চারুর সংসার,পর্ব_১৩,১৪(অন্তিম পর্ব)
Written by Nowshin Noor
পর্ব_১৩
.
🍂
.
আহান সন্দেহ করেছিলো রকিকে কিন্ত পরে সবকিছু ভুলে যায়।।।
(চারুর সাথে যার বিয়ে হয়েছে সে হচ্ছে আহান।)
বর্তমানে……..
চারু ডায়েরি টা হাতে নিয়ে বসে আছে। ভেবেই পাচ্ছে না কী করবে।কিছুক্ষন পর সে শবনমকে একটা ফোন দিলো—
চারুঃহ্যালো শবনম।
শবনমঃআপু,কী খবর।
চারুঃনা এইতো।আচ্ছা তোমরা ৩ ভাই-বোন তাই না??
শবনমঃহ্যা!
চারুঃআমার সব মনে পড়ে গেছে শবনম।এখন বলো আনাফের কী হয়েছিলো।আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না ক্যান্সার হয়েছে।আমি জানি এটা ষড়যন্ত্র।
শবনমঃতোমার সব মনে পড়ে গেছে?ওওয়াও! আমি ভাইয়াকে বলে আসি।
চারুঃনা না উনাকে বলার কোনো দরকার নেই।আমি তোমাকে যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও।
শবনমঃআচ্ছা।হ্যা ক্যান্সার হয়ে মারা যায় ভাইয়া দুই বছর আগে।
চারুঃকিন্তু আমার মনে হচ্ছে ক্যান্সার হয়নি!
শবনমঃকিভাবে সম্ভব?ডক্টর ই তো বলল…
চারুঃহস্পিটালের নাম বলো আমাকে…..আর ডক্টরের নাম বলো..
শবনমঃ*******।
চারুঃওকে আমি এখন রাখছি। পরে কথা হবে।
চারু শবনমের সাথে কথা বলে ফোন রেখে দেয়।
চারুঃআনাফকে খুন করা হয়েছে।আমি ১০০% সিওর।আমি ছাড়বো না একজনকেও যারা এই কাজ করেছে।(মনে মনে)
চারু আহান ফোন দেয়।আহান তখন।রুমে চারুর ছবিই দেখছিলো। চারুর ফোন পেয়ে ধরবে কী না ভাবতে ভাবতে কেটে যায় চারু আবার দেয়।এইবার আহান ধরে….
চারুঃহহহেলো!শুনছেন?
আহানঃহুউ বলো।ডিভোর্স পেপার পেয়েছো?
চারুঃহুম পেয়েছি।
আহানঃসাইন করেছো?(আগ্রহ নিয়ে)
চারুঃনা।
আহানঃকেনো?
চারুঃযে জন্য ফোন দিয়েছিলাম,আমাকে নিতে আসবেন?
আহানঃঅবাক হয়ে যায়….
আহানঃ২ দিন আগেই না আসতে চাইলা..এখন আবার চলে আসবে কেনো??
চারুঃকাজ আছে আমার…বেশি কথা বলেন আপনি।(ধমক দিয়ে)
আহানঃআচ্ছা বিকালে নিতে আসবো…রেডি থেকো।
চারুঃআচ্ছা।
চারু বিকেলে রেডি হয়ে আহানের অপেক্ষা করতে থাকে।আহান আসলে আহানের সাথে দু একটা কথা বলে দুজনে বের হয়ে যায় আহানদের বাসার উদ্দেশ্যে।
গাড়িতে…..
চারুঃআমাকে প্রথমেই সবকিছু জানালে কী হতো?
আহানঃকিসের কথা বলছো তুমি?
চারুঃআনফের কথা!আপনার অভিনয় সবকিছু?
আহানঃতুমার মনে পড়ে গেছে সবকিছু?(অবাক হয়ে)
চারুঃহ্যা….
আহানঃ…….
