিস্তৃত হেসে বললো,
” অবশ্যই। আপনার কথাবার্তা শুনে এমনটাই মনে হচ্ছে। ”
শায়েলা বেগম কিছু বলতে যাবে, এর আগেই হারুন সাহেব প্রচণ্ড রেগে জহির ইসলামের উদ্দেশ্যে বললেন,
” ভাই, আপনার থেকে এমনটা আশা করেছিলাম না। এমন একটা চরিত্রহীন মেয়েকে আপনি আমার ছেলের ঘাড়ে তুলে দিতে বসেছিলেন?”
জহির ইসলামের বুকে ব্যাথা আগের মতোই রয়ে গেলো। তবে তাঁর মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে এলো। হারুন সাহেবকে আগ বাড়িয়ে কিছু বলার মতো পরিস্থিতি তার নেই। তবে জহির ইসলামের কাজটা মাহতাব করে দিলো। সে আয়ানের বাঁধা উপেক্ষা করে হারুন সাহেবের দিকে এগিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বললো,
” খবরদার…আর একটা আজেবাজে কথা বলেছেন তো আপনার নামে মানহানির কেস করবো আমি।”
মাহতাবের কথা হেসেই উড়িয়ে দিলেন হারুন সাহেব। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন,
” এতোটাও সহজ না এসব করা। আগে তোমার বোনকে সামলাও তারপর কথা বলতে এসো। নিজের বোনকে সামলানোর যোগ্যতা নেই, আবার বড় বড় কথা বলতে আসছে।”
হারুন সাহেবের এমন তীর্যক কথাবার্তা শুনে মৌ, জহির ইসলাম এবং অবন্তিকা ইসলামের অবস্থা ধীরেধীরে খারাপ হতে লাগলো। মৌ যেনো শ্বাস নিতেই ভুলে গিয়েছে। হাত পা, কিছুই চলছে না তার। মস্তিষ্ক পুরোপুরি শূন্য হয়ে গিয়েছে। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বেয়ে পড়ছে নোনা জলের একেকটা কণা। সে বেশ কষ্টে অহনার সাহায্যে ফ্লোরে দাঁড়িয়ে আছে। অবন্তিকা ইসলাম জান্নাত এবং আয়ানের মা’র সাহায্যে বসে আছেন। জহির ইসলাম সাহায্য নিয়েছেন আফসার খানের।
আয়ান এতক্ষণ শান্ত থাকলেও এখন কিছুতেই শান্ত হতে পারছে না সে। ধীরেধীরে নিজের উপর হতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে সে। তবুও হারুন সাহেবের বয়স দেখে সম্মান করতে গিয়ে সে দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে শান্ত করার প্রচেষ্টা নিয়ে বললো,
” সেই কখন থেকে কিছু আজেবাজে কথা বলে যাচ্ছেন, আমি কিছু বলছি না। কিন্তু আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেন না আংকেল। এখানে কারোর অবস্থাই ভালো নেই আপনার কথাবার্তার ধরণ শুনে। দয়া করে, ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন। কি কারণে আমার আর মৌ এর উপর এমন অভিযোগ তুলছেন আপনি। ”
হারুন সাহেব ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বললেন,
” তুমি আর মৌ যে একে অপরকে ভালোবাসো, এটা আমরা জেনে গিয়েছি।”
আয়ান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাস করলো,
” এসব আপনাকে কে বলেছে? ”
” আমার ভাইয়ের মেয়ে বলেছে। ও মৌ’দের ভার্সিটিতেই পড়ে। এমনকি মৌ আর অহনার ব্যাচেই পড়ে। সেই আমাকে বলেছে, মৌ আর তোমাকে আজ ফাঁকা একটা ক্লাসরুমে একসাথে দেখেছে।”
