অসুখের নাম তুমি,পর্ব-৪,৫
সোনালী আহমেদ
পর্ব-৪
চৈত্র মাস।প্রকৃতি ও পরিবেশের আবহমানতায় বাংলাদেশে চৈত্র মাস রুদ্র বৈভব নিয়ে আসে। চৈত্রের রুদ্র দাপটে ক্রমেই শেষ হয় মৃদুমন্দ উদাসী হাওয়ার মখমল পেলব বাসন্তী দিন, স্বপ্নমেদুর রাত্রি আর রঙিন উৎসবময়তার চালচিত্র।
রাতের হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টির পর মাঠঘাট জলমগ্ন হলেও ভোরেই রোদ্রের প্রখর তান্ডব শুরু হওয়ায় শুকিয়ে খা খা করছে।
তাই তো সকাল ভোরেই সৌহার্দের দাদী তার বোনের বাড়ী ত্যাগ করে নিজ বাড়ী চলে আসেন। সঙ্গে বোনের নাতনিকেও নিয়ে এসেছেন।
এক কালে বোনকে কথা দিয়েছিলেন তার নাতিকে বোনের নাতিনের সহিত বিবাহ দিবেন। যদিও এই কথা সুচনা অর্থাৎ বোনের নাতিনের জানা হলেও সৌহার্দের জানা নয়।
সরাসরি সৌহার্দকে কিছু না বলিলেও ইশারা ইঙ্গিতে নানান কিছু বুঝিয়েছিলেন তার দাদী।
সৌহার্দের দাদীর বয়স সত্তরের ও বেশি। লাঠি ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। তবুও সংসারে তার কথার উপর কেউ কথা বলে না। লিনা এত খারাপ হওয়া স্বত্তেও শাশুড়ির উপর কথা বলতে পারে না। কারণ তার স্বামী সব কথা শুনলেও মায়ের কথার উপর কথা বলা শুনতে পারে না। তবে শাশুড়িকে যে পাত্তা দেয় তা কিন্তু না। লিনার স্বামী না মাকে কিছু বলে আর না বৌকে! সে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে।
জমিলা বেগম বোনের সাথে কথা বলে নাতনিকে সঙ্গ করে নিয়ে এসেছেন। সৌহার্দকে তার বিয়ের খবর সাথে বউকে দেখিয়ে চমক দিবেন বলেই এনেছেন। এসব কথা বোনকে বলে বুড়ি মুচকি মুচকি হাসছিলো।
সৌহার্দ আর অল্প কয়দিন দেশে থাকবে তারপরেই তো বিদেশ চলে যাবে, তাই তিনি সৌহার্দ দেশে থাকতে থাকতে আকদ টা পড়িয়ে ফেলতে চান। তার বয়স হয়েছে,নিঃশ্বাসের ও বিশ্বাস নেই। কবে প্রাণপাখি বেরিয়ে যাবে ঠিক নেই! সেজন্যই বেঁচে থাকতে থাকতে বিয়ে টা দেখতে চান।
পরে সৌহার্দ যখন আবার দেশে আসবে তখন না হয় বিয়ে করে ঘরে বউ নিয়ে আসবে।
বুড়ি মনের বাসনা মনের ভেতর রেখেই মুচকি মুচকি হাসছিলো। সূচনাকে তার বড্ড মনে ধরেছে, মেয়েটা বেশ সংসারী। একসময় সজীবের বউ করার ইচ্ছা পৌষণ করেছিলেন,কিন্তু লিনা তার সাথে সুমির বিয়ে করিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে তার মত অমত দুটোই ছিলো। প্রথমে মানেন নি কারণ তিনি তো সূচনার জন্য তাকে ঠিক করেছিলো,পরক্ষণে সুমির দিকটা দেখে আর অমত থাকেন নি। তাই সূচনার জন্য তিনি সৌহার্দকে ঠিক করেছেন।
বাড়ীতে প্রবেশ করেই তার ছোট নাতিনকে খেলনা দিলেন। হাট-বাজার ঘুরে ঘুরে খুঁজে এনেছেন তিনি।এই নাতিন তার হাতে ভর দেওয়া লাঠির মতো। দাদী পাগল নাতি। লিনার তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সিয়ামের জন্যই অধিক পরিমাণ টান জমিলা বেগমের।
খাবার টেবিলে বসে আছেন জমিলা বেগম। ইতোমধ্যে দুবার সৌহার্দকে ডেকেছেন তিনি।
