গল্পের নাম:প্রেম পায়রা,পর্ব ১৬
লেখনীতে:অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
কোনো উত্তর এলো না। তবে কয়েক সেকেন্ড পরেই তিথি কপালে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেল।ঠান্ডা স্পর্শে কেঁপে উঠলো সে।বন্ধ চোখ জোড়া খুলে দেখলো সম্পদ কিছুটা দূরে উল্টো ঘুরে আছে।তার ডান হাত মুঠ করা।কোনো নড়চড় নেই!
তিথি কিছুটা সময় চুপচাপ দরজায় ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।তার দৃষ্টি মেজেতে নিবদ্ধ।এরপর কোথা থেকে শুরু করবে,কি বলে শুরু করবে কিছুই মাথায় ঢুকছে না।তার চিন্তা ভাবনার মাঝে নিস্তব্ধতার পর্দা চিঁড়ে সম্পদ বলল,
—‘রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে ফেলো।ঠান্ডা লেগে যাবে।’
তিথি দুহাতে শাড়ির আঁচলের একটা অংশ চেপে ধরলো।সে যে এত যত্ন করে এই মানুষটার জন্য শাড়ি পড়লো,মাথার চুল খোলা রাখলো,একটু সাজগোজ করলো!অথচ মানুষটা তাকে একবার প্রশংসা করা তো দূরে থাক,ভালো মতো লক্ষ্য করলো না।চেয়ে পর্যন্ত দেখলো না।
সম্পদ ঘুরে দাঁড়িয়ে গলার স্বর একটু উঁচু করে বলল,
—‘সমস্যা কি?রুমে গিয়ে চেঞ্জ করতে বলেছি।’
তিথি ঠাস করে উত্তর দিল,
—‘যাবো না।’
সম্পদের ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল তিথির উত্তরে।তিথির বিহেভিয়ার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।সে গলার স্বর নামিয়ে বলল,
—‘আমার শাওয়ার শেষ হয়নি তিথি।চুপচাপ বাইরে যাও!’
—‘বললাম তো যাবো না!’
তিথির গলার টোন শুনে সম্পদ ঘাবড়ে গেল।কিছুক্ষণ মাথা চুলকে তিথির দিকে আবার এগিয়ে এলো।চিন্তিত কন্ঠে বলল,
—‘তিথি,আর ইউ অলরাইট?’
—‘না!’
—‘কি হয়েছে?জ্বর টর আসবে নাকি?তাড়াতাড়ি গিয়ে চেঞ্জ করো।’
সম্পদ তিথির হাত ধরে দরজা থেকে সরিয়ে দাঁড় করাল।টাওয়ালটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে দরজার পাল্লা সরাল।বলল,
—‘রুমে যাও!’
—‘আপনি আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলেন না কেন?’
তিথির চোখ দুটো ছলছল করছে।সে তাকিয়ে আছে বেসিনের দিকে।সম্পদ অবাক নয়নে কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে রইলো।অতঃপর থমথমে গলায় বলল,
—‘আমরা পরে কথা বলি তিথি।কেমন?’
—‘আপনি আমাকে ইগনোর কেন করছেন?নিজেকে নামের মতো সম্পদশালী ভাববেন না।আপনি আমার সাথে এত কিসের ভাব দেখান?হ্যাঁ?একটু সুন্দর করে কথা বললে কি চোয়াল খসে পড়বে?শুনুন!নিজেকে মহা মূল্যবান সম্পদ মনে করবেন না।আপনার নাম সম্পদ,আপনি নন!বুঝতে পেরেছেন?’
—‘হুঁ,বুঝতে পেরেছি।এবার যাও!’
তিথি নড়লো না।তবে তার মুখোভঙ্গির পরিবর্তন ঘটলো।শরীরের কাঁপুনি বেড়ে গেল।আবার গলা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেল।সে এলোমেলো সুরে বলল,
—‘আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি!আপনাকে ছাড়া মরে যাব।ভালোবাসি আপনাকে!শুনতে পেয়েছেন?’
