গল্প-জ্বীন রহস্য,(পর্ব-০৪)
লেখক-Riaz Raj
ওর গায়ে ব্লাউজ নেই। ভয়ে তাজকিয়া কম্বল দিয়ে গা ঢেকে ফেলে। এরপর ফ্লোরের দিকে তাকাতেই সে দেখতে পায়, বিশাল লম্বা একটা লোক পাঞ্জাবি পড়ে নামাজ পড়ছে। তাজকিয়া ভয়ে জ্ঞান হারাবার অবস্থায় চলে যায়।
লোকটা নামাজ পড়তে পড়তে তাজকিয়ার চোখের সামনেই অদৃশ্য হয়ে গেলো। তাজকিয়া এসব দেখে আরো হতাশ হয়ে যায়।রিয়াজ কোথায়,আর এই জ্বীনই বা কেনো এসেছিলো। ওর শাড়ী খুলেছিলো কে। তাজকিয়া কম্বল সরিয়ে শাড়ীটা আবার পড়ে নেয়। এরপর বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনিতে যায়। গিয়ে দেখে রিয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে। তাজকিয়া গলার শব্দ ছাড়ে। কিন্তু রিয়াজ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে উপরে। তাজকিয়া গলার স্বর আরেকটু জোরে বাড়িয়ে কাশি দেয়। তাও রিয়াজ পিছু তাকায়নি। এইবার তাজকিয়া ধীরে ধীরে রিয়াজের পিছনে যায়। একদম পিছনে দাঁড়িয়ে বলল,” রিয়াজ,কি হয়েছে আপনার। এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন”। রিয়াজের কোনো জবাব নেই। সে এমন অদ্ভুত আচরণ কেন করছে,তা তাজকিয়া জানেনা। তাজকিয়া সাহস নিয়ে রিয়াজের কাধে হাত দিতেই,রিয়াজ সেখানেই হেলে পড়ে যায়। তাজকিয়া সামলে নিতে চাইলে,সেও পড়ে যায়। রিয়াজ ব্যালকনিতে শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ। তাজকিয়া রিয়াজের মাথা তুলে তার হাটুর উপর রাখে। এরপর রিয়াজের মুখ ধরে তাজকিয়া হতাশা মুখে ডাকতে লাগলো,” কি হয়েছে আপনার? আপনি উঠুন”। বলেই কান্না করতে লাগলো। এদিকে ফজরের আযান দিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে রিয়াজ লাফিয়ে উঠে বসে পড়ে। তাজকিয়া চুপ হয়ে যায়। অবাক হয় সে বার বার। রিয়াজের হয়েছে কি৷ রিয়াজ বসে তাজকিয়ার দিকে তাকায়। এরপর সেখানেই তাজকিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে। তাজকিয়াও শক্ত করে রিয়াজকে জড়িয়ে ধরে৷ সাথে কান্নাও করতে লাগলো দুজনে। রিয়াজ তাজকিয়াকে জড়িয়ে ধরেই বলল,
– আমাকে ছেড়ে যাবেনা তো কখনো?
– না,কখনো না। আমি আপনাকে সারাজীবন আমার পাশে চাই।
– আমিও।
– কিন্তু আপনার কি হয়েছে৷ রুমে কে গেছিলো,আমার শাড়ি খুলেছে কে। আর আপনিও বা ব্যালকনিতে কেনো আসছেন এতো রাতে।
তাজকিয়ার প্রশ্ন শুনে রিয়াজ হুট করে রেগে যায়। এরপর তাজকিয়াকে ধাক্কা দিয়ে বসা থেকে উঠে যায় রিয়াজ। তাজকিয়া আবার অবাক হয়ে গেলো। রিয়াজ বসা থেকে উঠে সোজা রুমের দিকে চলে গেলো। তাজকিয়া রিয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়াজ রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। তাজকিয়া বারান্দায় বসেই আবার কান্না করতে থাকে।
