মুগ্ধতায় মুগ্ধ♥️,Part_04,05

মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️,Part_04,05
Labiba_Islam_Roja
Part_04
.
🍁
আমি আর তিথি মুগ্ধর যাওয়ার পানে চেয়ে আছি।ঝামেলা যেন পিছুই ছাড়তে চায় না আমার।একটা শেষ হতে না হতেই আরেকটার উৎপওি।আদনানকে নিয়ে যথেষ্ট আপসেট আমি আর এখন এই মুগ্ধ।উফ কোথাও এক ফোঁটা শান্তি নেই আমার।আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললো তিথি…..
.
_____ওই রাস্তায় কি হয়েছে রে….?ভাইয়া তোকে কিসব বললো….?
.
তিথির কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো আমার।তারপর সবকিছু খুলে বললাম ওকে।সবটা শুনে হা হয়ে আছে তিথি।তারপর বললো….
.
_____মুগ্ধতা রে তোর কপালটাই খারাপ! তুই পরেছিস ভাইয়ার খপ্পরে।ভাইয়া এমনিতে কারো পিছনে লাগে না।আর যদি কেউ লাগে তাকে সহজে ছাড়ে না।এখন তোর কি হয় কে জানে…!!
.
তিথির কথায় চমকে উঠলাম আমি।আল্লাহ একটা বিপদ শেষ হতে না হতেই আরেকটা।এখন এই মুগ্ধ আমাকে কি করবে।পুরো জীবনটাই শেষ। জীবনে কি পেলাম শুধু হতাশা আর গ্লানি ধুর ভাল্লাগেনা…!!
.
🍁
জানালার বাইরে মুখ করে বসে আছে মেয়েটি।মুখে কোনো কথা নেই।একবারের জন্য আফিফের দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত।এটা কিছুতেই মানতে পারছে না আফিফ।মেয়েটির দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য হালকা কাশলো আফিফ।কিন্তু তাতেও তার কোনো হেলদোল নেই যেভাবে ছিলো সেভাবেই রইলো।এতে বেশ খারাপ লাগলো তাঁর।হঠাৎ গাড়ি থামায় চমকে আফিফের দিকে তাকালো মেয়েটি।ভ্রু কুঁচকে বললো……
.
_____কি হলো আপনি গাড়ী থামালেন কেন….?আমি তো এখনপ বাসার সামনে আসিনি…?
.
আমার কথায় মৃদু হাসলো আফিফ।নরম কন্ঠে বললো….
.
_____জানি আপনার বাসায় এখনও পোঁছাইনি।আসলে কেউ যদি আমার উপর রেগে থাকে তাহলে শান্ত হয়ে ড্রাইভ করতে পারি না আমি।
.
লোকটার কথায় হতবাক আমি।বেশ অবাক হয়ে কি বলছেন কে রেগে আছে আপনার উপর…?
.
নিজের চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলে উঠলেন উনি…..
.
____ওই যে সামনে থাকা মেয়েটি।যদিও এখনও নাম জানিনা আমি তাই “মেয়েটি” বলে সম্বোধন করছি এরজন্য আবার রাগ করা যেন না হয়।যদি নামটা বলতেন তাহলে উপকৃত হতাম।তা আপনার রাগের কারণটা বলবেন কি আমায়…?
.
আমার কথায় হাসলো মেয়েটি!!মেয়েটির হাসি মুখ দেখে অজানায় হারিয়ে যাচ্ছি আমি।
.
_____প্রথমত আমি কারোর উপর রাগ করিনি।কেউ আমার কথা না শোনলে খারাপ লাগে আমার।আপনি আমার কথা শোনেন নি তাই একটু আপসেট আর কিচ্ছু নয়।আমার নাম মিতুল।সবাই মিতু বলেই ডাকে।
.
মেয়েটির কথায় হেসে উঠলাম আমি।ওকে রাগানোর জন্যই বললাম…..
.
“তেঁতুল”!!ওহ্হ মাই গড সিরিয়াসলি তেঁতুল কারো নাম হতে পারে নাকি…?
.
ছোলেটির কথায় ক্ষেপে গেলাম আমি।অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম…..
.
