ধূসর পাহাড়,পর্ব_১৯

ধূসর পাহাড়,পর্ব_১৯
লেখিকা আমিশা নূর

“সীয়ামা, আয়ন পালালো কেনো?” (কুয়াশা)
“ওর গায়ে হাত কাটা গেঞ্জি আছে তাই লজ্জা পেয়ে পালালো।ও আমরা ছাড়া আর কারো সামনে ফুলহাতা গেঞ্জি ছাড়া যায় না।”
“হাহাহাহা।”
“দাদা তোরা কথা বল আমি বৌদির কাছে যায়।”

সীয়ামা চলে গেলে কুয়াশা আগের থেকে বেশি নার্ভাস হয়ে গেলো।আস্তে আস্তে হেটে সোফায় বসলো।তারপর হাতে থাকা কফিতে নিঃশব্দে চুমুক দিলো।

“কুয়াশা সরি সেদিন..”
“তোমার হাত কেমন?”
“তেমন আঘাত না।”
“আমার মনে হয় এবার থেকে মন দিয়ে বাইক চালানো উচিত।”
“হু।তুমি কেমন আছো?”
“ভালো।”
“কুয়াশা সেদিনের জন্য সরি।”
“আমি সেদিনের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না।”
“ওকে ওকে।তুমি এতো আগে কেনো এসেছো আজ?”
“আবব,আয়ন..আয়নের সাথে আড্ডা দিবো ভাবলাম।”
“ওহ।অধ্রী..”
“অধ্রী আমাকে কল করে নি।আমি সত্যি আয়নের সাথে আড্ডা দিতে এলাম।”
“এ্যা,আমি বলছিলাম ‘অধ্রী আসছেনা কেনো?’ আর তুমি?”

কুয়াশা’র ভেজা চোখ দেখে অরণ্যের বুঝতে বাকি রইলো না কুয়াশা তার সাথে দেখা করতেই এসেছে।তবে কী কুয়াশা তাকে ভালোবাসে?

“কুয়াশা তুমি আমাকে সেদিন কিছু বলোনি।”
“কী নিয়ে?”
“আমার কথার উত্তর..”

কুয়াশা’র বুঝতে বাকি রইলো না অরণ্য কিসের কথা বলছে।তখনি গলায় কফি আটকে গেলো।

“আরে আস্তেধীরে কুয়াশা।”
“আমি আসছি।”

কুয়াশা দরজার কাছে আসতেই অরণ্য দরজা লক করে দিলো।কুয়াশাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।

“কুয়াশা আন্সার মি।”
“লিসেন আই ডোন্ট লাভ ইউ।সো লিভ মি।”
“হুয়াই?হুয়াই ইউ ডোন্ট লাভ?ইউর আইস সেয়িং দ্যাট ইউ লাভ মি।”

অরণ্যের কথা শুনে কুয়াশা অরণ্যর দিকে তাকালো।আবারো সেই অদৃশ্য শক্তি দুজনকে আটকে রেখেছে।খুব করে ইচ্ছে করছে কুয়াশার অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে বলতে, “আমিও ভালোবাসি তোমায় অরণ্য।” কিন্তু তা যে কোনোদিনই পারবে না।নিজেকে সামলে নিয়ে কুয়াশা বললো,

“আইস কোনোদিন কথা বলতে পারে না।আই থিংক ইউ নো দ্যাট এন্ড তুমিও আমাকে ভালোবাসো না এটা শুধু খানিকের মোহ।”
“কুয়াশা লিসেন গিভ মি ওয়ান চান্স।আই উইল প্রুফ ইউ হাও মাচ আই লাভ ইউ!”
“অরণ্য বাচ্চামো বন্ধ করো।তোমার আর আমার ধর্ম আলাদা।আমাদের ফ্যামেলি স্টাটাস ভিন্ন।ইনফেক্ট আমাদের কোনো কিছুরই মিল নেই।আর না আমি তোমাকে ভালোবাসি। সো লিভ মি আলং।”
“কুয়াশা..”
“আই স্যাড লিভ মি।”

