শূন্যতায় অস্তিত্ব ( পর্বঃ ১৩ এবং ১৪)

শূন্যতায় অস্তিত্ব ( পর্বঃ ১৩ এবং ১৪)
লেখাঃ তাজরীন খন্দকার

মা’র কথা শুনে আমার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো, আবারও মুখ ফিরিয়ে জানতে চাইলাম,
___ মা কি সেই উপায়?

মা কানের কাছে এসে ফিসফিস করে উদ্ভট এক উপায় বললো, যেটা শোনার সাথে সাথে আমার চেহেরায় বিষন্নতা ফুটে ওঠলো। আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
___ মা তোমার মাথায় এসময় এমন একটা চিন্তা কীভাবে আসলো? একজনের নাটকবাজি ধরতে দিয়ে আরেকজনের সাথে মিথ্যা নাটক করবো?

মা এই কথাতে কেমন যেন একটা স্থিরতা টানিয়ে বললো,
___ তাহলে আমি কিছু জানিনা। তবে চেষ্টা করতে দোষ কি বল? এভাবে চলতে থাকলে ব্যপারটা আরো খারাপ হয়ে যাবে না? তিয়াস যদি এভাবে আরো মানুষের ক্ষতি করে?

আমি কিছুক্ষণ ভাবলাম। তারপর মা’র দিকে তাকিয়ে বললাম,
___ তাহলে পরিক্ষার পর চেষ্টা করবো। এখন এসব নিয়ে ভাবলে রেজাল্ট ভালো হবে না।

মা চুলে বিনুনি করতে করতে বললো,
___ তুই যা ভালো মনে করিস তাই কর।

আমি বসে বসে আরো ভাবলাম। তারপর মা যা বললো তাই করার সিদ্ধান্ত নিলাম। তবে এখন না, পরিক্ষার পরেই। এদিকে নুজহাতকে ফোন করে বলে দিলাম তিয়াস আর সা’দের বিরুদ্ধে থানায় একটা জিডি করে রাখতে।

রাতের বেলা শুয়ে একটা উপন্যাস পড়ছিলাম। তখনই বাবা রুমে প্রবেশ করলো। আমি বইটা রেখে বাবাকে বললাম,
___ সারাদিন এতো পরিশ্রম কেন করো বলোতো? আজ দুপুরে তারাহুরো করে কখন খেতে এসেছিলে সেটাও টের পাইনি।

বাবা মুচকি হেসে বললো,
___ তোদের জন্যই তো মা। আর তুই কি কম পরিশ্রম করিস, আমাদের স্বপ্নের জন্যই তো পড়তে পড়তে চোখ দুইটা কানা করে ফেলতেছিস। জানিনা কবে এর পরিত্রাণ হবে!

আমি চশমাটা খোলে বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
___ বাবা তুমিই তো বলেছিলে পড়ালেখা নিজের জন্য! হ্যাঁ আমিও তাই মনে করি কিন্তু আমার সফলতাটা কিন্তু সবার খুশির! তাই আমি নিজের জন্য পড়ি আর তোমাদের জন্য সফল হতে চাই। আর একটা কথা জানো, যারা পড়াকে ভালোবেসে ফেলে, তারা এর মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি করে ফেলে, এবং তারা বৃদ্ধ বয়সেও না পড়ে থাকতে পারেনা, ধিরে ধিরে চশমার পাওয়ার বাড়বে কিন্তু পড়ালেখার পরিমাণ কমাবেনা। বাবা সত্যি শিক্ষা অর্জনের শেষ নেই, প্রতিদিন আমার মনে হয় আরো শিখতে হবে, আরো জানতে হবে, আরো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে! তুমিই বলো অর্থের লোভের চেয়ে শিক্ষা গ্রহণের লোভটা শ্রেষ্ঠ না?

বাবা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
___ তুই অনেক বড় হবি মা। তখন আমি সমাজের দিকে আঙুল করে বলবো, কে বলে মেয়েরা সাফল্য লাভ করতে জানেনা? কে বলে মেয়েরা আট দশটা ছেলের মতো যোগ্য হতে পারে না? কে বলে মেয়ে জন্মানো মানেই বাবার কাঁধের বোজা! দেখো আমার মেয়েকে দেখো, আমার মেয়ে পেরেছে, আজ সে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । আমার মেয়েও এখন একটা ছেলের মতো দায়িত্ব নেওয়ার অধিকারী! ছেলে দিয়ে নয়,মেয়ে দিয়েই আমি একজন গর্বিত বাবা!

আমি হাত দিয়ে বাবার চোখ থেকে খুশির জলগুলো মুছে দিয়ে বললাম,
___ আমার জন্য দোয়া করো তুমি! তোমাদের দোয়াতেই তো আমি এগিয়ে যাবো। আর হাজার প্রতিকূলতা ডিঙিয়েও তোমাদের সফলতার রক্তিম সূর্য উদিত করে দেখবো!