নাতি আসা পর্যন্ত নাস্তা মুখে দিবেন না তিনি। অতঃপর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢুলুমুলু শরীর নিয়ে নিচে নেমে আসে সৌহার্দ। তাকে দেখতে পেয়েই জমিলার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
সৌহার্দ দাদীকে দেখে অবাক হয়ে যায়। প্রায় দৌড়ে এসে সালাম দিয়ে দাদীকে জড়িয়ে ধরে।
—‘হয়েছে, হয়েছে আর পা ছুঁতে হবে না। এদিকে আয়। এইখানে বস তো। ‘
সৌহার্দ দাদীর পাশে বসলো। জমিলা বেগমের হাত সৌহার্দের শরীরে লাগতেই তিনি প্রায় চিৎকার করেই বললেন,–‘ ও মা! কি হয়েছে তোর? গা দেখি পুড়ে যাচ্ছে। ‘
সৌহার্দ দুষ্টু হেসে বলে,–‘ তুমি ছিলে না যে তাই। এখন তুমি এসেছো, তোমার উষ্ণতায় গা ঠিক হয়ে যাবে।’
জমিলা বেগম তার কান টেনে বলেন,–‘ তাই নাকি!’
সৌহার্দ কান ছাড়িয়ে নিতেই তিনি বলেন,–‘ যে জিনিস নিয়া আসছি,আমারে আর লাগবো না।’
সৌহার্দ দাত কেলিয়ে বলে,–‘ সত্যি? কই দেখি তো,কি নিয়া আসছো?’
–‘ সবুর,সবুর! সবুরেই মেওয়া মিলে!’
সৌহার্দ নিঃশব্দে হাসলো। দাদীর পাশের চেয়ার টা টেনে বসতেই জমিলা হাসি মুখে বলে ওঠে, ‘ নাতি,আজ এত দেরী হইলো কেনো নামতে?’
জমিলার মুখের বাক্য সৌহার্দের কানে পৌঁছাতেই সেকেন্ডে তার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। তার রেশমির কথা মনে পড়ে গেলো। দাদী তো রেশমির কথা জানে না। সে কীভাবে কী দাদীকে বলবে?
এতক্ষণ টেবিলের অপর প্রান্তে বসে সবকিছুই দেখছিলো লিনা। জমিলার প্রশ্ন তার কালো মুখে পলকেই হাসি ফুটিয়ে দিয়েছে।
খাবারের প্লেট টা হালকা আওয়াজ করে সামনে এনে বললো,–‘ মা,আপনার নাতি আপনার জন্য চমক রেখেছে। সে জন্যই দেরী।’
—‘তাই নাকি? সেটা কি?’
—‘ একটু পরেই দেখতে পাবেন মা। আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি, আপনি একদম চমকে যাবেন।’
জমিলা বেগম কপাল কুচকে তাকালেন। লিনার মতি গতি ভালো ঠেকছে না তার। এদিকে সৌহার্দের কপালে ঘাম জমতে লাগলো।
চাচী উল্টাপাল্টা বলার আগে তাকেই সব বুঝিয়ে বলতে হবে।
সে বলে,–‘ দাদী ,আমি না খুব বড় এক কাজ করে ফেলেছি।’
—‘ কি করেছিস?’
সৌহার্দ আমতা আমতা করে বলতেই নিচ্ছিলো তখনই সুমি আর রেশমি সেখানে উপস্থিত হয়।
মাত্রই গোসল সেরে এসেছে রেশমি। ঘরের উল্টো দিক দিয়ে সুমির সাহায্যে কলের পাড়ে গিয়ে গোসল করেছে। সুমি এসে দাদীকে সালাম করে নাস্তা এগিয়ে দিলো।
জমিলা বেগম প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন রেশমির দিকে। সুমি ইশারায় রেশমিকে বলে, পা ছুঁয়ে যেনো সালাম করে।
পরপর দুবার ইশারা করার পর রেশমি বুঝতে পারে। সালাম পর্ব চুকতেই জমিলা বেগম রেশমির দিকে তাকিয়ে বলেন,—‘ তুমি কেডা? তোমারে তো চিনতেছি না।’
এবার লিনা হেসে ওঠলো। সে প্রস্তুতি নিয়ে বসেছে খেলা দেখতে। রান্নাঘরের দিকে কয়েকবার উঁকি দিলো সূচনাকে দেখতে।
মেয়ে টা নিজ হাতে নানানরকম পিঠা বানিয়ে এনেছে। সেগুলোই চুলোয় গরম করতে গিয়েছে। লিনার তর সইছে না,এখনো আসছে না কেনো? দুর, ব্যাঙ্গ!
