গল্পের: নাম:হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে,পর্বঃ৯ অভির চশমা
নবনী নীলা
তোমার কি পিরিয়ড হয়েছে?”, ব্যাস্ত হয়ে বললো অভি। আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম। অভি মাঝে মাঝে খুব সহজেই আমাকে বুঝতে পারে। অভি বকা দিয়ে বললো,” এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে idiot!”
বলেই অভি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো যাওয়ার আগে দরজা চাপিয়ে দিয়ে গেলো।আমি টাওয়াল পেঁচিয়ে রুমে ঢুকে প্রথমে দরজাটা ভিতর দিয়ে লাগিয়ে নিলাম।
আমি জামা বদলে নিলাম কিছু জিনিসের প্রয়োজন লাগতো কাল সকাল পর্যন্ত চলতে পারবো, ভাল্লাগছে না। এখন আমার পক্ষে দোকানে যাওয়া পসিবল না।
অনেক tired লাগছে ঘুমও পাচ্ছে। আমি দরজাটা খুলে দিয়ে বেডে শুয়ে পড়লাম। পেট ব্যাথা শুরু হয়েছে। পেটের ওপর একটা বালিশ চাপা দিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
রাত কটা বাজে বুঝতে পারছি না। ঘুম ভেগেছে আমার। মাঝে মাঝে আরমেও ঘুম ভেগে যায় আমার হয়েছে সেটা। অভির হাতের উপর আমি মাথা রেখে শুয়ে আছি। আমার মাথার কাছেই অভি মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।
অভির নিশ্বাস এসে পড়ছে আমার ঘাড়ে। হালকা একটু সুরসুড়ি লাগছে কিন্তু ভালোও লাগছে।অভি আমার কোল থেকে বালিশ সরিয়ে হটপ্যাক এনে দিয়েছে এসিটা বাড়িয়ে দিয়ে গায়ে একটা কাথা দিয়েছে, আরাম লাগছে অনেক।
আমার ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় সব করেছে অভি। আমি ঘুমিয়ে থাকলেই এনার আমার প্রতি মমতাবোধ জাগ্রত হয়। আমিও গাজাখোরদের মতন ঘুমাই টের ও পাই না। রুমে আপছা আলোর বাতি জ্বলছে। অভি চশমা পরেই ঘুমিয়ে গেছে।
চশমাটা খুলে দিতে পারলে ভালো হতো। আমি আস্তে আস্তে চশমাটা খুলে টেবিলে রাখলাম।
টেবিলে চশমা রাখতে গিয়ে দেখি এক বাটি নুডুলস প্লেট দিয়ে ঢাকা। তার পাশে একটা আইস ক্রিমের বক্স। আমার মন ভালো না থাকলে আমি নুডুলস খাই। আমি একটু অদ্ভুত।
খিদে আমার পেয়েছিলো, হয়তো এই জন্যেই ঘুম ভেঙেছে,এইগুলো দেখে আমি চুপ করে রইলাম। এই সব অভি করেছে। এতো ভালো হয় কি করে কেউ? অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করছে মুখ থেকে হাসি সরছেই না।
আমি আস্তে করে উঠে ফ্রেশ হলাম রাত এখন ৩টা বেজে ২৩মিনিট। অনিচ্ছা থাকা সত্বেও নুডুলস পুরোটা শেষ করলাম, ফেলে দিতে ইচ্ছা করছে না।
নুডুলস আমার বলতে গেলে প্রিয় কারন এইটা তৈরি করা সহজ। খাওয়া শেষ করে আইস ক্রিমের বাটি ধরলাম কিন্তু পেটে জায়গা নেই অল্প একটু খেয়ে রেখে দিতে হলো।
আমি অভির কাছে এসে শুয়ে পড়লাম। এতো নিষ্পাপ লাগছে অভিকে দেখতে। আমি অভির একটা হাত কোলবালিশের মতন জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে উঠে দেখি অভি নাস্তা নিজেই তৈরি করে অফিসে গেছে। আমাকে ঘুম থেকে তোলে নি আর আমিও মরার মতো ঘুমিয়েছি।