বাবার চেহেরাটা উজ্জ্বলতায় জ্বলজ্বল করছিল, সেটা আমি স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারছিলাম।

দুইদিন পরেই চলে গেলাম!

আবারও নিয়ম করে পড়ালেখা, টিউশন,টুকটাক ক্লাস নেওয়া চলতে লাগলো।
কেটে গেলো অনেকদিন। পরিক্ষা চলছে..
তিয়াসকে এর মধ্যে ছয়বার দেখেছি। তাকে ডাকা যাবেনা, কথা বলা যাবেনা এমন জায়গা থেকে সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর আবার চলে যায়।
আর অন্যদিকে রায়ান ভাইয়া..সকাল, সন্ধ্যা, রাত, সময়- অসময় হুটহাট উনাকে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। মানে উনার কাজ না থাকলেই এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমি নিজের কাজ কিংবা পড়ালেখার ফাঁকে জানালার পর্দা সরিয়ে মাঝে মাঝেই উঁকি দিয়ে দেখি! মাঝে মাঝে সবকিছু রেখে আমিও উনার অস্থির পায়চারি , বারবার উপরে তাকানো দেখি। একেক সময় ইচ্ছে করেই উনাকে না দেখার ভান করে বারান্দা থেকে কিছু একটা আনতে যাই। তারপর রুমে এসে লুকিয়ে দেখি আমাকে দেখতে পেরে উনার মুখে কি সুন্দর উজ্জীবিত হাসি!

পরিক্ষা ভালোভাবেই দিচ্ছিলাম। সব চিন্তা ভাবনা কিংবা পরিকল্পনা স্থগিত ছিল পরিক্ষার জন্যই।
সেদিন শেষ পরিক্ষা ছিল। আমি কেন্দ্র থেকে হাসিখুশি চেহেরা নিয়েই বের হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আজকে রায়ান ভাইয়াকে মায়ের বলা সেই পরিকল্পনাটার কথা জানাবো, তারপর উনি রাজী হলে সেটা করার চেষ্টা করবো। তিয়াসের ব্যপারে যে করেই হোক জানতে হবে!

কিন্তু গেইট থেকে বের হতেই হালকা বেগুনি রঙের জামা পরা অপরিচিত একটা মেয়ে আমার পথ আটকে সালাম দিলো। আমি সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
___ তুমি কি কিছু বলতে চাও?

সে মাথা নেড়ে বললো,
___ আপু আমার নাম দিশা। আচ্ছা আপনি তিয়াস ভাইয়াকে চিনেন? মানে উনার থেকেই আপনার পরিচয় পেয়েছি আমি।

আমি পাশ কেটে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত ঠেসে বললাম,
___ তো ওর বলির শিকার তুমিও হয়েছিলে বুঝি? আমাকে ওর সম্পর্কে এই বিষয় ছাড়া কেউ কিছু বলতে আসেনা,জানো? তো এখন কোথায় পড়ালেখা করো?
নাকি ছেড়ে দিতে হয়েছে?

মেয়েটা আমার কথা শুনে ভীষণ অবাক হয়ে বললো,
___চট্টগ্রামে, ম্যাথে এবার প্রথম বর্ষ! আর আপনি এসব কি বলছেন আপু? বলির শিকার হবো কেন? তিয়াস ভাইয়া আমার জীবন বদলের উদাহরণ, আর আপনি সেখানে আমার অনুপ্রেরণা!

এটা শুনে আমি ভ্রু কোঁচকালাম সাথে চমকালামও। বহুদিন পরে ওর ব্যপারে একটা পজিটিভ কথা শুনলে সবারই চমকানোর কথা। আর আমি মেয়েটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
___ তোমাকে তো আমি চিনিই না। তাহলে আমি কি করে তোমার প্রেরণা হলাম?

মেয়েটার মুখটা অন্য রকম হয়ে গেলো। সে আমার হাতে ধরে বলল,
___ আসুন আপনাকে সব বলছি।

