শূন্যতায় অস্তিত্ব (৪র্থ পর্ব)
লেখাঃ তাজরীন খন্দকার
তখন বুঝতে পারিনি এই ছবিগুলোই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে!
তিয়াসের সাথে সেদিন ছবি পর্যন্তই কথা। আমি তখনই সবাইকে মাথা ব্যথার অজুহাতে রুমে চলে আসি।
বাকি রুমগুলোর অধিকাংশই তালা লাগানো। এদিকে আমি আমাদের রুমে একা বসে আছি। এদিক ওদিক পায়চারী করছিলাম আর বারবার আয়নায় নিজেকে দেখছিলাম। এতোবার আয়না দেখতে চাওয়ার কারণটাও আমার তখন মাথায় আসেনি।
আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের বদলে শুধু ওই চোখ,ঠোঁট, হাসি আমার সামনে ভাসছিলো।
তারপর এইটা মিলাতে পারছিলাম না, তিয়াস আমাদের ক্লাসের অথচ আমি এতদিন দেখিনি কেন?
তিয়াস নিশ্চয়ই নুজহাতদের মতোই কলেজ ফাঁকি দেয়। ক্লাসে নিয়মিত হলে আমাকে তো অবশ্যই চিনতো।
জীবনে প্রথমবার বুকের ভেতর একটা অস্বস্তিকর যন্ত্রণা হচ্ছিলো। আজকের আগে নিজেকে এতটা উদাস আর কখনো মনে হয়নি। অন্য রকম একটা অনূভুতি আমার সারাময়!
খুব করে চাইছিলাম পড়তে বসবো। কিন্তু কিছুতেই পারছিলাম না। বিকালের দিকে নুজহাত বাদে সবাই রুমে চলে আসলো। নুজহাত নাকি সা’দের সাথে ঘুরতে গেছে।
নুজহাত ফিরলো সন্ধ্যার দিকে। এসে ফ্রেশ হয়েই ফোন নিয়ে আবার শুয়ে গেলো। অন্য সময় হলে আমি বাদে সবাই এটাই করে। আজকে আমারও কেন জানি পড়তে ইচ্ছে করছে না।
বামে তাকিয়ে দেখলাম দিয়া মুভি দেখছে। আমি আস্তে আস্তে ওর কাছে গিয়ে বসে বললাম,
___ একটু জায়গা দাও, আমিও দেখবো।
আমার কথা শুনে রুমের বাকি সবাই ফোন সরিয়ে উঁকি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। শুভা রসিকতার ভঙ্গিতে বললো,
___ ওমাহ, লিয়া আজকে এখনো পড়তে বসো নাই? অন্য সময় তো এতক্ষণে জোরে জোরে পড়ে আমাদের কান ঝালাপালা করে দিতা।
আমি সবকথাগুলো হাসিতে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে দিয়ার সাথে মুভি দেখছি, হিন্দি তেমন একটা বুঝিনা তাই দিয়া মাঝে মাঝে বুঝিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু একটু যাওয়ার পরেই বিভিন্ন রোমান্টিক সিন সামনে আসছে, আমি চোখ সরিয়ে আবার তাকাচ্ছি, আমাকে এমন করতে দেখে দিয়া বললো,
___আগে কখনো রোমান্টিক মুভি দেখোনি?
আমি না সম্মতিতে মাথা নাড়লাম। এটা দেখে নুজহাত আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
__দিয়া ওরে জিগা তো আজকে হঠাৎ করে মুভি দেখতে গেলো কেন? বেচারার এখনো পর্যন্ত ফেইসবুক একাউন্টই নাই। হাহাহা ওর এই বয়সটাই বৃথা! সারাক্ষণ আছে বইয়ে মুখ গুজে থাকা!
আমি চুপ করে থাকলাম। এর ৫ মিনিটের মাথায় নুজহাত জোরে জোরে বলে উঠলো,
___ এই এই শুন ফেইসবুকের কথা বলতে বলতেই তিয়াস আমার কাছে লিয়ার ফেইসবুক আইডি জানতে চাচ্ছে।
এই কথা শুনে রুহি প্রথমে কিছুটা অবাক হলো। তারপর হাসতে হাসতে বললো,
___ওরে বলে দে লিয়া ফেইসবুক উচ্চারণও জানেনা।
হাহাহা!