আর বেশি কিছু বলে না দুজন।আহানও কিছু জিজ্ঞেস করতে যায় না।দুজনে বাসায় পৌছালে, শবনম এসে চারুকে জড়িয়ে ধরে….মা অনেক খুশি হন চারু আসায়…এবং চারুর সবকিছু মনে পড়ায়।চারু রুমে চলে যায়।গিয়ে দেখে আহান শুয়ে শুয়ে মোবাইল চালাচ্ছে।সে আস্তে করে ডিভোর্স পেপার টা টেবিলে রেখে দেয়।এরপর ফ্রেশ হয়ে আসে….
চারুঃআপনার সাথে কিছু কথা ছিলো…
আহানঃহুমম বলো….
চারুঃআনফের কী সত্যি ই ক্যান্সার হয়েছিলো?
আহানঃহ্যা!ডক্টর ই তো বলল…
চারুঃকিন্তু আমি জানি এটা মিথ্যা কথা…কেউ ষড়যন্ত্র করেছে মনে হচ্ছে আমার….
আহানঃবলো কী…(অবাক হয়ে)
চারুঃহুমম….আমি ওই হসপিটালে যাবো..এবং ডক্টরের সাথে কথা বলবো….
আহানঃআমিও যাবো তুমার সাথে…তবে কেউ যদি এমন করে থাকে তাহলে তো সত্যি টা তো বলবে না….
চারুঃদেখা যাবে…..
বিকালে দুজন হস্পিটালে যায় যেখানে আনাফের রোগ ধরা পড়েছিলো….যে ডক্টর ওর ট্রিটমেন্ট করেছিলো সেই ডক্টর কে খুজতে থাকে ওরা……খোজ নিজে দেখে এখানে নেই উনি শিফট হয়েছেন…….উনার বাড়ির ঠিকানা নিয়ে ওরা সেখানে চলে যায়……
বাড়িতে ঢুকে নক করে…….উনি দরজা খুল্লে ওদেরকে বসতে বলেন…..এরপর ওরা পরিচয় দেয়…..উনি অভিনয় করে বলেন……
____হ্যা ছেলেটা মারা গেলো অনেক কস্ট পেয়েছি আমি…ক্যান্সার বড়ই মারাত্মক রোগ….সবাইকে মেরে ফেলে….এই রোগ যেনো আমার শত্রুর ও না হয়….
আহানের মাথা গরম হয়ে যায় এমন কথা শুনে…..সে উঠে গিয়ে লোকটির শার্টের কলার ধরে বলে……
____খুব অভিনয় হচ্ছে না?আমার ভাইকে খুন করেছেও তোমরা….সব সত্য বলো….আর কে কে জড়িত ছিলো এসবের সাথে….সব বলো….নাহলে পুলিশের কাছে দিয়ে দিবো….
____শান্ত হোন….. কী বলছেন এসব….খুন হবেন কেনো উনি?উনার তো ক্যান্সার হয়েছিলো…
____মিথ্যা কথা….সব সত্যি বলে দে এক্ষুনি…. নাহলে ভালো হবেনা বলে দিলাম…..
____দেখুন আপনারা ভুল বুঝছেন….কোথাও একটা ভুল হচ্ছে আপিনাদের…..
আহান রেগে ডক্টরের নাকে এক ঘুষি মারে…..এতেই নাক থেকে গলগলিয়ে রক্ত বের হতে থাকে….. তবুও কিছুই স্বিকার করছে না….আহান পেটে একটা ঘুষি দেয়…ডক্টর টি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে……
একটু মার খেয়েই নাজেহাল অবস্থা উনার…এরপর উনি কোকাতে কোকাতে বলেন…..
___আমি সব বলছি……সব বলছি….
চারুঃএইতো লাইনে এসেছো….তাড়াতাড়ি বলো….(আগ্রহ নিয়ে)
উনি সব কিছু বলতে শুরু করেন…….
চলবে……
চারুর সংসার
Wirtten by Nowshin Noor
পর্ব_১৪(অন্তিম পর্ব)
.
.
.
