অনুভূতির জোয়ার,পর্ব_০১
Wohad Mahmud
আপনার মেয়ে পড়াশোনা করতে পারলে আমি কেন পারব না?
নতুন বউয়ের এমন কথা শুনে চমকে যায় শ্বাশুড়ি। তারপর বলে তুমি এই বাড়ির বউ আর সে এই বাড়ির মেয়ে। তার সাথে নিজের তুলনা করতে গেলে চলবে না বউমা। আর নতুন বিয়ে হতে না হতেই এমন মুখের উপর কথা বলছ। এখনও দিন বাকি আছে, না জানি তখন কী করবে।
হালিমা তখন বলে, যদি পড়াশোনা নাই করতে দিবেন তাহলে বিয়ের আগে কেন বলেছিলেন যে, বিয়ের পর মেয়ে পড়াশোনা করতে পারবে।
হালিমার শ্বাশুড়ি তখন বলে, এটা তো এমনিতেই মুখের কথা বলেছিলাম। যদি না বলতাম তাহলে কখনও এই বিয়ে করতে না। আর বাড়ির বউদের ঘরে মানায় কিন্তু বাড়ির হারিয়ে মানায় না।
হালিমা তখন বলে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া ঠিক না। আপনার মেয়ে যদি এই বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে তাহলে আমাকেও সুযোগ দিতে হবে।
আমি তোমাকে আগেই বলেছি বাড়ির বউদের মেয়েদের সাথে তুলনা করতে নেই।
হালিমা তখন মুচকি হেসে বলে আপনিই না বলেছিলেন আমাকে এই বাড়ির মেয়ের মতো রাখবেন। তাহলে কি সবকিছু মুখের কথা ছিল?
ছেলের বউয়ের কথায় বিরক্ত হয়ে চলে যায় হালিমার শ্বাশুড়ি। আর বলে যা বলার মাহমুদের সাথে বলবে। আমি আর কিছু বলতে চাই না।
রাতে মাহমুদ অফিস থেকে বাসায় ফিরলে, আজ যা যা হয়েছে সব বলে হালিমা।
কথা শেষ হলে মাহমুদ বলে মা যা বলেছেন সব তো ঠিক বলেছে। তুই এই বাড়ির বউ এখন এসব পড়াশোনার কথা বলা মানায় না তোমাকে। তোমার সংসার সামলাবে। এখন পড়াশোনা করার প্রয়োজন নেই।
হালিমা তখন বলে আমি পড়াশোনা করতে চাই আর কিছু না। বিয়ের আগে আমি এই শর্ত দিয়েই তারপর তোমাকে বিয়ে করেছি মাহমুদ।
মাহমুদ বলে তুমি পড়াশোনা করে কী করবে? উচ্চশিক্ষিত হবে আর বেশি হলেও পড়াশোনা শেষ করে তুমি একটা ভালো চাকরি করবে। এর বেশি তো কিছু না?
আমি পড়াশোনা করতে চায়। চাকরি করব না-কি করব না এটা পরে দেখব।
আকাশ বলে এতকিছু দরকার নেই। আমি তো আছি। এমন তো না যে, আমি ভালো কোনো চাকরি না। তোমাকে অভাবে রেখেছি।
হালিমা তখন চোখের কোনে জল নিয়ে বলে, আমার বড় বোনকেও তার স্বামী একই কথা বলেছিল।
আমার বড় বোন আমার থেকেও বেশী মেধাবী ছিল। অভাবের সংসার বড়লোক পরিবার দেখে এসএসসি পরীক্ষার সময় বিয়ে দিয়েছিল। স্কুলে অনেক সুনাম ছিল সকল টিচার বলত হুমাইরা অনেক ভালো ছাত্রী আর মেধাবী ছাত্রী এই স্কুলে কখনও দেখেনি এমন ছাত্রী। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার সামনে করে বিয়ে হয়ে যায়।
বিয়ের পরে আমার বোন বলেছিল পড়াশোনা করার দরকার নেই। ঠিক এমনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু আজ আমার বোন ঘরে বসে আছে। ডিভোর্স হয়ে গেছে। কোলে তিন বছরের একটা সন্তান। যদি ঠিক মতো পড়াশোনা করতে দিত তাহলে মানুষের বিভিন্ন কথা শুনতে হতো না। সবকিছু নিজেই গুছিয়ে নিতে পারত।
মাহমুদ তখন বলে, তোমার কী মনে হয় আমাদের সম্পর্ক একদিন নষ্ট হয়ে যাবে?
