গল্পের নাম:হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে,পর্বঃ১৯ বেচারা অভি

গল্পের নাম:হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে,পর্বঃ১৯ বেচারা অভি
নবনী নীলা

আমি অভিকে ডাকলাম,
” নওরীনের জামাই ও নওরীনের জামাই।”আমার ডাকে এবার অভী চমকালো না। সে বুঝতে পেরেছে এটা আমি।

অভী ফোন হাতে আমার দিকে এলো,” কি হয়েছে কিছু লাগবে?”প্রশ্ন করতেই আমি দরজার ওপাশ থেকে মুখ বের করে হা সূচক মাথা নেড়ে বললাম,” আমাকে আপনার একটা শার্ট আর ট্রাউজার দেন।”

অভী ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,” কেনো? আমার শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে তুমি কি করবে?”

এমনেই এনার উপর মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। আবার এতো প্রশ্ন, আমি বললাম,” আপনার শার্ট আর ট্রাউজার দিয়ে আমি বাংলাদেশের পতাকা বানিয়ে উড়াবো। এতো প্রশ্ন করবেন না তাড়াতাড়ি দিন।”

অভি মুখ ভার করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,” আগে বলবে না হলে আমি দিবো না।”

” দিবেন না মানে দিতেই হবে। আমাকে যে তুলে আনলেন এবার আমি কি পড়বো আমার জামা কাপড় কিছু এনেছেন?”, দরজার ওপাশ থেকে মুখ বের করে বলে আবার মুখ ঢুকিয়ে নিলাম।

” তার মানে কি তুমি তোমার সব জামা কাপড় নিয়ে চলে গেছো? তুমি জামা কাপড় নিয়ে গেছো, তোমার দোষ এখন জামা কাপড় ছাড়া থাকো। Stupid.”, বলে নিজের জামা কাপড় খুঁজতে লাগলো অভি।

” শুধু দুটো জামা চেয়েছি বলে এতো কথা শুনলেন।লাগবে না আপনার জামা আমি এই ভেজা জামা কাপড় পড়ে থাকতে পারবো।”, বলতে বলতে অভি জামা এনে আমার দরজার কাছে ধরে,” এই নেও।”

আমি বললাম,” না নিবো না। লাগবে না আমার।”

” নওরীন তুমি কি চাও আমি ভিতরে আসি? চুপ চাপ এইগুলো পরে বেরিয়ে এসো।”, অভির কথা আমি হাত বাড়িয়ে কাপড় নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম।

কিন্তু এটা কি! অভি আমাকে একটা কালো রঙের শার্ট আর একটা প্যান্ট দিয়েছে কিন্তু প্যান্টটা শর্ট ট্রাউজার মনে হচ্ছে। প্যান্টটা আমার হাঁটু আর গোড়ালির মাঝা মাঝি হয়েছে। শার্টের হাতা কোনো রকম ভাজ করে রাখলাম। নিজেকে আমার গোপাল ভাঁড়ের মতন লাগছে খালি ওনার মাথা বড়ো আর মোটা আমারটা স্বাভাবিক।

আমাকে দেখে অভি নিজের হাসি চাপানোর চেষ্টা করছে। ওনার জন্য আমার এমন অবস্থা উনি আবার হাসে। আমি রেগে বললাম,”একদম হাসবেন না। আপনার জন্য হয়েছে সব।”

” শিক্ষা হওয়া উচিত তোমার। Stupid”, বলে অভি নিজের ল্যাপটপ খুলে কাজ করছে।

আমি কিচেনে গেলাম,গিয়ে দেখি পোড়া ছাই গুলো। আমি সেগুলো পরিষ্কার করতে লাগলাম অথৈ নিজেও জানে না সে কি হারিয়েছে।আচ্ছা অথৈ যখন আগে থেকেই জানত নিজের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে এনগেজমেন্ট পর্যন্ত হয়েছিল অন্য ছেলের সাথে, তারপরও অভির সাথে সম্পর্ক রাখলো কেনো? অথৈ মেয়েটা একসাথে দুইটা ছেলেকে চিট করেছে।

আম্মু বলেছিলো সব জানতে পেরে অথৈয়ের ফিয়ান্সে বিয়ে ভেঙে দেয় এবং অভিকে থ্রেড দিয়ে যায়। অথৈ যে অভিকে চীট করছিল সেদিন অথৈয়ের ফিয়েন্স থেকে অভি জানতে পারে।

ড্রয়ারে থাকা এই ছবি, অংটি এইগুলো দেখে তো আমি মনে করেছিলাম অভি এখনও অথৈকে ভালোবাসে তাই এগুলো রেখে দিয়েছে। তাই ওদের মাঝে ফিরতে চাইনি।
ডাইনিটা এতো শয়তান আমার জানা ছিলো না। আমি এতো বলদ কেনো? ছাই গুলো তুলে ডাস্টবিনে ফেলতেই দেখি অভি এসে দাঁড়িয়ে আছে।

” কি করছো তুমি?”