আমি ওর সাথে গিয়ে ঝালমুড়িওয়ালার সামনে রাখা টুলটাতে বসলাম। সেও বসে দুই প্লেট অর্ডার করলো।
তারপর আস্তে আস্তে বললো,
___ আমি একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসতাম। মানে প্রচন্ডরকম ভালোবাসতাম, যেন সে ছাড়া এ জগৎ আমার জন্য শুধুই মরুভূমি। একটা সময় সে আমার সাথে প্রতারণা করে। আমি নিজের প্রতি সকল ভরসা হারিয়ে ফেলি, রাতের পর রাত ঘুমের ঔষধ খেয়ে পড়ে থাকি। পড়ালেখার আদৌও আমার মধ্যে ছিল না, আগের যা প্রিপারেশন ছিল তা দিয়ে আমার রেজাল্ট আশানুরূপ হয়নি। আরো আরো ভেঙে যাচ্ছিলাম। ছেলেটা রোজ আমার সামনে দিয়ে অন্য মেয়ের সাথে মেলামেশা করতো, কিছু বললে ভীষণ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো, আমাকে অপমান করতো,যোগ্যতার প্রসঙ্গ তুলতো, এটাও বলতো আমি নাকি ওর বর্তমান গার্লফ্রেন্ডের মতো এতো সুন্দর আর স্মার্ট নয়, আমার সাথে তার মানায় না। আমি এসব সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নেই, ফেইসবুকে এমন ধরনের একটা স্ট্যাটাসও দিয়েছিলাম। সেটা দেখে তিয়াস ভাইয়া প্রথম আমাকে নক করে। আমাকে জিজ্ঞাসা করে আমি কেন একটা বাজে ছেলের জন্য জীবনকে এতো তুচ্ছ মনে করি। তখন আমি উনাকে সব খোলে বললাম। শুনে আমাকে বললেন আমার সাথে ফোনে কথা বলবেন। আমি মানা করিনি, ভাইয়া ফোন দিয়েই আমাকে বলে প্রীলি নামে এক মেয়ের কথা, মানে তোমার কথা। যাকে উনি নিজে ঠকিয়েন, আর সেই মেয়ে এসবকে কাটিয়ে বীরের মতো উঠে দাঁড়িয়েছে, যা পাওয়ার ছিল না তাও সে পেয়ে দেখিয়েছে!

আমি ওর কথার মধ্যে থামিয়ে বললাম,
___ তিয়াস আমার কথা বলে মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয় নাকি আমার মতো মেয়েকে ঠকাতে পেরেছিল বলে আত্মপ্রশংসা করে? আচ্ছা যাই হোক তারপর বলো

দিশা কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে আবার বলতে লাগলো,
___ আসলে তখনও আমি কিছুতেই এসব মানতে পারছিলাম না, তারপর উনি আমাকে বললেন, সেদিন প্রীলিকে ঠকানো আমিটাই এখন ওর কাছে পাত্তা পাইনা বুঝেছো? তুমিও এমন জায়গায় পৌঁছাও যেখানে গেলে ওর মতো ১০০ ছেলে তোমার নাগাল পাবে না।
একটা ছেলে গেলে তোমার জীবনে আরেকটা ছেলে আসবে কিন্তু জীবন চলে গেলে সেটাকে কখনোই ফিরে পাবেনা। কাউকে মন থেকে ভালোবাসা পাপ নয় কিন্তু জীবন দিয়ে ভালোবাসবে না। তখন আমি কেঁদে কেঁদে বলেছিলাম, আমার রেজাল্ট তেমন ভালো হয়নি, এডমিশন প্রিপারেশনও নেইনি, দেড় মাসে আমি কি করবো? আমি কোনোভাবেই আপনার বলা মেয়েটার মতো হতে পারবোনা। তখন তিনি বলেছিলেন তোমার চেষ্টার কথা। বলেছিল সারা বছর তুমি উনার জন্য না পড়ে পরিক্ষার ৪ মাস আগে প্রতারিত হয়ে এতটাই চেষ্টা করেছো যে ভালো রেজাল্ট নয়, বোর্ডে প্রথম হয়েছো। এখন সবখানে, সব জায়গায় তোমার মেধার পরিচিতি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তারপর আমার ভেতরও জাগলো তোমার মতো এক প্রতিজ্ঞা, আমি সব ভুলে নিজেকে গড়তে লড়াই শুরু করে দিলাম। আজকে আমি ভার্সিটিতে টপ টেন মেধাবীদের খাতারে, যেখানে কিনা দেড় মাস আগেও আমি পরিক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা হবে সেটা কল্পনা করিনি।
আর হ্যাঁ প্রীলি আপু, এখানে আমি ফুফির বাসায় আসছি, ভাইয়া বলেছিল কখনো আসলে এই ভার্সিটিতে এসে খোঁজ করতে। আমি অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম তোমার, শুধু তোমার মতো একটা সফল নারীকে দেখবো বলে, যার অনুসারী আমিও হতে চাই । কারণ আমি সেদিন ভেবেছিলাম তিনি একটা মেয়ে হয়ে সবকিছু রেখে ঘুরে দাঁড়িয়ে সফলতার শীর্ষে যাওয়ার পরিস্থিতিতে আসতে পেরেছেন, আমি কেন পারবোনা? অতঃপর আমার চেষ্টা আর প্রিপারেশন আমাকে ভার্সিটিতে ভালো সাব্জেক্টে ভর্তির সুযোগ দিয়েছে। এটার সবোর্চ্চ ক্রেডিট ভাইয়ার, তবে তুমি আমার কাছে সেটার প্রধান অনুপ্রেরণা। অনেক ইচ্ছে ছিল তোমাকে দেখার, আজ সেটা পূরণ হলো।

এগুলো বলেই মেয়েটা কথা থামিয়ে ঝালমুড়ির দিকে নজর দিলো,দেখলো এগুলো নেতিয়ে গেছে। এদিকে আমি ওর কথা শুনতে শুনতে খেয়ে শেষ করে ফেলেছি।
আমি পেছনে তাকিয়ে আবার ওর দিকে তাকালাম আর বললাম,
___ তারপর বলো তিয়াসের ব্যপারে আর কিছু জানো তুমি?