রেশমি নম্রতার সাথে জবাব দে,–‘ রেশমি। আমার নাম রেশমি।’
—‘ সেটা বুঝবার পারছি। কিন্তু তুমি কার কে হও?’
রেশমি জবাব দেওয়র আগে জমিলা বেগম আবার নিজে নিজে বলে উঠেন,—‘ সুমির সাথে আসছো? ওহ, তুমি সুমির সই? তা এত সকালে যে ,কোনো বিশেষ দরকার?’
রেশমি নির্বাক হয়ে তাকায়। এ বুড়ি নিজেই সব ভাবছে,নিজেই বলছে। তাহলে নিজেই ভাবোস না কি দরকারে আসছি।মনে মনে বেশ তর্ক করলো রেশমি।
—‘না, না। আমি উনার সই না।’
—‘ওহ। তাহলে কে?’
রেশমি মুখে ভীষণ লজ্জা ফুটিয়ে বলে ওঠে,–‘ আ্ আমি উনার বউ।’
সৌহার্দকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে কথাটি বলে রেশমি। ঠিক তখনই উপস্থিত হয় সূচনা। পায়ের বাটি হাতে নিয়ে বেশ হাসিখুশি মুখেই আসছিলো। মনে মনে বেশ লজ্জাও পাচ্ছিলো সৌহার্দের সামনে আসতে। কিন্তু রেশমির কথা শুনতেই থমকে গেলো। হাতে থাকা পায়েসের বাটি টা ছুটে নিচে পড়ে গেলো। মুহূর্তেই বিকট আওয়াজ ঘটলো। সবাই একসাথে সূচনার দিকে তাকালো।
চলবে!
অসুখের নাম তুমি
সোনালী আহমেদ
৫ম পর্ব
সৌহার্দকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে কথাটি বলে রেশমি। ঠিক তখনই উপস্থিত হয় সূচনা। পায়েসের বাটি হাতে নিয়ে বেশ হাসিখুশি মুখেই আসছিলো। মনে মনে বেশ লজ্জাও পাচ্ছিলো সৌহার্দের সামনে আসতে। কিন্তু রেশমির কথা শুনতেই থমকে গেলো। হাতে থাকা পায়েসের বাটি টা ছুটে নিচে পড়ে গেলো। মুহূর্তেই বিকট আওয়াজ ঘটলো। সবাই একসাথে সূচনার দিকে তাকালো।
সূচনার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কত শত রাত জেগে স্বপ্ন বুনেছে এ মানুষ টার জন্য। কত শত আশা নিয়ে সে এ বাড়ীতে এসেছিলো। মুহূর্তেই সব ধূলিসাৎ হয়ে গেলো।
লোকে কি বলবে? পরপর দুবার বিয়ে ভেঙ্গে গেলো তার। প্রথম এক ভাই পরবর্তীতে আরেক ভাই। এদের সাথে কি সূচনার পূর্বের কোনো শত্রুতা আছে নাকি? যদি তাকে বিয়েই না করতে চায় তাহলে পরপর দুবার এমন যেচে যেচে প্রস্তাব দিয়েছে কেনো?
সে কীভাবে মূখ দেখাবে? আশার পথে প্রায় প্রত্যেক বাড়ীর মানুষ তাকে দেখে প্রশ্ন করেছিলো সে কই যাচ্ছে?
