ধূসর পাহাড়,পর্ব_২০

ধূসর পাহাড়,পর্ব_২০
লেখিকা আমিশা নূর

কুয়াশার গলা আবারো ভারি হয়ে এলো।কিন্তু নিজেকে শক্ত রেখে উত্তর দিলো,”নাহ”।এতে হয়তো দুজনের ভালোই হবে।কুয়াশা নিজে তো অরণ্য থেকে দূরে থাকতে পারবে না।কঠোর ব্যবহার করলেও অরণ্য যেন দূরে যায়।

২৩.
“গাইস ও হলো নিপু।আমার স্টুডেন্ট।”
“আমার ভালোবাতা।” (আয়ন)
“রৌদ্রময় কী বলে এই বলে এই পিচ্চি!”
“তাই তো ভাবি!এই সময় আমরা খেলার মাঠে দৌড়াতাম।”
“আয়ন কে বলেছে তোমাকে এসব?”(কুয়াশা)
” চাচ্চু।”
“অরণ্য তুই?” (অধ্রী)
“হু..”
“কেনো বললি এমন?”
“হু।”

অরণ্য মোবাইলে কারো সাথে চ্যাট করছে যার কারণে বাকিদের কথায় সে কান দে নি।বার বার হু হু করায় অধ্রী রেগে মাথায় চড় দিলো।মাথা তুলে দেখে সামনে কুয়াশা’র সাথে একটি ছোট মেয়ে বসে আছে।কুয়াশাকে দেখেও অরণ্য এড়িয়ে গেলো।

“মারছিস কেনো?এই মেয়েটি কে?”
“হাই আঙ্কেল।আমি নিপু,আয়নের জিএফ।”
“হুয়াটট?আমি আঙ্কেল?”
“আয়নের চাচ্চু হলে আমারও তো চাচ্চু।তাই না?”
“কী বলে এই মেয়ে?”
“চাচ্চু ও আমার ভালোবাসা।”
“হাহাহোহো। অরণ্য তুই ওদের লাভ স্টোরি’তে ভিলেন হোস না।” (রৌদ্রময়)
“আয়ন তোকে আজকে আমি ঘরে তালা মেরে রাখবো আর তোর জিএফকে আমি চাচি বানাবো।”
“হাহাহাহা”

অরণ্যের কথা শুনে সবাই হাসাহাসি করলো।আয়ন কোমরে হাত রেখে রাগান্বিত দৃষ্টিতে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে রইলো।এতো সব কিছুর মাঝে কুয়াশা’র মন ভালো নেই।তিন দিন হলো অরণ্যের সাথে কথা হয় না।কুয়াশাকে অরণ্য ইগনোর করছে।তার জন্য কুয়াশা খওয়া-দাওয়া,ঘুম সব ভূলে গেছে।আজ সোমবার হওয়ায় কুয়াশা অনেক খুশি ছিলো।অন্তত অরণ্যের সাথে দেখা হবে তা ভেবে।কিন্তু অরণ্য কুয়াশা’র দিকে একবারও তাকালো না।

অধ্রীর কথা শুনে কুয়াশা’র ধ্যান ভাঙ্গলো,”কার সাথে চ্যাট করিস অরু?”
“দিবানি!”
“দিবানি?এইটা তো আমাদের কলেজের দেবত্র স্যারের মেয়ে।তাই না?”
“হুম।আমাকে লাইক করে মে বি।”
“বাহ বাহ!”
“গাইস এখন আমি একজনকে ওপেনলি প্রপোজ করবো।”(রৌদ্রময়)
“কাকে?”
“আমার স্বপ্নের রাজকুমারী নিপু।আই লাভ ইউ কিউটি,বিউটি,সুইটি।”
“সরি রৌদ্রময় আমার বিএফ আছে।আয়নের সাথে ঝগড়া দিলে তোমাকে বলবো।কী জানো তো আমি আয়নকে ধোঁকা দিতে পারবো না।”
“হাহাহাহাহা।রৌদ্রময় ওপেনলি প্রপোজ, ওপেনলি রিজেক্ট,”(অধ্রী)
“এন্ড ওপেনলি ছ্যাঁকা।হাহা”(কানন)
“রৌদ্রময় ভাইয়া এগুলা কী? আমার জিএফ কে প্রপোজ করো।”
“আহারে! রৌদ্রময় অন্য কারো কাছে ট্রাই কর।আয়ন কেঁদে দিবে।হাহাহা”(অধ্রী)

