ভাঙ্গা গড়া,পর্ব_৩,৪

ভাঙ্গা গড়া,পর্ব_৩,৪
Hiya Chowdhury
পর্ব_৩

সকাল হতেই আলতাফ আর রেহানা বেরিয়ে পড়েন আয়ানের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আয়ান আর অহমি এখনো ঘুমে। তাদের জাগানোর প্রয়োজন মনে করলেন না। যা কথা হবে বড়দের মাঝেই। উনাদের চলে যাওয়ার মিনিট ২০ এক পরেই আয়ানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ফজরের নামাজের পর হালকা চোখ টা লেগে এসেছিলো। আয়ান ফ্রেশ হয়ে দেখলো পুরো বাড়ি শুনশান।

–“মামনি মামা কোথায় তোমরা?”

আয়ান বেশ কয়েক বার ডাকলো কোনো সাড়াশব্দ নেই। এতো সকালে কোথায় ই বা গেলেন উনারা? আয়ান সন্দেহ করলো তাদের বাসায় গিয়েছে নিশ্চয়। আয়ান অহমির দরজার সামনে লাগাতার নক করতে থাকে। অহমি কে ডাকে। হঠাৎ করেই অহমির ঘুম ভেঙ্গে যায়। আচমকা ঘুম ভাঙ্গা ভয় পেয়ে যায় অহমি। চোখ কচলিয়ে উঠে দরজা খুলে দেয়। দরজার সামনে আয়ান কে দেখে সব মনে পড়ে যায় তার। আয়ান হুট করে অহমি কে জড়িয়ে ধরে ফেলে। অহমির কোনো রেসপন্স নেই। সে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে রইল। আয়ান অহমির কে ছেড়ে দিয়ে বললো,

–“রাতে এতোবার ডাকলাম দরজা খুললে না কেন? তোমার ঘুম তো এতো গভীর কখনো হয় না! আচ্ছা সত্যি করে বলো তো মা তোমাকে গতকাল কি বলেছে!”

–“তুমি জানলে কিভাবে যে আমি তোমার বাসায় গিয়েছিলাম?”

–“৩ টা বছরের তোমার অস্তিত্ব আমি টের পাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। আমি বাড়িতে ঢুকেই বুঝে গেছি তুমি এসেছিলে! এখন আমাকে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও!”

–“কই কিছু বলে নি তো!”

অহমি আয়ান কে কিছু বলতে চাচ্ছিল না। আয়ান সেটা খুব ভালো করেই বুঝে যায়।

–“অহমি আমার মা কে আমি চিনি কিছু না বলে তোমাকে ছাড়ে নি বলো প্লিজ লুকিয়ে রেখো না!”

–“লুকানোর কিছু নেই সত্যি ই কিছু বলেন নি!”

অহমি ওয়াশরুমে ঢুকে চোখ মুখে পানির ঝাপটা মেরে বের হয়। আয়ান সেই এক ভাবে বসে রইল। অহমি চুপ করে রইল,

–“অহমি?”

–“হু!”

–“তুমি আমার কথা টা কে ইগনোর কেন করছো?”

–“ইগনোর কই করলাম! বাদ দাও তুমি কখন আসলে?”

আয়ান চাচ্ছিলো না রাতে তার মায়ের বলা কথা গুলো অহমি কে বলতে! তাও এখন যখন অহমি তাকে কিছু বলছে না তাই সব বলতে বাধ্য হলো। অহমি সব শুনে নির্বাক হয়ে রইল। আপনাআপনি চোখের কোণা বেয়ে অশ্রু ফোঁটা পড়তে শুরু করে। আয়ান এটা দেখে আতঁকে উঠলো। দ্রুত অহমির কাছে আসে।

–“অহমি তুমি কাঁদছো?”

–“চোখে কি যেনো পড়েছে!”

