মুগ্ধতায় মুগ্ধ❤️,Part_25
Labiba_Islam_Roja
.
🍁
ঘুমের মধ্যে তীক্ষ্ণ নজরে মুগ্ধতাকে দেখে চলেছে মুগ্ধ।চুপচাপ কেমন করে শুয়ে আছে।আজকের দিনটাকে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে ওর।অবশেষে যেভাবেই হোক মুগ্ধতা কে সামনাসামনি মনের কথাটা বলতে পেরেছে।মুগ্ধতার মুখ নিশ্রিত প্রতিটি বানীকে খুব করে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিলো আমার।সেই সময়কার মুখমন্ডল বলে দিচ্ছিলো ওর বলা প্রতিটা বর্ণ সত্যি।চোখগুলো সত্যি বলছিলো।ওই চোখের গভীরে যেন অনেক না বলা কথা লুকায়িত ছিলো।কিন্তু না তা কি করে হয় আমি তো জানি।মুগ্ধতা আমাকে নয় অন্য কাউকে ভালোবাসে।তাঁকেই উজার করে দিয়েছে ওর মনের সবটুকু ভালোবাসা।ওর মনেতে আমি নই বরাবরই অন্য কারোর বসবাস।যেখানে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে যেয়েও ব্যর্থ আমি।ক্লান্ত বড্ড ক্লান্ত!এই ব্যর্থতায় কোনো দোষ নেই ওর।কারণ আমিই পারিনি ওর মনে জায়গা করে নিতে।সেই ব্যর্থতার দায়ভার একমাএ আমার।হয়তো আমার ভালোবাসায় খাঁদ ছিলো তাই মুগ্ধতা কে আজও আমার করে নিতে পারিনি আমি।মনের মনিকোঠায় কেন এত হাহাকার।আজ কেন এত আকুলতা।কেন এতটা খারাপ লাগছে আামর।রাতুল আর তিথিকে দেখে কেন এতটা পুড়ছি আমি।যেখানে আমি আগেই জানি আমার রাজ্যের রাণীর মনের কোথাও নেই আমি।তাহলে আজ কেন এত বিরহ!কেন এতটা জ্বলে পুড়ে মরছি আমি।মুগ্ধতার দিকে তাকাতে তাকাতে হাতটা আপনাআপনি মাথায় চলে গেলো।মাথায় হাত বুলিয়ে নিত্য দিনের মতো কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতে গিয়েও থেমে গেলো কারণ ওর ফোন বাজছে।বিরক্তি নিয়ে ফোনের স্কিনে তাকালো।স্কিনে ভেসে উঠলো রাতুলের নাম।নিজেকে মুগ্ধতার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে উঠতে যাবে তখনই হাতে টান অনুভব করলো।পেছন ফিরে তাকিয়ে অবাক মুগ্ধ।চোখ বন্ধ করে মিটিমিটি হাসছে আর একহাতে তাঁর হাত ধরে আছে।ওকে এভাবে দেখে থতমত খেয়ে গেলো সে।আমতা আমতা করে ওর নাম ধরে ডাকলো কিন্তু কোনে সাড়া দিলো না।কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর বুঝতে সক্ষম হলো জেগে নেই মুগ্ধতা ঘুমিয়ে আছে ।ওর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ব্যালকোনিতে চলে গেলো।এখানে থেকে কথা বললে ঘুমের প্রবলেম হতে পারে ওর।।ততক্ষণে কল কেটে গেছে রাতুলের।তাই ব্যালকোনিতে এসে চেয়ারে বসে কল ব্যাক করলো রাতুলকে।রিং হওয়ার সাথে সাথে ওপাশ থেকে হাসি কন্ঠে বললো রাতুল…..
.
~~~সরি দোস্ত এতরাতে তোকে ডিস্টার্ব করার জন্য।ঘুমিয়ে পরেছিলিস নিশ্চয়!!!
ওর কথার জবাবে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম….
_____শালা! এত ফর্মালিটি করে কথা বলা কার কাছ থেকে শিখলি।ওহ!তিথি….একদিনেই এত অধঃপতন।
আমার কথা শুনল ক্ষীণ হাসলো রাতুল।
.
~~~তোরই তো বইন ভাই!কি একটা মাল।আজ কি কান্ডটাই না করলো।থ্যাংকস দোস্ত আমাদের জন্য এতটা করার জন্য।আমি তোর কাছে চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকবো।কারণ তোর জন্যই তিথিকে পেয়েছি আমি।তুই যদি সেদিন ওকে কথাগুলো না বলতিস তাহলে আমি কখনও ওই গুন্ডি মেয়েটার সামনে এসব বলার সাহস পেতাম না।
.
______ধুর কি যে বলিস!তোরা দুজনে ভালো থাক এই প্রত্যাশাই করি।
.
