হৃদপিন্ড,পর্ব-২২,২৩
জান্নাতুল নাঈমা
পর্ব-২২
প্রচন্ড মাথা ব্যাথা ধরেছে বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে কেবলি চোখটা বুজেছে সায়রী।
দিহান সুপ্তিকে ঘুম পাড়িয়ে রুমেই নিয়ে আসছিলো তন্নি জোর করেই তাঁর কাছে রেখে দিলো।
দিহান মনে মনে ভাবছিলো সায়রী হয়তো ভাববে দিহান ইচ্ছে করেই সুপ্তিকে অন্য ঘরে রেখে এলো খানিকটা চিন্তা নিয়েই রুমে প্রবেশ করলো সে।
রুমে ঢুকতেই সায়রীকে চোখ বুজা অবস্থায় দেখতে পেলো বেশ বুঝলো ক্লান্ত অনেক তাই কিছু না বলে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরুলো।
সায়রী পোশাক পাল্টায়নি ঘুমে পড়ে যাবে যাবে ভাব তাই মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপালো এতে ঘুম টাও ভেঙে যাবে রন মূর্তির রূপটাও দেখতে পারবে অনেক বছর পর মুচকি হেসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সায়রীর দিকে চেয়ে গলা ছেড়ে গান ধরলো।
“প্রেমেরই দুম জ্বরে দুচোখের ঘুম কাড়ে
কেনো প্রেম গুম করে রেখে দিস হিমঘরে?
হলো যখন চেনা, জানা বারো আনা,,,
জানিয়ে প্রেম জমে যাবে ষোল আনা,,,
পাগলুওওও,,,থোরাছা কারলে রোমান্স,,,
পাগলুওওও থোরাছা কারলে রোমান্স”
এতো জোরে গাইছে যে আওয়াজটা কানে বার বার বাড়ি খাচ্ছিলো ঘুম ছেড়ে গেলো মাথাটা কেমন যেনো করে ওঠলো। এরওপর সেই বিরক্তকর গান যার জন্য কলেজে রোজ ঝগরা হতো দুজনের।
আর দিহান ইচ্ছে করেই কানের কাছে এসে গলা ছাড়তো। সায়রী একসময় কেঁদেই বলেছিলো প্লিজ দিহান এই বিরক্তকর হিরোর গান তুই গাবি না। গাইলেও আমার সামনে না। তাঁর পর থেকেই শুরু হলো দিহানের জ্বালানো সুযোগ পেলেই দেবের ডায়লগ,দেবের গান,দেবের স্টাইল দেখিয়ে রাগিয়ে দিতো সায়রীকে।
সায়রী তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে চেয়ে আছে দিহান এক গাল হাসি নিয়ে গান গাইছে আর ঘার ঘোরাচ্ছে।
এবার সায়রী যেনো তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠলো বাসরঘর লন্ডভন্ড করে বালিশ ছুঁড়ে মারলো দিহানের দিকে।
দিহান চোখ বড় বড় করে বালিশটা কেচ ধরে বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে একটু এগিয়ে সায়রীর দিকে আগা গোড়া চোখ বুলিয়ে আবার গান ধরলো –
ওওসুন্দরী ফুরি তুমি মন করিলা চুড়ি,,,
যদি ডাকি তোমারে মায়ার টানে আইবানি ফিরি বলেই চোখ মেরে বিছানায় দুহাত দুদিকে দিয়ে গাঁ এলিয়ে দিলো।
মজার মুডে সায়রী একেবারেই নেই বুকের ভিতর চাপা আর্তনাদ গুলো খুব করে ওকি দিচ্ছে এর ওপর দিহানের এমন তামাশায় মেজাজটা প্রচন্ড বিগরে গেলো। ভিতরের রাগটা বাইরে প্রকাশ করলো এবার।
দুহাতে দিহানের কলার চেপে দিহানের দিকে ঝুঁকে রাগান্বিত বুলি ছাড়লো।
–কেনো করলি এটা তুই৷ কেনো করলি,,, কেনো বিয়ে করলি আমায়। কিসের মোহে বল কিসের মোহে?
আজ বিয়ে করেছিস এক বাচ্চার মা কে কতোদিন ভালো লাগবে তোর। তোরা পুরুষ রা তো গিরগিটির মতো রঙ বদলাশ আজ সায়রীকে ভালো লাগছে,সুপ্তিকে ভলো লাগছে কাল আর এই সায়রীকে ভালো লাগবে না। কাল ঠিকি অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে পড়বি।আজ চোখ ভরা স্বপ্ন দেখিয়ে বুকে টেনে নিয়ে কাল মাটিতে ছুঁড়ে ফেলতেও দুবার ভাববি না। কি শান্তি পাশ তোরা বলবি কি শান্তি পাশ বলেই হুহু করে কেঁদে ওঠলো।
দিহান হতবাক হয়ে রইলো। বুকের ভীতর চীনচীনে ব্যাথা অনুভব হলো। সেই সাথে রাগ হলো ভীষণ সায়রী শিশিরের সাথে তাঁর তুলনা করছে বলে।
এই মেয়ে কেনো বুঝেনা” সব পুরুষ কাপুরুষ হয় না”
এই মেয়ে কেনো বুঝতে পারছে না “সব পুরুষ ভেঙে চুরমার করে দিতে আসে না ”
কিছু পুরুষ কারো ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়া হৃদয়ে ভালোবাসার পরশ ছুয়িয়ে নতুন করে বাঁচতে শেখাতেও আসে। ভালোবাসার অন্য এক রূপ অনুভব করাতেও আসে।
“সব পুরুষ একা করে দিয়ে যায় না।
কিছু পুরুষের আগমন ঘটে শূন্য হৃদয় ভরাট করার জন্য।
কিছু পুরুষ সকল একাকিত্ব দূর করে সারাজীবনের সঙ্গী হওয়ার জন্যও জীবনে চলে আসে”
এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে দিহান। সায়রী চিৎকার চেচামেচি চারদেয়াল ভেদ করে বাইরেও চলে গেছে।
বাড়িতে মেহমান ভরপুর দিহান সায়রীকে থামানোর চেষ্টা করতেও কাজ হলোনা। উপায় না পেয়ে সায়রীর দুহাতে চেপে ধরে নিজের ওপর থেকে সরিয়ে বিছানায় চেপে ধরলো। দুহাত সায়রীর দুহাতের উপর শক্ত করে চেপে রাখলো।
সায়রী ছুটতে নিলে দিহান সমস্ত শক্তি দিয়ে তাঁকে চেপে মুখোমুখি মুখ করে বললো সায়ু পাগলামি কেনো করছিস। প্লিজ চুপ কর।
–যে ভয়টা পাচ্ছিস সেটা কখনোই সম্ভব না।
সবাই এক হয় না সায়রী, বেঈমানী টা সবার রক্তে থাকে না এটা মাথায় রাখিস। আর রইলো অন্য নারীতে আসক্ত হওয়া এটা এতোদিন বলেছিস মানিয়েছে এখন আর বলিস না দোস্ত,,,
সায়রী কান্নাভেজা চোখে তাকালো।
দিহান মুচকি হেসে বললো নিজের ঘরে এতো সুন্দরী বউ রেখে বাইরে নজর দিবো কেনো?
