হৃদপিন্ড,পর্ব-৩৯,৪০

হৃদপিন্ড,পর্ব-৩৯,৪০
জান্নাতুল নাঈমা

এতোদিন লোক মুখে যা শুনে এসেছে আর চোখের সামনে যা দেখছে এবং কিছুক্ষন আগের ঘটনা মনে করেও ইমন চৌধুরী কে এমনটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে ডক্টর এবং নার্সের।
তাঁর মানে কি এটাই ইমন চৌধুরীর মতো স্ট্রং পার্সোনালিটির মানুষ ও ভীষণ ভাবে দূর্বল??
আর এই দূর্বলতার শেকড় হচ্ছে গভীর ভালোবাসা??
নিজ স্ত্রী কে কতোটা ভালোবাসলে তাঁর প্রতি কতোটা আবেগ,ভালোবাসা দূর্বলতা মিশে থাকলে তাঁর কষ্টে এভাবে নিজের চোখের জল গড়াতে পারে??
এমন মূহুর্তেও ডক্টরের মুখে হাসি ফুটে এলো।
নার্সকে ইশারা করতেই সে বেরিয়ে গেলো।
ডক্টর এসে বললেন,,,

— মি. চৌধুরী ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
ওনি ভয় থেকে ছটফট করছেন আপনি ওনাকে ভরসা দিন শান্ত করার চেষ্টা করুন।
ভীষণ ভয় পেয়েছে আর সেটাই আপনাকে বোঝাতে চাইছে হয়তো।
ডক্টরও বেরিয়ে গেলেন কেবিন থেকে।

ইমন মুসকানের হাতটা নিজের বুকের বা পাশে শক্ত করে চেপে ধরে খানিকটা ঝুঁকে চোখ বুজলো।
ধরা গলায় বললো,,,

— আমার এখানে অবস্থান করছো তুমি।
তোমার এই কষ্ট এই ছটফটের জন্য আমার এখানে তীব্র ব্যথা অনুভব হচ্ছে। কেনো এমন করছো মুসকান,,, আমি আছিতো এই তো আমি তোমার পাশে তোমায় স্পর্শ করে আছি কোন ভয় নেই।
কেউ তোমায় আর ছুঁতেও পারবে না কেউ না।
শান্ত হও তুমি।

মুসকানের চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে,
বার বার ওঠতে চাইছে এই ছটফট দেখে ইমনের বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো। কি করবে বুঝে ওঠতে পারছেনা।
মাথা কাজ করছে না তাঁর শুধু একটা কথা ভেবে চলেছে মুসকানকে শান্ত করতে হবে।
দুহাতে মুসকান কে জাগিয়ে বুকে জরিয়ে ধরতেই মুসকান ফুঁপাতে শুরু করলো যার ফলে অক্সিজেন মাস্ক পড়ানো থাকলেও তাঁর শ্বাস নিতে কষ্ট হতে লাগলো।
ইমন নিজের বুকে জরিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করতে শুরু করলো। আর যখন মুসকানের কানে পৌঁছালো তাঁর এমন আচরনের জন্য ইমনের বুকে পেইন হচ্ছে তখন মুসকান নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করতে লাগলো।
এভাবে অনেকটা সময় পর ইমনের বুকেই ঘুমিয়ে পড়লো মুসকান।
বুকে এতো ব্যাথা ওঠেছে যে বসে থাকাও দায় হয়ে পড়েছে তবুও মুসকানের জন্য সেই ব্যাথাকে তোয়াক্কা করলো না ইমন।

বুকে গরম, ভারী শ্বাস পড়ছে ক্রমাগত।
বুঝতে পারলো মুসকান ঘুমিয়ে পড়েছে তাই আলতো ভাবে ধরে সুয়িয়ে দিলো।
মুখের দিকে অনেকটা সময় চেয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। দুচোখের পাতায় গভীর চুম্বন দিয়ে কপালেও চুমু খেলো।
নিজের চোখের পানি ডানহাতের পিঠ দিয়ে মুছে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।
অনেকদিন পর আবারো বুকে ব্যাথা হচ্ছে ভীষণ।
খুব বেশী কষ্ট,ব্যাথা অনুভব হলেই বুকটা ভারী হয়ে যায় আর এমন ব্যাথা শুরু হয়। অখিল বলেছিলো এমনটা হতে থাকলে হার্ট ব্লক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯০%।তাই দ্রুত গিয়ে অখিলের সাজেস্ট করা ওষুধ কিনে খেয়ে নিলো।