~~~আর তোরা…?আমরা সবাই চাই তোরাও খুব ভালো থাক।মুগ্ধতা কে নিয়ে হ্যাপিলি লাইফ কাটা।মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে এবার তোর হাত ধরে যেন সব কষ্ট ভুলে নতুন করে বাঁচতে পারে।তবে আজ কিন্তু তোর আনন্দের দিন তাই না বল……
.
______কিছুটা অবাক হয়ে….আনন্দ কিসের আনন্দ….?
.
~~~আজ মুগ্ধতাও তোকে ভালোবাসে।হুম সরাসরি বলতে পারেনি কিন্তু ওর চোখে মুখে ওর প্রতি ভালোবাসা দেখেছি আমি।হয়তো আমাদের জন্য মন খুলে বলতে পারেনি।
.
ওর কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আমি।
.
______তোদের বুঝতে ভুল হয়েছে।ও এমনি এসব বলেছে।সকলের সামনে কি করবে তাই মনের উপর জোর কাটিয়ে এসব করেছে।আমি ওর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই রে।ও একজনকে ভালোবাসে আর তাঁকে আকঁড়েই বাঁচতে চায়।ওর মনে আদনান আছে আমি নই।যতই বলুক না কেন তাঁকে ভালোবাসতো না কিন্তু আমি জানি এখনও তাঁকেই ভালোবাসে….!!
.
.
.
সকালে রোদের আলো চোখে পরে ঘুম ভাঙ্গলো মুগ্ধর।জানালার গ্লাস সরিয়ে পর্দা নিয়ে নাড়াচাড়ায় ব্যস্ত কেউ।ঘুমের ঘোরে বিরক্তি নিয়ে এপাশ ওপাশ করেও লাভ হলো না তাঁর।ঘুম ভেঙেই গেলো।সাথে সাথে রেগে গেলো মুগ্ধ।এই ভোর বেলায় রোদের সাথে খেলায় মেতেছে কে….?চোখ খুলে তাকিয়ে হতবাক মুগ্ধ। মুগ্ধতা পর্দা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে আর মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে চলেছে।ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মূহুর্তেই মুগ্ধর রাগ গলে জল হয়ে গেলো।মেয়েটার হাসি দেখেই থমকে গেলো মুগ্ধ।এই সাত সকালে এভাবে তাঁর প্রেয়সীর চাঁদপানা মুখখানা দেখতে পাবে ভাবতেই পারেনি।লাল পার্ট শাড়ি,হাতে লাল চুড়ি,কানে লাল কানদুল,ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক।চুলগুলো কোমড় পর্যন্ত গড়িয়ে পরেছে।কি মায়াবী লাগছে যেন কোনো পরী ঘুরে বেড়াচ্ছে মুগ্ধর আশেপাশে।নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতার দিকে।আজ নিজেকে আটকে রাখা বেজায় দায় হয়ে পরেছে ওর কাছে।কিন্তু মুগ্ধতা কি ভাববে সেটাও ভাবছে।তাছাড়া এই সকাল বেলা এত সাজের ঘটাই বা কেন…?কই আগে তো কখনও কোথাও যেতে হলেও এভাবে সাজে নি….?জানালার কাছ থেকে সরে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে বললো মুগ্ধতা…….
.
_____দেখুন তো আমাকে কেমন লাগছে….?সুন্দর লাগছে তো…?
মুগ্ধতার কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম আমি।সাত সকালে মেয়েটার হলোটা কি…?মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো…..
.
~~~সুন্দর!কই না তো।কেমন যেন লাগছে।এটা পাল্টে আসো একটুও ভালো দেখাচ্ছে না।
.
কথাটা শুনেই অমাবস্যার আঁধারে ছেয়ে গেলো তাঁর মুখ খানা।আবার কি ভেবে যেন খুশি হয়ে গেলো।হাসি হাসি মুখে বললো….
.
_____আপনি মিথ্যা বলছেন…?সকালটা অন্তত মিথ্যা আর বউকে কষ্ট দিয়ে শুরু করবেন না।
.
~~~ওর কথায় বিষম খেলাম আমি।কি করে বুঝলো….কিহ্!আমি মিথ্যা বলছি।
.
_____জ্বী!আচ্ছা আমাকে যদি ভালোই না দেখায় তাহলে এতক্ষণ এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন কেন….?এটাই প্রমাণ করে আমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আর আপনি আমাতেই ডুবে ছিলেন।তাই এই শাড়ি আমি চেঞ্জ করছি না।
.
~~~ওটা এমনি তাকিয়ে ছিলাম।এই সাত সকালে এত সাজার ঘটা দেখে ভাবছিলাম এই সাজের উপলক্ষ্য কি….?
.
