হৃদপিন্ড,পর্ব-৩৫

হৃদপিন্ড,পর্ব-৩৫
জান্নাতুল নাঈমা

শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। কিছু খেতে অবদি ইচ্ছে করছে না, ঘুম ও আসছে না। টেনশন হচ্ছে ভীষণ।
“ওনি কোথায় চলে গেলেন?” “সায়রী আপাও আসছে না কেনো? ”
কিছু ভালো লাগছে না তাই ওঠে বসলো।
টিভি অন করে চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে নিউজ চ্যানেলে দিয়ে চুলগুলো ঠিক করতে লাগলো।
কানে ভেসে এলো কিছু অস্বাভাবিক,অপছন্দনীয়,
বিশ্রি কথা। যা শোনা মাএই পুরো শরীরটা কেঁপে ওঠলো। মাথাটা দ্বিগুন ঝিম ধরে গেলো।
ইয়াশফাকে হসপিটাল অবদি নিয়ে আসার পুরো ভিডিওটাই হালকা দেখানো হলো।
মুসকানের চিনতে খুব একটা অসুবিধা হলো না।
বড় বড় চোখ রেখে কাঁপতে কাঁপতে দেখতে লাগলো। তারপরই চোখে ভেসে এলো ইমন চৌধুরীর ভয়ানক,হিংস্র রূপটা। যা দেখে ভয়ে শিউরে ওঠলো সে। সাতজনকে দেওয়া আঘাত খুব স্পষ্ট দেখতে পেলো মুসকান। চারপাশে পুলিশ, মিডিয়ার লোকজন ঘেরাও করা। তারপর দ্রুতই ভেসে এলো ইভান সহ সাজিয়া বেগম আরো পরিচিত অনেক মুখ। ইভানের বলা সেই ভয়ংকর সত্যি জানতে পেলো মুসকান সাথে সাথেই ইমনের চলে আসা থেকে সবটা নিজ চোখে দেখে থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো। শরীরটা অবশ হয়ে এলো তাঁর,মাথাটা ঘুরে এলো, আবছা চোখে টিভির পর্দায় চোখ রেখে এক হাত বাড়িয়ে অস্পষ্ট স্বরে শুধু একটা কথাই বললো,,,

— এসবের জন্য আমি দায়ী, ইয়াশফা আপু, ইয়াশফা আপ,,,
আর কিছু বলতে পারলো না বিছানা থেকে মেঝেতে পড়েই জ্ঞান হারালো।
,
ইয়াশফা নিশ্চুপ হয়ে আছে। চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি ঝড়ে পড়ছে। পুলিশ, মিডিয়ার লোক তাঁর কেবিনে ঢোকার জন্য হুলস্থুল কান্ড বাজিয়ে দিলো।
এমন একটা সময়ে মিডিয়ার লোকজন,পুলিশ এভাবে যেয়ে ছবি তুললে জবানবন্দি নিলে মেয়েটার মনের অবস্থা কি হতে পারে??
ইমন এমন অবস্থা দেখে প্রচন্ড রেগে গেলো।
ঘৃনায় সে আর কিছু বললো না।
বেশ কিছুক্ষন বাদে উপরমহল থেকে সাংবাদিক এবং পুলিশ অফিসার দের ফোন করে কড়া নিষেধ করা হলো।
ইমন আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে বললো,,,
আউট,,,
সবাই মাথা নিচু করে চলে গেলো।
কেবিনের ভিতর গিয়ে ইয়াশফার পাশে বসলো ইমন।
ইয়াশফার এক হাত নিজের দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,,,
তোর সাথে যা হয়েছে খুব খারাপ হয়েছে।
আর এসবের জন্য যে বা যারা দায়ী তাঁদের কাউকে আমি ছাড়বোনা।
ইয়াশফা চোখ দুটো বুজে ফেললো।
ইমন এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
— তোর কোন ভয় নেই। তোর বাবা আছে,বড় ভাই আছে কিছু হবে না। তোর পাশে আমি আছি সবসময় কোন ভয় নেই তোর কোন ভয় নেই।

সাজিয়া বেগম ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
নদী,নিপ্রা, ইয়ানা সবাই নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে।

