Crush Villain,পর্ব ১১
লাবিবা ওয়াহিদ
– কিরে আকিল তোকে ইদানীং এমন অন্যমনস্ক লাগছে কেন?
মায়ের কথায় আয়াফের ধ্যান ভাঙে তারপর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”কই মা কিছু না তো! However ডেড কই?”
– বললাম না কোরিয়া গেছে আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন?(ভ্রু কুচকে)
আয়াফ থতমত খেয়ে বলে,”ওওও ওই এমনি আর কি!”(হাসার চেষ্টা করে)
তারপর কিছু না বলে খাওয়া শুরু করলো। আয়াফের মা ভ্রু কুচকেই তাকিয়ে রইলো। তার ছেলের হঠাৎ এমন পরিবর্তন কেন কিছুই বুঝতে পারছে না তবুও কথা বাড়ালো না সে। আয়াফ খেয়ে উঠে সিঁড়ির কাছে যেতেই আয়াফের মা বলে উঠে,”এখনই চলে যাচ্ছিস রুমে আকিল?”
– হ্যাঁ মা সামনে ফাইনাল ইক্সাম ভালো প্রিপারেশন তো লাগবেই।
আয়াফের মা মুচকি হেসে বলে, “আচ্ছা যা!”
আয়াফও হেসে রুমে চলে গেলো। এখন সে রুমে ঠিকই এসেছে কিন্তু এবারও সানিয়ার স্মৃতি তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। যেদিন থেকে সানিয়া তাকে দূরে সরে যেতে বলেছে সে ঠিকই দূরে সরেছে কিন্তু প্রতিটাদিন তাকে সানিয়ার স্মৃতি শেষ করে ফেলছে। তার জেদের বসে সে এখনো তার সামনে যায়নি এবং যাবেও না ওদিকে তার মাথায় চক্রাকারে ঘুরে চলেছে একটাই চেহারা সেটা হলো সানিয়া কিন্তু কেন সেটা এই অব্দি আয়াফ ধারণা করতে পারলো না। কি হচ্ছে তার সাথে? কেন না চাইতেও বারবার সে সানিয়াকে ভেবে চলেছে। নাহ আয়াফ এগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল আর সামনে তোর ইক্সাম! ইক্সাম শেষে যা ইচ্ছা ভেবে নিস!
ভেবেই আয়াফ বই নিয়ে বসলো। রাত ১২টা বাজতেই তার আর পড়তে মন চাইলো না। তাই লাইট’স অফ করে সে বিছানায় গিয়ে ধপ করে উবুড় হয়ে শুয়ে পরলো।
রাত ২টা,
আয়াফ লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলো আর এদিক সেদিক তাকালো। কি হলো এভাবে ঘুম কেন ভেঙে গেলো আজিব। তখনই আয়াফের সানিয়ার কথা মাথায় আসলো। আয়াফ সাথে সাথে নিজের মাথার চুল মুঠোয় নেয়।
– উফফফ এই মেয়ে তো দেখছি স্বপ্নে এসেও আমায় জ্বালায়। এর জ্বালায় কি আমার ঘুমিয়েও শান্তি নেই ধুর!! ঘুমও আসছে না এখন কি করি। আচ্ছা ইদানীং এই মেয়েকে নিয়ে আমি এতো বেশি ভাবছি কেন উফফ!!