পরক্ষণে রুহি এগিয়ে এসে নুজহাতের পাশে বসে বললো,
___কিরে লিয়ার আইডি জানতে চাচ্ছে কেন?
নুজহাত আমার দিকে ফিরে বললো,
___লিয়ার সাথে নাকি জরুরী কথা আছে।
আমি এতক্ষণ মনযোগ দিয়ে শুনছিলাম। এবার আমি বালিশের কাছ থেকে আমার ফোনটা নিয়ে এগিয়ে বললাম,
___নুজহাত আমাকে ফেইসবুক একাউন্ট খুলে দাও।
তাকিয়ে দেখি বাকিরা উঠে এসে আমাকে ঘিরে ধরে তাকিয়ে আছে। আমার হঠাৎ এই পরিবর্তন হয়তো কেউ গ্রহণ করতে পারছেনা৷
নুজহাত মুখ ভেংচিয়ে বললো,
___সেদিন পড়তে বসে বিরবির করে বলছিলে, মেয়েরা পড়ালেখা করতে এসে কিসব নিয়ে পড়ে থাকে, বাবা-মা তাহলে হোস্টেলে দিলো কেন? আমরা তো এসব নিয়েই পড়ে থাকি, কিন্তু তুমি এখন চাইছো কেন? আচ্ছা তিয়াস ফেইসবুক একাউন্ট চাচ্ছে কেন বলোতো? আজকে আমরা চলে যাওয়ার পরে তিয়াস কি বলছে তোমাকে?
আমি চুপ করে রইলাম। নুজহাত আমার মুখের দিকে তাকিয়ে, কি ভেবে হাত বাড়িয়ে বললো,
___ দাও একাউন্ট খুলে দিচ্ছি। পাসওয়ার্ড তুমি দিও।
পাসওয়ার্ড দেওয়ার জন্য মোবাইল আমার হাতে দেওয়ার পরে আমি কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলাম। দেওয়ার মতো কিছুই খুঁজে পাচ্ছিনা৷ আজ তিয়াস আমাকে প্রীলি বলে ডেকেছিল এটা মনে হতেই আমি এটা ট্রাই করলাম,’ Prili ‘ কিন্তু সেটা হলো না, কারণ ছয়টা শব্দ লাগবে। এখানে মাত্র ৫ টা।
হুট করে ইংরেজিতে Priyas লিখে পাসওয়ার্ড কনফার্ম করে দিলাম। কেন করলাম সেটা আমিও জানিনা। তারপর নুজহাত রুমের সবাইকে এড দিয়ে তিয়াসকে এড করে দিলো।
এড করার সাথে সাথে তিয়াস কয়েকটা ছবি সেন্ট করলো। আমি দেখার আগেই নুজহাত চিৎকার করে বললো,
___ দেখ দেখ আমাদের লিয়া তিয়াসের সাথে কি সুন্দর করে আজকে ছবি তুলছে। অথচ আমাদের সাথে একটাও তুলে নাই। কি লিয়া, ব্যাপার কি বলোতো?
আমি টান দিয়ে ফোনটা নিয়ে দেখলাম, আজকে আমার সাথে যে ছবি তুলেছে এগুলো আমাকে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনটা বোর্ড পরিক্ষা আর একবার মামার বিয়েতে নিজের ছবি তুলেছিলাম। এছাড়া আমার ছবি তুলতেই কখনো ইচ্ছে হয়নি।
ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে আমি তিয়াসের লুকের দিকে খেয়াল করে চোখ সরাতে পারছিলাম না। দুটো ছবিতে তিয়াস আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে, সেটার দিকে তাকাতে আমার ভেতরে অন্য রকম অনূভুতিতে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিলো।
আরেকটা ছবিতে নিচের দিকে খেয়াল করলাম, তিয়াসের হাত আমার একগোছা চুলের উপর। কিন্তু ছবি তোলার সময় যে আবারও আমার চুলে স্পর্শ করেছিল সেটা টের পাইনি।
তবে এটাও সত্যি আমাকেও ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে। আমি গালে হাত রেখে বুঝার চেষ্টা করলাম আসলেই কি আমি এতো সুন্দর? নাকি দামী ক্যামেরায় তুলেছি বলে সুন্দর দেখাচ্ছে? তিয়াস আমার চেয়ে অনেক বেশি লম্বা, আমি ওর কাঁধ বরাবর থেকে আরেকটু উপরসমান। কিন্তু দুজনকে একসাথে খারাপ লাগছে না!
