Crush Villain,পর্ব ১২
লাবিবা ওয়াহিদ
আয়াফ ফোন একবার হাতে নিচ্ছে আরেকবার পকেটে ঢুকাচ্ছে। বিষয়টা যাহিরের নজর এড়ালো না। যাহির বলে,”কিরে বারবার ফোন কি করছিস?”
– কিছু না শুন আমার বাসায় যেতে হবে।
– ওকে যা সন্ধ্যায় ক্লাবে আসিস।
– ওকে আই উইল ট্রাই।
বলেই আয়াফ বেরিয়ে গেলো হলরুম থেকে। এদিকে মানিশা কিছু একটা চিন্তা করতে করতে হঠাৎ নেহালের সামনে এসে পরলো। মানিশাকে নেহাল দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”হেই বেইবি! আমাকে কি ভুলে গেছো? একটা ডেটও তো করো না ওয়াই??”
মানিশা ঘৃণার সাথে বলে,”মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ নেহাল! লজ্জা করে না তোমার এইসব বিস্রি কথা বলতে?”
– নো বেইবি করে না আর তুমিও তো এসবে এঞ্জয় করো তাইতো সেইদিন…..
– জাস্ট শাট আপ ওই রাতের কথা আমাকে একদমই বলবে না।
– ওকে ফাইন বাট আমি চাইছি আরেকবার….
নেহালের কিছু বলার আগেই মানিশা একটা চড় বসিয়ে দিলো গালে। নেহাল সেই আগের মতো করেই হাসছে!
– ছিহ নেহাল ছিহ! আর কতো মেয়েকে তোর বেডে নিবি বলতে পারিস জানোয়ার!! আমার লাইফ হ্যাল করে আবার আসছিস! তোকে ভালোবাসা ছিলো আমার লাইফের সবচেয়ে বড় ভুল। তুই কি ভুলে যাস তুইও কোনো মায়ের গর্ভ থেকে এসেছিস পৃথিবীর আলো দেখেছিস! তোর মতো অমানুষের বিচার উপরে একজন আছেন তিনি করবেন!
বলেই কাঁদতে কাঁদতে মানিশা দৌড়ে চলে গেলো। নেহাল হাসতে হাসতে বলে,”নারী আমার কাছে ফুলের মতো! যতোদিন ফুলটা ভালো লাগবে ততোদিনই সেটা ভোগ করবো, যখন সেটা মরে যাবে আমিও ছুড়ে ফেলে দিবো। আর গর্ভ! হাহা হাসালে, যে আমার জন্মদাত্রী মা আমি তো তাকে আজ অব্দি দেখলামই না! সে যাইহোক আই ডোন্ট কেয়ার ওর মানিশা তোমাকে তো আরেকবার আমার চাই-ই। জানো কি তুমি আগের থেকেও সুন্দর হয়ে গেছো আর আলাদাভাবে একটা আকর্ষণও কাজ করে তাইতো আবার তোমাকে আপন করতে এসেছি।”
বলেই হাসতে থাকে নেহাল। মানিশা আকাশের দিকে তাকিয়ে কেঁদেই চলেছে। আজ তার ভেতরের কষ্টটা পরিমাপ করার মতো না। নিজের সবটা নিজ হাতে শেষ করেছে এমনকি নিজের…. ভেবেই মানিশা নিজের পেটে এক হাত রেখে চিৎকার করে কাঁদছে। মানিশা পেটে হাত রেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”তোর মা খুব খারাপ তাইনা? কিন্তু আমার হাতে যে কিছুই ছিলো না রে, নিজের জীবন দিয়ে তোকে বাচাতে চেষ্টা করেছি কিন্তু ওই অমানুষটা যে তোকে বাচতে দেয়নি, একদমই দেয়নি! পারলে তোর মাকে মাফ করে দিস, মাফ করে দিস!!
