মেঘসন্ধি,পর্ব-০৫
লেখনীতে:সারা মেহেক
বাসায় পৌঁছেই শাওয়ার নিতে চলে গেলো আয়ান। মাথায় একটু ঠাণ্ডা পানি ঢাললে তার রাগটা কমে যাবে, এই আশাতেই শাওয়ার নিতে চলে গেলো সে।
আয়ানের দাদি, আয়েশা খান আয়ানের রুমে এসে আয়ানকে না পেয়ে চুপচাপ বসে রইলেন। তিনি আজ বেশ অবাক হয়েছেন এই দেখে যে, আয়ান অফিস থেকে ফিরে তার সাথে দেখা করেনি। অন্যান্য দিন আয়ান যত ক্লান্তই থাকুক না কেনো, সে অফিস থেকে ফিরে তার দাদির সাথে দেখা করবেই। এই একজনের সাথেই সে বন্ধুর মতো ফ্রি। অনেক ক্ষেত্রে সে বন্ধুর চেয়েও বেশি ফ্রি। সেই মানুষটির সাথেই আয়ান আজ দেখা করেনি, এটা তার দাদির নিকট বড্ড অদ্ভুত ঠেকছে।
শাওয়ারের পুরোটা সময় আয়ান মৌ কে নিয়ে ভেবেছে। যতই সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ততই তার রাগ কমে আসছে এবং ততই সে উপলব্ধি করতে পারছে মৌ এর সাথে অতোটা খারাপ ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। এসব ভাবতে ভাবতেই ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এলো সে। রুমের চেয়ারে আয়েশা খান কে দেখতে পেয়ে ছোট্ট করে হাসি দিলো আয়ান। হালকা ভেজা তোয়ালেটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে সে তার দাদির সামনে দু পা ভাঁজ করে বসে পরলো। মৃদু হেসে জিজ্ঞাস করলো,
” কি ব্যাপার বিউটি কুইন? আজ এ সময় আমার রুমে? কি চিন্তা করে?”
আয়েশা খান আয়ানের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিকভাবে তার কপালের সামনে আসা চুলগুলোকে উল্টো হাতে পিছনে দিয়ে বললেন,
” আজকে তুই আমার সাথে দেখা করতে এলি না যে?”
আয়ান কিছু না বলে আয়েশা খানের পায়ের উপর মাথা দিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললো,
” মুডটা প্রচণ্ড খারাপ ছিলো। অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকে মাথাটা একটু বেশিই গরম হয়ে গিয়েছিলো।”
আয়েশা খান, আয়ানের ভেজা চুলগুলো আলতো হাতে নেড়ে দিতে দিতে জিজ্ঞাস করলেন,
” কেনো? আজকে এতো কি হয়েছিলো?”
আয়ান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে বলতে লাগলো,
” প্রথমেই বসের সাথে কথা কাটাকাটি। এরপর রিকশাওয়ালা আর তার প্যাসেঞ্জারের সাথে ঝগড়া। এরপর মৌ এর প্রপোজ করা…..” আয়ানকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই আয়েশা খান চকিত স্বরে জিজ্ঞাস করলেন,
” একদম শেষে কি বললি! ”
আয়ান মাথা তুলে তার দাদির দিকে তাকালো। সে জানতো, তার দাদি মৌ এর প্রপোজ করার বিষয়টা শুনে বেশ অবাক হবে এবং পুরো ঘটনা বলার পর যে তিনি আয়ানের উপর খুব রাগ দেখাবেন, সেটাও আয়ান জানে।
সে কয়েক সেকেন্ড তার দাদির দিকে তাকিয়ে রয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,
” মৌ আজকে আমাকে প্রপোজ করেছিলো। ”
মূহুর্তেই আয়েশা খানের চেহারায় চরম উত্তেজনার দেখা মিললো। তিনি অতি উৎফুল্লতার সহিত কণ্ঠে বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন,
“সত্যি বলছিস! ”
আয়ান নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো,
” হুম। ”
আয়েশা খান এবার কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাস করলেন,
” তুই কি জবাব দিয়েছিস?”