সকাল ৮ টা বাজে। তাজকিয়া চোখ মেলে দেখে ব্যালকনিতে এখনো সে শুয়ে আছে। কখন কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে,নিজেও টের পায়নি। ওখান থেকে উঠে তাজকিয়া রুমে আসে। রিয়াজ এখনো শুয়ে আছে বিছানায়৷ তাজকিয়া ব্যাগ থেকে নতুন একটা শাড়ি বের করে ওয়াশরুমে যায়। দরজা বন্ধ করে ঝর্ণাটা চালু করে দেয় সে। উপর থেকে পানি পড়ছে,তাজকিয়া চোখ বন্ধ করে এখনো ভাবছে। ওর সাথে রাতে কি হয়েছিলো এখনো সে জানেনা। তবে তাজকিয়া উপলব্ধি করতে পারে,কোনো প্রকার সেক্স করা হয়নি রাতে।
ভাবনার ঘোর ভেঙ্গে তাজকিয়া চোখ মেলে। এরপর বুকে তাকাতেই সে খেয়াল করে, ডান পাশে গোল একটা কালো দাগ। যেনো কোনো কলম দিয়ে আকা হয়েছে। তাজকিয়া হাত দিয়ে ঘষে সেটা তুলতে চায়,কিন্তু পারেনা। আরো ভালো করে ঘষে।কিন্তু তা উঠেই না। কিছুই বোঝতে পারেনা সে। এই দাগ আসলো কোথা থেকে,আর তার গায়েই কেনো। সন্দেহ করেছে সে জ্বীনের উপর৷ কিন্তু রাতে কি হয়েছিলো,তা না জানা অব্দি তাজকিয়ার কাছে সবি অস্পষ্ট থাকবে৷ তাজকিয়া আরো ভাবে, রিয়াজ হটাৎ এমন আচরণ কেনো করেছে। যেখানে সে নিজে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলল,ছেড়ে না যেতে। সেখানে এমন কেন হলো। প্রশ্ন করাতে কেনো সে রেগে গেলো। নিশ্চয়ই এর পিছনেও কোনো রহস্য আছে। তাজকিয়া উত্তর খুজে পায় না। শেষে নিরাশ হয়ে আবার গোসল করায় মন দেয়।
গোসল শেষে তাজকিয়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়। দেখে রিয়াজ বিছানায় এখনো শুয়ে আছে।তখনি রিয়াজের আম্মু মরিয়ম বেগম দরজার ওপাশ থেকে বলল,” তাজকিয়া মা,উঠো।সকাল হয়ে গেছে”। তাজকিয়া জবাবে বলল,” আসছি মা,একটু অপেক্ষা করুন”।
ব্যালকনিতে বসে তাজকিয়া চুল শুকাতে দেয়। গামছা দিয়ে চুল ঝাড়াচ্ছে। তখনি তাজকিয়ার মনে হলো,ওর কোমরে কেও হাত রেখেছে। তাজকিয়া কনফিউজড হয়ে যায়,এইটা রিয়াজ নাকি সেই জ্বীন। হুট করে সে পিছনে তাকাতেই দেখে,কেও নেই। ফাকা পুরো। তাজকিয়া বসা থেকে উঠে রুমের দিকে যায়।রিয়াজ এখনো ঘুমাচ্ছে। কিন্তু কোমরে হাত দিলো কে? তাজকিয়া আবারো হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পড়ে। না,সে আর ভাবতে পারছে না। সিদ্ধান্ত নেয় সে,আজই কোনো কবিরাজের কাছে যাবে।
সাজুগুজু করে তাজকিয়া নিছে নেমে আসে। রান্না ঘরে গিয়ে দেখে মরিয়ম বেগম নাস্তার আয়োজন করছেন।তাজকিয়াও সাথে হাত লাগায়।কথার মধ্যে মরিয়ম বেগম বলল,
– তোমাকে খুবি নিরাশ লাগছে। কি হয়েছে তাজু।
– না মা,কি হবে।
– চেহারা ওমন ফ্যাকাসে কেনো।
– না মা,কাল ঘুম হয়নি ভালো তাই।
– দুষ্টু মেয়ে,এগুলো শাশুড়ীকে কেও বলে নাকি।
– আরেহ না মা,আমি বোঝাতে চেয়েছি আমরা সারারাত ব্যালকিতে বসে গল্প করেছি।
– গল্প? তাও রিয়াজের সাথে? অবাক কান্ড। সে তো শুধু ফেসবুক নামক একটা আজাইরা সফটওয়্যারে গল্প লেখে। এই ছাড়া তো কোনোদিন কারো সাথে গল্প করতে দেখিনি। বন্ধুদের সাথেও করেনা। আর করবেও বা কি,ওর মাথায় সারাদিন ভূত জ্বীন ঘুরে বেড়ায়। এইগুলো নিয়েই লিখালিখি করে। আবার তার কিছু আজাইরা পাঠক/ পাঠিকা আছে। নিজের সময় নষ্ট করে ওর ফালতু লেখা পড়ে।
– ফালতু কেনো হতে যাবে মা।আমার জানামতে সে খুবি ভালো লেখে।
