অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,অতিরিক্ত পর্ব

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,অতিরিক্ত পর্ব
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম

.
সাদাদ ভাই অবাক চোখে আমার দিকে ফিরলো। আমি একটু ইতস্তত করে কার্ডটা এগিয়ে দিলাম তার পানে।
–আমার বোনের বিয়ে! আশা করবো আপনার উপস্থিতি! অবশ্যই আসবেন।
তারপর সাব্বির ভাই, তমাল ভাই তাদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
–আপনারাও আসবেন কিন্তু।
সাদাদ ভাই অবাক হয়েই আমার থেকে কার্ডটা নিল। এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
–তুমি অপেক্ষা করবে আমার?
আমি মাথা তুলে বললাম,
–জ্বি?
সাদাদ ভাই বুঝতে পেরেও বলল,
–যেহেতু জ্বি বলেছো তাহলে অবশ্যই যাবো। আপ্যায়ন এর দায়িত্ব কিন্তু তোমার থাকবে। কি রাজি?
আমি হা করে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
— অবশ্যই আসবো।
সাব্বির ভাই আর তমাল ভাই ও হেসে দিলো। সাব্বির ভাই বলে উঠলো,
-আমরা তো অবশ্যই আসবো বর……
সাদাদ ভাই হঠাৎ করেই সাব্বির ভাইয়ের পায়ে পাড়া দিল। আর সাব্বির ভাই আপাতত পা ধরে নাচছে আর চিৎকার করছে। সাদাদ ভাই আমাকে আবার বলল,
–আমরা সবাইই আসবো তুমি নিশ্চিন্তে যাও।
আমি এদের কাহিনী ঠিক বুঝতে পারলাম না। তাই হালকা হেসে আসতে নিয়ে আবার পিছন ফিরলাম। সাদাদ ভাই সাব্বির ভাইয়ের ঘাড় ধরা ছিলো, আমাকে দেখেই ছেড়ে দিয়ে ক্যাবলার মতো হাসলো। আমিও একটা হাসি ফেরত দিয়ে বললাম,
–আর ওইসময়ের আইসক্রিম এর জন্য ধন্যবাদ। তখন ধন্যবাদ দিতে পারি নি!
সাদাদ ভাই গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
–তোমার ধন্যবাদের জন্য খাওয়াইনি আমি!
ওমা! এই না ওনার মুড ভালো ছিল! আবার এমন গম্ভীর হয়ে গেলেন কিভাবে? ওনার এই গম্ভীর আর রাগী ভাব দেখলেই ভয়ে শরীর কাঁটা দেয়। তাই তাড়াতাড়ি করে স্থান ত্যাগ করলাম।