সবার মনোযোগ এখন আমার দিকে থাকলেও আমি একমনে ছবিগুলো দেখছিলাম। নিজের বিছানায় এসে শুয়ে অনেক্ষণ ধরে দেখে হঠাৎ মনে হলো নিচে টেক্সটও করেছে। টাইপ করতে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো। কোনো কিছুই খুঁজে পাচ্ছিনা। তিয়াস লিখেছে,
__ ছবিগুলো দেওয়ার জন্যই নুজহাতের কাছে তোমার আইডি চেয়েছিলাম। তা এখন কি করছো?
অনেক্ষণ ধরে ওয়ার্ড খুঁজে বের করে তারপর জবাব দিলাম,
___শুয়ে আছি, আর আমি এখনি আইডি খুলছি।
তারপর তিয়াস আবার রিপ্লে দিলো,
___নুজহাত বলে তুমি নাকি সারাদিন পড়ালেখায় ব্যস্ত থাকো?
আমি সিন করেও কোনো রিপ্লে দিলাম না। তিয়াস আবার বললো,
___আচ্ছা তুমি টাইপিংয়ে মনে হয় কাঁচা। শুনো কাল আমি ক্লাসে আসবো। দেখা হবে তোমার সাথে।
আমি আচ্ছা লিখে অনলাইন থেকে বের হয়ে আসলেও ওর মধ্য থেকে বেরুতে পারলাম না। ছবিগুলো ঘন্টায় কয়েকশো বার দেখা হয়ে গেছে, খুব মনোযোগ দিয়ে বারবার দেখেও দেখার ইচ্ছের ব্যতিক্রম হচ্ছিলোনা। সবার দিকে তাকিয়ে আমি ভাবছিলাম ওরা কেন পড়ালেখা ছেড়ে সারাক্ষণ ফোন, চ্যাট, এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এই পরিস্থিতিটা খুব ভয়াল! আমার একদিনেই পড়ালেখা থেকে মনোযোগ উধাও। সেদিন সারারাতে আমার ঘুম ভেঙেছে ৫০ বারেরও বেশি, একটু চোখ বন্ধ করতে পারলেও ওকে নিয়েই উল্টা পাল্টা স্বপ্ন দেখে জেগে যাচ্ছিলাম। কাঁথার নিচে লুকিয়ে বারবার ছবিগুলো দেখছিলাম। অথচ এত বছর পর্যন্ত আমার রাত পোহায় এক ঘুমে। শরীর খারাপ লাগলে যদি ঘুমে কোনো ব্যঘাত হয়।
পরেরদিন সকালে উঠে কলেজের জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। রুম থেকে বের হয়ে যাবো, তখন কি ভেবে যেন রুহির বক্স থেকে কাঁজল নিয়ে চোখে লাগালাম।
দুইতিনবার আয়না দেখে রুম থেকে বের হলাম।
ক্যাম্পাসে যাওয়ার পরেই আমার চোখ এদিক ওদিক কাউকে খুঁজছিল। পরিশেষে ক্লাসে গিয়েই তার দেখা মিললো তার।
তিয়াস বারবার বলছিল ক্লাস করার দরকার নেই। কিন্তু আমি শুনলাম না। সেও আমার জন্য ক্লাসে বসলো।
এদিকে ক্লাসে বসে পড়লাম আরেক বিপদে, আমি তো আজ পড়া শিখে যাইনি।
অন্য সময় স্যার আমাকে পড়া পারবো ভেবে বেশিরভাগই জিজ্ঞাসা করে না। প্রথমে ভেবেছিলাম আজকেও এটাই হবে, সবাইকে পড়া জিজ্ঞাসা করলো কিন্তু কেউ ভালো করে উত্তর দিতে পারলোনা। তিয়াসকেও জিজ্ঞাসা করছিল সেও পারেনি। একদম শেষ দিকে স্যার আমার দিকে আঙুল করে বললো,
___কাল অনুষ্ঠান করে সবাই কি বাসায় গিয়ে ঘুমিয়েছো শুধু? আচ্ছা সে যাই হোক কেউ না পারুক, প্রীলিয়া অবশ্যই পারবে। সে আমার প্রিয় এবং ক্লাসে সবচেয়ে বেশি মনোযোগী ছাত্রী। উঠে দাঁড়াও প্রীলিয়া।
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে বললাম,
___ স্যার আসলে আমিও…
স্যার রেগেমেগে বলে উঠে,
___ কিহহ আজ তুমিও শিখলে না? অথচ আমি কিন্তু এটা আশা করিনি প্রীলিয়া। পরবর্তীতে যেন এমন না হয়। তোমাকে দিয়ে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করি!