আয়াফ টেবিল ল্যাম্প জ্বালালো তারপর বিছানা থেকে উঠে বেলকনির দিকে পা বাড়ালো। থাই গ্লাস খুলে বেলকনিতে আসলো আর সাথে সাথেই রাতের ঠান্ডা বাতাস শো শো করে আয়াফকে ছুঁয়ে গেলো। আয়াফ রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বুজে এই পরম আবেশের বাতাসকে অনুভব করছে। আকাশে হাজারো তারার মাঝে থালার ন্যয় চাঁদটি উঁকি দিয়ে আছে পৃথিবীর দিকে। আয়াফ চাঁদটার মাঝেই কিছু হিসাব মেলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হাজারো লক্ষ লক্ষ তারার ভিরে একটাই চাঁদ আর আয়াফ এতো এতো মেয়ের মাঝে শুধু একজনকেই ভেবে যাচ্ছে আর সেটা হলো সানিয়া। যার সাথে কখনো হেসে একটা শব্দও বলেনি সেখানে সে তাকেই মনে করে যাচ্ছে? কই আগে তো কখনো এমন খালি খালি লাগেনি তার তো আজ কেন এমন লাগছে কি পেয়েছে সে এই মেয়ের মাঝে?
★
– না না প্লিজ আমি আপনার সব কথা শুনবো তবুও প্লিজ আমায় ছাড়ুন!!
আয়াফ একটা ভিলেইনি হাসি দিয়া সানিয়াকে কিছুটা শূন্যে ভাসিয়ে নিয়ে দুম করে ফ্লোরে আছাড় মারে।
আমি লাফ দিয়ে উঠে বসলাম। এদিকে ঘেমে আমি টুইটম্বুর!! পানির তৃষ্ণাও পেলো প্রচুর তাই পাশের বেডবক্স থেকে পানি নিয়ে ডকডক করে সবটা খেলাম। এখনো যেনো আমার ঘোর কাটছে না। কি দেখলাম আমি স্বপ্নে ওই ভিলেন টা আমাকে আছাড় মারসে উফফফ সহ্য হয়না আর একটা ক্রাশ কোনোদিন এতোটা দিবে কে জানতো ধুর!! ঘুমও তো জানালা দিয়ে পালালো কতো আরামের ঘুম ছিলো। এসব ভেবেই ফোনটা নিয়ে সময় দেখলো। ২ঃ৩৯ বাজে এর মানে অনেকটা রাত। এই সময়ে অন্যান্য দিন মরার মতো ঘুমাই আর আজ ঘুমই উড়ে গেলো! নাহ বিছানায় আর ভালো লাগে না এক কাজ করি বেলকনিতে গিয়ে বসে থাকি এতে রাতের শহরটাও এতো উপর থেকে দেখতে পাবো। উমম… আইডিয়া খারাপ না। ভেবেই আর দেরি না করে বারান্দায় চলে এলাম। শো শো ঠান্ডা বাতাস বইছে চারপাশে আর এই ঠান্ডা বাতাস আমার গা ছুঁয়ে যাচ্ছে। ঠান্ডায় অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেলো নিজের মাঝে। চারপাশে নিরবতা! রাস্তায় ল্যাপপোস্টের আলোতে রাস্তা হলুদ আকার ধারণ করেছে। অনেকক্ষণ পরপর এক-দুজন মানুষ যাচ্ছে। সারাদিনের ব্যস্ততায় রাতে আরামে ঘুম দিচ্ছে সবাই তাই কোনো শোড়গোল নেই যেনো সকলের অস্তিত্ব নিস্তেজ! আবার আকাশে চাঁদ সত্যি-ই মন ভালো করার মতো একটা পরিবেশ।
আচ্ছা আমি তাকে নিয়ে এতো ভাবছি কেন? কে হয় সে আমার? হ্যাঁ আগে তাকে ভাবতাম দিন-রাত ভাবতাম কিন্তু এখনকার সময় আর তখনকার সময় অনেক ভিন্ন। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। না চাইতেও তাকে নিয়ে ভাবনায় বিভোর হচ্ছি আদৌ কি এটা কোনো অনুভূতি নাকি এমনেই কিছু সময়ের মোহ। আর সে তো আমাকে ইগনোর করে কিন্তু সে আমাকে ইগনোর কেন করে? কেন আমার সামনে আসে না?
