গল্পের নাম:প্রেম পায়রা,পর্ব ০৭
লেখনীতে:অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
তিথি অন্যমনস্ক হয়ে রিকশার খোঁজে যেতে কেউ একজন বললো,
—‘গাড়িতে উঠো!’
এই কন্ঠ তিথির চেনা।চেনার সময়কাল অল্প হলেও বড্ড আপন মনে হয়।কাছের মনে হয়।নিমেষে তার মন ভালো হয়ে গেল।সে মাথা ঘুরিয়ে দেখলো সম্পদ গাড়িতে বসে আছে।দৃষ্টি অন্য দিকে!
সম্পদের মুখের নির্লিপ্ত ভাব তিথির ভেতরটা পুড়িয়ে দিল।তার মুখের উৎফুল্লতা উধাও হয়ে গেল।সম্পদ এক পলক হেলাফেলা করে তার দিকে চেয়ে বলল,
—‘উঠছো না কেন?কাজ আছে আমার!’
—‘কাজ আছে তো কাজে যান না!আমাকে নিতে আসতে কে বলেছে?’
তিথির কড়া কন্ঠে সম্পদ ভড়কে গেল।নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
—‘কেউ বলেনি!নিজে থেকে এসেছি।’
তিথি আর দ্বিরুক্তি করলো না।এগিয়ে গিয়ে পেছনের দরজা টানতে কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজের সৃষ্টি হলো।দরজা খুলছে না।মনের ভুল ভেবে দ্বিতীয় বার আরো জোরে টানল। নাহ!কিছুতেই খুলছে না!তার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ!এক পলক সম্পদের দিকে তাকাতে বলল,
—‘টানাটানি করে লাভ নেই।ভেতর থেকে লক করা।’
তিথি ডোর লকের বিষয়টা বুঝতে পারলো।মুহূর্তে তার মুখের পেশি শিথিল হলো।নিজের হাসিটুকু লুকিয়ে সামনের দরজা খুলে সম্পদের পাশে বসে পড়লো।কিছুক্ষণ পরে সম্পদ গাড়ি ছেড়ে দিল।
গাড়ি যে বাসার রাস্তার দিকে যাচ্ছে না তা তিথি বেশ বুঝতে পারছে।কিন্তু কোনো প্রশ্ন করলো না।সম্পদ সকাল থেকে একটু মন মরা হয়ে আছে।সকালবেলা তিথিকে টাই বেঁধে দিতে বলেছিল,সে দেয়নি।তারপর থেকে অন্যরকম হয়ে আছে।
গাড়ি চলছে আধ ঘন্টার মতো হলো।এ সময়ে সম্পদ টুঁ শব্দ করেনি।ভুলেও তিথির দিকে একবার তাকায়নি।আড়চোখে তাকে একবার দেখে তিথি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল।স্ট্রেট বলে উঠলো,
—‘গাড়ি থামান!’
সম্পদ গাড়ির স্পিড একটু কমাতে কমাতে বলল,
—‘কেন?’
—‘ফাঁকা দেখে একটু সাইড করুন, প্লিজ!ইট’স অ্যান ইমার্জেন্সি!’
কিছুদূর গিয়ে ফাঁকা রাস্তাতে সম্পদ গাড়ির ব্রেক কষে দিল।চোখ মুখ শক্ত করে তিথির দিকে তাকালো।তিথি মাথা নিচু করে ব্যাগ চেপে আছে।চোখ বন্ধ করে একটু শ্বাস টানলো।তারপর সিটবেল্ট খুলে ফেলল।সম্পদের দিকে চেয়ে হঠাৎ একটানে তার টাই ধরে কিছুটা কাছে নিয়ে আসলো।সম্পদ হতভম্ব হয়ে বলল,
—‘কি করছো কি?’