___আমি সব বলছি……সব বলছি….
চারুঃএইতো লাইনে এসেছো….তাড়াতাড়ি বলো….(আগ্রহ নিয়ে)
উনি সব কিছু বলতে শুরু করেন…….কিভাবে ওরা মেরেছিলো সব বলল।রকির কথাও বলল।সব শুনে রাগে আহানের চোখ লাল হয়ে যায়।
আহানঃঅপরাধ যখন করেছো শাস্তি তো পেতেই হবে।তবে ওই রকিকে আমি নিজ হাতে মারবো।(রেগে)
ডক্টরঃভুল হয়ে গেছে আমার।ক্ষমা করে দাও
আহানঃএকজন মানুষকে খুন করেছো আর বলছো ক্ষমা করে দিতে??????
ডক্টরঃ(নিচের দিকে তাকিয়ে আছে)
আহান পুলিশকে ফোন দিয়ে সবকিছু জানায়।পুলিশ ডক্টর কে ৪ বছরের সাজা দেয়।আর পুলিশ রকিকে খুজতে থাকে।।আহানও চারিদিকে মানুষ লাগায় রকিকে খুজতে।
এরপর চারু ও আহান বাসায় চলে যায়,,মা ও শবনমকে সবকিছু বলে।এসব শুনে দুজনেই কান্না করে দেয়।আস্তে আস্তে দুজনেই শান্ত হোন।
অন্যদিকে চারু ও আহান রুমে বসে আছে…..কারও মুখেই কোনো কথা নেই…..
আহানঃচারু কী সিদ্ধান্ত নিলে?
চারুঃকোন ব্যাপারে?
আহানঃডিভোর্সের ব্যাপারে🙂।
চারুঃসাইন কী করতেই হবে?
এই বলে চারু চলে যায়।আহান কথাটির কিছুই বোঝে না।
কিছুদিন পর রকিকে খুজে পায় পুলিশ।আহান নিজে ওকে মারতে চায়,কিন্তু পুলিশ তা দেয় না।পুলিশ বলে শাস্তি দিবে ওরা তাই আহানও আর কিছু বলেনা।রকির শাস্তি ৫ বছর কারাদণ্ড।আহান ভেবেছিলো নিজ হাতে ওকে মারবে কিন্তু পুলিশদের জন্য তা পারেনি।
এভাবেই কয়েকদিন চলে যায়, দুজন বেশি কথা বলে না।আলাদা দূরে দূরে থাকে
একদিন আহানের মা চারুকে ও আহানকে ডেকে বলেন…
মাঃতোদের বিয়ে তো ভালো কিরে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেওয়া হয়নি। তাই আমি ভাবছি কী সবাইকে ইনভাইট করে তোদের বিয়েটা আবার দিবো!কী বলিস?
এই কথা শুনতেই চারু আহান দুজনের দিকে তাকায়।এরপর আহান বলে…
আহানঃমা তুমি যা ভালো বুঝ তা করো!
মাঃআচ্ছা😚।
।
।
।
চারু ও আহান দুজনের রুমে চলে যায়।রুমে গিয়ে….
চারুঃডিভোর্স পেপারের কী হবে?
আহানঃআবার কী এক হওয়া যায় না চারুউউ?(চারুর হাত ধরে)
চারুঃহুমম!!!
আহানঃসত্যি!!
হঠাৎ চারু আহানকে জড়িয়ে ধরে বলে ভালোবাসি আপনাকে আহান💜।আহানও বলল আমিও অনেক অনেক ভালোবাসি তুমাকে চারু।
এরপর চারু নিজেকে আহানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো…
আহানঃকী হলো পালাচ্ছো কেনো?
চারুঃপালালাম কই??যা হবার সব বিয়েরদিন হবে অকে😏?
আহানঃআচ্ছা দেখা যাবে!(চোখ টিপ দিয়ে)
চারু দৌড়ে গিয়ে ডিভোর্স পেপারটি নিয়ে আসে…এনে আহানের সামনে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে।আহান হেসে দেয় চারুর কান্ডে!সে গিয়ে চারুর কাধে মুখ গুজে দিয়ে বলে….
