Three Gangsters_💕,Part-23 [Last]

Three Gangsters_💕,Part-23 [Last]
Sumaiya_Moni

মিশু,নিশু,কথা ওদের কথার আগা মাথা ঠিক বুঝতে পারছে না। ওরা কী করতে চাইছে সেটাও বুঝতে পারছে না। ওরা হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে । হাজারটা প্রশ্ন এসে ওদের মাথায় বারি খাচ্ছে।

জাহিদ: তোরা আমাকে বোকা মনে করিস? মনে করছিস আমি ভয় পাচ্ছি তোদের কে দেখে?

ওমর: তুই তো বোকাই? আর ভয় পাচ্ছিস বলেই কাপুরুষের মত পিছন থেকে বার বার আঘাত করতে চেয়েছিস। সাহস থাকলে সামনে থেকে আঘাত করে দেখ।…….[ রেগে ]

নীল: তুই কার কলিজায় হাত দিয়েছিস তুই সেটা জানিস না। মিশু আমার ভালোবাসা! তুই ওকে বিয়ে করবি? সাহস থাকলে আমার সামনে মিশুকে বিয়ে করে দেখা।………[ রাগি কন্ঠে ]

জাহিদ নীলের কথা গুলো শুনে রেগে যায়। গান নীলের দিকে তাক করে গুলি ছুড়ার আগেই সাব্বির জাহিদের হাতে গুলি করে দেয়। জাহিদের হাত থেকে গানটা ছিটকে দূরে পড়ে যায় । এক পর্যায় গোডাউনের ভিতরে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । ওমর দের বডিগার্ড ও জাহিদের বডিগার্ড দের সাথে দস্তাদস্থি শুরু হয়ে যায় । ফাহিম নিশু,মিশু,কথা কে নিয়ে ওদের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা প্রচন্ড ভয়ের মধ্যে আছে। ওদের এমন রুপ ওরা আগে কখনই দেখেনি। ক্ষনে ক্ষনে গোডাউন থেকে গুলির আওয়াজ ভেসে আসছে। ভয়তে ওরা তিন জন কান চেপে বসে আছে ।

জাহিদের হাতে ও পায়ে গুলি লাগে। রক্ত বের হচ্ছে অঝোরে । এক প্রকার মাটিতে লুটিয়ে পড়ে । ক্রোধ নিয়ে ওদের তিন জনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় । ওর কোমরের পিছনে আরেকটি গান রাখা ছিল।বাম হাত দিয়ে গানটা বের করে রাফির উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়লো। সোজা গেথে গেল ওর বুকের মাঝে। মিশু, নিশু, কথা জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো সাব্বির বলে। গুলিটা রাফির নয় সাব্বিরের বুকে গেথে গেছে। সাব্বির দূর থেকে জাহিদের গুলি করার দৃশ্য দেখে ফেলে। তাই দেরি না করে ছুটে গিয়ে রাফি কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। বাইচান্স গুলিটা সাব্বিরের গায়ে লেগে ‌যায়। রাফি জাহিদে কে তাক করে গুলি ছুটে মাথা বরাবর। সাথে সাথে জাহিদের মাথায় গেথে যায় গুলিটি। জাহিদ সেখানেই মারা যায়।

সাব্বির মাটিতে পড়ে যেতে নিলে তাঁর আগেই নীল ধরে ফেলে। আস্তে করে মাটিতে বসায় সাব্বির কে। মিশু,নিশু,কথা সাব্বিরের কাছে এসে কান্না করতে লাগলো ।

রাফি: সাব্বির তুই এটা কেন করলি? তুই কী কোন দিন ভালো হবি না?……[ কিছুটা রাগ নিয়ে বললো ]

নীল: সব সময় পাগলানি করেই যাবি?……[ রেগে ]

ওমন: সাব্বিরকে hospital এ নিয়ে যেতে হবে। ওঠা ওকে।……

সাব্বির: ভাই ভাই প্লিজ! আমার কিছু কথা আছে? জানিনা আমি কতক্ষন বেঁচে থাকবো । আমাকে প্লিজ কথা গুলো বলতে দিন……..[ বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরে ]

ফাহিম: তোর কথা কওয়া লাগবো না….ভাই চলেন ওরে আগে হাসপাতালে নিয়া যাই…..[ কান্না জড়িত কন্ঠে ]

