অন্তর্দহন প্রণয়,১৫,১৬
লিখনীতে_সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
১৫
একটু একটু করে প্রতিদিন সিরিজ দিয়ে রক্ত বের করে নেয়া হয় রুফাইদার। ধীরে ধীরে রক্ত শূন্যতা দেখা দিচ্ছে। আগের মতো হাটা-চলার অবস্থা নেই। রুফাইদা আজ বহু কষ্টে মিনতি করলো,
“ডা. সাহির আমাকে হয় একে বাড়ে মেরে দিন। নয়তো ছেঁড়ে দিন। আমার কষ্ঠ হচ্ছে খুব। এই পীড়ন সহ্য করতে পারছি না আর!”
ডা. হাসির দৈত্যের মতো হাসলেন। কন্ঠে হিংস্রতা ঢেলে দিয়ে বললেন,
” আমিও তো মারতে চাই তোমাকে ডিয়ার। কিন্তু ধীরে ধীরে। ছটফট করতে করতে মরবে। শুকরিয়া করো, এখনো আমাদের পেটের খাবার বানাইনি। ”
রুফাইদা চোখ উপচে পড়লো জল। মনে পড়লো সেই রাতের কথাটি। যে রাতে তার বান্ধবী আর দুজন ওয়ার্ড বয় ধরে এনেছিলো সেই যুবকটির কাছে। সেদিন রুফাইদাকে রেপড করেনি সেই মানব। ছেড়ে দিয়েছিলো। বলেছিলো,
“আপনি আমার ভাবি। কোনো ক্ষতি করবো না আপনার ততক্ষণ যতক্ষণ আপনি আমাদের কথা শুনবেন। নয়তো ডা. অভিনবকে কখনো দেখতে পারবেন। ”
রুফাইদা সেদিন থেকেই মুখ বুঁজে সহ্য করছিলো সব। কিন্তু তার কিছুদিন সে যা দেখলো? তাতে থমকে গেলো সে। পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেলো মুহূর্তে। রুফাইদা শুকনো ঢুক গিললো। ডা. দেবাশীষ আর ডা. সাহির একটি মেয়েকে ধরে এনেছেন। মেয়েটি নগ্ন। দুহাতে ঢেকে রাখার বৃথা চেষ্টা করেছে মেয়েটি। লোক দুটি হাসচ্ছে। বয়স পঞ্চাশের কোঠার লোক গুলো মানসিকতা দেখে গা রি রি করছে। রুফাইদা এসব দেখতে পাড়লো না। ডুকে পড়লো ঘরটিতে। মেয়েটির গায়ে নিজের ওড়না দিয়ে ঢেকে দিলো। চিৎকার করে বলল,
“ছিঃ। নিজের মেয়ের বয়সি মেয়ের সাথে এসব করতে লজ্জা লাগছে না আপনাদের?? ডা. দেবাশীষ আপনি না বলতে, সকল মেয়েরা মায়ের জাত। আপনার সন্তান? ‘ এসব তার নমুনা? ”
দেবাশীষ ভড়কে গেলো৷ ডা. সাহিরের দিক তাকিয়ে কিড়মিড় করে বলল,
“এই মেয়ে এখনো বেঁচে কেন আছে? ওঁকে মারোনি কেন? পথে কাঁটা সরিয়ে দেয়া উচিত ছিলো তোমার। এক এক করে সব জেনে যাচ্ছে সে!”
ডা. সাহির হতাশ শ্বাস ছাড়লেন। বললেন,
“আমিও চেয়েছি মেরে দিতে। কিন্তু আমার ছেলের জন্য পাড়ছি না। ও যদি জানতে পারে রুফাইদার কিছু হয়েছে, আমাদের গড়ে উঠা সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিবে!”
“তাহলে উপায়?”