সম্পদের শরীর শিথিল হয়ে এলো।একবার চোখ বন্ধ করে আবার খুললো।খুব দ্রুত তিথির হাত ধরে বাইরে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করলো।দরজায় পিঠ দিয়ে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতো পারলো না।তার হাত পা কাঁপছে!হার্টবিট বেড়ে গেছে।ক্রমাগত তিথির ‘ভালোবাসি’ কথাটা কানে বাজছে।সে হাঁফাতে হাঁফাতে দরজা ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো।
তার ভালো লাগছে।খুশি লাগছে।খুশিতে যা তা করতে ইচ্ছে করছে।বসে বসে সে শাওয়ারের নিচে গেল।উঠে দাঁড়িয়ে শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে আবার বসে পড়লো।দু হাতে মুখ ঢাকতে ঝরঝর করে চোখ বেয়ে পানি পড়লো।অবশেষে তার দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটল।তিথি তার হাতে ধরা দিল।তার একাকী কষ্টে মোড়া দীর্ঘ রজনীর চিরসমাপ্তি হলো।এতগুলো দিন তিথির মুখে শুনতে চাওয়া ‘ভালোবাসি’ শব্দটা তিথি বলে দিল।আজ সে কাঁদবে।ভালোবাসার সুখে কাঁদবে।তার ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে!
সম্পদের শাওয়ারের সময় টাতে তিথি চট করে শাড়িটা পাল্টে নিল।নিজেকে অনেক হালকা লাগছে তার।মনের ভেতর শত রঙা প্রজাপতি দ্বিকবিদিক উড়ে বেড়াচ্ছে।সে সম্পদকে নিজের মনের কথা বলতে পেরেছে।ভালোবাসি বলতে পেরেছে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে খেয়াল হলো ডিনারের সময় হয়ে গেছে।রেডি হয়ে কিছুক্ষণ সম্পদের জন্য অপেক্ষা করলো সে।কিন্তু সম্পদ ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে না।সে মোটামুটি সিউর সম্পদ লজ্জায় বের হচ্ছে না।
মুচকি হেসে তিথি রুম থেকে বের হলো।
রান্নাঘর থেকে ডালের বাটি হাতে ডাইনিং এ এসে দেখে স্নেহা নিচে নেমেছে।বাটিটা টেবিলে রেখে তিথি তার দিকে এগিয়ে গেল।স্নেহার হাতে বই ধরা।তারও সেমিস্টার ফাইনাল এক্সাম চলছে।একটা পরীক্ষা বাকি!
—‘ভাবী,ভাইয়া নিচে নামছে না কেন?’
স্নেহার সকৌতুক প্রশ্নে তিথি হাসিমুখে বলল,
—‘ওয়াশরুমে ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো।দেড়-দুই ঘন্টার মতো হলো ওয়াশরুমে ঢুকেছে।বের হচ্ছে না।’
—‘সে কি!তুমি ডাক দাওনি?’
—‘দিয়েছিলাম তো।হুঁ হাঁ করে থেমে গেল।’
স্নেহা বই হাতে ধপাস করে সোফায় বসে পড়লো।রান্নাঘর থেকে তরকারির গন্ধ আসছে।বাতাসী খালার রান্না এখনো শেষ হয়নি।স্নেহা ওড়নায় নাক চেপে বইয়ের দিকে মনোযোগ দিল।
টেবিল থেকে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে তিথি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল।সোবাহানকে খাবার দিতে হবে।
২৭.