আয়ান ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
” রিজেক্ট করে দিয়েছি।”
মূহুর্তেই আয়েশা খানের চেহারায় লেপ্টে থাকা সকল খুশি, কৌতুহল উবে গেলো। তিনি ক্ষীণ স্বরে বললেন,
” কি কি হয়েছে আজকে, সবটা আমাকে বল। আমি শুনতে চাই। ”
আয়ান ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে আজকের পুরো ঘটনা বলে ফেললো। তার কথা শুনে আয়েশা খান স্তম্ভিত হয়ে পরলো। মুখ দিয়ে টু শব্দও বের করতে পারছেন না তিনি। কিছুক্ষণ নির্লিপ্ত চাহনিতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে তিনি ঠাণ্ডা স্বরে বললেন,
” তোর মতো বেয়াদব ছেলে দুনিয়ায় হয়তো দ্বিতীয়টা নেই৷ তোকে নিজের নাতি বলে পরিচয় দিতেও বিবেকে বাঁধছে আমার। ”
এই বলে আয়েশা খান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। আয়ান নিজের দাদির মুখে এমন কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। শেষের কথাটি তার বুকে গিয়ে বাঁধলো। সে জানে, তার দাদি তাকে একটু বকাঝকা করবে। তবে এমন কিছু কড়া কথা বলবে তা সে জানতো না। সে উঠে গিয়ে অবিশ্বাসের চোখে তার দাদির দিকে তাকালো। আয়েশা খান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন,
” ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? ঠিকই বলেছি। এতোদিন তোকে নিয়ে গর্ব করলেও এখন তোর উপর ঘৃনা হচ্ছে আমার।”
আয়ান হতভম্ব হয়ে বললো,
” এমনটা বলতে পারলে দাদি!”
আয়েশা খান ক্ষুব্ধ গলায় বললেন,
” তুই মৌ কে সবার সামনে ওভাবে অপমান করতে পারলে আমি চার দেয়ালের মাঝে তোকে এমন বলতে পারবো না! অবশ্যই বলতে পারবো। তোর দ্বারা এমন কিছুই আশা করেনি আয়ান। আমার নাতি আমার গর্বের কারণ ছিলো। তবে একটা মেয়েকে এভাবে অপমান করায় সে এখন আমার কাছে লজ্জায় মুখ ঢাকার কারণ হয়ে গিয়েছে।”
এই বলে আয়েশা খান চলে যেতে নিলেন। কিন্তু আয়ান তার হাত ধরে পথ আটকে ফেললো। কাতর গলায় বললো,
” দাদি, তুমি আমার রাগ সম্পর্কে অবহিত। তারপরেও এ কথা বলছো?”
আয়েশা খান প্রচণ্ড রাগে আয়ানের হাত ঝামটা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললেন,
” তোর এই রাগই তোকে একদিন নিঃস্ব করে দিবে আয়ান। রাগ উঠেছে বলে তুই এভাবে কথা বলবি মৌ এর সাথে! নম্রতার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা তুই জানিস না?”