“এই পৃথিবীতে মুসকান ছাড়া ইমনকে বোঝার মতো আপন করে নেওয়ার মতো আর কেউ নেই।
মায়ের ভালোবাসা কি হয় ইমন জানে না।
বাবার ভালোবাসা কতোটা পেয়েছে হিসেব করে বের করা যেতে পারে, কিন্তু এমন ভালোবাসার পরশ সে পেয়েছে যেই ভালোবাসা কে কোন হিসেব নিকেশের পর্যায়ে ফেলা যায় না। যে ভালোবাসা তাঁর অর্ধাঙ্গিনী, সারাজীবনের সাথি তাঁকে দিয়েছে।
শুধু ভালোবাসা নয় যে কিনা তাঁর প্রতি সব দায়িত্ব, কর্তব্য,যত্ন,ভালোবাসা, সম্মান কোন কিছুর ত্রুটি রাখেনি।
” কেউ যখন কাউকে এক বুক ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে বা কেউ যখন কাউকে এক বুক ভালোবাসা দেয় তখন তাঁর শূন্যতা বা তাঁর যন্ত্রণায় তাঁর সঙ্গী কি ঠিক থাকতে পারে??
পারে না ইমনও পারছে না যাকে নিজের হৃদপিন্ডে স্থান দিয়েছে তাঁর আঘাতে তাঁর হৃদপিন্ডে ব্যাথা অনুভব হওয়াটা তো স্বাভাবিকই”
,
তিনদিন পর একরামুল চৌধুরী সহ কয়েকজন পুলিশ অফিসার গিয়ে ইভানকে মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করিয়ে তাঁর ওপর কড়া নজর রেখে সব ব্যাবস্থা করে এলো। মানসিক ডক্টর দেখানোর পর মেডিকেল সার্টিফিকেটে এটাই লেখা যে ইভানের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।
তাঁর ব্রেইন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
ধীরে ধীরে তাঁর অবস্থার অবনতিই ঘটবে এবং তাঁর স্মৃতি থেকে সবটা মুছে যাবে এমনকি নিজের মা -বাবা,ভাই বোন,পরিবার, আত্মীয়-স্বজন কাউকে মনে রাখতে পারবেনা। প্রোপার ভারসাম্যহীন যাকে বলে আর এর জন্য শুধু মানসিক আঘাতই দায়ী নয় দীর্ঘ কাল নিজের মাথায় নিজেই আঘাত করার ফল এটা।

পাপীষ্ঠরা না ইহকালে শান্তি পায় আর না পরকালে।
ইভানের করা জঘন্যতম অপরাধ টা হয়তো মহান আল্লাহ তায়ালার সহ্যের বাহিরে ছিলো।
তাই তো তাঁর জীবনটা এতটা বিপর্যয়ে চলে গেলো।
সারাজীবন মানুষ কে অসহায় করে দেওয়া, অসহায় মানুষ দের অত্যাচার করে আসা ছেলেটা আজ নিজেই বড় অসহায়। মা,বাবা পরিবার সহ সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাঁর থেকে।
তাঁর জায়গা কিনা আজ পাগলাগারদে হলো।
কোথায় গেলো এতো বড়াই,এতো অহংকার??
সব যে এক নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেলো।
এক উপরওয়ালার ইশারাতেই।
ইভানকে দেখে ইভানের নির্মম পরিনতি দেখে সকলের বোঝা উচিত পাপ বাপকেউ ছাড়েনা।
পাপের কোন ক্ষমা হয় না।
অধিকাংশ মানুষই তাঁদের কর্মফল দুনিয়াতে ভোগ করে যায়। ইভানেরও তাঁর কর্মফল ভোগ করার সময় এসে গেছে।
তাঁর জীবনটা হয়ে গেছে কুকুর, বিড়ালের ন্যায়।
ভালো, স্বাভাবিক মানুষ দের সাথে তাঁর জায়গা হবে না। যেখানেই যাবে সবাই ধূরধূর করবে।
একেই বলে প্রকৃতির প্রতিশোধ।
,
সাতদিনের মাথায় মুসকান কে বাড়ি নিয়ে আসা হলো সকলে মিলে বেশ যত্ন নিচ্ছে মুসকানের।
সবাই সবসময় তাকে হাসানোর চেষ্টাতেই থাকে।
ইমন কিছু সময়ের জন্য অফিস গিয়েছে।
ইয়ানা, ইয়াশফা,সহ সবাই মুসকানের রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। অভ্র মুসকানের কাছে এসে বিরবির করে বললো,,,

— এই যে ভাবিজান এবার নিজের এই দেবরের কথা একটু ভাবুন। এবার তো আপনার বান্ধবী কে ঘরে নিয়ে আসার পালা। নয়তো পাখি অন্যঘরে বাসা বাঁধবে।দাদাভাইকে একটু ম্যানেজ করো না,,,

মুসকান মৃদু হেসে ফেললো আর বললো,,,
— আগেতো তিন তিনটা বোনের ব্যবস্থা করো তাঁরপর নিজের টা ভাবো এতো সেলফিশ হলে কেমন হবে হুম???