_____তেঁতুল নয়!!দাঁতে দাঁত চেপে আমার নাম মিতুল।কানে প্রবলেম থাকলে ডক্টর দেখান তবুও ভুল ভাল বকবেন না ওকে।
.
ওহ্হ সরি!রাগ করবেন না।ফান করলাম।খুব সুন্দর নাম মিতুল অর মিতু।আমি আফিফ যদিও আমার নাম জানার ইচ্ছে নেই আপনার তবুও বললাম আর কি।
.
আমার কথায় খিল খিল করে হেসে উঠলো মিতু।তারপর বললো…..
.
আচ্ছা এবার যাওয়া যাক।আমার দেরি হচ্ছে।
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ড্রাইভ করতে শরু করলো আফিফ।একটা মোড়ের মাথায় গাড়ী দাঁড় করালো।মিতুর বাসাটা মোড়ের শেষে সে চায় না কেউ জানুক কোনো ছেলে তাকে নামিয়ে দিয়েছে।তাই এখানে থামাতে বললো আফিফকে।।মিতু গাড়ী থেকে নেমে ধন্যবাদ জানালো আফিফ কে।আফিফ তার শরীরে যত্ন যাতে ঠিক ভাবে নে সেই ব্যাপারে অনেক উপদেশ দিলো।তারপর আফিফকে বিদায় জানিয়ে হাঁটতে লাগলো মিতু।আফিফ এখনও দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে মিতুর যাওয়ার পানে।বেশ কিছুক্ষন পর মিতুকে আর দেখা যাচ্ছে না তখন মনের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো আফিফের।একরাশ বিরক্তি নিয়ে মন খারাপ করে গাড়ী স্টার্ট দিলো আফিফ।
.
🍁
কলেজে চারটা ক্লাস করে হাঁপিয়ে উঠেছে মুগ্ধতা।এদিকে মাথা ব্যাথায় মাথা ফেঁটে যাচ্ছে।কিছুতেই ক্লাসে মন বসাতে পারছে না।শুধু কালকের ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে চোখে ভাসছে তাঁর।আর পারছে না ক্লাসে বসে থাকতে।তিথিরও ইচ্ছে নেই ক্লাস করার কিন্তু মুগ্ধের ভয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ক্লাস করছে সে।আজকে ফার্স্ট ক্লাস মিস সেটাও দেখে নিয়েছে মুগ্ধ।তার পর যদি আবার দেখে তাহলে রক্ষে নেই।বাসায় সত্যি সত্যি বলে দেবে। বাড়িতে তিথির মা এ নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটাবে।।তাই বাধ্য হয়ে ব্যাগ কাঁধে একা একা বেড়িয়ে আসলো মুগ্ধতা।মাথাটা ঝিম মেরে আছে।ব্যাগ কাঁধে আস্তে আস্তে এগিয়ে চলেছে মুগ্ধতা।হঠাৎ কারো সাথে সজোরে ধাক্কা খায়।ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে সামনে থাকা লোকটিকে জড়িয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।চুলগুলো এসে উপছে পড়ে মুগ্ধতার মুখে।ঘন কালো চুল তার ফাঁকে ফাঁকে হালকা মুখ দেখা যাচ্ছে তার।ছেলেটা তার মুখের চুলগুলো সরিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতার দিকে।মুগ্ধতা চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। চুলগুলো সরিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চলেছে তাকে।ধবধবে ফর্সা মুখ, জোড়া ঘন কালো ভ্রু জোগলের নিচে ডাগর ডাগর চোখ।ঠোঁটের নিচে কালো ছোট্ট একটা তিল যা মেয়েটার সৌন্দর্য কে আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করে ছেলেটি।
.
হঠাৎ কপালে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো মুগ্ধতা।চোখ পিটপিট করে তাকিয়েই অবাকের চরম পৌঁছালাম আমি।”যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়”!এটা যেন মুগ্ধতার সাথেই মানায়।সামনে মুগ্ধতার সাথে লেপ্টে আছে মুগ্ধর শরীর।একধ্যানে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ।হঠাৎ মুগ্ধতার আওয়াজ শুনে হুশ ফিরলো তার…..
.