ইমন বললো,,,

— এখানে কেউ কাঁদবে না। কিছু হয়নি কেনো কাঁদছো সবাই। যদি এখানে তোমরা কাঁদতে থাকো তো আমি ওকে নিয়ে আমার বাড়ি চলে যাবো।
আমি একা ওকে সামলে নিবো।
ইয়াশফা,,,নো ক্রায়িং। আমি আছিতো তোর ভাই আছে। কেনো কাঁদছিস কাঁদবে তাঁরা যারা তোর সাথে জঘন্যতম অন্যায় টা করেছে।

দুহাতে চোখের পানি মুছে কপালো ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বললো,,,

— ইমন চৌধুরীর বোন দূর্বল হতে পারে না।
তাঁকে স্ট্রং থাকতে হবে। সবাই কে দেখিয়ে দিতে হবে তো তোর সাথে যারা অন্যায় করেছে তাঁরা কেউ রেহাই পায়নি।
ইমনকে একহাতে জাবটে ধরে ডুঁকড়ে কেঁদে ওঠলো ইয়াশফা।
ইমন তাঁকে কতোটা ভালোবাসে আজ এই সময় তা বুঝতে বাকি রইলোনা। অসহায় চোখে ইমনের মুখের দিকে তাকালো।
ইমন তাঁকে পরম স্নেহে বুকে টেনে নিলো।
,
সায়রী সমানে ফোন করে যাচ্ছে ইমনকে ইমন ধরছে না। বাধ্য হয়ে অখিলকে ফোন করে দ্রুত আসতে বললো। ইমন তখন অখিলের সাথেই ছিলো।
ইয়াশফার বিষয়েই কথা বলছে।
অখিল ফোন রেখে বললো,,,
— তোর ফোন কোথায় সায়রী ফোন করছে মুসকান সেন্সলেস হয়ে গেছে এখুনি যেতে হবে।

— হোয়াট!
নিজের চুলগুলো খাঁমচে ধরলো ইমন।
বিপদ যেনো পিছুই ছাড়ছে না। কি করবে এখন সে হসপিটাল থেকে চলে যাবে কিন্তু ইয়াশফা,,,
এই সময় তো ইয়াশফার পাশে সকলকে প্রয়োজন।
কিন্তু মুসকানেরও তো আমায় প্রয়োজন।
কেবিন থেকে বেরিয়ে নদীর কাছে গেলো ইমন।
ভাবলো নদীকে পাঠিয়ে দিবে পরোক্ষনেই ভাবলো নাহ সবাই এখানে থাকুক বাসার সবাই কে ইয়াশফার প্রয়োজন।
,
মানসিক ভাবে ভেঙে পড়লো ইমন।
হাজার হোক ইভান তাঁর বাবারই আরেক সন্তান।
এমন একটা ঘটনা মেনে নেওয়া সত্যি কষ্টের।
টেনশনে ড্রাইভ করতে পারলো না অখিলই ড্রাইভ করলো।
,
মুসকান কে চেক-আপ করে অখিল বললো শরীর টা অনেক দূর্বল। আর ভয় পেয়েছে কিছু নিয়ে হয়তো।

— আমি এসে দেখি টিভি অন আর ও মেঝেতে পড়ে আছে।

ইমন ভ্রু কুঁচকে সায়রীর দিকে তাকালো।
সায়রী এক গ্লাস পানি নিয়ে ইমনের হাতে দিলো।
ইমন মুসকানের চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে গালে আলতো করে থাপ্পড় দিতেই মুসকান চোখ খুললো।
অখিল সায়রী কে বললো,,,
— কিছু খাওয়িয়ে দে শরীরটা ভীষণ উইক।
একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।
সায়রী রুমের বাইরে চলে গেলো, অখিলের ডিউটি থাকায় সেও বেরিয়ে গেলো।
,
ইমন মুসকানের দিকে চিন্তিত চোখে চেয়ে রইলো।
বুঝতে পারছে না হঠাৎ কি এমন হলো।
তবুও তাঁর মানসিক চাপ কিছুটা কমেছে।
যতো সমস্যায়ই থাকুক এই মুখটা দেখলে তাঁর বুকে আলাদা এক প্রশান্তি বয়ে যায়।
মৃদু স্বরে ডাকলো,,,
মুসকান,,,

মুসকান ভয়ার্ত চোখে পাশে তাকিয়েই ইমনের হাত দুটো ছিটকিয়ে তাঁর হাত ছাড়িয়ে খানিকটা দূরে সরে গেলো।