মেয়েটা এগুলোই খেতে খেতে জবাব দিলো,
___ উঁহু তেমন কিছু জানিনা, তবে শুনেছি উনি ইউনিভার্সিটিতে এসেও ইন্টারমেডিয়েটে পড়া প্রথম স্থান অধিকারী মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করেন এরপর ছেড়ে চলে আসেন। অনেকেই অনেক কথা বলে,কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনা। উনি এমন হতেই পারে না। কারণ আমি উনার মধ্যে খারাপ চরিত্রের মতো এমন কিছুই পাইনি।

আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
___ অথচ এতক্ষণ ধরে তুমি আমার গল্প বললে, তিয়াস আমাকে ঠকানোর পরে কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি সেটা বললে। এখন কিনা বলছো এসব বিশ্বাস করো না। তো আমি কি করে তোমার কথা বিশ্বাস করবো বলো তো? জ্বলজ্যান্ত ঠকে যাওয়া মানুষটাকেই কিনা এসব বলছো?

মেয়েটা থতমত করতে করতে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
___ মানে আপনার কথা তো উনিই বলেছে। এরপর যে অন্যদের সাথেও এমনটা করেন সেটা আমার বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়না সেটাই বলতে চেয়েছিলাম..

আমি হাত বাড়িয়ে বললাম,
___ আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে, আমি বুঝতে পারছি। আর তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। ভালো থাকবে, সত্য মিথ্যা আর বিশ্বাস অবিশ্বাস বাদ দিয়ে পড়ালেখা করবে, মনে রেখো এই যুগে তুমি যে কাউকেই অন্ধ বিশ্বাস করলে ঠকে যাবে। আত্মবিশ্বাস বাড়াও, তবে সেটা শুধু নিজেকে নিয়ে! আসছি আপু…

বলেই আমি সেখান থেকে চলে আসার জন্য উদ্যত হলাম। মেয়েটা হয়তো আমার কথা বুঝেছে হয়তো বুঝেনি। তবে আমি বুঝেছিলাম এসব মিথ্যা চালবাজিও হতে পারে। কে জানে এই মেয়ে কে? হঠাৎই বা কেন তিয়াসকে নিয়ে প্রশংসার জন্য আগমন ঘটালো!

চলবে…

পর্বঃ ১৪

বাসায় এসে সোজা বিছানায় গিয়ে পড়লাম।
জানিনা আসলেই মেয়েটা তিয়াসের ব্যপারে সত্য বললো কিনা। কিন্তু আমার মাথায় কাজ করছেনা, যদি সে জীবনকে এতো মূল্যবান বলে মনে করে তাহলে সে মানুষকে এই ধরনের চিন্তা করাতে বাধ্য করে কেন? যেমনটা সে আমার সাথেও করেছিলো?
এমন অনেক মেয়ের সাথেই সে করেছে?
কেন করেছে? যদি এতোই বুঝে তাহলে নিজের দিকটা কেন বুঝেনা?

বহু বহুদিন ওরে নিয়ে আমি মাথা ঘামিয়েছি। এবার আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে সে আপনা আপনি আমাকে তার কার্যকলাপের পেছনের কারণ বলে। মা’কে ফোন করেও জানিয়ে দিলাম মা যেটা করতে বলেছিল আমি সেটাই করতে যাচ্ছি।
তারপর ফোন দিলাম রায়ান ভাইয়াকে।
আমার ফোন পেতেই উনি যেন হুশে এলেন, ভীষণ অভিমান জড়িয়ে এতো শত অভিযোগ ছুড়ে দিলো।
আমি নাকি উনাকে পাত্তা দেইনা,কথা বলিনা,ফোন ধরিনা, আরো অনেক ছেলেমানুষী কথা।
উনার সব কথার মধ্যে আমি বললাম,
___ আপনাকে নিয়ে বিয়ের কার্ড বানাবো। আপনার আর আমার বিয়ের!