হারুন সাহেবের কথা শেষ হওয়া মাত্রই ড্রইংরুমে উপস্থিত সবকটা মানুষের দৃষ্টি আয়ান এবং মৌ এর উপর নিবদ্ধ হলো। প্রতি জোড়া চোখেই দেখা মিলছে তীব্র অবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। আয়ান হতভম্ব হয়ে ঘাড় ফিরিয়ে মৌ কে একনজর দেখে নিলো। মৌ এর চোখজোড়া টকটকে লাল হয়ে আছে। কান্না করার ফলে নাকটাও লালচে রঙ ধারণ করেছে। আয়ান মৌ এর চোখে এ মূহুর্তে নিজের জন্য একরাশ ঘৃণা এবং রাগ দেখতে পেলো।
আয়ান ঘাড় ফিরিয়ে কিছু বলতে যাবে। তবে তার আগেই মাহতাব চেঁচিয়ে উঠে বললো,
” মুখ সামলে কথা বলুন আংকেল৷ আর একটা মিথ্যা কথা বললে আমি ভুলে যেতে বাধ্য হবো যে, আপনি আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়।”
মাহতাবের কথা শুনে হৃদয় তেড়েমেড়ে গিয়ে বললো,
” আমার বাবা ঠিক কথাই বলছেন। আপনার বোন আর আপনার বন্ধু আজ ফাঁকা একটা ক্লাস রুমে একসাথে ছিলো।”
মাহতাব প্রচণ্ড রাগে হৃদয়ের শার্টের কলার চেপে ধরো বললো,
” কোনো প্রমাণ আছে?”
হৃদয় খানিকটা ভয় পেলেও বেশ সাহস নিয়ে বললো,
” অবশ্যই। প্রমান ছাড়া এতো বড় কথা বলতে এখানে আসিনি আমরা।”
হৃদয়ের কাছে প্রমাণ আছে শুনে মাহতাব এবার থমকে গেলো। এতোক্ষণ সে ভেবেছিলো, হৃদয় এবং তার পরিবার কোনো এক কারণে মৌ এবং আয়ানের উপর মিথ্যা অভিযোগ এনে কোনো স্বার্থ সিদ্ধি করতে চাইছে। কিন্তু যখন সে প্রমাণের কথা শুনলো, তখন সে বুঝতে পারলো, হৃদয় এবং তার পরিবার মিথ্যা কথা বলছে না৷ সে নিজেকে সামলে নিয়ে হৃদয়ের শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকালো। আয়ান সাথে সাথে ঘাড় পাশে ফিরিয়ে নজর লুকিয়ে নিলো। মূহুর্তেই মাহতাবের চোখেমুখে তীব্র অবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবির দেখা মিললো। সে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে কাঁপা-কাঁপা গলায় বললো,
” কি প্রমাণ আছে দেখাও। ”
মাহতাবের অনুমতি পেয়ে হৃদয় নিজের পকেট হতে ফোন বের করে আয়ান এবং মৌ’য়ের তখনকার কথাবার্তার রেকর্ডিং চালু করলো। তাদের কথাবার্তা শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট পর থেকে রেকর্ড করা হয়েছে। আয়ান এবং মৌ এর প্রতিটা কথা স্পষ্টভাবে শুনতে পেলো সকলে। কেউই বিশ্বাস করতে চাইছিলো না, ওপাশের দুটো ব্যক্তি আয়ান এবং মৌ।
আয়ান হাতের মুঠো শক্ত করে পুরো রেকর্ডিং শুনলো, আর মৌ ঠোঁট কামড়ে নিজের প্রতিটা কথা শুনলো। দীর্ঘ বারো মিনিটের রেকর্ডিং শেষ হতেই মাহতাব অবিশ্বাসের সুরে মৌ কে জিজ্ঞাস করলো,
” মৌ? তুই আয়ানকে ভালোবাসতি!”
মৌ কোনোরূপ জবাব না দিয়ে ধীরেধীরে মাথা নামিয়ে ফেললো। তার চোখ উপচে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। কয়েক সেকেন্ড বাদে অবন্তিকা ইসলাম কাঁপা-কাঁপা গলায় জিজ্ঞাস করলেন,
” এসব কি সত্য?”