– আর বইলো না মা। ভূত বলতে কিছু আছে নাকি। এইগুলো তো শুধু কাল্পনিক। প্যারানরমাল নিয়ে পড়াশুনা করে ওর মাথাটা গেছে। কোথায় একটু রোমান্টিক গল্প লিখবে তা নয়। আচ্ছা বাদ দাও,তোমার সাথে কি নিয়ে গল্প করেছে। নাকি সেখানেও ভূত প্রেত নিয়ে কথা বলেছে।
– যেটা আপনি সন্দেহ করেছেন,সেটাই।
– হা হা হা,আমি জানতাম। এই ছেলের মুখে আর কোনো বিষয়ে কথাই বের হবেনা।
এই জ্বীন রহস্য গল্পের আসল লেখক রিয়াজ রাজ।আপনারা কোনো কপিবাজের আইডিতে গল্প পড়ে থাকলে,এক্ষুনি রিয়াজ রাজ লিখে সার্চ করুন
বউ শাশুড়ীর আড্ডার মাঝে রিয়াজ নিছে নেমে আসে। ফ্রেশ হয়েই এসেছে। তাজকিয়া দৌড়ে রিয়াজের কাছে যায়। এরপর বলল,” বসুন,আমি। নাস্তা নিয়ে আসছি”। রিয়াজ কোনো কথা না বলে সোজা টেবিলে গিয়ে বসে। তাজকিয়া রান্না ঘর থেকে সব নাস্তার আইটেম নিয়ে আসে। মরিয়ম বেগম সহ সবাই টেবিলে বসে। তাজকিয়া দাঁড়িয়ে আছে এক পাশে।মরিয়ম বেগম তাজকিয়াকে বলল,
– তাজু,তুমিও বসো?
– না মা,আমি শেষে খাবো।
– আহা! বসো তো? ওতো ভদ্র হতে হবেনা। তুমি আমাদেরই ফ্যামিলি মেম্বার। লজ্জার কি আছে।
তাজকিয়া মাথার কাপড় ঠিক করে রিয়াজের পাশের চেয়ারে বসে৷ রাজু মোবাইল টিপতে টিপতে খাচ্ছে।মরিয়ম বেগমও খাওয়া শুরু করে। রিয়াজ পরোটায় হাত দিয়ে একটু ছিড়ে মুখে দেয়। এরপর হটাৎ রিয়াজ দাঁড়িয়ে পরোটার প্লেটটা ছুড়ে মারে ফ্লোরে। তাজকিয়া ভয়ে দাঁড়িয়ে যায়। মরিয়ম বেগমও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রাজু ফোনটা টেবিলের নিছে লুকিয়ে,সেও তাকিয়ে আছে। রিয়াজ বলল,
– এমন বিশ্রি পরোটা কে বানিয়েছে? এগুলো খাওয়ার যোগ্য? যত্তসব।
রিয়াজের কথা শুনে মরিয়ম বেগম বলল,
– আরেহ,পরোটা ঠিকই তো আছে। আমার তো খারাপ লাগছেনা। আর তাজু নিজ হাতে তোর জন্য বানিয়েছে। এইভাবে ফেলে দিলি কেন?
– তোমার মুখের রুচি নষ্ট হয়ে গেছে সেটা বলো। এইগুলো জ্বীনরা খায়?
তাজকিয়া হুট করে রিয়াজের দিকে তাকায়। মরিয়ম বেগমও অবাক হয়ে গেলো। জ্বীন খায় মানে? ওর কথাটা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। তাজকিয়া এতক্ষণ কান্না করছিলো? সেও কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে রিয়াজের দিকে তাকায়। রিয়াজ সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
– মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে। এতো সিরিয়াস হবার কিছু হয়নি। আর এই তাজু, তুমি আর পরোটা বানাবে না। আমার পরোটা মা বানাবে।
বলেই হনহন করে রিয়াজ বাসা থেকে বের হয়ে যায়। মরিয়ম বেগম তাজকিয়ার দিকে তাকায়। তাজকিয়া শাড়ির আঁচল মুখে টেনে কান্না করতে লাগলো। এরপর সোজা দৌড়ে উপরের ঘরে চলে যায়। মরিয়ম বেগম কিছু বোঝতে পারেনা। উনি মাথায় হাত দিয়ে টেবিলের উপর মাথা ফেলে দেয়।
কিছুক্ষণ বাদে তাজকিয়া নিছে আসে। মরিয়ম বেগম এখনো খাবার শেষ করেনি৷ তাজকিয়া মরিয়ম বেগমের পাশে এসে বলল,
– মা, চিন্তা করবেন না। আমার বানানো নাস্তা হয়তো ওর পছন্দ হয়নি। আপনি খেয়ে নিন।
– কিন্তু সে হটাৎ জ্বীন বলে উঠলো কেনো?