এমন নানান বিষয় ভেবে চলেছে সানিয়া। দুজন দু’প্রান্তে একে অপরের জন্য ভেবে যাচ্ছে এই মধ্যরাতে একই সময়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে। আজ চাঁদটা যেনো সাক্ষি রইলো তাদের এই অপ্রিয় ভাবনার মাঝে।
পরেরদিন ভার্সিটিতে,,
উফফফ দেরি হওয়ার আর যেনো সময় নাই। আজকে কতো ইম্পর্টেন্ট একটা ক্লাস আছে আর আজই লেট হতে হলো ধুর!! টাইমলি পৌঁছাতে না পারলে সানিয়া তু তো গেয়া!
এসব ভেবেই হলরুম পাস করে যেতে নিতেই কারো সাথে খেলাম ধাক্কা। পড়ে যেতে নিতেই চোখ মুখ খিচে রাখলাম না জানি কোমড় টা আমার ভাঙলো। ওমা আমি কি শূন্যতে ভাসছি নাকি? নাহ এরকম কিছু হওয়ার তো কথা না পড়লাম না কেন? নাকি পরে আমি মরে গিয়েও ভূত হয়ে শূন্যে ভাসছি! ও আল্লাহ গো এইডা তুমি কি করলা গো আমার ফিউচার জামাই ডা কেমন হইবো দেখতে পারলাম না গো! আমার বাচ্চাকাচ্চারে বড় করতে পারলাম না গো আমার নাতি নাতনির বিয়া দেখতে পারলাম না গো!
– আরে এই স্টুপিড মেয়ে কিসব আজেবাজে বকছো তুমি? উঠো নইলে তোমায় ফেলে দিবো বদমাইশ মেয়ে!
কেউ আমাকে ধমকাচ্ছে? কিন্তু আমি তো মরে গেছি তাহলে আমাকে দেখলো কি করে? কেউ কি আত্মাকে দেখতে পায়?
– হ্যাঁ দেখতে পায় এখন তুমি উঠবা!(কানের সামনে চেঁচিয়ে)
আমি সাথে সাথে চোখ খুললাম। ওয়াট এর মানে কি আমি মরিনি! বলেই উপরে তাকালাম দেখলাম আয়াফ আমার কোমড় ধরে আমায় বাচিয়ে দিয়েছে। আমার কোমড় ধরাতে আমি সব ভুলে রেগে বললাম,”আপনার সাহস তো কম না আপনি আমার কোমড় ধরসেন? আপনি কি ভাবসেন আমি কিছু বুঝিনা হ্যাঁ যেমনি মেয়ে দেখসেন ওমনি গায়ে ঢলে পরেন? ছাড়েন আমাকে আমাকে টাচ করসেন সাহস কেমনে হয় আপনার?আ…..ও মাগোওঅঅঅঅ আমার কোমড় ভেঙ্গে গেলো গো….”
বলেই চেঁচাতে লাগলাম। ভিলেন টা আমার কথার মাঝেই আমাকে ছেড়ে দিসে যার ফলস্বরূপ আমি ধপ করে পরে মাজার চৌদ্দটা বাজালাম। উফফ কি ব্যথা!
– নাও দিসি ছেড়ে! কথায় আছে যে-চে কারো সাহায্য করতে নাই এতে করে নিজের পায়েই কুড়াল মারতে হয়!
বলেই রেগে হনহন করে নিজের ক্লাসের দিকে চলে গেলো আয়াফ। আর আমি বিড়বিড় করে আয়াফের ১৪গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে কোনরকমে ক্লাসে চলে এলাম।
ভাগ্যিস ঠিক সময়ে এসেছি নইলে আর একটু দেরি করলেই মিস করে ফেলতাম। ক্লাস থেকে বেরোতেই আলিজা বলে,”কিরে এভাবে কোমড় ধরে হাঁটছিস কেন..?জামাই কি লাথি দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিসে নাকি?”
রেগে আলিজার কান টেনে বলি.”বিয়াই করলাম না জামাই কি তোর বয়ফ্রেন্ড হবে?”