অভি শুধু নাস্তা তৈরি করেনি আমার প্রয়োজনের জিনিসগুলো এনে রেখে দিয়েছে আমার ড্রয়ারে। উনি জানলো কিভাবে? হটাৎ হটাৎ কি টেলিপ্যাথি কাজ করে নাকি? গরিলাটাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে তো অফিসে।
সন্ধ্যা ৭টা বাজে কলিং বেল বেজে উঠলো এমন সময় অভি আসে। আমি দরজা খুলে দেখলাম অভি না একটা মেয়ে এসেছে। বুঝার বাকি রইলো না যে এই মেয়েই অথৈ চেহারায় কুটনি মার্কা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ইচ্ছে করছে এ মেয়ের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেই। কিন্ত না রেগে গেলে চলবে না নওরীন ঠান্ডা মাথায় সামলাতে হবে।
” ভেতরে আসতে পারি?”, বললো অথৈ।
আমি মনে মনে বললাম না ভিতরে কিসের দরকার? এক্ষুণি চলে যা। কিন্তু এগুলো বলা যায় না আমি হা সূচক মাথা নেড়ে ভিতরে আসতে বললাম।
সোফায় আমার বরাবর অথৈ বসেছে। এই মেয়েকে আমি সোফায় বসিয়ে অ্যাপায়ন করছি ভাবা যায়।
” তা তোমাদের ডিভোর্স কতদূর এগিয়েছে?”কত বড় সাহস এই মেয়ের আমার বাসায় এসে নির্ভয়ে এইগুলো বলছে।
ইচ্ছে করছে ডাইনিটাকে রসুনের শরবত খাইয়ে মেরে ফেলি। আমি চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছি। এমন সময় আবার কলিং বেল বেজে উঠল।
অথৈ বললো,” অভি এসেছে মনে হয়।” আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখি অভি এসেছে। এখনই আসতে হলো তার। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ পর রাগে নিশ্বাসের সাথে আগুনের লাভা বের হবে।
আমি কিছু না বলে আগের জায়গা এসে বসে পড়লাম। অভি আমার নাম ধরে ডেকেছে কিন্তু আমি সারা দিচ্ছি না। কেনো সাড়া দিবো এই ডাইনিটাকে উনি এনেছেন।
অভি ড্রয়িং রুমে এসে অথৈকে দেখে চোখ মুখ শক্ত করে ফেললো। অভি এমন ভাবে আমার দিকে তাকালো যেনো একে বাসায় ঢুকতে দিয়ে বিরাট অপরাধ করেছি আমি। অথৈ অভির দিকে তাকিয়ে বললো,” মনে হচ্ছে আমাকে দেখে তুমি খুশি হও নি।”
তুমি করে বলছে দেখো ওরে প্রেম একবারে উতলিয়ে উপচে পড়ছে। তুমি আমাকে দেখে খুশি হও নি? যত্তসব মনে মনে বললাম আমি।
অভি বললো,” অফিসে ঢুকতে দেইনি বলে তুমি বাসায় চলে আসবে। Self respect বলেও তো কিছু আছে তাই না।”
অভির কথায় আমার রাগ এবার একটু কমলো কিন্তু এই ডাইনি অফিসেও হামলা করেছে।
অথৈ বললো,” অভি তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।”
” বুঝতেই যখন পারছো দারিয়ে আছো কেনো, get out. তোমার ছায়াও আমি আমাদের আসে পাশে দেখতে চাই না। তোমার সাহস কি করে হয় নওরীনকে ডিভোর্সের কথা বলার। নিজের লিমিট বজায় রাখো।”রেগে গিয়ে বলল অভি।
অভির কথায় ডাইনিটার সাথে আমিও চমকে উঠলাম অভিকে তো আমি কিছু বলিনি। লান্ডলাইনের সাথে কি কোনো ভাবে অন্য কোনো ডিভাইসের সংযোগ আছে।
অথৈ হাসছে শয়তানি হাসি না।হালকা একটু হাসি ব্যার্থতার হাসি যাকে বলে।
অথৈ বললো,” অভি তুমি কি এখনও চশমা পড়ে ঘুমিয়ে যাও?”