” আপনি যে অকাজ করে ঘর নষ্ট করেছেন সেটাই পরিষ্কার করছি।”, সিঙ্কে হাত ধুতে ধুতে বললাম।

” Don’t you think এটা তোমার করা উচিৎ ছিলো?”, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল অভি।

” আপনি এতো যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন দেখে কিছু করিনি।’,একটু খোঁচা মেরে বললাম।

” এইগুলো যে আমার কাছে ছিলো আমার নিজেরই জানা ছিলো না।Now just end the topic here।”, বলে গ্লাসে পানি ঢাললো অভি।

” আচ্ছা আমি এইগুলো পরে কতক্ষণ থাকবো?”

–” কেনো খারাপ না তো ছোটখাটো একটা অপুষ্টিতে ভোগা পান্ডা লাগছে।”, বলে অভি ঠোঁট চেপে হাসলো।

আমি তীক্ষ্ণচোখে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে খাবার ওভেনে গরম করতে দিলাম।আমার কিছু রান্না করতে হয়নি অভি বাহির থেকে খাবার অর্ডার করেছে।
আমাকে পান্ডা বললো কেনো?আমি কি মোটা হয়ে গেছি! নাকি মজা করে বললো। আমি ভাবতে লাগলাম আমার হুশ ফিরল আমার ঘাড়ে অভির ঠোঁটের স্পর্শে। এর জন্য দেখি খোপা করেও শান্তি নেই।

আমি পিছনে ফিরে অভির বুকে একটা ঘুষি মেরে বললাম,” কি করছেন আপনি ? সরুন গিয়ে চুপ চাপ খাবার টেবিলে বসুন।”

অভি মাথা কাত করে বললো,” ওকে ম্যাডাম।”

বাহ্ কি উন্নতি। একবার বলায় কাজ হয়েছে। কি সুন্দর গিয়ে চুপ চাপ বসে পড়লো।আমি খাবার অভির সামনে বেড়ে দিয়ে পাশের চেয়ারটায় বসলাম অভি খাচ্ছে না বসে আছে।

” কি ব্যাপার আপনি খাচ্ছেন না কেনো?”, আমি প্রশ্ন করলাম।

অভি আমাকে নিজের হাত দেখিয়ে বললো,”খাইয়ে দেও।”

“খাইয়ে দিবো মানে? দাড়ান চামচ এনে দিচ্ছি,” বলে আমি উঠে যেতেই অভি হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বললো,” স্বামীর সেবা করলে সাওয়াব হয়। আর আমার হাতের এ অবস্থা তোমার জন্য হয়েছে , আমি কেনো চামচ দিয়ে খাবো?”

আমি যেনো বলেছি ওনাকে দেওয়ালে ঘুষি মেরে হাত ছিলতে।আমি আর কিছু বললাম না। আমাকে খাইয়ে দিতে হচ্ছে। অভি এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, আমি তাকাতেও পারছি না। এতো মনযোগ দিয়ে কি দেখছে।

” আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?”, বললাম আমি।

” আমার ইচ্ছে।”,অভির উত্তরে আমি বললাম,” আপনি হয় চোখ বন্ধ করুন নইলে অন্য দিকে তাকান। আমি নয়তো আপনাকে খাইয়ে দিবো না।” বলে আমি সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

অভি মুখ কাত করে আমার দিকে ঘুরিয়ে বলে,” কেনো তোমার কি লজ্জা লাগছে? কান দেখি লাল হয়ে আছে।”

আমি কিছু বললাম না, না সূচক মাথা নাড়লাম। আরে লজ্জা পেলে আমার কান লাল হয় উনি এটাও যানে।

অভি মাথা সোজা করে বললো,” বউ বিয়ে করেছি নাকি লজ্জাবতী গাছ। কিস করতে পারিনা চোখ বন্ধ করে বসে থাকে, তাকিয়ে থাকতে পারিনা কান লাল হয়ে যায়। এতো মহা মুশকিল।” বলে ঠোঁট টিপে হাসছে।

অভির কথায় আমি উঠে চলে যেতে নেই। অভী আমাকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে বললো,” এতো লজ্জা পেলে আমি বাবা হবো কি করে?শেষমেশ ফুফুর হুজুরের ওষুধ নিতে হবে, তাই না।”

অভির কোথায় আমি লজ্জায় হাসি ঠোঁট কামড়ে আটকে অভির কাধে মুখ লুকিয়ে ফেললাম। অভি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজেও হাসছে।

—-
খাওয়া শেষে অভি নিজের রুমে কি জানি করছে এখন রাত সাড়ে বারোটা আমি সোফায় বসে মুভি দেখছিলাম। অভি কাজ শেষে ড্রইং রুমে এসে বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” তোমার আবার শুরু হয়ে গেছে?”