দাদির কথা শুনে আয়ান মাথা নিচু করে ফেললো। আয়েশা খান আবারো বললেন,
” এতো রাগ ভালো না রে আয়ান৷ তোর এতো রাগ দেখলে মনে হয়, তুই রাগের বশে কারোর খুন করতেও পিছপা হবি না। ”
আয়ান অবিশ্বাসের চোখে তার দাদির দিকে তাকালো। আয়েশা সেদিকে তোয়াক্কা না করে ঠাণ্ডা স্বরে বললেন,
” মৌ এর কাছে আজকে এমনকি এখনই গিয়ে মাফ চাইবি। ও যদি মাফ করে তবেই আমার সামনে আসবি তুই। এর আগে না।” এই বলে আয়েশা খান আর এক মূহুর্তও আয়ানের রুমে দাঁড়িয়ে না থেকে চলে গেলেন। তিনি চলে যেতেই আয়ান অনেকটা নিঃশব্দে রুমের দরজা লাগিয়ে বিছানার উপর ধপ করে বসে পরলো।
প্রচণ্ড অনুশোচনায় ভুগছে সে। মৌ এর সাথে অকারণে যে সে খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সে। তার ভেতরটা এ মূহুর্তে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। নিজের বিবেকের উপর সন্দেহ হচ্ছে। আসলেই কি সে বিবেকবান মানুষ? নাকি একজন রগচটা বিবেক বর্জিত মানুষ? আয়ান সবসময় সব মেয়েকে সম্মান করে এসেছে। হ্যাঁ, মৌ এবং অহনাকে সে ক্ষেত্র বিশেষে বেশ বকাঝকা করে। তবে সবার সামনে এমন অপমানিত কখনোই করেনি সে। এই প্রথম সে এতো জঘন্য একটা কাজ করে বসলো। এজন্য সে নিজেই দায়ী। নিজের এ অবাধ্য রাগের উপর কখনই সে নিয়ন্ত্রণ পায় না৷ এজন্য অনেক অঘটন ঘটিয়ে ফেলে সে। তবে এ নিয়ে প্রায়শ্চিত্তও করে সে। কিন্তু প্রায়শ্চিত্ত করতে বড্ড দেরি করে ফেলে সে।
আয়ান ভাবছে, আদৌ কি এ রাগের উপর কখনও নিয়ন্ত্রণ পাবে সে? নাকি সারাজীবন তার রাগের দ্বারা মানুষগুলোকে কষ্ট দিয়ে চলবে? কবে তার এ ক্রোধ নেমে যাবে? কবে সে একজন বিবেকবান মানুষে পরিণত হবে? কবে?
আয়ান আর পারলো না৷ প্রচণ্ড রাগে বিছানার চাদর এক হাত দিয়ে উঠিয়ে পাশে ছুঁড়ে মারলো। নিজের উপর বাধাহীন রাগ হচ্ছে তার। এ মূহুর্তে তার মন চাইছে সবকিছু ভাঙচুর করতে। তবে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস টেনে নিয়ে নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করতে চেষ্টা করলো সে। রাগের বশে আর কিছুই করবে না সে। নিজেকে শুধরে নিতে চেষ্টা করবে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করবে। তবে এসবের আগে সে সিদ্ধান্ত নিলো, মৌ এর কাছে মাফ চাইতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে মৌ এর কাছে মাফ চাইবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তার আত্মগ্লানি কমবে না এবং ততক্ষণ পর্যন্ত তার দাদি তার সাথে কথা বলবে না। এটা সে কিছুতেই সহ্য করবে না যে, তার দাদি তার সাথে কথা বলছে না! যেভাবেই হোক, মৌ এর কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে। কারণ ভুলটা মৌ এর নয়, ভুলটা আয়ানের। আয়ান পারতো শান্তভাবে মানা করে দিতে। কিন্তু ক্রোধ তার মস্তিষ্কে এঁটে বসেছিলো সে মূহুর্তে। এজন্য কি দিয়ে কি বলেছে তা নিয়ে তখন ভাবেনি সে। তবে এখন ভাবছে সে।
আয়ান লম্বা লম্বা কয়েকটা শ্বাস টেনে নিয়ে ব্যালকোনির দিকে পা বাড়ালো। এখান থেকে স্পষ্টরূপে মৌ এর রুম দেখা যায়। আফসার খান এবং জহির ইসলামের বাড়ি সামনাসামনি। রাস্তার এপাশ-ওপাশ। আফসার খানের বাড়িটি পুরোনো আমলের ছোটখাটো একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি। আয়ানের দাদার আমলে এ বাড়ি বানানো হয়েছিলো। সেখানেই আফসার খান এবং তার ছেলে আয়ান খানের ছোটবেলা কেটেছে৷
এদিকে জহির ইসলামের পিতৃ সূত্রে পাওয়া জমিতে নিজের পরিশ্রমের টাকায় বেশ সময় নিয়ে দো’তালা এক বাড়ি বানিয়েছেন৷ যার নিচ তলার দুটো ইউনিটে ভাড়াটে থাকে এবং দ্বিতীয় তলার দুটো ইউনিট মিলে এক ইউনিট বানানো বাসায় তিনি সপরিবারে বাস করেন। সামনাসামনি দুটো বাড়িতে থাকায় ক্লাস ফাইভ থেকেই আয়ান এবং মাহতাবের বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। সে সূত্রে অহনা এবং মৌ এরও বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। ব্যস, এভাবেই দুই পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্কের চেয়েও অনেক গভীর সম্পর্ক হয়ে যায়।
জহির ইসলাম এবং আফসার খান যে এলাকায় থাকেন সে এলাকা আগে মোটামুটি ফাঁকা থাকলেও দিনকে দিন ঘিঞ্জি অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে। এ সূত্র ধরেই অনুমান করা যায়, দেশের জনসংখ্যা কি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে!