জমিলা বেগম তখন গর্ভের সুরে বলেছিলেন,
–‘ আমার নাতির বউ করেতেই নিয়ে যাচ্ছি।’
জমিলার পাশেই সূচনা হাটতো। এই কথার বিনিময়ে সে সবাইকে লজ্জা মিশ্রিত হাসি উপহার দিতো। জমিলা বেগম তা নিয়েও খিল্লি উড়াতেন।
সূচনার জীবনে অন্য কোনো পুরুষ মানুষ না থাকায় তার সব আশা-আকাঙ্খা সৌহার্দকে ঘিরেই ছিলো। তার মনের গহীন কোণে- মনেরকৌঠায় সৌহার্দকে বন্দী করেছিলো। হবু বরকে নিয়ে স্বপ্ন বুনা কি অস্বাভাবিক? সে তো লুকিয়ে নয় সবার প্রকাশ্যেই তার নানান বাসনা প্রকাশ করেছিলো। তার সকল সই’রা জানে সৌহার্দের ব্যাপারে। এ বাড়ীতে আসার সময় শখ করে একখানা রুমাল তৈরী করে এনেছিলো সূচনা। সুতো দিয়ে আকাঁ ফুল আর নামগুলোতে যেনো তার সকল মনের আবেগ মিশ্রিত ছিলো।
কতই না লজ্জা পেয়েছিলো সৌহার্দের নামের নিচে নিজের নাম লেখার সময়। যার ফলে পুরো একটা দিন কারো সামনে উপস্থিত হতে পারে নি।
অসময়ে সূচনার উপস্থিতি জমিলা বেগমের অবস্থার আরো পরিবর্তন হয়ে গেলো।
—‘এই,দস্যি মেয়ে এসব হাবিজাবি কি বলো? কে তোমার বর? কিরে নাতি এই মেয়ে এসব কি বলো?’
সবাই নিশ্চুপ। কারো মুখে কথা নেই,লিনা বাদে। তার মুখে বিরাজমান শয়তানি হাসি। অবশ্য সে বেশ খুশি সূচনা এ বাড়ীর বউ হতে পারে নি বলে। কারণ সে জানতো সূচনাকে বউ করলে সম্পদ তার হাত ছাড়া হয়ে যাবে।
রেশমিকে নিয়ে তার চিন্তা নেই, ভাইয়ের বিয়ের সময় বেশ ঘেটেঘুটে এই মেয়েকে ঠিক করেছিলো। আর এই বুড়ো আঙ্গুল সমান মেয়ে ই বা কী করতে পারবে?
—‘ও নাতি,কথা বলছো না কেন?’
—‘হু, আমি ওর বর।’
জমিলা বেগম ঘর কাপিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন,–‘কিহ!’
সবাই ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে। সৌহার্দ মাথা ঝুঁকিয়ে রেখেছে। সে কখনো কারো সামনে মাথা নত করে থাকে না,আজ প্রথম রেশমির জন্যে মাথা নত করতে হচ্ছে।
জমিলা বেগম গম্ভীর গলায় বলেন,
—‘কবে হলো এসব?’
–‘কাল।’
—‘ কীভাবে? নাকি আগে থেকেই দেখা-সাক্ষাৎ ছিলো? যদি এমন হয় তাহলে আমার দম থাকতে ওই বেহায়া,নির্লজ্জ মেয়েকে আমি আমার ঘরের চৌকাঠেও পা রাখতে দিবো না।’
—‘ তার সাথে আমার এর আগে কখনো দেখা হয় নি।’
—‘তাহলে কীভাবে বিয়ে করেছো আমাকে না জানিয়ে?’
—‘ আমিও জানতাম না যে আমি বিয়ে করবো। কাল চাচীর সাথে উনার ভাইয়ের বিয়েতে গিয়েছিলাম। তখন,,,’
—‘ ওই আধ বুড়ো রফিক? তার না বউ আছে?’