সোবাহানের খাওয়া শেষে তিথি প্লেট নিয়ে নিচে নামলো।সোফার দিকে চোখ পড়তে শুকনো ঢোক গিলল।সম্পদ বসে বসে ফোন টিপছে।গায়ে ব্ল্যাক হুডি আর ট্রাউজার।রাতের বেলা গোসল করে হয়তো শীত লেগেছে।
তিথি তার উপর থেকে চোখ সরিয়ে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল।স্নেহাকে ডেকে তিনজন টেবিলে বসে গেল।বাতাসী তাদের সাথে বসলো না।তার গ্যাস্ট্রিক শুরু হয়েছে।আরো দেরিতে খাবে বলে নিজের রুমে চলে গেল।
খাবার সময় তেমন কথা হলো না।স্নেহা দু একটা কথা বললো।সম্পদ স্বাভাবিক ভাবে তার উত্তর দিল।ভুলেও একবারের জন্য তিথির দিকে তাকালো না।তিথি আড়চোখে বেশ কয়েকবার সম্পদের দিকে তাকালো।সম্পদের নির্বিকার আর নিস্পৃহ ভাব তার ভেতরের জ্বলুনি বাড়িয়ে দিল।এ ছেলের মন গলবে কবে আবার?
স্নেহার খাওয়া শেষ হতে সে উপরে উঠে গেল।তিথি সঙ্গে সঙ্গে নিজের প্লেট হাতে সম্পদের পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।সম্পদ নিজ হাতে এটা ওটা নিয়ে খাচ্ছে।বেম আরাম করে খাচ্ছে।সব মনোযোগ তার খাবারের দিকে।তিথি মাংসের বাটিটার উপর ঠাস করে চামচ রাখলো।একটু সময়ের জন্য সম্পদের হাত থেমে গেল।পরক্ষণে আবার বেশ আয়েস সহকারে খাওয়া শুরু করলো।কিন্তু তিথির দিকে তাকালো না।
তিথি কপাল কুঁচকে গেল।এত ঢং ধরে আছে কেন?মুখে এক লোকমা ভাত পুড়ে সে ইচ্ছে কৃত ভাবে খকখক করে কাশলো।সম্পদ আস্তে করে পানির গ্লাসটা তার দিকে এগিয়ে দিল।কোনো কথা বললো না।
তিথি তার মনোযোগ পাওয়ার জন্য অনেক কিছু করলো।কিছুতেই কিছু হলো না।সম্পদের মুখ দিয়ে একটা কথাও বের করতে পারলো না।কিছুক্ষণ ইতি-উতি করে শাড়ির আঁচলটা তুলে বসলো।তার পেটের কিঞ্চিৎ অংশ সম্পদের চোখে পড়ার কথা।অথচ সম্পদ ভুলেও তার দিকে তাকাল না।ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গা প্লাবন ঘটলে তিথি বাম হাতটা বাড়িয়ে এক ঝটকায় সম্পদের বাম হাতটা চেপে ধরলো।
তাতেও সম্পদ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না।নিঃশব্দে প্লেটের বাকি খাবার শেষ করলো।পানি খাওয়ার জন্য বাম হাতটায় টান দিল।তিথি ছাড়লো না।সম্পদ অনাগ্রহ নিয়ে একবার তিথির দিকে তাকালো।সেই দৃষ্টি তিথির সহ্য হলো না।সে নিজের হাতটা সরিয়ে নিল।
সম্পদ নিঃশব্দে পানি পান করলো।তিথিকে পরম হেলাফেলা করে রান্নাঘরে ঢুকলো।অল্প সময় পরেই তিথিকে ওভারটেক করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল।
সেদিকে চেয়ে রাগে, দুঃখে,অভিমানে তিথির চোখ দুটো জলে ভরে উঠলো।কোনোরকমে প্লেটের খাবার টুকু শেষ করে টেবিল গুছিয়ে রাখলো।
নিজেকে সামলে দু কাপ চা বানিয়ে সে স্নেহার রুমে ঢুকলো।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে।আজ স্নেহার সাথে ঘুমাবে।কিছুতেই সম্পদের সামনে যাবে না।সম্পদ আর কতটা সময় তাকে ইগনোর করে সেটা দেখে ছাড়বে।
স্নেহা টেবিলে বসে কিছু লিখছিল।তিথিকে দেখে চমকে উঠল।ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
—‘ভাবী,তুমি হঠাৎ?’
