গল্পের নাম:প্রেম পায়রা,পর্ব ২০

গল্পের নাম:প্রেম পায়রা,পর্ব ২০
লেখনীতে:অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)

বিছানার দিকে তাকানোর আগে নিশানের চোখ আটকে গেল ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে থাকা মেয়েটির উপর।তুলি মাথা নিচু করে চেয়ারে বসে আছে।তার লম্বা শাড়ির আঁচল প্রায় পুরোটাই ফ্লোরে অবহেলায় পরে আছে। মাথার খোলা চুলগুলো পিঠময় জুড়ে সানন্দে ঢেউ তুলে যাচ্ছে। তুলি ডান হাত দিয়ে চোখের সামনে আসা অবাধ্য চুলগুলো কানে গুঁজলো।লজ্জামিশ্রিত চোখে এক নজর নিশানের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করলো।

নিশান ধীরপায়ে তুলির দিকে এগিয়ে গেল।তার ঘোর লাগা দৃষ্টি তুলিতে নিবদ্ধ।তুলির কাছে গিয়ে সে হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পড়লো।অপলকভাবে তুলির দিকে চেয়ে রইলো।

বিয়ের এতগুলো মাস পর আজ প্রথম সে তুলিকে সাজরত অবস্থায় দেখলো।তুলির চোখে কাজল,ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক, মুখের ত্বক অতিরিক্ত মসৃণ!পরণের সবুজ শাড়ি উজ্জ্বল শ্যামলা ত্বকে ফুটে উঠেছে।কি সুন্দর লাগছে তাকে!

নিশানের চকিতে মনে পড়লো সেই রাতের কথা।যে রাতে জ্বরের ঘোরে সে সর্বপ্রথম তুলির কাছে গিয়েছিল।খুব কাছে,এতটা কাছে যে চাইলেই কেউ আর আলাদা হতে পারবে না।অস্তিত্বের সাথে মিশে গিয়েছিল দুজন দুজনার।তারপরের বেশকিছু দিন নিশান লজ্জায় তুলির সামনে আসতে পারেনি।গভীর রাতে বাড়ি ফিরতো,তুলিকে কৈফিয়ত দেয়ার ভয়ে তটস্থ থাকতো সবসময়।অথচ মেয়েটা পূর্বের মতোই নির্বিকার থাকতো।আস্তে আস্তে নিশানও মেয়েটার মায়ায় জড়িয়ে গেল।মেয়েটার নিস্পৃহ ভাব তার মধ্যে ভালো লাগার সৃষ্টি করলো,সৃষ্টি করলো নব্য ভালোবাসার!

সত্যি মেয়েটার মধ্যে অদ্ভুদ কোনো ক্ষমতা আছে।নয়তো নিশান যখন নিজের ভেঙে চূড়ে যাওয়া হৃদয়ের রক্তক্ষরণ দেখে বুঝে গেছিল, তার এই জীবনে নতুন করে আর কারো প্রেমে পড়া সম্ভব নয়!ঠিক তখন এই মেয়েটা অদ্ভুত ক্ষমতা দিয়ে তাকে প্রেমে পড়তে বাধ্য করলো।এখন এই ফুটফুটে মেয়েটা তার সমস্ত ধ্যান,জ্ঞান হয়ে গেছে।অফিসের সময় টুকু সে ছটফট করে।কখন বাড়ি ফিরবে,তুলির অপেক্ষারত মুখটা দেখে বুকের ঢেউ থামাবে!

—‘কি দেখছেন?’

তুলির কম্পিত কন্ঠে নিশানের ঘোর কাটে।সে তুলির ডান হাতটা উঁচু করে নিজের গাল স্পর্শ করে।মোহাচ্ছন্ন কন্ঠে বলে উঠে,

—‘এত সাজ কি উপলক্ষে?’

তুলির লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।সে কি করে নিশানকে সুখবর টা দিবে?কি করে বলবে সে মা হতে চলেছে?কিভাবে বলবে?

