মেঘসন্ধি,পর্ব-০৬
লেখনীতে:সারা মেহেক
জহির ইসলামের বাসায় মেহমানদারীর তোড়জোড় চলছে। নানা পদের রান্নাবান্না করে ডাইনিং টেবিল প্রায় ভরিয়ে তুলেছেন অবন্তিকা ইসলাম। সকাল থেকেই তনিমা খান, অহনা এবং জান্নাত তাকে সাহায্য করছে। সকলের মধ্যেই ব্যাপক উৎসাহের দেখা মিলছে৷ এ বাড়ির মেয়েকে দেখতে আসবে বলে কথা!
মাহতাব আজ দুপুরের মধ্যেই অফিস থেকে ছুটি ফিরবে। সাথে আয়ানকেও নিয়ে আসবে সে। জহির ইসলাম অতি খুশিতে সকাল হতে এ পর্যন্ত তিন- চারবারেরও বেশি সময় ছেলেপক্ষকে ফোন করেছে। তারা কখন আসবে, কতদূর এসব নিয়েই প্রচণ্ড ব্যস্ত হয়ে পরেছেন তিনি। এতো ব্যতিব্যস্ত হওয়ার ফলে উনার প্রেশার স্বাভাবিক এর চেয়ে খানিকটা উপরে উঠেছে। এ নিয়ে পরে আফসার খান উনাকে শান্ত হতে বলেছেন। কিন্তু উনাকে কিছুতেই শান্ত করে বসিয়ে রাখা যাচ্ছে না। মেয়ের বাবা বলে কথা!
.
জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকে বসে আছে মৌ। চেহারায় তার উদাসীনতার ভাব স্পষ্ট। তবে হৃদয়ে তৈরী হওয়া ক্ষতটা কাররো নিকটই স্পষ্ট নয়। এই ক্ষতটার বোঝা একমাত্র সে-ই বয়ে বেড়াচ্ছে। ভেতরে ভেতরে সে কিভাবে সমাপ্ত হচ্ছে তার বর্ণনা সে কাউকে বলতে পারেনি৷ বরং মুখ বুজে সে সহ্য করে নিয়েছে। আজ দুদিন হলো আয়ানের সাথে কোনরূপ কথাবার্তা বলে না সে। এমনকি এই দুইদিন আয়ানের সম্মুখীনও হয়নি সে। কারণ সে এতোটাও সাহসী নয় যে, আয়ানের মুখোমুখি হয়ে প্রতিটা মূহুর্তে নিজেকে দূর্বল হতে দিবে সে। আয়ানকে সে ভালোবাসে তবে নিজের আত্মসম্মানের চেয়ে বেশি নয়। দুদিন আগে, আয়ান যেভাবে মৌ কে অপমান করেছিলো তাতে মৌ এর আত্মসম্মানে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছিলো। তখনই সে সিদ্ধান্ত নেয়, আয়ানকে চিরতরে নিজের মন থেকে উঠিয়ে দিবে। আয়ান নামক কোনো ব্যক্তিকেই সে মনে রাখবে না। সে মূহুর্তে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ মনে হলেও পরে এসে এ সিদ্ধান্তে অটল থাকা তার জন্য সহজ হয়ে উঠছে না।
রোজ রোজ আয়ানকে দেখা, নানা বাহানায় আয়ানের সাথে কথা বলা, মাঝেমধ্যে ইচ্ছা করেই আয়ানের শাসন শোনা, এসব মৌ’য়ের নিত্যদিনের এক অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো। অথচ নিয়তির খেলায় সে অভ্যাস এখনই, এ মূহুর্তেই ত্যাগ করতে হবে, এমন একটি পরিস্থিতি তৈরী হয়ে গিয়েছে তার জন্য। কিন্তু এতো বছরের অভ্যাস কি দুই দিনেই মুছে ফেলা যায়? উত্তর হলো, না। এ ধরণের অভ্যাসগুলো মন-মস্তিষ্ক থেকে মুছে যেতে অনেক সময়ের প্রয়োজন৷ কিন্তু সেই সময়ই তো নেই মৌ’য়ের কাছে। এতোটা সময় নিয়ে ফেললে তো নিজের সমাপ্তি দেখতে পাবে সে!