“কাপুরষদের চোখে নিজের বউ ভালো লাগে না তাই তাঁরা পরনারীতে আসক্ত হয়”
তোর কি এতো বছরে এটা মনে হয় আমি কাপুরুষ??
আমি হচ্ছি আসল পুরুষ বুঝলি তাই আমার কাছে আমার বউই সেরা,, বলেই ভূবন ভুলানো এক হাসি দিলো।
সায়রী কিছুটা শান্ত হলো। মৃদু স্বরে বললো ছাড় আমায় হাতে লাগছে,,
দিহান চমকে গেলো। কখন যে সায়রীর এতো কাছে চলে এসেছে খেয়ালই করেনি। পুরো শরীরে এক মৃদু অনুভূতি বয়ে গেলো। হাজারটা,ইচ্ছে রা ওকি দিলেও সবগুলোকেই ধামাচাপা দিয়ে বললো বন্ধুত্বের খাতিরে তোর কপালে একটা কিস করি ডোন্ট মাইন্ড বলেই চট করে কিস করে সরে গেলো।
সায়রী আবারো কেঁদে ফেললো যেটা ছিলো সুখের কান্না।
,
ইমন হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
বাসর ঘরের নিয়ম গুলো তাঁর সদ্য বিবাহ করা ষোল বছর বয়সী কিশোরী বউ কিনা তাঁকে শেখাচ্ছে ভাবা যায়।
হালকা কেশে ওঠলো ইমন।
মুসকান ঘোমটা খুলে দ্রুত টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে ইমনের সামনে দিলো।
ইমন পানিটা খেয়ে গ্লাস টা নিজেই রেখে গম্ভীর ভাবে বললো যাও শাড়ী পাল্টে নাও।
–নিয়মগুলো পালন না করলে অমঙ্গল হবে তো বলেই মুখ ভাড় করলো।
ইমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিলো।
মুসকান মাথাটা নিচু করে ফেললো। মুখটাও ভাড় হলো ভীষণ তাঁর জামাকাপড় গুলো ইয়ানা রেখে গেছিলো সেখান থেকেই হালকা গোলাপি রঙের সেলোয়ারটা নিয়ে বাথরুম চলে গেলো।
ইমন স্বস্তির এক শ্বাস নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেবে অমনি বাথরুম থেকে হালকা আর্তনাদ এলো।
ইমন খানিকটা ভয় পেয়েই ওঠে বসলো।
কি হলো না হলো কিছু না ভেবেই দ্রুত বাথরুমের সামনে গিয়ে নক করলো।
মুসকান দরজা না খোলায় কঠিন স্বরে খুলতে বলতেই দরজা খুলে যায়।
মুসকান অপরাধীর মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
ইমন ভ্রু কুঁচকে বললো কি হয়েছে।
মুসকান আমতা আমতা করে বললো ইয়ানা আপুকে একটু দরকার।
–কি দরকার আমায় বলো রাত কটা বাজে খেয়াল আছে ওদের ডাকাটা এখন বেমানান।
মুসকান ভয়ে চুপ করে রইলো।
ইমনের ব্যাপারটা স্বাভাবিক লাগলো না।
–স্টুপিডের মতো এখানে হা করে দাঁড়িয়ে না থেকে কিছু লাগলে বলো নয়তো কাপড় পাল্টে ঘুমাতে আসো।
বলেই নিচের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো কয়েকটা সেপ্টিপিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সাদা টাইসের ওপর পানির সাথে তরল কিছু মিশ্রিত হচ্ছে লাল রঙের।
ইমন ভ্রু কুঁচকে মুসকানের দিকে তাকালো।
চোখ দুটো টলমল, মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে ঠিক নেই।
ইমনের ভীষণ রাগ হলো। মুসকানের মতো মুগ্ধতা, স্নিগ্ধতা, নির্মলতা,নমনীয়তা ভরা মেয়ে, মানবী যেমন দুনিয়া তে আর দুটো দেখেনি তেমনি তাঁর মতো বোকা,গাধীও আর দুটো দেখেনি।
–নিশ্চয়ই কিছু ঘটিয়েছে মুখ ফুটে বলবে এই সেন্সটুকু আল্লাহ একে দেয় নি।
দাঁতে দাঁত চেপে বললো কি হয়েছে, কি ঘটিয়েছো আমাকে বলো নয়তো তোমাকে কি করবো আজকে ভেবেও পাবেনা বলো।
ধমক খেয়ে গড় গড় করে বললো আঁচল টা আটকে আছে খুলছে না।
ইমন এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো।
কাঁধে ধরে পিছন ঘুরাতেই চমকে গেলো ইমন।
রিক্তা কয় ধমক খাবে কাল তা ঠিক করাই ছিলো কিন্তু এই মেয়েকে আজ শায়েস্তা করেই ছাড়বো বিরবির করতে করতে পিনটা একটান দিতেই মুসকান আহ করে ওঠলো।
আরো কয়েকফোঁটা রক্ত ছিটকে পড়লো কিছুটা ইমনের হাতে।
চোখ দিয়ে কয়েকফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
ইমন হাতটা পানিতে ধুয়ে কিছুটা পানি মুসকানের পিঠে দিলো। মুসকান ঠান্ডায় শিউরে গেলো হালকা কাঁপছে সে।
পিনটা যে জায়গায় ঢুকেছিলো ইমন সেখানে আঙুল ছুয়াতেই মুসকান সরে গেলো।
ইমন রক্তচক্ষু তে চেয়ে দুকাধে বেশ শক্ত করে চেপে ধরলো।
–অনুভূতি নেই? এই শরীর কি দিয়ে তৈরী? হাত কেটে গেছে,শরীরে পিন ঢুকে গেছে। এতে কিচ্ছু জায় আসেনা?বলতে অবদি পারো না এই বোবা তুমি??
ইমনের চিৎকারে চারদেয়াল যেনো কেঁপে ওঠলো সেইসাথে মুসকানের হাত পা কাঁপতে শুরু করলো।
কি হলো কথা বলতে পারো না? কাজের বেলায় হাত চলে এমনিতে কথা বলার বেলায় মুখ চলে নিজের দরকারে কেনো এই মুখ চলে না? কোথাও আঘাত পেলে কেনো মুখ ফুটে বলো না সমস্যা কি?
