গল্প:রঙহীন জীবনের রঙ,পর্ব ২২,২৩
লেখনীতে:স্বর্ণা সাহা (রাত)
পর্ব ২২
দিশানী নীলাদ্রির কথা শুনে মেঘার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মেঘা আবারও বললো,
—যদিও নীলাদ্রি দা আমাকে এসব বলতে বারণ করেছে কিন্তু আমি মনে করি তোকে আমার এসব বলা উচিত।
—কি বলবি?
—আচ্ছা দিশু তুই কি বুঝিস না নীলাদ্রি দা তোকে এখনো ভালোবাসে।
দিশানী মেঘার কথা শুনে মুচকি হাসে। মেঘা দিশানীকে হাসতে দেখে বলে,
—এভাবে হাসছিস কেনো? আমি হাসার মতো কিছু কি বলেছি যে তুই এভাবে হাসছিস?
দিশানী উত্তর দিলো,
—আমি এতোটাও অবুঝ না যে নীলাদ্রির ভালোবাসা বোঝার আমার ক্ষমতা নেই।
মেঘা উত্তেজিত হয়ে বলে,
—তাহলে নীলাদ্রি দা কে নিজের মনের কথা বলে দে।তোদের সম্পর্কটাকে আগা।নীলাদ্রি দা এখনো শুধুমাত্র তোর জন্য অপেক্ষা করে আছে।আজকালকার দিনে এরকম খুবই কম দেখা যায়।তোরা নিজেদের সম্পর্কটাকে আগানো নিয়ে খোলাখুলি কথা বল।
—না।এটা সম্ভব না। আমার এই ভাঙাচোরা জীবনের সাথে আমি আর কাউকে জড়াতে পারবো না।উনি আমার থেকে আরো অনেক ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করে।
—কিন্তু নীলাদ্রি দা তো অন্য কোনো ভালো মেয়েকে চায় না, নীলাদ্রি দা শুধুমাত্র তোকে চায় সেটাও তোর ইচ্ছা হলে তবে।নীলাদ্রি এখনো তোকেই ভালোবাসে, অন্যকাউকে কখনো তোর জায়গাটা দিতে পারবে না বলেই তো বিয়ে করেনি।এখন অনেকদিন পর যখন তোদের সেই ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর সুযোগটা এসেছে তাহলে এই সুযোগটা হাতছাড়া করছিস কেনো?
—আমার প্রতি ওনার প্রথমত এতো কনসার্ন দেখে আমি ভেবেছিলাম এটা আমার প্রতি ওনার করুণা। কিন্তু সেদিন যখন উনি প্রাইভেট ভার্সিটির ফর্ম হাতে দিলেন সেইদিন রাতে আমি বুঝে গেছিলাম উনি আমাকে এখনো ভালোবাসেন তবুও সিউর ছিলাম না কিন্তু ওনার একের পর এক কর্মকান্ডে আমি সিউর হই উনি আমাকে এখনো ভালোবাসেন কারণ করুণা থেকে মানুষ মানুষের জন্য কখনো এতো কিছু করে না যতটা নীলাদ্রি আমার জন্য করেছে।
—বুঝেই যখন গেছিস নীলাদ্রি দা এখনো তোকে ভালোবাসে তাহলে সম্পর্কটা আগাতে এতো দ্বিধা কেনো হচ্ছে তোর?
—ভয় হয় আমার।আমি চাইনা আর কাউকে এই জীবনের সাথে জড়াতে।আর তাছাড়া ওনার আত্মীয়রাও তো মানবে না একটা ডিভোর্সি মেয়েকে, উনি তার থেকে একটা ভালো মেয়েকে বিয়ে করে সুখী হোক।
মেঘা রেগে গিয়ে বললো,
—তুই কি আমার কথা ঠিক করে বুঝিসনি নাকি বুঝতে চাইছিস না,নীলাদ্রি দা এখনো শুধু তোকেই ভালোবাসে আর সেই কারণেই ওনাকে বিয়ে করার কথা বললে উনি এড়িয়ে যায়,কারণ অন্য মেয়েকে বিয়ে করলে উনি কখনো তোর জায়গাটা তাকে দিতে পারবেনা আর তাকে ভালোও বাসতে পারবেনা এতে ওই মেয়েটার জীবন নষ্ট হবে সেই কারণেই নীলাদ্রি দা বিয়ে করতে চায়না। এখন যখন আবারও সুযোগ এসেছে তবুও নীলাদ্রি দা তোকে নিজে থেকে কিচ্ছু বলেনি কারণ উনি তোর মতামতটাকে প্রাধান্য দিতে চায়।তুই কি চাস সেটার গুরুত্ব দিতে চায়।একমাত্র তুই রাজি হলেই এই সম্পর্ক জুড়বে নয়তো জুড়বে না ।এরকম মানুষ খুব কম হয় উনি তোর জন্য যা করেছে তা কেউ করে না ওনাকে এভাবে কষ্ট দিস না।
দিশানী শান্ত গলায় বললো,
—তোর কথা আমি বুঝতে পারছি কিন্তু আমার একটা জায়গায়তেই যে বার বার ভয় হচ্ছে।যদি নির্ঝরদের দেওয়া দোষ সত্যি হয়?