চোখের কোল ঘেষে লেপ্টে থাকা নোনাজলের অংশবিশেষ মুছে আকাশ পানে তাকিয়ে রইলো মৌ। মাঝে মাঝে শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে তার। বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় এ অক্সিজেনকেও ক্ষেত্রবিশেষে তার নিকট বোঝা মনে হচ্ছে। ছোট্ট একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বাসার সামনের রাস্তার দিকে তাকালো। আয়ান এবং মাহতাব একত্রে হেঁটে হেঁটে আসছ। দুজনের মাঝে চলছে জরুরি বিষয়ে কথাবার্তা। মৌ’র দৃষ্টিজোড়া আয়ানের উপর পড়তেই চট করে সে চোখ বন্ধ করে নেয়। তার মনোজগতে উঁকি দেয় কিছু প্রশ্ন, কিছু কথা…
কাউকে ভালোবাসা এতোটা কষ্ট দেয় কেনো? কেনো সারাজীবন সুখে রাখে না এ ভালোবাসা? এতোকিছু জানার পরও আমরা সেই ভালোবাসার পিছনেই কেনো ছুটে যাই? সবটা জানার পরও ক্ষণিকের সুখের আশায় ভালোবাসা নামক মরিচিকার পিছনে ছুটে যাই আমরা এবং সেখানে দেখা মেলে শুধু কষ্ট আর কষ্ট। কষ্ট ব্যতিত সুখকর অনুভূতি নেই বললেই চলে।
হঠাৎ দরজার ওপার হতে জান্নাতের কণ্ঠস্বর শুনে ভালোমতো চোখের আশেপাশে মুছে নিলো মৌ। ওড়না ঠিক করেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পরলো সে। অতি সন্তর্পণে দরজা খুলে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ভিতরে চলে এলো সে।
মৌ এর উদাস চেহারা জান্নাতের দৃষ্টিগোচর হতেই ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। তার পিছুপিছু অহনাও মৌ এর রুমে এসে উপস্থিত হয়েছে। মৌ বিছানায় বসে পরার সাথে সাথেই অহনা দরজা বন্ধ করে দিয়ে মৌ এর পাশে বসে পরলো। জান্নাতও মৌ এর অপর পাশে বসেছে।
অহনা মৌ এর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নরম সুরে জিজ্ঞাস করলো,
” কেমন লাগছে?”
মৌ মাথা তুলে হালকা হাসি দিলো। যে হাসিতে নেই কোনো আনন্দ, শুধু লুকিয়ে আছে কষ্ট। অহনার বুকটা কষ্টে মোচড় দিয়ে উঠলো। ক্ষীণ স্বরে সে বললো,
” বিয়েতে রাজি হওয়া কি এতোটাই দরকার ছিলো?”
মৌ মাথা নিচু করে অহনার হাত হতে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। ছোট ছোট পা ফেলে জানালার কাছে এসে আকাশ পানে চেয়ে রইলো সে। কিছুক্ষণ বাদে উদাস গলায় বললো,
” আয়ান ভাইয়াকে ভুলে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়ের মধ্যে একটা এটা। ভাগ্য কিছুটা সহায়ক বলেই এমন সময়ে আমার জন্য বিয়ের প্রপোজালটা আসে। আর একদিন না একদিন তো বিয়ে করতেই হবে আমাকে। তো এখনই কেনো নয়?”