বলেই আরও কিছুক্ষণ কাঁদলো। তার কষ্ট টা বোঝার মতো যে কেউ নেই। চারপাশে শো শো করে বাতাস বইছে। হঠাৎ কেউ মানিশার মুখের সামনে রুমাল ধরলো। মানিশা নাক টেনে কান্না থামিয়ে ফেলে রুমালটা দেখে। মানিশা উপরে তাকায় এবং দেখে আবরার দাঁড়িয়ে হাতে রুমাল নিয়ে। মানিশা পলকহীন ভাবে আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে আর কিছুক্ষণ পরপর নাক টানছে।
– রুমালটা দিয়ে চোখ মুছুন।
মানিশা এবার রুমালের দিকে তাকালো তারপর কিছু একটা ভেবে রুমালটা নিলো। চোখ মুছে ম্লান হেসে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,”থ্যাংকস”
আবরার উত্তরে কিছু বললো না শুধু পলকহীন ভাবে তাকালো। তারপর বলে,”আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে কি আমি আপনার পাশে বসতে পারি?”
মানিশা অবাক হলো। এখনকার যুগে এমন ছেলেও আছে যে কিনা তার পাশে বসার অনুমতি চাচ্ছে। তাও কতোটা নম্র ব্যবহার। ধুর কি ভাবছে সে সব কি আর নেহালের মতো হয় নাকি। মানিশা শান্ত কন্ঠে বলে,”হুম!”
আবরার মানিশার পাশে বসলো কিন্তু কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে। মানিশার বিষয়টা ভালো লাগলো। আবরার বলে,”আপনি কাঁদছিলেন কেন?”
নিমিষেই আবার মুখ গোমড়া করে মানিশা বলে,”তেমন কিছু না!”
– আমার মনে হচ্ছে না কোনো মানুষ এমনিতেই কাঁদে। আপনি বলতে পারেন যদি আমাকে ভরসা করতে পারেন।
– আচ্ছা তার আগে আমার একটা প্রশ্ন।
– হুম বলুন আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।
– আপনি জানলেন কি করে আমি এই সাইডে আছি আর আমি যতোটুকু বুঝি এখানে মানুষ তেকন আশা-যাওয়া করে না।
– আসলে দূর থেকে আপনাকে কাঁদতে কাঁদতে দৌঁড়াতে দেখলাম তাই আপনার পিছু নিলাম।
– ওহ। কিন্তু আপনাকে তো ভার্সিটিতে তেমন দেখিনা হঠাৎ আজ?
– আমি-ই আসিনা।
– কেন?(ভ্রু কুচকে)
আবরার কথা ঘুরিয়ে বলে,”এটা কিন্তু ঠিক না আসলাম আপনাকে নিয়ে কথা বলতে আর আপনি কিনা আমাকে নিয়ে পরলেন।”
মানিশা হেসে ফেলে। তারপর দুজন কিছুক্ষণ কথা বলে। আবরার যথাসম্ভব চেষ্টা করে মানিশাকে হাসাতে কারণ মানিশাকে এভাবে কাঁদতে দেখবে সেটা তার ভালো লাগেনি। সব কান্না তার জীবনে থাকুক না অন্য কারো জীবনে কেন দেখবে সে?
★
হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম হঠাৎ-ই বৃষ্টি শুরু হয়। আমিতো খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। আমি খুব বৃষ্টিবিলাসী। বৃষ্টিতে ভেজার কারণে কতো যে মার কাছে বকা খেয়েছি তার হিসাব নেই তবুও পছন্দের ইচ্ছা কেন অপূর্ণ রাখবো সামান্য কটা বকার ভয়ে? নদীর ধারে কাছে এসে ঘাসের উপর দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগি চোখ বুজে। ঠোঁটে আমার বিশ্বজয়ের হাসি। বৃষ্টিতে ভেজার অনুভূতি একদম অন্যরকম। ভাগ্যবশত সেই রাস্তা দিয়েই আয়াফ ড্রাইভ করতে করতে যাচ্ছিলো। দূরে খেয়াল করে এক অপরূপ মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে চলেছে। আয়াফ সাথে সাথে গাড়িটা থামালো আর মেয়েটাকে দেখতে লাগে। মেয়েটা আর কেউ নয় সেটা সানিয়া। আয়াফ নিজের অজান্তেই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কেন জানেনা সে। বেশ কিছুক্ষণ পর মেয়েটা নদীর ধার থেকে ভিজে ভিজেই ফিরে আসছে। সামনের দিকে আসাতে আয়াফ সানিয়ার চেহারা দেখতে পায় এবং অবাক হয়ে যায়।
তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতেই মায়ের বকুনি শুনলাম আচ্ছাশিড়! তারপর আর কি রুমে গিয়ে ডিরেক্ট ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
চলবে!!!