অভি মুখ আরো শক্ত করে বললো,” just get out .”
অথৈ আর কিছু না বলে চলে গেল। আমার এতক্ষন খুব বেশী রাগ হয়নি। কিন্তু শেষের কথাটা শুনে রাগে আমার কান লাল হয়ে গেছে।
অভিকে ওই ডাইনি ঘুমাতে দেখেছে। আচ্ছা দেখেছিস ভালো কিন্তু না সে যে চশমা পড়ে সেটাও খেয়াল করেছে। অভিকে তখন দেখতে অন্য রকম সুন্দর লাগে অভির কাছে যেতে ইচ্ছা করে। ওই মেয়ের ও নিশ্চয় ইচ্ছে করেছে।
অভি রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ছিলো।
আমি কিছু টোস্ট বিস্কুট নিয়ে ডাব্লিউ ডাব্লিউ খেলা দেখতে বসেছি।
নিজের রাগ কমাতে হবে। বসে বসে শক্ত টোস্ট বিস্কুট চাবালে রাগ কমে। মনে হয় যার উপর রাগ তাকে চাবাচ্ছ।
ডাব্লিউ ডাব্লিউ খেলা দেখবো কারন এটা দেখলেও রাগ কমে। যে মার খায় সেটা যার উপর রাগ হয়েছে তাকে মনে করলেই আনন্দ। আর যে মারে সেটা আমি নিজে।
আমি যে রাগ করেছি বা জ্বলে যাচ্ছে আমার শরীর সেটা অভিকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। সে ভাববে আমি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। আমি টিভি দেখতে বসলে অভি এসে আমার পাশে বসে।
আজও সেটাই করলো কিছুক্ষণ পর আমার পাশে এসে বসলো।
অভি টিভির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো। আমার মুড কেমন সেটা বুঝার চেষ্টা করছে আমি এদিকে টোস্ট বিস্কুট চাবিয়ে যাচ্ছি।
“তোমার কি কাউকে মারতে ইচ্ছা করছে।”, অভি বললো।
আমি স্বাভাবিক আচরণ করতে চাচ্ছি। তাই শান্ত গলায় বললাম, ” আপনার এমন মনে হবার কারণ?”, বলেই অভির দিকে তাকিয়ে দেখি তার চশমা।
ওনার চশমা দেখে রাগ লাগছে আমি টিভির দিকে তাকিয়ে আরেকটা টোস্ট বিস্কুট নিলাম ৪,৫টা খাওয়া হয়ে গেছে আমার। পেটে জায়গা নেই তাও খাচ্ছি।
অভি বললো,” তুমি তো রোমান্টিক ড্রামা দেখো আজ হটাৎ ডাব্লিউ ডাব্লিউ খেলা দেখছো তাই জানতে ইচ্ছে করছে।”
” কেনো আমি কি এইটা দেখে খুব ভুল করেছি?”, রেগে বললাম।
অভি আমার হাত ধরে ওর কাছে নিয়ে গেলো। আমি হাত ছড়ানোর চেষ্টা করছি অভি দুই হাত দিয়ে পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমি চুপ করে আছি। ওনার ফাঁদে পা দিবো না।
অভি আমার কানের কাছের চুল সরিয়ে দিয়ে বললো,” রাগ টা ঝেড়ে নিলেই পারো , শুধূ শুধু বসে বসে টোস্ট বিস্কুট চাবাতে হতো না।”
[ চলবে ]