শূন্যতায় অস্তিত্ব (পর্বঃ ১৫,১৬)

শূন্যতায় অস্তিত্ব (পর্বঃ ১৫,১৬)
লেখাঃ তাজরীন খন্দকার
পর্বঃ ১৫

এটা শুনে আমি চোখ ফিরিয়ে রায়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম আর চমকে উঠলাম।
কারণ তিনি এখানে নেই। আমি হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়ালাম। না উনাকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা৷ একটু আগেই তো বুঝতে পেরেছিলাম উনি এখানেই আছেন, তাহলে হুট করে কোথায় উধাও হয়ে গেলেন?

আমি এখান থেকে আসতে চাইলেই তিয়াস বলে,
___ রায়ান ভাইয়া হয়তো ভেবেছে আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিবে, কিংবা কোনো অনুগ্রহ করবে তাই হয়তো..

আমি রাগী চোখে ফিরে তাকিয়ে, ঝাঁজালো গলায় বললাম,
___ এই এই চুপ করবে তুমি? তোমার কি মাথায় সমস্যা আছে? কি বললে এতক্ষণ পাগলের মতো? এগুলো কোনো যুক্তি কিংবা ভালো মানুষের কথাবার্তা? আর তুমি কি শুধু এই একটা পাপই করেছো? তুমি নুজহাতকে সা’দের থেকে আলাদা করেছো, রায়ান ভাইয়ার কাছে প্রথমে আমাকে নিয়ে উল্টা পাল্টা বলেছো, আবার নীরা ভাবীকেও এসব জানিয়েছো! হ্যাঁ আমি মানলাম তোমার ছোট পাপা মারা গেছে, তাই বলে তোমাকে এসব করতে হবে? অন্তত মেয়েদের প্রতি ঘৃণায় বেঁচে থাকতে, সেটাও ভালো ছিল! ক্ষতি করে জীবনের মানে শেখানোর ভুলভাল যুক্তি কোথায় পেলে তুমি?

তিয়াস আস্তে আস্তে জবাব দিলো,
___ ভেবেছিলাম তোমার প্রতি রায়ান ভাইয়ার ভালোবাসাটা দূর্বল, তোমার সম্পর্কে উল্টা পাল্টা বললে সেটা মচকে যাবে। আর তাই আমি তোমাকে আমার করে পাওয়ার জন্য এমন করেছি। কিন্তু বুঝেছি উনি তোমাকে আমার চেয়েও অনেক বেশি ভালোবাসে, এই ভালোনাসায় কোনো খাঁদ নেই।
আর সা’দকে আমি কোনো উস্কানি দেইনি,কিংবা তাদের সংসারেও কোনো রকম আঘাত হানিনি। সা’দ নিজেই একটা খারাপ, সে আমার থেকেও খারাপ।
আমি তো শুধু ভালোবাসায় জড়িয়ে সেটা প্রকাশের সময়সীমা দীর্ঘ না করেই ছেড়ে দেই,কিন্তু সা’দ তা করে না। সা’দ যখন নুজহাতের সাথে সম্পর্কে ছিল তখনি তার আরো এক্সট্রা গার্লফ্রেন্ড ছিল। বেচারি নুজহাতকে মানবেনা বলে জেদ ধরে গ্রামে চলে গেলো। আমি ওকে বুঝানোর জন্য আর কোনো উপায় দেখিনি। নয়তো নুজহাত মেয়েটা নির্ঘাত সেদিন সুইসাইড করা ছাড়া কোনো অপশন পেতোনা। আর আমি সেটাকে প্রবল ঘৃণা করি। সেজন্যই সা’দকে বলেছিলাম বিয়ের পরেও প্রেম করিস,এখন নুজহাতকে মেনে নে। তবে আমার মনে ছিল বিয়ের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সে শোধরায় নি। আমি মানলাম আমি ওর সাথে চলাফেরা করি, কিন্তু আমি তাকে এরকম কিছুই বলিনা। আর জানিনা এই মূহুর্তে তুমি এসব কথা কেন বলছো! কিন্তু বিশ্বাস করো…

আমি সেখান থেকে পা বাড়িয়ে বললাম,
___ আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না। একবার বিশ্বস্ত হয়ে ঠকিয়েছো আর এখন আবার বিশ্বস্ত হওয়ার জন্য আজগুবি কথা বলছো। তোমার সব কথা আমার কাছে ভিত্তিহীন লাগছে।
ভেবেছিলাম সবকিছুর সমাধান হবে, সব জানতে পারবো কিন্তু নাহ এখন মাথায় আরো ঝট পাকিয়ে দিয়েছো। থাকো তুমি..

