ধূসর পাহাড়,পর্ব_০৫

ধূসর পাহাড়,পর্ব_০৫
লেখিকা আমিশা নূর

~ও গুড।বাট লাইফটাকে এতো জলদি শেষ করতে চাও কেনো?(অরণ্য)

শীতল দৃষ্টিতে অরণ্যের দিকে তাকালো কুয়াশা।ইচ্ছে না তাকলেও তার বলতে হলো…

~ডিপ্রেশন।

একটি শব্দ বলেই চুপ করে রইলো।অরণ্য আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।কিন্তু অধ্রী ঠিকই বললো:

~অরণ্য বার বার কারো দূর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন করা ঠিক না।কুয়াশা তুমি ওর কথায় কিছু মনে করিও না।

~নো নো ইট’স ওকে। আমি বলবো পরে সব বাট এখন বলতে ইচ্ছে করছে না।

~পরে আপনাকে কোথায় পাবো?(অরণ্য)

~আমার নাম্বার দিচ্ছি।ফোন দিন..

~দোস্ত কিছু আছে? খিদা লাগছে।(রৌদ্রময়)

ওদের কথার মাঝখানে রৌদ্রময় এসে জিজ্ঞেস করলো।খুব ক্লান্ত লাগছে তাকে।

~আমি কেমনে বলবো কাননের জ্যাকেটে দেখ।(অধ্রী)

~একদম না।জ্যাকেট খালি।আমি জানি সব তুই নিছিস।(কানন)

~ধর টে টে করবি না।(অধ্রী)

অধ্রী নিজের কাছ থেকে বিস্কুটের প্যাকেট দিলো।

~লাভ ইউ দোস্ত। আমি জানতাম তুই আমার জন্য রাখবি।(রৌদ্রময়)

~হুহ সর।(অধ্রী)

~এই চুপ চুপ বৌদি কল করছে…

সর্তকবাণী জানিয়ে দিলো অরণ্য।বাকিরা সবাই চুপ করে রইলো।অরণ্য কল রিসিভ করে লাউডস্পিকার দিলো:

~হ্যা, বৌদি।

~অরণ্য কোথায় তুমি?তোমার দাদা খোঁজছে তোমাকে।

~আমি তো ছাদে আছি বৌদি।

~কই, আমি তো দেখলাম।

~আচ্ছা তুমি এতো রাতে ছাদে যেওনা আমি নিচে আসছি।

~আচ্ছা।

ফোন রেখে দিলো অরণ্য। এখন তাদের যেতে হবে।কুয়াশা অবাক হলো অরণ্য মিথ্যা বলায়।কিন্তু কিছু জিজ্ঞেসও করলো না।

~রৌদ্রময় তুই আমার-থে পেট্রোল নিয়ে যা।আমি কুয়াশাকে পৌঁছে দিয়ে আসছি।(অধ্রী)

~তোরা একা যাবি?(রৌদ্রময়)

~হ্যা।

~আপু আমি চলে যেতে পারবো।

~না কোনো দরকার নেই,অধ্রী পৌঁছে দিবে তোমাকে।(অরণ্য)

~ঠিক বলছে অরণ্য পেত্নী আপু।(কানন)

~পেত্নী?(কুয়াশা)

~হুম।সাদা পোশাকে তোমাকে পেত্নীদের মতো লাগছে।

কাননের মন্তব্য শুনে সবাই হেসে উঠলো।

৫.
আজকে ২ তারিখ।এই দুদিনে কুয়াশা নিজের মধ্যে অনেককিছু লক্ষ করেছে।যেমন সেদিন তার সৎমা তাঁকে হাজার গালি দেওয়ার পরও একটা শব্দও বলেনি।
এর আগে কোনোদিন এমন হয়নি।তার বন্ধুদের সাথে যথেষ্ট ঠান্ডা মেজাজে কথা বলেছে।এমনকি সামায়রা’র যার সাথে গত দু’মাস ধরে ঝগড়া হচ্ছে।হাসি-ঠাট্টার মাঝেই কেটেছে তার দিন।সেদিন আসার পথে অধ্রীকে সে নিজের নাম্বার দিয়েছে।কিন্তু অধ্রী তাকে কলই করেনি।এই নিয়ে সকাল থেকে তার মন খারাপ।তারওপর কুয়ায়া’র টিউশনি নিয়ে চিন্তা। কুয়াশা’র টিউশনি করার কথা ছিলো এক তারিখ থেকে।সে তখন না করে দিয়েছিলো কিন্তু এখন বেঁচে থাকলে টিউশনি’টা তো করতেই হবে।কিন্তু এখন সেটাও হাতছাড়া হয়ে গেলো।প্রচন্ড মন খারাপ তার এখন।মন খারাপ হলে সে একটা অদ্ভুত কাজ করে তা হলো “অঙ্কন”।অন্যরা নাকি মন ভালো থাকলে চিত্র আঁকতে পারে কিন্তু কুয়াশা মন খারাপ হলে আর্ট করে।এখন সে তার রুমে ড্রয়িং করতে বসেছে।জলরঙ গুলা একপাশে রাখলো।কিছুক্ষণ বড় শ্বাস নিলো।তারপর চোখ বন্ধ করে একটা চিত্র মনে করার চেষ্টা করলো।দুমিনিট চোখ বন্ধ করে রাখার পর সিদ্ধান্ত নিলো সেদিনের রেললাইনের চিত্রটি আঁকবে।ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।

