ধূসর পাহাড়,পর্ব_০৪
লেখিকা আমিশা নূর
৩.
জোনাকি পোকার রাজ্যে চলে এসেছে তারা।চারিদিকে আলো ছড়িয়ে আছে।তাদের মাথা উপর গোল করে ঘুরছে জোনাকিপোকার দল।মনে হচ্ছে কোনো “তাজ” পরে আছে।এর আগে কোনোদিন জোনাকিপোকা দেখেনি কুয়াশা।আজকে যেন তার জীবনটাকে নতুনভাবে অনুভব করছে।এই প্রথমবারের মতো তার আফসোস হচ্ছে কেনো সুইসাইড করতে যাচ্ছিলো এতো সৌন্দর্য ছেড়ে।সবার মুখে হলুদ-সবুজের আলো ছড়িয়ে গেছে।এই দৃশ্যটিও সে মনে বন্ধি করে নিলো। হঠাৎ ক্যামেরে’র ফ্লাশে কুয়াশা চোখ বন্ধ করে নিলো। ক্যামেরা কোথা থেকে এলো?
~ক্যামেরা?(কুয়াশা)
~হ্যা,অরণ্যের ব্যাগে ছিলো।ও ক্যামেরা নিয়ে যায় সবখানে।(কানন)
~ওহ।
~ওয়াও।দোস্ত কয়েকটা পিক তোল।
অধ্রী কয়েক-রকমের পোজ দিচ্ছে আর অরণ্য ছবি তুলছে।কুয়াশা তাকিয়ে দেখছে এই মেয়েটার মধ্যে কোনো কমতি নেই।কিন্তু ও ওর বন্ধুদের মতো।মেয়েদের অভ্যাস মনে হয় খুব কমই আছে তার মাঝে।এসব ভাবছিলো আর তার মাঝেই অধ্রী তাকে টান দিলো।ওকে সাথে নিয়ে কয়েক’টা ছবি তুললো।শেষে পাঁচজন মিলে কয়েকটা তুললো।কুশায়া শুধু তাকিয়ে দেখলো “একটি অপরিচিত মেয়েকে কতো সহজে আপন বানিয়ে নিতে পারে”।
৪.
একটি লম্বা গাছে বসে আছে তারা পাচজন।গাছটা কেউ কেটে রেখেছে হইতো।কুয়াশা’র হাতের ঘড়িটাই টুস করে শব্দ হলো। ৩টা বেজে গেছে।ভোর হতে আর দু-এক ঘন্টা বাকি।তার কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে অধ্রী।খুব কিউট লাগছে অধ্রীকে।সে ছেলে হলে নিশ্চিত প্রেমে পড়ে যেতো।তার বন্ধু তিহানকে অধ্রীর কথা বলতে হবে।কুয়াশার ইচ্ছে করছে অধ্রীরকে জোকার বানিয়ে দিতে।এমন অদ্ভুত চিন্তা মাথার আসার ফলে সে নিজেই অবাক হলো।ওদের সাথে কয়েকঘন্টা থেকে এই অবস্থা, আর সারাজীবন থাকলে তো….না না আর ভাবছে না সে।মনে মনে সে হালকা হাসলো।আজকে রাতটা সে কোনোদিন ভূলবে না। ২২বছরে এটাই তার লাইফের বেস্ট সময়।
~দোস্ত খুদা লাগছে।(রৌদ্রময়)
কাননকে উদেশ্য করে কথাটি বললো রৌদ্রময়। কিন্তু কানন না শুনার ভান করে রেডি বাইট নুডলস খেতে থাকলো।রেগে গিয়ে কাননের হাত থেকে নুডলসের প্যাকেট টান দিলো।শক্ত করে ধরে রাখার কারণে রৌদ্রময় হাতে পেল না।উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখালো কানন।রৌদ্রময় আবার টান দিলো।কানন কিছুতেই প্যাকেট হাতছাড়া করলো না।এর মাঝে নুডলসের প্যাকেট থেকে নুডলস সব নিচে পড়ে গেলো।সেটি খেয়াল না করেই তারা উভয়ই খালি প্যাকেট নিয়ে টানাটানি করতে লাগলো।কুয়াশা যেই বলতে যাবে ওমনি অধ্রী ওর মুখ চেপে ধরলো।ফিসফিস করে বললো,
~যা চলছে তা চলতে দাও।তুমি কী খাবে বলো?
~কিন্তু আপু?