মেঘা শান্ত গলায় বললো,
—তুই যেটার জন্য ভয় পাচ্ছিস বললি সেটা শুধুমাত্র তোর একটা বাহানা ছাড়া কিছুই নয়। মানুষ যখন কোনো কিছু থেকে পালাতে চায় ঠিক তখনি বাহানা বানায়। তুই নিজেও জানিস ডাক্তার নিজেই বলেছে তোর দিক থেকে কোনো প্রকারের খুঁত নেই নাহলে তুই নির্ঝর দার বাড়িতে ওভাবে প্রতিবাদ করার সাহস পেতি না, তাই এই ভয়ের কোনো মানে নেই।তোর জীবনদশায় তুই যা যা দেখেছিস এটা তোর আসল ভয়, তোর জীবনে যা যা ঘটে গেছে এসবের কারণেই তুই আর কোনো বন্ধনে জড়াতে চাইছিস না। এটা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু নীলাদ্রির ভালোবাসাকেও তুই অস্বীকার করতে পারিস না, এভাবে ওনাকে কষ্ট দিস না। পুরো রাত আছে ভাবার জন্য এই বিষয়ে ভাব, সবাই যখন নিজের জীবনকে আবার নতুন করে শুরু করছে তাহলে তুই কেনো নিজের জীবনকে নতুন করে শুরু করবি না।
মেঘা এসব বলে নিচে চলে গেলো।
এইদিকে নির্ঝর আর এলিনার বিয়ে ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।
———————
দিশানী সারারাত ভেবেছে যে কি করবে অবশেষে ভোরের দিকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিশানী সকালে নিচে আসতেই মেঘা দিশানীকে বলে,
—চোখমুখের এই অবস্থা কেনো? রাতে ঘুমাসনি?
—কিভাবে ঘুমাবো তুই তো সারারাত ভাবতে বললি।
—কি ভাবলি?
—আগে কথা বলতে চাই নীলাদ্রির সাথে।
নীলাদ্রিকে নিজে থেকে বলতে হবে যে উনি কি চান।আমি ওনার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে চাই।
—চল আজকেই নীলাদ্রি দার বাড়িতে যাই, কথা বলে আসি।
—ওনাকে বাড়িতে পাওয়া যাবে?
—আজকে ছুটির দিন। চেম্বারে যেতে দেরি আছে। চল ব্রেকফাস্ট করেই যাই।
—ওনাকে ডেকে নিলে হয়না?
—এটা ভালো আইডিয়া।
মেঘা নীলাদ্রি কে ফোন দিয়ে বললো,
—তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে। তাড়াতাড়ি চলে এসো এখানে এসেই ব্রেকফাস্ট কোরো।
—কি ব্যাপারে কথা আছে?
—সেটা আসলেই বলবো, তাড়াতাড়ি এসো।
—আচ্ছা।
মেঘা ফোন রাখতেই দিশানী বললো,
—আমি কিন্তু সব কথা একটু ঘুরিয়ে বলবো, হাজার হোক একটা মেয়ে আমি,এভাবে নিজে থেকে কথাগুলো বলতে আমার তো লজ্জা লাগবেই।
—আচ্ছা ঘুরিয়েই নাহয় বলিস তবুও বলিস প্লিজ।
—হুম
———————-
মেঘা আর দিশানী টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে তখনি সৌম্য এসে চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
—নীলাদ্রি এখনো আসেনি?