___এই যে এভাবে ৩৬ হাজার টন ওজন নিয়ে আমার উপর পড়ে আছেন কেন…?এত ওজন আমার শরীর নিতে পারছে না।প্লিজ তাড়াতাড়ি উঠুন।
.
মুগ্ধতার কথায় হুশ ফিরলো আমার।সীট!!কি হচ্ছিলো আমার।এতক্ষণ ধরে একটা মেয়েকে এভাবে দেখে গেলাম ছিঃ।দ্রুত মুগ্ধতা কে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি।আশপাশ তাকিশে না তেমন কেই নেই।এখন ক্লাস টাইম যে যার ক্লাসে তাই দু চারজন ছাড়া কেউ দেখেনি।উঠে দাঁড়িয়ে নিজের হাত ঝারতে লাগলাম আমি।মুগ্ধতা ও এরমধ্যে উঠে দাঁড়িয়েছে।ওকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম…..
.
____এই মেয়ে তুমি চোখে দেখ না।আন্ধা নাকি…?প্রথমে ভাবলাম পাগল তারপর দেখলাম বয়রা এখন দেখি আন্ধাও।ভাবা যায় একসাথে এতগুলো সমস্যা নিয়ে আছো।
.
উনার কথাগুলো শুনে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার।রাগী কন্ঠে দাঁত কটমট করে বললাম….
.
আন্ধা আমি নই আন্ধা আপনি।আমি ঠিকই ছিলাম।আমি দেখে চলতে পারেন নি নাকি মেয়ে দেখলেই ধাক্কা মারতে ইচ্ছে করে কোনটা…?
.
মুগ্ধতার কথায় বেশ রাগ হলো আমার।আর সবকিছু মানা যায় কিন্তু কেউ আমার চরিএ নিয়ে কথা বলবে।সেটা টলারেট করার মতো শক্তি বিধাতা আমায় দেন নি।হ্যাঁ মানছি দোষটা আমারই কিন্তু তাই বলে আমার চরিএ নিয়ে টানাটানি করবে এটা মানবো না আমি।মুগ্ধতার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম…..
.
হেই লিসেন আমাকে আর যাই ভাবো না কেন চরিএহীন ভেবো না।মেয়েদের যথেষ্ট রেসপেক্ট দিয়ে চলি আমি।আর তুমি নিজেকে কি মনে করো যে তোমাকে দেখে ইচ্ছে করে ধাক্কা মারবো।যদি সুন্দরী রূপসী মায়াবী কোনো এক মানবী হতে তাহলে ভেবে দেখতাম কিন্তু তাও নও।খুবই সাদামাদা ডাইনি বুড়ির মতো দেখতে তাহলে কেন শুধু শুধু তোমার পেছনে টাইম নষ্ট করবো আমি।
.
মুগ্ধর কথায় বেশ খারাপ লাগলো আমার।হয়তো এই সাদামাটা হওয়ার জন্যই আদনান আমার পরিচয়ের অজুহাত দেখিয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।নইলে এভাবে আমাকে ভুলে যেতো পারতো না।মন খারাপগুলো উড়ে এসে ভীর জমালো মনের উঠানে।মাথা ব্যাথায় এমনি মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে তার উপর এতসব আর নিতে পারছি না।আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললো মুগ্ধ……
.
___এমন হাতি মার্কা হওয়া স্বত্বেও আমাকে তুমি কি বললে ৩৬ হাজার কেজি ওজন আমার।হ্যাঁ আমার ওজন ৩৬ কেজি হতে পারে তবে তোমার মতো ৩৬ হাজার কেজি হবে না।
.
নাহ!উনার মতো লোককে ছেড়ে দেওয়া যায় না।যত ভাবছি কথা বাড়াবো না তত কথা বলেই যাচ্ছেন উনি।বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম…..
.
_____আপনার ওজন ৩৬ হাহা।আপনাকে হয় ভূতে নয় পাগলে ধরছে।অবশ্য মোটা হাতি কখনও নিজেকে মোটা মনে করে না।তার থেকে ছোট কাউকেও তার থেকে বড় মনে করে এ আর এমন কি….অন্যভাবে যদি বলি….চোর চুরি করে কখনও বলে না “আমি চুরি করেছি”।তাই আপনি যতই মোটা হাতি মার্কা হন না কে কখনই বলবেন না আপনি মোটা হাতি।
.