অহনা এবং জান্নাত দুজনেই বিছানা ছেড়ে উঠে এসে মৌ এর পাশে দাঁড়ালো। জান্নাত মৌ এর কাঁধে হাত রেখে বললো,
” জানি, তোমাকে একদিন না একদিন বিয়ে করতেই হবে। কিন্তু একটু সময় তো নিতে পারতে। দুইদিন আগেই এতোকিছু হয়ে গেলো…..নিজেকে সামলিয়ে নিতে একটু সময় তো নিবে।”
মৌ শ্লেষাত্মক হাসি দিয়ে বললো,
” নিজেকে সামলিয়ে নেওয়ার কি আছে ভাবী? আই এম ফাইন৷ শুধু একটুখানি কষ্ট হচ্ছে এই আরকি।”
অহনা কণ্ঠে চাপা রাগ দেখিয়ে বললো,
” একটু কষ্ট? আমাদের কি অবুঝ মনে হয় তোর? গত দুইদিন ধরে কেঁদেকেটে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছিস আর আমাদের বলছিস একটু কষ্ট! ভাইয়ার প্রতি এমন রাগ কখনই হয়নি আমার। আমি মেনেই পারছি না……”
অহনাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে মৌ শান্ত স্বরে বললো,
” পাস্ট ইজ পাস্ট। আমার মনে হয়, আজ হতে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো। আমার খুশির জন্য অন্তত চুপ থাক অহো। ভাবী, তুমিও এ ব্যাপারে কিছুুই বলবে না আমাকে। আব্বু, আম্মু আর ভাইয়া ভেবেচিন্তেই হৃদয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। আমি তাদের সিদ্ধান্তে খুশি আর বাবা মা তো কখনও সন্তানের খারাপ চাইবে না তাইনা? হৃদয়ের সাথে বিয়েতে আমার দ্বিমত নেই। যতদূর শুনেছি হৃদয় অনেক ভালো ছেলে। হ্যাঁ, তাকে আমি ভালোবাসি না। হয়তো কখনই ভালোবাসতে পারবো না। কারণ, একবার যে পথে গিয়ে কষ্ট পেয়েছি সে পথে ভুলেও দ্বিতীয়বার পা বাড়াবো না আমি। ভালোবাসা ছাড়াও তো সংসার করা যায়। আমি সেটাই করবো। এজন্য, প্লিজ তোমরা দুজনে এ বিষয়ে আমাকে আর কিছুই জিজ্ঞাস করবে না। ওকে?” এই বলেই মৌ দু হাতের আঙ্গুল দিয়ে বেশ জোর লাগিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললো। জান্নাত এবং অহনা হালকা হেসে বললো,
” ওকে। আর কখনই বলবো না।”
তিনজনের ঠোঁটের কোনেই এবার দেখা মিললো মৃদু হাসির ছোঁয়া।
কিছুক্ষণ বাদে জান্নাত বললো,
” তোমাকে রেডি করিয়ে দিতে এসেছিলাম। আর কিছুক্ষণের মাঝেই হয়তো হৃদয় আর হৃদয়ের ফ্যামিলি চলে আসবে। তুমি ওয়াশরুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নাও।”
মৌ কোনোরূপ প্রত্যুত্তর না দিয়েই মৃদু হাসি বিনিময় করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
.
” মেয়ে তো মাশা-আল্লাহ অনেক সুন্দর। মেয়ের ছবি দেখেই পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো আমার। এখন সামনাসামনি দেখে তো মন চাইছে আজই আমাদের বাড়ির বউ করে নিয়ে যাই৷ ” শায়লা বেগমের কথা শেষ হতেই ড্রইংরুমে ছোটখাটো একটা হাসির রোল পরে গেলো। অবন্তিকা ইসলাম বললেন,
” মেয়ে তো এখন থেকে আপনাদেরই। আগামী শুক্রবার কাগজে কলমে একদম আপনাদের বাড়ির বউ হয়ে যাবে সে।”
অবন্তিকা ইসলামের কথা শেষ হতেই হৃদয়ের বাবা হারুন সাহেব বললেন,
” বিয়ের তারিখ তো সব ঠিকঠাক। তবুও ছেলেমেয়ে যদি একটু একা কথা বলে……..”