অরণ্য দরজার পাশ থেকে সরে এলো।কুয়াশা রুম থেকে বেরিয়ে এলো।চোখে পানি টলমল করছে।যেখনো সময় গড়িয়ে পড়তে পারে।কীভাবে সে অরণ্যের মুখের উপর বলে দিতে পারলো যে তাকে ভালোবাসে না?কুয়াশা তো অরণ্যকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারে না।কিন্তু আজ পরিস্থিতি তাকে কেমন যায়গায় দাঁড় করালো?”ঘড়ির কাটা কখন যে উল্টো দিকে ঘুরে তা তো আর বলা যায় না।”

“এই বিচ্ছু তুই কী গেঞ্জি পরেছিস এটা?”
“কেনো বয়দি?দেখো কওত্তো সুন্দর লিখা।”
“পড় কী লিখা ওটা?”
“আই লাভ ইউ।”

অধ্রী আর আয়নের কথোপকথন শুনে কুয়াশা ওদের সামনে এগিয়ে এলো।

“আয়ন এই গেঞ্জিটা জোস।কে এনে দিলো?”
“চাচ্চু।ইউ নো টিইইচার আই লাভ ইউ মানে চঅঅকলেট দেওয়া।”
“কী?কে বলেছে তোমাকে এসব?”
“চাচ্চু বলেছে।”
“তোমার সো কল্ড চাচ্চু এটি কেনো বলেছে?”
“মামুনি,দাদু,বাবা,চাচ্চু আমাকে চকলেট দিলে ‘আই লাভ ইউ’।”
“ওহহ।”
“কিন্তু আমাকে নিপু চকলেট দে।তাহলে নিপু ও আই লাভ ইউ।”
“কীহ?নিপু তোমাকে চলকেট দে কখন আবার?”
“আমরা দুজন আর ঝগড়া করি না।ও আমরা চঅঅকলেট ভাগ করে খায় কারণ বাবা বলেছে ভাগ করে খেলে ভালোবাসা বাড়ে।”
“তোমাকে এটা,বাবা বলেছে?”
“নাহ।মামুনিকে বলছিলো আমি শুনে নিয়েছি।”

হুট করে সে সময় কৃষ্ণা ওদের সামনে আসায় সবাই অসস্তিতে পড়ে গেলো।আয়নকে ধমক দিয়ে কৃষ্ণা সাথে করে নিয়ে গেলো।

“কুয়াশা তুমি কিছু না বলে ফোন কেটে দিছিলে আমি তো টেনশনে পড়ে যায়।”
“ঐ আসলে ত..খন তখন বাবার ডাক পড়েছিলো।কিন্তু আমি আসলে আজকে আসছিলাম।”
“ওহহ।চলো অরণ্যের সাথে দেখা করে আসি।”
“আমি পরে যাবো।রৌদ্রময় আর কানন আসে নি?”
“ওরা অরণ্যের রুমে।”
“আরে না অরণ্য রুমে একাই আছে।”

কুয়াশা নিজে জিহ্বায় কামড় দিলো।অধ্রী মনে মনে হাসলো।অরণ্যের সাথে কুয়াশা দেখা করেছে কিনা জানার জন্যই মিথ্যা বলে।অসস্তিতে কুয়াশা চুপ করে রইলো।তখনি রৌদ্রময় প্রবেশ করলো।রৌদ্রময়কে দেখে কুয়াশার বুঝতে বাকি রইলো না অধ্রী মিথ্যা বলছিলো।অধ্রী রৌদ্রময়ের দিকে তাকাতেই কুয়াশা সীয়ামার রুমের দিকে চলে গেলো।


“রৌদ্রময় এতো লেইট হলো কেন?কানন কই?”