নিলয় বললো,,,

— ইয়েস সিস্টার একদম রাইট কথা।
হোহো করে হেসে ওঠলো নিলয়।

নিপ্রা বললো,,,
— এখানে কি চলছে মুসু,,,

মুসকান মুখ চিপে হাসলো।
নিলয় নিপ্রার মাথায় এক চাপড় দিয়ে বললো,,,
— তোর বিয়ের তোরজোর চলছে।

নিপ্রা হা হয়ে বড় বড় চোখ করে তাকালো।

তখনি ইমন রুমে ঢুকে বললো,,,
— কি ব্যাপার সবাই কি করছো।
ইয়ানা, ইয়াশফা চট করে বেরিয়ে গেলো।
নিপ্রা নালিশ করতে যেতেই নিলয় ভো দৌড়।
অভ্র মুসকানকে ইশারা করে তন্নির ব্যাপারটা শেয়ার করতে বললো ইমনের সাথে।
কিন্তু মুসকান তো অনেক আগেই ইমনকে এ বিষয়ে বলে দিয়েছে তা ভেবে মনে মনে খুব মজা পেলো মুসকান।
,
ইমন পোশাক পাল্টে সব রাখতে যাবে অমনি মুসকান গিয়ে সব নিয়ে বললো,,,

— আমায় দিন আমি গুছিয়ে রাখি।

— শরীর কেমন লাগছে,,,
মুসকান কাপড় রাখতে রাখতে বললো,,,

— ভালো।
মুসকান কাবার্ড থেকে পিছন ঘুরতেই ইমন একহাতে কোমড় জরিয়ে অনেকটা কাছে নিয়ে নিলো মুসকান কে।
ইমনের ঘামযুক্ত উন্মুক্ত বুকটায় চোখ যেতেই অদ্ভুত শিহরন বয়ে গেলো মুসকানের শরীরে।
ইমন মুসকানের গালদুটো আলতো হাতে চেপে ধরে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো।
আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো মুসকান।
তা দেখে ইমন আরো গভীর ভাবে জরিয়ে নিয়ে ঘাড়ে ঠোঁট ছোঁয়ালো। কেঁপে ওঠলো মুসকান ইমন তখনি পাজাকোল করে নিয়ে বাথরুম চলে গেলো।

শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে তয়ালে দিয়ে চুল মুছছে মুসকান। ইমন ফোন ঘাটাঘাটি করছে মাঝে মাঝে আড় চোখে মুসকানকে দেখছে।
বেশ লক্ষ করলো তাঁর অল্পবয়সি মেদহীন পেটের স্লিম বডিওয়ালা বউটা আর আগের মতো নেই৷
বেশ কিছু চেঞ্জিং এসেছে। আঠারো পেরিয়ে ঊনিশে পা দিয়েছে।
এ বয়সে বিবাহিত মেয়েদের শারিরিক গঠনের বেশ ভিন্নতা আসে এটাই স্বাভাবিক মুসকানেরও তাই এসেছে। যা ইমনকে তীব্র মাএায় আকর্ষন করছে।
মুসকান বাসন্তি কালারের মাঝে লাল সূতি সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে চুলগুলো বেশ লম্বা,,, ভেজা থাকায় পানি চুইয়িয়ে পিঠ বেয়ে কোমড় অবদি পৌঁছে গেছে। জামাটা পিঠে লেপ্টে আছে,,,
একটা মেয়ের শারীরিক গঠন এতো সুন্দর হয় জানা ছিলো না ইমনের। দিন দিন যেনো তাঁর ভিতর লুকায়িত সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
যতোদিন যাচ্ছে ততোই সেই সৌন্দর্যে নতুন ভাবে ডুব দিতে ইচ্ছে করছে। মৃদু হাসলো ইমন,,,
যেভাবে মুসকানকে নিয়ে ভাবছে সে এগুলো যদি মুখে প্রকাশ করে তাহলে মুসকান লজ্জাবতী গাছের মতো জড়োসড়ো হয়ে মিইয়ে পড়বে খুব।
কেমন হয় তাঁকে লজ্জার সাগরে ডুবিয়ে মারলে বেশ দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় চাপলো।

মুসকন তাঁর সামনে এসে বললো,,,

— চলুন খেতে দিবো তিনটা বাজে প্রায়।

ইমন ঘোর লাগা চোখে চেয়ে আছে।
গোসল শেষে ভেজা চুলে মেয়েদের চেহারায় যে স্নিগ্ধ এক সৌন্দর্য এসে ভর করে এই সৌন্দর্য কি সব বিবাহিত পুরুষের চোখে পড়েছে???
তাঁরা কি তাদের বউ এর এমন রূপ দেখে আমারই মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে???
নাহ সবাই কি আমার মতো করে তাঁদের বউয়ের সৌন্দর্যে মোহিত হয় নাকি,,, বাঁকা হাসলো ইমন।

মুসকান রুম থেকে বেরিয়ে গেছে বুঝতে পেরে বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। মুখে একটা গম্ভীর্য ভাব এনে সেও রুম থেকে বেরিয়ে গেলো নিচে।
,
রাত প্রায় তিনটা বাজে ইমনের রাগ হচ্ছে ভীষণ।
এতোগুলো দিন ধরে মুসকানকে সে আদর করতে পারেনি। আজ একটু কাছে গেছে অথচ সে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। এমন এমন কঠিন মূহুর্তে এসে সে এমন কাজ করে যে ভীষণ রাগ হয়।
হয় জ্ঞান হারাবে নয় তো ঘুম নয়তো আবল তাবল কথার জালে ফাঁসাতে চাইবে। নাহ একে আজ ছাড়া যবেনা তিন ঘন্টা ঘুমিয়েছো ব্যাস অনেক হয়েছে বাকি তিনঘন্টা আমার চাই ভেবেই মুসকানের দিকে ফিরতেই চমকে গেলো ইমন।
বিছানার চাদর খামচে চোখ মুখ খিঁচে ঘুমের ঘোরে বিরবির করছে মুসকান।
ইমনের নিজের ওপরই মেজাজ বিগরে গেলো।
বুকে নিয়ে ঘুমানো উচিত ছিলো তা না করে পাশফিরে ভাবনার জগতে চলে গেলো সে।
বড্ড রাগ হলো নিজের ওপর।
খানিকটা কাছে গিয়ে একদম কাছে টেনে নিয়ে বুকে জরিয়ে ধরতেই মুসকান চোখ খুলে ভয়ে দুহাতে ইমনকে জরিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।