–“অনেক চালাক ভাবিস নিজেকে তাই না? একদম কাঁদবি না বলে দিচ্ছি। তুই একাই আমাকে ভালোবাসিস আমি বাসি না? বাঁচতে হলে আমি তুই একসাথে বাঁচবো নয়তো মরে যাবো ব্যাস।”

অহমি নিজেকে আর সামলাতে পারল না। ফুঁপিয়ে কেঁদেই দিলো।

–“ফুপি আমাকে থাপ্পড় মেরেছে বলেছো আমি তোমাকে জাদু করেছি। আমাকে উনি কখনো মেনে নিবেন না!”

—“কিহ বললে?”

হুট করে অহমি আয়ানের থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে বললো,

–“তুমি ফুপির কথাই রাখো। ফুপির পছন্দের মেয়ে কে বিয়ে করে নাও!”

–“সম্ভব না!”

–“ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই! কিছু ভালোবাসা অপূর্ণতা তেই সুন্দর!”

অহমি মুখে এসব কথা বলছে ঠিক ই হৃদয় দিয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়ে যাচ্ছে। সে পারবে না আয়ান কে ছাড়া থাকতে। আয়ানের পাশে অন্য কাউকে মানতে। কিন্তু আয়ানের মায়ের কসম দেওয়া সেটা ভঙ্গ করে তারা কি আদৌ সুখে থাকবে?

–“অহমি তাহলে আমি যদি এখন বলি তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য একজন কে বিয়ে করো পারবে করতে?”

–“আমি নিচে যাচ্ছি!”

–“নিজের বেলায় যেটা পারবে না সেটা আমাকে কিভাবে করতে বলো?”

–“ফুপি চাচ্ছে না!”

–“না চাইলে কি? আর চাইলেই কি?”

–“অনেক কিছু?”

অহমি নিচে চলে যায়। আয়ান ও সাথে সাথে আসে। অহমি এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজছে দেখে আয়ান বললো,

–“মামনি আর মামা আমার বাড়িতে গেছেন! আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলতে!”

–“কিহ!”

–“হ্যাঁ!”

–“আমি ও যাবো!”

–“রাতে ও কিছু খাও নি দুর্বল তুমি আগে কিছু খেয়ে নাও!”

-“ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাবে আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে!”

-“চলো!”

আয়ান অহমি কে আর বাঁধা দিলো না। দুজনে বেরিয়ে পরে আয়ানের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

অথচ তারা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারে নি এই যাওয়া যে তাদের জীবনের মোড় বদলে দিতে পারে! এলোমেলো করে দিতে পারে সব!

চলবে……………

ভাঙ্গা গড়া
Hiya Chowdhury
পর্ব_৪

আলতাফ আর রেহেনা কে সকাল সকাল আসতে দেখে আয়ানের মা অবাক হননি। সহজ স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই আচারণ করলেন।

–“এখানে বস! আমি চাই পাঠিয়ে দিচ্ছি!”

–“আমরা চা খেতে আসি নি আপা!”

–“তাহলে কেন এসেছিস?”

আলতাফ কিছুক্ষণ থেমে উত্তর দিলেন,

–“আপা আয়ান আর অহমি দুজন দুজন কে ভালোবাসে!”

–“এটা সবাই জানে! সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো নাকি? যাতে পুরো বিশ্ব জানতে পারে?”

রেহানা হতাশ হোন আয়ানের মায়ের কথায়। আলতাফ আবার বললেন,

–“আপা ওরা দুজন দুজন কে ছাড়া সুখী হবে না। ভালো ভাবে বাঁচতে পারবে না। ওদের মেনে নিলে হয় না?”

–“না হয় না। অনেক দয়া করেছি তোর মেয়েটা কে! তাই বলে এই নয় যে তোর মেয়েকে আমার ছেলের সাথে বিয়ে ও করাবো!”

–“অহমির কোথায় সমস্যা আমাকে বলো আপা!”

–“না না কোনো সমস্যার কথা তো এখানে আসে না। আমার ছেলে আমি যেখানে ইচ্ছা বিয়ে করাবো তবুও তোর মেয়ে কে না!”

–“আপা একটু বুঝতে চেষ্টা করো!”