আমার কথা শুনে থমথমে নিরবতা। হয়তো কথাটা উনি শুনলেও নিজে কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলেন না। আমি জোরে হেসে উঠে বললাম,
___ আরে নাহ ভয় পাবেন না, সত্যি সত্যি বিয়ে না। আমরা বিয়ের মতো করে একটা আয়োজন করতে যাচ্ছি। যেখানে তিয়াসকে দুজন মিলে ইনভাইট করতে যাবো। আমার বিশ্বাস সে তারপর সবকিছু স্বীকার না করে পারবেনা। মানছি সে অনেক অপরাধ করেছে কিংবা অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ঠকিয়েছে, তবে সে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাকেই ভালোবাসে। নয়তো এভাবে ফিরে আসতোনা। আর ভালোবাসার হারানোর যন্ত্রণা কিন্তু নেশাক্ত দ্রব্যের চেয়েও ভয়ানক ক্ষতিকর, আর সেটার চূড়ান্ত পর্যায়ে দাঁড়িয়ে তিয়াস কিছুই লুকাতে পারবেনা। সত্যিটা তাকে বলতেই হবে। আমি আশা করি আপনি আমাকে সাহায্য করবেন।

ওপাশ থেকে ঘন নিঃশ্বাস। কেমন যেন একটা ব্যথাতুর গলায় উনি বললেন,
___ আচ্ছা এরপর যদি জানতে পারো তিয়াসের এসব করার পেছনের কারণটা ক্ষমার যোগ্য কিংবা যৌক্তিক কিছু, তাহলে কি তুমি তাকেই মেনে নিবে?

আমি হেসে বললাম,
___ কোনটা যুক্তির হবে বলে ভাবছেন? ওর মধ্যে কিছুই যৌক্তিক নেই। মানুষের মন নিয়ে রঙ তামাশা করে জীবনের বেহাল পরিণতি করা কোনোভাবেই যৌক্তিক কিছু হতে পারে না। এখন বলেন আপনি আমার পাশে থাকবেন?

রায়ান ভাইয়া আস্তে আস্তে বললো,
___, আমি চিরকাল তোমার পাশে আছি এবং থাকবো।

আমি আমার ঠোঁটের উপরে অদেখা হাসিটা নিজে নিজেই অনূভব করে নিলাম। তারপর উনার ফোন কেটে শুয়ে পড়লাম।

দুইদিন পরে বাসার নিচে এসে রায়ান ভাইয়া আমাকে নামতে বললো। আমি কোনো রকম তারাহুরোর মধ্যে তৈরি হয়ে নিচে গেলাম। গিয়েই দেখি উনাকে যেমন বলেছিলাম উনি তেমন করেই মিথ্যে বিয়ের কার্ড বানিয়েছেন। খুব সুন্দর বানিয়েছেন, ডিজাইনটা ভীষণ ভালো লাগছে। আমি হাতে নিয়ে বললাম,
___ কয় কপি বানিয়েছেন?

উনি সামনে আগাতে আগাতে বললেন,
___ ৫০০ কপি।

আমি চমকে উঠে বললাম,
___ মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার? এতো কার্ড দিয়ে কি হবে? ৫০০ মানুষকে দিবেন নাকি? আর আপনি কি মানুষকে নিজের বিয়ের কথা বলে দিবেন? তাহলে তো মানুষ এসে দেখবে বিয়ের আয়োজনও নেই আর সেখানে বউও নেই। হাহাহাহা!

উনি আমার এইসব কথাকে কোনো পরোয়া না করে বললেন,
___ তিয়াসকে বলেছো তো কোথায় আসতে হবে?

আমি মাথা নেড়ে বললাম,
___ হুম বলেছি, আর সে বলেছে আসবে। তারপর আমি আবার ব্লক করে দিয়েছি।

উনি আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন একটা ভাবলেন তারপর একটা রিকশা ডাকলেন।
আগে আগে উঠে হাত বাড়িয়ে দিলেন আমি উঠার জন্য। আমিও কিছু না ভেবে হাতে ভর করে উঠে বসলাম।

একটা খোলা মাঠের পাশে সরু রাস্তা, এখানে মানুষজন তেমন দেখা যায়না। রায়ান ভাইয়া ইচ্ছে করেই এমন একটা জায়গা বাছাই করেছে। আমরা ওখানেই পৌঁছাতেই দেখলাম তিয়াস পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। সাদা একটা শার্ট পরে রেখেছে,বাতাসে সেটা বারবার ফুলে উঠছে।
কাছে যেতেই সে ফিরে তাকালো। আমার সাথে রায়ান ভাইয়াকে দেখে সে অবাক হলো। কেননা আমি দেখা করতে বলেছি শুধু, সাথে অন্য কেউ আসবে বলিনি।
আমি বিয়ের কার্ডটা ওর দিকে বাড়িয়ে বললাম,
___ আমাদের বিয়ে সামনে সোমবার, অবশ্যই আসবে।

তিয়াস আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে জোর করে একটা মুচকি হাসি দিলো আর কার্ডটা বাড়িয়ে নিলো। খোলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তারপর বললো,
___ প্রীলি এই কয়েকমাস ধরে তোমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। শুধু আমার সম্পর্কে তিক্ত সত্যিগুলো বলতে হবে বলে! কেন জানি বলতে ইচ্ছে করে না। তবে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি সব বলবো। আমার এতকিছু করার পেছনের সবগুলো কারণ তোমাকে জানাবো। আমি সুযোগ নয় শুধু তোমার থেকে ক্ষমা পেতে চাই।

আমি আস্তে আস্তে তিয়াসের পাশে দাঁড়ালাম। রায়ান ভাইয়া পেছনেই। বাতাসের বেগ তীব্র বলে কথাগুলো ধাক্কা খাচ্ছিলো। আমি একটু জোরে জোরেই বললাম,
___, তুমি তো শুধু আমার কাছে অপরাধ করোনি । অনেকের সাথে অপরাধ করেছো। কি করে ভাবো সবার থেকে ক্ষমা পেতে পারো?