মেঘা উত্তর দিলো,
—না, এখনো আসেনি। তবে এসে পড়বে কিছুক্ষনের মধ্যে।
সৌম্য দিশানীকে বললো,
—শোন দিশানী, আজকে কিন্তু তোর হাতেই সবকিছু আছে। বিয়েটা যেনো তাড়াতাড়ি খেতে পারি। ভালোকিছুর অপেক্ষায় আছি কিন্তু আমরা দুইজন।
সৌম্য ওইদিনের পর থেকে দিশানীকে তুই করেই ডাকে।
সৌম্যর কথা শুনে দিশানী বললো,
—দেখা যাক না কি হয়।
এর মধ্যেই নীলাদ্রি চলে এলো। এসেই বললো,
—কি বলার জন্য জরুরি তলব দেওয়া হলো?
মেঘা উত্তর দিলো,
—আগে ব্রেকফাস্ট করে নাও তারপর বলবো।
সবাই ব্রেকফাস্ট শেষ করে ড্রইংরুমে এলো।মেঘা বললো,
—দিশানী তোমাকে কিছু কথা বলবে।
নীলাদ্রি দিশানীর দিকে তাকিয়ে বললো,
—কি কথা বলবে?
দিশানী জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,
—আপনি আমার জন্য এতো কেনো করেন? আপনি বলেছিলেন এর উত্তর আপনি একদিন দেবেন আজ এই উত্তরটা জানা আমার দরকার, হয়তো আমি উত্তরটা জানি কিন্তু এটা আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।
চলবে
গল্প:রঙহীন জীবনের রঙ
পর্ব ২৩
লেখনীতে:স্বর্ণা সাহা (রাত)
দিশানী জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,
—আপনি আমার জন্য এতো কেনো করেন? আপনি বলেছিলেন এর উত্তর আপনি একদিন দেবেন আজ এই উত্তরটা জানা আমার দরকার, হয়তো আমি উত্তরটা জানি কিন্তু এটা আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।
—সত্যিই শুনতে চাও তুমি?
—হুম!শুনতে চাই কারণ আপনার এই উত্তরটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
নীলাদ্রি দিশানীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—তাহলে শোনো। ভালোবাসি তোমাকে। এখনো অনেক ভালোবাসি। তোমার বিয়ে হওয়ার পরে তোমাকে ভুলতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারিনি।ভীষণভাবে ভালোবাসি তোমাকে, আর বেসেই যাবো।
এই কথা শুনে মেঘা খুশিতে চিৎকার করতে নেবে তখনি সৌম্য মেঘার মুখ চেপে ধরে চুপ করতে বললো।
দিশানী চুপ করে আছে।নীলাদ্রি আবারও বললো,
—আশা করি তুমি তোমার উত্তরটা পেয়ে গেছো।
—বিয়ে করবেন না?
—কতবার এই কথার উত্তর দেবো বলোতো? আমি তো একবারই বলেছি আমি অন্য কাউকে আর কখনো ভালোবাসতে পারবোনা তাই অন্য কাউকে বিয়ে করে তার জীবন নষ্ট করার কোনো মানেই হয়না। এখন তো বুঝে গেছে কাকে ভালোবাসি আমি।
দিশানী মুচকি হেসে বললো,
—অন্য কাউকে তো বিয়ে করার কথা বলি নি আপনাকে,আপনার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করবেন?
নীলাদ্রি দিশানীর কথার মানে বুঝতে পারেনা। তাই দিশানীকে জিজ্ঞেস করে,
—মানে, ঠিক করে বলো?
—মানেটা খুব সহজ, বিয়ে করবেন আমায়?
নীলাদ্রি দিশানীর কথায় অবাক হয়ে গেলো। এদিকে সৌম্য সিটি বাজিয়ে উঠলো আর মেঘা হাততালি দিতে শুরু করলো। মেঘা দিশানীর কাছে গিয়ে দিশানীকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—ওরে দিশু রে কি দিলি রে?
সৌম্য নীলাদ্রির কাছে গিয়ে বললো,
—ভাই!এইবার কিন্তু আর না করতে পারবি না, আমার বোন তোকে নিজে থেকে বিয়ের কথা বলেছে এখন তুই কিন্তু না করতে পারবি না।
নীলাদ্রি দিশানীকে জিজ্ঞেস করলো ,
—তুমি নিজে থেকে আমাকে বিয়ের কথা বলছো?