তিয়াস ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। আমি মেইন রাস্তায় এসে গাড়ী নিলাম। তারপর বারবার রায়ান ভাইয়াকে ফোনে ট্রাই করছিলাম। কিন্তু উনার ফোন বন্ধ বলছে। আসলেই উনি উল্টো ভেবেছে? সব কথা না শুনে এভাবে চলে গেলেন কেন?

বাসায় এসে মা’কে ফোন দিলাম আর তিয়াস আজ যা যা বলেছে সব বললাম। মা শুনে তব্দা খেয়ে ছিলো। বাবাও বুঝতে পারছেনা এসব কেমন উদ্ভট লজিক হতে পারে? আমার মাথা একদম হযবরল অবস্থা। অন্যদিকে রায়ান ভাইয়াকে কোথাও পাচ্ছিনা, এমনকি জানিনা উনার বাসার ঠিকানাও।

এরপরেরদিন আমিও তিয়াসের বিরুদ্ধে থানায় একটা ফাইল করে আসলাম। জানিনা হুটহাট কি হয়ে যায়, তবে বিষয়টা জানানো দরকার ছিল! এতদিন ভেবেছি ওর মুখ থেকে সবকিছু শুনে নিবো, তারপর যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিবো। কিন্তু এখন আমি জানি সে যা করেছে সব খামখেয়ালে, এসবের কোনো মানে নেই।


কয়েকদিন চলে গেলো!
একটা চাকরির পরিক্ষা দিয়ে ফিরছিলাম। এই চাকরিটা হয়ে গেলেও পারমানেন্ট নয়। পরবর্তীতে ভালো জায়গায় চাকরি পেলে ছেড়ে দিবো এমন ভাবনাতেই পরিক্ষা দেওয়া, কেননা আমার ইচ্ছে যতো তারাতাড়ি সম্ভব পরিবারকে শহরে নিয়ে আসবো।

ফেরার পথে রাস্তার মোড়ে হঠাৎ আন্টির সাথে দেখা, মানে তিয়াসের মা। আমি সরে আসতে চাইলেও উনি ডেকে দাঁড় করালেন। আর চোখে চশমাটা আধ খোলা করে একটা পাশে এসে স্থির হয়ে দাঁড়ালেন। আমি তাড়ার স্বরে বললাম,
___আন্টি কিছু বলবেন?

তিনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
___লিয়া তিয়াস তোমাকে সবকিছু বলেছিলো তাইনা? হয়তো তুমি ওর কথা মানতে পারো নি। ওকে বিশ্বাস করোনি। আর কে মানবে বলো? একটা পাগলের কথাকে কে গুরুত্ব দেয়? !

আমি অবাক হয়ে বললাম,
___ পাগল?

আন্টি ধিরে ধিরে বললো,
___হ্যাঁ সে মানসিক বিপর্যস্ত এক মানুষ। সে শোধরাবেনা কোনোদিন। তোমাকে এসব বলার পরেও সে এক মেয়ের সাথে প্রতারণা করেছে। মানে এই কয়দিনের মধ্যে। জানিনা আমার ছেলে কোনোদিন স্বাভাবিক হবে কিনা, কিন্তু আমি মা হিসেবে আর নিতে পারছিনা।