— আমাকে মেরে ফেলবে,,, ও আমাকে মেরে ফেলবে। বাঁচান আমায় বাঁচান,,,

ইমনের আর বুঝতে বাকি রইলো না মুসকান দুঃস্বপ্ন দেখছিলো।

— মুসকান রিল্যাক্স কেউ মারবে না তোমায়।
এই দেখো আমি,,,আমি আছিতো কিছু হবেনা।
তুমি একটা খারাপ স্বপ্ন দেখছিলে দ্যাটস ইট আর কিছুনা।

মুসকান তবুও শান্ত হলো না। ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। ইভানের ভয়ংকর রূপটা বার বার ভেসে আসছে তাঁর সামনে। কোন ভাবেই সে শান্ত হতে পারলো না।
ইমন রেগে গেলো প্রচন্ড মুসকান কে ছেড়ে দিয়ে চিৎকার করে ধমকে ওঠলো।
— বলছি তো কিছু হয়নি কেউ নেই এখানে কেনো ভয় পাচ্ছো।

রেগে বিছানা ছেড়ে ওঠে পড়লো ইমন।
মুসকান চোখ মুখ খিঁচতে শুরু করলো।
বিছানার চাদর আঁকড়ে ধরে সমানে কাঁপতে লাগলো।
ইমন রাগে ফুঁসতে শুরু করেছে। কোন ভাবেই সে মুসকানের ভয় দূর করতে পারছে না রাগ হচ্ছে তাঁর ভীষণ রাগ হচ্ছে। রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাবে ভাবতেই মুসকানের দিকে চেয়ে তাঁর বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠলো।
নিজের মাথার চুল টেনে ধরলো।

— ওহ গড আমি কেনো রাগটা কন্ট্রোল করতে পারিনা। কার ওপর রাগ করছি এ তো নিজের মধ্যেই নেই এখন।

এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো মুসকানের দিকে।দুহাতে টেনে একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
মুসকানের মাথাটা বুকে শক্ত করে চেপে ধরে রইলো অনেকটা সময়।
আগের থেকে হালকা থেমেছে মুসকান।
ইমন মুসকানের মাথায় চুমু খেয়ে কাঁধে ধরে ওঠিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু খেলো।

— কিসের ভয় আমি আছিতো। তোমার হাজব্যান্ড তোমার পাশে থাকতে কিসের ভয় তোমার??
কিছু হবে না। আমি আছিতো,,,
অনেটা সময় বুঝিয়ে শুনিয়ে আদর ভালোবাসা দিয়ে শান্ত করলো।
আজান দিতেই দুজন মিলে ফজরের নামাজটা আদায় করে নিলো।
ইমন ভাবলো অখিলকে ফোন করা উচিত।
এভাবে চলতে পারেনা মুসকানের ভয়টা দূর করতে হবে যে কোন মূল্যেই।
বেলকুনিতে গিয়ে অখিলকে ফোন করলো ইমন।
অখিল কে ফোন করে সবটা জানাতেই অখিল বললো,,,

— ওর মধ্যে যে ভয় টা রয়েছে এটা কাটাতে হবে।
মারাত্মক ভাবে ভয় পেয়ে গেছে।
আর এভাবে একঘেয়েমে থাকলে এটা ঠিক হবে না।
শোন তুই তো হানিমুনেও যাসনি যা এবার বউ নিয়ে হানিমুন করে আয়। বাইরের আলো বাতাসও পাবে তোর বউয়ের মনের ভীতর জমানো কষ্ট ভয় সবটাই কেটে যাবে।
অল্প বয়স ওর এই সময় বউয়ের সাথে রোমান্স কর বেশী বেশী দেখবি রেমান্সের নেশায় ভয় পালিয়ে সাত সাগর তেরো নদী পার করে ফেলবে হাহাহা।

ইমন গম্ভীর গলায় বললো,,,

— ফালতু বকবক বাদ দিবি??