আয়ন রেগে বোম হয়ে আছে।যেকোনো সময় ব্লাস্ট হতে পারে।পরিস্থিতি সামলানোর জন্য অধ্রী বললো,” দোস্ত ভাবতেছি এবারে আর চুল কাটবো না।”
কানন বার্গারের কামড় দিতে গিয়ে থেমে গেলো।সবাই স্ট্যাচু হয়ে গেলো।একটু পর সবাই হেসে দিলো।

“আজিব।হাসছিস কেনো?”
“শুন ফাফা মারার ও একটা লিমিট থাকে।” (রৌদ্রময়)
“কেনো শুধু শুধু আজগুবি কথা বলে আমাদের কনফিউজ করছিস?” (অরণ্য)
“বান্ধবী তুই যদি বলতি সুইসাইড করতে যাচ্ছি তাহলে বিশ্বাস করতাম।এই কথাটা বিশ্বাস করছি না।” (কানন)
“যদি আমি চুল বড় রাখি তাহলে কী করবি?”
“তুই যা বলবি।”(অরণ্য)
” আমি এক সপ্তাহ কথা বললো না।বোবা থাকবো।”(রৌদ্রময়)
“কানন আর কুয়াশা?”
“আমি বেশি খাবো না।”
“আমি তোমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবো।”
“ডান।এক বছর পর দেখিস আমি কী করি।”
“ও শিট।গাইস…” (অরণ্য)
“কীহ?”
“আমাকে একটু বেরুতে হবে।আয়ন চল।”
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“দিবানি মিট করতে চাইলো।”

কুয়াশা চোখ ছোট ছোট করে ফেললো।তার ইচ্ছে করছে অরণ্যের মাথা ডিম ফাটতে।মনে মনে বললো,”মেয়েটা এতো ইম্পরট্যান্ট হয়ে গেলো?আমার সাথে তো ভালো করে কথায় বলে না। আর মেয়েটার সাথে দিনে দুবার কথা বলছে।ধ্যাৎ বললে বলুক আমার কী?”নিজেকে বকলে লাগলো কুয়াশা।

“আচ্ছা যা তুই।”
“নিপু চলো আমরাও যাই।” (কুয়াশা)
“একি কুয়াশা চলে যাবে?আর নিপু তোমার সাথে যাবে?”(রৌদ্রময়)
“নিপুর ফ্যামেলির সাথে আমার বন্ডেনিং টা ভালো আর নিপুর বাবা বিজনেসের জন্য বাইরে গেছেন।ও ওর বড়দি’র সাথে থাকতো বাট ওর দিদিরও কাজ পড়ায় দুদিনের জন্য বাইরে যায়।এ’দুদিন ও আমার সাথে থাকবে।”
“ওহহ।বাই তাহলে।”

বাসায় এসে কুয়াশা অস্থির করছে।সে ভেবে পাচ্ছে না অরণ্য কীভাবে পারছে কুয়াশার সাথে কথা না বলে থাকতে?আজ রেস্টুরেন্টের কথা মনে পড়তেই কষ্ট পেলো ভিষণ।মনে মনে বললো,”আমি না বলে দিতেই অন্য আরেকজনের সাথে চ্যাটস।বাহ!এই ভালোবাসো অরণ্য আমাকে?”

এরপরের দিনগুলো এভাবেই চলতে থাকে।অরণ্য কুয়াশাকে দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।যার জন্য কুয়াশা রোজ কান্না করে।দেখতে দেখতে অরণ্য দিবানি নামের মেয়েটার সাথে অনেক ক্লোজ হয়ে যাচ্ছে।তা সহ্য করতে না পেরে কুয়াশা আগের মতোই খিটখিটে হয়ে গেলো।নিজের মধ্যে কন্ট্রোল টাই হারিয়ে ফেলেছে।কিন্তু তবুও মুখ ফুটে অরণ্যকে বলেনি তাকে ভালোবাসে!এসব এর মাঝে আয়নের জন্মদিন চলে এলো।কৃষ্ণা সরাসরি কুয়াশাকে বলে দিয়েছে সকাল সকাল তাদের বাড়ি চলে যেতে।যদিও পার্টি রাত বারোটাই।কিন্তু কৃষ্ণার কথা ফেলতে না পেরে কুয়াশা বারো-টার সময় তাদের বাসায় প্রবেশ করলো।কুয়াশা’কে দেখতে পেয়ে সীয়ামা দৌড়ে কাছে আসলো।এ কদিনে সীয়ামা আর কুয়াশা’র সম্পর্ক অনেক গাড় হয়েছে।যার ফলে সীয়ামা কুয়াশাকে নাম ধরে ডাকে।