–“আমার ছোট হয়ে আমাকে আর কি ই বা বোঝাবি তুই?”

রেহানা রেগেই গেলেন,

–“যে বড় হয়ে ও বুঝে না তাকে বোঝানো গুনাহের কিছু না। আপনি যা করছেন তা ঠিক না!!”

–“তোমাদের থেকে শিখতে হবে আমার কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক?”

আয়ানের মা বাবা খুব ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। উনারা কিছুতেই মানবে না অহমি কে। বরাবরের মতো এই শেষ বারে ও ব্যর্থ হলেন আলতাফ আর রেহানা।

অহমি কে নিয়ে আয়ান তাদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত ততক্ষণে অনেক কথা কাটাকাটির পর্ব শেষ। আয়ানের মা রাগের এক পর্যায়ে বলে উঠেন,

–“আনার এই সম্পত্তি দেখে তোর মেয়েকে আমার পেছনে লাগিয়ে দিয়েছিস তাই না! এতো লোভ তোদের যে মেয়েকেই ব্যবহার করছিস?”

–“মুখ সামলে কথা বলো আপা!”

অহমি আর আয়ান আড়াল থেকে সব শুনে নেয়। সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আয়ান তার মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

–“থামো তুমি মা! অনেক হয়েছে আর না। কেন এভাবে আমার জীবন নিয়ে খেলছো তুমি?”

–“দেখেছিস কি রাক্ষুসী মেয়ে! আমার ছেলে কে কালো জাদু করে একে বারে নিজের বসে করে নিয়েছে। যার জন্য আমার ছেলে ওর কথায় উঠে বসে!”

কথা কাটাকাটির সীমান্ত চরম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছালো। অহমি কান্না জড়িত কন্ঠে বললো,

–“ফুপি তুমি যেই সম্পত্তির কথা বললে না আমার বাবা মা কে? আসল লোভী তো তুমি! আমার মায়ের নামে মিথ্যা বলে আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছো। প্রয়োজনে আমাকে ব্যবহার করে এখন ছুড়ে ফেলে দিয়েছো। তোমার বিচার উপরের উনি করবেন! চলো মা চলো বাবা! এখানে আর এক মুহূর্ত না!”

রেহানা অহমির মুখে মা ডাক শুনে এতো খুশি হয়েছেন যে তিনি মনে মনে খুশি তে কেঁদেই ফেলেছেন। অহমি আলতাফ আর রেহানা চলে যেতে নিবে আয়ান অহমির হাত ধরে ওকে আটকায়। অহমি রেগে চেঁচিয়ে বললো,

–“আমার হাত ছাড়ো আয়ান নয়তো কসম আল্লাহ আমি হাত কেটে ফেলবো!”

কথাটা অহমির মুখ থেকে বেরোতে দেরি আয়ান তড়িৎ গতিতে নিজের হাত দূরে সরিয়ে নিলো। তারা চলে যেতে পা বাড়ায়। অহমি আবার পেছন ফিরে বললো,

–“যেই ভালোবাসার জন্য এতো কিছু সেই ভালোবাসার দোহাই দিয়ে বললাম, আয়ান তুমি তোমার মা বাবার পছন্দে বিয়ে করে নাও। আর কখনো আমার জীবনে এসো না। কক্ষনো না!”

অহমি জানে না সে কতো বড় একটা কথা বলে আয়ান কে তার জায়গায় বন্দি করে দিলো। সে চাইলে ও আর এ বন্দি জায়গা থেকে ছুটতে পারবে না। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে মায়ের পছন্দের মেয়ে কে বিয়ে করতে হবে! আয়ান পারবে না কিছুতেই না।