~বিনোদন উপভোগ করার সময় প্রশ্ন করতে নেই বোকা মেয়ে।
কুয়াশা কথাটি হালকা বুজলো।কানন জ্যাকেট খুলে রেখেছিলো।তার জ্যাকেট থেকে অধ্রী কুয়াশার হাতে একটি কাপ কেক আর রেডি বাইট নুডলস দিলো।নিজে কয়েকটা চুইংগাম, কাপকেক আর স্পিড নিলো।অরণ্যকে একটি পানির বোতল আর কেক দিলো। সবকিছু নেওয়ার পর জ্যাকেট’টা জায়গা মতো রেখে দিলো।
~কানন তোকে দিতে বলছি।দেয় আমাকে।
~তুই আমাকে সবসময় খোটা দিস। দিবো না তোকে।
~খিদা লাগছে দোস্ত আমার..
ওরা নিজেদের মতো খালি প্যাকেট’টা নিয়ে ঝগড়া করছে।অরণ্য’রা কেউ তাদের থামাচ্ছে না।তা দেখে কুয়াশা বললো,
~অাপু এদের থামাও।এখন তো মনে হয় মারামারি করবে।
~তুমি থামাবে এদের?(অরণ্য)
~চেষ্টা করতে তো পারি।
~ওকেহ।যাও,
~অরু কী করছিস তুই?তুই জানিস না….
~কুয়াশা তুমি ট্রাই করো।
কুয়াশা রৌদ্রময়ের কাছাকাছি যেতেই অরণ্য ফিসফিস করে অধ্রীকে বললো,
~”আসল সিনেমা তো এখন শুরু হবে।”
~লে মাজা।
~ভাইয়া আপনারা প্লিজ থামুন।
~কীহ?
রৌদ্রময়ের উল্টো প্রশ্ন করা দেখে কুয়াশা ভড়কে গেলো।অরণ্য আর অধ্রী একসাথে গুনতে শুরু করলো “ওয়ান…..টু…..থ্রি”
~এই মেয়ে তুমি বলার কে হ্যা?(কানন)
~আমাদের মাঝখানে কেনো আসছো?
~আ..
~চুপ।আমাদের ঝগড়া থামাতে এসোছো?
~বুঝি আমরা সব বেস্টফ্রেন্ডদের ঝগড়া দেখলে অন্যদের হিংসে হয়।
~মানুষ পারেও বটে।দেখছো দুটো মানুষ কথা বলছে..তাও আসবে।
~আমরা জাস্ট একটু ঝড়াকথা করছি।কী করছি?
~ঝড়াকথা…(কুয়াশা)
~একদম আর কথা বলবে না।
~যাও এখান থেকে।আর কোনোদিন আসবে না।
গাল ফুলিয়ে কুয়াশা অরণ্যদের দিকে আসলো।ওরা দুজন হাসতে হাসতে এক জনের গায়ে আরেক জন পরে যাবে।অধ্রী পেট চেপে হাসছে।এই মূহুর্তে ওদের হাসিটা কুয়াশার কাছে ভীষণ বিরক্ত লাগছে।কুয়াশা অরণ্যের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।ছেলেটা জেনে বুঝে…।অনেকক্ষণ হাসার পর ওরা থামলো।
~তোমরা জেনে শুনে…
~তুমিই তো বললে চেষ্টা…
পুরা বাক্যটা শেষ করতে পারলো না অরণ্য তার আগেই হেসে দিলো।কুয়াশা’র প্রচুর রাগ হলো।জলের বোতল থেকে সব পানি দুজনের মুখে ছিটয়ে দিলো।কুয়াশা হেসে উঠলো।
~উমম,ভিজিয়ে দিলে।(অরণ্য)
~হিহিহিহি হাসলে কেমন লাগে।
নিরবতা পালন করলো কয়েক সেকেন্ড। তারপর অধ্রী বললো,
~ওরা দুজন এমনই।সব সময় ঝগড়া করে আর কেউ ওদের ঝগড়া মেটাতে গেলে তার উপর রেগে যায়।একবার ফাস্ট ইয়ারের একটা ছেলেকে নাক ফাটিয়ে দিছিলো।
~হুয়াট?
~হুম।ওরা মনে করে না এইটা ঝগড়া,রৌদ্রময় বলে এটাকে ঝড়াকথা।
~ভয়ংকর!ঝড়াকথা কী?
~ঝগড়া প্লাস কথা।ঝড়াকথা।হাহাহাহ
~তোমরা কোন ইয়ারে?
~আমি সাইন্স নিয়ে ডিপ্লোমা করছি।অরণ্য আর রৌদ্রময় অর্থনীতি নিয়ে ফাইনাল ইয়ারে।আর কানন ইংরেজিতে।
~সেইম কলেজ?
~ইয়াহ।আর তুমি?
~আমি রাষ্টবিজ্ঞান নিয়ে সেকন্ড ইয়ারে।
~ও গুড।বাট লাইফটাকে এতো জলদি শেষ করতে চাও কেনো?(অরণ্য)
শীতল দৃষ্টিতে অরণ্যের দিকে তাকালো কুয়াশা।ইচ্ছে না তাকলেও তার বলতে হলো…
(চলবে)
ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