___ তো আপনারা কোনো বিশেষজ্ঞদের কাছে যাচ্ছেন না কেন?

___বহু জায়গায় গিয়েছি, লাভ হয়নি। সে তার ছোট পাপার মধ্য থেকে আজও বের হতে পারেনি। তার মধ্যে প্রতিশোধ জেগে আছে, বিশেষজ্ঞরা বলেছে এটার আংশিক হলেও সে করে যাবে। তুমি জানো সে তারা ছোট পাপার ভয়ানক মৃত্যুদেহটা প্রথমবার দেখেছিল, আর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। এমন একটা অবস্থা ছিল ডক্টররা বলেছিল সে সম্পূর্ণ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে । কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে সেটা হয়নি,কিন্তু কম কি হয়েছে বলো? এরপর থেকে সে যা চায় আমরা তাই তাই মানি, ওর বাবা ভীষণ ভয় পায় সেও যদি তার ছোট পাপার মতো কিছু একটা করে বসে! কিন্তু আমরা এতদিন ওর সম্পর্কে এতকিছু জানতাম না, সে মানুষের সাথে প্রতারণা করে তাদের স্বাভাবিক জীবনকে বেহাল করে তারপর তাকে শক্ত করে তুলতে চায় এসব আমরা তোমার জন্য প্রস্তাব নেওয়ার পরে জেনেছি। অন্যদিকে তিয়াস এখনো চট্টগ্রামে ওর ছোট পাপাকে মৃত্যু ঠেলে দেওয়াসেই মেয়েটার সন্ধানে পড়ে আছে। কোথা থেকে খবর পেয়েছিল সেই মেয়ের চট্টগ্রামে বিয়ে হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো হদিস পায়নি।
অন্যদিকে তিয়াসের একমাত্র দূর্বলতা হলো সে মানুষের নিজের প্রাণ নিজে বিসর্জন দেওয়া মানতে পারেনা। ছোট বেলা থেকেই সুইসাইডের কোনো সংবাদ শুনলে সে এমনভাবে কেঁদে উঠতো যেন ওর সাথে কিছু হয়েছে । তার একটাই লক্ষ্য সবাই জীবনের গুরুত্ব বুঝুক, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকুক! কিন্তু সেটার জন্য সে উল্টা পাল্টা যুক্তি ব্যবহার করে। সে মানতেই চায়না যে তার করা কাজগুলো ভুল। ওর সাথে এই নিয়ে তর্ক করে কেউ পেরে উঠেনা। তিয়াসের মধ্যে আর কোনো সমস্যা নাই, শুধু এটাই সমস্যা, তার ভুল চিন্তা চেতনাকে সে সঠিক বলে ধরে নেয়! বিশেষজ্ঞরা বলে, সে এগুলো প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে করে, কিন্তু এরপর তার মনুষ্যত্ব থেকে এটা ধরে নেয় সেই মানুষটা প্রতারিত হয়ে নিজেকে ঘুরিয়ে নিবে, জীবনকে ভালোবাসবে, কখনো অপরের উপর এতটা নির্ভর হবে না, যতটা হলে সে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে! কিন্তু তিয়াসকে কেউ বুঝাতে পারেনি এসব এক-দুইজনের জন্য হতে পারে, কিন্তু সবাই সব মানতে পারবেনা, আর সবাই উঠে দাঁড়াতে পারবে না!
সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত সে মনে মনে মেয়েদের প্রতি অন্য রকম চিন্তা চেতনায় বেড়ে উঠেছে, প্রায় ক্ষেত্রেই মেয়েদের সাথে খারাপ আচরণ করে, তোমার সাথেও তো করছিলো, ওই যে ইয়াসকে পড়ানোর সময়, এসব স্বাভাবিকভাবেই করতো তিয়াস। তবে সে মেয়ের সাথে প্রতারণা করতে চায় তার সাথে ভীষণ ভালো আচরণ করে , এতো ভালো যে ওকে মানুষ না ভেবে কেউ কেউ ফেরেস্তা ভেবে ফেলতে পারে! কিন্তু আমরা ইদানীং বুঝতে পারি ওর ছোট পাপার প্রতি তীব্র ভালোবাসা তাকে এইদিকে সম্পূর্ণ ভারসাম্যহীন করে দিয়েছে।
আর এগুলো সব আস্তে আস্তে আমরা জানতে পেরেছি, বাসায় বিভিন্ন ধরনের অভিযোগও আসে, আমাদের পরিবার ছাড়া এসব শুধু তোমাকে আজ জানালাম। আরেকটা কথা বলতে চাই, আমি অনেকদিন ধরে তোমাকে খুঁজতেছি একটা জরুরী কথা বলতে ,জানিনা মা হয়ে এই কথাটা বললে কীভাবে নিবে!

আমি অস্থির ভঙ্গিতে বললাম,
___ কি কথা বলুন!