আয়ানের মা বাবা খুব খুশি হোন। আয়ান পাথরের মতো হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় আয়ানের মা বাবা আয়ান কে নিয়ে আয়ানের বাবার বন্ধুর বাসায় যায়। দুজন বিজনেস পার্টনার। পাত্রী আয়ানের বাবার বন্ধুর মেয়ে জোনাকি! তারা আগে থেকেই পছন্দ করে রেখেছিলেন জোনাকি কে। ছেলে মেয়েদের বিয়ে হলে উনাদের বন্ধুত্ব টা আরো ঘনিষ্ঠ হবে এই বিশ্বাস! জোনাকি সত্যি দেখতে ভীষণ সুন্দরী। অহমির থেকে কোনো অংশে কম ও নয়। তবে সৌন্দর্যের তফাতে কি আসে যায় যেখানে ভালোবাসা টা উর্দ্ধে!
আয়ান তার বাবা মায়ের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলালো শুধু। সেই রাতেই আয়ান আর জোনাকির এঙ্গেইজমেন্ট সম্পন্ন হয়। আয়ান ভাবে নি এঙ্গেইজমেন্ট ও হয়ে যাবে। সবাই সব কিছু আগে থেকেই রেডি করে রেখেছে অথচ যার বিয়ে তার খবর নাই। কথাটা ঠিক এমন যে যার বিয়ে তার খোঁজ নাই, পাড়া প্রতিবেশীর ঘুম নাই। অবশ্যই এতে আয়ানের না করার ই বা কি আছে?

যাকে জীবনের থেকে ও বেশি ভালোবেসেছে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চেয়েছে সেই যখন আটকে দিলো তাতে আর দ্বিমত পোষণ করে ও কি লাভ? আয়ান বাবা মায়ের উপর রাগ আর অহমির কথার বাঁধা পড়েই বিয়ে করবে ঠিক কিন্তু জোনাকি কে কখনো স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবে না আয়ান। তিন তিন টা জীবন নষ্টের পেছনে দায়ী আয়ানের বাবা মা।
.
.
.
আজ আয়ানের বিয়ে। আর অহমি? অহদিন সেই দিন থেকেই খুব অসুস্থ। জ্বর টা সেরে উঠছে না। প্রথম দিন তো বেহুঁশ ই হয়ে গিয়েছিলো। আলতাফ আর রেহানা পাগলের মতো ছুটেছেন। শেষে না পারতে আয়ান কে কল দিয়ে ও কোনো লাভ হয় নি। আয়ানের মা ফোন তুলে ঝেড়েছেন উল্টো। মেয়েকে পেয়ে ও হারিয়ে ফেলার ভয় কাজ করতে থাকে রেহানার মধ্যে। তার একটাই ভয় তার মেয়ে এই শোক সইতে পারবে তো? অহমি অসুস্থ হয়ে পড়ার আগে রেহানা কে জাপটে ধরে বলেছিলো,

–“আমাকে ক্ষমা করে দিও মা। আমি ফুপির কথা মেনে ভুল করেছি। সৎ মা কখনো খারাপ হয় না। তুমি ই আমার মা। আমাকে মাফ করে দিও!”

ব্যাস এই টুকুই। এর পর শুধু জ্বরের ঘোরে আয়ান আয়ান করতো। আয়ানের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুনলে কি করবে কে জানে! মোটামুটি ভালোই ভয়ে আছেন আলতাফ আর রেহানা। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে অহমির অবস্থা খুব খারাপ।
এই এতো খারাপের ভিড়ে রেহানা অহমির থেকে মা ডাক টাই বড্ড বেশি ভালো ছিলো।

অহমির জ্বর একটু কমে আসে। আয়ানের বিয়ের ব্যাপার টা চেপে রাখলেন আলতাফ আর রেহানা। তবুও অহমি বুঝতে পেরে যায় সব। রুমের দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। দরজার ওপাশে কাঁদছেন রেহানা। আলতাফ পাষাণ হয়ে আছেন। কেননা ছেলেদের যে কাঁদতে নেই।

অনেক্ষণ পর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় অহমি। স্বাভাবিক ভাবেই বললো,

—“মা আমার ক্ষুধা লেগেছে আমাকে খাবার দাও!”