আমি কোন রোবট নিয়ন্ত্রণ করছি না, আর না কোন পুতুলের সাথে বসবাস করছি যার নিজের শরীরে আঘাত হলে বিন্দু মাএ জায় আসবে না।
এই কথা বলো??
মুসকান এবার প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো ইমনের হুংকারে। কি বলবে সে তাও বুঝতে পারছে না।
সে তো এমনি ছোটবেলা থেকে অনেক দুঃখ, কষ্ট সয়েছে কোথাও ব্যাথা পেলে কাউকে বলতে পারেনি। বাবা বাড়ি থাকতো না সৎ মা কে বললে সে এসবে গুরুত্ব দিতো না। ব্যাথা পেলে সয়ে নিতো নীরবে কাঁদতো এটুকুই। সেই অভ্যাসেই যে অভ্যস্ত সে। এখন হয়তো অনেকেই তাঁর ব্যাথার দাম দেবে।
কিন্তু বলতে ইচ্ছে করে না তাঁর নিজের ব্যাথা একান্তই নিজের করে রাখতে চায় সে।
ইমন আজকের দিনে এমন বিহেইভ করতে না চাইলেও নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
আরো কিছু বলতে যাবে তখনি থেমে গেলো।
আর কিছু বললো না। মুসকানের ভয়ে কাপুনি, চোখের পানি দেখার বিন্দু ইচ্ছে এখন তাঁর নেই।
আর না তাঁকে বকতে ইচ্ছে করছে।
নিজের মতো আর যে কয়টা পিন ছিলো খুজে বের করে করে খুলে শাড়িটা খুলে ফেললো।
মুসকান এবার লজ্জায় শেষ,ভয় টা তাঁর মূহুর্তেই হাওয়া হয়ে গেলো। বুকের ভিতর যেনো তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো তীব্র মাএায়।
ইমনের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সে শাড়িটা নিচে ফেলে মুসকানকে পিছন ঘুরিয়ে ব্লাউজের ফিতায় টান দিলো। মূহুর্তেই মুসকান শিউরে উঠলো।
মুসকানের উন্মুক্ত পিঠের তীলটা ইমন দেখেও না দেখার ভান করে বুঝেও না বুঝার ভান করে গম্ভীর গলায় বললো এবার কাপড়টা পাল্টে নাও নেক্সট কখনো শাড়ি পড়বেনা। যেদিনে শাড়ি পড়া শিখবে,যেদিনে শাড়ি খুলতে গিয়ে পিন নিজের শরীরে না ঢোকাবে সেদিন শাড়ি পড়বে তাঁর আগে না বলেই বেরিয়ে গেলো।
কাপড় পাল্টে বেরুতেই দেখলো ইমন রেডি হচ্ছে।
মুসকান কে দেখেই বললো তুমি ঘুমাও আমার খুব জরুরি কাজ পড়ে গেছে এখুনি বেরুতে হবে।
মুসকান অবাক হয়ে বললো এতো রাতে কোথায় যাচ্ছেন আপনি??
ইমন মুসকানের মুখের দিকে তাকাতেই মুসকান মাথা নিচু করে ফেললো।
–না মানে এতো রাতে তো কোথায়ও বের হন না তাই আর কি।
–তুমি ঘুমাও একঘন্টার মধ্যেই এসে পড়বো নো টেনশন।
ইমন বেরুতেই মুসকান পিছন পিছন বের হলো ইমন থেমে গিয়ে বললো রাত অনেক হয়েছে রুম ছেড়ে এক পা নড়বে না মুসকান বাড়িতে আজ অনেক মানুষ। আমি বের হওয়ার পর একা রুমে আসতে হবে সো না বের হওয়াটাই ব্যাটার যাও রুমে যাও ভিতর থেকে আটকে দাও।
ইমন কল্পনাও করতে পারেনি আজকে তাঁর বের হতে হবে। এমন একটা নিউজ তাঁর কানে আসবে বেশ তারাহুরোয় ড্রাইভ করে থানায় এলো ইমন।
পুলিশের সাথে কথা বলে সব ঠিকঠাক করে নিয়ে কয়েকজনকে ফোন করেই আবার বেরিয়ে পড়লো।
রাত চারটা বাজে দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে।
মুসকান হয়তো ঘুমিয়ে গেছে বা আমার টেনশনে ঘুমাতেই পারেনি সারাদিনের ক্লান্তিটা কারোই দূর করা হলো না।
নানারকম চিন্তা মাথায় নিয়ে ড্রাইভ করছে ইমন।
এমন সময় তাঁর ফোন বেজে ওঠলো ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে ওঠলো নো টেনশন বস।
আপনার কাজ হয়ে গেছে।
ইমন মুচকি হেসে বললো ওয়েল ডান।
খুশির মাএা এতোটাই বেশী ছিলো যে গাড়ি মেইন রাস্তা ছেড়ে সাইট রাস্তায় চলতে শুরু করেছে।
এক পর্যায়ে বিরাট বড় গাছের সাথে গাড়ি বাজতেই বিকট এক শব্দ হলো।
সবে চোখ বুজেছে পাঁচটা অবদি অপেক্ষা করার পর আর জেগে থাকতে পারলো না মুসকান।
ঘুমের রাজ্যে পারি দিতে না দিতেই বেশ আওয়াজ ভেসে এলো কানে। সেই সাথে অস্বাভাবিক ভাবে দরজায় শব্দ হতে লাগলো।
মুসকান ভয়ে ধড়ফড়িয়ে ওঠে বসলো।
প্রথমে ভাবলো সে ঘুমিয়ে যাওয়ায় ইমন রেগে দরজা ধাক্কাচ্ছে।
ইশ কি ভুল টাই না হলো। এখন ওনার ধমক কয়টা খাবি কল্পনাও করতে পারবিনা মনে মনে নিজেকে ভয় দেখিয়ে বিছানা ছেড়ে নামতেই বুঝতে পারলো ইমন নয় দাদী আর ইয়ানা ডাকছে।
দাদীর অস্বাভাবিক আওয়াজ বোধ হয় কাঁদছে।
কিন্তু কাঁদছে কেনো??
বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠলো মুসকানের।
ছুটে গিয়ে দরজা খুলতেই দাদী মুসকানকে জরিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
পরক্ষনেই বেশ ধমকাতে শুরু করলো।
কেনো যেতে দিলি, কেনো দাদু ভাইকে যেতে দিলি।
বাসর ঘরে কেউ বরকে ছাড়ে। কতোবড় অঘটন টাই না ঘটালি তোরা মিলে।
তোকে না বলেছিলাম দাদু ভাইকে বেঁধে রাখতে।
নিজের স্বামীকে ধরে রাখতে পারিসনা বলেই তো এতো বড় দূর্ঘটনা ঘটলো বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
চলবে…..