তোমার সাহস তো কম নয়।তুমি আমাকে মোটা হাতি বললে…?
.
____জ্বী তাই বললাম!!আর আমার সাহস বরাবরই একটু বেশি।যেহেতু একই কলেজে আছি সেহেতু আপনার জেনে রাখা ভালো।
.
তুমি কিন্তু বড্ড বেশি কথা বলছো!!সিনিয়রদের সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয় সেটুকুও শিখ নি দেখছি।
.
____সম্মান,অসম্মান সবকিছুই নিজের উপর নির্ভর করে।নিজ গুণে মানুষ সম্মানিত হয় আবার অপমানিত ও হয়।যাগগে এত কথা বলে লাভ নাই।আপনার হয়তো ফালতু ক্যাচাঁল ভালো লাগে কিন্তু আমার ভালো লাগছে না।যদি নিতান্তই ঝগড়া করতে ইচ্ছে তাহলে এখানে দেখেন অনেক মেয়ে আছে যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করেন।
.
কথাগুলো একনাগাড়ে বলে মলিন মুখে চলে গেলো মুগ্ধতা।আমি চেঁচিয়ে ডাকা স্বত্বেও পেছন ফিরে তাকায়নি।মেয়েটার ইলেম আছে বলতে হবে।আমার ডাক উপেক্ষা করে চলে গেলো।এই মুগ্ধর ডাক উপেক্ষা করলো।খুব বার বেড়েছে তোমার তাই না মুগ্ধতা।ঠিক আছে বাকা হেসেবএবার দেখো কি হয়…!!
.
.
চলবে……

মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️
Labiba_Islam_Roja
Part_05
.
🍁
পার্কে বসে আছি আমি।যখনই মন খারাপ হয় তখনই ছোটে এখানে চলে আসি আমি।এখানে আসলেই সব মন খারাপ গুলে অদ্ভুদভাবে হারিয়ে যায়।মনে অজানা এক প্রশান্তি পাই আমি।আমার মন খারাপের পর এখানে আসি এটা আদনান ভালো ভাবেই জানতো।যখনই ওর সাথে ঝগড়া হতো তখনই এখানে এসে বসে থাকতাম আর আদনান কতশত উপায়ে রাগ ভাঙ্গাতো আমার।আর আজ মাএ একটা অজুহাত দেখিয়ে আমার থেকে হাজার মাইল দূরে চলে গেছে আদনান যতই ভুলে যেতে চাই না কেন পারছি না কোথাও না কোথাও ওর জন্য মন খারাপ থেকে যাচ্ছে আমার।হয়তে এভাবেই সারাজীবন ওকে মাথায় নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে আমায়।কথাগুলো ভাবতেই চোখ দুটো অশ্রুতে ভরে উঠলো।টুপটাপ পড়তে লাগলো ঝরণা ধারার থেকে।চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলানোর চেষ্টায় আছি তখনই কারে কথা কানে এলো আমার।কথাগুলো শুনে চোখ খুলে সামনে তাকালাম আমি.!চোখ খুলে হতভম্ব হয়ে আছি আমি। মুগ্ধ…….
.
এই যে মুগ্ধতা!এখানে বসে কাঁদছো কেন…?নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ড আসবে বলে আসে নি আর সেই দুঃখে মুক্তদানা গুলো ঝরাচ্ছ তাই না।
.
আচমকা উনার গলা পেয়ে চমকে উঠলাম আমি। লোকটা যেন পিছুই ছাড়তে চাইছে না আমার।কই আগে তো কখনও দেখিনি তাহলে আজ এতবার উনার সাথে দেখা হচ্ছে কেন আমার।উনার কথার পিঠে কোনোকথা না বলে বসে আছি আমি।আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললেন উনি….
.
_____কি দিনকাল এলো মাইরি!মেয়েরা কলেজ ফাঁকি দিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে আসে আবার বয়ফ্রেন্ড না আসলে বাচ্চাদের মতো কাঁদতেও থাকে আশ্চর্য।
.