তিয়াস আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
___ কি করে ভাবি সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা কিন্তু! কিন্তু আমি তোমার কাছে ছাড়া আর কারো কাছে ক্ষমা চাইবোনা। আর আমি শুধু অপরাধী না,অনেক বড় অপরাধী। তুমি আমাকে যতটা খারাপ জেনেছো তার থেকেও আমি বেশি খারাপ।

আমি নিজেকে অনেক কষ্টে আটকে ধৈর্য্য নিয়ে বললাম,
___ কেন করো এসব?

তিয়াস আমার কথা শুনে ঘাসের উপর বসলো। ওর সাথে সাথে আমরা দুজনও বসলাম।

তিয়াস ধিরে ধিরে বলতে লাগলো,
___ আমার দাদাভাইয়ের দুই ছেলে ছিল। প্রথমজন আমার আব্বু আরেকজন আব্বুর থেকে অনেক বছরের ছোট, যাকে আমি ছোট পাপা বলে ডাকতাম। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, চাচা তখন কলেজে নতুন ভর্তি হয়েছে। ভীষণ মেধাবী ছিলেন উনি। আমার বাবা তো চাকরির জন্য আমাদেরকে তেমন সময় দিতে পারতেন না, অন্যদিকে দাদাভাই অসুস্থ ছিলেন, দাদু অনেক আগেই মারা গেছেন। তো আম্মু যখন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন ছোট পাপা আমাকে যত্ন করতেন, আমাকে খাওয়াতেনও তিনি।
আস্তে আস্তে আমি বড় হতে লাগলাম, যখন থেকে আমার পড়ালেখা শেখার বয়স হয়ে উঠেছে, আমি তখন থেকেই ছোট পাপার সাথে থাকতাম। তিনি এতো বেশি পড়ালেখা করতেন যে আমি বিরক্ত হয়ে মাঝে মাঝে আম্মুর সাথে থাকার বায়না করতাম। কারণ উনার জোরে জোরে পড়ার জন্য ঘুমাতে পারতাম না। কিন্তু আম্মু বলতো উনার সাথে থাকলেই একসময় আমি এমন মেধাবী হয়ে উঠবো। কারণ ছোট পাপা আমাকে নিয়ে প্রতিদিন পড়তে বসতেন,পড়া শেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার অনুমতি দিতেন।
কিন্তু আমি ক্লাস ফাইভে উঠার পরে আর চাচা কলেজে যাওয়ার পরে সবকিছু উল্টো হতে থাকে। প্রথম চার পাঁচ মাস ভালোই ছিল কিন্তু এরপর সারাক্ষণ উনি আনমনা হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে থাকেন। মাঝে মাঝে দেখি ফিসফিস করে কার সাথে যেন কথা বলেন। আমি তখন এসব বুঝতাম না।
আমার মজা লাগতো কারণ তখন ছোট পাপা আমাকে পড়ার জন্য তোড়জোড় করতেন না। কারণ তিনি নিজেই পড়তেন না। দেড় বছর চলে গেলো, ফাইনালে ছোট পাপার রেজাল্ট শুনে সবাই হতবাক। কারণ তিনি ফেইল করেছেন। এরপর থেকে প্রায় রাতেই উনাকে মেয়েদের মতো মরা কান্না করতে দেখতাম, সারারাত বারান্দায় বসে কাটিয়ে দিতে দেখতাম। আব্বু একবার উনাকে অনেক মেরেছিলও,উনি নাকি নেশা করতেও শুরু করে দিয়েছিলেন। আম্মু উনার সাথে আমাকে আর থাকতে দিতে চাইতো না। কিন্তু আমি কেন জানি ছোট পাপাকে ছাড়া থাকতে পারতাম না, হাত পা ছুড়ে কান্না জুড়ে দিতাম। তারপর বাধ্য হয়ে আমাকে উনারা দিয়ে আসতেন, কিন্তু অনেকদিনই আব্বু মাঝ রাতে কোলে করে উনার থেকে নিয়ে আসতেন।
কিন্তু সেদিন শনিবার, আমি সারারাতই ছোট পাপার সাথে ছিলাম। পাপা সেদিন ভীষণ চুপচাপ ছিল। কান্নাকাটিও করেননি। আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিলাম। সকালে ঘুম ভাঙতেই আমি বিকট চিৎকার করে উঠেছিলাম। কারণ ছোট পাপার মুখ থেকে রক্ত পড়ছিল, সারা শরীর পুরো ঠান্ডা হিম ছিল। আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম। তারপর সবাই এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো, আর ছোট পাপার জন্য কবর খুড়তে গেলো! হ্যাঁ সেদিন ছোট পাপা সুইসাইড করেছিলো!