ডা. সাহির হাসলেন,
“আই হেভ এ প্ল্যান! ”
ডা. দেবাশীষের চোখ চক চক করে উঠলো। সাহির দুটো লোককে ডাকলো। দু টো রোক আসতেই বেঁদে ফেলতে বললো রুফাইদাকে। লোক দুটো তাই করলো। রুফাইদা চেচালো৷ বন্ধ ঘরে কেউ শুন্তে পেলো না। শুনলেও কেউ আর এগিয়ে আসবেনা। রুফাইদা অসহায় দৃষ্টি মেলে মেয়েটিকে দেখলো। মেয়েটি আর্তনাদ কারছে। কিন্তু কেউ এলো না তার কাছে। না রুফাইদা যেতে পাড়লো। হুহু করে উঠলো বুক রুফাইদার। বিনীত সুরে বলল,
“মেয়েটি ছেঁড়ে দিন!”
কিন্তু কে শোনে কার কথা? ডা. সাহির আর দেবাশীষ এগিয়ে গেলেন মেয়েটির দিকে। থাকা দিয়ে ফেলে দিলেন টেবিলের উপর৷ তারপর…. তারপর তাদের কার্য সমপন্ন করতে লাগলেন তারা। ঘরময় ঘুরতে লাগলো কিছু বিশ্রী শব্দ আর মেয়েটির আর্তনাদ। রুফাইদার আর সেখানে থাকতে ইচ্ছে হলো না। পালিয়ে যেতে চাইলো এক ছুটে। মনে মনে পার্থনা করলো, মাটি ভাগ হয়ে যাক, সেই মাটিতে সে মিটে যাক। দুনিয়া ধংস হয়ে যাক। তারপর থেকে রুফাইদা নিরব হয়ে গেলো। তারপরের এক ঘটনা দেখে পালাতে চেয়ে ছিলো রুফাইদা কিন্তু সেদিন???
রাত তখন ১২ টা হবে হয়তো। পানি খাবে বলে নিচে নেমে এসেছিলো রুফাইদা। তখনি তার চোখে পড়ে এক বড় খাঁচা। কাপড়ে ঢাকা। কৌতূহল হলো রুফাইদা এগিয়ে এসে একটু করে কাপড় তুলতেই শিবপাঞ্জি দেখতে পেলো ইয়া বড়। রুফাইদা ঘাবড়ে গেলো। এইটা এখানে কেন? কিছুতেই বুঝতে পাড়লো না সে। তখনি পায়ের শব্দে সে লুকিয়ে পড়ে। চারটিলোক মিলে খাঁচাটি নিচের টর্চার রুমে নিয়ে যেতে দেখে হতবাক হয় রুফাইদা। কি হতে চলেছে আবার? ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো রুফাইদার। লুকিয়ে সেও হাজির হলো। তখনি ভিতরে দেখতে পেলো, ডা. দেবাশীষ আর ডা. সাহির। তারা শিবপাঞ্জিকে কিসের ইনজেকশন পুশ করছেন। আর বলছেন,
“তোর মেয়ে রেডি তো?”
ডা. দেবাশীষ হাসলেন,
“এখনো কিছু বলিনি। শুধু ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে এসেছি। পাশের রুমেই আছে। ”
ডা. সাহির ও হাসলেন,
“তোর মেয়েটি কিন্তু খুব সুন্দরী। ভাবছি শিবপাঞ্জি না দেখে ক্রাশ খায়?”
দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলো। রুফাইদার লোম দাঁড়িয়ে গেলো। বুঝতে বাকি নেই কি হতে চলছে। সে পাশে ঘরটিতে চলে গেলো পা টিপে টিপে। মকথা ঠান্ডা করে কাজ করতে হবে এবার। রুফাইদা পাশের রুমে মেয়েটিকে পেয়ে গেলো। ঠিক যেন জয়নবের বয়সি রুফাইদার বুকে কামড় দিয়ে উঠলো। সে মেয়েটিকে সব বলল। মেয়েটি কিছুতেই বিশ্বাস করলো না রুফাইদার কথা। কোনো বাবা তার মেয়ের সাথে এমন একটি কাজ করতে পারে? তা অসম্ভব! রুফাইদা না পেরে বলল,
“তুমি আসো আমার সাথে আমি দেখাচ্ছি? ”
মেয়েটি কিছু ভেবে সম্মতি দিলো। মেয়েটিকে নিয়ে যেইনা রুফাইদা বের হলো… তখনি…..
