ধূসর পাহাড়,পর্ব_১২
লেখিকা আমিশা নূর
“আমিও সেটাই ভাবছিলাম।কোথায় যাবে ঠিক করেছো?”
“যেখানে ভালো খাবার পাওয়া যায়।”
কাননের কথা শুনে আয়ন হেসে ফেললো।বরাবরের মতোই অরণ্য উত্তর দিলো,”সবখানেই ভালো খাবার পাওয়া যায়,কাননের বাচ্চা।”
“কাননের বাচ্চা” কথাটি কুয়াশা আর আয়ন দুজনই বুঝলো না।কারণ কাননের বাবা নাম কানন নই সেটা তো তারা জানে।অরণ্য তাদের দুজনের চেহেরা দেখে বললো,”কাননের বাচ্চা মানে হলো কানন এখনো বাচ্চা!ছোটবেলার কাননকে বুঝিয়েছি।”
“ওও”
“এটা অবশ্য রৌদ্রময়ের কথা।”
“গাইস সিরিয়াস হো।এখন আমরা যাচ্ছি কোথায় সেটা ঠিক কর।”(অধ্রী)
“আমার কাছে তিনটে অপশন আছে”(অরণ্য)
” কী কী?”(কুয়াশা)
“সমুদ্র,পাহাড় এবং বন-জঙ্গল”
“বন-জঙ্গলে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”(রৌদ্রময়)
“তাহলে বাকি রইলো দুটো।”
কুয়াশা আর অধ্রী নক কামড়িয়ে উত্তর দিলো,”সমুদ্র”।দুজনের পছন্দ মিলে যাওয়ায় হাই-ফাইভ করলো।বাকিরা আর কেউ দ্বিমত করলো না।কারণ এর আগের বছর তারা রাঙামাটি থেকে ঘুরে এসেছে।
“তাহলে আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি।”(অরণ্য)
“এতদূর?”(কুয়াশা)
” হ্যা!সমুদ্র সৈকত তো কক্সবাজারই”
“দোস্ত সেন্টমার্টিন যাবো?”(অধ্রী)
” সময় থাকলে যাবো বাট তুই এতো লাফাস কেন?”(রৌদ্রময়)
“দোস্ত আমার দাদু’র বাবার বাড়ি সেন্টমার্টিন।”
“ওও!তাই তো বলি তোর ভাষাগুলা এমন কেন?”(কানন)
” সুইট না?”(অধ্রী)
“কচু।আচ্ছা আমরা কই তারিখ যাবো?গাইড থাকবে না সাথে?”(রৌদ্রময়)
“গুগুল কাক্কু থাকতে আবার গাইড?”(অরণ্য)
“ফেব্রুয়ারীর এক-দু তারিখের মধ্যে যাই?কারণ ফ্যামিলি মেনেজ,আমার কলেজ থেকে ছুটি,সব মিলিয়ে কিছুদিন লাগবে রেডি হতে।”(কুয়াশা)
” মিস.সুইসাইড ঠিক বলছে।”
“আজকে রাতে সবাই ভাবো তারপর রাতে জানিয়ে দিয়ো।”
“ওকে।”
“স্তব্ধ অবাক হলো।কারণ সে নিজেই এখন সেন্টমার্টিনে রয়েছে।ইশ যদি গত বছর সেন্টমার্টিনে আসতাম তাহলে ওদের দেখতে পেতাম!নিজের মনের ইচ্ছা শুনে স্তব্ধ হেসে উঠলো।কারণ “ভাগ্য তো সেটা হয় না যেটা আমরা চাই,ভাগ্য সেটা হয় যেটা নির্ধারণ করা থাকে!”
১৩.
অরণ্য ধূসর রংয়ের সমতল জায়গায়’র খাদে পা দুলিয়ে বসে আছে।এই জায়গা’টার কী নাম সে জানে না।তবে অরণ্য নাম দিয়েছে “ধূসর পাহাড়”।মাটির রং ধূসর হওয়ায় এমন অদ্ভুত নাম।মন যখন খুব খারাপ বা বেশি খুশি হয় তখন এইখানে এসে পা দুলিয়ে বসে থাকে।এই সমতল জায়গার নিচে খাদ রয়েছে। বিশাল এক সমুদ্র!সে জানে না এর শেষ কোথায়?তবে এই জায়গাটি তার পছন্দের জায়গা।সকাল থেকেই মনটা বেশ উদ্বিগ্ন।কাল রাতে কুয়াশা তার ফোন রিসিভ করেনি,এমনকি সকালেও কোনো মেসেজ দেয়নি।এই এক মাসে কুয়াশা তার মনে একটি আলাদা জায়গা তৈরি করে নিয়ে।অরণ্য ভালো করে জানে এটি শুধু বন্ধুত্ব নই!প্রতি মূহুর্তে কুয়াশা’কে তার চাই।কিন্তু কুয়াশা?সেওকি চাই তাকে?
এসব ভাবতে ভাবতো ঢিল ছুড়লো অরণ্য।সেকেন্ডের মধ্যেই সেটি অদৃশ্য হয়ে গেলো।কুয়াশা তার ফোন রিসিভ না করার কারণ কী?তাকে কী কোনোভাবে ইগনোর করছে?না তা কেনো হবে?কালকে সকালেও তো ভালোভাবে কথা বললো।অরণ্য তার সেলফোনটি হাতে নিলো।নেটওয়ার্ক একদম পাওয়া যায় না এই জায়গায়।একদম একাকিত্ব জীবন!