দিশানী ধমক দিয়ে বললো,
—কেনো আপনি কানে কম শোনেন নাকি যে আমার কথা আপনার কানে পৌঁছায়নি।শুনুন আমি একটা মেয়ে হয়ে লজ্জার মাথা খেয়ে আপনাকে নিজে থেকে বিয়ের কথা বলেছি আপনার উত্তর যেনো হ্যাঁ হয় নাহলে কিন্তু আপনার খবর আছে।
সৌম্য আর মেঘা দিশানীর কথায় হেসে ফেললো। সৌম্য হাসতে হাসতেই বললো,
—তুই যেভাবে কথাটা বললি নীলাদ্রির আর না বলার কোনো ক্ষমতাই নেই।
দিশানী এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,
—এখন এসব হাসি-ঠাট্টা সাইডে রেখে আমি সিরিয়াসলি নীলাদ্রি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি আপনার উত্তরটা কি, হ্যাঁ নাকি না?
নীলাদ্রি মুচকি হেসে বললো,
—না করার সাধ্য আছে নাকি আমার। তুমি নিজে থেকে আমাকে বিয়ের কথা বলেছো এটা আমার জন্য অবিশ্বাস্য।
মেঘা নীলাদ্রিকে বললো,
—অবিশ্বাস্য কেনো নীলাদ্রি দা, তুমি যে বলেছিলে ভালোবাসায় ধৈর্য আর বিশ্বাস থাকলে সব হয় তাহলে অবিশ্বাস্য কেনো?
নীলাদ্রি উত্তর দিলো,
—তাও মনে তো ভয় থাকেই তাইনা?
দিশানী এবার বিরক্ত হয়ে বললো,
—উফ তোরা না যা-তা, আর নীলাদ্রি আপনি এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলবেন না হ্যাঁ কি না সেটা বলুন।আপনি যদি ভাবার জন্য সময় নিতে চান নিতে পারেন।
নীলাদ্রি উত্তর দিলো,
—হ্যাঁ ম্যাডাম আমি রাজী, এটা তো সোজা একটা জিনিস,এটার জন্য আমার আবার কোনো ভাবনার কি দরকার আছে। তোমরা বিয়ের ডেট ঠিক করে ফেলো। তারপর আবার বিয়ের কেনাকাটা করতে হবে তো আমাদের।
সৌম্য বললো,
—শুধু কি কেনাকাটা নাকি আরো কত কাজ বাকি আছে বলতো।
——————–
নীলাদ্রি আর দিশানী আলাদা কথা বলার জন্য বেলকনিতে এসেছে। নীলাদ্রি দিশানীকে জিজ্ঞেস করলো,
—তুমি বিয়ে করার জন্য রাজি হলে এই অসম্ভবটা সম্ভব হলো কি করে?
—সব ক্রেডিট মেঘার, মেঘার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।
—মেঘার জন্য কি করে?
মেঘা চা আনতে আনতে বললো,
—সরি নীলাদ্রি দা তোমাদের কথার মাঝে চলে এলাম।তুমি দিশানীকে তোমার মনের কথাগুলো জানাতে বারণ করেছিলে কিন্তু আমি দিশানীকে সব বলে দিয়েছি, তবে এর জন্য আমার কোনোরকমের দুঃখ লাগছেনা বরং আমি যে দিশানীকে সব বলে দিয়েছি এতে আমি খুব খুশি। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট, এরকম রঙহীন জীবন আমার ভালো লাগছিলো না। সবাই যেখানে নিজেদের জীবনকে গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত সেখানে তোমরা এভাবে থাকবে এটা আমার একদমই সহ্য হচ্ছিলো না। তাই আমি দিশানীকে সেদিনের সব কথা বলে দিয়েছি। আর দিশানীকে ভাবার জন্য সময় দিয়েছি।এখন শুধু তোমাদের বিয়ে হওয়ার অপেক্ষা।
দেখতে দেখতে আরো কয়েকটা দিন চলে গেলো। নীলাদ্রি আর দিশানীর বিয়ের ডেট ফাইনাল হয়ে গেছে।
————————-
নির্ঝর আর এলিনা ভালোমতোই সংসার করছে।নির্ঝরের পরিবারের সাথেও এলিনা মানিয়ে নিয়েছে।
সুজাতা নিরাকে বললো,
— নির্ঝর আর নতুন বৌমা কে ডেকে নিয়ে আয়, ওদের সাথে আমার কিছু কথা আছে।
—আচ্ছা ডেকে নিয়ে আসছি।
এলিনা আর নির্ঝর সুজাতার ঘরে আসতেই সুজাতা এলিনাকে বললো,
—দেখো বৌমা তুমি তো সবই জানো আমরা একটা নাতি-নাতনির জন্য কবে থেকে অপেক্ষা করে আছি, এখন সবই তোমার হাতে, আমাদের এই আশাটা রাখো।
এলিনা মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো।
————————
দিশানী, মেঘা, সৌম্য আর নীলাদ্রি ওদের বিয়ের জন্য কিছু কথাবার্তা বলছে তখনি নীলাদ্রি বলে উঠলো,
—আমাদের বিয়ে হবে তোমার দাদা-বৌদিকে কে বলবে না?
