ভাঙ্গা গড়া,পর্ব_১
হিয়া চৌধুরী
কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ফুপি অহমির গালে কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেন। রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠেন,
–“তোর মতো অসভ্য আর বেয়াদব একটা মেয়ে আমি আমার ছেলের বউ করবো ভাবিস কিভাবে?”
থাপ্পড় খেয়ে চুপসে গেছে অহমি। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। ভালো ভালো কথা বলে এই বাড়ি তে নিয়ে এসে এমন আচরণ করবে ভাবতে পারে নি সে! আয়ান ও বাড়িতে নেই! সন্ধ্যা নেমে এসেছে প্রায়। গালে হাত দিয়ে ফুপির সামনে যতটা সম্ভব নিজেকে কঠিন প্রমাণ করতে চেয়ে ও আর পারলো না চোখের পানি আপনাআপনি পড়তে লাগলো। ফুপির কাছে অহমির এই কান্না স্রেফ ন্যাকামি ছাড়া বেশি কিছু মনে হচ্ছে না। উল্টো রাগে গা জ্বলছে তার। তিনি আবারো বলে উঠলেন,
–”জাদু করেছিস নাকি আমার ছেলে টা কে? কোন কবিরাজ করেছে এই জাদু বল আমাকে! নিজের এই রূপের জালে ফাঁসিয়ে মাথা খেয়ে নিয়েছিস আমার ছেলের! অহমি ছাড়া কিছুই যেনো বুঝে না আয়ান! শোন তোকে আজ শেষ বারের মত বলে দিচ্ছি আমার তোকে পছন্দ না। আয়ানের বউ আমি তোকে কিছুতেই হতে দিবো না! ছেড়ে দে আয়ানের পিছু নেওয়া নয়তো তোর সাথে কি হতে পারে তুই তা নিজেও জানিস না!চাইলে তো আমি তোকে এখানেই গলা টিপে মেরে গুম করে দিতে পারি কিন্তু না তা আমি করবো না! শুধরে নে নিজেকে!”
আসাড় হয়ে বসে রইল অহমি। ফুপি রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন। আয়ানের আসার অপেক্ষায় ছিলো অহমি কিন্তু নাহ অনেক্ষণ হয়ে গেছে সে আসছে না। এখানে আর এক মুহূর্ত থাকলে দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে মনে হচ্ছে অহমির। তাই বাড়ির গেট পার হয়ে হাটা ধরে সে। দারোয়ান অহমির মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো,
–“আর ভেতরে যেতে পারবেন না আপনি! ম্যামের আদেশ!”
অহমি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে মনে মনে বললো,
–“‘যাবো না!”
ফুপির কথা গুলো গায়ে কাঁটার মতো বিঁধে গেছে। মায়ের কথা খুব করে মনে পড়ছে অহমির। মাকে সেই কবেই হারিয়েছে। এই মস্ত বড় পৃথিবীতে আজ নিজেকে অসহায় লাগছে ভীষণ-ই। আয়ান আর অহমি দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে আয়ান কে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে না অহমি। আয়ান ও তাই! একে অপরের কে ছাড়া পৃথক করে কখনো ভাবে নি কেউ ই। দুজনের মাঝে বাঁধা অহমির ফুপি। তিনি কেন যেনো ভাইয়ের মেয়ে কে আয়ানের সাথে একদমি সহ্য করতে পারেন না। অহমির ব্যাপারে ভীষণ নারাজ। আজ টানা ৪ মাস যাবৎ যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি দুজন কে আলাদা করতে। কিন্তু আয়ানের জন্য পেরে উঠছেন না। এই তো ঘন্টা খানেক আগে অহমি ছাঁদে বসে ছিলো মোবাইল টা বেজে উঠে। অহমি দেখে তার ফুপি কল দিয়েছে। কল টা না তুলে বসে রইল। একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে অবশেষে ফোন টা তুলতে বাধ্য হলো। ফোনের ওপাশ থেকে অহমির ফুপি বললো,
–”অহমি মা আমি তোদের সাথে অন্যায় করেছি। তুই এখনো আমার বাড়িতে চলে আয়। কিছু কথা বলার আছে তোকে!”
মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো অবস্থা অহমির। খুশির ঠেলায় কি শুনতে কি শুনলো জানা নেই। আয়ান কে যে কল দিয়ে জিঙ্গেস করবে অহমি যাবে কি যাবে না তাও মাথায় নেই। কোনো মতে তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেল আর এখন এই কাহিনী। ফুপির কথা গুলো বেশ অপমানজনক ও ছিলো। এসব ভাবতে ভাবতে অহমি কোথায় চলে এসেছে নিজে ও জানে না। নিজের বিপদ ডেকে বসে আছে নিজের অজান্তেই!
এদিকে যাইফ রাস্তায় কলে কার সাথে যেনো কথা বলছিলো। নেটওয়ার্ক নাই ঘরের ভেতর তাই বাহিরে বের হয়েছিলো। মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে যেই না পেছন ফিরতেই যাবে ওমনি দেখতে পায় একটি মেয়ে পা টিপে টিপে হেটে চলে যাচ্ছে তার সামনে দিয়ে। চিনতে খুব বেশি দেরি হলো না যাইফের।
–“তুই অহমি না?”