আয়ান চুপচাপ গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মৌ এর রুমের দিকে উঁকিঝুঁকি দিলো। নাহ, মৌ এ মূহুর্তে রুমে নেই। তাহলে কি সে ছাদে বা অন্য রুমে? ছাদে থাকতে পারে, এই ভেবে আয়ান দৌড়ে নিজেদের বাড়ির ছাদে উঠে পরলো। মৌ’দের ছাদের দিকে তাকাতেই চোখে পরলো, মৌ আর অহনা সামনাসামনি বসে গল্প করছে। এই দেখে আয়ান বেশ খুশি হলো। ছাদে বেশ আরামসে সকল সমস্যার সমাধান করা যাবে ভেবেই সে ছাদ হতে নেমে মৌ’দের বাসার দিকে ছুট দিলো।
অহনা এবং মৌ থেকে থেকে কথা বলছে। অন্যান্য সময়ের মতো উচ্ছ্বসিত ভাবটা এ মূহুর্তে কারোর মধ্যেই নেই। দুজনে আজকের ঘটনায় বেশ বড়সড় এক ধাক্কা খেয়েছে। এ ঘটনা যে কখনোই ভুলবার মতো নয় তা কারোরই অজানা নয়।
অহনা এই সেই নানাকিছু ভাবতে ভাবতে এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। হঠাৎ পিছনে কারোর উপস্থিতি টের পেতেই সে চকিতে পিছনে ফিরে তাকালো। আয়ানকে দেখতে পেয়ে মূহুর্তেই সে রেগে ফেটে পরলো। ক্ষুব্ধ গলায় বলে উঠলো,
” ভাইয়া! তুমি এখানে কি করছো!”
অহনার কথায় চমকে উঠে হাঁটু থেকে মুখ তুলে সামনে তাকালো মৌ। আয়ানকে এখানে মোটেও আশা করেনি সে। আয়ানের দিকে একনজর তাকিয়ে সে দ্রুত উল্টো দিকে ফিরে বসে পরলো। সাথে সাথেই আয়ান কাতর স্বরে বললো,
” মৌ, তোর সাথে কথা আছে। আমার দিকে ফিরে বস। ”
মৌ আয়ানের কথা কানে তুললো না৷ বরং চুপচাপ পাথর হয়ে বসে রইলো। অহনা জানে, মৌ কোনো কথাই বলবে না আয়ানের সাথে। এজন্য সে নিজেই আগ বাড়িয়ে আয়ানকে বললো,
” তুমি এখান থেকে চলে যাও ভাইয়া। ”
অহনাকে পাত্তা না দিয়ে আয়ান মৌ এর উদ্দেশ্যে বললো,
” মৌ, তখনকার বিহেভিয়ার এর জন্য আই এম রিয়েলি সরি। আমার এমনটা করা উচিত হয়নি। রাগের মাথায়…..” আয়ানকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে অহনা রাগত স্বরে বলে উঠলো,
” তুমি আজকে যা করেছো তা ভুলবার মতো ঘটনা না। এতোগুলো মানুষের সামনে মৌ কে এভাবে অপমান করতে তোমার বিবেকে বাঁধলো না! কি করে পারলে এমনটা করতে?”