আমি মাথা নিচু করেই আবার বসে পড়লাম।
স্যার ক্লাস থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে তিয়াস আমার হাতে ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গেলো আর বললো,
___ আর ক্লাস করতে হবে না। আজকে সব ক্লাসেই এমনভাবে লজ্জা পেতে হবে।
আমি মন খারাপ করে বললাম,
___আজ ক্লাস না করলে তো কাল কি পড়া সেটাও জানবোনা। কালকেও পারবোনা। এভাবে দেখা যাবে আমি একদম বাজে স্টুডেন্ট হয়ে গেছি। জানেন আজকেই প্রথম আমি ক্লাসে পড়া পারিনি। ছোট থেকে এই পর্যন্ত…
বলার আগেই তিয়াস ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,
___ চুপ চুপ, এদিকে আসো। এখান থেকে ফাঁকি দিয়ে পালাবো। একদিনে কিচ্ছু হবে না।
আমি কিছু না বুঝেই ওর পেছন পেছনে কলেজের একদম উল্টো দিকের একটা গেইটের সামনে গেলাম। এদিকে কোনো গেইট আছে আজকেই দেখেছি।
তারপর সেখান থেকে একটা টঙ্গের দোকানে দুজন বসলাম। প্রথম প্রথম কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করলেও তারপর কেমন জানি স্বাভাবিক হয়ে গেছি। ওর কথাগুলো এতো মজার আমি সেদিন এতো হেসেছি যে এর পূর্বে কবে এতো হেসেছি তাও জানা নেই। একটা মানুষ এসে আমার অতীতের সব রেকর্ড একে একে ভেঙে দিতে লাগলো। সত্যি বিষয়টা আমার জন্য চমকের!
তারপর শুরু হলো ক্লাস ফাঁকি দেওয়া, পড়ালেখায় অমনোযোগী হওয়া, সাজগোজ করে ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা,রাতভর ফোন চালিয়ে সকালে ঘুমানো, জীবনে যে আমি কাউকে তুই করে সম্বোধন করতে পারতাম না, সে আমি সেটাও শিখে গেছি। অনন্য ক্ষেত্রে আমি আমাকে তুই বলা নিতেও পারতাম না আবার কাউকে বলতেও পারতাম না। তাই রুমের সবার সাথে প্রথমদিকে শুধু আমার ক্ষেত্রে তুমি সম্বোধনটাই ছিল। মানে ৮-১০ টা মেয়ের মতোই আমার জীবন শুরু হয়ে গেলো।
কিন্তু তিয়াসকে এই দুইমাসে এখনো তুই বলিনি, আর সেও বলেনি। তবে আমাদের মধ্যে প্রেম এসেছে কিনা এতদিনেও বুঝতে পারিনি। শুধু এইটুকুই জানি তিয়াসের সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে!
আমাদের রুমের সবার সাথেই ওর বন্ধুত্ব, কিন্তু আমার উপরে ওর সব নির্ভরতা ভর করে।
একটা সুতো কিনলেও সেটা আমার পছন্দে কিনে।
ওর সকাল শুরু হয় আমার সাথে কথা বলে, ওর বেলা কাটে আমাকে নিয়েই,ওর ঘুমাতে যাওয়াও আমাকে শেষ টেক্সট দিয়ে। তার নির্ভরতা আমার উপরে বললে ভুল হবে। আমার নির্ভরতাও এখন তিয়াসের উপর।
সেদিন সা’দের জন্মদিন ছিলো। নুজহাত মাসের শুরুতেই প্লানিং করছে তাকে কীভাবে সারপ্রাইজ দিবে। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম। তবে কেকটা কেমন হবে,এবং উপরের নাম দেওয়ার পরিকল্পনাটা পুরোটা আমার ছিল।
ওর জন্মদিনের দিন সবাই মিলে শহর থেকে অনেকটা দূরের বটতলায় গিয়ে সে জায়গাটা সকালের পর থেকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। বিভিন্ন ফুল বেলুন দিয়ে সাজাতে সাজাতে প্রায় দুপুর পেরুলো। তারপর আমি তিয়াসকে আগে আগে এসে কেমন হয়েছে দেখতে বললাম।
আধ ঘন্টার মধ্যে তিয়াস চলে আসলো। তখন সবকিছু প্রায় রেডি। নুজহাত এবার সাজগোজ করতে পার্লারে চলে গেলো। আমরা মোটামুটি যা তৈরি হওয়ার আগেই হয়ে নিয়েছি। শুভা, ওর রুহি গেলো কেক নিয়ে আসতে। আর দিয়া আর আমি এখানে পাহারাদার। তিয়াস এসেই চমকে গেলো।
ডেকোরেশন নিয়ে তার প্রশংসা যেন থামছেই না।
আমি সাজানো জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আমার ফোনটা তিয়াসের দিকে বাড়িয়ে বললাম,
___ একটা ছবি তুলে দাও তিয়াস।
তিয়াস ফোন হাতে নিয়ে বললো,
___ফোন তো লক। পাসওয়ার্ড বলো।
আমি অকপটে বলে ফেললাম,
___ Priyas
তিয়াসের হাসি মুখটা কেমন যেন হয়ে গেলো, সে আমার দিকে তাকিয়ে অপরাধী প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিয়ে বললো,