তিয়াসের কণ্ঠে আর কোনো আওয়াজ আসছেনা। সে আওয়াজ করে করে কাঁদতেছে। আমি আস্তে আস্তে বললাম,
___ উনি কেন এমন করেছিলেন?

তিয়াস কিছুক্ষণ ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে, নাক গলা ঝেড়ে একটা আক্ষেপের সাথে বললো,
___একটা মেয়ের জন্য! ভালোবাসায় হেরে যাওয়ার জন্য, ঠকে যাওয়ার জন্য!

আমি প্রসঙ্গ টেনে বললাম,
___ তুমি এতো কিছু দেখে নিজে কেন এমন করো? যদি তোমার জন্য কারো এমন অবস্থা হয়?

তিয়াস আমার দিকে তাকিয়ে কান্নাভেজা চোখেই অদ্ভুত একটা হাসি দিলো। আর বললো,
___ এই দুনিয়ায় প্রতিটা কাজের সাথে মানুষ একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় মেতে থাকে, টাকা পয়সা বাদই দিলাম, কিন্তু শিক্ষার অর্জনে কেন আরেকজনকে দমাতে চায় বলোতো? জানো মেয়েটা ছোট পাপার সাথে কেন প্রেমের অভিনয় করেছিল? চাচাকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান নেওয়ার জন্য! হুহহহ এই প্রথম স্থান! সে ঠিকি নিতে পেরেছিল, মেয়েটা বাজিতে জিতেছিল কিন্তু শুধু রেজাল্টে নয় ছোট পাপাকে জীবনের কাছেও হারিয়ে দিয়েছিল সেই মেয়ে। আর আমার ছোট পাপা কোথাকার কোন মেয়ের জন্য সবকিছু ছেড়ে জীবন ত্যাগের কথাটাই ভেবে নিলো। একটাবার ভাবলোনা আমার কি হবে? আমি যে আমার আম্মু আব্বুর থেকেও বেশি উনাকে ভালোবাসতাম। তারপর আমার অসুস্থ দাদুটাও ছোট পাপার শোকে আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।
তারপর থেকেই আমি একটা শপথ নিয়েছিলাম, মানুষ কোন পর্যায়ে গেলে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয় সেটা দেখেই ছাড়বো। আর সেসময় থেকে অন্য রকম একটা প্রতিশোধের স্পৃহায় বেড়ে উঠছিলাম। তখন থেকেই আমি প্রথম স্থান জিনিসটা ঘৃণা করতে শিখি। আর সেই মানুষটার উপরে আমার কুদৃষ্টি ঠেকে যায়। আমি দেখতে চেয়েছিলাম সেই স্থান পরিবর্তন জিনিসটা কতটা ভালোবাসা বিসর্জনের পরে সম্ভব হয়।যখন সবকিছু শেষ করে ভালোবাসার মানুষটা চলে যায় তখন কেন সে ভাবেনা তাকে কষ্ট করে বড় করার পেছনে অসংখ্য মানুষের মায়া জড়িয়ে আছে, তার মা আছে আর বাবা আছে তার আত্মীয়স্বজনরা আছে। কিন্তু নাহহ আমি কাউকে পাইনি, সবাই ভেঙে যাওয়ার পড়েও উঠে দাঁড়িয়েছে, আমি তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে ছোট পাপাকে জোরে হাঁক পেড়ে ডেকে বলি, ছোট পাপা তুমি এতো বোকা ছিলে কেন? তুমি আর কয়েকটা বছর অপেক্ষা করতে, দেখতে ঠিকি তোমার জীবন বদলে গেছে, আর তুমিও বদলে গেছো, তখন একবার হলেও মন থেকে বলতে বেঁচে থাকা অনেক আনন্দের, অনেক আনন্দের!
প্রীলিয়া আমি কাউকে মারতে চাইনা, কিন্তু মানুষ চেনাতে চাই। চেনাতে চাই তার নিজেকে। বুঝাতে চাই ক্ষনিকের জন্য আসা মানুষটা ছাড়াও আমাদের জীবনে অনেক কিছু আছে, তোমাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। জানি তোমার ক্ষতি হবে, কষ্ট পাবে, কিন্তু ঠিকি তুমি মানুষকে অন্ধ বিশ্বাস থেকে নিজেকে পরবর্তীতে বিলীন করে দিবেনা। বুঝতে শিখবে বেঁচে থাকাটা একান্তই নিজের জন্য! হ্যাঁ আমি সফল হয়েছি,তুমি সফল হয়েছো,দীপ্তি সফল হয়েছে,আমার এমন উদ্ভট ফাঁদে পা রাখা প্রতিটা মেয়ে সফল হয়েছে। তারা বুঝতে শিখেছে জীবন এতটাও তুচ্ছ নয়, যেটা কিনা কোনো ফাউ মানুষের জন্য বিলিয়ে দেওয়া যায়। মচকায়েও তারা ভেঙে যায়নি। এই পৃথিবীতে নিজের প্রাণ দিয়ে দেওয়ার মতো জঘন্য কিছু আমার কাছে নেই। আমার ইচ্ছে করে সবাইকে বুঝাই, তোমার জীবন থেকে একটা মানুষ চলে গেলেই তুমি একা নও! শক্ত হও তুমি,প্রতারকের প্রতি ঘৃণা নিয়ে এগিয়ে যাও। তাকে তার উচিত জবাব দাও। আর হ্যাঁ একটা কথা, সেদিন রুহিকে আমিই বলেছিলাম তোমার বাবাকে খবর দিয়ে আনতে, তোমাকে বুঝাতে। আমি জানি তুমি পারতে, উঠে দাঁড়ানো তোমার দ্বারা সম্ভব।