এ কথা শুনতেই লিনা ফুসে ওঠে। রাগান্বিত গলায় ‘ আম্মা’ বলে কিছু বলতে নিচ্ছিলো তখন জমিলা বেগম চোখ রাঙ্গিয়ে বলেন,
–‘ আমাদের মধ্যে কেউ কোনো কথা বলবে না। নাহলে খুব অসুবিধা হয়ে যাবে।’
তারপর সৌহার্দের দিকে তাকিয়ে বলে,
–‘তুই বল।’
—‘হু। উনার বউ অসুস্থ,তাই চাচীর ভাই আবার বিয়ে করবেন,বউয়ের দেখাশুনার জন্য। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে বিয়ে বাড়ীতে। রেশমিকে দেখে আমি সম্পূর্ণ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এত ছোট মেয়ে আর এত বয়স্ক লোক। আমি ভুলবশত ওই রুমে ডুকে যায়,যেখানে ওকে সাজিয়ে রাখা হয়েছিলো। তখন রেশমি হুট করে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে’ মামা, আমি বিয়ে করবো না।’ আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিলাম,দ্রুত গতিতে তাকে সরিয়ে কেটে পড়ি, রেশমি তখনও জানতো না ও কাকে ধরেছিলো। এ দৃশ্য কিছু লোকজন দেখে ফেলে,মুহূর্তেই তারা বাহিরে কুৎসা রটিয়ে দেয়। বেশ কয়েকজন রেশমিকে কলঙ্কী, বেশ্যা এমন এমন কথা শুনাচ্ছিলো। কি জানি,কি শুনে চাচীরাও পাল্টি খেয়ে যান,তারা জানায় যে এ বিয়ে হবে না। তা শুনে রেশমির মামা বললেন,
–‘ বিয়ে ভাঙ্গলে নাকি তিনি আর কোথাও বিয়ে দিতে পারবে না। তাই এ কলঙ্কের মুখ থেকে রক্ষা করতে আমিই যেনো তাকে বিয়ে করি।’
আমি বলেছিলাম, কেনো কেউ করবে না? অবশ্যই করবে। তখন একজন বলে,’সবার দরকার নেই।তুমি করবে? তুমিই তো করবে না বাকিদের কথা কেনো বলছো?
এরপর সবার কথা শুনে এক প্রকার জেদের বসেই রেশমিকে বিয়ে করে ফেলি। ‘
সৌহার্দের কথা শেষ, সে স্বাভাবিকভাবেই বসে আছে। তার মধ্যে কোনোরকম অনুতপ্ততা নেই।
বাকিদের দৃষ্টি তার দিকেই নিবদ্ধ ছিলো। তার কথা আর ভাবমূর্তি সবার মষ্তিষ্কে দু ধরনের মনোভাব সৃষ্টি করেছে।
লিনা বেগম বেশ আবেগি গলায় বলে,
—‘ মা,আপনি জানেন আমি কতবার বারণ করেছিলাম এ বিয়ে না করতে। কিন্তু আপনার নাতি জনদরদী হতে গিয়েছিলো, সে আমার কথা উপেক্ষা করে বিয়ে করেছে। এমনকি সে আমার ভাইকেও নানান কথা শুনিয়েছে। মেয়েটারে দেখতেই সে কেমন হয়ে গিয়েছিলো। নিশ্চয়ই কোনো জাদুটোনা করছে নাহলে আমার ভাইরে কেমনে এত কথা শুনিয়ে বিয়ে থেকে ঘুরিয়ে দিয়েছে? মেয়েটা বশীকরণ করতে জানে মা, একদিনেই আপনার নাতি বিয়া কইরা ফেলছে। শেষ,আপনার সংসার শেষ!’
সৌহার্দ কোনো কথা বললো না, সে প্লেট টা টেনে খেতে বসলো। এ বিয়ে নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথ্যা নেই।
রেশমি চুপচাপ এক কোণে দাড়িয়ে সব শুনছে। প্রত্যেক টা মানুষকে সে নজরে রাখছে। লিনার কথা শুনে তার বেশ সময় লাগলো না চরিত্র সম্পর্কে ধারনা করতে। সে এবার সৌহার্দের দাদীর মুখপানে চেয়ে আছে, দেখতে চায় তিনি কি বলে?