– জানোই তো মা,সে জ্বীন নিয়ে গল্প লেখে। হয়তো ওটার কারণে ভুলে বলে দিয়েছে।
তাজকিয়া কোনোভাবে ব্যাপারটা সামলে নেয়। দুপুর হয়ে যায়। তাজকিয়া রান্না ঘরে বসে আছে। রান্নায় হাত দিচ্ছেনা। মরিয়ম বেগম নিজেই নিষেধ করেছে। কারণ এতে রিয়াজ আবার যদি তাজকিয়াকে অপমান করে। বউ শাশুড়ী মিলে সময়টা কাটিয়ে নেয়। তাদের আড্ডা সময় পার করে দেয় ধীরে ধীরে। তখনি তাজকিয়ার নাম্বারে কল আসে একটা। তাজকিয়া ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে রিয়াজের নাম্বার। গলার স্বর ঠিক করে তাজকিয়া কল রিসিভ করে৷ ওপাশ থেকে রিয়াজ বলল,”খেয়েছো? “। কথাটা শুনেই তাজকিয়ার মনে যেনো একটা অনন্দ কাজ করতে লাগলো। রিয়াজ নিজে কল দিয়ে খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করেছে। এই চাওয়াটাও তাজকিয়ার অনেক। তাজকিয়া বলল,
– না,খাবো। আপনি খাবেন না? বাসায় আসুন?
– আমি অফিসে খেয়ে নিবো।
– আম্মু নিজের হাতে রান্না করেছে আপনার জন্য। সকাল থেকে।
– তুমি কি করেছিলে?
– আমি রান্না করতে চেয়েছি,আম্মু করতে দেয়নি। বসিয়ে রেখেছিলো আমাকে।
– ওহ,আচ্ছা শুনো। আমি বাসায় খাবো। কিছুক্ষণ পর আসতাছি।
বলেই কল কেটে দেয় রিয়াজ। তাজকিয়ার খুশিটুকু যেনো আবার কোনো কালো মেঘাচ্ছন্ন ঝড় কেড়ে নেয়৷ তাজকিয়া রান্না করেনি বলেই হয়তো রিয়াজ বাসায় খেতে আসতেছে। এই ভাবনা ওর মাথায় ঢুকতেই চোখের পানি ছেড়ে দেয়। মরিয়ম বেগম বলল,
– কি হয়েছে তাজু। কান্না করছো কেন। আবার কথা শুনিয়েছে তোমাকে?