লোকটার কথায় চরম বিরক্ত আমি।বুঝতে পারছি আমাকে নিয়ে মজা করছেন উনি।কিন্তু এরকম মজায় নেই আমি।আমার অবস্থা যদি জানতে পারতেন তাহলে কেঁপে উঠতেন উনি।
.
_____বাবা গো বাবা!!বয়ফ্রেন্ড আসে নি বলে এত রাগ যে আমার কথার উওরই দিচ্ছে না।দেখেছো চেনা মানুষ কত সহজেই না চেনার ভান ধরে আছে।
.
মুগ্ধ!!এই লোকটা এতটা বিরক্তিকর হবে এটা কখনও ভাবতেও পারিনি আমি।কর্কশ কন্ঠে বললাম….
.
____আপনি এখানে কেন..?আমি যেখানেই যাই সেখানেই আপনাকে কেন যেতে হয় বলেন তো আমায়।এখানে আমি প্রেম করি আর যাই করি তাতে আপনার কি।
.
নাথিং!!তুমি প্রেম করে দেবদাস থুক্কু দেবদাসী হলেও আমার কিচ্ছু না।
.
তাহলে আমার পিছু পিছু এখানে এসেছেন কেন…?আমাকে পাহাড়া দিতে…?
.
মুগ্ধতার কথা শোনে চোখ বড়বড় করে তাকালাম আমি!মেয়েটা বলে কি আমি ওকে পাহাড়া দিতে এখানে এসেছি আজব!
.
____তোমার মাথায় খুব বড় রকমের সমস্যা আছে তাই না মুগ্ধতা….?
.
উনার কথায় রাগে শরীর রিরি করছে আমার।কি মনে করেন নিজেকে উনি।তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে….
.
_____এই পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আমাকে পাগল বলে ফেলেছেন আপনি।পাগল আমি নই পাগল আপনি।তাই আজেবাজে বকছেন।
.
স্টপ!!নিজে পাগল হয়েও স্বীকার করবে না।তোমার আচার-আচরণই প্রমাণ করে তুমি পাগল।নইলে কেউ রাস্তায় এভাবে কাউকে আঘাত করে মা গো এখনও ব্যাথা করছে।
.
লোকটার কথায় বেশ লজ্জা পেলাম আমি সত্যি এই কাজটা করা উচিৎ হয়নি আমার।মুখ কাচুমাচু করে বললাম…..
.
____দেখুন এই একটা কাজের জন্য বারবার আমাকে পাগল বলতে পারেন না আপনি।তখন পরিস্থিতি অন্যরকম ছিলো তাই এটা করতে বাধ্য হয়েছিলাম আমি।
.
আমাকে পরিস্থিতি দেখাতে এসো না।আধ পাগল মেয়ে একটা।কিচ্ছু জানো আর নাই জানো পাগলামিটা খুব ভালোই জানো দেখছি।
.
মুগ্ধর সাথে বর্তমানে কোনো কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আমার।মাথা ব্যাথায় মাথা ফেঁটে যাচ্ছে।তার উপর উনার ফালতু বকর বকর।সব মিলিয়ে অতিষ্ট আমি।এখানে থাকলে উনার সাথে ঝগড়াই করতে হবে আমায়।তাই কথা না বাড়িয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি।কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সামনে এগুতে লাগলাম।পেছনে মুগ্ধ আমাকে ডেকে হাজারটা কথা বলছে তার কিছুই যেন শুনতে পাচ্ছি না আমি।কারণ কথাগুলো শোনার ইচ্ছে নেই আমার।
.
_____মুগ্ধতা শোন!চলে যাচ্ছ কেন…?তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করবে না…?যাহ্ বাবা চলে গেলো!মেয়েটা কেমন আজব প্রকৃতির।হঠাৎ হঠাৎ চুপ করে যায়।আর এমন কান্ড করে যেন অবুঝ বাচ্চা।গাড়ে হাত বুলিয়ে বাবা দজ্জাল মেয়ে কি মারটাই না মেরেছে।উফ!কিন্তু মেয়েটা হঠাৎ চলে গেলো কেন…?ধুর কিছুই বুঝলাম না আমি।
.
.