উনি চোখ মুছতে মুছতে বললেন,
___ তিয়াস হয়তো ওর ছোট পাপাকে সুইসাইড করতে বাধ্য করা সেই মেয়েকে সাজা দিতে পারলে ভালো হয়ে যেতো। কিন্তু তাকে তো পাওয়া দুষ্কর। আর এতো বছর পর সেটা সম্ভবও নয়,তাই তিয়াসও এমন অপরাধবোধ থেকে সরে আসতে পারবে বলে মনে হয় না । এই জন্য আমি তোমাকে বলবো তিয়াসকে আইনের হাতে তুলে দাও। সে অপরাধ করেছে এবং করবে। কিন্তু যদি কোনো প্রতিবাদ না হয় সেটা আরো বিপদজনক পরিবেশে পৌঁছাবে। ওর নামে অনেকগুলো আইনি নোটিশ এসেছে কিন্তু গুরুতর কিছুইনা, ঠিকি পার পেয়ে যাচ্ছে। আমি চাই তুমি তাকে অপরাধী প্রমাণ করে শাস্তির ব্যবস্থা করো। হতে পারে এতেও সে শোধরাতে পারে, কারাগারে একা থাকার পরে শুধু প্রেমের একাকিত্ব নয় সব একাকিত্বের মধ্যেই সে সেটা বুঝতে পারবে যে প্রতিটি মানুষ মূল্যবান। যাকে মন থেকে একবার ভালোবাসা হয় তাকে মুছে ফেলা খুব কঠিন। ওর মধ্যেকার ভ্রান্ত ধারণাগুলোর খুব শীগ্রই পরিত্রাণ হোক! আজ পর্যন্ত সে কখনোই কোনো কারণে কষ্ট পায়নি, আমরাও দেইনি! শুধু ওই মৃত্যুটা তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। আমার বলতে কলিজা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু তাও চাই সে শাস্তি পাক, সে বাস্তবতা বুঝুক! এভাবে আর কতোদিন? অনেক বছর তো হলো! ওর সাজা হওয়া উচিত! সেসময়টা পর্যন্ত আর কিছু মেয়ে ওর কবল থেকে নিরাপদে থাকুক! আমি আর নিতে পারছিনা এতো যন্ত্রণা!

উনি বারবার ওড়না দিয়ে চোখের জলগুলো মুছতেছেন। আর আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি। যেই ছেলে সবাইকে বুঝাতে চায় একটা মানুষ চলে গেলেও বেঁচে থাকার জন্য আরো অনেক মানুষ আছে,অনেক প্রিয়জন আছে, সেই মানুষটাই কিনা তার সেই ছোট পাপার জন্য এতটা ব্যকুল, আরো এতটাই অপরাধবোধ নিয়ে বেড়ে উঠছে?
আমি আন্টির কাঁধে হাত রেখে উনাকে আশ্বস্ত করলাম। তারপর বললাম,
___ আমি ওর কাজের জন্য ঠিকি শাস্তি দিবো। ওর ভেতরে হাজার যন্ত্রণা থাকুক,প্রতিশোধের আগুন থাকুক, কিন্তু সেটা নিরপরাধ মানুষের ক্ষেত্রে কেন প্রয়োগ করবে? অবশ্যই তার শাস্তি পাওয়া উচিত!

উনি ঠোঁট ভেঙে কেঁদেই যাচ্ছেন। আমি একটা রিকশা ডেকে উনাকে তুলে দিলাম। আর নিজের বাসার দিকে এগিয়ে চললাম। মাথার উপরে বিরাট একটা পাহাড় চেপেছে যেন! সেটা বয়ে আমি চলতে পারছিলাম না। বারবার এটাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো, একটা মা ছেলের কতটুকু অপরাধ থেকে নিজে তার শাস্তি দাবী করেন! হয়তো তিনি নিজের ছেলেকে স্বাভাবিকভাবে দেখার তীব্র বাসনায় এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। যে কোনো কিছুর বিনিময়েও তিনি নিজের ছেলেকে সুস্থ স্বাভাবিক দেখতে চান! কিন্তু কে জানে এতেও সে বাস্তবতা বুঝবে কিনা!



পরেরদিন আমি বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। তখনই নুজহাতের ফোন। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই শুনলাম নুজহাত বলছে,
___সা’দকে পুলিশ নিয়ে গেছে। আর তিয়াসের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ তুলে নিয়েছি। সা’দ স্বীকার করেছে সে নিজের দোষ হালকা করতে তিয়াসকে এখানে জড়িয়েছিলো। আগে আগে দোষ স্বীকার করে নিয়েছে আর বলেছে এসব যেন তিয়াস না জানে। কারণ সে বুঝতে পেরেছে তিয়াস এসে জিজ্ঞাসা করলে তার এই মিথ্যে বলার জন্য আরো বাজেভাবে ফাঁসতে হবে । এখন মাফ চাচ্ছে, বলছে এমন ভুল আর করবেনা। আমি যেন তাকে গ্রহণ করি, সে তার বউ বাচ্চা ছাড়া আর অন্যদিকে তাকাবেনা। কি করবো লিয়া?

আমি স্থির হয়ে বসে পড়লাম। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জবাব দিলাম,
___ আচ্ছা এই দুনিয়ায় ফাঁসানো,প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, ঝগড়াবিবাদ, খুন, খারাপি ছাড়া আর কিছু নেই? আমি বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছিরে! আমি তোকে আর কি সাজেশন দিবো? আজকাল আমি নিজেই নিজের অস্তিত্ব টের পাইনা।

নুজহাত আমার কথা বুঝেছে কিনা জানিনা। কিন্তু কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিলাম। একদিকে তিয়াসের এই অবস্থা, অন্যদিকে রায়ান ভাইয়াও বেপাত্তা, তার উপর নুজহাতের সংসারে ভাঙচুর! এসবকিছুর সাথে আমি না থেকেও কেমন থেকে যাচ্ছি , না জড়িয়েও অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে যাচ্ছি! কেন?