– না মা। ধোয়া আসছে চোখে। তাই পানি এসে গেছে। রিয়াজ চলে আসবে একটু পর। খাওয়ার জন্য।
– আচ্ছা,তুমি টেবিলে খাবারটা সাজিয়ে দাও। আমি আসছি। একটু ফ্রেশ হয়ে নি।
– আচ্ছা মা।
তাজকিয়া টেবিলে খাবার সাজাতে থাকে। কিছুক্ষণ পর কলিংবেলের শব্দে তাজকিয়া সোজা হয়ে যায়। রিয়াজ এসেছে নিশ্চয়ই। তাজকিয়া মাথায় কাপড় দিয়ে দৌড়ে দরজা খোলে। রিয়াজের কপালে ঘাম ঝড়ছে। কড়া রৌদ বাহিরে। তাজকিয়া দরজা খুলে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রিয়াজ বলল,
– বাহিরে এতো রৌদ।উফফ, এদিকে আসো তো? শাড়ি দিয়ে ঘামটা মুছে দাও।
তাজকিয়া আবার অবাক হয়। রিয়াজের হয়েছে কি। একবার ভালো আচরণ করে,আরেকবার ওর চোখের দিকে তাকানোই যায়না। বার বার গোলকধাঁধায় ঘুরতে থাকে তাজকিয়া। রিয়াজ আবার বলল,
– কি,দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি মুছে দিবে।
– হুম দিচ্ছি।
শাড়ির আঁচল টেনে তাজকিয়া রিয়াজের মাথার ঘাম মুছে দেয়। আর এই দৃশ্য দেখে ফেলে মরিয়ম বেগম। উনিও কনফিউজড হয়ে গেলো। মনে মনে বলতে লাগলো,” এদের কাহিনী কিছু বোঝা যায়না। একবার দেখি যোদ্ধাদের মতো শত্রু হয়ে যায়৷ আবার মাঝে মাঝে রোমান্টিক হয়ে যায়। এদের মাথায় সমস্যা,নাকি আমার মনে সমস্যা কে জানে”।
ঘাম মুছে তাজকিয়া আবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়। রিয়াজ ব্যাগটা তাজকিয়ার হাতে দিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়। তাজকিয়া ব্যাগ নিয়ে রুমে আসে। এরপর ব্যাগটা রেখে খাবার টেবিলে যায়।
যাইহোক, রিয়াজ স্বাভাবিক আচরণ করতে লাগলো। হাসিখুশি চলাফেরা করছে। খেয়ে দেয়ে নিজের রুমে গিয়ে এক ঘুম দেয় সে,একেবারে সন্ধায় উঠে। তাজকিয়া এই পুরো সময়টায় রিয়াজের পাশে বিছানায় বসে ছিলো। রিয়াজের ঘুমন্ত চেহারাটা দেখতে দেখতে কখন সন্ধা হয়ে যায়,তাজকিয়া টেরই পায়নি।
এদিকে ঘুম থেকে জেগে রিয়াজ ফ্রেশ হয়ে নেয়। তাজকিয়াকে চা আনতে বলে,ল্যাপটপ নিয়ে টেবিলে বসে রিয়াজ। তাজকিয়া নিছে গিয়ে চা বানিয়ে আনে। রিয়াজের সামনে চায়ের কাপটা ধরতেই,রিয়াজ বলল,
– চা কে বানিয়েছে।
– আমি।
– আম্মু কোথায়।
– নিছে,টিভি দেখছেন।
– যাও,আম্মুকে বলো চা বানিয়ে আনতে।
– কিন্তু আপনি আমার হাতের কিছু খাননা কেনো। আমার এইটা খুব কষ্ট হয়।
কথাটা শুনেই রিয়াজ চোখ লাল করে তাজকিয়ার দিকে তাকায়। তাজকিয়া ভয়ে কাপতে লাগলো। রিয়াজ বসা থেকে উঠে সোজা দরজার কাছে যায়। এরপর দরজা বন্ধ করে তাজকিয়ার সামনে এসে বলল,
– কি বললা? আবার বলো?
– না মানে,,
– মানে মানে কি, কি বলেছো আবার বলো।
তাজকিয়া ভয়ে কান্না করে দেয়। রিয়াজ সেই অবস্থায় তাজকিয়ার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে, গরম চা তাজকিয়ার পায়ে ঢেলে দেয়। যন্ত্রণায় তাজকিয়া চিৎকার দিতে চাইলে রিয়াজ তাজকিয়ার মুখ চেপে ধরে বলল,” চুপ।একদম চুপ”। তাজকিয়ার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু শব্দ আর বের হচ্ছেনা। রিয়াজ মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলল,” জবাব দাওনি এখনো। ওসময় কি বলেছিলে? আমার মুখের উপর তর্ক করা শিখেছো কবে থেকে”। এইটা বলেই তাজকিয়াকে কষিয়ে একটা চড় মারে রিয়াজ।
রিয়াজের চড় খেয়ে তাজকিয়া টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিছে পড়ে যায়। মাথাটা টেবিলের সাথে ধাক্কা খাওয়ায়,কপাল ফেটে রক্ত বের হতে লাগলো। তাজকিয়ার মুখ ফসকে ” মাগো” বলে শব্দটা বের হতেই,রিয়াজ তাজকিয়ার পেটে জোরে একটা লাথি মারে। তাজকিয়ার মুখ থেকে এইবার আর একটা শব্দও বের হয়নি। মুখ চেপে সে ফ্লোরে পড়ে থাকে।রিয়াজ ব্যালকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে। এরপর ব্যালকনি থেকেই রিয়াজ বলল,
– তাজকিয়া,আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো তো?
চলবে….?