.
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়েই ধুপ করে বিছানায় শুয়ে গেলাম। এখন আমার একটা শক্তিশালী ঘুম দরকার। ঠিকই শুতে না শুতেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম। আমি কখনোই দরজা লক করি না। তাই আম্মু কয়েকবার ডেকেও যখন সাড়া পায় নি তখন চলে গেছে। রাত ৯ঃ২০ এ আমার ঘুম ভেঙেছে। হাই তুলতে তুলতে ডাইনিং টেবিলে বসতেই আম্মু বললো,
-উঠলি কেন? দুপুরে তো না খেয়েই ঘুম দিয়েছিস। এখনো না খেয়েই থাক!
আমি ঠোঁট উল্টে বললাম,
–আম্মু!!!ক্ষিধে পেয়েছে!
আম্মু একদম গলে গেলো৷ তাড়াতাড়ি ছুটলো খাবার আনতে। আম্মু যেতেই বাবার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম সাথে বাবাও। ভাইয়া আর আপুও হাসছে। কেননা এটা যে আমার পুরোনো ট্রিক তা সবাই জানে। এমনকি আম্মুও! তবুও আম্মু আমার এই একটা কথায় একদম গলে যায়। কখনোই রাগ করে থাকতে পারে না। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে আমি সবার রুমে উঁকিঝুঁকি মারছি। এখন আমার চোখে এক ফোটা ঘুমও নেই। তাই এখন আমার প্রধান কাজ সবাইকে বিরক্ত করা। আপুর রুমে উঁকি দিতেই দেখি রুবাপু কানে ফোন নিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। এ শিওর আরফান ভাইয়ার সাথে প্রেমালাপে ব্যস্ত৷ আমি বুঝিনা কি এমন কথা এরা বলে যে লজ্জায় বিভিন্ন রঙ ধারন করে? এখানে থাকলে আমি আরো বোর হয়ে যাবো তাই যথারীতি দরজাটা ভালোভাবে টেনে দিয়ে এগিয়ে গেলাম ভাইয়ার রুমের দিকে। দরজাটা একটু ফাঁকা করে দেখি ভাইয়া বিছানায় বসে আছে হাটুতে কনুই রেখে দুই হাতের মুষ্টি কপালে রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। কিছুক্ষণ পর পর হাসছে। ব্যাপার টা অনেক সন্দেহজনক। মাথা উঠিয়ে আমাকে দেখেই বলল,
-আরে সুবাহমনি? দরজায় কি ভিতরে আসো।
আমি ভিতরে গিয়ে বললাম,
–ভাইয়া সত্যি সত্যি বলোতো তুমি একা একা হাসছো কেন?
ভাইয়া আমাকে তার পাশে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-এমনি! তা সুবাহমনির চোখে আজ ঘুম নেই? এভাবে উঁকিঝুঁকি মারছে?
আমি অসহায় গলায় বললাম,
–দুপুরে ঘুমিয়েছিলাম না তাই হয়তো! আচ্ছা তুমি হাসছিলে কেন? এমনি এমনি কেউ হাসে না আমি বাদে! এবার বলো কেন হাসছিলে? সত্যি বলবা কিন্তু!
ভাইয়া মুচকি হেসে বলল,
–একটা মেয়ের কথা মাথায় আসায় হাসছিলাম। রাস্তায় দেখা হয়েছিলো। বাচ্চাদের মতো কাঁদছিলো। আমি বাচ্চা বলায় আবার ক্ষেপেও গিয়েছিল। হাহাহা!
আমি বিজ্ঞদের মতো বললাম,
–ওওও….তার মানে আমার ভাই প্রেমে পড়েছে।
ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
-এখানে প্রেমে পড়ার মতো কি হলো?
–ও তুমি বুঝবে না! প্রথম প্রথম তো তাই বুঝতে পারছো না।
ভাইয়া আমার কথায় হেসে দিয়ে বলল,
-আপনি কয়টা প্রেম করেছেন? প্রেম বিশেষজ্ঞ?
আমি এবার চিন্তায় পড়ে বললাম,
–আসলেই তো!
ভাইয়া আমার কথায় হো হো করে হেসে দিলো। আর আমি ভাবতে বসলাম তাহলে কি এখন আমার একটা প্রেম করা উচিত?

.
এ নিয়ে দশবারের মতো কার্ডে হাত বুলালো সাদাদ। তার সুবাহ আজ তার সাথে ইজি হয়ে কথা বলেছে ভাবতেই তার মনটা নেচে উঠছে। হটাৎ করেই মাথায় এলো সে তো দুইপক্ষ থেকেই ইনভাইটেশন পেলো কিন্তু যাবে কোন পক্ষ হয়ে? এক পক্ষে বন্ধু আর এক পক্ষে ভালোবাসা! তারপর চট করে তার সমস্যা সমাধান ও করে ফেলল। যাবে বরপক্ষ হয়ে, বিয়ে বাড়িতে দুইপক্ষ হয়েই থাকা যায়। সাদাদ কিছুক্ষন বসে ফোনটা হাতে নিয়ে নিচে চলে এলো৷ তার এখন একটা ব্ল্যাক কফির প্রয়োজন। ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে সাদিয়াকে ডাক দিবে এর মধ্যেই তার সামনে কফি হাজির করে সাদিয়া। সাদাদও বোনকে দেখে হেসে দিয়ে কফিটা নিয়ে তার পাশে সাদিয়াকে বসায়। সাদিয়া হেসে হেসেই সাদাদ এর সাথে কথা বলছে। তাকে দেখে বোঝার ক্ষমতাই নেই যে তার মনে কতটা কষ্ট লুকিয়ে আছে।

এদিকে কেউ পুরোনো প্রেম নিয়ে ব্যর্থ তার কষ্ট লুকাচ্ছে তো অন্য দিকে কেউ প্রথম প্রেমের অনুভূতির জোয়ারে ভাসছে। কেউ তার প্রিয়তামার প্রতি অনুভূতিগুলো অনুভব করছে তো কেউ আছে তার নিজের জগতে ব্যস্ত, সে এখনো এটাই জানে না যে কেউ তার জন্য প্রতিনিয়ত তার অনুভূতির সাথে লড়াই করছে। ভাগ্য কাকে কোথায় নিয়ে যায় কেউ বলতে পারে না। আজকের ভালোবাসা কালকের ঘৃণায় না পরিনত হয়ে যায়!
,
,
,
চলবে…………..❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here