হৃদপিন্ড
জান্নাতুল নাঈমা
পর্ব-২৩
তোকে না বলেছিলাম দাদু ভাইকে বেঁধে রাখতে।
নিজের স্বামীকে ধরে রাখতে পারিসনা বলেই তো এতো বড় দূর্ঘটনা ঘটলো বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
ইয়ানা বললো দাদী চুপ থাকো আমাদের এখুনি হসপিটালে যেতে হবে। দাদাভাইয়ের বন্ধু রা গেছে রিক্তা আপু গাড়িতে ওয়েট করছে তারাতারি চলো।
মুসকান চলো,,,
মুসকানের চোখ দুটো লাল হয়ে এলো।
কানে ঝিঝি ধরে গেলো, বুকের ভিতর কেউ যেনো কামড়ে ধরেছে বহু কষ্টে বললো ওনি কোথায়,,,
ওনি ঠিক আছে তো?
দাদী মুসকান কে জরিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো- ঠিক নাই আমার দাদু ভাই ঠিক নাই।
মুসকান এই প্রথম চিৎকার করে ওঠলো।
না,,,ওনি ঠিক আছে একদম ঠিক আছে। বলেই দাদীকে ছাড়িয়ে দিলো।
ইয়ানা বললো মুসকান আমাদের যেতে হবে চলো?
মুসকান ইয়ানার দিকে চেয়ে বললো কোথায় যাবো, ওনি কোথায়?
–দাদা ভাই হসপিটালে, এক্সিডেন্ট হয়েছে তারাতারি চলো।
মুসকানের চোখ বেয়ে পানি ঝড়তে শুরু করলো।
দাদী, ইয়ানাকে রেখেই সে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।
ইয়ানাও দাদীকে নিয়ে বেরুলো।
,
কেবিনে ঢুকতেই মুসকান ফুপিয়ে কেঁদে ওঠলো।
ইমনের চোখ দুটো বন্ধ মাথায় ব্যান্ডেজ করা, এক হাতে ব্যান্ডেজ,পায়ের গোড়ালিতে ব্যান্ডেজ।
বিয়ের রাতে এতো বড় দূর্ঘটনা ঘটে যাবে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
একরামুল চৌধুরী সহ সাজিয়া বেগম ও মুসকান কে দোষারোপ করতে শুরু করলো। মুসকানের সেদিকে কোন খেয়াল নেই।
সাজিয়া বেগম মুসকান কে কিছু কথা শুনাতে যেতে নিতেই রিক্তা বললো –আন্টি প্লিজ হসপিটালে কোন সিনক্রিয়েট করবেন না।
–কি আমি সিনক্রিয়েট করছি, কি বলতে চাচ্ছো তুমি।
–আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না জাস্ট আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি ইমন চৌধুরী কে আটকে রাখার বা বাধ্য করে রাখার ক্ষমতা তাঁর জন্মদাতারই নেই সেখানে এই পিচ্চি মেয়েটা কি করে ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখবে। আমি মনে করি মুসকানের এখানে কোন দোষ নেই এটুকুই বোঝাতে চাইছি আপনাকে।
–বিয়ে করার সময় মনে ছিলো না এটা কিসের পিচ্চি এসব মেয়েকে হারে হারে চেনা আছে।
–দেখুন ইমন কেনো বেরিয়েছিলো, কি এমন কাজ ছিলো ওর থেকে পড়ে শোনা যাবে। আপনি এমন কিছু করবেন না যাতে এই অবস্থায় ইমন হাইপার হয়ে যায়।
সাজিয়া আর কিছু বললো না সে খুব ভালো করেই ইমনের বন্ধু দের বিষয়ে জানে।
যেমন ছেলে তেমনি তাঁর বন্ধু অসহ্য। এই মেয়েকে তো আমি পড়ে দেখে নেবো। আমার বাড়ির বউ হওয়ার শখ যদি না মিটিয়েছি আমার নাম সাজিয়া না।মনে মনে বেশ বকে সরে গেলো সাজিয়া।
দাদী মোড়ায় বসে আছে মুসকান একপাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে আজ তাঁর বড্ড অসহায় লাগছে। বুকের ভিতর প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।
যেমনটা তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর হয়েছিলো আজ যেনো তাঁর থেকেও দ্বিগুন ব্যাথা হচ্ছে বুকে।
মানুষ টাকে এই অবস্থায়,দেখবে তা তাঁর কল্পনার বাহিরে ছিলো। বুক চেপে কান্না আসছে তাঁর ইচ্ছে হচ্ছে ছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরে বলতে আপনার কষ্ট হচ্ছে,,,কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলুন,,,
আপনার এই অবস্থা কি করে হলো,একটু সাবধান হবেন তো,,,আপনি জানেন না এই পৃথিবীতে আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই, আপনার কিছু হলে আমার কি হবে একবারো ভেবেছেন।
ডুকরে কেঁদে ওঠলো মুসকান ইয়ানা গিয়ে মুসকানকে জরিয়ে ধরলো।
সায়রী, দিহান,অভ্র এসেছে সবাই কেবিনের বাইরে ভিতরে শুধু সায়রী আর মুসকান।
ইমন ঝাপসা চোখে মুসকান কে একনজর দেখলো।
সায়রী বললো –ইমন কেমন লাগছে এখন। কিছু লাগবে,খারাপ লাগছে??