— আরে ইয়ার রাগিস কেনো,,,
কিছু রোমান্টিক মূহুর্ত,,,রোমান্টিক পরিবেশ উপহার দে বেশ কিছুদিন বাইরে কাটিয়ে আয় সব ঠিক হয়ে যাবে।
আর হানিমুন করার জন্য এদেশে পারফেক্ট জায়গা হচ্ছে সমুদ্র বন্দর। কক্সবাজারে ঘুরে আয় গিয়ে দুজন মিলে। সকাল বিকাল দুজন সমুদ্র তীরে হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াবি আহ কি রোমান্টিক মূহুর্ত।
তোর বুকে মাথা রেখে ভাবী সমুদ্র বিলাস করবে বলেই হোহো করে হেসে ওঠলো।

— তোর সাথে ভোর বেলা ফান করতে বসিনি আমি সিরিয়াস কথা বলছি। আর মুসকান বিমানে ভয় পায় আগেই বলেছে তাই এই মূহুর্তে ওটা সম্ভব নয়।

— আরে ইয়ার চাপ নিচ্ছিস কেনো ডক্টর বন্ধু থাকতে এতো চাপ কিসের। আকাশ পথে ভ্রমন না করলে কি কক্সবাজার যাওয়া যাবে না নাকি??
এতো বড় বিজন্যাসম্যান অথচ প্রেমের ব্যাপারে বড্ড কাঁচা।
শোন ট্রেন জার্নি করবি পুরো একটা কেবিন বুক করে নিবি দেখবি মুসকান ও আই মিন ভাবীও খুব ইনজয় করবে বিষয় টা।
প্রেমের জন্য ট্রেন জার্নির মতো রোমাঞ্চকর জার্নি আর দুটো হয় নাকি।
আর তোরা ওটাকে ট্রেন জার্নি না ভেবে লাভ জার্নি করে ফেলবি।

ইমন হালকা কেশে ওঠলো।
বিয়ের এতোদিন পর ডাক্তার বন্ধু তাকে প্রেম শেখাচ্ছে, রোমান্স শেখাচ্ছে ভাবা যায়।
ঘরোয়া প্রেমে তাঁর থেকে বড় ওস্তাদ আর কেউ আছে নাকি,,,তবে এবার বউ কে বাইরের জগতে নেয়াটা সত্যি প্রয়োজন। এভাবে সারাক্ষন রুমে মুখ গুজে যতো কুচিন্তা মাথায় চাপাবে আর তাঁর ফিলিংসে ব্যাঘাত ঘটাবে। গলা খাকারি দিয়ে বললো,,,

— হুম ঠিক বলেছিস। থ্যাংকস রাখছি আমি এখন।
,
সবাই ব্রেকফার্স্ট করার সময়ই সকলের সামনে ইমন জানিয়ে দিলো তাঁরা সামনে সপ্তাহে কক্সবাজার যাচ্ছে। দাদী শুনে মিটিমিটি হাসতে লাগলো।
ভাই-বোনরা সবাই মুখ চিপে হাসছে,,,
মুসকান ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে ইমনের দিকে।
সে তো তাঁকে কিছুই বললো না। কক্সবাজার সে তো অনেক দূর অতদূরে আমাকে একা নিয়ে যাচ্ছে কেনো?অফিসের কাজে? কিন্তু আমি তো বিমানে প্রচন্ড ভয় পাই বুকটা ধকধক করতে লাগলো মুসকানের।
নদী বললো তাঁ কটার ফ্লাইটে যাবি??

— ট্রেনে যাচ্ছি মুসকান বিমানে কমফোর্টেবল ফিল করবে না।

চমকে ওঠলো মুসকান,,, তাঁর মানে ইমনের মনে আছে সে বিমানে খুব ভয় পায়।
ছোট বেলায় যখন আকাশ দিয়ে বিমান যেতো তখন ভয়ে মাকে জাবটে ধরতো সেই ভয় এখনো আছে তাঁর। শব্দেই এতো ভয় না জানি আকাশ পথে জার্নি করলে কতটা ভয় পাবে।
,
ইমনের কাপড় গুছিয়ে নিজের গুলোও গুছাচ্ছে মুসকান।
ট্রেনের কেবিন বুক করা হয়ে গেছে এবার
রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্টের রুম বুক করলো অনলাইনেই।
“বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের ইনানী বিচে গড়ে তোলা হয়েছে ফাইভ স্টার হোটেলটি। সেখানেই ওঠবে তাঁরা।
,
অভ্রর মতলব সুবিধার ঠেকছে না।
কেমন যেনো আশে পাশে ঘুরঘুর করছে ইদানীং।
যদিও মুসকান কিছুটা বলেছে ইমন গম্ভীর স্বরে বললো,,,

— অভ্র তন্নিকে তুই বিয়ে করতে চাস।

অভ্র হাটা পা থামিয়ে থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
ইমন এগিয়ে অভ্রর মুখোমুখি হয়ে বললো,,,

–দশবারোদিন থাকছিনা অফিসের দায়িত্ব টা নিয়ে নে একদিন। যদি এই দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারিস বুঝবো বউয়ের দায়িত্বও পালন করতে পারবি। তখনি দিহানের সাথে কথা বলবো ক্লিয়ার,,,

অভ্র মাথা চুলকে বোকা হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালো।
ইমন গালে হালকা থাপ্পড় দিয়ে মৃদু হেসে চলে গেলো।
সাথে সাথে ইয়াশফা,ইয়ানা,নিপ্রা, নিল দৌড়ে এসে অভ্রকে চেপে ধরলো। হৈচৈ বেঁধে গেলো দোতালায়।
নিচ থেকে নাজমা চৌধুরী চেঁচাতে লাগলো,,,

— কিরে কারেন্টের শখড খেলি কেকে অমন করিস ক্যান তোরা কি হইছে???