সে চট করে নিশানের থেকে হাতটা ছাড়িয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে ফেলে।নিশান মুচকি হাসে।সামান্য উঁচু হয়ে তুলির মুখ ঢেকে রাখা হাতের উপর চুমু খায়!তুলি সটান দাঁড়িয়ে একটু পিছিয়ে গেল।

তুলির দিকে চেয়ে নিশান নিজেও উঠে দাঁড়ায়।শার্টের হাতা গুটিয়ে নেয়।মাথার চুলগুলোতে পরম যত্নে একবার আঙুল চালায়।তারপর এগিয়ে গিয়ে তুলির খুব কাছে দাঁড়ায়।তুলি তার দিকে না তাকিয়েই নিশানকে জড়িয়ে ধরে।নিশান খুব যত্ন করে তাকে বুকে আগলে নেয়।

কেটে যায় কিছু মুহূর্ত।কিন্তু দুজন নড়চড় করে না।হঠাৎ করে তুলি নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।এক হাতে নাক চেপে ধরে।নিশানের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে বড় করে শ্বাস নেয়।ফুসফুস ভরে শ্বাস নিয়ে তবে স্বস্তি পেল যেন।নিশান তুলির অস্থিরতা দেখে ঘাবড়ানো কন্ঠে বলল,

—‘তুলি কি হয়েছে?এমন করছ কেন?’

নিশান আবার তুলির দিকে এগিয়ে যেতে তুলি ডান হাত সামনে বাড়িয়ে বাঁধা দিল।অনুরোধের স্বরে বলল,

—‘প্লিজ কাছে আসবেন না।আপনার গা দিয়ে গন্ধ।এতক্ষণ নাক চেপে ছিলাম।আমি সহ্য করতে পারি না।’

নিশানের চোখে মুখে অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট হলো।তুলির দিকে মায়াময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চাহনি গভীর থেকে গভীরতর করল।বেশ কিছু দিন হলো তুলি তাকে সহ্য করতে পারছে না।হুট করে কাছে তো হুট করে দূরে ঢেলে দেয়।কেমন যেন আচরণ করছে সে।

নিশান কন্ঠে অসহায়ত্ব ফুটিয়ে বলল,

—‘তুলি এমন করছো কেন?আমার কষ্ট হয় তো!’

তুলি নিজেকে ধাতস্থ করলো।পরমুহূর্তে চোখ বন্ধ রেখে নরম সুরে বলল,

—‘আমাদের পরিবারে নতুন সদস্য আসছে নিশান মাহমুদ!আপনি বাবা হতে চলে এসেছেন!এই যে আপনার গায়ের পঁচা বটপাতার গন্ধ, এসব আমার রাজকুমার আসার পূর্ব লক্ষণ!’

রুমে পিনপতন নিরবতা।মিনিট কয়েক কেটে গেল।নিশানের কোনো প্রতিত্তর না পেয়ে তুলির মনে অভিমানের পাহাড় জমলো।এতগুলো দিন কল্পনায় কত কিছু সাজালো।সে তার প্রথম প্রেগনেন্সির খবর নিশানকে দিলে সে কতটা খুশি হয়,কিভাবে রিয়েক্ট করে তা এতদিন কল্পনায় সাজাতো।অথচ নিশান এতবড় সংবাদ জেনে এতটা নির্লিপ্ত?কোনো কথা বলছে না?

প্রচন্ড মন খারাপ করে তুলি চোখ খুলল।অভিমানী দৃষ্টিতে নিশানের দিকে তাকাতে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল।নিশান হাঁটু মুড়ে ফ্লোরে বসে পড়েছে।তার চোখ দুটো ভয়ানক লাল।সেই লাল চোখের উপর ভাসছে জল।তুলি একছুটে নিশানের কাছে গেল।

হাঁটু মুড়ে বসে নিশানের হাত চেপে ধরলো।ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,

—‘নিশান,আপনি খুশি হননি?আপনার এ সন্তান চাই না?’

নিশান ছলছলে চোখ মেলে তুলির দিকে তাকালো।আচমকা তুলিকে নিজের বুকে চেপে ধরলো।চোখ বন্ধ করতে চোখের পাতা বেয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে গালে পড়লো তার!