আচমকাই এমন কিছু হয়ে যাওয়ায় ইমন অবাক হয়ে বললো,,,
কি হয়েছে কি দেখে ভয় পেয়েছো বলো আমায়?
কাছে গিয়ে দুকাধে ধরতেই মুসকান কাঁপতে শুরু করলো। ইমনের থেকে ছুটে গিয়ে বিছানা ছেড়ে ওঠে দৌড় দিতেই সায়রী সামনে চলে এলো।
সায়রী কে দেখেই হুহু করে কেঁদে দিলো মুসকান।
পিছন গিয়ে লুকিয়ে সায়রীর ওড়না খামচে ধরে কাঁদতে লাগলো।
আর বলতে লাগলো — আমার জন্য আমার জন্য ইয়াশফা আপুর আজ এই অবস্থা আমার জন্য।

ইমনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
— এসব মুসকান কি বলছে।

সায়রী হাতের খাবাড় গুলো রেখে মুসকানকে জরিয়ে নিলো।

— এসব কি বলছো মুসকান। তোমার জন্য কিছু হয়নি শান্ত হও তুমি।

মুসকান হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,,,
আমি নিজের চোখে দেখেছি ঐ খানে ঐ খানে।

ইমন টিভির দিকে চেয়ে সায়রীর দিকে তাকালো।
দুজনেই বুঝে গেছে কি ঘটেছে।
ইমন নিজের চুল আঁকড়ে ধরলো।
চোখ দুটো বন্ধ করে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
ওহ হড আমায় ধৈর্য দাও সবটা সামলানোর শক্তি দাও।

ইমন মুসকানের কাছে এসে বললো মুসকান রিল্যাক্স ভয় কেনো পাচ্ছো আমি আছিতো হাত ধরতেই এক ছিটকানি দিয়ে আবারো সায়রীর পিছনে চলে গেলো।
সায়রী অবাক হয়ে ভয় চোখে ইমনের দিকে তাকালো। ইমনও সায়রীর দিকে তাকালো।
তাঁদের মাথায় কিছু ঢুকছেনা হঠাৎ এমন করছে কেনো মুসকান।
ইমন নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে সায়রীকে সরিয়ে মুসকানের দুকাধে শক্ত করে চেপে বললো,,,
— এদিকে তাকাও কেনো ভয় পাচ্ছো কিছু হবে না।
আমি আছিতো। ইয়াশফারও কিছু হবেনা ওর ভাই আছে ওর সাথে রিল্যাক্স।

মুসকান থরথর করে কাঁপতে লাগলো।
তাঁর চোখে ভেসে এলো ইমনের সেই ভয়ংকর চেহেরা,সেই হিংস্র রূপ সেই হিংস্র গর্জন।
কাঁপা গলায় কাঁদতে কাঁদতে বললো,,,

— আআপনি আপনি হ্যাঁ আপনাকে দেখেছি।
ভয়ানক, খুবই ভয়ানক বলেই দুহাতে নিজের মুখটা ঢেকে কাঁপতে লাগলো।
ইমনের মেজাজ বিগরে গেলো।
মুসকান তাঁকে এমন ভয় কেনো পাচ্ছে।
হ্যাঁ মুসকান তাঁকে ভয় পায় কিন্তু সেই ভয় আর আজকের ভয় এক না। আজ মুসকানের চোখে কোন ভালোবাসা, মায়া দেখতে পারছে না শুধু ভয় আর ভয় যা ইমন মেনে নিতে পারছেনা৷
এই সময়টা যে মুসকানকে তাঁর সব থেকে বেশী প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু মুসকান তো তাঁকে দেখে প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে।
সহ্য করতে না পেরে আরো শক্ত করে দু কাঁধে চেপে ধরে কয়েকটা ধমক দিলো যার ফলশ্রুতি তে মুসকান আবারো জ্ঞান হারালো।
সায়রী এসব দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো।
ইমনের কাছে এসে বললো,,,

— ইমন হোয়াটস রং উইথ ইউ??
মেয়েটা ভয় পাচ্ছে ওকে শান্ত না করে নিজেই হাইপার হয়ে গেলি কেনো। দেখি ওকে বিছানায় শুইয়িয়ে দে।
পাজাকোল করে নিয়ে বিছানায় শুইয়িয়ে দিয়ে বললো,,,
— তুই দেখতে পারছিস না ও আমাকে ভয় করছে।
ভয় করছে আমাকে কেনো ভয় করবে বল কেনো ভয় করবে। আমি ইমন, ইমন চৌধুরী ওর হাজব্যান্ড আমাকে দেখে কিসের ভয় ওর।