ইয়ানা চিল্লিয়ে বললো,,,

তোমার নাতী লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম সাগরে ডুবে হাবুডুবু খাচ্ছে আর আমরা জানতেই পারলাম না।

— ওমা বিয়ে করছে বউয়ের সাথে খালি প্রেমের হাবুডুবু খাবে নাকি আরো কতো হাবুডুবু খাবে বলেই লজ্জা মাখা হাসি দিলো।

অভ্র এবার রাগে হনহন করে নিচে নেমে বললো,,,

— তুমি কি আমাদের সৎ দাদী??

— কি হতচ্ছাড়া কি বললি তোর দাদাঠাকুরের একমাএ বউ আমিই ছিলাম আমিই আছি সৎ হবো ক্যান।

অভ্র কাছে গিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,,,

— হাভভাবে তো মনে হয় না। নাতী বললে শুধু একজনকেই মাথায় আসে, আরো তো কেউ আছে নাকি বলেই রাগে গটগট করতে করতে বেরিয়ে গেলো অভ্র।

নাজমা চৌধুরী হকচকিয়ে গেলো।

— ওও দাদু ভাই আমার সোনা দাদু ভাই রাগ করেনা।
তা তুমি কার প্রেমে হাবুডুবু খেলে তা তো একবার বলো শুনি।

অভ্র আর দাঁড়ালো না বেশ তাঁরা নিয়েই গাড়িতে ওঠে তন্নিদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
,
মুসকান কে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো নিপ্রা।
যদিও হালকা সাজ, সাজগোজের ব্যাপারে না মুসকানের আগ্রহ আছে আর না ইমনের।
ইমনের গর্ববোধ হয় তাঁর বউয়ের মাঝে ন্যাচারাল সৌন্দর্য ভরপুর। তাই সাজগোছ করলেও ইমন নিষেধ করে। ডাগর ডাগর চোখে কখনো কাজল ছোঁয়াতে দেয় না ইমন। কাজল ছাড়াই নাকি তাঁর চোখে অপরূপ সৌন্দর্য্য ভরে থাকে।
কাজল কালো চোখের ঘন পাপড়িতেই মোহিত হয় ইমন। কি দরকার কাজল ছোঁয়ানোর এমনিতেই তাঁর মুগ্ধময়ীর সৌন্দর্যে মোহিত থাকে সবসময়।

ইমন মুসকান কে নিলয় ছেড়ে দিয়ে আসলো।
যাওয়ার সময় দাদী বার বার বলে দিয়েছে খুশির খবড় নিয়ে ঘরে ফিরতে তা শুনে মুসকান লজ্জায় বেরোনোর সময়ই মিইয়ে গেছে।

স্টেশনে গিয়ে দুজনই ওয়েট করছে এমন সময় হুট করে একটা মেয়ে এসেই ইমনকে জরিয়ে ধরলো।
হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগলো,,,
— আপনি ইমন চৌধুরী না,,,
ওয়াও কি সৌভাগ্য আমার ঢাকা আসতে না আসতেই আপনার দর্শন পেলাম। আই এম সো হ্যাপি,,, আই এম সো হ্যাপি।

ইমন বেশ শক্ত করে ধরেই ছাড়িয়ে বললো,,,
— হেলো আর ইউ ম্যাড?? পাবলিক প্লেসে এসব কি ধরনের অসভ্যতা।

মেয়েটা নিজের দুগালে হাত দিয়ে চোখ পিটপিট করে বললো,,,

— হাউ সুইট,,,সত্যি হিরো রিয়েল লাইফে এমন হিরো দেখতে পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।
আপনি জানেন আমি আপনাকে ফার্স্ট কুমিল্লায় দেখেছিলাম আপনি বিজন্যাসের কাজে গিয়েছিলেন। দূর্ভাগ্যবশত আপনি ঢাকা আসার দিনই আপনাকে আমি এক পলক দেখেছিলাম।
নিউজ পেপারেও মাঝে মাঝে দেখতাম।
বলেই ইমনের হাতটা চেপে ধরলো ইউ আর লুকিং সো হট,,,

ইমন হাত ছাড়িয়ে আঙুল তুলে বললো,,,
সত্যি আমি হট আর এমন হট যে আমার এক থাপ্পড়ে তোমার গাল ঝলসে যাবে।

মুসকান এতোক্ষন সবটা দেখে জ্বলে পুড়ে ছাই হওয়ার উপক্রম। মেয়েটাকে কিছু বলতে যাবে অমনি ইমন মুসকানের হাতটা শক্ত করে চেপে ট্রেনের দিকে ছুটে চললো।
মুসকান রাগি চোখে ইমনের দিকে তাকালো।

— আপনি ওকে কিছু বললেন না কেনো ছাড়ুন আমাকে আমি ওকে মেরেই ফেলবো আজ।
ইমন দ্রুত পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো,,,

— হ্যাঁ তুমি ওটা করতে যাও আর আমাদের হানিমুনটা মিস হয়ে যাক আর দুমিনিট বাদেই ট্রেন ছাড়বে। এই সব পাগল ছাগলের জন্য আমি আমার
মুগ্ধময়ীর সাথে লাভ জার্নি মিস করতে চাইনা।

মেয়েটা ইমনের চলে যাওয়া দেখে আর তার সাথে মুসকানকে দেখে কপাল চাপড়াতে শুরু করলো।
মেয়েটার বাবা এসে বললো কিরে এখানে কি, খুঁজতে খুঁজতে হয়রান আমি চল,,,

— বাবা জানো ইমন চৌধুরী কে দেখলাম।
আমার সাথে কথাও হলো কিন্তু একটা মেয়ে কে নিয়ে তারাহুরোয় চলে গেলো। মেয়েটা কে,,,
ছোট বোন নাকি অন্য কেউ???