চলবে…

শূন্যতায় অস্তিত্ব (পর্বঃ ১৬)
লেখাঃ তাজরীন খন্দকার

সবকিছুর পরে আমি বুঝতে পারলাম সত্যি তিয়াস এসব নিজের বশে করছে না। তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া কি যুক্তির হবে? এদিকে নুজহাতের সাথে সে কোনো খারাপ করেনি, যা করেছে আমার সাথে করেছিল এবং আমার মতো আরো অসংখ্য মেয়ের সাথে করেছিল। কিন্তু তিয়াস বলছে সে যাদের সাথে প্রতারণা করেছে সবাই-ই উঠে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে তার মা উপায়ন্তর না পেয়ে নিজেই ছেলের শাস্তি দাবী করছেন। এতে কি সে কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারে? তার শাস্তি দেওয়া যেতে পারে তবে সেটা স্বাভাবিক মস্তিষ্কের দ্বারা যদি আবার ভুল হয়। এখন তিয়াসের কথার যেমন যুক্তি নেই, ওর মায়ের কথারও যুক্তি নেই। আগে ওর চিন্তা শক্তি কিংবা প্রতিশোধের ঘোর থেকে মুক্তি লাভ দরকার।
এখন এসব বাদ দিয়ে অন্য উপায় বের করতে হবে।

দুইদিন পরে হঠাৎ করেই রায়ান ভাইয়ার দেখা মিললো। রায়ান ভাইয়া বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। উনাকে দেখার সাথে সাথে আমি এক দৌঁড়ে নিচে গেলাম। উনি অপরাধবোধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। কাছে গিয়েই আমি রেগে বললাম,
___ কি সমস্যা আপনার? আমার সাথে থাকতে বলেছিলাম তো। কিন্তু আপনি সেই যে ওখান থেকে উধাও হলেন আর খবর নেই। অন্যদিকে আমি দীপ্তিকে ফোন করেও কথাটা জিজ্ঞাসা করার সাহস পাইনি। আমি ফোন দিলে সে ভাবতে পারে, না জানি আমাদের মধ্যে কি আছে,কি হয়েছে, কি কারণ, নাকি আপনি পাত্তা দেন না,আরো কতো রকম চিন্তা।তাই দেওয়া হয়নি। এখন বলেন কোথায় ছিলেন? আর কেন উধাও হলেন?

___প্রীলিয়া আসলে তিয়াসের কথাটাই সত্যি। আমি ভেবেছিলাম তুমি ওর কথা শুনে ওকে ফিরিয়ে নিবে। আমি সেখানে বসে বসে কথাগুলো নিতে পারছিলাম না। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো। আমার মনে হচ্ছিলো আমি থাকলে তুমি আমার দিকে করুণা করে তাকাবে, দু-টানায় পড়ে যাবে। তাই আমিই সরে আসতে চেয়েছিলাম। বিশ্বাস করো এই কয়দিন আমি নিজের উপর সম্পূর্ণ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করছিলাম। মনে হচ্ছিলো আমার মধ্যে আমার কোনো অস্তিত্ব নেই, যা আছে তা শুধুই তোমার অস্তিত্ব, আমি ছটপট করছিলাম কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছিলাম না আর বুঝাতেও পারছিলাম না।

