গল্পের নাম:হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে,পর্বঃ১৫ তোমার কি আমাকে মনে পড়বে?
নবনী নীলা
” আপনি কি কোনো ভাবে বাঁদর বলতে আমাকে বুঝিয়েছেন?”বিস্ময় নিয়ে আমি প্রশ্ন করলাম। অভি হাসছে, আমি কি মজার কিছু বললাম যে উনি এভাবে হাসছে।
বাঁদরতো আমাকেই বলে আমি আবার কবে এই কুকর্ম করলাম?সকালে শার্ট খামচে ধরেছিলাম তখন কোনো ভাবে কি নখ লেগে এমন হয়েছে? ব্যাপারটায় খারাপ লাগছে মাঝে মাঝে কি যে করি আমি নিজেও বুঝি না।
অভি হটাৎ আমার হাত ধরে আমাকে সামনে নিয়ে এলো। আমি অভির সামনে বসলাম। আমি দুঃখিত স্বরে বললাম,” আমি ইচ্ছে করে করিনি ভুল করে হয়েগেছে sorry।”
অভি অবাক হয়ে বলে,” বাহ্ এতো ভালো মেয়ে হয়ে গেলে কি করে? নিজে নিজেই sorry বলছো।” আমি চুপ করে রইলাম। অভি আমাকে সামনে ফিরিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমার মাথা গিয়ে ঠেকেছে অভির বুকে।
আমি “আপনি….” বলতে গেলাম অভি আমার মুখের সামনে হাত দিয়ে আমাকে চুপ করিয়ে বলল,” চুপ করে থাকো, উল্টা পাল্টা কথা বলে আমার মুড নষ্ট করো না।”
আমি কিছু বলার আগে আমার ঘাড়ের উপর থেকে চুল সরিয়ে দিলো। অভির স্পর্শ এখন ভালো লাগতে শুরু হয়েছে।যদিও নিজেকে এখনও শ্বাসকষ্টের রোগী মনে হয়। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে হয়।
” কালকে সকালে আমরা চলে যাচ্ছি।”,বলে অভি আমার দিকে তাকালো।আমি ঘাড় কাত করে অভির মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললাম,”কেনো? হটাৎ করে কালকেই যেতে হবে কেনো? আমরা থাকি আরো কিছু দিন।” বলে তাকিয়ে রইলাম।
” আমার কিছুদিনের জন্য জাপানে যাওয়া লাগবে অফিসের কাজে, কালকে সন্ধায় আমার ফ্লাইট।”,বলেই শুকনো মুখ করে আমার দিকে তাকালো।
আমি কি বলবো কি বুঝলাম না। আমি কিছু না বলে ঘাড় সোজা করে সামনে তাকালাম। কালকে সন্ধায় ফ্লাইট আর উনি আমাকে এখন বলছে! আমাকে এর আগে জানানোর প্রয়োজনবোধ করেনি। আমাকে এখন বলতে এসেছে।
অভি আরো বললো,” I know আমার তোমাকে আগেই জানানো উচিৎ ছিলো। আমি আসলে তোমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। তোমার পাসপোর্ট করার অনেক ট্রাই করেছি but কমপক্ষে ৫, ৬দিন লাগবে আর আমার হাতে সময় কম ছিল।”
আমি একটা নিশ্বাস ছেরে দিয়ে বললাম,”হুম বুঝেছি।”
আমি আমাকে ওর বুক থেকে সরিয়ে আমাকে ওর সামনে বসিয়ে দিল। হটাৎ আবার কি হলো? কি সুন্দর জড়িয়ে ধরে ছিলো হটাৎ করে কি হয় এর। আমি ভ্রু কুচকে অভির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
অভি বলল,” আমি কি তোমাকে বায়োলজি পড়াচ্ছি? হুম বুঝেছি এইটা কেমন কথা।”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,” একদম বায়োলজির নাম নিবেন না অসহ্য একটা সাবজেক্ট। আমি এইটাকে দেখতেই পারি না।”
” তোমার আমার মধ্যে কেমিস্ট্রি বলতে কিছু নেই, ফিজিক্স এর কথা তো বাদ। বাকি আছে বায়োলজি এইটাও বাদ দিলে কিভাবে হবে।”
অভি সাবলীল ভাবে তাকিয়ে আছে। সত্যি বলতে অভির কথার কিছুই আমি বুঝিনি। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে রইলাম তারপর বললাম,
” কয়দিনের জন্য যাবেন?”