অহমির বলতে দেরি সব হাজির। রেহানা নিজের হাতে মেয়েকে খাইয়ে দেন। টানা পাঁচদিন পর পেটপুরে খেলো অহমি। খাওয়া শেষে অহমি বললো,

–“আমি ফুপির বাসায় যাবো!”

–“অহমি অনেক কষ্ট পেয়েছিস ভুলে যা সব!”

–“হ্যাঁ ভুলে গেছি তো! দেখছো না আমার ভালোবাসার মানুষ টা আজ বিয়ে করতে গেছে আমি কি বাঁধা দিচ্ছি? করুক না!”

–“বিয়ের কথা কিভাবে জানলি?”

–“আমি আয়ান কে ভালোবাসি মা। মা আমার এক্ষুনি যেতে হবে!”

–“কি করবি মা? তোকে বাড়িতে ঢুকতে দিবে?”

–“দিবে বাবা তুমি আমাকে নিয়ে চলো। না না তোমার বাড়িতে যেতে হবে না। তুমি বাড়ির বাইরে গাড়িতেই অপেক্ষা করো আমি গিয়ে আমার কাজ শেষ করেই চলে আসবো!”

মেয়ে কে আর বাঁধা দিলেন না। বোনের এই টুকু কি দয়া হবে? অহমি কে ঢুকতে দিবে? এসব ভাবছে অহমির বাবা। আলতাফের সঙ্গে রেহানা ও যেতে চায়। অহমি ফুলের দোকানের সামনে এসে পছন্দের বেলি, গোলাপ, রজনীগন্ধা ইত্যাদি আরো কিছু ফুল নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। আলতাফ আর রেহানার প্রশ্নবোধক দৃষ্টি! অহমি কি করবে এই ফুল দিয়ে?

আয়ানের বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়। অহমি তার বাবা মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

–“তোমরা এখানেই থাকো আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো। কোনো চিন্তা করো না!”

সব কিছু কতো সুন্দর করে সাজানো। বাড়ি টাও দারুন সাজিয়েছে। একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা।.অহমি কে বাড়িতে ঢুকতে দেখে আয়ানের মা পথ আটকে দাঁড়াব। অহমি মিনতির সুরে বলে,

–“ফুপি আয়ানের বাসর ঘর টা আমাকে সাজাতে দাও। তোমার কথা তো রেখেছি তুমি আমার এই কথা টা অন্তত রাখো। আমার শেষ ইচ্ছা টা পূরণ করো প্লিজ!”

অহমির দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে। আয়ানের মায়ের দয়া হলো। অহমি অনুমতি পেয়ে নিজে রুমের ভেতর ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। আয়ানের মায়ের তবুও সন্দেহ থেকেই যায়! ওই মেয়ের বিশ্বাস নেই কি না কি করে! পাক্কা ৪০ মিনিট পর পুরোপুরি সাজাতে সক্ষম হয় অহমি। দেয়ালের একপাশে আয়ানের হাস্যোজ্জ্বল ছবি টি খুব সুন্দর ফ্রেমে বাঁধা। অহমি সেদিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে। চোখের পানি ঝরাতে ঝরাতে ঘর টা সাজিয়েছে সে।ফুল নিয়ে আসার সময় একটা ছোট্ট তালা ও নিয়ে এসেছিলো অহমি। সেটা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দুওেয় সে। চাবি টা এক টা জায়গায় রেঝে দেয়। যে জায়গায় কথা শুধু আয়ান আর সে জানে।

–“তালা মেরে দিয়েছিস এটা খুলবো কিভাবে?”

–“আয়ান কে বলো সে জানে চাবি টা কোথায়।!”

অহমি আর কিছু না চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে সোজা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। নিজেকে স্বাভাবিক করে জোড় পূর্বক হাসি ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করলো অহমি। আলতাফ আর রেহানার কাছে এসে বললো,

–“আমার কাজ শেষ এবার চলো!”