আমি অভিকে বললাম,” বসুন না। এই মুভিটা অনেক সুন্দর।”

অভি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে আমার হাত ধরে আমাকে উঠতে বললো,” নওরীন উঠো। অনেক রাত হয়েছে ঘুমাবে এসো।”

” না, না প্লীজ আরেকটু বাকি আছে। একটু পর শেষ। শেষ পর্যন্ত না দেখলে আমার রাতে ঘুম আসবে না।”, রিকোয়েস্ট করে অভিকে আমার পাশে বসলাম। অভি বিরক্তির চোখে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে।

” তোমার ঐ আগের ড্রামা দেখা শেষ? এটা আবার কি?”,বলে অভি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো।

” আরে টার্কিশ ড্রামা ঐটা তো অনেক জোস। কিন্তু ভালো জিনিস অল্প অল্প করে দেখতে হয়। একসাথে সব দেখলে শেষ হয়ে যাবে তাই মাঝে মাঝে দেখি। এইটার নাম “our time” এটাও অনেক সুন্দর”, বললাম আমি।

আমার কর্ম কাণ্ডে অভি বিরক্ত নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে।ছবি শেষ হলো কিছুক্ষণ পর অভি নওরীনের দিকে তাকিয়ে দেখে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছে।

অভি অবাক হয়ে নওরীনের কাছে এলো,” হ্যাপি এন্ডিং হয়েছে তুমি আবার কান্না করছো কেনো?”

নওরীন ফুফাতে ফুফাতে বললো,” আপনি কি করে বুঝবেন প্রথম থেকে আপনি কি দেখেছেন?”

অসহায়ের মতো অভি না সূচক মাথা নাড়ল।

নওরীন বললো,” জানেন ছেলেটা অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিল কিন্তু ওর বেস্ট ফ্রেন্ড পানিতে ডুবে মারা যায় ওর সামনে আর ও চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারে না তাই নিজেকে দোষীভাবে।তাই ছেলেটা পড়া লেখা ছেরে গুন্ডা টাইপ হয়ে যায়। ছেলেটা একদিন একটা লেটার পায় একটা মেয়ে থেকে তারপর ছেলেটার অ্যাকসিডেন্ট হয়।
তাই যেই মেয়েটা লেটার দিয়েছে ওই মেয়েকে খুজে বের করে। মেয়েটা ছিলো খুব বোকা। মেয়েটাকে বুলি করতে করতে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ছেলেটাও ভালো হয়ে উঠে।
ওরা ভালোবেসে ফেলে কিন্তু বলে না।
মেয়েটার জন্মদিনের দিন ওর প্রিয় সিঙ্গার এর ফটোস্টান্ড নিয়ে ওকে সারপ্রাইজ দিতে যায় গুন্ডারা ওকে মারে কিন্তু মেয়েটাকে প্রমিজ করায় ছেলেটা মার সহ্য করে তারপর জানেন কি হয়?”বলে নওরীন কাদতেঁ লাগলো।

অভি ভ্রু কুঁচকে বললো,” ছেলেটা মরে যায়?”

” না…., তারপর ছেলেটার ব্রেইনে একটা সমস্যা হয়।”,নওরীনের কথার মাঝে অভি মজা করে বললো,” আচ্ছা সব ভুলে যায় মাথায় বাড়ি খেয়ে? টেম্পোরারি মেমোরি লস?”

” না…, আপনি শুনুন তারপর ছেলেটাকে বিদেশে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করতে হয় যাওয়ার আগে ছেলেটা একটা টেপে নিজের কিছু কথা রেকর্ড করে রেখে যায়। সেখানে ছেলেটা বলে (মেয়েটার নাম ট্রুলী থাকে) ট্রুলি তুমি যদি আমাকে মিস করো তাহলে ঐ আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখো কারণ আমিও ওই একি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।”,বলে নিজের চোখের পানি মুছতে লাগলো।

” What! ছেড়ে চলে গিয়ে বলছে মিস করলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকো কারণ আমিও তাকিয়ে আছি। How lame!”, বলেই বুঝতে পারলো এইটা বলা ঠিক হয়নি। নওরীন বিস্ময় নিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে আছে।অভী নওরীনকে তুলে দারকরে টিভি বন্ধ করে বললো,”I mean technically lame but the line has emotion.” নিজের মুখে কোনোদিন এইগুলো বলবে অভি নিজেও ভাবেনি।

নওরীন কান্না করছে না এখন কিন্তু বললো,” জানেন পরে ওদের দেখা হয়।”

অভি হাই তুলতে তুলতে বললো,”চলো ঘুমাতে যাই ঘুমাতে ঘুমাতে শুনবো।”
অভির কথায় নওরীন হেসে বললো আচ্ছা। যাক মেয়েটা হেসেছে এইটাই অনেক অভির জন্য।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here