তিথি সে প্রশ্নের উত্তর দিল না।প্যাঁচ খুলে টাইটা খুলতে সম্পদ হতবিহ্বল হয়ে গেল।এক হাতে বুকের অনাবৃত অংশের শার্ট খামচে ধরে বলল,
—‘টাই খুলছ কেন?আর কিছু খুলতে দিবো না।’
তিথি চোখ উল্টে একবার সম্পদকে দেখে বলল,
—‘বোতামের উপর থেকে হাতটা সরান।’
—‘সরাব না!তুমি হঠাৎ এমন বিহেভ করছ কেন তিথি?’
তিথি চুপচাপ সম্পদের হাতটা একটানে সরিয়ে ফেলল।শার্টের উপরের দুটো বাটন লাগিয়ে টাই ঝুলাল।গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছুক্ষণ চেষ্টা করে অবশেষে ঠিকটাক টাই বাঁধতে সফল হলো।সম্পদের শার্ট ঝেরে বলল,
—‘টাই বেঁধে দিলাম।এবার কথা বলুন।আমরা বন্ধু মানুষ না?’
সম্পদ এতক্ষণে বুঝতে পারল।তিথির স্পর্শ গুলোতে কিছু একটা ছিল যা সে এখনো অনুভব করছে।তিথির মুখের উত্ত্বপ্ত বাতাস এখনো চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে যেন।সে কোনোরকমে মাথা নেড়ে হুঁ জানাল।
বেলা পড়ে গেছে।সূর্যের সেই উত্তাপ আর নেই!গাছগাছালির ঘন পাতার ফোঁকর দিয়ে ছিঁটেফোঁটা আলো এসে মুখে পড়ছে।তিথি আর সম্পদ গাড়িতে বসে আছে। গাড়িটা একটা নদীর কোল ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে!ঠিক নদী নয়।বিল!ছোটখাটো অনেকগুলো বিল কিছুদূর গিয়ে নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।বিলগুলোতে গভীর পানি।ঝোপ বেঁধে কচুরিপানা ভাসছে।মাঝে মাঝে অল্প অল্প সাদা শাপলা।স্নিগ্ধ বাতাস!কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তিথির মন প্রচন্ড রকমের ভালো হয়ে গেল।
সে সম্পদের দিকে চেয়ে বলল,
—‘নামবেন না?’
সম্পদ মাথা নেড়ে বলল,
—‘হুঁ!নামো।’
সম্পদ সিটবেল্ট খুলে তিথির কোলের ব্যাগটা পেছনের সিটে রাখলো।তিথি মুচকি হেসে নিজের সিটবেল্ট খুলে দরজার হাতলে হাত রাখতে সম্পদ তার ডান হাত টেনে ধরলো।তিথি বিস্মিত চোখে মুখে তাকালো।তার বিস্ময় ভাব কাটার আগেই সম্পদ তাকে একটানে বুকে জড়িয়ে নিল।চোখ বন্ধ করে বলল,
—‘এভাবে থাকো কিছুক্ষণ।নড়চড় করবে না।’
তিথি বড় বড় চোখে স্ট্যাচুর মতো ওভাবেই রইলো।তার হার্টবিট বেড়ে গেছে।পালস রেট অনেক হাই!মস্তিষ্কে কড়া নেড়ে বুঝতে পারলো তার ভালো লাগছে।সম্পদের এই স্পর্শে মন পুলকে ভরে উঠছে।মানুষটাকে বড্ড আপন মনে হচ্ছে।অথচ মাত্র এক সপ্তাহ হলো মানুষটাকে সে চিনে!
তার কাকলির কথা মনে পড়লো।কাকলি একবার বলেছিল,একমাত্র মানুষই পারে এত সহজে,এত দ্রুত,এত অল্প সময়ে একজনকে নিজের ভাবতে।আপন ভাবকে!অন্য কোনো জীবের সে ক্ষমতা নেই।এজন্যই মানুষ আলাদা।
সম্পদের বাহুডোর ঢিলে হয়ে এলো।চোখের পলকে তাকে ছেড়ে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।তিথি এক পলক সম্পদের দিকে চেয়ে গাড়িতেই বসে রইলো।তার নিচে নামতে কেমন লজ্জা লজ্জা করছে।এমন লজ্জা হুট করে কোথা থেকে এলো?তার তো এতকাল লজ্জা ছিল না!