জহির ইসলাম অতি উৎসাহের সহিত বললেন,
” জ্বি জ্বি কেনো নয়। জান্নাত, তুমি মৌ আর হৃদয়কে মৌ এর রুমে নিয়ে যাও। ওখানেই কথা বলুক ওরা।”
জান্নাত হালকা হেসে বললো,
” আচ্ছা আব্বু। আমি নিয়ে যাচ্ছি ওদের। “এই বলে সে মৌ কে উঠে আসতে ইশারা করলো। মৌ সোফা ছেড়ে উঠে আসতেই হৃদয়ও তার পিছুপিছু চলে এলো।
এদিকে আয়ান এতক্ষণ যাবত সম্পূর্ণ ঘটনা মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করছিলো। মৌ’র হবু শাশুড়ীর মুখে মৌ’র এতো শত তারিফ শুনে সে মৌ এর দিকে ভ্রু কুটি করে তাকালো। জহুরি চোখে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলো মৌ কে। আসলেই কি মৌ এতো সুন্দর নাকি এই ভদ্রমহিলাই সবকিছু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছেন? এটার জবাব খুঁজতেই আয়ান সকলের চোখে ফাঁকি দিয়ে মৌ কে দেখে চলছিলো। তবে এর মধ্যে বাগড়া দিয়ে দিলেন হারুন সাহেব। এভাবে হুট করে ছেলেমেয়েকে একা কথা বলতে দেওয়ার মানে কি! আয়ান এটা ভেবে পেলো না।
মৌ এবং হৃদয় ড্রইংরুমে ছেড়ে চলে যেতেই জহির ইসলাম আফসার খান এবং আয়ানকে হৃদয়ের পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর পরই বিয়ের তারিখ এবং কতজন মেহমানকে দাওয়াত দিবেন সেসব নিয়ে আবারো আলোচনা শুরু করে দিলেন। আয়ানও এ আলোচনায় যোগ দিলো। তবে অফিস হতে একটা জরুরি ফোন আসায় সে আলোচনার মাঝেই উঠে চলে গেলো।
ডাইনিং এ টইটই করে হাঁটতে হাঁটতে সে ফোনে কথা বলছিলো। পাঁচ মিনিট বাদে কথা শেষ হতেই তার চোখ আটকে গেলো মৌ এর রুমের ব্যালকোনির দিকে। রুমে কেউই নেই। বরং ব্যালকনিতেই হৃদয় আর মৌ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
রুমের বাইরে দাঁড়িয়েই মৌ এর রুমের ব্যালকনি স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এমনকি স্বাভাবিক এর চেয়ে একটু জোরে কথা বললেই রুমের দরজা খোলা থাকলে বাইরে থেকে সব কথাই মোটামুটি শোনা যায়।
আয়ান বাইরে দাঁড়িয়ে থেকেই ব্যালকনি হতে হৃদয়কে দেখতে পেলো। তবে মৌ কে দেখতে পেলো না। কারণ মৌ দেয়ালের ওপাশে রয়েছে। আয়ান কি মনে করে রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলো। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিজোড়া আবদ্ধ হলো হৃদয়ের উপর। ছিপছিপে গড়নের ছেলেটার মধ্যে ভদ্রতার এক প্রতীকের দেখা মিলে। চেহারা দেখেই সকলে বলে দিতে পারবে হৃদয় নামের ছেলেটি বেশ ভদ্র। তবে আয়ান এ ভদ্রতার ট্যাগের সাথে আরেকটি ট্যাগ যুক্ত করতে চাইছে। সেই ট্যাগটা ‘হাবাগোবা’ নামের ট্যাগ। অন্য কারোর কি মনে হয় সেটা আয়ান জানে না। তবে হৃদয়কে দেখে তার প্রথমেই যা মনে পড়ে তা হলো, হৃদয় বেশ হাবাগোবা ধরণের ছেলে। এরপর এসে উপস্থিত হয় ভদ্রতার কথা।
হৃদয় এ মূহুর্তে দুহাত সামনের দিকে একত্র করে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝেমধ্যে অভ্যাসবশত গালের দাড়ি হালকা করে চুলকিয়ে নিচ্ছে সে। এ দেখে আয়ান হালকা হেসে স্বগোতক্তি করে বললো,
” আই থিংক, মৌ ডিজার্ভস আ বেটার গাই।”
আয়ান আরো কয়েক সেকেন্ড হৃদয়কে পর্যবেক্ষণ করলো। এরপর চলে যেতে নিলেই হৃদয় তাকে দেখে ফেলে। আরেকদফা ভদ্র হওয়ার চেষ্টা করার জন্যই আয়ানকে ব্যালকনি হতে ডাক দিলো হৃদয়,
” আরে ভাইয়া আপনি! ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? এদিকে আসুন। পরিচিত হই।”
আয়ান চাইলেই হৃদয়কে নিষেধ করে দিতে পারতো। তবে কোথায় একটা বাঁধা অনুভব করলো সে। ঠোঁটের কোনে ভদ্রতাজনক হাসি এঁটে নিয়ে সে রুম পেরিয়ে ব্যালকনিতে চলে এলো। ব্যালকনির প্রশস্ততা বেশ ভালো দেখেই সে হৃদয়ের পাশে এসে দাঁড়িয়ে পরলো। এক ঝলক মৌ কে দেখেই সে হালকা হেসে হৃদয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো করমর্দনের উদ্দেশ্য নিয়ে। হৃদয় হাত এগিয়ে করমর্দন করে নিজের পরিচয় দিয়ে আয়ানের সাথে পরিচিত হয়ে নিলো।
এদিকে মৌ তার দৃষ্টিজোড়া দিয়ে রেখেছে ব্যালকনির বাইরে। আয়ান হুট করে আসায় প্রচণ্ড বিরক্তি, রাগ এবং অস্বস্তি নিয়েও ভদ্রতার খাতিরে সে দাঁত রইলো। এ মূহুর্তে হৃদয়ের প্রতি তার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। কি দরকার আয়ানকে এখানে ডাকার! যে আয়ানকে সে এক মূহুর্তের জন্যও চোখের সামনে সহ্য করতে পারে না!