আয়ান কে যখন অহমি বাসর ঘর সাজিয়েছে সেটা বলা হয় আয়ান যে কতো খুশি হয়েছে সে ছাড়া পর কেউ জানে না। চাবি টা যথাস্থান থেকে তুলে সেই ঘরে ঢুকে দেখে সব টা আয়ান আর অহমির পছন্দ মতো করেই সাজানো। ঠিক যেমন টা ভেবে রেখেছিলো আগে তারা। সব কিছু ঠিক আছে শুধু স্ত্রী এর জায়গায় অন্য কেউ হয়ে গেছে। আয়ান সেই ঘরে আর কাউকে ঢুকতে দিবে না তার সাফ কথা সদ্য বিয়ে করা বউ কেও না! আশ্চর্য জনক এই কথা শুনে আয়ানের মায়ের মনে হলো অহমি কে বাসর ঘর সাজাতে দেওয়াই উচিত হয় নি তার।

আয়ান অহমির সাজানো বিছানা সব কিছুতে নিজেকে বন্দি করে রাখে। এক বিন্দু ও নড়ে না। প্রায় ৫ দিন পর আজ আয়ান শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় সে আর অহমি? অহমি বারান্দায় ফ্লোরে বসে কাঁদতে কাঁদতেই রাত পার করে।

আজ দুদিন কেটে গেছে অায়ানের বিয়ের। অহমি আর যায় নি নিজেকে ঘরের মধ্যেই আড়াল করে রেখেছে। আয়ান অনেক ভার বাসার নিচে এসেছিলো ঘরে ঢুকতে দেয় নি আলতাফ। বোনের অপমান গুলো কাটার মতো বিঁধেই আছে। আয়ানের মা বাবা যদি এতো পাষাণ হৃদয়ের হয়ে পারে তাহলে উনারা কেন পারবে না? তারা ও সত্যি ই পাষাণের মতোই আচরণ করলো আয়ান কে ঢুকতে দিলো না। অহমি ও চায় নি আর আয়ান কে দেখতে। কারণ আয়ানের এখন বউ আছে। অহমির জন্য আয়ান আরেক টা মেয়ে কে ঠকাক এটা অহমি চায় না। তাই সে চুপ। আলতাফ রাগে ক্ষোভে ফুঁসছেন অনেক দিন পর আজ। আয়ানের মা কে ফোন দিয়ে বলেন,

–“আমার মেয়ে কে ও আজ দেখতে আসবে তোমাদের দাওয়াত রইল। আশা করি অবশ্যই আসবে।”

আয়ানের মা তো মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ পড়লেন। কারণ আয়ান কে বিয়ে করাতে পেরেছেন ঠিকই কিন্তু আয়ান বার বার অহমির কাছে ছুটে যাচ্ছিলো। অহমির বিয়ে হয়ে যাওয়ার সেটা বন্ধ হবে আর জোনাকি কে পয়ান মেনে ও নেবে এই ভেবে তিনি স্বস্তি পেলেন। সকল কাজ কর্ম শেষে। আয়ানের মা বাবা বিকেলে আসেন অহমি দের বাসায়। আয়ান আর জোনাকি কে নিয়ে এসে ঝামেলায় পড়তে চান নি তাই এই কাজ। রেহানা নাখোশ তাদের আগমনের। আলতাফ এর জন্য কিছু করতে পারলেন না। আর উনারা ভাবেন ও নি যে সত্যি সত্যি ই চলে আসবে।

আয়ানের মায়ের আশার পিছনে আসল কারণ অন্য কিছু। আলতাফ আর রেহানার কাছে আগে যা হয়েছে তার জন্য ক্ষমা চান আয়ানের বাবা মা! তবে আদৌ কি ক্ষমা করা সম্ভব? এদিকে অহমি তাকে দেখতে আসার জন্য বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ বলেছে ঠিকই কিন্তু নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না। আয়ানের মায়ের উপস্থিতি টের পেয়েই অহমি দরজা খুলে দেয়। আর চোখে কিছু পড়ার বাহানা দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।এই সুযোগে অহমির অনুপস্থিতিতে আয়ানের মা তার কাজ সেরে নেন। ব্যাস কাজ শেষ।