— বোন ও না অন্য কেউও না ওনার ওয়াইফ।
হি ইজ ম্যারিড,,,

মেয়েটা চিল্লিয়ে ওঠলো,,,

— কিহ!
,
ট্রেন চলছে আপন গতিতে,,, মৃদু হাওয়ারা এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে ওদের দুজনকে।
ইমন মুচকি হেসে মুসকানের একদম কাছে গিয়ে আলতো হাতে গাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললো,,,

কেমন লাগছে,,,
মুসকান ইমনের হাত ছাড়িয়ে একদম জানালার কাছে গিয়ে বসলো। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তাঁর বার বার মেয়েটার কথা মনে পড়ছে কিভাবে তাঁর সামনে এসে জরিয়ে ধরেছিলো মেয়েটা নিজের এক হাতে আরেকহাত মোচড়াতে শুরু করলো।
ইমন বেশ বুঝতে পারছে তাঁর মহারানীর রাগের পাল্লাটা কতোটা ভারী হয়ে আছে।
কিন্তু ঐ মূহুর্তে বেশী কিছু বলতেও পারলো না।
আর মেয়েদের গায়ে হাত তোলাও বেমানান তা কি তাঁর বাচ্চা বউ টা বুঝে না।

রাগে যেনো ফুসছে মুসকান।
ইমন বললো — কি গো বউ এতো রাগছো কেনো??
ভার্সিটিতে কতো মেয়ে গায়ে গা ঘেঁষে থেকেছে,
ক্রাশ বয় ছিলাম বলে কথা, শুধু কি জরিয়ে ধরা আরো কতো কি,,,

কথাটা শুনামাএই মুসকান লাল বর্ন চোখে ইমনের দিকে তাকালো।
ইমন হকচকিয়ে গেলো কাশতে লাগলো।
মুসকান আরো সরে গেলো ইমনের থেকে।
ইমন জোর করে কাছে টানতে নিতেই মুসকান বড় বড় চোখ করে তাকালো অশ্রুকনায় ভরপুর চোখ দুটো এই বুঝি ঝড়ে পড়বে জলকোনারা।
ইমন দুহাত মুড়িয়ে পিছন নিয়ে মুসকানের চোখে গভীর ভাবে চেয়ে মৃদু স্বরে বললো,,,

“তোমার চোখের ধারালো ছুড়িতে ব্যবচ্ছেদ হবার সুযোগ পেয়ে ব্যবহারিক ক্লাসে জেগে থাকি উদ্ভিদ চারা হয়ে ”
“এক পলক স্বপ্ন চোখের বিনিময়ে কিনে নিয়েছো
আমার ঘুম চোখ নিদ্রাহীনতার উজানে এখন ডুবসাঁতার”
” লাভ লোকসানের পরোয়া করিনা বলেই আচমকা ইচ্ছে হয় তোমার যুগল চোখে ভালোবাসার দোকান খুলে বসি”

মুসকানের চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি ঝড়তে শুরু করলো।

— যান না যান ঐ মেয়েগুলোর কাছে যান।
আমাকে ভালোবাসা দিতে হবে না।

ইমন বললো,,,
— বউ টা কবে বড় হবে মজাও বুঝে না।

— আপনি কখনো মজা করেন যে মজা বুঝবো।

ইমন হকচকিয়ে গেলো সত্যি তো সে মজা করেনা।
বা মুখে ভালোবাসার স্বীকারোক্তিও দেয় না তাহলে আজ কি হলো তাঁর??

ইমন মৃদু হাসলো ধীরে ধীরে গভীরভাবে ছুঁতে লাগলো মুসকান কে। ঘোর লাগা গলায় বললো,,,
আমার ধারে কাছে মুসকান ব্যাতিত কাউকে আসতে দেইনি আর না দিবো।
আর ঐ সব কিছু পাগলদের বিষয় এতোটা সিরিয়াস নিও না। এমন একটা স্বামী থাকলে ওসব একটু আকটু হবেই।

— কেনো হবে ওরা কেনো আপনাকে জরিয়ে ধরবে।

— উফ সরি মিসটেক করে ফেলেছে বলেই ঠোঁট জোরা আঁকড়ে ধরলো ইমন।
ভালোবাসার উন্মাদনায় মেতে ওঠলো নতুন ভাবে নতুন সুরে দুজনই।