মৌ এবারও কোনো জবাব দিলো না। সে জবাব দেওয়ার মতো কিছু পাচ্ছে না। নিজের প্রতি এবং আয়ানের প্রতি সে এ মূহুর্তে তীব্র ঘৃণা অনুভব করছে। তার মন চাইছে এখনই নিজেকে শেষ করে দিতে। এসব আর সইতে পারছে না সে। বুকের ভেতর কষ্টগুলোও ধীরেধীরে মোচড় দিচ্ছে। কি করবে এখন সে? আর কতো সহ্য করবে?
এদিকে আয়ান প্রচণ্ড রাগে হৃদয়ের ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে ক্রুদ্ধ গলায় বললো,
” এখানে কি কোথাও এমনটা শোনা যাচ্ছে, আমি আর মৌ একে অপরকে ভালোবাসি?”
হৃদয় কোনো জবাব দিতে পারলো না। জবাব দিতে পারলেন না হারুন সাহেব এবং শায়েলা বেগমও। আয়ান কোনো জবাব না পেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে হৃদয়ের উদ্দেশ্যে বললো,
” এই রেকর্ডিং থেকে যদি এটা বের করতে না পারিস যে, আমি আর মৌ একে অপরকে ভালোবাসি, তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউই হবে না। এ বাসা থেকে তখন তোর হাড়গুলো বের হবে শুধু। ”
এই বলে সে ফ্লোর থেকে ফোনটা নিয়ে হৃদয়ের হাতে গুঁজে দিলো। বললো,
” সোফায় বসে আরামসে পুরো রেকর্ডিংটা মনযোগ দিয়ে শুনবি। কোথায় কোথায় আমার আর মৌ এর একে অপরকে ভালোবাসার কথা বলা আছে তা বের করবি। বাই এনি চান্স, এমনটা না বের করতে পারলে তোর একদিন কি আমার একদিন। ”
এই বলে সে হৃদয়কে সোফার দিকে ধাক্কা দিলো। হৃদয় এবং তার বাবা মা এ মূহুর্তে প্রচণ্ড ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আছেন। কারোর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। এদিকেই মৌ এবং আয়ানের পরিবারের সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব তামাশা দেখে চলছে। এ মূহুর্তে তাদের বলার কিছুই নেই। জহির ইসলাম খুব কষ্টে নিজের ব্যাথা লুকিয়ে রেখে সবটা দেখে চলছেন। কোনো একটা বিহিত দেখেই তিনি এখান থেকে উঠবেন। এর আগে নয়।
আবারো বারো মিনিট সময় নিয়ে হৃদয় এবং তার বাবা মা রেকর্ডিং শুনলো। অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে রেকর্ডিং শুনে তারা উপলব্ধি করলো, এখানে কোথাও আয়ান এবং মৌ একে অপরকে ভালোবাসে তা বলেনি। বরং মৌ ভালোবাসার কথা বললেও তা অতীত হিসেবে বলেছে। অর্থাৎ সে আয়ানকে ভালোবাসতো, বর্তমানে ভালোবাসে না।
রেকর্ডিং শেষ হতেই হৃদয় শুকনো মুখে আয়ানের দিকে তাকালো। ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গিয়েছে সে৷ হৃদয়ের চেহারার এ অবস্থা দেখে আয়ান চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
” পেয়েছিস কোথাও? ”
হৃদয় কিছু বললো না৷ চুপচাপ বসে রইলো। আয়ান এবার গর্জে উঠে বললো,
” শালা….তুই যেমন ঠসা তেমন তোর মাথাটাও পুরো গোবরে ঠাসা। ভালোমতো সবটা না শুনে লাফাতে লাফাতে একটা মেয়ের দোষ ধরতে চলে এসেছিস। আগেপিছে ভাবনা চিন্তা করার ক্ষমতা কি তোর নাই? পারিস তো শুধু সন্দেহ করতে। একটা মেয়ে এবং একটা ছেলে ক্লাসের ফাঁকা রুমে একসাথে আছে, এর মানে মহা বড় পাপ হয়ে গিয়েছে তাইনা? তুই এক মাথামোটা আর এ রেকর্ডিং যে করেছে সেও হয়তো কোনো এক মাথা মোটা মানুষ। বাই দা ওয়ে, রেকর্ডিং করলো কে?”