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে টুকটাক কিছু কাজ সেরে নিলাম আমি।দুপুরে হালকা কিছু খারাপ খেয়ে নিজের রুমে চলে এলাম।রুমে এসে বসতেই শুরু হলো অন্যন্যা আপুর ডাক। তার ডাক কানে আসতেই দৌড়ে তার রুমে চলে গেলাম।কারণ একমিনিট লেইট হলে ৩৫-৪৫ টা কথা শুনতে হবে আমায়।রুমে যেতেই এক গাধা কাপড় হাতে ধরিয়ে দিলো আমায়।সেগুলো এখন ধুয়ে দিতে হবে। এগুলো নতুন নয় আপুর যাবতীয় কাজ একমাএ আমাকেই করতে হয়।যদি কাজ না থাকে তাহলে ভালো জমা কাপড় গুলোকেও আমাকে দিয়ে ধুয়াবে।কেন আমকে এতটা অপছন্দ করে জানিনা আমি।কোনোকথা না বলে কাপড়গুলো ধুতে চলে গেলাম আমি।কাপড় ধুয়ে ছাঁদে শুকাতে দিয়ে নিচে যেতেই আন্টি বললো…..
.
____মুগ্ধতা আমার কোমড়ে খুব ব্যাথা করছে একটু ম্যাসাজ করে দে তো!!
.
আন্টির কথায় না করতে পারলাম না আমি।আন্টির সাথে চুপচাপ তাঁর রুমে চলে গেলাম।কোমড় হাত পা টিপে আন্টিকে ঘুম পাড়িয়ে রুমে ফিরে এলাম আমি।রুমে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।মাথা ব্যাথা এখনও কমে নি।তবে আগের থেকে বেটার লাগছে এখন।
.
🍁
বাসায় এসেই ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে আফিফ।মুগ্ধতা কে বলে এসেছে কফি দেওয়ার জন্য।মুগ্ধতা ছাড়া কারোর হাতের কফি ভালো লাগে না আফিফের।বিয়ের জন্য আজ তিনদিন মুগ্ধতার হাতের কফি খায় নি আফিফ।তাই আজ বাধ্য হয়েই অনেকটা স্বার্থপরের মতোই ওকে কাজটা করতে বলে এসেছে।ল্যাপটপে অফিসের কিছু কাজ করতে ব্যস্ত সে।হঠাৎ মনে পড়লো সেই মায়াবীনীর কথা।চোখে ভেসে উঠলো সেই মুখের প্রতিচ্ছবি।যাকে আজ সারাদিনে প্রায় দুইশতবার মনে পড়েছে তার।যতই মনে না করার চেষ্টা করে ততই আরো বেশি মনে পড়ে তার।এই বিষয়টা নিয়ে খুবই চিন্তায় পড়ে গেছে আফিফ।এই পর্যন্ত কত মেয়ের সাথে উঠাবসা হয়েছে কিন্তু কখনও এভাবে মনে জেঁকে বসতে পারে নি কেউ।আর আজ কিনা কয়েকঘন্টার পরিচয়ে একটা মেয়েকে এতবার মনে পড়ছে স্ট্রেঞ্জ।সোশ্যাল সাউডের কথা মনে পড়তেই “মিতুল” লিখে সার্চ দিলো কিন্তু অনেক খুঁজেও কোথাও সেই কাঙ্ক্ষিত মিতুলকে খুঁজে পেলো না।হতাশ হয়ে মুখ কালো করে বিছানায় বসে রইলো আফিফ।
.
মুগ্ধতা আফিফের কফি নিয়ে রুমে এসে মুখভার দেখে বললো….
.
_____ভাইয়া কি হয়েছে তোমার মন খারাপ কেন…?
.
মুগ্ধতার গলা পেয়ে চমকে উঠলো আফিফ।মুখে হাসির রেখা টেনে….
.
____তেমন কিছু না।জানি তোর মন ভালো নেই তবুও তোকে বললাম কাজটা ঠিক হয়নি আমার।।তোকে কষ্ট দিলাম তাই না রে।আসলে তুই তো জানিস তোর হাতের কফি ছাড়া কারোর হাতের কফি ভালো লাগে না তাই বাধ্য হয়ে বললাম কিছু মনে করিস না প্লিজ।
.