— আমি জানি ইমন।
প্রত্যেকটা নিউজ পেপার, নিউজ চ্যানেলে সবটা বলা হচ্ছে। মুসকান নিজ চোখে যা সব দেখেছে তারওপর তোকে যেভাবে দেখেছে ওভাবে ও অভ্যস্ত নয় তাই ঘাবড়ে গেছে।
ভয় পেয়ে গেছে ওকে মানাতে হবে তোর তা না করে তুই এমন হাইপার হলে আরো ভয় পেয়ে যাবে।

— কিন্তু আমার ওকে প্রয়োজন সায়রী।
সব সময় ও আমার পাশে থেকেছে আর আজ এমন একটা কঠিন পরিস্থিতি তে ও আমার সাথে এমন অস্বাভাবিক আচরন করতে পারেনা।

— ইমন প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর। আচ্ছা ওকে জ্ঞান ফেরাতে হবেতো বোঝাতে হবে ওকে প্লিজ।

,
জ্ঞান ফিরতেই ইমনকে দেখে আবারো কাঁদতে শুরু করলো মুসকান ভয়ে কেমন কুঁকড়িয়ে যাচ্ছে।
সায়রী বললো,,,
— ইমন তুই বাইরে যা আমি ওকে ম্যানেজ করছি।
প্লিজ ভাই একটু ঠিক রাখ নিজেকে সব ঠিক হয়ে যাবে।

— তুই কি বোঝাতে চাইছিস আমি চলে গেলেই ও স্বাভাবিক হয়ে যাবে নেভার। আমি ওর হাজব্যান্ড ও ভালোবাসে আমায়। আমার জন্য ওর ভয় হতে পারেনা।দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বললো ইমন।

মুসকান ভয়ে কাঁপছে সায়রীর পিছনে লুকোনোর চেষ্টা করছে। ইমন অবাক চোখে সবটা দেখছে।
রাগ হচ্ছে তাঁর সব কিছু শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। তবুও নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
হসপিটালে ফোন করে শুনলো ইয়াশফা ঘুমাচ্ছে।
তাই ওদিক নিয়ে টেনশন নেই। অভ্রকে মেসেজ করে বলে দিলো” মুসকানের শরীর খারাপ ফুপুকে বলে দিস কাল যবো আমি”

— ইয়াশফা আপু, আপুর কাছে যাবো আমি।
আমার জন্য আমার জন্য সব হলো সব দোষ আমার। আপা আমাকে নিয়ে চলো আমি সবার পা ধরে মাফ চাইবো৷ আমাকে নিয়ে চলো আপা আমার জন্য সব হয়ে গেলো আমিই দোষী আমাকে মেরে ফেলো মেরে ফেলো বলেই সায়রীর দুহাত নিজের গলায় চেপে ধরলো।

— মুসকান জাষ্ট এনাফ অনেক হয়েছে পাগলামো।
তোমার জন্য কিছু হয়নি যা হয়েছে ওর নিজের ভাই ইভান আর রিতিশার জন্য। আর তাঁরা শাস্তি পাবে।
মুসকান প্লিজ তুমি এমন করো না ইমনের পাশে থাকো ওর তোমায় খুব প্রয়োজন। ছেলেটা মনসিক চাপে আছে তুমি এসময় এমন করলে দ্বিগুন ভেঙে পড়বে একটু বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ বোন আমার।

ইমনের কথা বলতেই আবারো সেই দৃশ্য গুলো ভেসে এলো তাঁর চোখে ভয়ে কুঁকড়িয়ে গেলো কেমন।
ইমন সবটা দেখে সরে গেলো।
সিগারেট ধরিয়ে চলে গেলো ছাদে।
মুসকানকে অনেক বুঝিয়েও কাজ হলো না।
রাতে সে সায়রীর সাথেই ঘুমালো।
সায়রী দিহানকে মেসেজ করে এদিকের সবটা জানিয়ে সুপ্তির খেয়াল রাখতে বললো।