হৃদয় মাথা নিচু করে মিনমিন করে বললো,
” আমার চাচাতো বোনকে যখন মৌ এর ছবি দেখাই তখন সে বললো, মৌ তাদের ব্যাচেই পড়ে। আর সে আপনাকে একদিন প্রপোজ করেছিলো। এটা শুনে আমি ওকে মৌ এর উপর নজর রাখতে বলেছিলাম। এজন্য এ কয়দিন ও মৌ এর নজর রেখেছিলো। আজ যখন সে মৌ কে একটা ফাঁকা ক্লাস রুমে ঢুকে যেতে দেখে তখন তার একটু সন্দেহ হয়৷ আবার যখন বাইরে থেকে আরেকটা মেয়ে দরজা আটকে দেয় তখন তার সন্দেহ জোরালো হয়। এজন্যই মেয়েটা সেখান থেকে চলে যেতেই সে ক্লাস রুমের বাইরে উঁকিঝুঁকি দিতেই আপনাকে আর মৌ কে কথাবার্তা বলতে দেখে।আর আমাদের কাছে এসব দেখানোর জন্যই তখন ফোনে সে কথাবার্তার রেকর্ডিং করে ফেলে।”
হৃদয়ের কথা শেষ হতেই আয়ান হাত তুলে জোরে জোরে হাত তালি দিয়ে বললো,
” তোদের ফ্যামিলিকে তো গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করা দরকার ছিলো। তোরা এখানে কেনো? ছোট্ট একটা কথার রেশ ধরে কিভাবে সন্দেহ করা যায় তা তোদের দ্বারাই শিখতে হবে দেখছি। এই যে, এতোগুলা মানুষের সামনে আমাকে আর মৌ কে নিয়ে বাজে কথা বললি সেগুলোর ক্ষতিপূরণ কে দিবে?”
হৃদয় এবং তার বাবা মায়ের মুখখানা এবার ভয়ে চুপসে এলো। এতোকিছুর পরও হারুন সাহেব দমে রইলেন না৷ বরং গলা উঁচিয়ে বললেন,
” এখন ঐ মেয়ে তোমাকে ভালোবাসে না। কিন্তু ভালোবাসতো তো? বলা তো যায় না, বিয়ের পর ওর মনে পুরোনো ভালোবাসা জেগে উঠলো। তখন আমার ছেলেকে ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসলো।”
আয়ান মেকি হাসি দেখিয়ে বললো,
” আংকেল, বুড়ো বয়সে ব্রেইনটা একটু কম ব্যবহার করলে ভালো হয়। কারণ শেষ বয়সে এসে কিন্তু ব্রেইন ক্ষয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা হওয়ার না, তা নিয়ে এতো আন্দাজে ঢিল মারতে আসেন কেনো? মৌ এর চরিত্র…….”
আয়ানের কথা শেষ হতে না হতেই শায়েলা বেগম মেকি সাহস দেখিয়ে বললেন,
” তোমার আর মৌ এর মধ্যে এমন কি হয়েছিলো যে তুমি ওর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এতো মরিয়া হয়ে উঠেছিলে?”
আয়ান শত চেষ্টার পরও নিজের রাগ সংবরণ করতে পারলো না। এজন্যই হাতের পাশে থাকা কাঠের শো পিছটা এক টানে ফেলে দিয়ে বললো,
” দুনিয়ার প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসছে এই বেকুব ফ্যামিলি। মৌ আমাকে প্রপোজ করেছিলো। তখন রাগের মাথায় সবার সামনে ওর প্রপোজাল রিজেক্ট করে ওকে অপমান করেছিলাম। পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে ওর কাছে সরি বলেছিলাম? হ্যাপি নাও?”