চলবে,
অন্তর্দহন_প্রণয়
লিখনীতে_সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
১৬
মেয়েটি কিছু ভেবে সম্মতি দিলো। মেয়েটিকে নিয়ে যেইনা রুফাইদা বের হলো… তখনি…..দেখতে পেলো ডা. সাহির তার সামনে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে। রুফাইদা ভয় পেলো না। এই লোকেদের ভয় পেতে নেই। রুফাইদা মেয়ের হাতটি শক্ত ধরে চেপে ধরলেন। ডা. সাহির এগিয়ে এসে রুফাইদার গলা শক্ত করে চাপ দিলেন। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু রুফাইদা হার মানবে না। পাশে থাকা টেবিলের উপর সাজানো ফুলদানিটা নিয়ে ধাম করে মারলো সাহিরের মাথায়। সাহির “আহ্” করে উঠলো। ঝড়ে পড়লো রক্ত। হাতের বাঁধন হলো হালকা। এই ফাকে ছুটে পালিয়ে গেলো সেখান থেকে রুফাইদা মেয়েটিকে নিয়ে। এর আগে রুফাইদা অনেক চেষ্টা করে পালাতে পারেনি। কিন্তু মেইন দরজা খোলা, আশেপাশে কেউ নেই। এ যেন মেঘ না চাইতেও বৃষ্টি। মেয়েটি খুব ভয় পেয়ে গেছে এর মাঝে। বার বার বলছে,
“আপু আমার ভয় লাগছে! খুব ভয়! আমাদের মেরে ফেলবে তারা তাই না। ”
রুফাইদা জানে এরা ধরতে পারলে আজ আর আস্ত রাখবে না। শুধু মেয়েকে বলল,
“বাঁচতে চাইলে দৌঁড়াও।”
ওরা নির্জন রাস্তায় নেমে এলো। গভীর রাত। কেউ নেই। রাস্তা ধারে দুটো নেড়ি কুকুর ঘোরাঘুরি করছে। রুফাইদা রাস্তা ঘাট চিনছে না। সে কোথায় আছে তার জানা নেই। কি করবে কোন দিক যাবে বুঝতে পারছে না। ঠিক তখনি ভেসে এলো কিছু গাড়ির আওয়াজ। নিশ্চয় ওরা চলে এসেছে? রুফাইদা শুকনো ঢুক গিললো। রাস্তার ধারে দুটো বাঁক। ডান পাশের বাঁক ধরে আবার দৌঁড়াতে লাগলো। এক পর্যায় সেখানে স্টেশন দেখে খুশিতে আত্মা হারা হয়ে গেলো। একটি ট্রেন মাত্রই ছেড়ে যাচ্ছে নিজ গন্তব্য। রুফাইদা মেয়েটিকে উঠিয়ে দিলো। নিজে যখন উঠবে ঠিক তখনি পায়ে গুলি এসে লাগলো। রুফাইদা আর্তনাদ করে ছিটকে পড়লো। ট্রেনের গতি বৃদ্ধি পেলো। দু হাতে সাহায্য হাতরে হাতরে ট্রেন ধরতে চাইলো। কিন্তু না ব্যর্থ সে। সে প্ল্যাটফর্মের দিকে ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে চাইলো। দৌঁড়ে আছে তার মরণ। এই মরণ জানে মারবে না, জীবিত রেখে ধীরে ধীরে মারবে। রুফাইদা লুটি পড়লো।
যখন তার জ্ঞান ফিরলো তখন সে বাঁধা অবস্থা বসে ছিলো। তার পাশেই দেবাশীষ, সাহির আর সেই যুবক। সাহিরের মাথায় ব্যান্ডেজ। রাগে তার গা কাঁপছে। এই মেয়েটির জন্য আজ অনেক বছরের এক্সপেরিমেন্ট ধসে পড়েছে। গলার কাঁটা হয়ে গেছে যেন। রুফাইদা ভয়ে ভয়ে তাকালো। যুবকটি এবার কথা বলল,
” নিজের জন্য আর আমাদের জন্য কেন বিষয় গুলো ক্রিটিক্যাল করে তুলছেন? আপনি জানেনা? আপনার এই পদক্ষেপের জন্য ভাইয়া, আপনার মা এন্ড এন্ড আপনার ছোট বোনের কি হবে?? বাবাকে তো হারিয়েছেন, এবার নিজের বড়টাকেও কি খোয়াতে চান নাকি??”