সে বাবা হবে?নরম, তুলতুলে একটা বাচ্চা তার দিকে তাকিয়ে হাসবে!ছোট্ট ছোট্ট আঙুল দিয়ে আঙুল আঁকড়ে ধরতে চাইবে!তার আধো আধো বুলি ফোটা মুখে সে প্রথম বাবা ডাক শুনবে।কি যে অচেনা সুখের অনুভূতি!নিশানের খুশিতে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। তাকে এত খুশি উপহার দেয়া মেয়েটার জন্য নিজেকে বিলীন করে দিতে মন চাইছে।সে দু হাতে আরো চেপে ধরলো তুলিকে।

তুলি নিশানের বুক থেকে ভেঙে ভেঙে বলল,

—‘আপনি খুশি হয়েছেন তো?’

নিশানের হাত ঢিলে হয়ে এলো।তুলির মুখটা দু হাতের মুঠোয় নিয়ে কপালে ঠোঁট ছোঁয়াল।ভেজা দৃষ্টিতে বলল,

—‘পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ আজ আমি!সবচেয়ে বেশি খুশি।জেএসসি তে বোর্ডে তৃতীয় হওয়ার পরো এত খুশি হইনি।জীবনে প্রথম এত খুশি লাগছে আমার।বলো তুলি,তুমি কি চাও আমার কাছে!যা চাইবে তাই পাবে।ইভেন আমার শ্বাসটাও!কি চাও তুমি?’

তুলি লজ্জা মিশ্রিত মুখে বলল,

—‘আপনার ভালোবাসা!সারাজীবনের জন্য!’

নিশানের মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠে।এক লাফে উঠে তুলিকে কোলে তুলে নিল।তুলির পেটের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো।তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে টেনে টেনে বলল,

—‘ভালোবাসি।ভালোবাসি তোমাকে।’

৩২.

মাঝরাতে সম্পদের ঘুম ভেঙে গেল।ঘুম ভাঙতেই তার কপাল কুঁচকে গেল।নিজের উপর বিরক্ত লাগা শুরু হলো।এত সুন্দর, মিষ্টি একটা স্বপ্ন দেখছিল।অথচ ঘুম ভেঙে স্বপ্নের বারোটা বাজিয়ে দিল।

স্বপ্নে সে আর তিথি কোথাও ঘুরতে গেছে।জায়গাটা কোথায় তা মনে নেই।বাংলাদেশের কোথাও হতে পারে,আবার ফিনল্যান্ডের কোন জায়গা হতে পারে।এক্সাক্ট মনে নেই।তবে এটা মনে আছে তারা একটা সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে ছিল।সমুদ্রের মাঝে বিশাল একটা সবুজ দ্বীপ।দ্বীপে ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়!পাহাড়ের গায়ে নাম না জানা সবুজ গাছ।তিথি দ্বীপটাতে যাওয়ার জন্য বায়না ধরছিল।সবেমাত্র তিথির হাত ধরে সে কিছু একটা বলবে তার আগেই ঘুম ভেঙে গেল।

হঠাৎ করে সম্পদের কখনো ঘুম ভাঙে না।অল্প বিস্তর শব্দে তবে ঘুম ভাঙে।কিন্তু রুমে কোথাও শব্দ হচ্ছে না।তবুও সে সামান্য মাথা উঁচু করে রুমটাতে নজর বুলাল।

কাচের তৈরি ছোট্ট ছিমছাম রুম।কাচের এ পাশে লম্বা লম্বা বিচিত্র সুন্দর পর্দা ঝুলছে।রুমে আরামদায়ক উষ্ণতা।অল্প পাওয়ারের স্নিগ্ধ আলো রুমে।আলোটা চোখে পড়লে শান্তি শান্তি অনুভূতি জন্মে।ফিনল্যান্ডের এই রুমটাতে সম্পদ একাই থাকে।

সম্পদের চোখের সামনে তিথির চেহারা ভাসছে।চলে আসার দিন এয়ারপোর্টে তিথি সি অফ করতে এসেছিল এবং সম্পদকে অবাক নামক পাহাড়ের শীর্ষ চূড়ায় তিথি হাউমাউ করে কান্না শুরু করেছিল।তাকে জড়িয়ে ধরে তিথির বাচ্চাদের মতো সে কি কান্না!