“কুয়াশা তোর এতো লেইট হলো?”
“রাতে ঘুম হয়নি তাই সকালের দিকে ঘুমিয়ে ছিলাম।তাই আর তাড়াতাড়ি জাগতে পারিনি।”
“হু হয়েছে। চল বৌদি ডাকছে।”

কুয়াশা সামনে এগোতেই অরণ্যের রুম দেখতে পেলো।দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলো অরণ্য শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছে।কুয়াশার মুডটাই খারাপ হলে গেলো।অরণ্যের প্রতি কেমন যেনো এক ঘৃণা চলে এসেছে।আবার মাঝেমাঝে রাগও হয় ভিষণ।কুয়াশা এক পকল ওদিকে তাকিয়ে সীয়ামার সাথে কৃষ্ণার কাছে গেলো।

“‌‌কুয়াশা ভালো করেছো এসেছো।এই নাও এগুলা ধরো।”
“কী এগুলা?”
“আরে দিদুন বলেছে আয়নের বার্থডে’তে এসব নাস্তা থাকবে প্লাস কোনো খাবার যেনো রাধুনি না রাঁধে।সব আমাকে করতে বলেছে।কী কী রাঁধবো তার লিস্ট ওটা।”
“কী বলো আপু?”
“হুম।এতোগুলো মানুষের রান্না সাথে এতো নাস্তা!আমি পারবো না।এমনিতে রান্না’র ‘র’ ও জানি না তারমধ্য এতোসব অসম্ভব!”
“হাহাহাহা।তাহলে দিদুনকে বলে দাও যে তুমি রান্না পারবে না।” (সীয়ামা)
“কী সীয়ামা?দিদুনকে এটা বললে কী হবে জানিস না?আমাকে আলুথালু ভর্তা করবে।এখন তোরা দুজন আমাকে বলবি কীভাবে মেনেজ করবো?”
“রাধুনি রান্না করবে না কেনো?”
“কুয়াশা!তুমি দিদুনকে চিনো না।উনার মতে বাড়ির বউদের লক্ষ্মী হয়ে সবকিছু করতে হয়।কিন্তু আমি তো রান্না জানি না।এতো দিন ধরে ভুয়া’র রান্নাকে আমি রান্না করছি মনে করে খেয়েছে।নাহলে যে কী কান্ড হতো..”
“আচ্ছা আচ্ছা!তাহলে বরং এককাজ করো ভুয়াকে খবর দাও।”(সীয়ামা)
” কালকে ভুয়া ছুটি নিয়ে বললো তার ছেলে অসুস্থ। ”
“আমি একটা কথা বলি?”
“বলো।”
“রান্না বরং আমি করি। তোমরা আমাকে হ্লেপ করবে।”
“কিন্তু কুয়াশা এতো সব রান্না…. ”
“আমি মেনেজ করতে পারবো।শুধু তোমরা হ্লেপ করলেই হবে।”
“কুয়াশা কিন্তু… ”
“আপু চিন্তা করো না আমি হেন্ডেল করে নিবো।বাট দিদুন কোথায়?”
“বাইরে গেছে আয়নকে নিয়ে।শপিং করাতে।”
“ওহ।তাহলে চলো আমরা রান্না ঘরে যায়।”

২৪.
সব রান্না শেষ করে সীয়ামা আর কুয়াশা রুমে যাচ্ছিলো।তখনি সামনে অরণ্য পড়লো।অরণ্যকে দেখে মনে হচ্ছে কোথাও বেরচ্ছে।সীয়ামা জিজ্ঞেস করলো,

“দাদা তুই কোথায় যাচ্ছিস।এখন আটটা বাজছে।”
“দিবানিকে আনতে যাচ্ছি সাথে অধ্রী রাও আসছে।”
“ওহ।”

কথাটি শুনে কুয়াশা রেগে গেলো।কিন্তু না শুনার ভান করে চলে গেলো।অরণ্য বাকা হেঁসে কুয়াশার যাওয়ার পনে তাকিয়ে রইলো।

রাত এগোরা-টা….

পার্টির সবকিছু রেডি।আয়নের সব ফ্রেন্ডসরাও এসেছে।তবে অরণ্য এখনো বাড়ি ফিরেনি।সীয়ামা ফোন করাই জানতে পারলো সে দিবানির সাথে আসছে।কথা টা কুয়াশার কান অবধি পৌঁছাতেই পাশে দেওয়ালে ঘুষি দিলো।কিন্তু দেওয়ালে পেরাক তাকাই হাত রক্তাক্ত হয়ে গেলো।কিন্তু কুয়াশার চোখ থেকে এক ফুটা জলও পড়েনি।যেন আজ সে শক্ত!সীয়ামা দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি ড্রেসিং করিয়ে দিলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here