রুফাইদা শিউরে উঠলো। ভয়ে ভয়ে বলল,
“আমার বোন, আর মাকে কিছু করো না। প্লিজ কিছু করো না।”
যুবকটি ভ্রু কুঁচকে ফেললো। গম্ভীর আর শান্ত কন্ঠে বলল,
“আর তোমার বরটাকে কি করবো শুনি?”
রুফাইদা গলায় কঠোরতা ঢেলে বলল,
“চুলোয় যাক!”
শরীরে সমস্ত শক্তি দিয়ে ঠাস করে এক চর বসালো ডাক্তার সাহির রুফাইদার গাল।রুফাইদার চোখের সামনো ঘোলাটে হয়ে গেলো। গাল যেন ফেঁটে গেছে মনে হচ্ছে। জালা করছে খুব। মুখের ভিতরে নোনতা পানীয় জাতীয় লাগতেই বুঝতে পেলো রক্ত বেড়িয়ে গেছে। রুফাইদা হাসলো। ডা. সাহির অভিনবকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসে।ডা. অভিনব আপন ছেলে কিনা..! রুফাইদা হাসলো। কাতর কন্ঠে বলল,
“পাগল ছেলের জন্য এত দরদ? আর ভালো ছেলেটাকে নষ্ট করে দিচ্ছেন তিলে তিলে?”
আরেকটা চর এসে পড়লো রুফাইদা অন্য গালে। গলা ফাঁটানো চিৎকার করে বলল, ডা. সাহির,
“চু…প!”
রুফাইদা এবার সত্যিই নিস্তেজ হয়ে পড়লো। পিছনের যুবকের উদ্দেশ্যে বলল,
“তোমার ভাইকে যাষ্ট আমি ঘৃণা করি। সে কাপুরুষ!”
যুবকটি বাঁকা হেসে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। কিছু মুহূর্তেই হাসির হলো একটি বাটি নিয়ে। রুফাইদা অবাক হয়ে চাইলো তার দিকে। ছেলেটি বাঁকা হেসে বলল,
” অনেক দিন পানিশমেন্ট দেয়া হয় না আপনাকে। তাই উড়ছেন তো? জানেন আমার হাতে কি?? মানুষের মাংস। ওইযে কদিন আগেই একটি মেয়ে খুন করা হলো? তার মাংস। জানেন? মানুষের মাংসের কত দাম? আপনার তো সৌভাগ্য, বিনে টাকায় খেতে যাচ্ছেন৷ রুফাইদা আত্মকে উঠলো৷ বিস্ফোরিত চোখে চাইলো বাটি আর যুবকটির দিকে। যুবকটি সাহিরকে ইশরা করতেই রুফাইদা মুখ খুললো। আর যুবটি একটুকরো মাংস ঢুকিয়ে দিলো রুফাইদার মুখে। রুফাইদা গা গুলিয়ে বমি করে ভাসিয়ে দিলো সব। চোখ উপচে পড়ছে জল। শরীরে শক্তি টুকু নেই লড়াই করার। যুবকটি বাঁকা হেসে বলল,
“কি আরো পালাতে চান? ”
রুফাইদা সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে না করলো। যুবকটি আবার বলল,
“আমার ভাই পাগল নই! সে আপনার বর মন থাকবে?”
রুফাইদা আবারো মাথা উপর নিচ করে হে জানালো। যুবটি এবার সুস্থির নিশ্বাস ফেললো। ডা. সাহিরের উদ্দেশ্যে বলল,
“মিস্টার সাহির। উনার পায়ে শিকল বেঁধে দিন৷ উনার ভরসা নেই। জয়নবেরই তো বোন!”