ভাইয়া এমন একটা মানুষ যে কখনও কাউকে কষ্ট দিতে চায় না।অধরা অন্যন্যা আপুকে যতটা ভালোবাসে আমাকেও ঠিক ততটাই ভালোবাসে।কখনও বুঝতে দেয় না আমি তার বোন নই।এরকম একজন মানুষ পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে বললাম…..
.
____এভাবে কেন বলছো ভাইয়া!এক কাপ কফিই তো চেয়েছো তুমি।আর তো কিছু নয়।এসব কথা বললে কিন্তু গাল ফুলিয়ে বসে থাকবো আমি।
.
আমার কথায় হাসলো ভাইয়া।কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো…..
.
____যা হয়েছে সব ভুলে যা মুগ্ধতা।এরকম লো ম্যান্টালিটির মানুষের জন্য কখনও কষ্ট পাস না প্লিজ।জীবনটাকে নতুন করে সাজা।কোনো সেলফিশের স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টা করিস না।নিজেকে শক্ত কর।
.
ভাইয়ার কথাগুলো মন দিয়ে শুনলাম কিছু না বলে রুম থেকে চলে আসলাম।ভাইয়ার কথাগুলো ঠিকই যথাসম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করবো আমি।কিন্তু চাইলেই কি সব হয়।মনের উপর কি জোর চলে…!!
.
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজকর্ম করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম আমি।আজ কোনো ঝামেলা ছাড়াই কলেজ ঢুকে গেছি।মুগ্ধ নামের লোকটাকে কোথাও দেখিনি।সারাটাদিন ভালোই কেটেছে আমার।যাক এইবার শান্তি।আর কখনও যেন লোকটার সামনে না পড়ি আমি।কথাটা বলেই সামনে পা বাড়াতেই অবাক হলাম আমি।মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে লোকটা সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আমার।মুগ্ধ কে দেখেও না দেখার ভান ধরে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি এমন সময় তিথিকে বলে উঠলো মুগ্ধ…..
.
____তিথি তোর শাঁকচুন্নি বান্ধবী কে বলে দে….আমাদের কলেজের নিউ টিচার আদিবা ম্যাম ওকে ডেকে পাঠিয়েছেন।১০ মিনিটে যেন উনার সাথে দেখা করে।
.
লোকটার কথায় চরম অবাক হলাম আমি।আদিবা ম্যাম পরশু জয়েন করেছেন সেটা শুনেছি যদিও এখনও তাকে দেখিনি আমি।কিন্তু উনি হঠাৎ আমায় ডাকবেন কেন…?তিথির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিে আছি আমি…..তিথি বললো____
.
____আদিবা ম্যাম মুগ্ধতা কে ডাকছেন কেন ভাইয়া…?আর তাছাড়া সেটা ওকে না বলে
তোমাকে বললেন কেন…?
.
সেটা তোকে জানতে হবে না।সিম্পল একটা বিষয় আমি ওদিকে আসছিলাম তাই আমাকে বলেছে যদি চিনে থাকি তাহলে যেন বলি তাই বললাম আর কিছু নয়।
.
____শুনেছি আদিবা ম্যাম খুব রাগী খিটেখিটে মেজাজের একজন মানুষ।উনি কলেজ ঢুকতে না ঢুকতে আমায় ডাকলেন কেন কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না আমার।আমি আর তিথি ঝিম মেরে আছি।দুজনেই বুঝতে পারছি না কেন আমাকে ডাকলেন উনি….!!আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও বললেন উনি…..
.
____ম্যাম সময় সম্পর্কে খুব সচেতন।যদি ১০ মিনিট পরে যাও তাহলে খবর আছে তোমার।তাই এক্সট্রা শাস্তি পাওয়ার আগে তাড়াতাড়ি যাও হারি আপ!!
.
হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ম্যামের রুমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম আমি….!!
.
.
লোডশেডিংশের জন্য গতকাল গল্প দিতে পারিনি।জানি ভালো হয়নি অগোছালো হয়েছে।অনেক তাড়াহুড়োয় লিখেছি ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন…!!
.
.
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here