আয়ান এবার অহনার দিকে ফিরে বললো,
” আমার ভুল হয়ে গিয়েছে অহো। তখন প্রচণ্ড রাগে ছিলাম বলে কি দিয়ে কি বলে ফেলেছি তা এক মূহুর্তও ভাবিনি আমি। কিন্তু পরে এ নিয়ে প্রচণ্ড গিল্টি ফিল করেছি।”
অহনা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
” তোমার গিল্টি ফিলও হয় ভাইয়া? আমার তো জানা ছিলো না। আজকে জানলাম। ভালো লাগলো জেনে। তবে তোমার এ গিল্টি ফিলিংসের কোনো কাজ নেই এখানে। তুমি যেতে পারো।”
আয়ান আবারো কাতর গলায় বললো,
” অহো, তুই তো আমার রাগ সম্পর্কে অবহিত। তারপরও এমনট বলছিস কেনো? রাগের মাথায় বলা কথাগুলো মনে নিতে হয় না। ”
” সিরিয়াসলি ভাইয়া! এই রাগের মাথায় বলা কথাগুলো একজনকে পুরোপুরি ভেঙে দেওয়ার পরও বলছো, এসব মনে নিতে হয় না! মৌ তোমাকে ভালোবাসে…….” কথাটা সম্পূর্ণ শেষ করার আগেই মৌ অহনার হাত ধরে ফেললো। যার অর্থ আয়ানকে এ ব্যাপারে কিছুই না বলতে। মৌ এর ইশারায় অহনা চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আয়ানকে অনেক কথা শুনিয়ে দিতে মন চাইছে তার। কিন্তু মৌ তাকে চুপ থাকতে বলেছে। এজন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে চুপ থাকতে হবে। যদিও তার পুরো শরীর রাগে থরথর করে কাঁপছে, আয়ানের সাথে ঝগড়া করতে তার গলা নিশপিশ করছে। তবুও সে এসবের কিছু করবে না।
আয়ান কিছুক্ষণ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে আবারো বললো,
” মৌ, আই এম রিয়েলি সরি। আমাকে মাফ করে দে প্লিজ। আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। এমনটা…..” আয়ানকো মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে মৌ নিজ অবস্থানে অটল থেকেই কাটা কাটা গলায় বললো,
” আমি আয়ান নামে কাউকে চিনি না। অর্থাৎ আয়ান নামের মানুষটা আমার কাছে অপরিচিত আর আমি অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলতে পছন্দ করি না৷ এদের সাথে মৌনব্রত পালন করতেই বেশি পছন্দ করি আমি। এ ছাদে আয়ান নামের কেউ থেকে থাকলে অতি সত্বর যেনো সে চলে যায়। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। কারণটা কিছুক্ষণ আগে জানানো হয়েছে।”
মৌ এর কথা শেষ হতেই অহনা আয়ানকে চলে যেতে ইশারা করলো। মৌ এর শক্ত গলায় বলা প্রতিটা কথা শুনে সে বুঝতে পারলো, এ মূহুর্ত এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কোনো কাজ নেই৷ মৌ যে তার সাথে কথা বলবে না তা সে বেশ ভালোভাবেই জেনে গিয়েছে।
আয়ান নিরুপায় হয়ে দূর্বল পায়ে ছাদের দরজার দিকে পা বাড়ালো। ছাদ হতে নেমে দু সিঁড়ি এগুতেই সে মৌ এর ফোলা ফোলা রক্তবর্ণের চোখজোড়া দেখতে পেলো। মূহুর্তেই তার বুকের ভেতর কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো! অদ্ভুত তো!
চলবে