সম্পদের ফোন বাজছে।ড্রাইভিং সিটে ফোন রেখে সম্পদ বাইরে!একবার রিং হতে তিথি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল বড় বাবার নাম্বার।মুহূর্তে মন খারাপ হয়ে গেল।এক পলক সম্পদের দিকে তাকালো।সম্পদ একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
সে ফোনটা কানে নিয়ে নিজেকে শক্ত করলো।স্বাভাবিক গলায় সালাম দিয়ে বলল,
—‘বড় বাবা!কেমন আছেন?’
ওপাশ থেকে সিদ্দিকুর রহমান ফ্যামফ্যাসে গলায় বললেন,
—‘ভালো আছি রে।তোদের ওখান থেকে আসার পর একটু ঠান্ডা লেগেছে।তোর কি খবর মা?’
পরশু দিন সিদ্দিকুর রহমান এসে দেখে গেছে তাকে।ও বাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছিল।কিন্তু সে রাজি হয়নি।বড় বাবার কন্ঠ শুনে বেশ অসুস্থ মনে হচ্ছে।তিথি চিন্তিত হয়ে বলল,
—‘বড় বাবা!আপনার কন্ঠ পাল্টে গেছে।অনেক অসুস্থ মনে হচ্ছে।প্রেশার ঠিক আছে?আপনি হসপিটালে যাচ্ছেন না কেন?মেডিসিন ঠিক মতো খাচ্ছেন না?’
সিদ্দিকুর রহমানে হাসি শোনা গেল।তিনি হাসতে হাসতে তিথিকে বললেন,
—‘এত ব্যস্ত হোস না তো।আমি ঠিক আছি।একবার আয় এ বাড়িতে।আসবি?’
সিদ্দিকুর রহমানের কন্ঠে গভীর আহবান।তিথির চোখ গড়িয়ে পানি পড়লো।ইচ্ছে করছে এক্ষুণি ছুটে ও বাড়ি যায়!হাঁ করে শ্বাস নিয়ে কান্না আটকে বলল,
—‘বড় বাবা!আমি বড় মাকে বলে দিচ্ছি এক্ষুণি।মেডিসিনের অনিয়ম যেন না করে।আমি রাখছি এখন!’
—‘আচ্ছা, সাবধানে থাকিস মা।’
তিথি কান থেকে ফোন নামিয়ে কান্না শুরু করলো।সঙ্গে সঙ্গে সম্পদ জানালা দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে দিল।তিথিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
—‘বাইরে এসো।ভালো লাগবে!’
তিথি চোখ মুখ মুছে বের হলো।কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়লো।মাথার উপরে অচেনা গাছ।গোল গোল পাঁচ টাকার পয়সার মতো গাছের পাতা।সে এই গাছের নাম জানে না।
সম্পদ এগিয়ে এসে তার পাশে বসল।কিছুক্ষণ দুজন নিরবতা পালন করলো।তারপর সম্পদ নিজে থেকে বলল,
—‘আমার যখন ভীষণ মন খারাপ হয় তখন উদ্দেশ্য হীন ভাবে এদিক ওদিক গাড়ি চালাই।এই জায়গাটাতে প্রায়ই আসা হয়।তবে বেশিরভাগ দিন গাড়ি থেকে বের হই না।কিছুক্ষণ গাড়ির ভেতর থেকে চারপাশ দেখে চলে যাই।’
তিথি কিছু বলল না।নিঃশব্দে ওড়নার এক অংশ হাতে পেঁচাচ্ছে।সম্পদ আবার বলল,
—‘দুপুরে খেয়েছ তো?’