—ওদের বলে লাভ হবে না, ওরা আসবে না।
—কিন্তু বলা তো দরকার হাজার হোক উনি তোমার দাদা হন।
—আচ্ছা ফোন দিচ্ছি। কিন্তু আপনি কথা বলবেন আমি কথা বলতে পারবো না।
—আচ্ছা আমিই বলবো তবুও তুমি ফোন দাও।
দিশানী ওর দাদাকে ফোন দিলো। প্রথমবারে উনি ফোন ধরেনি, দ্বিতীয়বার ফোন দিতেই দিশানীর দাদা ফোন ধরে তারপর বলে,
—ফোন করেছিস কেনো?শোন তোকে কোনো হেল্প কিন্তু আমি করতে পারবো না।
দিশানী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—দরকারের সময়ই তোকে ফোন করে সাহায্য চাইলাম না আর এখন তোকে সাহায্যের জন্য ফোন করবো?আমাকে কি পাগল কুকুরে কামড়েছে নাকি। যাই হোক,শুনেছিস নিশ্চই সামনে আমার বিয়ে?
—না শোনার কি আছে? খবর কি আর থেমে থাকে নাকি এমনিতেই খবর পাওয়া যায়। এসব খবর হাওয়ায় ভাসে।
—খবর যখন পেয়েছিস তাহলে তো ভালোই। শোন তোর সাথে একজন কথা বলবে।
দিশানী নীলাদ্রির হাতে ফোন দিলো। নীলাদ্রি কুশল বিনিময় করে বললো,
—দাদা, সামনে তো আমার আর দিশানীর বিয়ে। দিশানী তো আপনার বোন হয় আপনি বিয়েতে না আসলে খুব খারাপ দেখাবে। আমরা দুজন চাই আপনি এই বিয়েতে আসুন।
দিশানীর দাদা উত্তর দিলো,
—না ভাই। আমার এই বিয়েতে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।বিয়ে ঠিক করার সময় তো আমাদেরকে লাগেনি তাহলে এখন লাগছে কেনো?ও নিজেই যখন বিয়ে ঠিক করেছে তখন একা একাই বিয়ে করুক। আমরা যাবো না।
—এটা কেমন দেখায় দাদা? আপনারা না আসলে আমাদের খারাপ লাগবে।আপনাদের আশীর্বাদ তো দরকার আমাদের।
দিশানী নীলাদ্রির কথা শুনে বুঝতে পারলো ওর দাদা বিয়েতে আসার জন্য না করে দিয়েছে আর ওর দাদা যেরকম মানুষ নিশ্চই আরো কিছু বলেছে।
দিশানী নীলাদ্রির হাত থেকে ফোন নিয়ে ওর দাদাকে বললো,
—শোন আসলে আসবি না আসলে নাই। আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করেছি।এখন তুই বড় ভাই হয়ে যদি নিজের দায়িত্ব ভুলে যাস তাহলে সেটা তোর ব্যাপার। না আসিস একটু আমাদের নতুন জীবনের জন্য আশীর্বাদ করে দিস তাহলেই হবে।রাখছি।
দিশানী ফোন কেটে দিলো।নীলাদ্রি দিশানীকে বললো,
—এভাবে না বললেও পারতে হাজার হোক উনি তোমার দাদা হয়।
—শুধু সম্পর্কের খাতিরে ও আমার বড় দাদা হয় তাছাড়া আর কিছু না। বড় দাদা হিসেবে ও আমার কোনো দায়িত্বই পালন করেনি। মা মারা যাওয়ার পরে তো একপ্রকার সম্পর্কই ছিন্ন করে দিয়েছে আমার সাথে।তাহলে ওর সাথে এভাবে কথা না বলে আর কিভাবে কথা বলবো আমি?
চলবে