তিথি এক কাপ চা স্নেহার সামনে টেবিলে রেখে আরেক কাপ হাতে বিছানায় বসে পড়লো।চায়ের কাপে ছোট্ট করে চুমুক দিয়ে বলল,
—‘ও রুমে আজ যাবো না।তোমার সাথে ঘুমাব।তোমার ভাই এত ভাব দেখায় আমার সাথে!যেন আমি যা তা!ময়লা ফেলার ঝুড়ি।আমার বিন্দুমাত্র দাম নেই।’
—‘ও মা!কি বলছ কি ভাবী?’
—‘ঠিক বলছি।কিছুই করিনি আমি।তারপরও আমার সাথে ভাব দেখিয়ে কথা বলছে না।’
—‘চিন্তার বিষয়।তুমি এক কাজ করো ভাবী।একটা স্যরি বলে দাও।সব ঠিক হয়ে যাবে।’
তিথি চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে স্নেহার বিছানায় সটান শুয়ে পড়লো।চোখ বন্ধ করে বলল,
—‘আমি আজ রাতে এখানেই ঘুমাব।তোমার ভাই খুঁজলে বলে দিও।যদিও জানি খুঁজবে না।একে পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা না চাইলে কথা বলবে না তা বেশ বুঝতে পারছি।আমিও কম না!স্যরি যেহেতু বলতেই হবে,এত তাড়াতাড়ি কেন বলবো?আজ রাত যাবে,কাল দিন যাবে!আগামী কাল রাতে গিয়ে স্যরি বলল।’
স্নেহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তিথি একটা হাই তুলল।স্নেহা তাকে অনেক বুঝিয়েও সম্পদের রুমে পাঠাতে পারলো না।হাল ছেড়ে নিজের পড়ায় মনোনিবেশ করলো।
২৮.
রাত দশটার পর সম্পদ বাসায় ফিরলো।ক্লান্ত শরীর নিয়ে সিঁড়ি মাড়িয়ে উপরে উঠার শক্তি টুকু মিলল না।সোফায় হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়লো।মাথাটা সোফায় এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।
কয়েক মাস পর অফিসে গেছিল আজ।দুটো আর্জেন্ট মিটিং ছিল।সেগুলো শেষে প্রচুর কাজ পেন্ডিং এ ছিল।সব শেষ করে বিকেলে আবার সিদ্দিকুর রহমানের সাথে দেখা করেছে।তারপর ম্যানেজার সবুজের সাথে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করে ফিরতে ফিরতে এত রাত হয়ে গেল।সেই ভোরবেলা থেকে শুরু করে আজ সারাটা দিন তার দৌঁড়ের উপর কেটেছে।
বাতাসী এক গ্লাস পানি এনে সম্পদকে ডাক দিল।সম্পদ পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে এক নিঃশেষে শেষ করলো।শূন্য পেটে পানি পৌঁছাতে কেমন পাক দিয়ে উঠলো।দুপুরে দু কাপ কফি খেয়েছিল শুধু।
নিজেকে সামলে সে বলল,
—‘সবার খাওয়া শেষ নাকি?বাবা খেয়েছে?’
বাতাসী টেবিলে খাবার দিয়ে বলল,
—‘হ! বেক্কে অনেক আগে খাইয়া উঠছে।তোমার খাবার বাইড়া দিলাম।এক্কেরে খাইয়া উপরে যাও।আমি টেবিল গুছাই ঘুমায় যামু।’
বাতাসীর কথা কখনো অগ্রাহ্য করে না সম্পদ।এই মানুষটা অনেক মমতা দিয়ে তাকে আর স্নেহাকে আগলে রেখেছে।ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে সম্পদ হাত ধুয়ে খেতে বসলো।
খাওয়া শেষ হতে সম্পদ বাবার সাথে দেখা করলো।প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে বাবা আর স্নেহার সাথে দেখা করা তার পুরনো অভ্যাস!