জমিলা বেগম বেশ খানেক সময় নিরবতা পালন করলেন। ঠান্ডা মাথায় বিবেচনা করে বলেন,
—‘ তার মানে এ বিয়া তুই নিজ থেকে করতে চাস নাই? তোরে জোর করসে।’
সৌহার্দ জবাব দেয় না,সে আপনমনে খাচ্ছে।
জমিলা বেগম সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরলেন। বেশ সময় নিরবতা পালন করলেন।
—‘ তাহলে এ মেয়েরে ছাইড়া দে তুই। আমি তোর জন্য এর থেকে ভালো মেয়ে দেখে রাখছি।’
—‘ ছাড়তে হলে বিয়ে করতাম না। বিয়ে এত সহজ না।’
—‘ আমারে একদম জ্ঞান দিবি না। তোর থাইকা আমি বহুত জানি। তুই ভালো বুঝোস? এ মেয়েরে আজকেই ছাইড়া দিবি,এখনই দিবি। আমি তোরে দুইদিনের মধ্যে বিয়া করামু।’
সৌহার্দ জবাব দেয় না,শুধু একবার রেশমির দিকে তাকায়। রেশমির চোখে জল টলমল করছে। সৌহার্দের এমন গা ছাড়া ভাব দেখে সে ফুসে উঠলো। চোখের পানি সেকেন্ডেই লুকিয়ে ফেললো। ঘরের কোণা থেকে একদম মাঝের দিকে আসলো, মাথার চুলে পেচানো গামছা টা খুলে ফেললো। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে,বুঝতে চেষ্টা করছে সে কি করতে চায়?
এক রাশ ঘন চুল তার পিঠ ছাড়িয়ে কোমর অবধি ঠেকলো। রেশমি এসে সৌহার্দের পাশের চেয়ার টায় বসলো। সৌহার্দকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–‘ আমাকে পানির গ্লাস টা একটু দিন।’
সৌহার্দ চুপচাপ এগিয়ে দিলো। তার কান্ডে বেশ অবাক সবাই। জমিলা বেগম রাগে গর্জে বলে ওঠেন,
–‘ এই মেয়ে, এসব কি ধরনের ব্যবহার?তুমি এখানে বসেছো কেনো?’
—‘ তো কোথায় বসবো?’
—‘কোথায় বসবা মানে? তুমি এখানে কেনো? যাও এখান থেকে। এক্ষুণি যাও।’
—‘ কেনো দাদী? আপনি বুঝি আপনার স্বামীর সাথে খেতে বসতেন না?’
—‘এই, কে তোর দাদী? কে তোর স্বামী। ওরে একদম স্বামী বলবি না, আজকেই চলে যাবি এ বাড়ী থেকে। শুনোস নাই ও যে তোরে সবার প্যাচে পইড়া বিয়া করছে?’
—‘ কি যে বলেন? আমি কোন দুঃখে স্বামী বাড়ী ছেড়ে যাবো? আর উনি যদি প্যাচে পড়ে বিয়া করে থাকে তাহলে রাতে কেনো আমার সাথে থেকেছে? আমার সতীত্ব শেষ করে এখন ছেড়ে দিবেন? এটা আমি মানবো? ‘
রেশমির কথা শুনে সৌহার্দ বিষম খেলো। সবাই অদ্ভুদ ভাবে তাকালো। লিনার স্বামী চুপচাপ উঠে চলে গেলেন।
জমিলা বেগম নাকমুখ ছিটকিয়ে বলে উঠেন,
—‘ ছিঃ! ছিঃ! লজ্জা শরম কি কিছুই নাই নাকি?এসব কি বলতাছো?’
—‘ভুল কই বললাম? আপনি আমার ভেজা চুল দেখছেন না। ও হো বুঝেছি, দাদাজি বোধ হয় আপনারে এমন সোহাগ করে নাই, তাই না?’
এবার কোনো দিকে না তাকিয়ে সজীব উঠে চলে গেলো। সৌহার্দ কাশতে কাশতে যক্ষা রোগীর মতো হয়ে গেলো। সূচনার দৃষ্টি রেশমির চুলের দিকে, বুকটা ধক করে ওঠলো তার। তার দুঃখের সাগর এবার কানায় কানায় পূর্ণ হতে লাগলো।
জমিলা ফুশে উঠলো। সে রেগে বলে,–‘ দাদাজী সোহাগ না করলে তোমার শশুড় আসতো না,আর শশুড় না আসলে তোমার স্বামী আসতো না।’
রেশমি কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না,সে আপনমনে খেতে লাগলো। তার এমন ভাবমূর্তি দেখে জমিলা বেগম আরো বেশি রেগে গেলেন। তিনি,,
চলবে!