প্রায় পাঁচ দিন পর ইয়াশফাকে বাড়ি নিয়ে গেলো।
ইমন ইয়াশফাকে একদম তাঁর রুমে পৌঁছে দিয়ে বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে ইয়াশফাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে, বাড়ির সবাইকে ইয়াশফার খেয়াল রাখতে বলে বেরিয়ে পড়লো।
বাড়ির সবাইকে জানানো হয়েছে ইয়াশফার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য মুসকান নিজেকে দায়ী করছে ইমনের সাথেও ঠিকভাবে কথা বলছে না সব সময় অপরাধ বোধ আর ইমনের প্রতি গভীর ভয় নিয়ে থাকছে।
এর মধ্যে নদী,নিপ্রাও এসেছিলো তাঁদের দেখে খুব কেঁদেছে মুসকান। ইয়াশফার কাছে যেতে চাইলেও ইমন তাঁকে যেতে দেয়নি।
হয়তো মুসকানকে দেখে ইয়াশফা ভেঙে পড়বে।
ইয়াশফার মনে হতেই পারে ওর জন্য তাঁর এই অবস্থা। মুসকানেরতো মনেই হয় সব কিছুর জন্য সে দায়ী৷ ইয়াশফাকে দেখলে আরো ভেঙে পড়বে।
তাই ইমন কোনভাবেই ও বাড়ি যেতে দিবে না মুসকানকে।
,
সায়রীর স্কুল ছিলো বিধায় মুসকান বাড়িতে একা।
ইমন সায়রীকে ফোন করে বলে দিলো,,,

— আজ এখানে আসতে হবে না।
এভাবে চলতে থাকলে কিছু ঠিক হবে না।
আজ পাঁচ দিন যাবৎ মুসকান আমাকে ইগনোর করছে দাঁত দাঁত চেপে সব টা মেনে নিয়েছি আর সম্ভব নয়।

— তুই মাথা গরম করিস না। ওকটু সময় দে সব ঠিক হয়ে যাবে।

— মাথা আমার ঠান্ডা আছে আর ঠান্ডাই থাকবে।

— হুমহ আমি জানি তুই আমার থেকে সবটা ভালো বুঝিস আর মুসকান কে আমাদের থেকে দ্বিগুণের ও বেশী ভালোবাসিস তবুও একটা কথা বলবো রাগ না করে শান্ত ভাবে বুঝাস।

ইমন এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন রেখে দিলো।
— কি করে শান্ত থাকবো আমি? পারছিনা শান্ত থাকতে আর পারছিনা। আমি এতোটাও ভালো মানুষ নই যে নিজের ভালোবাসার থেকে ইগনোর সহ্য করবো।
গাড়ির স্প্রিট বাড়িয়ে দিলো ইমন।
এিশ মিনিটের রাস্তা পনেরো মিনিটেই শেষ করলো সে।

বাড়িতে ফিরলে আগের মতো মুসকান তাঁর সাথে থাকে না, তাঁর প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের কাছে ধরে না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে কেউ পিছু পিছু আসে না। যত্ন করে কেউ খাবাড় বেড়ে দেয় না। মাথা যন্ত্রণা হলে পাশে বসে মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দেয় না।
বুকটা ভারী হয়ে এলো ভীষণ।
উপরে গিয়ে মুসকানের রুমে যেতেই দেখলো মুসকান উদাস মনে বসে আছে।
ইমন রুমে প্রবেশ করতেই মুসকান চমকে তাকালো।
ভয়ার্ত দৃষ্টি তে ইমনের দিকে চেয়ে ওঠে দাঁড়ালো।
থরথর করে কাঁপছে সে ইমন নিজেকে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জোর পূর্বক হেসে বললো,,,

— কি করছো মুসকান,,, আমি ভীষণ টায়ার্ড এক গ্লাস পানি এনে দাও।

বিছানায় গিয়ে বসলো ইমন কোর্ট টা খুলে বিছানার পাশে রেখে শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে বুকে ফুঁ দিতে লাগলো। ঘেমে গেছে ভীষণ,,,

পানির গ্লাস সামনে ধরে দাঁড়ালো মুসকান।
হাতটা থরথর করে কাঁপছে,,, যার ফলে পানি ছিটকে পড়ছে মেঝেতে।
এমন অবস্থা দেখে ইমনের চোখ দুটো রক্ত বর্ন ধারন করলো। রাগটাকে দমন করতে পারলো না আর।
চট করে ওঠে দাঁড়িয়ে দুহাতে দুকাধে শক্ত করে চেপে চিৎকার করে বললো,,,
— কেনো ভয় পাচ্ছো আমাকে কেনো।