কথাটা কান দিয়ে মস্তিষ্কে ধারণ করতে দেরি হলো ভয়ে আতঁকে উঠলো অহমি। কলেজে থাকা অবস্থায় যাইফের সাথে ছোট খাটো একটা ঝামেলা হয়েছিলো অহমির। যাইফ অহমি কে পছন্দ করতো অহমি নিষেধ করে দেয়। যাইফ জীবনে যা চেয়েছে তাই পেয়ে এই চাওয়া অপূর্ণ রাখবে কেন? অহমি কে জোড় করেই নিজের করতে চেয়েছিলো ফলে আয়ানের হাতে মার ও খায় সে। মার খেয়ে ৫ মাসের মতো লাপাত্তা ছিলো। আজ কোথা থেকে আসলো যাইফ? ভয়ে রিতিমত কাঁপছে অহমি! যাইফের কথায় উত্তর না দিয়ে শুনতে না পাওয়ার ভান করে নিজের মতোই হাটা ধরে অহমি। যাইফ হুংকার দিয়ে বললো,
–“অহমি দাঁড়া বলছি!”
অহমি ভীত হয়ে ঢোক গিলে পিছনে ফিরে তোতলিয়ে বললো,
–“ক.কে আপনি?”
–“চিনতে পারছিস না? আয় তোকে চেনাচ্ছি!”
এই রকম ই একটি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো যাইফ। আজ সেই চূড়ান্ত সুযোগ টা এসেই গেলো। অহমির হাত ধরতে যাবে ওড়না ধরে ফেলে যাইফ। অহমি কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ওড়না ফেলে আচমকা দিক বেদিক শূন্য হয়ে দৌড়াতে শুরু করে। যাইফ ও কম যায়। সে তো দৌড়াচ্ছে ই। একটা ছেলের সাথে একটা মেয়ে পেরে উঠা সম্ভব নয়। দৌড়াতে দৌড়াতে এক পর্যায়ে অহমি কে ধরে ফেলে যাইফ। অহমি বুঝলো আজ সে শেষ। জনমানবহীন রাস্তা কারো কাছে যে সাহায্য চাইবে তার ও উপায় নেই।
আদ্রাজের আজ ফিরতে দেরি হয়ে গেছে। সন্ধ্যা ৬ টায় বাড়ি চলে যাওয়ার কথা এখন ৭ টা ৪০ বেজে গেছে। হঠাৎ করে ব্রেক কশলো সে। টেনে হেঁচড়ে একটা ছেলে একটা মেয়ে কে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটির হালকা চিৎকার কানে আসলো আদ্রাজের। গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে সেদিকে এগিয়ে গেলো। আদ্রাজ পথ আটকে দাঁড়ায়। যাইফ রেগে কর্কশ কন্ঠে বললো,
–“এই কে তুই?”
কথার শুরুতেই তুই তোকারি টা ভীষণ অপছন্দ হলো আদ্রাজের। অহমি সর্বশক্তি দিয়ে বললো,
–“আমাকে বাঁচান!”
যাইফ চোখ গরম করে বললো,
–“আজ তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। তোর জন্য আমি মার খেয়েছি। যা আপোসে পাই নি তা জোড় করেই নেবো! এই তুই কে পথ আগলে দাঁড়িয়েছিস কেন সরে দাঁড়া! দেখ ভাই তোর কোনো ঝামেলা নেই। এই মেয়ের সাথে পুরোনো হিসাব চোকানো বাকি আমার কাজ আমাকে করতে দে!”
আবারো তুই তোকারি? তবুও আদ্রাজ নিজেকে সামলিয়ে নেয়। এতোটা সময় সে অহমি আর যাইফের চেহারার দিকে তাকিয়ে ছিলো। অহমি ভয়ে কাঁপছে। গায়ে ওড়না নেই যাইফের হাতে প্যাচানো সেটি। আদ্রাজ বললো,
–“এনাকে ছেড়ে দেন!”
–“কে রে তুই?”
–“আমি কে তা দিয়ে কিছু হবে না। আপনার পুরনো হিসাব পরে চোকাবেন যেহুতু আমার চোখে পড়েছে তাই আমি এনাকে নিয়ে যেতে দিবো না!”
কোনো ভাবে যাইফের হাত থেকে রক্ষা পায় অহমি। পুরোটা সময় ভয়ে আতঙ্কিত ছিলো সে। আদ্রাজ অহমিকে আশ্বস্ত করে বললো,
–“এখন আর আপনার ভয় নেই! আপনি সুরক্ষিত!”
অহমি কিছু বললো না। এতোটা ভয় পেয়েছে যে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আদ্রাজ কে বাসার ঠিকানা বলতেই সেই জায়গায় নিয়ে আসে আদ্রাজ। পৌঁছে গেছে বুঝতে পেরেই অহমি ছুটতে চলে যায় বাড়ির ভেতরে। আদ্রাজ সেদিকে তাকিয়ে রইলো। অন্তত একটা ধন্যবাদ তো দিতেই পারতো? আদ্রাজ কপাল কুঁচকে গাড়ি নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে চলে গেলো। এমনিতেই পুরোপুরি এক ঘন্টা দেরি হয়ে গেছে। আদ্রাজ বাড়িতে আসতেই তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে দিলো ইফাজ!
চলবে……..