আলিজা কানে হাত বুলাতে বুলাতে বলে.”আমার বয়ফ্রেন্ড আসবে কোথা থেকে?”
– আমাকে বলার আগে মনে ছিলো না?
দুজনের ঝগড়া দেখে রোজা পেটে হাত দিয়ে হাসছে। আমি ভেংচি দিলাম। এমন সময়ই মিথিলা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। এই ফালতুটারে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এখন কানের সামনে নিশ্চয়ই ঘ্যানঘ্যান করবে উফফফ অসহ্য। মিথিলা দু-হাত গুজে বলে,”ইদানীং মনে হচ্ছে বেশি লাফাচ্ছো! আয়াফের চড় কি মনে নেই নাকি আমার হাতে খাওয়ার ইচ্ছা জেগেছে? বুঝিনা মানুষ এতো ছ্যাসড়আ মেয়ে আসে কোথা থেকে? যেই সুন্দর ছেলে দেখলা তাতেই পটানোর ধান্দা!”
– তোমাকে আমার এক চড় লাগাতে মন চাইলো বাট ভদ্রতার খাতিরে লাগালাম না। ছ্যাসড়া কে সেইটা না হয় আয়নায় দেখে নিবেন। আয়না আপনাকে আসল ছ্যাসড়ার ছবি দেখিয়ে দিবে? আর কি বললে আমি আয়াফের থেকে চড় খেয়েছি হাহ, চড় তো তুমি প্লান করে খাইয়েছো তোমার কপাল ভালো তোমাকে আমি এখনো কিছু বলিনি আর আমি যে কি জিনিস সেটা পরে নাহয় দেখিয়ে দিবো। আর আমি কার পিছে ঘুরি সেটা তোমার ভাবতে হবে না আমি চাইলে আয়াফের গলায় গিয়ে ঝুলে থাকবো তাতে তোমার সমস্যা কি? সবকিছুর একটা লিমিট থাকে সেটা ক্রস করো না করলে গাঙ্গে গিয়ে মরবা!
– ইউ….(আঙ্গুল উঠিয়ে)
– সানিয়া! আই এম সানিয়া। অটোগ্রাফ লাগবে? ওহ সরি… দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আমি ছ্যাসড়া মেয়েদের অটোগ্রাফ দেইনা তাই তাড়াতাড়ি কেটে পড়ো নাহয় আমাদ্রর যাওয়ার সাইড দাও নইলে তোমায় ধাক্কা দিয়ে সাইড করতে বাধ্য হবো মিস ছ্যাসড়ি ছ্যাড়ি!(এটিটিউডের সাথে)
মিথিলা পারছে না নিজের চুল টেনে ছিঁড়ে। অপমান করতে এসে নিজেই অপমানিত হয়ে গেলো। মিথিলা রেগে থ্রেড দিয়ে বলে,”তোমায় আমি দেখে নিবো তুমি নিজেও জানো না তুমি কাকে এসব বলেছো!”
– আমি জানি আমি সুন্দর তাই ফ্রিতে এখনই দেখতে পারো আমার কোনো আপত্তি নেই। আর আমি একজন ছ্যাসড়া মেয়েকে যা বলার বলেছি যে কিনা সুন্দর বলা দেখলেই লাজলজ্জা ছেড়ে তাদের জন্য লাফায়। সে যাইহোক আমি তোমার ওই দুইটাকার সস্তা থ্রেডের ভয় পাইনা বাই!
বলেই মিথিলাকে ধাক্কা দিয়ে চলে আসলাম রেগে। পাইসে কি এই মেয়ে? নিজেই ছ্যাসড়ামিতে এক নাম্বার আর আমারে আইসা বলে আমি ছ্যাসড়া! তোরে তো লাথি দিয়ে গোবরে ফেলা উচিত ফকিন্নি!! সব দোষ ওই খচ্চরটার।।
চলবে!!!