___ কি বলছেন এসব? আপনি তিয়াসের ওইসব কথা শুনে চলে আসলেন। আরে আপনি তিয়াসের ব্যপারে কি জানেন? এদিকে আসেন সবকিছু বলছি।

তারপর আমি তিয়াসের মা যেসব কথা আমাকে জানিয়েছিল সবকিছু বললাম। রায়ান ভাইয়া অনেক্ষণ ধরে হা হয়ে শুনছিলেন। তারপর অবাক স্বরে বললেন,
___ তুমি বলতেছো তিয়াসের মা নিজে বলেছে তার মাথায় সমস্যা? কিন্তু প্রীলিয়া তুমি জানো তিয়াস আমাকে নিজে এখানে পাঠিয়েছে। জানিনা সে আমার ঠিকানা কি করে পেলো। তারপর কাল রাতে আমাকে খুঁজে বের করে বললো সেদিন তুমি আমাকে দেখতে না পেয়ে কতটা অস্থির হয়ে গিয়েছিলে। এটাও বললো যতো যাই হোক তুমি নাকি আমাকেই চাও! সেটা তিয়াস স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে সেদিন। তার পর বললো, সে তোমাকে ভালোবাসে ঠিকি কিন্তু তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে। কারণ সে অসংখ্য মেয়ের সাথে মিশেছে, তার পক্ষে ভালোবাসার পরিবর্তন স্বাভাবিক ব্যপার,তার উপর সে এটাও বললো ঘৃণার পরে ভালোবাসাটা ঠিক আগের মতো হয়না। ভালোবাসতে চাইলেও এতো বছরের ঘৃণাগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। তারপর এসব কথার প্রসঙ্গকে মূহুর্তেই পাল্টে দিয়ে টিটকারি মেরে বললাম,
___ আচ্ছা ৫০০ কার্ড যে করছেন এগুলো কি করবেন?

রায়ান ভাইয়াও এবার হাসতে শুরু করে দিলো। আমি এই হাসির ভেদ কিছুই বুঝলাম না। তিনি হাসির তোড়েই বললেন,
___ কার্ডের তারিখ দেখেছিলে? এটা দেখে থাকলেও নিশ্চয়ই সনটা দেখো নাই। আগামী বছর এই তারিখ বিয়ে হলে কাজে লাগবে, নয়তো সেগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

লজ্জা মাখিয়ে একটা হাসি দিলাম। আমি সত্যিই কিছু দেখিনি, শুধু এটা চোখে পড়েছিল আগামী সোমবার লিখা। তারপর সেটার আগে তারিখ লিখা থাকলেও এই বছরের তারিখের সাথে সেদিন সোমবার কিনা কিংবা কোন বছর এসব খেয়াল করিনি। ভেবেছিলাম আমি যে তারিখ লিখতে বলেছি উনিও সেটাই লিখিয়েছেন৷ কে জানে উনি এতো এডভান্স চিন্তা করে এসব বানিয়ে ফেলবেন। তিয়াসও কি বিষয়টা খেয়াল করেনি? কি জানি!

এর মধ্যেই রায়ান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
___বিসিএসের প্রিপারেশন নাও। প্রথম চেষ্টায় সফল হলেই তো কার্ডগুলো কাজে লাগবে। নয়তো আমার জরিমানা লাগবে।

আমি মুখ ভেংচিয়ে বললাম,
___ আচ্ছা কিপ্টে তো আপনি। ওকে, আমার চাকরি হোক, তারপর পাঁচশ নয় পাঁচ হাজার চাপাবো। পুরো গ্রাম দাওয়াত দিবো।

আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উনি বললেন,
___ আমি মোটেও কিপ্টে নয়,মিতব্যয়ী। তবে দরকারে শুধু পাঁচ হাজার নয় পঞ্চাশ হাজার চাপিয়ে পুরো শহরকে দাওয়াত দিবো। তবে তুমি চাইলে!

আমি মনে ভাবছিলাম এখন বলবো আমি পুরো দেশ দাওয়াত দিবো, কিন্তু এতে কতো কার্ড লাগবে বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু মুখ চেপে হেসেও কথাটা ভেতরেই রেখে দিলাম। এতো মানুষকে খাওয়ালে সারা বছর চাকরি করেও দেনা শোধ করতে পারবোনা।
রায়ান ভাইয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একটু পিছিয়ে গিয়ে বললেন,
___ আমার অফিস আছে বুঝলে,এখন যেতে হবে। আর আমি আমার সম্পুর্ণ ঠিকানা তোমাকে এমএমএস করে পাঠিয়ে দিবো, আজ থেকে আর ফোনও বন্ধ পাবেনা, পাইলেও বাসায় চলে যাবে । আমার মা-বাবা তোমার ব্যপারে জানে, এটাও জানে আমি তোমার অপেক্ষায় অন্য কোথাও বিয়ের জন্য রাজী হইনা। আর শুনো, আমি কয়েকদিন পরে দুইদিন ছুটি আছে, চট্টগ্রাম যাবো। আমি তিয়াসের সুস্থতার বিষয়ে যাবতীয় চেষ্টা করবো। আমি তোমার পাশে আছি প্রীলিয়া! এখন যাচ্ছি হ্যাঁ?