” ৬, ৭দিন লাগতে পারে অথবা তার বেশি।”বলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি “ও আচ্ছা” ছাড়া কিছু বলতে পারলাম না। এতো দিন থাকবে সেটা আমি ভাবিনি। আমার চেহারায় যেন ঘন মেঘ বাসা করেছে। বৃষ্টি নামবে বলে। আমি করিডোরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
” তোমার কি মন খারাপ হয়েছে?”,অভি আদর মিশানো গলায় বলল।
নিজের অজান্তেই আমি হা সূচক মাথা নাড়লাম। অভী ডান হাত দিয়ে আমার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলো,” কেনো? তোমার কেনো মন খারাপ হয়েছে? তোমার তো খুশি হবার কথা না? যা ইচ্ছে করতে পারবে।”
আসলেই তো আমার কেনো এতো খারাপ লাগছে। উনি না থাকলে আরো ভালো লাগার কথা। বকা, রাগ, ঝাড়ি শুনতে হবে না। কিন্তু আমার কান্না পাচ্ছে। কান্না আটকে রাখতে গিয়ে গলায় ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।
তাও অনেক কষ্টে বললাম,” আমি কি বলেছি আমার আপনার জন্য মন খারাপ হয়েছে? আমি জাপানে যেতে পারবো না এই জন্য মন খারাপ হয়েছে।”
আমার গলা দিয়ে আর কথা বের হচ্ছে না। যেকোনো সময়ে চোখ দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়বে।আমি চাই না অভি সেটা দেখুক।আমি উঠে যেতেই অভি আমার হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসালো।
অনেক কিছু বলতে চাই কিন্তু গলায় চাপ পড়ায় কিছু বলতে পারছি না। অভি আমার কোমরের পাশে দুই হাত জড়িয়ে বললো,” তোমার কি আমার কথা মনে পড়বে ?”
এই কথাটা বলার কি খুব প্রয়োজন ছিল। এই কথা শুনে আমার চোখ থেকে টপ টপ পানি পড়তে শুরু হলো। আমি মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে না সূচক মাথা নেড়ে বললাম,” আমি জাপানে যেতে চাই।”
অভি আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,” হুম বুঝেছি তুমি জাপানে যেতে পারছো না তাই কান্না পাচ্ছে। আচ্ছা কান্না থামাও নেক্সট টাইম তোমাকে নিয়ে যাবো।”
_________________
সকাল সকাল গাড়ি করে ফ্ল্যাটে ফিরে আসলাম আমরা। সারা রাস্তায় আমি চুপ করেছিলাম। অভি বিভিন্নভাবে আমার সাথে কথা বলতে এসেছে আমি কথা বলিনি।
অভির ফ্লাইট সন্ধ্যায় অফিস থেকে গাড়ি তাকে এয়ারপোর্ট নিয়ে যাবে।অভি নিজের ব্যাগ গুছাতে বেস্ত।
আমি মুখ কালো করে বিছানায় বসে অভির সুটকেস গুছানো দেখছি। আমি সত্যি যেতে চাই। আমি একা একা এতো দিন কিভাবে থাকবো? এই লোকটাকে না জ্বালাতন করলে ভালো লাগে না।
” তোমার জাপানে যেতে না পারার শোক এখনও কাটেনি?”, নিজের সুট গুছাতে গুছাতে বললেন।
ওনার কি সত্যি মনে হচ্ছে আমি জাপানে যাওয়ার জন্য এমন মন খারাপ করে বসে আছি। কালকের কান্নাটা সেটাও কি জাপানে যাওয়ার জন্য কেঁদেছি? আমার জামাইটা এমন কেনো ? কিছুই দেখি বুঝে না। আচ্ছা মেনে নিলাম জামাইটা আনরোমান্টিক কিন্তু বুদ্ধি শুদ্ধি কিছুই নেই।
আমি আড় চোখে তাকালাম। অভী মিট মিট করে হাসছে।অভি আবার বললো,” তুমি জাপানে যেতে চাও কেনো?”
কান্ড দেখো লোকটার মনটা ভালো নেই অথচ উনি আমার মেজাজটাও খারাপ করছেন। উনি তো বেশ আনন্দেই আছে মনে হচ্ছে।
” হ্যা ছোটোবেলায় খুব ইচ্ছে ছিলো নবিতাকে বিয়ে করবো। তাই যেতে চাচ্ছি।”,আমি রেগে বললাম।
” নবিতা! তোমার ওই বলোদটাকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো? বলদের তো বলোদকেই ভালো লাগবে। “, বলতে বলতে উঠে এলো।
” আপনি একেবারে খুব বুদ্ধিমান তাই না? পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান মানুষ হলো অভি আহমেদ।”,আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম।
অভি আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে বলে,” উঠো এবার নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নেও।”
[ চলবে ]