গলার টাইটা ঢিলে করে সম্পদ নিজের রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালো।তিথির সাথে সারাদিন কথা হয়নি।গতকাল রাতে মেয়েটা সত্যি সত্যি স্নেহার সাথে ঘুমিয়েছে।সে সারা রাত স্নেহার রুমের সামনে পায়চারি করেছে।কি একটা অবস্থা!কোথায় সে একটু অভিমান দেখাবে তা নয়!মেয়েটা তো তার থেকে অলওয়েজ এক ধাপ উপরে।এক ধাপ নয়!একশ ধাপ উপরে!
সম্পদ বাহুতে থাকা কোর্টের পকেট হাতড়ালো।ছোট্ট বক্সের মতো জিনিস টা আছে।সে ভেবে রেখেছে আর অভিমান করে থাকবে না।এতে সে নিজেই কষ্ট পাচ্ছে।আজ নিজে থেকে তিথিকে স্যরি বলবে,ভালোবাসি বলবে,যা মন চায় তাই বলবে।অনেক হয়েছে মনের সাথে দর কষাকষি।আর নয়।
অন্য মনস্ক হয়ে পা দিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে একটা সুবিশাল ধাক্কা খেল সম্পদ।রুমের লাইট বন্ধ। রজনীগন্ধা আর গোলাপের গন্ধে ডুবে আছে রুমটা।
কিছুটা পর পর মোমবাতি জ্বলছে।তার পায়ের তলায় গোলাপের পাপড়ি!সে মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে গেল।বিছানার উপর ধবধবে সাদা রঙের বেডশিট বিছানো।তার উপর টকটকে লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ শেইপ আঁকানো।শেইপের ভেতর একগুচ্ছ তরতাজ লাল গোলাপ।
রুমে আবছা আলো,আবছা অন্ধকার। আলো আঁধারির এই খেলায় সামিল হয়েছে জানালার পর্দা গুলো।ঝিরিঝিরি বাতাসে সেগুলো উড়ছে।মোমবাতির শিখাগুলো এদিক ওদিক নড়াচড়া করছে।ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে কেঁপে উঠছে।সম্পদের ভেতরটা অনুভূতির জোয়ারে ভেসে গেল।এই সবকিছু ছাপিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেই মানুষটাকে দেখার জন্য মনটা আকুপাকু করতে শুরু করলো।
খট করে ছিটকিনি আটকানোর শব্দ কানে যেতে সম্পদের বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো।হার্টের প্রতিটি বিট ঝড়ের গতিপ্রাপ্ত হলো।ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের মানুষটাকে দেখার সাহস হলো না।সে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
অন্য দিকে তাকিয়ে থেকেও সে বুঝতে পারলো কেউ একজন তার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে।তার পেছনে এসে হালকা পদধ্বনি থেমে গেল।সম্পদের বুক ধড়ফড়ানি তুমুল বেগে বেড়ে গেল।অনুভূতি গুলো এলোমেলো হতে সে পেছন ঘুরতে নিল।তার আগেই কেউ একজন পেছন থেকে তাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে নিল।
হাতের কনুইয়ে ভাঁজ করে রাখা কোর্টটা খসে পড়ল সম্পদের হাত থেকে।সে চোখ বন্ধ করলো।অবশেষে ঝড় থামলো।তিথির স্পর্শে তার ভেতরের সমস্ত অভিমান ফুস!তোলপাড় হয়ে যাওয়া ভেতরটা নিমেষে শীতলতায় ভরে গেল।বুকের ভেতরটা স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় ডুবে গেল।হাত দুটো উঁচু করে তিথির জড়িয়ে রাখা হাত শক্ত করে চেপে ধরলো।
সে মনে মনে বলল,
—‘কাছে এসে একটু জড়িয়ে ধরলেই তো আমার সব অভিমান গলে যায় তিলবতী!এত দেরি কেন করলে?তোমার কোনো ধারণা আছে আমার কি পরিমাণ কষ্ট হয়েছে?’
(চলবে…..)