আমি মাথা নেড়ে বিদায় জানালাম। তারপর একটা মুচকি হাসি দিলাম।
উনাকে না দেখলে হয়তো আমি কখনোই বুঝতাম না, একটা মানুষ সবকিছু একপাশে রেখে কীভাবে অসম্ভাব্য একটা পরিণয়ের জন্য এভাবে অপেক্ষা করতে পারে! এই অপেক্ষা কি আমাকেও ছুঁয়েছে? আমিও তো ভীষণ গভীর থেকে এই অপেক্ষাকে শ্রদ্ধা করি, অনূভব করি!


ইতোমধ্যে বাবা-মাকে শহরে নিয়ে আসার জন্য ভীষণ তোড়জোড় করছিলাম। কিন্তু বাবা কিছুতেই এখন আসতে রাজী না। বাবা চিন্তা করছে এতে করে আমি সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবো, তার চেয়ে ভালো বিসিএস পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হওয়ার পর যখন ভালো একটা অবস্থানে যাবো তখনই সবাই আসবেন।

এদিকে রায়ান ভাইয়া যে দুইদিনের ছুটি পেয়েছেন সেটার পুরোটা সময়ই তিয়াসের বিষয়ে কি করা যায় সেটা খুঁজতে ব্যস্ত ছিলেন। আজকে ফিরবেন। মাঝেরদিন আমার থেকে তিয়াসের মা’য়ের নাম্বারও নিয়েছিল, কিন্তু কিছুই বলে নি। বলেছে ফিরে সব বলবে। জানিনা সেখানে গিয়ে কেমন হদিস পেয়েছেন। কিন্তু এটা ভালো করেই জানি তিয়াসকে স্বাভাবিক জ্ঞানে ফিরিয়ে এনে রায়ান ভাইয়ার কোনো ফায়দা নেই। কিন্তু রায়ান ভাইয়া এই বিষয়টাকে নিজের করে নিয়েছেন শুধু আমার জন্য। কেননা আমি একটা সময় তিয়াসের প্রতারণার শিকার হয়েছিলাম, যেটা আমার মতো অনেক প্রীলিয়ারা হয়েছে এবং হবে। তিয়াসের এমন কাজ আমার উপরে আর কোনো প্রভাব ফেলবেনা জেনেও একজন মানুষ হিসেবে এটা কর্তব্যের মধ্যে মনে করি, কারণ এর ভয়াবহতা আমি কাছ থেকে টের পেয়েছি এবং একটা মানুষ প্রতারিত হলে কতটা অসহায় হয়ে যায় সেটা গভীর থেকে বুঝতে পেরেছি, তাই সবসময়ই চাইবো এমনটা আর কারো সাথে না হোক। আর এসবকিছু ভেবেই আমার পক্ষ থেকে রায়ান ভাইয়াও তিয়াসের সুস্থতার ব্যপারে সিরিয়াস।

সন্ধ্যার আগে আগে রায়ান ভাইয়া আসলেন, এসেই আমাকে ফোন করে দেখা করতে বললেন।
আমিও তারাহুরো করে রওয়ানা দিলাম,কারণ উনি কি কি তথ্য পেয়েছেন সেই বিষয়ে আমার জানা ভীষণ জরুরী।
রিকশা থেকে নামতেই দেখলাম ফোন হাতে নিয়ে উনি ধিরে ধিরে আমার এগিয়ে নিতে আসছেন।
এদিকে আমি রিকশার ভাড়া মিটিয়েই প্রশ্ন করতে লাগলাম কি হয়েছে, কি জেনেছে, কোনো উপায় আছে কিনা, কারোর সন্ধান পেয়েছে কিনা!
কিন্তু উনি কোনো কথার জবাব দিচ্ছেনা।
হাতে ধরে টেনে সামনের একটা স্টলে ঢুকলেন। আমি অস্থিরতার সহিত এই বিষয়ে আবারও প্রশ্ন করতে যাবো তখনি উনি একটা গিফট বক্স সামনে রেখে বললেন,
___এটা খুলো প্রীলিয়া।

আমি খুলেই বক্সের উপরে একটা লিখা দেখলাম, যেটা দেখেই কিছুটা শিউরে ওঠলাম। দুটো ভালোবাসার চিহ্নের ভেতর লেখা “প্রীয়ান”।
নিশ্চয়ই এই বিষয়টা তিয়াসের থেকে শুনে উনিও দুটো নামকে মিলিয়েছেন। উনার কার্যকলাপগুলো সত্যিই অবুঝের মতো।
আমি হাসিমুখেই পুরো প্যাকটা খুললাম। খোলে দেখলাম ভেতরে ৭ ডজন চুড়ি। আরো কি কি যেন আছে,সেগুলো আপাতত দেখা যাচ্ছেনা। তার সাথে একটা চিরকুট, এসব রেখে এটা খোললাম আগে, দেখলাম লেখা আছে..