রৌদ্রময় রুমে প্রবেশ করতেই অরণ্য প্রশ্ন করলো।

“কাননের ডায়রিয়া।” (অধ্রী)
“ওহ।বলি ওকে কম খেতে তাও শুনে না।”

হঠাৎ রৌদ্রময় অরণ্যকে এলোপাথাড়ি মারতে লাগলো।রৌদ্রময়কে মারতে দেখায় অধ্রী নিজেও মারতে লাগলো।

“আরে মারছিস কেনো?”
“শালা তুই আমার থেকে কতো কথা লুকিয়েছিস।তোকে তো একদম ট্রাকের নিচে ফেলে দেওয়া উচিত।”
“আজকের পোস্ট হবে,

ডিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড,
‘সময় থাকতে তোর সব কথা বলে দে নয়তো ট্রাকের নিচে ফেলে দিবো।'”

“ঢং অফ কর অধ্রী।”
।ওয়েট ওয়েট কী লুকিয়েছি আমি?”
“তুই যে কুয়াশাকে লাভ করিস এইটা আমাকে বলেছিস?”
“আরে আমি নিজেও সিওর ছিলাম না।অধ্রী বুঝেছিলো তারপর তোদের বলার সময় হয়নি।”
“হি ইজ রাইট।”(অধ্রী)
” তা নাহয় মানলাম কিন্তু কিসড করেছিস..”
“অধ্রী চুন্নি সব বলে দিয়েছিস।”
“হুম।তুই ফাস্ট কাউকে লিপকিসড করেছিস বলতে হবে না?আমার তো ইচ্ছে করছে ফেসবুক,ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, সবখানে পোস্ট করতে।”
“হু দে পোস্ট কইরা।”
“বাই দ্যা ওয়ে কুয়াশা এসেছিলো তোর রুমে?”
“হ্যা একটু আগে গেলো।অধ্রী তুই বলেছিস তাই না?”
“হুম হুম।”
” বাট কুয়াশা কিছুতেই স্বীকার করছে না সি লাভ মি।”
“স্বীকার না করে যাবে কই?তুই শুধু দেখতে থাক অধ্রী কী কী করে।”
“তাহলে পার্টি?”(রৌদ্রময়)
” নো ওয়ে।দিদুন জানতে পারলে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে।”


“কুয়াশা শুনো আজকে ডিনার করে তারপর বাড়ি ফিরবে।”
“কিন্তু কৃষ্ণা আপু..”
“কোনো কিন্তু না।”
“আচ্ছা সীয়ামার দিদুনকে এখনো দেখলাম না কেনো?”
“উনি ঠাকুর ঘরে পূজা দিচ্ছেন।একটু পর আসবে।”
“বৌদি আমি বরং দিদুনকে দেখে আসি একবার।”

ওরা তিনজন ড্রয়িং রুমে আড্ডা দিচ্ছিলো।তখনি সীয়ামা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে সে স্থান ত্যাগ করে।একটু পর আয়ন এসে কুয়াশাকে বলে,

“টিইইচার চলো তোমাকে আমাদের বাসা ঘুরে দেখায়।”
“হ্যা কুয়াশা ওর সাথে যাও। এতোদিনে তুমি ড্রয়িং রুম ছাড়া বাকি কিছুই দেখোনি।”
“ওকে চলো।”

আয়ন একাধারে কথা বলেই যাচ্ছে।কুয়াশা শুধু হু হা করছে।এরিমধ্য আয়ন বললো,

“ইউ নো টিইইচার টেন ডে’স পর আমার বার্থডে আর বাবা একটা পার্টি প্ল্যান করেছে।”
“আচ্ছা?”
“হুম।আমার অল ফ্রেন্ডস আসবে আর তুমিও।”
“তা দেখবো।”

হাঁটতে হাটঁতে ওরা এক সময় ছাঁদে আসলো।কিন্তু ছাঁদে এসে কুয়াশা দেখলো সীয়ামা রৌদ্রময়ের বুকে মাথা রেখে আকাশের তাকিয়ে আছে।আয়ন খেয়াল করার আগেই কুয়াশা বললো,