অহমি কে দেখতে আসবে সন্ধ্যায়। অথচ আয়ানের বাবা মা এসেছেন বিকালে। মতলব টা কেউ বুঝে উঠতে পারেন নি। কিছুক্ষণ পর আবার চলে ও গেলেন। অবশ্য যাবে না কেন? আয়ানের বাবা মা তো নিজেদের স্বার্থেই এসেছিলো স্বার্থ হাসিল তো আর থাকার প্রশ্নই আসে না।

অহমি একটা সুন্দর শাড়ি পড়ে নিজেকে আয়নায় দেখে। সব কিছু ঠিক আছে শুধু মুখের মলিন হাসি টা বেমানান। আয়ান কোথা থেকে যেনো চলে আসে। এসেই অহমি কে ঝাপটে ধরে ফেলে। অহমি হু হু করে কেঁদে উঠে। প্রায় অনেক্ষণ পর আয়ান অহমির কপালে কিস করতে যাবে অহমি হাত দিয়ে বাঁধা দেয়। আয়ান তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। কারণ সে তো তার অধিকার হারিয়েছে! কোনো অধিকার ই নেই অহমির উপর!

–“মামা মামনি কে কথা দিয়ে এসেছি তোমাকে এক নজর দেখেই চলে যাবো!”

আয়ান অহমি কে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। অহমি শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। কিচ্ছু বলার মতো নেই! এই কিছুদিন আগে ও তো সব ঠিক ছিলো আর এখন? সব লন্ডভন্ড হয়ে গেলো এক ভূমিকম্পেই! আচ্ছা দেখতে আসলে যদি পাত্র পক্ষের পছন্দ হয়ে যায় তাহলে কি বিয়ে ও হয়ে যাবে?

পাত্র পক্ষের লোকজন অহমি কে দেখে চলে যায়। যাওয়ার আগে অহমির হাতে ৫ হাজার টাকা ও দিয়ে যায়। ছেলে পর তার পরিবার মোটামোটি ভালোই পছন্দ হয়েছে আলতাফ আর রেহানার। রাগের বশে মেয়েকে খারাপ জায়গায় খারাপের হাতে সপে দিবেন না। তাই আগেই খোঁজ খবর নিয়ে রেখেছেন। মূলত অহমি কে স্বাভাবিক করতে বিয়েই দরকার। আর দরকার একজন উপযুক্ত জীবনসঙ্গী বন্ধুর মতো কাউকে। সব শেষে এই ছেলে কেই পছন্দ করেছেন তিনি। এখন শুধু অহমির উত্তরের আশা।

ছেলে পক্ষের ও অহমি কে পছন্দ হয়েছে। এখন অহমির মতামতের অপেক্ষা। কারণ আলতাফ আর রেহানা অহমির মতামত ছাড়া আর এগোবেন না।

অহমি নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বালিশ চেপে কাঁদতে শুরু করে। ইচ্ছা করছে হৃৎপিণ্ড টা পিষে এ অসহনীয় ব্যথা আর নিতে পারছে না সে। এভাবে কাঁদতে হবে জানলে ভালোবাসতো না কখনো অহমি। ভালোবাসা কেন এতো কাঁদায়। কেনই বা এতো কষ্টের! আয়ানের মা তো মেবে নিলেও পারতো। সব টা আজ কান্নার বদলে সুখে পরিপূর্ণ থাকতো। অহমি কাঁদছে। হঠাৎ অহমির হাতের সাথে কিছু লাগে। অহমি শান্ত হয়ে সেটি হাতে নিয়ে দেখে কতগুলি তাবিজ! অহমির আর বুঝতে বাকি নেই এইসব কার কাজ। অহমি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে মনে মনে বললো,

–“হায়রে মানুষ! স্বার্থপরে ভরে গেছে এই গোটা পৃথিবী টা!”

অহমি নিচে গিয়ে আলতাফ আর রেহানা কে জানিয়ে দেয় সে এই বিয়েতে রাজী!

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here