” জানি ভাব্বে প্রতিষ্ঠিত একটা মানুষ বেকার প্রেমিকের মতো এটা কেমন উপহার দিলো! কিন্তু জানো? ভালোবাসাটা কিন্তু বেকার প্রেমিকেরই বেশি হয়। তীব্র আকুলতা, দেখার আকাঙ্খা, ভালোলাগা,ভালোবাসা প্রকাশ্যের মাত্রা তাদের মধ্যেই অতাত্ত্বিক হয়, কেননা তারা প্রেমিকার খেয়াল রাখা ব্যতিত দুনিয়ার আর কিছুতে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে না।
আমার স্বর্ণ কিংবা হিরে দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও আমি চুড়ি,কাজল,টিপ,আলতা,সস্তা দুলের সাথে একজন প্রেমিক উপাধি পেতে চাই। ভালোবাসায় স্থায়ীত্ববোধ দেখতে চাই। সংসারের দায়ভার, আরো উন্নতিরচেষ্টা, ভবিষ্যৎ চিন্তা, হতাশা গ্লাণি আমাকে ছুঁয়ে পড়ার আগে আমি তোমার প্রেমিক হতে চাই! ”

আমি কাগজটা ভেতরে রেখে বক্সটা বন্ধ করলাম। আর চোখ ত্যাড়া করে জিজ্ঞাসা করলাম,
___প্রেমিক হওয়ার বয়স আছে আপনার? কেন পাগলামো করেন বলেন তো? আচ্ছা এসব বাদ দিয়ে বলেন তিয়াসের ব্যপারে। কিছু জানতে পারলেন?

রায়ান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন, তারপর বললেন,
___ তিয়াসের মা’কে ফোন করে ওই মহিলার সন্ধানে বের হয়েছিলাম,যার জন্য তিয়াসের ছোট পাপা সুইসাইড করেছে। সেদিন সারাদিন ঘুরেও কোনোভাবেই খোঁজ পাচ্ছিলাম না। তারপর তিয়াসের মা’কে জিজ্ঞাসা করলাম উনারা আসলে তখন কোন কলেজে পড়তো আর কতো সনের ব্যাচে ছিল। তারপর সেটা জেনে আমি সেখান থেকে গেলাম সিলেট, কলেজের আশপাশ থেকে খোঁজ নিলাম,প্রথম সারির স্টুডেন্ট তো, অবশেষে শীগ্রই পেয়ে গেলাম তার বাবার বাড়ির ঠিকানা। তারপর সেখানে পৌঁছালাম। আর চট্টগ্রামের ঠিকানা জোগাড় করে আবার চট্টগ্রাম গেলাম। তারপর সেখানে গিয়ে জানলাম উনি সেখানে থাকেন না। সেখানে গিয়ে একটা মেয়ের কাছ থেকে উনার সব ইনফরমেশন নেওয়ার জন্য ফোন নাম্বার আর ফেইসবুক আইডি আনলাম। মেয়েটা উনার ভাতিজী। কেন নিয়েছি সেটা না জেনেই মেয়েটা আমাকে সাহায্য করতে রাজী হলো। এরপর সোজা এখানে চলে আসলাম, কারণ আমার কাল অফিস আছে। ওয়েট মেয়েটার সাথে তুমিও যোগাযোগ করো পরে।

রায়ান ভাইয়া আমাকে মেয়ের আইডি দিলো। আমি ফোনটা বের করে জেসিয়া ইসলাম নামে এই আইডিকে এড করতেই চমকে উঠলাম। জেসিয়া ইসলাম আর নামের পাশে সংক্ষিপ্ত নামে দিশা! প্রোফাইলে তার নিজের ছবি। নাহ আমার কোনো ভুল হচ্ছেনা। এটা সেই মেয়েটাই, যে তিয়াসের সম্পর্কে খুব ভালো ভালো কথা বলছিল, সাথে আমার প্রশংসাও করছিল। আমি আতংকের সহিত বলে উঠলাম,
___ওই মহিলার সাথে দিশার সম্পর্ক আছে সেটা ভুল করেও যেন তিয়াস না জানে। সে প্রতিশোধের স্পৃহায় নির্দোষ মেয়েদেরকে কষ্ট দেয়, সেখানে যদি এটা জানতে পারে একসময় তার উপকারে ঘুরে দাঁড়ানো মেয়েটা তারই শত্রুর আত্মীয়, তাহলে ভীষণ খারাপ হয়ে যাবে।

আমার কথা শুনে রায়ান ভাইয়া কিছু না বুঝে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here