“আয়ন চলো আমরা এবার নিচে যায়।”
“কিন্তু ছাঁদ..”
“চলো।”

কুয়াশার কন্ঠ শুনে রৌদ্রময় আর সীয়ামা চমকে গেলো।যাওয়ার সময় কুয়াশা পেছন ফিরে হাসলো।সীয়ামা বুঝলো কুয়াশা কাউকে কিছু বলবে না।

“বাহ সীয়ামা রাণী ভয় পেয়ে গেলো?”
“মোটেও না।সীয়ামা কাউকে ভয় পায় না।”
“তাই?”
“দেখো একদম সামনে এগোবে না।”
“তুমি তো কাউকে ভয় পাও না।তাহলে সামনে এগোলে কী প্রবলেম?”
“বললাম তো সামনে আসবে না।”

সীয়ামা এক পা একপা করে পেঁচাচ্ছে আর রৌদ্রময় এগোচ্ছে।এগোতে এগোতে একসময় সীয়ামা দেয়ালে আটকে গেলো।

ডিনার শেষে..

“তাহলে তুমিই আয়নের টিইইচার?”
“জ্বি দিদুন।”
“ভালো।বনিক যে কেনো একটা মুসলিম মেয়েকে পড়াতে আসতে বললো কে জানে।না ঠিক সময় পূজা করতে পারবো আর না অন্যকিছু।মুসলিম বাড়িতে পা রাখলেই সমস্যা।কে জানে..”

বাকি টুকু কুয়াশা শুনতে পায়নি।বিরবির করতে করতে তিনি চলে যাচ্ছেন।ডিনার করে কুয়াশার সাথে তিনি কথা বলছিলেন।কিন্তু কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেলো কথা?তখনি কৃষ্ণা এসে বললো,

“কুয়াশা কিছু মনে করো না।উনি একটু এমনি।প্লিজ মানিয়ে নাও।”
“ঠিক আছে আপু।কিন্তু মুসলিম বাড়িতে পা রাখা মানে?সীয়ামাও তো মুসলিম। ”
“সীয়ামাকে এবাড়ির কেউ পর মনে করে না।এমনকি দিদুনও না।অরণ্য আর আয়নের বাবা যেমন প্রিয় সীয়ামাও তেমন সবার প্রিয়।”
“ওহ।”
“কুয়াশা চলো তোমাকে ড্রপ করে দিবো।”(অধ্রী)
“আচ্ছা আমি আসি তাহলে আপু?”
“হ্যা।রাত হয়ে যাচ্ছে আর শুনো তুমি বাসায় পৌঁছে আমাকে জানিও।”
“আচ্ছা।”

কৃষ্ণা চলে গেলে অধ্রী কুয়াশাকে বললো,

“এই হিটলার কৃষ্ণা বৌদির সাথে এতো ভালোবাসা কেমনে?আমাদের সাথে তো কথায় বলে না।”
“ইট’স সিক্রেট!”
“কুয়াশা শুনো?”

ওদের কথার মাঝে অরণ্য কুয়াশাকে ডাক দিলো।অরণ্যকে দেখে অধ্রী বাইক নিতে যাচ্ছি বলে বেরিয়ে এলো।

“বলো,”
“আমমম চলো আমি তোমাকে ড্রপ করে দিই।”
“নাহ।অধ্রীর সাথে চলে যাবো আর আপনি সিক।আই হোপ হাতের খেয়াল রাখবেন।”
“যদি না রাখি?”
“এজ ইউর ওয়িশ।”
“তোমার কিছু যায় আসে না?”

কুয়াশার গলা আবারো ভারি হয়ে এলো।কিন্তু নিজেকে শক্ত রেখে উত্তর দিলো,”নাহ”।এতে হয়তো দুজনের ভালোই হবে।কুয়াশা নিজে তো অরণ্য থেকে দূরে থাকতে পারবে না।কঠোর ব্যবহার করলেও অরণ্য যেন দূরে যায়।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here