সাব্বির: ফাহিম আমাকে বলতে দে । ভাই তোমাদের বিয়ে আমি দেখে যেতে পারবো না । হয়তো ওই পর্যন্ত আমার হায়াত আল্লাহ্ লিখেনি। খুব ইচ্ছে ছিল দেখার। ভাই খুব বড় করে আয়োজন করবা। আর আমার ভাবি ও আপু দের কখনও কষ্ট দিবা না। সব সময় হাসি খুশি রাখবা। যদি পারো ফাহিম কে একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে দিয়ে দিও। আমি না হয় দূর থেকে তোমাদের হাসি-খুশি জীবনটা দেখবো। যদি কোন ভুল করে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন সবাই……. [ জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো ]

মিশু: প্লিজ সাব্বির কে hospital এ নিয়ে চলুন প্লিজ…… [ কান্না কন্ঠে ]

নীল, ওমর, রাফি আর দেরি না করে সাব্বির কে hospital এ নিয়ে যেতে লাগলো। তাড়াতারি গাড়ি চালিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে hospital এ‌ পৌঁছে যায় ওরা। গাড়ি থেকে নামিয়ে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয় সাব্বির কে। ওটিতে বসেই সাব্বির মারা যায়। ডক্টর সাব্বির কে মৃত ঘোশনা করে দেয়। মিশু, নিশু, কথা,ফাহিম কান্নায় ভেঙে পড়ে। ওমর, নীল,রাফি কান্না করতে চেয়েও ওদের মত কাঁদতে পারছে না। বুকের মধ্যে পাথর বেঁধে রেখেছে। মিশু, নিশু,কথা ,ফাহিম ওটির ভিতরে গিয়ে পাগলামি শুরু করে দেয়।

মিশু: সাব্বির প্লিজ ওঠ! তুই ছাড়া আমরা খেলবো কাকে নিয়ে?……..[ কান্না করতে করতে ]

নিশু: ওঠ সাব্বির প্লিজ?…….[ কান্না করতে করতে ]

কথা: তোর কথা আপু তোকে উঠতে বলছে? প্লিজ ওঠ সাব্বির।…….[ সাব্বিরের হাত ধরে কান্না করে ]

ফাহিম: ভাই তুই মোরে একা রাইখা গেলে মোর কী হইবো? মুই যে আবারো একা হইয়া যামু।…..[ কান্না করে ]

মিশু: তুই ওঠবি না তাই তো! আচ্ছা যা এবার খেলাতে আমি চোর দেবো। তারপরও তুই ওঠ সাব্বির ………দেখ এখন আমাদের কিন্তু ভিষন রাগ হচ্ছে। ওঠ বলছি প্লিজ……[ চিৎকার দিয়ে বললো ]

নীল,ওমর, রাফি ওদের পাগলামি দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল। এখন আর ওদের চোখ বাঁধা মানে নি,অঝোরে চোখ থেকে পানি ঝড়ে পড়তে লাগলো।

ওমর বার বার নিজেকে অপরাধি মনে করছে। কেননা রাগের মাথায় তখন সাব্বির কে একটা থাপ্পর দিয়ে ছিল। সেই কথাটা বার বার ওর মনে পড়ছে । যার কারনে মনের মধ্যে ছটফট করছে ।

মিশু, নিশু, কথা,ফাহিম ওরা আরো পাগলামি শুরু করে দিয়েছে। নীল,ওমর, রাফি ওদের কে এক প্রকার জোর করে hospital থেকে বাসায় নিয়ে যেতে লাগলো। ওরা বার বার একি কথা বলছে সাব্বির কে ছাড়া ওরা যাবে না। সাব্বির কে ওদের সাথে নিয়ে যাবে। যেটা হয়তো আর কখনই সম্ভব নয়। মিশু,নিশু,কথা সাব্বিরের আগের স্মৃতি গুলো মনে করে আরো বেশি কান্না করতে লাগলো। নীল,ওমর, রাফি ওরা কিছুতেই ওদের কে সান্ত করতে পারছে না।এক নিমিষেই ওদের হাসি খুশি মুহূর্ত গুলো দুঃখে পরিনত হল।বডিগার্ড রা সাব্বিরের দাফন কাফনের ব্যাবস্থা করতে লাগলো।
.
.
.
.
.
১ মাস পর…….