আয়ানের এ কথা বলার পর হৃদয় এবং তার বাবা মায়ের কিছু বলার রইলো না৷ তাদের প্রত্যেকের মুখখানা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে রইলো।
খানিক বাদে মাহতাব ঠাণ্ডা গলায় বললো,
” আশা করি সব ক্লিয়ার হয়ে গিয়েছে আপনাদের সামনে। এবার আপনারা যেতে পারেন৷ ”
হারুন সাহেব কিছু বলতে চাইছিলেন। কিন্তু মাহতাব হাত উঁচিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
” কোনোরূপ কথাবার্তা ছাড়াই চলে গেলে ভালো হবে আপনাদের জন্য৷ আর হ্যাঁ, ভুলেও এ বাড়ির আশেপাশে আসার চেষ্টা করবেন না। এমনটা দেখলে আপনাদের নামে মানহানির কেসসহ আরো মিথ্যা কয়েকটা কেস ছুঁড়ে দিবো।”
মাহতাবের কথা শেষ হতে না হতেই হৃদয় এবং তার বাবা মা গুটি গুটি পায়ে বাসা হতে বেড়িয়ে গেলেন। তারা চলে যেতেই আয়ান বিড়বিড় করে বললো,
” শালা আস্ত বেকুব আর মাথা মোটা ফ্যামিলি। ”
এই বলে সে পিছন ফিরে ডাইনিং এর দিকে তাকিয়ে দেখলো জহির ইসলাম বুকের বামপাশে এক হাত চেপে চোখজোড়া খিঁচে বন্ধ করে আছেন। তাঁর এমন অবস্থা দেখেই আয়ান দৌড়ে জহির ইসলামের কাছে এসে দাঁড়িয়ে পরলো। ভয়ার্ত কণ্ঠে বললো,
” আমার মনে হয় আংকেলের হার্ট এটাক হয়েছে।”
আয়ানের কথা অবন্তিকা ইসলাম, মাহতাব, জান্নাত এবং মৌ এর কানে যেতেই তারা হুড়োহুড়ি করে জহির ইসলামের কাছে চলে এলো। আফসার খান এতক্ষণ জহির ইসলামের পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও স্তব্ধ হয়ে সবটা দেখছিলেন বলে জহির ইসলামের বুকে ব্যাথা বুঝতে পারেননি। আয়ানের কথা হুট করে তার কানে ভেসে আসতেই তিনি পিছন হতে জহির ইসলামকে ধরে ফেললেন৷ এদিকে অবন্তিকা ইসলামের মুখ ভয়ে পাংশুটে বর্ণ ধারণ করলো। তিনি অস্ফুটস্বরে বললেন,
” মাহতাব, দ্রুত ডাক্তার ডাক। ”
জহির ইসলামের বুকে ব্যাথা আগের তুলনায় ক্রমশ বাড়ছে। পুরো শরীর একেবারে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে এসেছে। প্রচণ্ড অস্থির অনুভব করছেন তিনি। জান্নাত এবং অহনা ভয়ে এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে তাঁর হাত পা মালিশ করে দিচ্ছেন। আয়েশা খানসহ বাসায় উপস্থিত কিছু আত্মীয়স্বজন দোয়াদরুদ পড়ছেন এবং কিছু আত্মীয়স্বজন প্রচণ্ড অস্থিরতা দেখাচ্ছেন।
এদিকে বাবা’র এমন অবস্থা দেখে রান্নাঘর থেকে কিছুক্ষণ আগে পানি নেওয়ার জন্য ছুটে যাওয়া মৌ মাত্রই ফিরে এলো। জহির ইসলামের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে কান্নারত কণ্ঠে বললো,
” আব্বু, পানি খাও প্লিজ। আর শক্ত থাকার চেষ্টা করো।”
চলবে
(টাইপিং মিস্টেকগুলো কষ্ট করে শুধরে পড়ে নিবেন।)