মনটা বিষিয়ে উঠলো সম্পদের।তিথিকে রেখে, পরিবার রেখে, এই বিদেশ বিভূঁইয়ে তার দিনগুলো কাটছে না।সবেমাত্র একুশ দিন হলো এসেছে।এখনো মাস দুইয়ের বেশি থাকতে হবে।কি যে এক যন্ত্রনা!বাকি রাতটুকু আর ঘুম আসবে না।সে উঠে পড়লো।

ওয়াশরুমে ঢুকে সে চোখে মুখে পানি ছিটাল।বের হয়ে পারটিকুলার চালু করলো।এখন গরম গরম এক কাপ কফি খাবে আর তিথির ছবি দেখে বাকি রাতটুকু কাটিয়ে দিবে।

কফি হাতে বিছানায় বসতেই ফোন ভাইব্রেট হওয়া শুরু করলো।চিন্তিত হয়ে ফোনটা হাতে নিতে বুকের ভেতর একটা ভয় জেঁকে বসলো।লং ডিসট্যান্সের কল।কল করেছে বাংলাদেশ থেকে তার শ্বশুর মশাই সিদ্দিকুর রহমান।

দ্রুত ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো সম্পদ।তার মনে একগাদা প্রশ্নেরা এসে জড়ো হচ্ছে।পরিবারের কারো কিছু হলো না তো?তিথি?তিথি ঠিক আছে তো?সে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

—‘হ্যালো!বড় বাবা?কি হয়েছে?আপনারা সবাই ঠিক আছেন তো?’

আতংকে সম্পদ সালাম দিতে ভুল করলেও ওপাশে সিদ্দিকুর রহমান হাসতে ভুললেন না।তিনি হাসি হাসি কন্ঠে বললেন,

—‘এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই বাবা।সবাই ভালো আছে।’

সম্পদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

—‘সবসময় আতংকে থাকি বড় বাবা।ভয় হয় না জানি কার কি হয়ে গেল।’

—‘ভয় তুমি পরে পেলেও চলবে।আপাতত আমি একটা গিফট পাঠিয়েছি তোমার জন্য ইয়াংম্যান!’

সম্পদ হাসলো।তিথির ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তার শ্বশুর মশাই অনেক সাহায্য করেছেন তাকে।দূরত্বের বিষয়টা তিনি তাকে বলেছিল।বলেছিল, কিছু জিনিসের মর্যাদা আমরা ততক্ষণ বুঝি না যতক্ষণ জিনিসটা আমাদের হাতের নাগালে থাকে।চোখের সামনে থাকে।কষ্ট না করেই পাওয়া যায়।কিন্তু ওই জিনিসটা যখন সহজলভ্যতা হারায়, চট করে পাওয়া যায় না,তার অভাববোধের সৃষ্টি হয় তখন তার প্রতি ভালোবাসা জন্মে।আমরা যত্নশীল হয় জিনিসটার প্রতি।নিজের সবটা দিয়ে জিনিসটা আগলে রাখার চেষ্টা করি যেন পুনরায় হারিয়ে না ফেলি।তুমি এক কাজ করো সম্পদ।তিথির থেকে নিজের দূরত্ব বাড়িয়ে দাও।তিথি বুঝতে পারবে সে অবহেলায় কি হারাচ্ছে।

তার উপদেশ কাজে লেগেছে।দূরত্ব সৃষ্টিতে তার প্রতি তিথির ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।সম্পদ হাসিমুখে বলল,

—‘বড় বাবা।ধন্যবাদ।আমি অবশ্যই গিফটটা যত্নে রাখবো।’