আজ ওদের বিয়ে সম্পূর্ণ হল। সাব্বিরের কথা মত খুব বড় করেই ওদের বিয়েটা হয়েছে । এই এক মাসে ওরা সাব্বিরের শোকটা কাঁটিয়ে উঠতে পারেনি। ওদের মনে হয় এই বুঝি সাব্বির ভাই,আপু বলে ডাকবে। ফাহিম এখন আর আগের মত নেই । অনেকটা চুপ চাপ হয়ে গিয়েছে । আগের মত এখন আর কথা বলে না। ওর হাসিটা যেন সাব্বির ওর সাথে করে নিয়ে গিয়েছে । সাব্বিরের কথা মনে পড়লেই একা একা বসে কান্না করে।
.
.
.
.
.
মিশু বিয়ের সাজ-সজ্জা নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো সাব্বিরের কথা ভাবছে। নীল রুমে এসে দেখে মিশু রুমে নেই। হেঁটে বারান্দায় এসে দেখে কার্নিশ ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । নীল পিছন থেকে মিশু কে আঁলতো করে জড়িয়ে ধরলো।

নীল: এইযে ম্যাডাম? বাসর ঘর ছেড়ে এখানে কী করছেন?……[ মুচকি হেসে নরম স্বুরে বললো ]

মিশু:……………

নীল: কোথায় হারিয়ে গেলেন শুনি?…..[ নরম স্বুরে ]

মিশু: আজকে সাব্বির বেঁচে থাকলে কতটা আনন্দ করতো আমাকে বিয়েতে তাই না?……[ মৃদ স্বুরে বললো ]

নীল: ও আপনি তাহলে আপনার দেবরের কথা ভাবছেন? তা এখন আমার দিকে একটু নজর দিবেন কী? ……[ মৃদ কন্ঠে ]

মিশু: আপনার দিকে নজর দিয়ে কী হবে?

নীল: আপনি নয় তুমি বল! আমি যে ভাবোবাসার অভাবে ভুগছি। সেদিকে আপনার নজর আছে?…[ দুষ্টমি করে ]

মিশু কিছুটা লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসলো।

নীল: I Love You mishu….I need You Now…..[ স্লো ভয়েজ এ মিশুর কানে কানে বললো ]

মিশু এখন আরো লজ্জা পেয়ে গেল। নীল সেটা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে ।

মিশু: একটা কথা বলার ছিল তোমাকে?….[ মাথা নিচু করে নরম স্বুরে বললো ]

নীল: বল……।

মিশু: I Love You Nil……[ মাথা নিচু করে ]

নীল মিশুকে ঘুরিয়ে সামনের দিকে নিয়ে জড়িতে ধরে কঁপালে চুমু এঁকে দেয়।

নীল: l love you more…..[ আরো জোরে জড়িয়ে ধরে ]
.
.
.
.
.
নিশু অনেকক্ষন যাবত বসে আছে বিছানার উপর। রাফি এখনো আসছে না দেখে উঠে বারান্দার দোলনায় গিয়ে বসলো। হঠাৎ করেই সাব্বিরের কথা মনে পড়ে গেল। বুক চিড়ে বেড়িয়ে এলো দীর্ঘনিশ্বাস। কান্নাটা হয়তো নিঃশ্বাসে সাথে উড়িয়ে দিয়েছে । রাফি রুমে প্রবেশ করে বিছানায় চোখ পড়তেই নিশুকে দেখতে পায় না। বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখে নিশু দোলনায় বসে ভাবনার জগৎ এ ডুবে আছে। রাফি গিয়ে নিশুর পাশে বসে পড়লো। নিশু বুঝতে পেরেছ ওর পাশে রাফি এসে বসেছে। তাই রাফির দিকে না তাকিয়ে নিশু ওর ভাবনাতে ডুবে আছে।

রাফি: আমার কথা ভাবছো বুঝি?….[ মুচকি হেসে ]

নিশু: ……………….

রাফি: এই যে মিসেস.রাফি! কিছু বলছি শুনতে পাচ্ছেন কী?…….[ তুড়ি বাজিয়ে ]

নিশু: কোথা থেকে আসলেন আমাকে জ্বালাতে?….. [ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ]

রাফি: আরে এখনো তো জ্বালানো শুরুই করলাম না? তার আগেই এই কথা বলছো? আর যদি শুরু করি তাহলে কী করবে?……[ বাঁকা হেসে ].