অনেকটা সময় পর ইমন ছাড়লো মুসকানকে।
মুসকান চুলসহ গায়ের কাপড় ঠিক করছে ইমন ঘোর লাগা চোখেই চেয়ে রয়েছে। মুসকান গাল ফুলিয়ে বললো,,,
— ওদিকে তাকান না এভাবে তাকালে আমার ভীষণ লজ্জা লাগে।

ইমন নিশ্চুপ মুসকানের কথা তাঁর কানে পৌঁছালো কিনা বোঝা দায়। সে ঘোর চোখে তাঁর মুগ্ধময়ীর মুখ পানে চেয়ে আছে।

মুসকান ঝটপট নিজেকে ঠিক করে নিয়ে বললো,,,

— আপনি এমন কেনো কেমন যেনো করেন শুধু।

ইমন চোখ স্থির রেখেই বললো কেমন,,,

মুসকান লজ্জা পেয়ে পিছন ঘুরে বললো,,,
— আপনি আমার সাথে বেশ অসভ্যতামী করেন।

কথাটা শোনামাএই ইমন একটানে মুসকানকে নিজের ওপর ফেলে ঘাড়ে একহাত চেপে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো। কিছুক্ষন পর ছেড়ে বললো,,,
— এই অসভ্যতামী সব মেয়েই তাঁর স্বামীর থেকে চায় আর তুমি চাচ্ছো না। তাহলে এমন অসভ্যতামীর জন্য তো অন্যএ ব্যবস্থা নিতে হবে।

মুসকান জিগ্যাসু চোখে তাকাতেই ইমন একটু ভাব নিয়ে মুখে গম্ভীর্য এনে বললো,,,

— সেকেন্ড ম্যারেজ করতে হবে।

সঙ্গে সঙ্গে মুসকান ইমনের মুখে হাত চেপে আঁতকে ওঠে বললো না,,,

ইমন হাত ছাড়িয়ে হোহো করে হেসে ওঠলো।
মুসকান স্তব্ধ হয়ে গেলো,,, অপলক চোখে চেয়ে দেখলো সেই হাসিটা।
একজন পুরুষের হাসি এতো মারাত্মক সুন্দর হতে পারে জানা ছিলো না মুসকানের। আজ যেনো ইমনের মাঝে বেশ অনেক পরিবর্তন লক্ষ করছে যা এতোদিন করেনি বা এমন ঘটনার সম্মুখীন এতোদিন হয়নি। পাঁচ টা বছরে যে মানুষ টাকে এভাবে হাসতে দেখেনি কখনো আজ হুট করে এমন প্রানভরা হাসি দেখলো সত্যি অবাক লাগলো।
মুসকান মুগ্ধ নয়নে চেয়ে দেখতে লাগলো হাসিটা।
“একজন মানুষ যেসব কাজ ভুলেও করেনা বা একজনের মানুষের মাঝে যেসব লক্ষন ভুলেও চোখে পড়ে না হঠাৎ করে না করা কাজগুলো বা না দেখা স্বভাবগুলো চোখে পড়লে সত্যি মএাতিরিক্ত অবাক লাগে ” মুসকানের তাই লাগছে।

মুসকানের ঠোঁটের কোনেও হাসির রেখা ফুটে এলো।
ইমন হাসি থামিয়ে মুসকানের দিকে তাকাতেই থেমে গেলো। সেও লক্ষ করলো বহুবছর পর এমন প্রানখুলে হাসছে সে। আর এসবটাই শুধু মুসকানের জন্য।
মুসকান অবুঝ শিশুর মতো আবদার করলো আরেকটু হাসুন না,,,
ইমনের বুকের ভিতর শীতল শিহরন বয়ে গেলো।
মুসকানের চোখের দিকে এক দৃষ্টি তে চেয়ে রইলো।
মৃদু হেসে দুহাত তুলে বুক টা উন্মুক্ত করে দিলো।
মুসকান ঝাঁপিয়ে পড়লো তাঁর উন্মুক্ত বুকে।
সুখের জল গড়িয়ে পড়লো দুজনের চোখ বেয়েই।
মুসকান বললো,,,
— আরেকটু হাসুন না বড্ড ভালো লাগলো আমার হাসুন না আরেকটু।

ইমন কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,,

— ইমন চৌধুরীর হাসি বহু মূল্যবান যেমন টা আমাবস্যার চাঁদ হয়। সবসময় দেখা যায় না
বিশেষ বিশেষ মূহুর্তে ওঁকি দেয়। আর এই মহামূল্যবান হাসি আমার মহামূল্যবান মানুষ টাই দেখেছে এবং এই হাসির কারনও সে।
ইনশাআল্লাহ এই হাসি তুমি আরো বহুবছর দেখতে পারবে। আমাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েকে নিয়ে সুখের নীড় গড়ে তুলবো আমরা।
সবাই দেখবে গোমড়া মুখো, বদমেজাজি ইমন চৌধুরীও হাসতে পারে প্রানভরে হাসতে পারে।
শুধু তাঁর মুগ্ধময়ীর জন্য।

মুসকান বুকে মুখ গুঁজে আবেশে চোখ বুজে ফেললো। ইমনও চোখ বুজে অনুভব করতে লাগলো তাঁদের সুখানুভূতি গুলো।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here