—‘হুঁ!আমি আর স্নেহা একত্রে খেয়েছি।’
সম্পদকে পাল্টা প্রশ্ন করতে গিয়েও করলো না তিথি।তার ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেছে আবার।কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
বিলে অসংখ্য পানকৌড়ি চোখে পড়ছে।কালো রঙের পাখি গুলো ডুবছে আবার ভেসে উঠছে।ক্ষণিক সময় বাদে বাদে বকের মতো মাথাটা বের করছে।সেদিকে তাকিয়ে তিথির মনে হলো সেও তো পানকৌড়ির মতো ডুবছে আবার ভেসে উঠছে।ডুবছে আবার ভেসে উঠছে।
চুপচাপ বসে রয়েছে দুজন।তাদের বসে থাকা অবস্থাতেই রোদ পড়ে গেল।আকাশে টুকরো টুকরো মেঘ জমা শুরু করলো।আকাশেন রঙ পাল্টে গেল।সম্পদ আকাশের থেকে চোখ সরিয়ে বলল,
—‘ব্রাউনিং একটা কথা বলেছে তিথি।ইট’স অা ডেঞ্জারাস থিং টু প্লে উইথ সোলস!ঠিক তেমনি ইট’স অা ডেঞ্জারাস থিং টু প্লে উইথ মাইন্ড!’
তিথি মুখ তুলে তাকালো সম্পদের দিকে।তার মুখের সর্বত্র গভীর বেদনার ছাপ।সম্পদ তার চোখের দিকে চেয়ে বলল,
—‘তিথি তোমার বড় বাবার সাথে আমার পরিচয় কিছুদিন হলো না।বহু আগে!বছর তিনেক আগে বাবার এক্সিডেন্টের পর আমি কোম্পানিতে জয়েন করি।নতুন বলে তেমন বুঝতাম না।আমার অপরিপক্কতার রেশ ধরে আমাদের কোম্পানির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনে বাবার পুরনো শত্রু।সেই ক্রিটিক্যাল সময়টাতে তোমার বড় বাবা উকিল হিসেবে অনেক সাহায্য করেছে।সেই থেকে উনাকে চিনি।এরপর মাঝে আর যোগাযোগ ছিল না।একেবারে বিয়ের সময় আবার নতুন করে যোগাযোগ হলো।চলো এক কাজ করি।আজ দু’জন তোমার বড় বাবার বাসা থেকে ঘুরে আসি।’
তিথি চমকে গেল।সত্যিই যাবে?গেলেই তো নিশান ভাইয়ের মুখোমুখি হতে হবে।সে নিজেকে সামলাতে পারবে তো?নিশান ভাইকে যে বোঝাতে হবে তাকে ছাড়া সেও অনেক সুখে আছে।
সম্পদ একটা হাই তুলে উঠে দাঁড়ালো।আকাশের দিকে চেয়ে বলল,
—‘আকাশের অবস্থা ভালো না।যখন তখন বৃষ্টি শুরু হবে।তিন মিনিট সময় দিলাম।ভেবে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নাও।যাবে নাকি যাবে না?’
তিথি তিন মিনিটের মতো দীর্ঘ সময় নিল না।এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
—‘আমি যাব!আমি যাব!’
সম্পদের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে জানতো তিথি রাজি হবে।সে এগিয়ে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিল।তিথি দ্রুত গিয়ে বসে পড়লো।তারপর সে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল।
১৪.