আমি জানি না কী হবে। তবে এতটুকু জানি, সম্পর্ক গড়তে অনেকটা সময় লাগলেও ভাঙতে কিন্তু এক মিনিট যথেষ্ট। আমার আপুর সাথে যা হয়েছে তারপর থেকে আমি আর কাউকে বিশ্বাস করি না।
মাহমুদ বলল আচ্ছা ঠিক আছে আস্তে আস্তে বিশ্বাস হয়ে যাবে। এটা বলে মাহমুদ চলে যেতে চাইলো। দরজা থেকে বাহির হওয়ার সময়।
পিছন থেকে হালিমা বলল, দাঁড়ান
পিছন থেকে ফিরে দাঁড়াই মাহমুদ।
আপনি কিন্তু আমার কথার এখনও জবাব দেন নাই। জবান না দিয়ে চলে যাচ্ছেন এটা কিন্তু ঠিক না।
মাহমুদ বলল কীসের জবাব।
হালিমা কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলল, আমি আপনার সাথে আমার পড়ালেখার কথা বলেছিলাম।
মাহমুদ বলল, এই বিষয় নিয়ে পরে ভেবে দেখব আমি। মাত্র এক সপ্তাহ বিয়ে হয়েছে ধৈর্য ধরো।
আর তিনমাস পরে আমার এইচএসসি ফাইনাল পরিক্ষা। আমি আর সময় অপচয় করতে চাই না। আমার ভাই আকাশকে বলে দিয়েছি আমার বই গুলো দিয়ে যেতে। কালকে সকালে আকাশ আসবে।
এখন আপনাদের থেকে অনুমতি নেওয়ার জন্য আমার দরকার নেই। কারণ আমি বিয়ের আগেই বলেছি ঘর সংসার সামলাব আর পড়াশোনা করব।
মাহমুদ কিছুটা বিরক্ত নিয়ে চলে যায়। এতোক্ষণে মাহমুদ বুঝে গিয়েছে হালিমা অনেক জিদ্দি একটা মেয়ে। যা বলছে তাই করবে।
পরেরদিন সকালে আকাশের ভাই আসে। আজ শুক্রবার সবাই বাসায় আছে। আকাশ এসে কলিং বেল বাজায়। মাহমুদের মা এসে দরজা খুলে দেয়।
আকাশের হাতে বড় একটা ব্যাগ দেখে বলে এই ব্যাগের মধ্যে কী আছে?
আকাশ বলে আপুর ফাইনাল পরীক্ষা তিন মাস পরে। তাই বইগুলো দিতে আসলাম।
এই কথা শোনার পরে মাহমুদের মায়ের মাথার মধ্যে আগুন ধরে যায়। তারপর মাহমুদের সামনে এসে বলে তুই কী অনুমতি দিয়েছিস পড়াশোনার জন্য।
না আমি কিছু বলি নাই পড়াশোনা নিয়ে। হালিমা বলে দিয়েছে পড়াশোনা করার জন্য কারোর অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই। আর বিয়ের আগে পড়াশোনার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাহলে এখন আর সমস্যা কীসের?
সমস্যা আছে তুই বুঝবি না। বউকে মাথার উপর তুলে রাখা যাবে না। আজ তোর কথা শুনে নাই কালকেও শুনবে না। এভাবে আস্তে আস্তে তোর কথায় কোনো পাত্তা দিবে না।
হালিমা এসে ভাইকে রুমের মধ্যে নিয়ে গিয়ে শরবত খেতে দেয়। অনেক রোদের মধ্যে আসছে। মুখটা একদম পুড়ে গিয়েছে। ক্লাস নাইনে পড়ে আকাশ।
মাহমুদের মা বলে তুই দাড়া আমি মজা দেখাচ্ছি। বই সহ এখনি আমি ওর ভাইকে বিদায় করে দিচ্ছি।
মাহমুদ বলে না মা এমন কিছুই করবে না। চলেই যখন এসেছে কোনো ঝামেলা করবে না তুমি। নতুন বিয়ে হয়েছে এটা যদি হালিমার বাবা মা জানে তাহলে একটা সমস্যা সৃষ্টি হবে। আর ডিভোর্স ও হয়ে যেতে পারে। এখানে মান সম্মানের একটা বিষয় আছে।
আকাশ ওর বোনকে বলে আপু তোর শ্বাশুড়ি তোর পড়াশোনার অনুমতি নিয়ে কী বলছে? আগেই তো বলা হয়েছে তুই বিয়ের পর পড়াশোনা করতে পারবি।
আকাশ ওর দুলাভাইয়ের সাথে বাইরে গিয়েছে তখন হালিমার শ্বাশুড়ি এসে বইয়ের ব্যাগটা নিয়ে চলে যায়।
হালিমা বাধা দিতে চাইলে ধাক্কা মেরে পাশে ফেলে দেয়। খাটের কাঠের সাথে ধাক্কা লেগে মাথা দিয়ে রক্ত বাহির হয়। ঠিক তখনি রুমের মধ্যে,,,,,
চলবে,,,,