___ কে প্রীয়াস? তার নামে একদম ফোনের লক দেওয়া..
আমি মাঝকথায় বলে বসলাম,
___ সবকিছুর পাসওয়ার্ড এই নামেই। এবার ছবি তুলো।
তিয়াস ছবি তুললো। কিন্তু আর কোনো কথা বলল না। তার মুখটা পুরো দেখার মতো ছিলো। হাসির কোনো কিঞ্চিৎ রেশও নাই। আমার মজাই লাগছিল। মনে মনে আমারও এটাও মনে হচ্ছিলো, আমি ওর জন্য যেমন ফিল করি সেও হয়তো ঠিক তেমন!
আধ ঘন্টার মধ্যে বাকিরা হাজির হয়ে গেলো। সবাই একসাথে হওয়ার পর আমরা সামনে বড় পর্দাটা টানিয়ে নিয়ে সামনে দাঁড়ালাম, ভেতরে শুধু নুজহাত একা দাঁড়িয়ে সা’দের অপেক্ষা করছে। এর কয়েক মিনিট পরেই আরাফ বাইকে করে সা’দকে নিয়ে উপস্থিত হলো। ওকে দেখেই আমরা সবাই জোরে চিৎকার করে উঠলাম। সা’দ আমাদের দিকে তাকাচ্ছে আর নুজহাতকে খুঁজে চলেছে, সে বুঝতে পারছেনা সবাই লাল পর্দার টানিয়ে এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছি!
কাছে আসতেই আমরা সবাই একপাশে সরে গিয়ে পর্দা টেনে সরিয়ে দিলাম, সাথে সাথে আগে থেকে গাছের উপরে রেখে দেওয়া গোলাপের পাপড়িগুলো সা’দ আর নুজহাতের উপরে পড়তে লাগলো। আরাফ হচ্ছে ফটোগ্রাফার। সে এই সুন্দর দৃশ্যগুলো ক্যামেরা বন্দী করে ফেললো! সত্যিই আমাদের সাজানোটা চোখ ধাঁধানো হয়েছে, একদম সিনেমাটিক।
তিয়াসের মুখটা এখনো হুতুমপেঁচা হয়ে আছে।
সবাই এগিয়ে গেলো কেক কাটার জন্য। তিয়াসকে সা’দ তার একদম পাশে দাঁড় করালো। তিয়াস মন খারাপের সাথে ওখানে দাঁড়ালেও কেকের দিকে তাকিয়ে কেন জানি অদ্ভুতভাবে হেসে উঠলো। আমার সম্পূর্ণ মনোযোগ ছিল তিয়াসের উপরে। সা’দ তিয়াসের মুখে কেক তুলে দেওয়ার পরে একটু অংশ তিয়াস আমার দিকে বাড়িয়ে বললো,
___আচ্ছা “নুজসা’দ” এর মিনিং নুজহাত আর সা’দ হলে, প্রীয়াস মানে…এ্যঁ এ্যঁ…!
আমি কেকটা মুখে নিয়ে লজ্জায় ঘুরে গেলাম। তিয়াস আমার লজ্জা পাওয়াতে আরো হাসছে! তিয়াসের এরকম হাসির কবলে আমি যেন রোজ মরতে প্রস্তুত ছিলাম।
তবে বুঝতে পারিনি এর পেছনেও ছিলো ভিন্ন কোনো সত্য!
চলবে…..