.
.
কাল রাত থেকে কুয়াশা কিছুই খায় নি।অবশ্য খেতেই পারে নি।বাড়িতে তার ফুফি এসেছে।কুয়াশা তার নিজের ফুফিকে একদম পছন্দ করে না।উনার মতে মেয়েদের এসএসসি’র পর বিয়ে দিতে হয় আর ফুফি নাকি মায়ের মতো হয়,তাই বাড়িতে এসেই তুলকালাম শুরু করে দে।এসব কান্ড কুয়াশা’র একদম পছন্দ নই।তার ফুফি-ফুফা’দের জন্য রান্না করতে হয়।কুয়ায়া মাঝে মাঝে মনে হয় তার পরিবারের মতো অন্য কোনো পরিবার নেই।এতো কাজ করার ফলে কুয়াশা রাত বারোটায় ঘুমিয়ে আর দুপুর এক’টার দিকে উঠেছে। ততক্ষণে তার ফুফিও চলে গেছে।তিনটার দিকে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ফোন হাতে নিতেই দেখলো অরণ্যের অনেকগুলা মিসড কল।তাড়াতাড়ি কল বেক করতেই ওপাশ থেকে শুধু মেয়েলি কন্ঠই শুনা গেলো।কুয়াশা ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো।অরণ্যের কিছু হলো না তো?অমনি বুকটা ধুক করে উঠলো!অধ্রীকে ফোন দিয়ে জানতে পারলো অরণ্য ঠিক আছে।কিন্তু তবুও অরণ্যের সাথে কথা না বলা অবধি মন’টা কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।খুব কান্না পাচ্ছে কুয়াশার।খু-ব!প্রায় আধঘন্টা বাদে অরণ্য কল বেক করলো।কুয়াশা’র দেহে যেনো প্রাণ ফিরে এলো।চোখের জল মুচে ফোন রিসিভ করলো।
“হ্যালো!কুয়াশা?তুমি কাল রাত থেকে কোথায় ছিলে?”
কুয়াশা কোনো উত্তর দিলো না।অরণ্যের কথাগুলো অনুভব করতে চাইলো।
“কুয়াশা শুনতে পাচ্ছো?”
“হুহ।কোথায় ছিলেন আপনি?”
অতিরিক্ত অভিমান হলে কুয়াশা ‘আপনি’ বলে সম্মোধন করে।অরণ্য অনেকটা হালকা অনুভব করলো।
“এইতো একটা জায়গায় ছিলাম।এইখানে নেট ছিলো না।”
“ওও।”
“তুমি কী করছিলে?”
“ঘুমিয়ে ছিলাম।”
“কীহ?”
“হ্যা।আমি প্রচুর ঘুমাতে পারি।”
“তাই বলে চব্বিশ ঘন্টা?”
“নাহ,রাতে ঘুমিয়ে এক’টার দিকে উঠলাম।”
“ওহ!”ইমোশনাল মেয়েগুলা নাকি প্রচুর ঘুামতে পারে!” তা আজকে বিশ্বাস হলো।”
অরণ্যের কথা শুনে কুয়াশা হাসলো।ওপাশ থেকে অরণ্য হাসিটা অনুভব করলো।
১৪.
বাস স্টেশনে এসে রৌদ্রময়, কানন আর অরণ্য বাকি দুজনের জন্য অপেক্ষা করছে।রৌদ্রময় ভীষণ বিরক্ত! আর পাঁচমিনিটের মধ্যে বাস এসে যাবে আর এই মেয়ে দুটো কিনা এখনো আসছে না।অধ্রীও কী মেয়ের মতো সাজা শুরু করেছে?রৌদ্রময়ের মতে,যেখানে আধঘন্টা সময় থাকবে মেয়েদেরকে সেখানে একঘন্টা আছে বলা উচিত।রৌদ্রময়ের চোখ হঠাৎ সামনে তাকিয়ে আটকে গেলো!অপলক দৃষ্টিতে সে শুধু তাকিয়েই রইলো!তার দৃষ্টি যাতে কেউ লক্ষ্য না করে তাই সানগ্লাস পড়ে নিলো।
“সরি দোস্ত একটু ধেরি হলো।”
“সীয়ামা!তুমি?”(কানন)
“হিহিহিহি!তোমরা প্রতিবছর আমাকে রেখে চলে যাও তাই কুয়াশা’দির সাথে যাচ্ছি আমি।”
“চুন্নিবিল্লি তুই আমাকে রাতে বললি না কেন?”
“তোর সাথে যাচ্ছি না আমি।বাই দা ওয়ে,আপনি কে?”
সীয়ামার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।রৌদ্রময় একটু শব্দও করলো না।খোলা চুলে সীয়ামা’কে এতোটা সুন্দর লাগে সে কোনোদিন যান তো না।হোয়াইট পিঙ্ক কালারের থ্রিপিস’টা যেনো সীয়ামা’র সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে।সীয়ামা রৌদ্রময়ের দিকে এক পলক তাকালো।সে আসাতে রৌদ্রময় কী খুশি নই?নাকি তার কিছু যায় আসে না?
(চলবে)
ভূলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