ইমন খুব কষ্ট করে ভারী নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে এক হাত একটু উচিয়ে আঙুল মুসকানের দিকে তাক করে বললো — ওওকে কাঁদতে নিষেধ কর সায়ুরী,,,
আমি মরে যাই নি তো,আমি জীবিত আছি ও কাঁদছে কেনো এইভাবে,আমার এইখানে ব্যাথা লাগছে বলেই বুকের বা পাশে ইশারা করলো।
সায়রী চোখ বড় বড় করে ফেললো।
মুসকান যেনো বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেলো।
বুকের ভিতর যে যন্ত্রনাটা হচ্ছিল তা যেনো নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। স্পন্দন বেড়ে গেলো তীব্র মাএায়।
হাত পা,খানিকটা কাঁপতে শুরু করলো।
ইমন আরো কি সব বললো বির বির করে কিছু বুঝতে পারলো না শুধু এইটুকু বুঝলো।
–আমি ওর জন্যই বেরিয়েছিলাম। নতুন জীবন শুরু করার আগে সমস্ত তিক্ত অতীতটা মুছে ফেলেছি আমি। ওকে কাঁদতে নিষেধ কর সায়রী,,, ওকে নিষেধ কর।
“ও আমার সবটাতে মিশে গেছে সায়রী”
“ও আমার কল্পনাতে,বাস্তবে সবটাতে বিরাজ করছে”
“ও আমার হৃদপিণ্ডে অবস্থান করছে”
ওকে কাঁদতে নিষেধ কর।
,
পুরো সাতদিন ঘুম,খাওয়া ভুলে গিয়ে হসপিটালে থেকেছে মুসকান। দিন রাত এক করে সেবা করছে রাত হলে তাঁর পাশে বসেই কিছু সময় ঘুমিয়ে নিয়েছে। সাতদিব পর রিলিজ করলেও পুরো ১মাস বেড রেষ্টে থাকতে হবে ইমনকে।
একরামুল চৌধুরী ইমনের বাসায় না পাঠিয়ে তাঁদের বাড়ি নিয়ে গেলো। ইমন ও আপত্তি করলো না।
ইমন, মুসকানের যাবতীয় প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপএ একরামুল চৌধুরী ও বাড়ি থেকে তাঁর বাড়ি শিফট করলো।
,
প্রায় আটদিন হয়ে গেছে গোসল করেনি ইমন।
দাদীর কথা অনুযায়ী ছোট বালতিতে পানি নিয়ে মেঝেতে রেখে তয়ালে ভিজালো মুসকান। ইমন চোখ বুজে শুয়ে ছিলো মুসকান এক হাত ইমনের কাঁধে রেখে বললো”আপনি জেগে আছেন??দাদী বললো ভেজা তয়ালে দিয়ে শরীর মুছে দিতে আমি শার্ট টা খুলে দেই ”
ইমন চোখ খুলে তাকালো, মুসকানের মুখের দিক কিছুক্ষন চেয়ে রইলো শান্ত গলায় বললো “তোমার ওপর বেশ ধকল যাচ্ছে পড়াশোনাও হচ্ছে না,কষ্ট হচ্ছে ভীষণ তাইনা ”
মুসকান মৃদু হেসে বললো “নাহ আপনার সুস্থতার জন্য এইটুকু ধকল কিছুই না তাছাড়া বাবা তো নার্স রেখেছিলো আমিই না করে দিয়েছি বলতে বলতে শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো।
লোমশ ভরা বুকটা দেখে কেমন একটা অনুভূতি হলো তাঁর বড্ড অচেনা বেশ লজ্জাও লাগছিলো, লজ্জাটাকে গুরুত্ব না দিয়ে কাজে মন দিলো।
ইমন শুধু মুগ্ধ হয়েই চেয়ে থাকে মুসকানের দিকে।
মন থেকে চাইলে মনুষ সব পারে মুসকান মন থেকে চায় বলেই ইমনের মতো মানুষ কে সামলাতে পারে।
এই বয়সেই সে যেভাবে সব দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে তা সত্যি অবাক করার বিষয়।
তয়ালে দিয়ে শরীর মুছে এক হাতে ইমনের মাথাটা,তোলার চেষ্টা করলো।
ইমন বাঁকা হেসে নিজেই মাথা তুললো মুসকান এক হাতে মাথায় ধরে আরেক হাতে পিঠে মুছে দিতে লাগলো।
ইমনের মুখটা ঠেকলো মুসকানের কাঁধে।
দুজনের হৃদস্পন্দনই সমান গতিতে স্পন্দিত হচ্ছে।
মুসকানের হাতের কাঁপুনিও অনুভব করছে ইমন।
মুসকান সোজা হয়ে ইমনকে শুইয়িয়ে একটু ঝুঁকে তয়ালেটা ইমনের মুখের কাছে আনতেই ইমন মুসকানের মুখের দিকে গভীর দৃষ্টি তে চেয়ে রইলো।
একটু অস্বস্তি হলেও তাঁকে পাত্তা না দিয়ে চট করে মুখটা মুছে দিয়ে কাবার্ড থেকে টি শার্ট বের করে পড়িয়ে দিতে লাগলো।
ইমন কিছু বলছে না শুধু তাঁর সহধর্মিণীর সেবা,যত্ন টা হৃদয় দিয়ে অনুভব করছে।
নিজের হাতে খাওয়িয়ে দেওয়া, পোশাক পাল্টে দেওয়া বাথরুম নিয়ে যাওয়া সব মুসকান একা হাতেই করছে। কাজের লোকের অভাব নেই তবুও মুসকান তাঁর স্বামীর দায়িত্ব নিজেই নিয়েছে সঠিক ভাবে পালন ও করছে। একটু কষ্ট হচ্ছে যা মুসকান বুঝতে না দিলেও ইমন ঠিক বুঝে নিচ্ছে।
তাঁকে ওঠাতে নামাতে গিয়ে কতোবার যে নিজেই পড়ে গেছে হিসেবের বাইরে। তবুও দুজন মিলেই নিজেদের সমস্যা সমাধান করছে।
বসা থেকে যতোবার ইমনকে শোয়াতে গিয়েছে ততোবারই নিজেই ইমনের নিচে পড়ে গেছে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করাটা মুসকানের জন্য খুবই কষ্টকর হলেও ইমন সাহায্য করেছে এতে তাঁরও কষ্ট হয়েছে এর মাঝে একবার হাতের ব্যান্ডেজ থেকে ব্লিডিংও হয়েছে। রক্ত দেখে মুসকানের সে কি কান্না ডক্টর এসে নতুন করে ব্যন্ডেজ করার পরই মুসকান শান্ত হয়েছে।