গাড়ি পুরনো সেই এক তলা বিল্ডিং এর সামনে দাঁড়ালো।এই বাড়িটাতে বহু বছর আগে বড় বাবার হাত ধরে তিথি এসেছিল।আজ দ্বিতীয় বারের মতো অন্য একজনের সাথে আসলো।
বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে অনেক আগে।ঝড়হীন,বাতাসহীন নিরব বৃষ্টি। ইয়া বড় বড় ফোঁটা মাটিতে পড়ে মিলিয়ে যাচ্ছে।সম্পদ ছাতা বের করে তিথির হাতে দিয়ে বলল,
—‘ছাতা মাথায় দিয়ে তুমি আগে যাও।কলিং বেল চাপো।দরজা খুললে আমি আসছি।এক ছাতার নিচে দুজন আটবে না।তুমি ভিজে যাবে।সাবধানে!বৃষ্টির ফোঁটা যেন মাথায় না পরে।’
তিথি দরজা খুলে নেমে গেল।মেইন গেট থেকে একটুখানি এগিয়ে গেলেই বাড়ি।পিচ্ছিল রাস্তা।গভীর কাঁদা!পা জুতোসহ ডেবে যেতে চাইছে।তিথি ভয়ে ভয়ে পা টিপে টিপে সামনে এগোচ্ছে।তারপরও শেষ রক্ষা হলো না।পিছন পা ফসকে ধাড়াম করে পড়ে গেল!ব্যথায় মৃদু চিৎকার করলো।
তাকে পড়ে যেতে দেখে সম্পদ এক ছুটে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো।তিথির মাথার উপর ছাতা নেই।ছাতাটা ছিটকে দূরে উল্টে পড়ে আছে।
তিথির শরীর কাঁদায় মাখামাখি।ইতোমধ্যে ভিজে জবজবে হয়ে গেছে।হিজাব বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানির সাথে তার চোখের পানি মিলে একাকার অবস্থা।সম্পদ দ্রুত বসে তার হাত টেনে ধরলো।ব্যথাতুর কন্ঠে বলল,
—‘কোথায় লেগেছে?দেখি!দেখি!হাত ধরে একটু উঠার চেষ্টা করো তো।এভাবে কেউ পড়ে যায়?’
তিথি এক হাতে সম্পদের শার্ট খামচে ধরলো। আরেক হাত সম্পদের হাতে রেখে উঠার চেষ্টা করলো।কিন্তু বাম পা নড়াতে পারলো না।সে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
—‘সম্পদ আমার পা ভেঙে গেছে।আমি নড়তে পারছি না!’
তিথির মুখে প্রথমবারের মতো ‘সম্পদ’ ডাক শুনে থমকে গেল সম্পদ।তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।বুকের ভেতর শীতল একটা ঝড় বয়ে গেল।একদৃষ্টিতে ভেজা চোখে তাকিয়ে রইলো তিথির মুখ পানে।
পরক্ষণে তিথির কান্নার শব্দে তার ঘোর কাটে।তিথির মুখের সম্পদ ডাক তাকে অনেক অধিকার দিয়ে দিল।সে দু বার চিন্তা না করে সাবধানে তিথিকে কোলে তুলে নিল।
সঙ্গে সঙ্গে তিথির কান্না থেমে গেল।দ্বিতীয় বার পড়ে যাওয়ার ভয়ে সে চরম বিস্ময় নিয়ে সম্পদের গলা জড়িয়ে ধরলো।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
—‘আপনি পাগল হয়ে গেছেন?বাড়িতে বড় বাবা,বড় মা আরো কত মানুষ আছে।এদের সামনে আপনি আমাকে এভাবে….ছি!সবাই কি ভাববে!নামান বলছি।নিচে নামান!এক্ষুণি নামান!’
তিথির কোন কথাই সম্পদের কানে ঢুকলো না।সে চেয়ে আছে তিথির ভেজা মুখের দিকে।বৃষ্টির ফোঁটা সে মুখে পড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে মুক্তোর দানার মতো।তার গলা শুকিয়ে আসছে।ইচ্ছে করছে তিথির মুখের সব পানি শুষে নিতে।তবেই তার গলা ভিজবে।সে শুকনো ঢোক গিলে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল।
(চলবে)