_____উপলক্ষ্য! আপনাকে খুঁজতে হবে না!কারণ আপনি কারণটা খুঁজেও পাবেন না।যদি মুখেও কারণ বলি তবুও বিশ্বাস হবে না।তাই না বলাই শ্রেয়।আর হ্যাঁ আপনি মিথ্যা বলতে খুব একটা পারেন না।তাই বৃথা চেষ্টাও করবেন না।
.
~~~বারবার মিথ্যা মিথ্যা বলে কি বুঝাতে চাইছো…?আমি কি মিথ্যা বললাম….?
.
______এই যে আমাকে দেখতে মোটেও ভালো লাগছে না।এটা একদম মিথ্যা কথা।আসলে আমাকে এই শাড়িতে দারুন মানিয়েছে কারণ আপনার পছন্দের রং এটা।এই রঙের যেকোনোকিছুই ভালো লাগে আপনার তাই আমার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মিঃ মুগ্ধ মুগ্ধতার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো।
.
মুগ্ধতার কথা শুনে হা হয়ে গেলাম আমি।কি কনফিডেন্টলি কথা বলছে।মেয়েটা কি মন পরতে পারে নাকি।আমার মনের কথাগুলো কি সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে আমার সামনে তুলে ধরলো।আমতা আমতা করে বললাম….
.
~~~মোমোটেও তা নয়!আচ্ছা এসব বাদ দাও এবার এটা বলো এত সেজেছো কেন…?কোথাও যাবে…?
.
আমার কথায় মুচকি হাসলো মুগ্ধতা।লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললো……
.
______নাহ্!
.
~~~~কপাল কুঁচকে……তাহলে!!
.
______ যদি বলি আপনার জন্য!!
.
কথাটা শুনেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আমার।অজানা শিহরণ বয়ে গেলো মনে।আমি স্থির হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।মুগ্ধতার দৃষ্টিও স্থির।আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওই চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলাম না আমি।মাথানিচু করে ফেললাম…..!!
.
.
ফ্রেশ হয়ে অফিস যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে মুগ্ধ।ওর জামা কাপড় দিয়ে গেছে মুগ্ধতা।মুগ্ধতা কে আজকাল চিনতে পারে না মুগ্ধ।ওর কথাবার্তায় বেশ পরিবর্তন এসেছে।মুগ্ধর প্রতি ওর কেয়ারগুলো খুব আনন্দ দেয়।মুগ্ধ তো এমন মুগ্ধতা কেই চেয়ে এসেছে বারবার।যে তাঁর মন খারাপের কারণ গুলো না বলা স্বত্বেও বুঝে নিবে।কোনোকিছুর প্রয়োজন হলে বলার আগেই বুঝে নিয়ে সামনে দাঁড়াবে।তাঁর মনের কুটিরে একমাএ আধিপত্য স্থাপনকারী হবে সে!এবং সে।এতদিনে মুগ্ধতার মধ্যে সেই মানুষ টাকে দেখতে পাচ্ছে মুগ্ধ।তবে কি মুগ্ধর জীবনে সুখের দিন আগত।হঠাৎ মুগ্ধতার ডাকে ধ্যান ভাঙ্গলো মুগ্ধর।আয়নায় মুগ্ধতার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে।মেয়েটা যতটা মায়াবী তাঁর চেয়ে দ্বিগুণ মায়াবী লাগছে আজ।শার্টের কলার ঠিক করে বললো…..
.
~~~কিছু বলবে…?
.
চুপচাপ গুটিগুটি পায়ে মুগ্ধর সামনে দাঁড়ালো মুগ্ধতা।কোনোকিছু না বলে মুগ্ধর হাতে থাকা টাই টা হাতে নিয়ে পরাতে শুরু করলো।মুগ্ধতার এমন আচরণে বোকা বনে গেলো মুগ্ধ।চোখ দু’টো রসগোল্লার ন্যায় করে দাঁড়িয়ে রইলো।মুগ্ধতার টাই বাঁধা শেষ হয়ে গেলো।মুগ্ধ এখনও ঠ্যাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো।চোখের ইশারায় কি জিজ্ঞেস করতেই চমকে উঠলো মুগ্ধ।আচমকা কিছু না বলে মুগ্ধতার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো নাকি পালিয়ে গেলো বিষয়টা বুঝলো না মুগ্ধতা।এই পুরো ব্যাপারটা এত তাড়াতাড়ি ঘটলো যে মুগ্ধতা টেরই পায় নি।স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছে।বুঝার চেষ্টায় আছে একটু আগে তাঁর সাথে হলোটা কি!হঠাৎ মোহনার ডাকে ভাবান্তর হলো তাঁর।নিচে ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডাকছে ওকে।একটা মুচকি হাসি দিয়ে মুগ্ধতা নিচে চলে গেলো….!!
.
.
চলবে…..