হাসলো যুবক। ডা. সাহির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
“রুফাইদা অভিনবের জান বলে ওকে মারি না আমরা। কিন্তু জয়নবকে কেন ছাড় দিচ্ছো? ও তো গলার কাঁটা হয়ে গেছে।”
যুবকটি মিষ্টি করে হাসলো। বলল,
“আমি ওকে ছাড় দিয়েছি, ছেড়ে দেইনি। আর ওকে মারবো কি না আমার ব্যাপার। নাক গলাতে আসবেন না নয়তো নাক ফুট করে দিবো। ”
বলে হাসতে লাগলো সে। পরমুহূর্তেই গম্ভীর আর শীতল কন্ঠে বলল,
“যার বউ অত্যন্ত তাকে ফিরে দিন। তাকে কাছে আসতে দিন। বউকে নিজেই ঠিক করে দিবে সে!”
যুবকটি বেড়িয়ে গেলো। সাহির সেখানেই দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করলো কতক্ষণ। অাফসোস করলো খুব। যুবকটি যদি তার সন্তান হতো? উনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। অভিনবের কথা ভেবেই বুকের মাঝে কষ্ট দলা পাকালো। ছেলেটি ৬ মাস সুস্থ, ৬ মাস পাগল থাকে। এই ৬ মাস সে ডা. সাহিরের হসপিটালের ইললিগ্যাল কাজে সাহায্য করে। তার বাবার আরেকটি ভয়ংকর রূপ আছে বেচারা জানেই না। অবশ্য ইললিগাল কাজ ছেড়ে দিতে চেয়ে ছিলো রুফাইদাকে পেয়ে এবং সে বছর পুরোটাই সুস্থ সবল ছিলো। ডা. সাহির অবাক হয়ে গেছিলেন। তাইতো রুফাইদার সাথে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছিলেন ছেলের। ছোট শ্বাস ফেলে ভিতরে চলে গেলো। মনে হচ্ছে এবার অভিনবকে বলতে হবে সব..!
——————
আজ অনেকদিন জয়নবের দেখা নেই হসপিটালে। সব কেমন শান্ত, স্তব্ধ। মেয়েটি কি ভয় পেয়েছে? তাই বুঝি চুপ। নাকি ঝড়ের পূর্বাভাস। ডা. সাহির জানে, এই মেয়ে নির্ঘাত কোনো ঘোল খাওযাবে? কিন্তু কি? তা বুঝতে পারলেন না।ছোট শ্বাস ফেললেন উনি। আজ তার একটি ইম্পর্টেন্স সার্জারি আছে ইললিগাল ভাবে করাতে হবে । লাভ হবে এক কোটি টাকার মতো। বড় ধনবান ব্যাক্তি হার্ট সার্জারি করাতে হবে। তার জন্য একটি হার্ট অত্যাবশ্যক। উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। তার সহযোগীরাও ছুটছে তার পিছনে। এক ট্রাক এক্সিডেন্ট হয়েছে। রোগীর গুরুতর অবস্থা বাঁচবে না বেশি সময়, চান্স খুব বেশি। রোগীর পরিবারেও কারো হদিস পাওয়া যায়নি । তারা রোগীকে ৩০৩ নং কক্ষে ঢুকালো। অপারেশনের সব তৈরি। ঠিক তখনি বাহির থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসতে লাগলো। বাহিরে তাদের নতুন দারওয়ান রমিজকে দাঁড় করানো ছিল। কোনো অসুবিধে হলেই খবর দেয়ার দায়িত্ব তার। অথচ রমিজের খবর নেই। বিরক্তি নিয়ে দেবাশীষকে বলল দেখে আসতে ডা. সাহির। দেবাশীষ বাহিরে আসতেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। ৩০৩ নং রুমের সামনে উপস্থিত সি আই ডির একটি দল। দেবাশীষ শুকনো ঢুক গিললো। পাশে দাঁড়ালো জয়নবের দিক চোখ পাকিয়ে তাকালো।মেয়েটি তীর্য হাসছে। চোখে মুখ হাসছে। আর কিছু দূরেই মার খেয়ে পড়ে আছে রমিজ।দেবাশীষ ভয়ে ভয়ে তাকালো,
“স্যার আপনারা? ”
সি আই ডি রূপক হেসে বললেন,
“শুনেছি ৩০৩ নং কক্ষ নাকি পরিত্যক্ত? এখানে আবার কিসের অপারেশন চলছে?”