আহানঃভালো যখন বাসতেই তাহলে ডিভোর্স কেনো চেয়েছিলে চারুপাখি?
চারুঃআমি চাইলাম আর আপনি দিয়ে দিলেন😒
আহানঃআমিতো রাগে -অভিমানে দিয়েছি😒।
বলেই চারুকে নিজের সাথে চেপে ধরে…নিজের ঠোঁট চারুর ঠোঁটে র দিকে আগাতে থাকে…চারু আহানের মুখ আলতো হাতে ধরে বলে…
___উহু!বলেছিলাম না বাসর রাতে।
___😒😒😒বিয়ে হয়ে গেছে তো
___তবুও!
___হুহ😒😏
আজ চারু ও আহানের বিয়ে।চারিদিকে শুধু হইচই।সবাই মিলে নাচ গান করছে।হই হুল্লোড় চলছেই।সব আত্মীয় স্বজন এসেছেন।অনেক বড় করে আয়োজন করা হয়েছে।চারু আর আহান দুজনেই অনেক খুশি।হ্যা চারু আনাফকে ভুলতে পেরেছে আনাফ ছিলো ওর অতীত।আর আহান এখন ওর বর্তমান তাই ও এখন আহানকে নিয়েই ভাববে।
চারুকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।বউ সেজে স্টেজে বসে আছে।আর আহান এক দৃস্টিতে চারুর দিকে তাকিয়ে আছে।অবশেষে তাদের বিয়ে সম্পুর্ন হলো💜।
রাতে……..
আহানের রুমে বউ সাজে কয়েকজন চারুকে রেখে গেছে।চারু ঘুরে ঘুরে দেখছে রুমটি। খাটে লাভ শেপ আকা হয়েছে গোলাপফুল দিয়ে আর বিছানার চারিদিকে বিভিন্ন রকমের ফুল দিয়ে সাজানো।
হঠাৎ দরজা খুলার শব্দ শুনে চারু সামনের দিকে তাকায় দেখে বর বেশে আহান রুমে ঢুকছে। চারু গিয়ে আহানের পা ধরে সালাম করে।আহান ওকে বুকে তুলে নেয়।ওর কপালে চুমু খায়।এরপর ওকে কোলে নিয়ে বেডের দিকে এগিয়ে যায়,,ভালোবাসার সমুদ্রে দুজন ডুব দেয়💜।
আহান তার ভালোবাসায় চারুকে পরিপুর্ন করবে আজ।
৫ বছর পর…..
আয়ানঃআম্মু লুপ আমাকে মেরেছে অনেক জোলে(কেদে কেদে)
চারুঃরুউউউউউউপ এদিকে আসো।
রুপঃহ্যা আন্তি বলো….
চারুঃতুমি নাকি আয়ান কে মারছো?
রুপঃনা ও আমাকে প্রথমে মেরেছে এরপর আমি ওকে মারছি😒(মুখ ফুলিয়ে)
আয়ানঃনা ও আমাকে আগে মারছে….
দূর থেকে শবনম আর আহান এসব দেখছে আর হাসছে।।।শবনমের বিয়ে হয় আবিরের সাথে।রুপ হচ্ছে আবির ও শবনমের মেয়ে।আর আয়ান হচ্ছে আহান ও চারুর ছেলে।
ররুপ ও আয়ান সারক্ষন ঝগড়া-মারামারি করতেই থাকে।সাপে-নেউলে সম্পর্ক দুজনের!
আয়ান আহানের কার্বন কপি একদম বাপের মতো আচার আচরন।বাপ-ছেলে মিলে তো মাকে পচায়🤣।
হুম চারু এখন অনেক সুখী।স্বামী সন্তান কে নিয়ে অনেক ভালো আছে।নিজের অতীত ভুলতে পেরেছে💜।
💛সমাপ্ত💛