আমি অবাক থেকেও অবাক হয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললাম,
___ তু তু তুমি!

তিয়াস শ্বাস ছেড়ে বললো,
___ হ্যাঁ আমি। প্রীলিয়া প্রেম প্রায় সবার জীবনেই আসে, আর প্রথম বিচ্ছেদে তারা ভেঙে পড়ে এবং প্রবলভাবে। সেই মানুষটা ছাড়া নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে করে। কারা করে জানো? তোমার মতো সহজ সরল আর পড়ায় গুজে থাকা মানুষরা। তারা সফল হয়েও এতটাই অভ্যাস্ত যে তারা হার মানতে পারেনা, প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত থাকে। আমি না হয় এমন কয়েকটা মানুষের সাথেই প্রতারণা করে বুঝিয়ে দিলাম তুমি পৃথিবীতে বেঁচে থাকো, তুমি হেরে গিয়েই জিতে যাবে। তুমি একা নও, তোমার দিকে তাকিয়ে আছে তোমার পুরো পরিবার। এতটাই যোগ্য হও যখন এসব মানুষকে পিষে ফেলার ক্ষমতা রাখো। বিশ্বাস করো আমি ছোট পাপার মৃত্যুর পরে ভেবেছিলাম এভাবে আমিও কাউকে মৃত্যু দিবো। প্রতিশোধ নিবো, কিন্তু আমি বড় হয়ে বুঝেছি আমি ভুল প্রতিজ্ঞা নিচ্ছি, আমার এটা করা উচিত নয়।
তার চেয়ে বরং সেই তাড়নাটা অন্যভাবে প্রকাশ করি, কিছু মানুষকে বুঝাই তার জীবনের মূল্য! প্রীলি আমি জানি তুমি আমার কথার পরে বলবে আরেকজনের শাস্তি নির্দোষদেরকে কেন দিতে চাই?
কিন্তু বলো আমার ছোট পাপার সেদিন কি দোষ ছিল? কেন উনার সত্তাকে কেড়ে দিয়ে মৃত্যু উপহার দিলো? জনেবনে আমি এই প্রশ্ন ছুড়েছি কিন্তু এই জবাব আমি আজও পাইনি! একটা কথা জানো, ছেলেদের থেকে মেয়েরা শক্ত, ছেলেরা উঠে সহজে উঠে দাঁড়াতে পারে না। কিন্তু মেয়েরা একটা সময়ের পরে ঠিকি পারে।

আমি চুপ করে শুনে যাচ্ছিলাম। আমার কথা বলার মতো কোনো শক্তিও নেই।
তিয়াস আবার বলতে লাগলো,
___ রায়ান ভাইয়া ভীষণ ভালো। আমি তার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জেনেছি তার জীবনে প্রথম প্রেম তুমি। আমি খারাপ, ভীষণ খারাপ। জানিনা আমার ভেতর থেকে এসব তাড়না কবে বের হবে, আমি কবে শোধরাবো? কিন্তু সবকিছুর ভীড়ে এটা উপলব্ধি করেছি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। দীপ্তির সাথে প্রথম অভিনয় শুরু করলেও তুমি ছিলে আমার প্রতারণার প্রথম মুখ। আমি তোমার সাথে মিশে থাকা দেড় বছর আজও ভীষণ মনে করি, তারপর এতোগুলো বছর তোমার শূন্যতায় শুধু তোমারই অস্তিত্ব খুঁজি! কিন্তু আমি তোমার যোগ্য নই। এভাবেই দূর থেকে এই অস্তিত্ব আঁকড়ে বেঁচে থাকবো। আমি পারবো!
কিন্তু রায়ান ভাইয়া পারবেনা!

এটা শুনে আমি চোখ ফিরিয়ে রায়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম আর চমকে উঠলাম।

চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here