.
.
রৌদ্রময়রা আজ সবাই ক্যাম্পাসে এসেছে।ক্লাস তো হবে না কিন্তু আড্ডা দিবে।রৌদ্রময়, কানন আর অধ্রী অপেক্ষা করছে অরণ্যের জন্য। সেদিনের পর তাদের আর দেখা হয়নি।আজকেই হবে…

~আর কতোক্ষণ?(রৌদ্রময়)

~আরে বললো তো রাস্তায় আছে।(অধ্রী)

~রাস্তায় আছে মানে এখনো বাসায়।

পিজায় কামড় বসিয়ে আপন মনে বললো কানন।আরো কিছুক্ষণ তারা নিজেদের মতো কথা বললো।তার একটু পরেই অরণ্য আসলো এলোমেলো ভাবে।

~কীরে দোস্ত তুই গাঁন্জা খাইছোস?(রৌদ্রময়)

~একদম বাজে কথা বলবি না।সারাদিন আমার অবস্থা নাজেহাল।

~তা তো বুঝছি বাট কেনো নাজেহাল? (অধ্রী)

~আর বলিস না আয়নের টিচার খুজার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে ভাই।

~আয়নের টিচার না ঠিক ছিলো?(কানন)

~ছিলো বাট সে নাকি না করে দিছে এখন আমাকে আবার কল করে ডাকতে হবে তাকে…

পকেট থেকে মোবাইল বের করতে করতে বললো অরণ্য।

~না করে দিয়েছে তো আবার ডাকবি কেনো?(রৌদ্রময়)

~বৌদি বলছে টিচার’টা নাকি আবার আসতে চাই।

~ওহ।

ছোট্ট একটি শব্দ করলো রৌদ্রময়।প্রতিত্তরে অরণ্য নাম্বারটি’তে কল করবো।
.
.
.
কুয়াশা’র ড্রয়িং প্রায় শেষ পর্যায়ে,,, আর তখনি ওর কানে ভেসে আসলো “কুশু প্লিজ পিক আপ দা কল”।কুয়াশা বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটি নিয়ে কল রিসিভ করলো,,,

~হ্যালো!কে বলছেন?
.
.
.
~দোস্ত এইটা তো মেয়ে..

স্পিকারে হাত দিয়ে বললো অরণ্য।অধ্রী ইশরায় বললো লাউড-এ দিতে।

~জ্বী আমি আনন্দের ফ্যামেলি থেকে বলছি।

~ওহ।জ্বী বলুন..

~আপনি কী আজ থেকে আসতে পারবেন?

~হ্যা।আসলে আমিও চাচ্ছিলাম আজকে থেকে যেতে।টাইম কী আগের টাই?

~জ্বী, সন্ধ্যায়।

~আচ্ছা।

“কুট” শব্দ করে কুয়াশা ফোন রেখে দিলো।এখন চিত্র’টা পূর্ণ করতে হবে।
.
.
.
~দোস্ত তুই জানতি না এইটা মেয়ে?(রৌদ্রময়)

~না..রে। আমি কীভাবে জানবো?বৌদি তো শুধু টিচার বলেছে।

~ওহ।তুই মনে হয় মেয়ে জানলে এতো’টা নাজেহাল হতি না।তাইনা?(রৌদ্রময়)

~হেহেহে আমি তোর মতো হাজার’টা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরি না।আমার শুধু একজনই গার্লফ্রেন্ড হবে এবং সে হবে আমার বউ।

অনেকটা আবেগ নিয়ে কথাটি বলে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।সাথে সাথেই কুয়াশা’র হাসিমাখা মুখ’টা ভেসে উঠলো।এমন’টা হওয়ার ফলে সে নিজেও অবাক হলো।তাড়াতাড়ি চোখজোড়া খুললো।

~আচ্ছা দোস্ত কুয়াশা মেয়ে’টার কী খবর রে?(অরণ্য)

~কোন কুয়াশা?(কানন)

~তোর কোনো কথায় মনে থাকে না তুই চুপ থাক।(অরণ্য)

~আমরা কীভাবে বলবো আমাদের কারো সাথে যোগাযোগ নেই তো।(রৌদ্রময়)

~ওয়েট দোস্ত…(অধ্রী)

(চলবে)

ভূলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here