প্রায় দুমাস পর ইমন পুরোপুরি সুস্থ হয়। অফিস জয়েন করার আগে মুসকান কে কলেজ ভর্তি করিয়ে নেয়। দাদীর জোরাজোরিতে ও বাড়ি ফিরে যায়নি ইমন৷ এছাড়া সায়রীও এখন শশুর বাড়ি মুসকান একা থাকবে, এ বাড়ি থাকলে দাদী,ইয়ানার সাথে সময় কাটাতে পারবে সেই ভেবে আর ও বাড়ি তে যায়নি।
,
মুসকানের মনটা বড্ড খারাপ।অসুস্থতার জন্য দুমাস ইমন কোথাও যায় নি সারাদিন তাঁর সাথে সাথে থেকেই তাঁর সময়টা দিব্যি ভালো কেটে গেছে।
ইদানীং সময়ই কাটে না, দাদীর সাথে গল্প করতে বসলেই দাদী শুধু স্বামীস্ত্রীর প্রেম ভালোবাসার বিবরন দেয় যা শুনে তাঁর মন দ্বিগুণ খারাপ হয়ে যায়। এছাড়াও দাদী কিসব বলে আগে লজ্জা লাগলেও এখন বড্ড খারাপ লাগে তাঁর। কারন ইমন তো তাকে একটু ছুঁয়েও দেখে না । বিয়ের আগে যতোটুকু কাছে এসেছে বিয়ের পর একেবারেই আসেনা। সারাক্ষন কাজে ব্যাস্ত থাকে। ইয়ানা পড়াশোনা নিয়ে বড্ড ব্যাস্ত বিকেলে একটু সময় কাটায়। বান্ধবী গুলাও বড্ড শয়তান ছলে বলে কৌশলে শুধু ভিতরের খবড় জানতে চায়।
মুসকান ওদের বোঝাতেই পারে না তাঁর আর তাঁর স্বামীর মাঝে ওরকম কোন সম্পর্কই গড়ে ওঠেনি।
তাঁরা আগেও যেমন ছিলো এখনো তেমনই আছে পার্থক্য এটাই আগে তাঁরা একঘরে থাকতো না এখন একি ঘরে রাত কাটায়।
সেদিনের কথা ভাবতেই চোখে পানি চলে এলো মুসকানের।
তাঁর বান্ধবী পপির বিয়ে হওয়ার চারদিনের মাথায় কলেজে এসেছে। বাবা সে কি লজ্জা সব বান্ধবী রা চেপে ধরায় বিয়ের আগের দিন থেকে শুরু করে চারদিনে ঘটে যাওয়া সব বললো। তাঁর স্বামী তাঁকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝেনা তাঁকে এতো আদর করে এই সেই শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেলো।
তাঁর থেকে সব শুনে মুসকান মনটা ভীষণ খারাপ করে বসে ছিলো তখনি আরেকজন এসে বললো কিরে মুসকান তুই তো এসবের কিছুই বললি না।
তখনি আর একটা মেয়ে বলে ওঠলো ও বলবে কি রে ও তো বিয়ে করেছে এক বুড়ো কে বলেই মুখ চিপে হাসলো। তাঁদের মধ্যে একজন বললো এই বুড়ো বলছিস কেনো ইমন ভাইয়া তো সেই হ্যান্ডসাম জানিস ওনি আমার বড় আপুর ক্রাশ ছিলো।
এখনো কতো মেয়ে ওনার জন্য পাগল।
–ওও তাই বুঝি মুসকানের দিকে তাঁর নজর নেই তাই তো মুসকান স্বামীর ব্যাপারে সেভাবে কিছুই বলতেই পারে না।
সকলেই হোহো করে হেসে ওঠলো।
ইমন কে বুড়ো বলায় মুসকানের এত্তো রাগ হলো যে কিছু বলতে যাবে অমনি তন্নি এসে মুসকান কে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।
চোখের কোনে বিন্দু জল আসতেই তারাতারি মুছে ফেললো।
,
তন্নি এসেছে কিছু নোটস দিতে।
মুসকান তন্নি কে বসিয়ে হালকা নাস্তা করতে নিচে গেছে। তন্নি একা একা বসে ছিলো এমন সময় অভ্রু হনহন করে রুমে ঢুকেই তন্নির গলা চেপে ধরলো।
এই ফোন ধরসিস না কেনো, তুই আমাকে ব্লক করেছিস সাহস দেখে অবাক হয়ে যাই আমি।
তন্নি জোর খাটিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে ভয়ে এক ঢোক গিলে বললো অভ্র ভাইয়া আমাকে তুমি মেরে ফেলবে নাকি,,,
অভ্র তন্নির অনেকটা কাছে গিয়ে দুকাধে শক্ত করে চেপে বললো দেখ তন্নি আমার মাথা খারাপ করবি না। তোকে আমি ভালোবাসি তুই সেটা জানার পর থেকেই আমাকে ইগনোর করে যাচ্ছিস। তুই কি ভেবেছিস আমি তোকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবো।
তন্নি অভ্রর এই সিরিয়াস মুডটা দেখে বেশ ঘাবড়ে গেলো। সে তো জানতো অভ্র তাঁর শত্রু যে কিনা কোনদিন তাঁকে স্বস্তি দেয়নি কোন না কোন ভাবে অপমান, জ্বালাতন করেই গেছে এছাড়াও তাঁর গার্লফ্রেন্ডেরও অভাব নেই। তাহলে হঠাৎ তাঁর জন্য ভালোবাসা উদয় হওয়ার মানে কি??
–অভ্র ভাইয়া ছাড়ো কেউ দেখে নেবে।
–দেখুক তাতে আমার জায় আসেনা। তুই আমাকে কেনো ব্লক করলি আর ব্লক করে আমারি বাড়িতে ধেই ধেই করে আসবি আর আমি হাতগুটিয়ে বসে থাকবো৷ দেখ তোকে আমি ভালোবাসি, হ্যাঁ ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি। বুঝেসিস এ ব্যাপারে দিহান ভাইয়ের সাথে কথাও বলবো শুধু তুই ছোট বলে অপেক্ষা করছি। নয়তো তোর বাউন্ডোলেপানা আমি অনেক আগেই বের করতাম।
তন্নি হা হয়ে গেলো এ সে কাকে দেখছে,এ সে কি শুনছে এই বাঁদর টা তাহলে সত্যি তাঁকে ভালোবাসে।
–তাহলে তোমার গার্লফ্রেন্ড গুলোকে ভালোবাসোনা?