নিশু রাফির কথার মানেটা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। উঠে চলে যেতে নিলে রাফি নিশুর হাত ধরে ওর কোলের উপর বসিয়ে দেয়।

রাফি: আর কত দূরে দূরে থাকবে নিশু? এবার তো আপন করে নেও? এক বার বল I Love You Rafi…..[ ফিসফিস করে নিশুর কানে কানে বললো ]

নিশু চুপ করে আছে। কিছুটা লজ্জাবোধ করছে।

রাফি: বলনা….?….[ আদুরে কন্ঠে ]

নিশু: ………………..

রাফি: তুমি না বললেও আমি বলবো…….I Love You Nishu………[ নিশুর কানে কানে ]

নিশু: I Love You too….[ তাড়াতারি করে বলেই চুপ হয়ে যায় ]

লজ্জায় পড়ে যায় কথাটা বলেই। রাফি কিছুটা অবাক হয় ।

রাফি: শেষ পর্যন্ত বলেই দিলে । …….[ বাঁকা হেসে ]

নিশু: …………….

রাফি নিশুকে কোল থেকে নামিয়ে নিশুকে কে জড়িয়ে ধরতে যাবে ঠিক সেই সময় নিশু চিল্লিয়ে বলে উঠলো।

নিশু: আরে ফাহিম…… [ পিছনের দিকে তাকিয়ে ]

রাফি নিশুর মুখে ফাহিমের কথা শুনে পিছনে ফিরে তাকায় কিন্তু সেখানে ফাহিম কে দেখতে পায় না। নিশু দৌড়ে রুমের ভিতরে যাবার আগে পিছন ফিরে বলতে লাগলো।

নিশু: একজন গ্যাংস্টার হয়ে যদি এবাবে ভয় পেয়ে যান…তাহলে পাঠকরা কী বলবে?…..[ হেসে ]

রাফি: মজা করা হচ্ছে…… দাঁড়াও মজা বের করছি……[ কিছুটা রেগে ]

নিশু দৌড়ে রুমের ভিতরে চলে যায়। রাফি রুমের ভিতরে ঢুকেই ঠাস করে বারান্দার দরজা বন্ধ করে দেয়। [ বাঁকিটা পাতিহাস থুক্কু ইতিহাস 😁 ]
.
.
.
.
.
কথা বিছানায় বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছে। বালিশের সাথে হেলান দিয়ে মাথার উপর এক হাত রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। বড় একটা নিঃশ্বাস বুক চিড়ে বেরিয়ে আসলো। হঠাৎ করেই সাব্বিরের কথা মনে পড়ে যায় । কথা আগের স্মৃতি গুলো ভাবতে লাগলো।
ওমর রুমে প্রবেশ করে দেখে কথা বালিশের সাথে হেলান দিয়ে কাঁপালের উপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।

ওমর: কথা…..এই কথা…আরে বাসর রাতে কেউ ঘুমায় নাকি…..?……[ একটু জোরে ডাক দিয়ে ]

কথা ওমরের ডাক শুনে উঠে বসে।

কথা: আমি ঘুমাচ্ছিলাম না।…..[ মৃদ কন্ঠে ]

ওমর: ও আমি ভেবেছিলাম তুমি ঘুমিয়ে গেছো?

কথা: ……………..

ওমর: খারাপ লাগছে….শাড়ি চেঞ্জ করে আসো?

কথা: আমি ঠিক আছি?…….[ মৃদ কন্ঠে ]

ওমর কথার ডান হাত‌ ওর হাতের মাঝে আবদ্ধ করে নিল । কথা মাথা নিচু করে বসে আছে।

ওমর: কথা আমি আগেই তোমাকে বলেছি। আর এখনো তোমাকে বলছি।……….I Love You Kotha…….I Really Love You….।

কথা:……………….

ওমর: Answer কী পাবো?……. [ কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে ]

কথা:[ কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো ] I Love You Too…….।

ওমর কথার মুখে লাভ ইউ কথাটা শুনে খুশি হয়ে যায়। কথাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার সাগরে ডুব দেয়।

আজকে ওদের ভালোবাসা পূর্নতা পেল। এখন ওদের মাঝে নেই কোন রাগ নেই কোন অভিমান শুধু আছে ভালোবাসা। এভাবেই ওদের ভালোবাসা সারা জীবন অটুট থাকুক।

সমাপ্তি