মৌ হাতের মুঠো শক্ত করে নিজের ভেতরকার সুপ্ত রাগ সংবরণের চেষ্টা করছে। এ বিষয়টা হৃদয়ের দৃষ্টির অগোচরে ঘটলেও আয়ানের দৃষ্টিগোচর ঠিকই হলো। সে জানে, মৌ এ মূহুর্তে তাকে এখানে সহ্য করতে পারছে না। এর কারণটাও তার অজানা নয়। সে এ কারণকে পুরোপুরি মিটিয়ে দিতে এ দুইদিনে অনেক চেষ্টা করেছে। তবে প্রতিবারই সে ব্যর্থ হয়েছে। মৌ এর সাথে নানাভাবে কথা বলার চেষ্টা করলেও মৌ সেসবের তোয়াক্কাও করেনি। উল্টো তাকে উপেক্ষা করেছে মৌ। এই দুইদিন যাবত আয়েশা খান এবং অহনাও তার সাথে কথা বলেনি বললেই চলে। যদিও অহনা দু একটা কথা শুনিয়েছে আয়ানকে। তবে আয়েশা খান এক শব্দও কথা বলেনি আয়ানের সাথে।
নিজের ভুলগুলোকে নিয়ে ভালোমতো ভাবনাচিন্তা করে প্রচণ্ড অনুশোচনায় ভুগেছে আয়ান। আয়েশা খান, অহনা এবং মৌ, এই তিনজনের উপেক্ষা তাকে ভিতের ভিতরে কষ্টে শেষ করে দিচ্ছে। কিন্তু কাউকেই মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না সে। কারণ তার মস্ত বড় ভুলের শাস্তি এটা। এ পর্যন্ত যতবার সে মৌ কে সরি বলার চেষ্টা করেছে, মৌ ততবারই তাকে না শোনার, না দেখার ভান করেছে। এজন্য তার প্রচণ্ড রাগও উঠেছিলো। তবে হাতের মুঠো শক্ত করে এবং জোরে জোর শ্বাস নিয়ে এ অবাধ্য রাগ সংবরণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না তার কাছে। যে রাগের বশেই এতো বড় ভুল করা, সে রাগকেই আবারো নিজের উপর প্রশ্রয় দেওয়া বোকামি করা ছাড়া কিছুই না।
হঠাৎ হৃদয়ের করা এক প্রশ্নে আয়ানের ধ্যান ফিরে এলো। হৃদয় খানিকটা ইতস্ততভাবেই আয়ানকে জিজ্ঞাস করলো,
” ভাইয়া, একটা প্রশ্ন করবো, কিছু মনে করবেন না তো?”
আয়ান হালকা হেসে বললো,
” আরে না না…. কি প্রশ্ন করার করতে পারো।”
হৃদয় মাথা চুলকিয়ে বোকাসোকা এক হাসি দিয়ে বললো,
” বিয়ের আগেই এ প্রশ্নটা করে নেওয়া ভালো হবে আমার মনে হয়। এখনকার সময়ে এসব বেশ নরমাল বলেই এ প্রশ্নটা করছি আপনাকে। আপনি কি কখনও মৌ কে পছন্দ করতেন বা আপনাদের মাঝে কখনও কিছু ছিলো?”
চলবে