হাত ফঁসকে গ্লাসটা নিচে পড়ে গেলো।
ইমন দুকাধে চেপে ধরেই মুসকানকে ঘুরিয়ে কাঁচের টুকরো গুলোর থেকে দূরে সরিয়ে নিলো।

— কেনো ভয় পাচ্ছো,,, দেখো একবার তাকাও আমার দিকে দেখো আমি ইমন।
তোমার হাজব্যান্ড আমি কেনো এমন করছো মুসকান। একবার তাকাও,,,
ইমনের চিৎকারে মুসকান ভয়ে কুঁকড়িয়ে গেলো।
চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়তে লাগলো।

ইমনের মাথা কাজ করছে না মনে হচ্ছে সে এবার পাগল হয়ে যাবে। মুসকান কে ছেড়ে দেয়ালে সাজোরে এক ঘুষি দিলো। যা দেখে মুসকান ভয়ে ছুটে বেরিয়ে গেলো।

ইমন স্তব্ধ হয়ে গেলো।
— হায় খোদা এটাও দেখার বাকি ছিলো।
মুসকান আমায় দেখে জমের মতো ভয় পাচ্ছে।
আমি জানিনা এখন যা হবে ঠিক না ভুল।
আমি পারছিনা এভাবে থাকতে পারছিনা,এসব মেনে নিতে। আমার মুসকান আমায় ইগনোর করতে পারেনা , পারেনা।
হিংস্র চোখ মুখ নিয়েই বেরিয়ে গেলো ইমন।
নিচে তাকাতেই দেখলো মুসকান হন্য হয়ে কিছু খুঁজছে। রান্নাঘর থেকে সবজি কাঁটার ছুড়িটা নিতেই ইমনের বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠলো।
দৌড়ে নিচে গিয়ে মুসকান কে হেঁচকা টান দিয়ে সাজোরে এক থাপ্পড় দিলো গালে।
ছুঁড়িটা হাত ফঁসকে পড়ে গেলো মুসকান গিয়ে ছিটকে পড়লো মেঝেতে।
ইমন রক্তচক্ষু তে চেয়ে মুসকানকে ওঠিয়ে পিছন থেকে হাত মুঁচড়ে ধরলো।
কাঁধের কাছে মুখ নিয়ে বললো,,,
— অনেক বড় ভুল করতে যাচ্ছিলে তুমি মুসকান।
“তুমি আমার সম্পদ তুমি আমার সম্পত্তি ”
“তোমার না এই শরীরের প্রতি আর না তোমার নিজের মনের প্রতি কোন অধিকার আছে”
“তুমি আমার,,, এই ইমন চৌধুরীর #হৃদপিন্ড।
আর ইমন চৌধুরীর হৃদপিন্ডে আঘাত করার অধিকার কারো নেই তোমারও না”

— “আহ আমাকে ছাড়ুন ভয় করছে আমার ওদের মতো আমায় মারবেন না বলেই কেঁদে ওঠলো ”