–হুম বাসি কিন্তু তুই আর ওরা আলাদা।
–তন্নি নিচের ঠোঁট টা ফুলিয়ে বললো কিভাবে আলাদা।
অভ্র এক সেকেন্ড ও সময় নিলো না নিজের ঠোঁট জোরা দিয়ে তন্নির ঠোঁট জোরা আঁকড়ে ধরলো।
তন্নি মৃদু আওয়াজ করে হাত দিয়ে মারতে শুরু করলো।
এক পা এক পা করে পিছুতে যেতে যেতে দেয়ালে ঠেকে গেলো।
অভ্র তন্নিকে এবার তাঁর ভালোবাসা বুঝানোর জন্য নিজের সাথে গভীরভাবে জরিয়ে চুমু খেতে লাগলো।
এই দৃশ্য মুসকানের চোখে পড়তেই তাঁর হাতে থাকা খাবাড়গুলো সমানে কাঁপতে শুরু করলো। ভয়ে এক ঢোক গিলে চলো গেলো সে।
,
ইমন ফিরলো রাত এগারোটার দিকে মুসকান ড্রয়িং রুমে বসেই পড়ছিলো। অভ্র সাথেই ছিলো ইমন ফিরতেই অভ্রকে মুসকানের পাশে দেখে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
মুসকান খাবাড় বেড়ে ইমনকে ডাকতে গেলো ইমন গম্ভীর গলায় বললো সে খাবে না। তবুও মুসকান খাবাড় নিয়ে উপরে চলে এলো খাবাড় বেড়ে টেবিলে রেখে ইমনকে যেই ডাকলো অমনি এতো জোরে এক ধমক দিলো যে ভিতরের আওয়াজ বাইরে অবধি পৌঁছে গেলো।
এই আওয়াজে
প্রত্যেকটা লোক ভয়ে কেঁপে ওঠলো শুধু সাজিয়া ছাড়া। কারন যে বিষ সে ঢেলেছে তাঁর কার্যকারিতা অলরেডি শুরু হয়ে গেছে।
প্রতিদিন রাতে মুসকান পড়াশোনা করে ড্রয়িং রুমে।
সেই সাথে ইমনের জন্য অপেক্ষায়ও থাকে।
মাঝে মাঝে অভ্রও এসে সময় দেয়,তন্নির সাথে ফোনে কথা বলে। আর এই সুযোগ টাই সাজিয়া বেগম নিয়েছে।
সে খুব ভালো করেই জানে ইমনের দূর্বলতার জায়গাটা, ভয়ের জায়গাটা।
সেদিন শপিংয়ে গিয়েছিলো সাজিয়া সেখান থেকেই ফেরার সময় অফিস যায়।
–দেখো বাবা এখন আমার আর কোন রাগ নেই ঐ মেয়ের ওপর কিন্তু বাবা মনে রেখো আমি একজন মেয়ে। মেয়ে হয়ে আরেকজন মেয়ের মনে কি চলছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারি। বাবা তুমি ভুলে যেওনা তোমার মা কিন্তু এক ছেলে সহ তাঁর স্বামী কে ঠকিয়েছে। পরকিয়া করেছে পঁচিশ, ছাব্বিশ বছর বয়সি একটা মেয়ে যদি এমন কাজ করতে পারে।
তাহলে ওর মতো বাচ্চা মেয়ের মনেও তো কুচিন্তা আসতে পারে।
ইমন কঠোর চোখে তাকাতেই সাজিয়া আবারো নিচু স্বরে বললো।
–কি আর বলবো মেয়েটা সবসময় আফসোসে থাকে মন মরা থাকে। সেদিন তোমার দাদীকে তো বললো তুমি নাকি এক বিছানায় ঘুমালেও অনেক দূরত্ব বজায় রাখো। মেয়েটাকে দেখেই বোঝা যায় মনে কি চলছে। আসলে দোষ তো ওর না দোষ টা বয়সের বুঝলা। কম বয়সি মেয়ে বিয়ে করলে এই এক সমস্যা। মতের মিল হয় না, বোঝাপড়ার অভাব।
কদিন ধরেই দেখি অভ্রর সাথে বেশ ঘেষে থাকে।
তুমিই বলো অভ্র কোনদিন কফি খেতো?? আজ সেই অভ্র কিনা প্রতিদিন রাতে মুসকানের সাথে কফি আড্ডা দেয়। ছেলেটারই বা কি দোষ বলো ছেলেটা না গেলেও মুসকান নিজেই ওর রুমে যায় ডেকে আনে। কি একটা অবস্থা বলো তোমার বাবাও তো বড় টেনশনে আছে তোমার মায়ের মতো যদি এই মেয়েও একি পথে চলে তাহলে পরিবারের মান সম্মান তো ধূলোয় মিশে যাবে।
বড় টেনশনে আছি গো আমি বলি কি তুমি মেয়েটাকে একটু বুঝিও কম বয়স, অবুঝ মন বুঝালেই হয়তো বুঝবে উঠতি যৌবন বুঝোই তো।
ইমনের প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল মনে হচ্ছিল মহিলাটাকে ঘার ধরে বের করে দিতে। নিজেকে সংযত রেখে শুধু বললো –বেড়িয়ে যান, জাষ্ট লিভ মি।
,
বলছিতো খাবো না কথা কানে যায় না। কি মনে করো তুমি নিজেকে তোমার কথায় ওঠতে হবে, তোমার কথায় বসতে হবে খাবো না আমি।
দুকাধে চেপে ধরে কথা গুলো বলেই ছুঁড়ে ফেললো।
মুসকান গিয়ে মেঝেতে পড়ে গেলো।
ভয়ে একদম গুটিশুটি মেরে গেলো। কাঁপতে থাকলো সে চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি ঝড়তে লাগলো।
দরজা খোলা ছিলো বিধায় অভ্র রুমে ঢুকতেই মুসকান কে নিচে দেখে দৌড়ে গিয়ে ওঠিয়ে বললো –একি মুসকান নিচে পড়লে কি করে।
ইমনের যেনো পায়ের রক্ত মাথায় ওঠে গেলো এবার।
রক্তচক্ষু তে অভ্রর দিকে চাইলো, ভয়ে মুসকানের হেচকি ওঠে গেলো।
চিৎকার করে বললো–এই মুসকান কি, নাম ধরে কেনো ডাকিস, ভাবী বলতে পারিস না??
অভ্র হকচকিয়ে গেলো ইমনের এমন রাগ দেখে।
আজ নতুন দেখছেনা তাই খুব একটা ঘাবরালো না।
–সরি ব্রো,,,
মুসকানের দিকে একবার ইমনের দিকে একবার চেয়ে বেরিয়ে গেলো অভ্র।
মুসকান ভয়ে কেঁপেই চলেছে। অভ্র বেরুতেই ইমন গিয়ে ঠাশ করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
ভয়ংকর দৃষ্টি তে মুসকানের দিকে চেয়ে চিৎকার করে বললো দাদীর কাছে কি বলেছো তুমি।
মুসকান আবারো কেঁপে ওঠলো। এমন নীরব কান্নায় যেনো তাঁর রাগ তরতর করে বেড়েই চলেছে কয়েকপা এগিয়ে আবারো দুকাধে চেপে ধরলো।
–তোমায় আমি বলেছিলাম সময় নিতে, বলিনি?
তোমায় আমি বলেছিলাম নিজেকে মানসিক ভাবে, শারিরিক ভাবে প্রিপেয়ার করতে আর তুমি ছিঃ,,,
এই তোমরা মেয়েরা কি সবাই এক।
যেই তোমাকে এতোগুলো দিন ধরে সবার থেকে আলাদা ভেবে আসলাম সেই তুমিও ছিঃ।
বয়স কতো তোমার?? ইমন চৌধুরী অমানুষ নয়।
ইমন চৌধুরী মানুষ। আমি তোমাকে এই শরীরের জন্য বিয়ে করিনি,আমি তোমাকে নিজের শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিয়ে করিনি। তোমাকে সুন্দর, সুগঠিত জীবন দিতে চেয়েছি নিজেও একটা সুন্দর সুগঠিত জবন উপভোগ করতে চেয়েছি।
যেই তোমাকে এতোটা ধৈর্যশীল ভাবতাম সেই তুমি আজ এতোটা অধৈর্য হয়ে পড়লে ছিঃ।
এবার মুসকান চুপ করে থাকতে পারলো না। কি করে পারবে সে তাঁর জীবনের আদর্শবান মহাপুরুষ টা যে তাঁকে ভুল বুঝছে।
কাঁপা গলায় বললো –কি করেছি আমি?