—‘যত্নে রাখতে হবে ইয়াংম্যান।যত্নে রাখার জন্যই তোমাকে দিয়েছি।এখন কষ্ট করে নিচে নামো।গিফটটা পার্সেল করে তোমার দরজা অবধি পৌঁছে গেছে।এখন তাকে যত্নে রাখার দায়িত্ব তোমার।’

—‘বড় বাবা!এত রাতে পার্সেল এসে পৌঁছেছে?এটা কিন্তু আমি সকালেও নিতে পারতাম।’

—‘তুমি খুব দ্রুত নিচে যাও তো।আমি রাখছি।ইয়াংম্যান, ভালো থেকো।গিফটটার যেন অযত্ন না হয়।’

কল কেটে গেল।সম্পদ কফির কাপে একটা ছোট চুমুক দিয়ে নামিয়ে রাখলো।উঠে দরজার কাছে গিয়ে সে আবার ফিরে এলো।বাইরে প্রচুর শীত!চিল ফেক্টর নিয়ে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে!সে গরম জ্যাকেটটা গায়ে জড়াল।উলের মাফলারটা গলায় পেঁচিয়ে বের হলো।

বাইরে কয়েক ইঞ্চি করে বরফ জমেছে।সকাল না হওয়া পর্যন্ত এই বরফ গলবে না।সে সাবধানে পা ফেলে কয়েক পা এগোতে বরফের মধ্যে একটা নারীমূর্তি নজরে এলো।রাস্তার সোনালী হলুদ আলো মেয়েটার গায়ের উপর পড়েছে।মুখটা অস্পষ্ট।সুনশান রাস্তায় এত রাতে একটা মেয়েকে দেখে সম্পদ ভয় পেল।আরো কয়েক পা এগোতে তার পা থেমে গেল।মেয়েটার মুখ স্পষ্ট হয়েছে এবং সেই মুখটা তার অতি পরিচিত একজনের মুখের সামনে পুরোটাই মিলে যায়।

বাইরের হীমশীতল পরিবেশও সম্পদের শরীর দিয়ে কুলকুল করে ঘাম বের হলো।সে ইংরেজি ভুলে অস্ফুটস্বরে খাঁটি বাংলায় বলে ফেলল,

—‘কে?কে ওখানে?’

মেয়েটি নিচের দিকে তাকিয়ে পা টিপে টিপে, বরফের উপর দিয়ে এগিয়ে আসছে।সম্পদের ভয়ার্ত ছাপের উপর এসে ভর করলো বিস্ময়।মেয়েটি হুবহু তিথির মতো দেখতে।একি তিথি?সেটা কি করে সম্ভব?

ততক্ষণে মেয়েটা তার কাছে চলে এসেছে।কালো কোর্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখা ডান হাতটা বের করে সম্পদের দিকে বাড়িয়ে দিল।মেয়েটি সুনিপুণ ভাবে বিট্রিশ একসেন্টে ঝরঝরে ইংরেজিতে বলল,

—‘আমার হাতটা একটু ধরো তো।বরফের উপর দিয়ে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।’

সম্পদ সবকিছুর তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে।সে হিসেব মিলাতে পারছে না।তার সামনের এই মেয়েটি কি তিথি?তার স্ত্রী তিথি?তার ভালোবাসা তিথি?তিথিই তো!কিন্তু ইংরেজিতে কথা বলছে কেন?

মেয়েটার কপাল কুঁচকে গেল।সম্পদের দিকে চেয়ে বিরক্তি ঝরা কন্ঠে এবার স্পষ্ট বাংলায় বলল,

—‘হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন?হাতটা ধরো তো!এই বরফে একবার পা ফসকে পড়ে গেলে নির্ঘাত হাড়গোড় টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।’

সম্পদের আবার মাথা ঘুরতে শুরু করলো।তিথি তো তাকে আপনি আপনি করে কথা বলে।সন্ধ্যার সময় তার তিথির সাথে কথা হয়েছিল এবং তখন সে আপনি আপনি করে কথা বলছিল।তিথিরূপী এই মেয়ে তুমি করে কেন বলছে?সরাসরি তুমি করে?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here