ইমন আরো কাছে নিয়ে পাঁজাকোল করে নিয়ে উপরে ওঠে গেলো।
মুসকানের ভয় টা সে আজ দেখতে চায় না বুঝতে চায় না।
রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো।
দরজাটা লাগিয়ে মুসকানের কাছে আসতেই মুসকান ভয়ার্ত চোখে চেয়ে কাঁদতে শুরু করলো।
ইমন সেদিকে নজর না দিয়ে ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা রক্তে দুআঙুলে স্পর্শ করলো।
মুসকান ব্যাথায় কেঁপে ওঠলো খানিকটা।
সরে যেতে নিতেই ইমন তাঁকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে একহাতে কোমড় জরিয়ে আরেকহাতে গালে শক্ত হাতে চেপে কাটা অংশে ঠোঁট ছুঁইয়িয়ে দিলো।
মুসকানের ছটফটানি একটু কমলেও হাত দিয়ে সমানে ছাড়াতে চাইলো।
মুসকানের অমন ছটফটানি ইমনের রাগ কে আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলো। গায়ের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে মুসকানকে বিছানায় চেপে ধরলো।
দুহাতে তাঁর দুহাত বিছানায় চেপে মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো,,,
— মুসকান প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো,,,
কেনো এমন করছো আমার দিকে তাকাও দেখো?
কেনো আমায় ভয় করছো।
মুসকান কান্নামিশ্রিত ভয় চোখে ইমনের দিকে তাকাতেই আঁতকে ওঠলো।
রক্তবর্ন চোখে পানির চিকচিক দেখে মনে হচ্ছে রক্ত ঝড়বে।
যা দেখে কাঁপতে শুরু করলো।
ইমন চোখ দুটো বন্ধ করে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারো চোখ দুটো খুললো।
মুসকানের ঠোঁট জোরা আঁকড়ে ধরে দুহাত নিজের দুহাতের শক্ত বাঁধনে বেঁধে রাখলো।
ইমন যতোই মুসকানকে কাছে আনার চেষ্টা করছিলো মুসকান ততোই ছুটার জন্য ছটফট করছিলো। গায়ের জোরে পারলো না মুসকান।
একসময় চুপ হয়ে গেলো অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি পড়তে শুরু করলো ইমনের হাতদুটো শক্ত করে চেপে ধরলো।
রাগ করে হলেও মুসকান কে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে এসেছে ইমন, আদর ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছে রাগের মাথায়।
এই প্রথম ইমনের চোখ বেয়েও কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
সে কখনোই চায়নি এভাবে জোর খাঁটিয়ে মুসকানের শরীরটাকে নিজের কাছে আনার জন্য কিন্তু তাঁর কোন উপায় ছিলোনা আর না সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিলো।

মুসকানের ঘন শ্বাসের শব্দ ইমনের কানে বাড়ি খাচ্ছে। ইমন চোখ তুলে মুসকানের দিকে তাকাতেই বুকটা হুহু করে ওঠলো।
মুসকানের মনের যে কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি।
মনকে তো কাছে আনতে পারেনি।
গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিতে ইচ্ছে করলো তাঁর।
এক হাতে রিমোট নিয়ে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে কম্বল দিয়ে নিজেদের পুরোটাই ঢেকে নিলো।
মুসকানের মুখের কাছে গিয়ে দুহাতে গালদুটো ধরে কপালে, গালে, থুতনীতে চুমু খেলো।
মাথায় হাত বুলিয়ে অনেকটা সময় আদর করে ফিসফিস আওয়াজে বললো মুসকান,,,
তুমি আমায় ভালোবাসোতো???
ইমনের প্রশ্ন টা শোনা মাএই মুসকান পিছন ঘুরে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে মুখ চিপে কাঁদতে লাগলো।
ইমন ও তাঁর দিকে ঘুরে পিছন থেকে জরিয়ে নিয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বললো,,,
— পৃথিবীতে সবার চোখে আমি যতো খারাপই হইনা কেনো তোমার চোখে হতে পারবো না।
ওরা ভুল করেছে, ওরা আমার বোনকে কুলসিত করেছে। ইভান আমার মুসকানকে আঘাতের ষড়যন্ত্র করেছে আর অন্যায় কারীকে শাস্তি দিতে আমি পিছুপা হইনা মুসকান। তুমি এটা কেনো স্বাভাবিক নিচ্ছো না। কেনো ভয় করছো তুমি তো অন্যায় করোনি। আর অন্যায় তুমি এখন করছো আমার সাথে আমাকে ইগনোর করে আমার প্রতি সব দায়িত্ব কর্তব্য কে ভুলে গিয়ে আর এর জন্য তোমায় যেটুকু শাস্তি দিয়েছি এটা কিন্তু ভালোবাসারই এক অংশ।
দিনের পর দিন এই ইগনোর চলতে থাকলে আমি কিন্তু আরো বেশী ক্ষেপে যাবো তখন সহ্য করতে পারবো তো???

মুসকান আঁতকে ওঠলো। ঘুরে ইমনের চোখের দিকে তাকালো ইমনও গভীর চোখে চেয়ে রইলো।
মুসকান মুখ চিপে কাঁদতে নিতেই ইমন এক আঙুলে ঠোঁট চেপে বললো স্টপ অনেক কেঁদেছো আর না।
চুল গুলো একহাতে সরিয়ে পাগলের মতো চুমু দিতে লাগলো চোখ, মুখ, ঠোঁট গলায়।
আদরে আদরে ভরিয়ে দিলো তাঁর অর্ধাঙ্গিনী কে।

চলবে…….

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here