ইমন চমকে গেলো কন্ঠটা শুনতেই মুখের দিকে তাকালো অঝস্র পানিতে ভরে আছে মুখটা।
তাঁর মুগ্ধময়ী কাঁদছে প্রচন্ড কাঁদছে শুধু তাঁর চোখ কাঁদছে না তাঁর বুকটাও চিৎকার করে কাঁদতে চাইছে।
আর কিছু না ভেবে ইমন শক্ত করে জাবটে ধরলো মুসকান কে।
মুসকান ও ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
ইমন সবটা আবারো ভাবতে লাগলো। সাজিয়ার কথা গুলো শুনে সিসি ক্যামেরায় অভ্রর সাথে একসাথে রোজ রোজ দেখে জেলাস ফিল থেকে মাথায় কিসব ঢুকে গিয়েছিলো।
পাগল পাগল লাগছিলো তাঁর কিন্তু এখন তো তেমটা লাগছে না। খানিকটা শান্ত হলো ইমন বেশ কিছুক্ষন পর মুসকান কে ছেড়ে দিয়ে বললো দাদীকে কি বলেছো, কদিন যাবৎ তুমি কেনো মন খারাপ করে থাকো। কি সমস্যা তোমার খুলে বলো আমায়।
মুসকান ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো।
কাঁপা গলায় বললো আমি দাদীকে কিছু বলিনি।
আপনি কেনো এমন করছেন??
–দাদীকে বলোনি আমি তোমার থেকে দূরত্বে থাকি।
মুসকান চমকে ওঠলো।
এই কথার জন্য এমন করলো ওনি ভাবতেই বুক ফেটে কান্না এলো।
ডান হাতের পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে হেচকি তুলতে তুলতেই বলতে লাগলো।
–দাদী শুধু আমাকে প্রশ্ন করে আপনি আমাকে ছুঁয়েছেন কিনা, আদর করেছেন কিনা তাই তো আমি বলেছি আপনি তো দূরে দূরেই থাকেন।
ইমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে বললো আর মন খারাপ থাকার কারন??
এবার যেনো কান্না আর বাঁধ মানলো না কাঁদতে কাঁদতেই বলতে লাগলো আমার বান্ধবী রা তাঁদের বরকে নিয়ে কতো গল্প করে, ওদের বর ওদের অনেক আদর করে, খুশির সময় জরিয়ে ধরে। চুমো খায় সকাল বিকাল।আরো কতোশতো গল্প আর আমাকে এসবে কিছু জিগ্যাস করলে আমি কিছুই বলতে পারিনা। বাসর ঘরে কি হয়েছে তাও বলতে পারিনা।
অভ্র ভাইয়া তন্নি কে সেদিন কতো আদর করলো চুমো খেলো। ওরা তো বিয়েও করেনি আর আমার বিয়ে হয়েছে তাও সেসব কিছুই পাইনা আপনার থেকে।
আমার সেসবেও কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু যখন সবাই বলে আপনার ওপর অনেক মেয়ে ক্রাশ খেয়েছে। আমার থেকে সুন্দরী, সুন্দরী মেয়েরা আপনার জন্য পাগল তখন আমার খুব কষ্ট হয়।
জানেন ওরা বলে আপনি নাকি সুন্দরী মেয়েদের থেকে ভালোবাসা পেয়ে আমাকে একসময় ভুলেই যাবেন। ওদের বর ওদের নিয়ে ঘুরতে যায়,ফুসকা খেতে যায়,কলেজ শেষে নিতে যায় আপনি এসব কিছুই করেন না কারন আপনি নাকি আমাকে ভালোইবাসেন না।আর জানেন কি বলে আমি কাজের লোক কাজের লোক ই আছি।
বউ শুধু দেখানোর জন্য, আর জানেন কি বলে এতোদিন অবৈধ রক্ষিতা ছিলাম এখন বৈধ রক্ষিতা হয়ে আছি আপনার। কথা গুলো বলতে বলতে মেঝেতে দম করে বসে পড়লো। হাঁটু তে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে বললো-
“আচ্ছা আমি কি এতোটাই বাজে দেখতে যে আমাকে একটু ছুঁয়া যায় না ”
আমি কি এতোটাই অযোগ্য যে আমাকে বউ হিসেবে কোথাও নিয়ে যেতে,আমার স্বামী হয়ে আমাকে কলেজ থেকে নিয়ে আসতে আপনার সম্মানে লাগে।
ওওও লাগেই তো সত্যি তো আমি ব্রাহ্মণ হয়ে চাঁদে হাত দিতে এসেছি, তাইতো চাঁদ আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে লোকে ঠিকি বলে।
সত্যি ওরাই ঠিক ওরাই ঠিক বলেই অস্বাভাবিক আওয়াজে কাঁদতে লাগলো।
–কতোটা যন্ত্রণা, কতোটা আঘাত পেলে একটা মেয়ে এইভাবে এসব কথা বলে কাঁদতে পারে।
সত্যি মেয়েটা বড় সহজসরল। যদি সহজসরলই না হতো এসব ভেবে বাইরের লোকের কথায় গুরুত্ব দিয়ে নিজে এতোটা কষ্ট পেতো না।
এতো বোকা কেনো তুমি মুসকান?
আর আমি ঐ মহিলার কথাটা মাথা এভাবে বিগরে ফেললাম কেনো। আমি তো জানি ওনি ঠিক কি স্বভাবের মানুষ।
মুসকানের প্রতি এতটাই দূর্বল হয়ে পড়েছি যে ওসব শুনে হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে গিয়েছিলো।
একিভাবে মুসকান ও তো দূর্বল ও তো আরো অনেক বেশী কথা শুনেছে। আমি যদি এই বয়সে এসে এতোটা অবুঝ হয়ে এমন আচরন করতে পারি ওর এইটুকু আচরণ তো তাহলে স্বাভাবিক।
আমার মনে শুধু একজন বিষ ঢেলেছে।
আর মুসকানের মনে একজন নয়, বন্ধু, বান্ধব সহ আরো অনেকেই কেউ কেউ অজান্তেই ওর মনে নেগেটিভ ভাবনা ঢুকিয়ে ফেলেছে।
ওহ গড,,, ওকে আমি কি করে বোঝাবো।
সব রাগ ঝেড়ে ফেলে নিজেকে শান্ত রেখে মুসকানের পাশে বসলো ইমন।
জানালার বাইরের চাঁদটার দিকে চেয়ে বললো–
“কারো মুগ্ধতায় আটকে গেলে অন্য কাউকে আর ভালো লাগে না। আমি যে আমার মুগ্ধময়ীর মুগ্ধতায় আটকে গেছি সেই কবেই”
তা কি আমার মুগ্ধময়ী জানে???
চলবে…….