শুকিয়ে গেলো তার মুখ। কথা আটকে গেলো গলা ভিতরটাতেই। রূপক তার সহকর্মীকে বললেন,
“একে সাইড করো। আমরা দেখে আসি নায় ঘুরে!”
দেবাশীষ আমতা আমতা করলো, কিছু বলতে চাইলো। কিন্তু কেউ তার কথা শুনলো না। তারা ঢুকে গেলো ভিতরে। বের করে আনলো একে একে ডা. সাহির সহ আরে দুজন ডাক্তারকে। ডা. সাহির শান্ত। তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হলো পুলিশ স্টেশনে। যাওয়ার আগে অবশ্য কানে কানে বলে গেলেন জয়নবের,
“তোমার বোনের জন্য খুব একটা ভালো হবে না।”
গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো জয়নবের। একদিন কুয়াশা আর তার হবু বর মিস্টার রূপক যে সি আই ডি অফিসার তার সাহায্যে এদের মুখোশ উন্মোচন
হতে পেরেছে। কিন্তু বলে না টাকার জোর সব থেকে বেশি? ছাড়া হয়ে গেলো তারা। কিন্তু হসপিটাল থেকে সাসপেন্ড করা হয়। যতদিন না তাদের গা থেকে দাগ মুছবে ততদিন এই হসপিটালে তাদের জায়গায় নেই। এর পর বেশ কিছুদিন কেঁটে যায়। জয়নব ঠিক করে নেয় এদের নিজ হাতে খুন করবে। তাউ তিলে তিলে মারবে। আর তাতে সাহায্যে করবে ‘মৌ পোকা”।এদিকে রুফাইদার কোনো খোঁজ চিরনি অভিজান করেও পাওয়া গেলো না। এর মাঝে ডা. অভিনবের দেখা মিলে। ৬ মাস যাবত উনি আর ডা. আদর টুর করে বেড়িয়েছেন। অথচ বাবার উপর এত ঝামেলা পড়লো? তাতে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই যেন। এটা কিভাবে সম্ভব? এই নিয়ে বড্ড কৌতুহল জাগলো জয়নবের।
————–
ডা. দেবাশীষ নাইট ক্লাবে প্রতিদিন নিত্যনতুন বান্ধবী নিয়ে উপস্থিত হন। আজো তাই হলো। রাতে আধারে এই ক্লাবটি যেন রঙ্গ মঞ্চ। বড় বড় ঘরের নামি দামি মানুষ এসে উপস্থিত হয় এই ক্লাবে। চারিদিকের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য আর নারীর সঙ্গ আর কি চাই এখানে? জয়নব আজ ভেশ পাল্টে হাজির হয়েছে পার্টিতে।দূরে বসে থাকতে দেখে দেবাশীষকে। লোকটি টলছে। আর পাশের ওয়েটারকে পেগ বানাতে বলছে। জয়নব সে সময়টি কাজে লাগালো। মৌ পোকার সংগ্রহ করা ধুতরা ফুলের মধু খাইয়ে ঢেলে দিলো গ্লাসে। গ্লাসটি এগিয়ে দিলো দেবাশীষের দিকে। দেবাশীষ নিভু নিভু চোখে চেয়ে জয়নবকে দেখে রেগে গেলো। সাসনে থাকা গ্লাস টুকু এক চুমুকে সবার করে দিলো। হিসহিসিয়ে বলল,
“তোকে একদিন বিছানায় নিয়ে গিয়ে উচিত শিক্ষা দিব।!”
জয়নব বাঁকা হাসলো। বলল,
“একদিন কেনো? আজ কেন নয়??”
লাস্যময়ী ভঙ্গিতে হাসলো। দেবাশীষ স্তম্বিত হলো। তার মনে হলো, কোনো দেবী তার সামনে একটি লাল ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে বসে আছে। জয়নব প্রথমে হাত বাড়ালো। দেবাশীষ সম্মোহিতর মতো ওর তালে তাল মিলাতে লাগলো। দেবাশীষ প্রতিরাতে এখানে আসে। তার জন্য একটি রুম বরাদ্দ থাকে সব সময়। সে রুমটির দিকে এগিয়ে গেলো সে। আর তারপর…..
চলবে,